একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-২০+২১

0
463

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২০+২১

🍁
লাবিবা প্যাকেট থেকে থ্রি পিচটি বের করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের উপর ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে । এইটা পড়লে কেমন লাগবে চিন্তা করতে করতে একসের । মনের সাথে অনেক দ্বিধা দন্দ চুকানোর পর সেলোয়ার আর কামিজ পড়ে ফেললো। ওমা ভালোই তো লাগছে আমাকে । একদম বিনাপুর মতো লাগছে । কিন্তু বিনাপুর তো বেবি হবে আমার তো বেবি নেই । বেবি পেটে জন্য বিনাপু কতো সুন্দর হয়ে গেছে । আমিও সুন্দর হবো । আমারো পেটে বেবি চাই । এক দৌড়ে বিনার রুমে এসে বিনার পাশে ধপ করে বসে পড়ে । বিনা জেমির চুল বেধে দিচ্ছিল সমস্যা হওয়ায় লাবিবার দিকে ফিরে
– এতো লাফালাফি কিসের তোর ? একটা সময় কি একটু শান্তু থাকতে পারিস না ?
– আমাকে কি ছেলে মনে হয় যে ইমি শান্ত হবো ? শান্তর ফিমেল ভার্সন কি হবে ? শান্তি ? হুস হুস ..শান্তি ভালো লাগে না । শান্তির মাও মরছে জেম্মা বলছে ‌ । এটা হবে শান্তিনী । উফ লাভলি😍।
– বক বক বন্ধ কর। আর এটা কি পড়েছিস ? থ্রি পিচ কই পেলি ? ওড়না কই ? কে দিয়েছে এতো সুন্দর থ্রি পিচ ?
– শাশুমা দিয়েছে ।
– তুই আবার কার সাথে শাশুমা পাতালি ?
– বাদ দাও তো । আগে বলো আমি কি খেলে বেবি পেটে হবে?
– কিহহ? লাবি শোন তোর আজাইরা কথা বলবিনা আমাকে ।
– আমি কি শেখ পাড়ার হাগুরী মুতুরী ছেমড়ি যে আজাইরা কথা বলি😠। আগে বলো কি খেয়ে বেবি পেটে হয়ছে । আমি ও খামু । আমারো পেটে হবো । আমিও তোমার মতো সুন্দর হবো ।
– তুই এমনিতেই সুন্দর । বেবি লাগবেনা তোর । আমারটা হলে তোকে দিয়ে দিবো ।
– ওমা তাই ? উফ লাভলি😍। আচ্ছা।

নাচতে নাচতে রুমে এসে ব্যাগ গুছায় । চুল আচড়ে পিঠের উপর ফেলে দেয় । আজ আর ঝুট্টি করে না । ঠোটে চিলমিলে লিপলজ দেয় । মুখে হালকা পাউডার । ওড়নাটা একপাশ দিয়ে এনে বুকের উপর রাখে । আয়নায় নিজেকে দেখে দু গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে দাড়ায় । ও আমার আল্লাহ , আমিতো বড় হয়ে গেছি । ব্যাগ নিয়ে এক দৌড়ে সাবিনা আর সখিনার সামনে এসে ঘুরে ঘুরে দেখায় । দেখো আম্মুনি তোমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে । এখন আর মারবেনা ।বড় মেয়েদের মারতে হয় না । সখিনা হেসে এসে গাল টেনে দিয়ে বলে – আমাদের এলিজা তো সত্যি বড় হয়ে গেছে । এখনতো বিয়ে দিতে হবে ।
-তিথীকেও বিয়ে দিবে । আমাকেও তোমরা বিয়ে দিবে ? কবে দিবে ? কার সাথে ? পাত্র দেখতে কেমন ? আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি আগেই ..পাত্রের ঠোট আমার মতো গুটু গুটু পিলপিলে ছোট সফট সুন্দর হতে হবে নয়তো আমি কিন্তু পাপ্পি দিবো না 😒। ভেটকানো ঠোট আমার একদম ভালো লাগে না ।
সাবিনা রেগে মেগে দৌড়ানি দেয় -ঐ তুই গেলি এখান থেকে ? এই মেয়েকে নাকি দিবো বিয়ে 🙄

লাবিবা রাস্তায় নুপুরের দেখা পায় । নপুর ও আজ থ্রিপিচ পড়েছে । দুজনে মিলিয়ে মিলিয়ে জামা পড়ে । হেলতে দুলতে নতুন জামা পড়ে এগুচ্ছে দুজনে । মোরে দুটো দোকান । একটা চায়ের আরেকটা হার্ডওয়ারের । চায়ের দোকানের সামনে একদল এলাকার অসভ্যরা বসে আছে । নজরে পড়ে নুপুর লাবিবার দিকে । একজন চেলা লিডারকে বলছে ওস্তাদ দেখেন ঐটা আখির বোন নুপুর যাচ্ছে । লিডার সিগারেটে ফু দিয়ে বলে
– তাইতো দেখি । ওরে আখি .. আমার পাখি ..। এক রাইতেই উইড়া গেলি .। ছোট বোনটারে রাইখা গেলি । এইটাও তো দেখি কচি মাল রুপসী। একটা পাখি পাই নাই ,এই পাখিটারে নজরে রাখি সুযোগ পেলে ধরে নিবো। চল একটু কথা বলে আসি কচি পাখির সাথে।

নুপুরের সামনে দাড়িয়ে যায় । নুপুর লাবিবা পিছিয়ে যায় । লিডার বলে উঠে
– কিগো সুন্দরী কেমন আছো ? সুন্দরী ওড়না এইভাবে নেও কেন ? তোমার বোন তো গলায় ঝুলিয়েছে । তুমি কেন ঝুলাও না ?
নুপুর ভয়ে শেষ । এরা যে আখির পিছু সবসময় ঘুরতো তা খুব ভালো করে জানা । লাবিবা অবাক। এগিয়ে গিয়ে বলে – গলায় উড়না নিলে কি হয় ? আর পেচিয়ে উড়না নিলে কি হয় ?
একজন হেসে উঠে বলে – ওস্তাদ এইটা আমাদের চেয়্যার ম্যানের মাইয়া ।।ইসমাইল চেয়্যারমেন ফিরোজ এমপির কলিজা । বোকার হাড্ডি🤣
লিডার -🤓 হুম শত্রুপক্ষ। শোন মামুনি তোমাদের তো ওড়নাই নিতে হয় না । তোমরা তো ছোট । ওড়নাতো বড়রা নেয় ।
এক জন হেসে বলে – মামুনি আমাদের ওড়নার ভীষন প্রয়োজন ।
লাবিবা – কি করবে ?
একজন – এক মহিলাকে দিবো । মহিলাটা ওড়নার জন্য নিজেকে ঢাকতে পারছেনা । ভীষন গরীব।কাপড়ের বড়ই অভাব ।
লাবিবা – আহারে …গরীব মানুষের কতো কষ্ট। আমার টা নিয়ে যাও উনাকে দিয়ে দিও। বলেই লাবিবা ওড়না খুলে চুল গুলো দু ভাগ করে সামনে এনে বুকের উপর ফেলে দেয় । নুপুর বলতে থাকে জানু দিস না। ওরা খারাপ । মিথ্যা বলে । লাবিবা না শুনে ওদের হাতে উড়না দিয়ে দেয় । লোকগুলোও অবাক ।এইভাবে কেউ ওড়না খুলে দিবে ভাবতেই পারেনি যেখানে সবাই ভয়ে দূরে চলেযায় সেখানে এতো ফ্লিলি কিভাবে এরকম ব্যবহার করছে ? এই মেয়ে কি সত্যিই এতো বোকা?
লাবিবা নুপুরকে নিয়ে হাটা দেয় । পিছু ফিরে দেখে লোকগুলো হা করে তাকিয়ে আছে । নুপুর এখনো বুকে হাত দিয়ে আছে । লাবিবা হাসতে হাসতে শেষ । নুপুর রেগে যায় ।
– হাসবিনা একদম কুত্তি । তুই ভয় পেলি না কেন ?
– কজ আই এম সাহসী😎
-সাহসী না ছাই । ওড়না দিলি কেন ?
– ওড়না না দিলে এখনো ওখানেই পড়ে থাকতি । তোকে ছাড়তোই না ।
– তাও ঠিক ।

রিড়িং রুমে এসে দেখে লাবিবা আর নুপুর চলে আসছে । দুজনেই সেলোয়ার কামিজ পড়া কিন্তু লাবিবার ওড়না নেই । চুল সামনে রাখা । কিছু বলে না । পড়ানো শুরু করে ।পড়ার মাঝে লাবিবা বলে
– ও স্যার স্যার ..আমাকে নাকি বিয়ে দিবে । এডভান্স দাওয়াত আপনাকে।
নুপুর আর তানভীর চোখ কুচকে লাবিবার দিকে তাকায় । লাবিবা দাত গুলো বের করে দেয় । তানভীর ও হেসে ফেলে । দুষ্টু পুতুলকে নাকি বিয়ে দিবে এটা জোকস ছাড়া কিছুই নয় । পড়ায় মন দেয় । পড়া শেষে নুপুর বলে – জানু ..আজ আমি অটো দিয়ে বাসায় যাবো । ছেলে গুলো এখনো থাকবে জানি ।
তানভীর চোখ কুচকে বলে – কোন ছেলে ?
নুপুর আমতা আমতা করে । লাবিবা ধাক্কা দিয়ে বলে বলতে । নুপুর সব বলে । তানভীর এক মনে লাবিবাকে কিছুক্ষন দেখে । তারপর নুপুর কে বসতে বলে লাবিবার হাত ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে আসে । লাবিবা কিচ্ছু বলে না । মনে মনে ভাবে সিউর বকা খাবে এখন । তানভীর লাবিবাকে সোহানার রুমে এনে বসায় । আলমারি থেকে একটা ওড়না বের করে এনে লাবিবার মাথায় ঘোমটার মতো করে দিয়ে দেয় । বউ বউ লাগছে । মুচকি হাসে তানভীর ।
– তো দুষ্টু পুতুল ..কবে তোমার বিয়ে ?
– জানিনা । জেম্মা বললো আমি বড় হয়ে গেছি বিয়ে দিয়ে দিবে ।
– তো কেমন ছেলে তোমার পছন্দের ? মানে কেমন ছেলে বিয়ে করবে ?
– লম্বা ছেলে । ঠোট সুন্দর ছোট্ট পিলপিলে নরম হলেই চলবে ।
– ও আচ্ছা । আমার ঠোটের মতন কি ?
লাবিবা ঠোটে চোখ আটকায় । তানভীর মুখের সামনে মুখ এনে বলে – ছুয়ে দেখো সফট কিনা ?
লাবিবা আঙুল ছোয়ায় ঠোটে । হালকা স্লাইড করে বলে – হুম অনেক সফট । এরোকম ঠোট হতে হবে ।
সোহানা রুমে চলে আসে । লাবিবাকে দেখে এগিয়ে যায় । – বাহ খুব সুন্দর লাগছে তো আমার মা টাকে । বউ বউ লাগছে ।
লাবিবা- 😊😊 শাশুমা আমাকে বি___
তানভীর – যেতে হবে । দুষ্টু পুতুল চলো নুপু ওয়েট করছে । মম আমি পৌছে দিয়ে আসছি ।
লাবিবাকে কথা না বলতে দিয়ে টেনেই নিয়ে চলে আসে ।

মোরের সামনে এলে দেখে এখনো টং এ একদল ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে । হাতে লাবিবার উড়না দেখে বুঝতে দেরী হয় না যে এরাই ওরা । নুপুর লাবিবাকে ড্রপ করে মোরে চলে আসে । গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যায় । ছেলে গুলি তানভীর কে দেখে দাড়িয়ে পড়ে । এগিয়ে আসে তানভীরের দিকে ।
– আরে তানভীর ভাই যে ‌। মামা চা বানাও তারাতাড়ি । ভাই আসেন আমাদের পক্ষ থেকে আপনার জন্য চা ।
– চায়ে লিকার নেই । কড়া করে লিকার টা দিতে এলাম । মহিলাটার জন্য ওড়না কে চেয়েছে ?
– কেন ভাই ? আপনি কি ..
রেগে গিয়ে -কে চেয়েছে ওড়না ?
– ওড়না ওড়না করছেন ওড়না পরবেন নাকি ?
নাক বরাবর এক ঘুসি দেয় রেগে । লিডার নাক ধরে পিছিয়ে যায় ।
– কে চেয়েছিলি ওড়না 😠 বলেই তানভীর সব গুলোকে আচ্ছা মতো মারতে থাকে । যে ছেলেটি চেয়েছিলো সেই ছেলেটি পা ধরে বলে – ভাই ভাই । মাফ করে দেন আর হবে না । আর চাইবো না ।
– তুই তাহলে সেই মহিলা । শার্ট খুল ।
– ভাই ভাই ..।
– শার্ট খুলতে বলছি তোক । ঐ একজন ওর শার্ট খুল ।
একজন ওর শার্ট খুলে দেয় ।
– এবার প্যান্ট খুল ।
– ভাই ভাই মাফ করে দেন । আর হবে না ভাই ।
– কোন মাফ নেই । ঐ খুলিশনা কেন শালা বলে দেয় এক লাথি ।
লাথি খেয়ে পটা পট প্যান্ট খুলে নেয় । আন্ডার ওয়্যার ছাড়া গায়ে আর কিছুই নেই । রাস্তায় এতোক্ষনে ভিড় জমে গেছে। লোকজন দেখে হাসাহাসি করছে । কেউ কেউ ক্যামেরা ধরে রেখেছে ।
তানভীর গাল চুলকে বলে – এবার শাড়ির মতো করে ওড়না পরা ।
শাড়ির মতো করে ওড়না পরিয়ে তানভীর কয়েকটা ছবি তুলে নেয় । তারপর ঐ ছেলেকে ঐভাবেই লোকজনকে বলে বাজারে নিয়ে গিয়ে ঘোড়াতে । তানভীরের কথা মানে সবাই শুনতে বাধ্য । গাড়িতে বসে লাবিবার বাড়ির পেছনের রাস্তায় আসে । ফোন
দেয় ছাবিনার ফোনে । সাবিনা ফোন তুলতেই বলে
– আসসালামু আলাইকুম কাকি ।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম । তানভীর বাবা বলো ।
– কাকি ঐযে দুষ্টু পুতুল ওর একটা বই ফেলে গেছে আমার গাড়ীতে । আমি পেছনের রাস্তায় আছি । ওকে একটু পাঠিয়ে দেন নিয়ে যাক বই। লাবিবাকে বললে লাবিবা আসতে থাকে । আমিতো কোন বই ফেলে আসিনি । তাহলে ? ভাবতে ভাবতেই চলে আসে । পেছনে জঙ্গল তাই একটু ভয় লাগছে । মাগরীবের আযান হয়ে গেছে । গাড়ির পাশে আসতেই তানভীর গেট খুলে ভিতরে আসতে বলে । লাবিবা উঠে বসে । বাইরে থেকে যেন দেখা না যায় তার জন্য লাইট অফ করে দেয় ।

To be continue ___

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২১

🍁
তানভীর একটানে লাবিবাকে কোলে বসিয়ে দেয় । দুহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
আহহ..
চুপ। আমিইতো ভয় পাও কেন ?
ও স্যার আপনিতো ভালো না ।
কিহ ??
হুম।আপনি মারামারি করেন । আমাকে মারেন বকেন।
এখনকি আমি তোমাকে মারতেছি নাকি বকতেছি😡।
এইতো রেগেও যান । রাগ করা ভালো না ।
আচ্ছা আমি ভালো না তুমি ভালো হও তাতেই চলবে ।
আমার বই? আমিতো বই ফেলে যায়নি ।
ওটা মিথ্যা বলে তোমাকে এনেছি নয়তো কি আর আসতে দিতো নাকি ?
😱স্যার আপনি মিথ্যাও বলেন ? এটাতো আরো খারাপ কাজ । মিথ্যা বলা মহাপাপ। মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না ।
আচ্ছা ওকে যাও মিথ্যাবাদীর সাথে থাকতে হবে না । নাম গাড়ি থেকে ।
স্যার ও স্যার রাগ করেন কেন🤔।
কিছু কিছু ব্যপারে মিথ্যা বলতে হয় । বুঝলে ?
হুম । স্যার লাইট অন করুননা …আমি আপনাকে ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছি না ।
আপাদত অন্যকিছু দেখো। বলেই তানভীর ফোন বের করে পিক বের করে লাবিবাকে দিলো । লাবিবা দেখে হাসতে হাসতে মরে যাই যায় অবস্থা । তা দেখে তানভীর ও হেসে ফেলে । নিজের ওড়না দেখে তো আরো হাসি ।
স্যার ..একটা গান আসতেছে । গাই ??
তোমার গান😂 আচ্ছা গাও।

🎶 দেখিলাম প্রথম বার …
বান্দরের গায়ে
থাক গামুনা ।
কেন ? গাও ।
না থাক । আমার শরম করে ।
সিরিয়াসলি ?? তুমি শরম কি বুঝ ?😂ওরা যা করেছে এটাকে কি বলে জানো ? ইভটিজিং করা । খুব বাজে কাজ ।
ওও এটাই ইভটিজিং 😱 paragraph পড়েছিতো ।
হুম । নাও তোমার চকলেট ।
তানভীর চকলেট বের করে লাবিবার মুখের সামনে ধরে । লাবিবা চেচিয়ে উঠে ।
হায় হায় অনেকগুলা ব্যকটেরিয়া আছে হাতে । আগে জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে নেন । চলুন বাসায় চলুন ।
আমি স্যনিটাইজার ইউজ করি । বাসায় যাবো না জন্য ই তো এখানে ডাকলাম বুঝনা ?
লাবিবা চকলেট মুখে তুলে নেয় ।
স্যার বইতো নেই । এখন আম্মুনিকে কি বলবো ?
তোমার তো অনেক বুদ্ধি । বলে দিবে কিছু একটা ।
স্যার আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসুন না । সামনে জঙ্গল ভয় করে ।
তুমি না সাহসী ? ভুত ধরে বেড়াও ?
হুম । কিন্তু এখন তো রাত হয়ে গেছে । সাপ পোকা মাকড় বের হবে ।
ওকে চলো । নামো ।
লাবিবা নামতে গেলে তানভীর আটকে দেয় । আবার কাছে এনে বলে – শোন!! থ্রি পিচ পড়তে হবে না । তুমি যাতে কমফরটেবল সেটাই পড়বে । আর পারলে হিযআপ পড়া শিখে নিবে । বুঝলে ?
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে চকলেট বক্স নিয়ে নেমে যায় । তানভীর গাড়ি লক করে লাবিবার নরম হাত টা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে হাটতে থাকে । সত্যিই জঙ্গলটা রাত হওয়ার জন্য গভীর লাগছে । গেইটে থেমে বললো – দুষ্টু পুতুল ….আমি দুই দিনের জন্য ঢাকা যাচ্ছি । নুপুরকে বলে দিও । সাবধানে থেকো ।
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যায় । তানভীর সেই রাস্তা ধরেই গাড়ির কাছে আসতে থাকে । জঙ্গল পেরুতেই কাধে লাঠি জাতীয় কিছুর আঘাত পায় । আঘাতটা মাথাতেই করা হয়েছিলো কিন্তু ফসকে গিয়ে লাগে কাধে । আহহ শব্দ করে পেছনে তাকাতেই মাথা সহ কপালে আরেকটা আঘাত পায় । পিছিয়ে মাটিতে বসে পড়ে তানভীর । মোরের সেই ছেলেগুলো সাথে হাসানের দলের অনেকজন । বুঝতে আর বাকি নেই যে ছেলে গুলো হাসানের দলের ছিলো । এরা অচমকা অন্ধকারে তানভীরকে বধ করতে এসেছে । তানভীর কোন রকম উঠে গাড়ির দিকে দৌড় দিয়ে ফোন বের করে আন্দাজে ইমাজেন্সি কল দেয় । ছেলে গুলো তানভীরকে ধরে ফেলতেই তানভীর ওদের সাথে লড়তে থাকে । মাথায় আগেই আঘাত পাওয়ার জন্য মাথা ঘুরতে থাকে । মাথা চেপে বসে পড়ে । আঘাত করতে গেলে ফিরোজের লোকেরা এসে ধরে ফেলে ।

লাবিবা চকলেট বক্স বুকের সাথে দু হাতে চেপে পা টিপে টিপে ভিতরে যেতে থাকে । তবুও ধরা পড়ে যায় । সোহানা বলে – বই কোথায় ? এটা তো চকলেট বক্স।
– উফফ আম্মুনি ..এটা বই । চকলেট বক্সের মতো দেখতে । এই জন্য ই তো বলি আগের আমলের মানুষ তোমরা কিচ্ছু চিনো না ।
এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগায় । খাটের উপর আয়েশ করে বসে ছবি গুলোর কথা মনে করে খিল খিল করে হাসছে আর চকলেট খাচ্ছে । শেষ হলে হাত মুখ ধুয়ে এসে পড়তে বসে ।

দূর থেকে আওয়াজ আসছে । লোকজন ও রাস্তা দিয়ে আওয়াজ তুলে জোরে জোরে হেটে যাচ্ছে । সাবিনা আর সখিনা গেইটে এসে দাড়ায় এতো রাতে কি হয়েছে বুঝার জানার জন্য । রাস্তায় পাশের বাড়ির শেফার মা আর রুপার মা কে দেখে ডাক দেয়
– কি হয়েছে গো ? এইভাবে ঐদিকে সবাই ছুটছে কেনো ?
– আমাগো এমপির পোলারে মারছে হাসান এমপির লোকেরা । এখন দুই দলে মারামারি করতাছে । ফিরোজের দল ই জিতবো দেইখো । চেয়্যারমেন ও আছে ঐখানে দেখলাম ।
– তানভীর কে মারছে । ভাবী চলেন তো।
সাবিনা সখিনা দুজনেই ভিতরে আসে । লাবিবাকে ডাক দিয়ে বলে – তোর স্যাররে নাকি মারছে । বিনার কাছে গিয়ে বস । আমরা আসতেছি ।
তানভীরকে মারছে শুনেই যেন লাবিবা কেদে ফেলবে । এক দৌড়ে বেড়িয়ে যায় । সাবিনা ডেকেও থামাতে পারে না । যে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ভয় পাচ্ছিলো সেই জঙ্গল দিয়েই একাই চলে আসে । পিছু পিছু সাবিনা আর সখিনাও আসে । ওরা দাড়িয়ে পরে ইসমাইল আর ফিরোজকে দেখে । মারামারি শেষ ভাব । হাসান দলের লোক বেশি আহত । রাতের অন্ধকারে আবছা টর্চের আলোয় ঘটনা টি ঘটে গেলো ।

লাবিবা এদিক ওদিক ছুটে তানভীরকে দেখতে পেলো না । দূরে তানভীরের গাড়ি থামানো দেখতে পায় । দৌড়ে সেখানেযায় । গাড়ির গেইট খুলে সিটের কিনারায় চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে আছে তানভীর । গাড়ির লাইট জালানো । কপালে মুখে রক্ত দেখে কেদে ফেলে লাবিবা । কেনো কাদছে তা সে জানে না । পেছনের গেইট খুলে গাড়িতে উঠে । ভিতর দিয়ে সামনের সিটে এসে বসে । স্পষ্ট আঘাত দেখে কেদে ফেলে । তানভীর কান্নার আওয়াজে চোখ মেলে । ব্যথায় তাকাতেও সমস্যা হচ্ছে । গালে কোমল স্পর্শ পায় । বুঝতে আর বাকি নেই এটা তার দুষ্টু পুতুল । লাবিবা দু হাতে মুখটা নিজের দিকে ঘুরায় । একদম সোহানার মতো ফেস ফেস করে কাদছে । লাবিবার কান্নার স্টাইল ও পাল্টে যায় দেখছি । তানভীর অশ্রুশিক্ত সেই কিউট মায়াবী ফেসটা দেখে চোখ বন্ধ করে । গাল থেকে হাত দুটো মুখের সামনে এনে চুমু একে দেয় দুটো হাতে ।
লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলে
– কাদছো কেনো ? কিছুই হয় নি আমার । সামান্য ব্যথা করছে ।
– আমারো খুব ব্যথা করছে কলিজায় আপনার ব্যথা দেখে ।
– ও হে দেখোতো ঐখানে একটা বক্স আছে । নিয়ে এসো ।
লাবিবা দেখলো এইটা ফাস্ট এইড বক্স । বক্স খুলে স্যাভলন আর তুলো দিয়ে নিজেই উচু হয়ে ক্ষত স্থান পরিস্কার করতে থাকে । সমস্যা হয় দেখে সামনে উঠে বসে পরিস্কার করতে থাকে ।
তানভীর মৃদু হেসে বলে – পারবে তুমি ?
– হামম। অনেক বার করেছি ।
তানভীর চোখ দুটো বন্ধ করে দেয় । ফিরোজ ইসমাইল সাবিনা এসে দেখে লাবিবা ওষূধ লাগাচ্ছে । ফিরোজ ছেলের মাথা ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দেয় । একটা মাত্র ছেলে তার । লাবিবার মাথায় ও হাত বুলায় । সবাই মারামারি দেখতে ব্যস্ত আর লাবিবা তার ছেলেকে দেখতে ব্যস্ত। একটু শান্তি বয়ে যায় বুকে । ইসমাইল বলে তানভীর কে বাসায় নিয়ে যেতে । তানভীর চোখ খুলে লাবিবার দিকে তাকায় । অনেকটা সময় দেখা হবে না তার এই মায়ার বাগিচাটাকে । সাবিনার হাত ধরে লাবিবা নেমে আসে । মায়ের সাথে চলে আসে । তানভীর সেই অন্ধকারে লাবিবার অবয়ব দেখতে থাকে যতোক্ষন দেখা যায় ।

লাবিবা একাই চলে আসছে খান বাড়িতে । আজ যে করেই হোক তাকে গোলাপ নিতেই হবে । সাবিনাকে বলেনি তানভীর নেই । ইসমাইল ও নিজের কাজে বিজি । নুপুর আখির বাসায় বেড়াতে গিয়েছে । রাস্তা থেকে লাবিবা একটা বাশের পাকা কিছুটা লম্বা কোটা নিয়ে এসেছে । বাড়ির ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়ে আকবর মিয়াকে । লাবিবাকে দেখে এগিয়ে এসে বলে – ছোট সাব ঢাকা গেছে ।
– আমি জানি । শাশুমার কাছে আসছি ।
বলেই লাবিবা চলে আসে । আকবর বুঝতে পারে না শাশুমা টা কে ?
গাছের নিচে এসেই ব্যাগটা ঘাসের উপর ফেলে দিলো । দু হাত তুলে মোনজাত ধরে বলে – ও আমার আল্লাহ আজকে আমাকে ফুল পাইয়ে দিও । চুরি করতেছি মাফ সাফ করে দিও । কাধের ফেরেসতা দুইটাকে লিখতে না করে দিও । আমিন ।
কোটা দিয়ে অনেক চেষ্টা করছে । কিন্তু পারছেই না । জানালা দিয়ে তানিয়া দেখে ডাক দেয় -লাবিপু..।
তানিয়ার ডাকে কোটা দিয়ে নিজের কপালে নিজেই বারি খায় । হাতের তালু দিয়ে ঘসে তানিয়াকে ঠোটে আঙুল চেপে চুপ করতে বলে আবার কাজে নেমে পড়ে । তানিয়া লাবিবার পাশে এসে দাড়ায়। – লাবিপু ..তুমি চুরি করছো ? ভাইয়াকে বলবো ? তুমি চোর ।
– চুপ কর তো । ব্যাগ খুলে দেখ চকলেট আছে । ডেইরি মিল্ক😋। খা বসে বসে ।
তানিয়া চকলেট নিয়ে খেতে থাকে আর লাবিবার লাফানো দেখতে থাকে। একসময় একটা শুকনা কাটা ওয়ালা গোলাপের ডাল লাবিবার গাউনের উপর পরে । লাবিবা ভয় পেয়ে দু তিনটে লাফ দিয়ে ই ডাল ছাড়ানোর চেষ্টা করে । টিস্যু নেটের গাউন হওয়ায় কাটাও নাছোড় বান্দা হয়ে লেগেছে। তানিয়াও হাত লাগায়। একসময় দুজনের ঘাম ছুটে যায় তাও ছাড়াতে পারে না । লাবিবা কেদে ফেলে । তানিয়া দৌড়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে সোহানাকে ডেকে আনে ।
সোহানে এসে হাসতে হাসতে কাটা ছাড়িয়ে দেয় । মাথায় গাট্টা মেরে বলে – কি যে কি কখন করিস না তুই ..। এই ফুল গুলো তোর না । তাই তোর কাছে আসবেনা বুঝলি ? মন খারাপ করে না মা । ডুডুলস খাবিতো ? চল ।
লাবিবা হাটতে হাটতে পেছনের সুইমিং পুলে এসে পা ডুবায় গাল ফুলিয়ে । তানভীরের কথা ভাবতে থাকে । সেদিন উদাম গায়ে এখানে সুইমিং করছিলো । কি বডিরে বাবা । ভয় করে দেখলেই । ডলফিন একটা ।সোহানা এসে লাবিবার পাশে বসে চামচ দিয়ে লাবিবাকে খাওয়াতে থাকে । খেতে খেতে লাবিবা বলে
– ও স্যার …মিস ইউ ভুরিভুরি ।
সোহানা শুনতে পেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।
– শাশুমা তুমি পচা । অসুস্থ ডলফিন টাকে থুক্কু মানে মানুষের না মানে আবার থুক্কু তোমার ছেলেটাকে কেনো যেতে দিলে ?
– বাব্বাহ আমার থেকে তো তোর বেশি চিন্তা।
– মোটেও না তুমি আম্মুনি আর আমি ছাত্রী । রাত দিন তফাত । তবুও কষ্ট লাগে তো । তুমিতো দেখোনি রক্তে কেমন হয়ে ছিলো । আমি দেখেছি । তুমিতো ব্যন্ডেজ করা দেখেছো ।
– হুম । এখন বক বক না করে খেয়ে বাসায় যা । তোর স্যার আরো একদিন থাকবে । পরশু আসবে ।
লাবিবা খেয়ে বাসায় ফিরে আসে ।

To be continue ______