একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব-২০+২১+২২

0
359

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
২০
#WriterঃMousumi_Akter.
ছোঁয়া মলিন মুখে চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে আমার দিকে। ওশানের বিরুদ্ধে প্রমাণ কি সত্য না মিথ্যা এই কৌতুহলে ছোঁয়ার বুক কাঁপছে।ছোঁয়ার চোখে আমি স্পষ্ট ভ*য় দেখতে পাচ্ছি,দেখতে পাচ্ছি মূল্যবান কিছু হারানোর ভ**য়।ওষ্টদ্বয়ের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁকা।টেনশন আর উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছে।অস্বাভাবিক ভাবে সমস্ত শরীর কাঁপছে ছোঁয়ার।ফুটফুটে মিষ্টি মেয়েটার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গিয়েছে।আমার জীবনে দেখা সব থেকে হাসি-খুশি আর সুখী মেয়েটা সেকেন্ডের মাঝে কেমন বদলে গেল।ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে।ব্যাক্তিগত গাড়ি ছাড়া কলেজে আসে না কখনো।অথচ এক বিন্দু হিংসা বা অহংকার নেই ওর মধ্যে।আমাদের মত মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির কয়েকজন ফ্রেন্ডকে প্রাণ উজাড় করে ভালবেসেছে।আমাদের মত করেই মিশে থেকেছে আমাদের সাথে।অথচ চাইলেই ও ভিন্ন ধরণের জীবনযাপন করতে পারত।ছোঁয়া একটা জ্বলন্ত উদাহরণ- মেয়েরা ধনী হলেই বিগড়ে যায়না বা অহংকারীও হয়না।কোনদিন আমরা বুঝতেও পারিনি ও ধনীর দুলালি।আমার সাথে ৫০০ টাকার থ্রি পিছ কিনেও ম্যাচিং ড্রেস পরেছে;অথচ ৫০০০ টাকা দামের পোশাক কেনার সামর্থ সব সময় ছিল।কেনো জানি সব সময় আমার প্রতি আলাদা একটা উইকনেস কাজ করে ছোঁয়ার।তন্ময় মাঝে মাঝে ফান করে বলে তোরা কি লেসবিয়ান নাকি!ছোঁয়াকে কেউ উল্টো পালটা বললেই আমাকে ফোন দিয়ে বলবে দোস্ত অমুক ফালতু কথা বলছে দ্রুত আয় শায়েস্তা করতে হবে।

দ্বীপ আর মৃন্ময় ইশারা করল আমাকে,আর বলল, ‘সারাহ!তুই আর ছোঁয়া আর পাঁচটা মেয়ের মত নস। তোরা অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা।তাই আমাদের বিশ্বাস আছে, এমন কোনো ছেলের জন্য ছোঁয়া কষ্ট পাবেনা।বরং রুখে দাঁড়াবে।’

আমি ফোন থেকে সমস্ত ছবি বের করলাম।এতদিনে ও বাড়ি থেকে সমস্ত ছবি তুলেছি।তরী আর ওশানের কাপল ছবি,ওদের সন্তান সহ ছবি।ছোঁয়ার সামনে আমি একে একে বিভিন্ন প্রকার ছবি দেখালাম।যত এভিডেন্স লাগে সব আমি ফোনে এতদিনে কালেক্ট করেছিলাম।ছোঁয়া আমার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবিগুলি দেখছে।আমি, দ্বীপ আর মৃন্ময় ছোঁয়ার কাঁধের উপর ভীড় করে তাকিয়ে দেখছি।দ্বীপ আর মৃন্ময় বিশ্রী গালিগালাজ করছে ওশান কে।ছোঁয়ার শরীরের কম্পন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।আমি ছোঁয়াকে শক্ত করে ধরে রেখেছি।ছোঁয়ার জন্য এটা ছিল অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা।আমি বুঝতে পারছিনা ছোঁয়া এটা কীভাবে গ্রহন করবে!ছোঁয়ার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।চোখে মুখে সাথে সাথে পরিবর্তন চলে এলো।কেমন অস্বাভাবিক লাগছে ছোঁয়াকে।ফোনের স্ক্রিন পানিতে ভেসে গিয়েছে।কেমন অসহায়ের মত তাকাচ্ছে আমাদের তিনজনের দিকে।আমি তরীর জীবনের সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম।কেননা, তরীর জীবন টা যে আরো ভায়াবহ,আরো করুণ,আর যন্ত্রণাদায়ক আর কষ্টের!ছোঁয়া হঠাৎ নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা,ওর শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে আসছে।হসপিটালের চারদিকে মানুষ। বুক ফাঁটা আর্তনাদ প্রকাশ করতে পারছেনা।চোখের প্রতিটা পলকেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।আমি ছোঁয়াকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরে রেখেছি।দ্বীপ শক্ত কন্ঠে বলল, ছোঁয়া কেনো কাঁদছিস?তোর আসলেই কান্না পাচ্ছে?এই ধরনের পুরুষের জন্য কাঁন্না বের হয়?’

ছোঁয়া কিছু না বলেই উঠে দৌড় দিল।মৃন্ময় আর দ্বীপ ও ছোঁয়ার পিছু ছুটল।আমি মৃন্ময় কে ডেকে বললাম,

‘তোরা তন্ময়ের কাছে থাক।আমি দেখছি ছোঁয়াকে।’

দ্বীপ আর মৃন্ময় দু’জনেই থেমে গেল।আমাকে বলল, ‘ছোঁয়াকে একা ছাড়িস না সারাহ।ওকে বোঝা।’

আমি ছোঁয়ার পিছু ছুটলাম।ঝুম বৃষ্টিতে বিরামহীন ভাবে ছুটে চলেছে ছোঁয়া। কোথাও থামছেনা। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা।আমি ছোঁয়ার পিছু পিছু ছুটছি।ছোঁয়া ওর গন্তব্য জানেনা!কোথায় যাবে নিজেও জানেনা।ভ*য় হচ্ছে ছুটে গিয়ে একটা খারাপ কিছু না ঘটায়!ছুটতে ছুটতে একটা ফাঁকা মাঠের মধ্যে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।আকাশে পানে তাকিয়ে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল।হাউমাউ করে কান্না জুড়ল।কাঁদতে কাঁদতে বেসামাল অবস্থা ওর।আমি দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ছোঁয়ার কাছে গিয়ে থামলাম।ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘কান্না কর।চোখের পানির সাথে বিসর্জন দে সব আবেগ।সব কষ্ট।আমি তোকে কাঁদতে নিষেধ করব না।’
ছোঁয়া কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলেছে।আমাকে জড়িয়ে ধরে এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

‘আমি মানুষ চিনতে এমন ভুল কীভাবে করলাম সারাহ!আমি ঠকে গিয়েছি! ভীষণ ভাবে ঠকে গিয়েছি।আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে গেল!এই ধরনীতে মানুষ চেনা এত কঠিন আগে বুঝিনি!আমি ম*রে যেতে চাই, এত কষ্ট এত যন্ত্রণা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারব না।আমি সহ্য করতে পারছি না সারাহ!ওশানকে ছাড়া একটা মুহূর্ত আমি কল্পনাও করতে পারিনা।আমার এতদিনের সাজানো স্বপ্ন,আমার আশা-ভরসা,আমার ভালবাসা সব কিছু তছনছ হয়ে গিয়েছে!’

‘সব ঠিক হয়ে যাবে বেবি!কোন কষ্টই চিরস্থায়ী নয়।চিরস্থায়ী কোনো কষ্ট আমাদের মনের মধ্য থাকেনা বেবি।সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়।বরং শুকরিয়া আদায় কর যে অনেক বড় ভুল হওয়ার আগে আল্লাহ তোকে বাঁচিয়েছেন।পুরো হাত কা*টা*র আগে আঙুল কে*টে*ছে এটার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বল।’

‘ওশান এত অভিনয় জানে!কই কখনো তো বুঝতে পারিনি ওর অভিনয়।এত নিঁখুত অভিনয় মানুষ কীভাবে করতে পারে?দিনের পর দিন অভিনয় করে গিয়েছে!’

‘চরিত্রহীন মানুষের অভিনয় নিঁখুত হয়।ওরা বেশি এক্সপার্ট থাকে এসব বিষয়ে। বুঝেছিস?আজ পর্যন্ত যতগুলা মেয়ে ঠকেছে সবাই এই চরিত্রহীন ছেলেদের কাছেই ঠকেছে।মেয়েরা আবেগী,ভালবাসা পেলে পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যায়।ভালবাসায় বিশ্বাসী মেয়েদের চোখ দেখলেই বোঝা যায়।কিছু ছেলে এই সুযোগ টা ই কাজে লাগায়।সরলতার সুযোগ নিয়ে চরমভাবে ঠকিয়ে যায়।আর এমন ক্ষত দিয়ে যায় যা আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।উচিত কাজ হচ্ছে এদেরকে শিক্ষা দেওয়া।চরম শিক্ষা দেওয়া।এমন শিক্ষা দেওয়া; অন্তত আর পাঁচজন ছেলে তা দেখে যেন শিক্ষা নিতে পারে।দুনিয়া কি আজব ছোঁয়া!কিছু ছেলে ভীষণ ভালবাসতে জানে কিন্তু অভিনয় করে প্রকাশ করতে পারেনা।আমরা তাদের কথা ভাবিও না।অথচ তাদের একটু ভালবাসা দিলে নিজেকে শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ ভাবে।আবার কিছু মেয়ে আছে ভালবাসায় বিশ্বাসী ওই ছেলেগুলোকে ঠকিয়ে মন ভেঙে দেয়।ছেলে মেয়ের উভয় পরম্পরায় এই ঠকানোর জন্য ছেলেরাও মেয়েদের বিশ্বাস করতে ভ*য় পায়।ছেলেরাও মেয়েদের বিশ্বাস করতে ভ*য় পায়,আবার মেয়েরাও ছেলেদের বিশ্বাস করতে ভ*য় পায়!’

‘আ ‘আমি কী এমন পাপ করেছিলাম সারাহ!আমার সাথে এমনটা কেনো হলো?আমিতো কাউকে ঠকায়নি!তাহলে কেনো?’

‘এটাও হয়তো জীবনের একটা শিক্ষা।শান্ত হ প্লিজ।’

‘আমি কীভাবে শান্ত হব?আমি আর পারছি না সহ্য করতে সারাহ!’

‘কেনো পারছিস না?কষ্ট হচ্ছে তোর ওশানের জন্য?ওশানকে হারানোর জন্য দুঃখ হচ্ছে?’

‘আমার কষ্ট হচ্ছে ওশানের ওয়াইফের জন্য।ওই অ-দেখা, অজানা মেয়েটাকে নিজের অজান্তেই আমি কষ্ট দিয়েছি।আমি পাপী সারাহ!একটা মেয়ের স্বামীকে নিয়ে দিনের পর দিন স্বপ্ন দেখেছি, হেসেছি আর অন্যদিকে ওই মেয়েটার স্বপ্ন ভেঙেছে আর কষ্ট পেয়েছে!আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না কোনদিন।আমি পরকিয়ায় লিপ্ত ছিলাম।আমি ওশানের ওয়াইফের লাইফটা নষ্ট করেছি, সাথে নিজের লাইফ টাও।আমার শরীর রিরি করে উঠছে ঘৃণায় যে আমি ওশানকে ভালবেসেছিলাম!আমার এজন্য ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে আমি এমন একটা মানুষের সংস্পর্শে ছিলাম নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে।আমি এটা কী করলাম সারাহ?’

‘তুই সত্যি সবার থেকে আলাদা ছোঁয়া।অন্য কোনো মেয়ে হলে ওশানের ওয়াইফের কথা ভাবতই না।বরং সব জেনেও এই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকত।’

‘ছিঃ!মানুষ কীভাবে পারে অন্যের স্বামী কেড়ে নিতে?আমিতো কল্পনাও করতে পারিনা।’

‘তোর জন্য প্রাউড ফিল হচ্ছে ছোঁয়া।’

‘কিন্তু আমি মা-বাবাকে কী বলব সারাহ!আমি কত বিয়ে ভেঙেছি ওশানের জন্য।ওশান আমার বাড়িতে গিয়েছে কতবার।বাবা আমাকে বলত ছেলেটার চোখে মুখে অন্য কিছু আছে।ছেলেটা ভাল নয়।কিন্তু বাবার কথা মেনে নেইনি।এখন কীভাবে মুখ দেখাব?আমি তো এপাশ -ওপাশ সবই হারালাম সারাহ!’

‘কিচ্ছু হারাসনি তুই।চল আমার সাথে, বৃষ্টিতে ভিজে দু’জনেরই জ্বর হবে।আমাদের ফর্ম ফিল-আপ আজ।জীবনে সুখ-দুঃখ সব ই আসবে? কিন্তু আমাদের থেমে থাকলে চলবে না।এগিয়ে যেতে হবে বেবি।’

আমি বুঝতে পারছি ছোঁয়ার ভেতর টা জ্বলে পুড়ে ছারখার যাচ্ছে।এত সহজে এসব মেনে নেওয়া সম্ভবপর নয় ওর জন্য।খুব সহজে স্বাভাবিকও হতে পারবেনা।ছোঁয়াকে নিয়ে আবার হসপিটালের নিচে গেলাম।দুজনেই ভিজে ঠান্ডায় কাঁপাছি।ছোঁয়ার ড্রাইভার হসপিটালের নিচেই আছে।ড্রাইভারকে দিয়ে উপরে খবর পাঠালাম।মৃন্ময় আর দ্বীপ নিচে এলো।ছোঁয়াকে বলল,’একদম ভেঙে পড়বিনা।ওই ওশানের মাদারবোর্ড এর হাত -পা আস্ত রাখব না প্রমিস। ‘
আমি ওদের বললাম, ‘ওশান আমার দেবর হয়।প্লিজ ওর সাথে আমাকে লড়তে দে।ওর বিষয়টা আমি দেখে নিব।তোরা কুল থাক।’
মৃন্ময় বলল, ‘ফর্ম ফিল-আপ এর কী হবে?তন্ময় এর কী হবে?ওর পাশেও তো থাকতে হবে না-কী?’
দ্বীপ বলল, ‘আচ্ছা আমি মেসে যাচ্ছি।তোদের কাগজ পত্র নিয়ে আমি ফর্ম ফিল আপ করে দিব।’
মৃন্ময় বলল, ‘হসপিটালের খরচ তো দিতে হবে। আমার কাছে এক্সট্রা টাকা নেই।যা ছিলো তন্ময়ের ওষুধ কিনেছি।এখন টাকা পাব কই।’

ছোঁয়া মলিন কন্ঠে বলল, ‘আমার ব্যাগ ফেলে এসছিলাম।এনে দেতো।’

মৃন্ময় ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘নিয়েই এসছি।’

ছোঁয়া ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বলল, ‘তন্ময়ের যেন কিছু না হয় মৃন্ময়।ওর সব ধরনের ট্রিটমেন্ট করা।আমার শরীর ভালো লাগছে না, বাসায় যাচ্ছি।আর সারাহ!আমার ফর্মটা ফিল-আপ করে দিস একটু।’

ছোঁয়া আমি আর দ্বীপ ছোঁয়ার গাড়িতে করে রওনা হলাম।দ্বীপ আর আমি সারা রাস্তা বুঝিয়েছি ছোঁয়াকে।ছোঁয়া থেকে থেকে কেঁদে উঠছে।সারারাস্তা একটাও কথা বলেনি।এরই মাঝে ছোঁয়ার ফোন বেজে উঠল।ফোনের স্কীনে ভাষছে ওশানের ছবিসহ নাম্বার।মাই লাইফ দিয়ে নাম্বার টা সেভ করা।ছোঁয়া সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করে প্রচন্ড রেগে গিয়ে গালি দিয়ে বলল,’জা** নো** য়া**রে**র বা*চ্চা আর যদি কোনদিন আমাকে ফোন দিস তোকে পুলিশে দিবো।কী ভেবেছিলি আমি কোনদিন জানতে পারব না তোর ওয়াইফ আছে!লজ্জা থাকলে আর কোনদিন ফোন দিবিনা।তোকে কি মানুষ জন্ম দিছে না অ*মানুষ। তোর মা অ*মানুষ না হলে ছেলেকে এইভাবে এগিয়ে দেয়।তুই আর তোর মা কাউকে ছা*ড়*ব না আমি।মেয়েদের জীবন নিয়ে মজা করিস।তোর মা তোর বউ থাকতেও কেনো আমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেছিলো।তোর মায়ের সাথে আমার কথা আছে।’
ছোঁয়া নাম্বার টা ব্লক করে ফোন ব্যাগে রেখে দিলো।
দ্বীপ ওর মেসের কাছে নেমে গেল।আমি কলেজের ক্যাম্পাসে নেমে গেলাম।ছোঁয়া বাসায় চলে গেল।এমন ভেজা শরীরে কী করব!কলেজের ভিতরেই বা কীভাবে যাব।ঠান্ডায় হাঁচি হচ্ছে বারবার।একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ভাবছি কী করব!এরই মাঝে একটা ছেলে আমার কাছে এসে বলল,
‘আপু আপনাকে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের লেকচারার রোশান সিদ্দিকী ডাকছেন, স্যার কমন রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন।’
বুকের মাঝে হঠাৎ ধুক করে উঠল।আমিতো উনাকে না বলেই বেরিয়েছিলাম।নিশ্চয়ই খুঁজেছেন আমাকে।এই অবস্থায় দেখলে কী বলবেন!ভিজতে ভিজতে কমন রুমের বারান্দায় গেলাম।রোশান স্যার প্যান্টের পকেটে হাত গুজে থমথমে মুডে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনার চোখে মুখে হাজারো প্রশ্ন।দেখে চিন্তিত ও লাগছে।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি, ক্যাম্পাসে এক দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই।উনি কিছু বলার আগেই ভয়ংকর বজ্রপাত এর শব্দ হলো।আমি চিৎকার দিয়ে উনাকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরলাম।হঠাৎ এভাবে উনাকে জড়িয়ে ধরাতে উনি কেঁপে উঠলেন।

চলবে,,,

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
২১+২২
#Writer_Mousumi_Aktar

বজ্রপাতের ভ**য়া**ন**ক আওয়াজে রোশান স্যারকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরে চোখ,কান বুজে উনার বুকে মাথা রেখে পড়ে রইলাম।ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছি।ভেজা কাপড়ে উনাকে জড়িয়ে ধরায় উনার কাপড় ও ভিজে গেল।মুহূর্তের মাঝে আবারও বজ্রপাতের আওয়াজ হলো।বোধহয় খুব কাছেই বজ্রপাত হয়েছে।আমি পুনরায় কেঁপে উঠে আরো শক্তকরে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।আচমকা জড়িয়ে ধরায় ঈষৎ কেঁপে উঠলেন উনি, সাথে একটু চমকালেনও বটে।উনার অনুভূতি ঠিক কী আমি সেটা বুঝতে পারছিনা!কেমন গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছেন।না উনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন, না কিছু বলছেন।টোট্যাল চুপ আছেন।উনার কোনো রেসপন্স না দেখে আমি উনার বুক থেকে মাথা সরালাম।মাথা উঁচু করে উনার মুখের দিকে তাকালাম।উনি প্রচন্ড গম্ভীর মুডে দাঁড়িয়ে আছেন, মুখে হাসির লেশমাত্র নেই।আমি থরথর করে কাঁপছি,চুল থেকেও পানি পড়ছে,সমস্ত শরীর ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছি।দাঁড়িয়ে থাকা স্থানটুকু পানিতে ভিজে গিয়েছে।

উনি অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে আমার পা হতে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলেন।বিষয়টা লক্ষ্য করে লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছি আমি।উনার দৃষ্টি অন্যদিকে সরছে না,পুরোটায় আমার দিকে নিবদ্ধ করে রেখেছেন।লজ্জায় কী করব বুঝতে পারছিনা।কেননা, জরজেটের সাদা জামায় শরীরের ভাজ তো বোঝা যাচ্ছেই সাথে শরীরের সমস্ত অংশ স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে।

উনি প্যান্টের পকেটে হাত গুজে থমথমে মেজাজেই বললেন,

‘এ অবস্থা কেনো তোমার?’

উনার এহেন গম্ভীর প্রশ্নে হৃৎপিন্ড তড়িৎ বেগে কম্পিত হলো আমার।মনে হচ্ছে খুব রেগে আছেন উনি।প্রশ্নে ধমকের সুর স্পষ্ট!

আমি উনার দিকে ভ*-য়া*-র্ত চাহনি দিয়ে চেয়ে রইলাম।কিছুই বললাম না।আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আবার প্রশ্ন করলেন,

‘কোথায় গিয়েছিলে তুমি?’

‘ স্যার।’

‘এক মিনিট, কোথায় গিয়েছিলে বলতে হবেনা ;কার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে গেছিলে সেটা বলো।’

আমি উনার গম্ভীর মুড দেখে মুহূর্তেই চুপসে গেলাম।আসলেই তো আমি জিজ্ঞেস করিনি কাউকে।এটা ভারি অন্যায় হয়েছে।ভেবেছিলাম ফিরে গিয়ে বলব।এখন উনাকে দেওয়ার মত কোন উত্তরও আমার কাছে নেই।আবার ও চুপ রইলাম।উনার কপালের চামড়ায় ভাজ পড়েছে কয়েকটা।

উনি আবার প্রশ্ন করলেন,

‘কী হলো!চুপ কেনো?কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি তোমাকে।লিসেন সারাহ সিদ্দিকী নাউ এট দিস টাইম,আ’ম ইওর লিগ্যাল গারজিয়ান।ইউ আর মাই ওয়াইফ এন্ড আই আ্যম ইওর হাজবেন্ড।সো, উইদাউট মাই পারমিশন তুমি কোত্থাও যেতে পারবে না।আমার একটা রেসপন্সবিলিটি আছে তোমার প্রতি।তোমার কিছু হলে তোমার মা-বাবার কাছে আমাকে জবাবদিহি হতে হবে।এভাবে এলোমেলো চলা ফেরার জন্য যদি তোমার কিছু হয় তাহলে কী জবাব দিব আমি তাদের?”

হঠাৎ যেনো কেমন মন খারাপ হয়ে গেলো আমার।কষ্ট হচ্ছে,নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে।তাকিয়ে আছি উনার মুখের দিকে।আমাকে নিয়ে একটু বিশেষ ভাবে ভাবার মত কী কেউই নেই।শুধুই কি বাবা-মায়ের কথা ভেবেই উনি অমন করছেন আমার জন্য বিন্দু মাত্র খারাপ লাগা নেই।কই স্বামীরা তো অমন হয়না।তারা তো তাদের বউদের প্রাণ উজাড় করেই ভালবাসে।আমার জীবনে সব থেকে বেশী আমি ভালবাসা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম অথচ আমিই ভালবাসার মানুষ পেলাম না।খুব করে নিজের একজন মানুষ চেয়েছিলাম আমি,যে হুট করেই আমার জীবনে আসবে।এলোমেলো জীবন টা গুছিয়ে দিবে তার ভালবাসায়।খুব স্বপ্ন ছিলো এমন ই কোনো ঝুম বৃষ্টির দিকে বায়না ধরব, ‘চলোনা বৃষ্টিতে ভিজি’আমার হাসি মুখ বিলীন হবার ভ**য়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে ভিজবে,আমার হাত ধরে একটা প্রেমের কবিতা শোনাবে।বর্ষার প্রথম কদম এনে বলবে, অনেক খুজে তোমার জন্য নিয়ে এসছি।হুটহাট ফুচকা খাওয়ার বায়না ধরব, ‘সে বলবে রেডি হয়ে নাও।আমরা এখনি ফুসকা খেতে যাবো।’চাঁদনী রাতে ছাদে গিয়ে তার বুকে মাথা রেখে সুয়ে সুয়ে চাঁদের গল্প করব।যে আমাকে হুটহাট করে জড়িয়ে ধরে বলবে, ‘আই লাভ ইউ, ভালবাসি তোমায়,বড্ড ভালবাসি।তুমি ছাড়া কেউ নেই,আশে-পাশে বামে -ডানে কেউ নেই।আমার হৃদয়ের পুরো অস্তিত্বের দখলিনী তুমি।আমার হাজারো বায়না থাকবে তার প্রতি।একজন প্রেমিক চেয়েছিলাম আমি অথচ পেলাম না।আসলে মানুষের কল্পনার জগৎটা অনেক সুন্দর। বাস্তবতা ভীন্ন,সম্পূর্ণ।মানুষ ভাবে এক হয় আরেক।

মুখ ফসকে বের হয়ে গেলো,

‘শুধুই মা-বাবার কাছে জবাবাদিহীতার ভ**য় স্যার?আর কোনো দায় নেই?’

হঠাৎ আমার এহেন প্রশ্নে উনি কেমন ইতস্তত বোধ করলেন।চেহারায় হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল।কিন্তু উনি রেগে থাকায় সেটা বুঝতে দিলেন না।মুখভঙ্গি আবার আগের মতই গম্ভীর আর থমথমে রেখে বললেন,

‘চারদিকে এত বজ্রপাত,মেঘের গর্জন কোন সাহসে তুমি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলে?আর কী এমন ইমারজেন্সি কাজ ছিল যে বের হয়েছ?এসব কিন্তু আমার একদমই পছন্দ নয় সারাহ।আমার সাথে থাকতে হলে অবশ্যই তোমাকে কিছু ডিসিপ্লিন মেনে চলতে হবে।তা না হলে তোমার মা-বাবার কাছে রেখে আসতে বাধ্য হব আমি।আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।’

‘দেখুন আমি বলতাম আপনাকে।’

উনি আমার দুই হাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,

‘কখন বলতে? আমি পা**গ**ল হয়ে গেলে,আমি তোমার চিন্তায় উ**ন্মা**দ হয়ে গেলে বলতে?তোমার আইডিয়া আছে আমি কোথায় কোথায় খুঁজেছি তোমায়?সেই সকাল থেকে দুশ্চিন্তায় আমি পা**গ**ল হয়ে যাচ্ছি।এখন কয়টা বাজে তাকিয়ে দেখ, একটা বাজে আর তুমি বের হয়েছ সেই সকালে।চারদিকে বজ্রপাতে মানুষ মা**রা যাচ্ছে।আর তুমি এই ওয়েদারে বাসা থেকে কীভাবে বের হলে?তোমার না হয় কারো প্রতি কোনো দায়ভার নেই, কিন্তু মানুষের আছে।তুমি কারো কথা না ভাবতে পারো,কিন্তু মানুষ তোমার কথা ভাবে।তুমি একটা বেপরোয়া মেয়ে,নিজের খেয়াল খুশিমত চলাফেরা করো,তোমার তো এই চিন্তা নেই যে কেউ তোমার জন্য চিন্তিত হতে পারে বা তোমার কিছু হলে কারো পুরো পৃথিবীটাই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে!সবাই কে কি নিজের মত ভাবো?আড়ালে যে কেউ তোমার চিন্তায় অস্থির হতে পারে সেই আইডিয়াটুকুও নেই তোমার।ইউ আর জাস্ট ঠু মাচ!’

‘কে আছে এমন?যে এভাবে ভাববে আমার কথা।সত্যি যদি কেউ ভাবত তাহলে কি আর আমি এত বেপরোয়া থাকতাম?যদি জানতাম কেউ আমাকে নিয়ে চিন্তিত তাহলে, নিশ্চয়ই তাকে জানিয়েই সব করতাম।’

‘কেনো তোমার মা-বাবা নেই?তারা কি তোমার কথা ভাবেন না।।নাকি তাদের কে গুরুত্বপূর্ণ কেউ বলে মনে হয়না তোমার।’

‘মা-বাবা বাদে আর কেউ নেই বলেই এই বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে আসা মেয়েটাকে যে পাচ্ছে সেই বকছে।জিজ্ঞাসা করছে না আমার ঠান্ডা লাগছে কিনা!এই ভেজা কাপড়ে কষ্ট হচ্ছে কিনা!আর আমি কি বিএফ এর সাথে দেখা করতে গিয়েছি নাকি যে এত বকাঝকা করা হচ্ছে?

‘ঠান্ডা লাগবে বলেই তো বকা দেওয়া হচ্ছে, সেটুকু বোঝায় বোধ থাকলে এগেইন কোয়েশ্চন করতে না।আর বিএফ থাকলে কেউ একা একা ভিজে ভিজে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করেনা,আর ফোন রেখেও চলে আসেনা।এটা বোঝার জ্ঞান সবার আছে।’

‘শুধু শুধু বকলেন আমাকে!জীবনে কেউ কোনদিন এভাবে ধমক দেয়নি আমাকে!জীবনে প্রথম বার এমন বেশি কথা শুনলাম।’

বেশ মন খারাপ করেই কথাটা বললাম।

উনি ওনার গায়ের ব্লেজার খুলে আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললেন,

‘সকাল থেকে কিছু খেয়েছ?’

‘হ্যাঁ।’

‘মিথ্যা বলছ কেনো?চোখ মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গিয়েছে তোমার!’

‘আপনি খেয়েছেন?’

‘যে টেনশন আমাকে দিয়েছ,আর খাওয়া!’

‘তাহলে বাসায় চলুন!’

‘এই ভেজা শরীরে অটো বা রিক্সা কিছুতেই যাওয়া যাবেনা।শরীরের সমস্ত ভাজই বোঝা যাচ্ছে তোমার।এগুলা কী পোশাক পরো যে সামান্য পানি লাগলেই শরীর বোঝা যায়।’

‘দেখুন আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড সু**ই**সা**ই**ড করেছে,এইজন্য মাথা ঠিক ছিল না বেরিয়ে গিয়েছিলাম।জানেন বিশাল এক কারণ আছে।’

‘নিশ্চয়ই কোনো মেয়ের জন্য?’

‘বুঝলেন কীভাবে?’

‘এই বয়সী ছেলেমেয়েরা এসবই করে।’

‘আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হয় স্যার।আর আপনার স্টুডেন্ট। আপনি এমন ড্যামকেয়ার ভাবে কীভাবে বলতে পারলেন?একটা মা**নু**ষ ম**র**তে বসেছে আর আপনার খারাপ লাগছে না!মানুষ এত হৃদয়হীন কীভাবে হতে পারে?’

উনি আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন।কোনো কথারই উত্তর দিলেন না।

এরই মাঝে ক্যাম্পাসে একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কার এলো।কার টা আমাদের কাছে এসেই থামল।ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই উনি বললেন,

‘ওঠো!’

আমি উনার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘আবার প্রাইভেট কার!আমি উঠব না।আমার ব**মি হয়,মাথা ঘুরায়।’

উনি ড্রাইভার কে বললেন, ‘ভাই বমির ওষুধ টা দিন।’

ড্রাইভার বমির ওষুধ টা এগিয়ে দিলেন।উনি ওষুধ টা খুলে আমার ওষ্টদ্বয়ের মধ্য দিয়ে বললেন, ‘নাও এটা চুষে খেয়ে নাও।মাত্র বিশ মিনিটের রাস্তা কিছুই হবেনা।’

উনার আঙুলের ছোঁয়া ওষ্টে লাগতেই কী ভ*য়া*ন*ক ফিলিংস হলো!আকাশে চমকানো বিদ্যুতের থেকেও যেন বেশি ভ*য়া*ন*ক।কী অস্থির এক শিহরণ!কেমন যেন অবশ হয়ে আসল শরীর।গাড়িতে বসে কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ছি।মাথা যন্ত্রণায় ফেঁ**টে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।চোখ আর খুলে রাখতে পারছিনা।শরীরে অস্বাভাবিক মাত্রায় তাপ চলে এলো।টলমল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ফর্ম ফিল-আপ তো করিনি।’
‘আমি করে দিয়েছি।’
‘আমার বান্ধবীর সমস্যা ওর টাও করতে হবে।’
‘ সময় বাড়ানো হয়েছে দুই দিন পরে করে নিতে বলো।এখন তুমি অসুস্থ বাসায় চল।’
কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।উনার কঁধেই হেলে পড়লাম।

চোখ খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিছানায়।শরীরে প্রচন্ড জ্বর ।গায়ের উপর মোটা লেপ আর কম্বল।খেয়াল হলো আমি তো ভেজা কাপড়ে ছিলাম,বিছানায় কী ভেজা কাপড়েই আছি!বেলকনিতে চোখ যেতেই দেখি, ভেজা কাপড় মেলে দেওয়া।কেউ অতি যত্নে তা ধুয়ে মেলে দিয়েছে।বাইরে এখন বৃষ্টি নেই।রোদ ঝলমল করছে।চারদিক কেমন চুপচাপ হয়ে আছে।আমার কাপড় কে পাল্টে দিয়েছে।খেয়াল করে দেখি আমার পায়ের নিচে বসে আছে রোশান স্যার।পায়ের তালুতে সরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছেন।আমি সাথে উঠে বসে পা গুটিয়ে নিয়ে বললাম, ‘ছিঃ!ছিঃ!কী করছেন আপনি?আমার পায়ে হাত দিয়েছেন কেনো?’
‘ঘুম ভাঙল।কেমন লাগছে এখন।’
‘আপনি আমার পায়ে হাত দিয়েছেন কেনো স্যার।’
উনি উঠে এসে আমার কপালে হাত রেখে বললেন,
‘উফফ তাপ তো কমেই নি, এখনো।ভিজবে আর এভাবে?সামনে পরীক্ষা।এখনই জ্বর বাঁধাতে হল।’
‘তাই বলে আমার পায়ে হাত দিবেন আপনি?’
‘কেনো তোমাকে ছোঁয়াতে কি নিষেধ আছে আমার।’
‘না না তা নয়,স্বামী হয়ে পায়ে হাত দিলেন।আমার পাপ হলো না?’
‘কথা বলা শেষ হলে খাবার খেয়ে নাও।ওষুধ খেতে হবে।’
‘আমার কাপড় চেঞ্জ করেছে কে?’
‘ভেজা কাপড় চেঞ্জ করাটা বেশি জরুরী ছিল।কে চেঞ্জ করিয়েছে সেটা জরুরী নয়।’
‘অবশ্যই জরুরী।আপনি আমার কাপড় চেঞ্জ করে দিলেন।আমার অসুস্থতার সুযোগ নিলেন।’
‘কেনো তোমাকে ছোঁয়া যাবে না!’
‘না সেটা নয়,তাই বলে আপনি।’
‘উদ্ভট চিন্তা থাকে সব সময় মাথায়।অসুস্থ তুমি,এত হাইপার হইও না।তরী চেঞ্জ করিয়ে গিয়েছে।এইবার ওঠো খেতে হবে।’
উনি আমাকে ধরে উঠিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসালেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি।মানুষ টা কত যত্নশীল।গায়ে কফি কালারের গেঞ্জি,হাতা গুটিয়ে ভাত মাখিয়ে আমার মুখে তুলে দিলেন।মুখ তেতো হয়ে আছে।একবার খাবার মুখে নিয়ে মুখ সিঁটকে খাবার ফেলে দিলাম।উনি একটু ধমক দিয়েই বললেন, ‘খাও কুইক।না খেলে ওষুধ খাবে কীভাবে?আর বিশ্ব যুদ্ধ কীভাবে করবে তুমি?ঝ**গ**ড়া করতে প্রচুর সামর্থ্য প্রয়োজন।’
‘খাবার ভাল লাগছে না আমার।অন্য কিছু হলে খেতাম।’
‘কি খেতে।’
‘নুডুলস হলে খেতে পারতাম।’
‘আচ্ছা একটু অপেক্ষা করো।’

উনি রুম থেকে বেরোনোর পনেরো মিনিট পরে নুডুলস নিয়ে এলেন।নুডুলস দেখে বললাম,
‘কে রান্না করল?’
‘আমি।’
‘আপনি রান্না করলেন?তাও আমার জন্য।’
‘হ্যাঁ, তোমার জন্য।’
‘পারেন আপনি?’
‘বিয়ের মত এমন কঠিন কাজ যখন পেরেছি, নুডুলস তো ইজি রান্না।’
‘শুধু একটু কবুল বলেছেন আর কী করেছেন?’
‘ওই তিন অক্ষরের কবুল বলেই তো চ**র**ম স**র্ব**না**শ হল আমার।’
‘কি ক্ষ**তি করেছি আপনার আমি।যে স**র্ব*না*শ হল।’
‘এটা ক্ষ**তি**র জন্য নয়।এই স★★র্ব★না★* শে কারো ক্ষ★তি হয়না।এটা ভীন্ন।তুমি বুঝবে।যা হবার আমার
হয়েছে তাই আমি উপলব্ধি করতে পারছি।’

নুডুলস খাইয়ে দিয়ে, ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বললেন,
‘শুয়ে থাকো,একটুও উঠবেনা।’

আম্মুকে ফোন দিয়ে বললাম,
‘আম্মু ৫ হাজার টাকা লাগবে।একজনের থেকে ধার নিয়ে ফর্ম ফিল-আপ করেছি দিতে হবে।’
রোশান স্যার ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমার কান থেকে ফোনটা নিয়ে কেটে দিয়ে বললেন,
‘কার থেকে টাকা ধার নিয়েছ?’
‘আপনি?’
‘কখন নিলে?’
‘ওইযে টাকা দিয়ে দিলেন তো।সেটা ফেরত দিবো।’
‘আমার মান-সম্মান নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছ?’
‘কেনো?’
‘মা-বাবার থেকে টাকা চেয়ে কী প্রুভ করছ,আমি তোমাকে টাকা দেইনা?তোমাকে বিয়ে করেছি কিন্তু দায়িত্ব নেই নি তাইতো।ওয়াইফ আমার তুমি টাকা কেনো অন্য কেউ দিবে।’
‘ভাবতেই পারেন,দুই দিন বিয়ে হতে পারেনি ফর্ম ফিল-আপের টাকা আমার ঘাড়ে তুলে দিয়েছে।’
‘এসব উদ্ভট ভাবনা না ভেবে রেস্ট নাও।তোমাকে সুস্থ হতে হবে।আর আমিও ঘুমাব।’

উনি ঘরের দরজা লক করে দিয়ে এসে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লেন।কয়েকবার কপালে হাত দিয়ে দিয়ে চেক করলেন তাপ কমেছে কিনা।এরই মাঝে কেউ এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে।উনি গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।আমিও দ্রুত বিছানা ছেড়ে সোয়া থেকে উঠে বসলেন।উনি দরজা খুলতেই দেখি রোহান বল হাতে দাঁদিয়ে আছে।রোহান কে কোলে তুলে বললে,
‘কি ব্যাটা কি হয়েছে?’
‘বল খেলার মানুষ নেই বড় পাপ্পা।আমি তোমার সাথে খেলব।
‘তোমার পাপ্পা কই।’.
‘পাপ্পার যেন কি হয়েছে।শুধু রাগ করছে, ঘরের জিনিস প ত্র ভা-ঙ-ছে।আম্মুকে বারবার মারতে চাইছে।’
“কেনো?’.
‘নতুন আম্মাকে নিয়েও ঝামেলা হচ্ছে।বাবা আর দাদুর কাপড় ধোয়া নিয়ে।বাবা আর দাদুর সমস্ত শরীর চুলকাচ্ছে।এটা নিয়ে আম্মুকে বলছে কেনো নতুন আম্মার কাছে কাপর ধুতে দিয়েছে।আবার বুড়ো দাদা,আর দাদু তারা বলছে কই আমাদের তো চুলকাচ্ছে না।এসব নিয়ে অশান্তি হচ্ছে।

আমি মুচকি হাসলাম।বোঝ এইবার কেমন লাগে।তরীকে দিয়ে গুষ্টিসহ মানুষের কাপড় ধোয়ানো।এখন থেকে যতবার ই এমন করবি ততবার ই বিচুটি পাতা দিবো আমি।

রোশান স্যার ওদেইকে যে বড় সড় ঝামেলা হয়েছে সেটা বুঝতে পেরে বললেন,

‘ব্যাটা ঝামেলার দিকে যাওয়ার দরকার নেই আসো আমরা বল খেলি।’

আমি বললাম, ‘আমিও খেলব।’

‘তুমি চুপ করে সুয়ে থাকো।’

‘আমি বিছানায় বসেই খেলব।’

রোহান খুশিতে হাতে তালি দিলো।

খেলার নিয়ম বল একজনের হাত থেকে অন্য জনের হাতে যাবে।একজন ছুড়ে অন্য জনের হাতে দিচ্ছি।এমন দিতে দিতে একবার আমার খুব জোরে দেওয়া হয়ে গেলো।বল এত জোরে ছুড়লাম রোশান স্যারের গুপ্ত স্থানে গিয়ে লাগল।উনি উঁহ শব্দ করে উঠলেন।রোহান এগিয়ে এলো আর আমিও এগিয়ে গেলাম।বলে উঠলাম দেখি কই লেগেছে।উনি অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘হোয়াট।’

কী অদ্ভুত সে চাহনি।আমি লজ্জায় দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।কি বলতে কি বলে ফেলি নিজের ই খেয়াল থাকেনা।

চলবে?..