একটি সাঁঝরঙা গল্প পর্ব-০৬

0
66

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_০৬

ছয়টা চল্লিশ। সাতটা বাজতে খুব বেশি দেরি নেই। নিশো বাহিরে থেকে এসে তোয়ালেটা নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল । মাগরিবের পর মসজিদের সামনের ফাঁকা মাঠটায় পাশের মাদ্রাসার ছেলেদের সাথে এতক্ষণ ফুটবল খেলেছে সে। ঘেমে একাকার অবস্থা। গোসল না করলে সাথে থাকা যে কেউ ঘামের গন্ধে নাক সিঁটকাবে।

রাবেয়া বেগমের কথানুযায়ী আজ থেকে ফালাককে পড়াতে হবে। প্রথমদিনে অন্তত অস্বাভাবিক কিছু হোক সেটা নিশো চায় না। এর আগে ফালাকের সাথে খুব বেশি সময় একসাথে কাটানো হয়নি। সম্পর্কটা অন্যান্য চাচাতো ভাই-বোনদের মতো নয়। ভেতরে ভেতরে একটু অস্বস্তি অনুভব করছে সে।

গোসল শেষ করে বের হলো নিশো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বেশ অন্যরূপে আবিষ্কার করল। গোসলের পর চুলগুলো যেন আরও বড় লাগছে। চুলে ঘন রোমশ ভ্রুযুগোল ঢাকা পড়েছে। চাপ দাঁড়ি পুরো গাল জুড়ে অবস্থান করছে। কিছুদিন আগেও কিছু কিছু জায়গা একটু ফাঁকা ছিল কিন্তু এখন সেটা নেই। বলিষ্ঠদেহ আগের চেয়ে ফর্সা লাগছে। নিজের এত এত সৌন্দর্যের মাঝে ঠোঁটের দিকে নজর গেল তার। ঠোঁটের বর্ণ গাঢ় খয়েরী হয়েছে। সিগারেটখোর হিসেবে তাকে দেখে যে কেউ চিহ্নিত করতে পারবে। কম সিগারেটের ধোঁয়া মিশেনি তো এই ঠোঁটে। পুড়*বে না!

মাথা ভালোভাবে মুছে কালো রঙের শার্টটা পরে নিল সে। লুঙ্গি পাল্টে প্যান্ট পরে এদিক ওদিক হাতের ঘড়িটা খুঁজলো। পেল না। এদিকে ও বাড়িতে যাওয়ার সময়ও হয়ে যাচ্ছে ভেবে ফোনস্ক্রিনে সময় দেখল। এখনো হাতে সাত মিনিট সময় আছে। ইন্টারমিডিয়েটের বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে ইউটিউবে চলে গেল।

সময় যখন কাটায় কাটায় সাতটা তখনই আরেকবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিকঠাক লাগছে কি না সেটা দেখে নিল। আজ নিজের প্রতি নিজের এত খেয়াল দেখে নিশো নিজেই অবাক হচ্ছে। কই আগে তো নিজের প্রতি নজর দিতে ইচ্ছে করেনি তার! আজ কেন এত অস্বাভাবিক লাগছে নিজেকে! শ্বাস টানলো সে৷ নিজেকে স্বাভাবিক করার বৃথা চেষ্টা করল। কোনভাবেই স্বাভাবিক হতে সে পারছে না। মেয়েটার সাথে টানা একঘণ্টা সময় সামনাসামনি বসে কাটাতে হবে। কী দমবন্ধকর অবস্থা!

চিন্তা কমাতে একটা সিগারেট প্রয়োজন। দ্রুত পায়ে বিছানার দিকে গেল সে। বালিশের নিচে থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার নিল সে। সেখান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে আ*গুন ধরিয়ে ঠোঁটে ছোঁয়ালো সে। বালিশের পাশেই থাকা কালো হালকা গোল ফ্রেমের চশমাটা পরে নিল। সিগারেটটা বাহিরে শেষ করবে ভেবে দরজা লক করে ফালাকদের বিল্ডিংয়ের দিকে হাঁটা ধরল।
________

না পেয়ে তোমার দেখা
একা একা দিন যে আমার কাটে না রে
ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে
ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে!

গানটা শেষ করতেই দরজার দিকে চোখ গেল ফালাকের। নিশো দাঁড়িয়ে আছে। কখন এসেছে বুঝতে পারেনি ফালাক। ফালাকের জন্য রাবেয়া বেগমের মন খারাপ ছিল বলে মায়ের মন ভালো করতে মাকে গান গেয়ে শুনাচ্ছিল সে। শেষে মায়ের গলা জড়িয়ে গানে ব্যস্ত থাকায় দরজার দিকে খেয়াল করেনি সে। উঠে দাঁড়াতেই নিশোকে দেখে জোরপূর্বক হাসি ফুঁটালো ঠোঁটে। লজ্জা লাগছে তার। গান কি নিশো শুনে নিল।

ফালাকের থ’ মেরে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে নিশো বলে উঠল,“আসব?”

রাবেয়া বেগম চকিতে পিছনে ফিরে তাকালেন। নিশোকে দেখে মৃদু হেসে বললেন,“আরে নিশো যে! আয়, বাবা। ভেতরে আয়। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

নিশো ধীরগতিতে ভেতরে প্রবেশ করল। ফালাক মাঝখান থেকে সরে দাঁড়ালো। রাবেয়া বেগম উঁঠে দাঁড়ালেন। মৃদু হেসে বললেন,

“আইসিটি, ইংরেজি, বাংলা এই তিনটা দেখিয়ে দিবি মেয়েটাকে। একঘণ্টায় তো হবে না, দেড়টা ঘণ্টা একটু সময় দিস, বাবা।”

নিশো হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ালো। সরোষ দৃষ্টি ফেলে বলল,“আমি তো ফ্রিই থাকি, চাচি। এর চেয়েও বেশি সময় দিতে আমার বাঁধবে না।”

রাবেয়া বেগম মৃদু হাসলেন। এই ছেলের কাজ, কথায় সর্বদা তৃপ্তি পান তিনি৷ ফালাকের দিকে চেয়ে বললেন,“ভাইয়াকে জ্বা*লাবি না একদম। মন দিয়ে পড়বি। রেজাল্ট খারাপ কিন্তু কোনভাবেই মেনে নিব না আমি। আর নিশো, এক সপ্তাহে যা পড়াবি সেটার একটা করে পরীক্ষাও নিবি। আমি নম্বর দেখব ওর। এই মেয়ে অন্যসব দিকে একশোতে একশো শুধু পড়তে চায় না।”

শেষের কথাটা নিশোর দিকে তাকিয়ে বললেন রাবেয়া বেগম। নিশো মাথা নাড়লো। রাবেয়া বেগম আরও দুই একটা কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ফালাক এগিয়ে এসে টেবিলের একপাশের চেয়ার টেনে বের করে নিশোকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“বসুন।”

নিশো পরিমিত হাসলো। ফালাকের কথামতো চেয়ারে গিয়ে বসলো। ফালাক টেবিলের অপরপ্রান্তের আরেকটা চেয়ার বের করে সেখানে বসলো।

নিশো শুধালো,“ক্লাস হচ্ছে?”
“না।”
“পরিক্ষার কতদিন বাকি?”
“উমম হিসেব করলে সাড়ে তিন মাসের মতো। চারমাস সময় নেই।”
“কলেজে কোচিং চলে?”
“হ্যাঁ চলে কিন্তু ওখানে তো এখন কিছু বুঝিয়ে দেয় না সেরকম শুধু রিভাইস আর রিভাইস। আমি যেটা বুঝি না সেটা জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগে। ”

নিশো মুহূর্ত কয়েক স্থিরচোখে ফালাকের দিকে চেয়ে রইল তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করে বলল,“প্রথম আধাঘণ্টা ইংরেজি। দ্বিতীয় আধাঘণ্টা বাংলা আর তারপর আইসিটি। এখন ইংরেজির সময় চলছে সুতরাং পাঁচ মিনিট সময় দিলাম ইংরেজি ব্যাকরণের সূচিপত্র দেখে আমাকে জানাও কোনটা কোনটায় সমস্যা। কোনটা প্রথমে পড়তে হবে? তোমার সমস্যা থেকেই সমাধান শুরু হোক। নাও স্টার্ট করো।”

ফালাক আর কথা বাড়ালো না। বাধ্য মেয়ের মতো প্রথমদিন পড়া শুরু করল। এমনিতেও সে অবাধ্য হওয়ার মতো মেয়ে নয়। সময়ে অসময়ের কোনকিছু চলমান থাকলে সেটা তার পছন্দ হয় না সুতরাং সে সবকিছু ভুলে পড়ায় মন দিল।

নিশোরও কোনভাবে এতটা সময়ে একটুও অস্বস্তিতে পড়তে হলো না। অন্যসময় যেমন ফালাক ছোট ছোট বাক্যে বেশ অন্যরকমভাবে তার সাথে কথা বলে সেটার ভিন্নতা প্রকাশ পেল এবার। তবে ফালাকের মুখে আজ হাসিটা দেখতে পায়নি সে। মাঝেমাঝেই কেশে উঠেছে। ফালাককে দেখে অসুস্থও লেগেছে তার কাছে।

ঘড়িতে আটটা পঁয়তাল্লিশ। সময় কীভাবে এত তাড়াতাড়ি গেল বুঝতেই পারলো না কেউ। ফালাক হঠাৎ ঘড়ি দেখে বলল,

“অনেক সময় চলে গিয়েছে তো। আটটা পঁয়তাল্লিশ বাজে।”
“আজকের মতো এই অবধিই থাকুক তাহলে। বাসায় কিন্তু পড়তে হবে একা একা। শুধু প্রাইভেট পড়লে রেজাল্ট ভালো হবে না।”
“হ্যাঁ পড়ব।”
“তাহলে আমি আসছি। পড়ার সময় কোনকিছু না বুঝলে চিহ্নিত করে রাখবে।”

“এখন আর রুমে যেতে হবে না। একদম খেয়েই যান। আমি মাকে বলছি।” বলেই কেশে উঠল ফালাক। সাদা দুটোগাল যেন রক্তবর্ণ ধারণ করল। চোখ ভিজে উঠল।

নিশো প্রশ্ন করে বসলো, “ঠান্ডা লেগেছে?”

ফালাক উত্তর দেওয়ার আগেই নিশোর ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল। নিশো পকেট থেকে ফোনটা বের করার জন্য দাঁড়াতেই ফালাক চিৎকার দিয়ে উঠল।

নিশো অবাক হয়ে ফালাকের দিকে তাকালো। ফালাক চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। নিশো অনুভব করল সে ফালাকে পায়ের ওপর পা রেখেছে। সাথে সাথে পা সরিয়ে নিলো সে। ফালাক চোখ খুলল। চোখ দুটো টলমল করছে৷ নিশো অবাক হলো এটুকুতেই চোখে পানি!

আমতা আমতা করে বলল,“স্যরি, আমি আসলে খেয়াল করিনি।” কলটা কেটে আবার ফালাকের দিকে তাকালো।

এতক্ষণে পাশের রুম থেকে রাবেয়া বেগম ছুটে এসেছেন। মেয়ের চিৎকার কানে পৌঁছতেই দৌঁড়ে এসেছেন তিনি। রুমে ঢুকে ফালাককে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

“কী হয়েছে, মা?”

ফালাক মুহূর্ত কয়েক মৌন থেকে বলল,“ আমি দাঁড়ানোর সময় টেবিলের সাথে পায়ে লেগেছে৷ র*ক্ত বেরোচ্ছে হয়তো ওখান থেকে।”

রাবেয়া বেগম আফসোসের সাথে বলে উঠলেন,“ ইশ! কেন যে রান্নাঘরে যেতে গেলি তখন! বিপদ লেগেই আছে।”

নিশো কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল,“কী হয়েছে পায়ে?”
ফালাক সংক্ষেপে বলল,“পা কে*টেছে।”
“কীভাবে কা*টলো?”
“মা’র হাত থেকে মগ পরে ভেঙে গিয়েছিল। আমি তখন রান্নাঘরে যেতেই ফ্লোরে থাকা ভাঙা অংশের একটু পায়ে ঢুকে গিয়েছিল।”

নিশো চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল। কপালে হাত দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করল। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল ফালাক পা একটু উঁচু করে একপায়ে মাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেঝেতে সাদা টাইলসে র*ক্ত স্পষ্ট দেখতে পেল সে৷ অপরাধবোধ হচ্ছে তার। কেন যে তাড়াহুড়ো করে দাঁড়াতে গেল তখন!

পায়ে ব্যান্ডেজ নেই দেখে রাবেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,“চাচি, বাসায় স্যাভলন আর ব্যান্ডেজ হবে?”

রাবেয়া বেগম মাথা নাড়লেন।
“হ্যাঁ আছে তো।”
“একটু এনে দিবেন, প্লিজ?”
“হ্যাঁ, আমি এনে দিচ্ছি।”

রাবেয়া বেগম ফালাককে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স এনে নিশোর হাতে ধরিয়ে দিলেন। নিশো চেয়ার টেনে বিছানার কাছাকাছি এসে বসলো। ইতস্তত করতে করতে ফালাকের পা স্পর্শ করল। মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নিল ফালাক। কী একটা মনে করে পা সরিয়েও নিলো৷ বলল,

“আপনি আমার বড়। পায়ে হাত দেয়া বিষয়টা ভালো দেখাচ্ছে না। এগুলো আমার কাছে দিন, আমি পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিচ্ছি।”

নিশো ফালাকের পা আবার নিজের হাতে নিলো। বলল,“সব ডাক্তার নিশ্চয়ই তোমার ছোট না?”
“আপনি তো ডাক্তার না।”

পাশের রুম থেকে জাভেদ সাহেবের স্বর ভেসে এলো। রাবেয়া বেগম বাহিরের দিকে একবার দেখে বললেন,“মা, ভাইয়াকে একটু ব্যান্ডেজটা লাগিয়ে দিতে দে। আমি এসব পারি না। আবির থাকলে ও নিজেই দিতো৷ তোর বাবা ডাকছে। দেখি কী হলো!”

রাবেয়া বেগম বেরিয়ে গেলেন৷ নিশো স্যাভলনের শিশির ক্যাপ খুলে তুলোতে মাখিয়ে নিলো। ফর্সা পা রক্তে লাল হয়ে আছে। পায়ের তালুতে বেশ খানিকটা কে*টেছে। স্যাভলন ছোঁয়াতেই ‘আহ’ শব্দ করে বেডশীট খামছে ধরল ফালাক। চোখ আবার ছলছল করে উঠল।

নিশো বলল,“একটু জ্বা*লাপো*ড়া করবে। সহ্য করে নাও। আমি আসলে স্যরি, তখন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে…”
“আপনার কোন দোষ নেই। এভাবে বলবেন না।”
“একটু সাবধানে চলাফেরা করবে তো।”
“আমি খুব একটা চঞ্চল প্রকৃতির নই। তখন কীভাবে যেন ওটা হয়ে গেল।”
“আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি। পা ভিজাবে না একদম।”
“আচ্ছা।”
“পায়ের এই ব্যথা নিয়ে চাচিকে গান গেয়ে শোনাচ্ছিলে?”
“আসলে আমার পায়ের অবস্থা দেখে মন খারাপ করে ছিল তাই একটু মন ভালো করে দিচ্ছিলাম।”
“বাহ, মন ভালো করার দায়িত্ব নিয়ে রেখেছ!”
“হুম। আমার মানুষদের মন খারাপ দেখতে ইচ্ছে করে না। তাদের ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।”
“তোমার মানুষ? ”
“হুম।”
“অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কথা বলছো কেন? আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলা যায় না?”

ফালাক কিছু বলল না। নিশো ফালাকের পায়ের কে*টে যাওয়া অংশটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেধে দিল। বক্সটা পিছনে ঘুরে টেবিলের ওপর রেখে বলল,

“হাঁটাহাঁটি বেশি করবে না। আমি একটু বাহির থেকে আসছি। তোয়া কল দিয়েছিল।”

উঁঠে দাঁড়ালো নিশো। বাহিরের দিকে পা বাড়াতেই ফালাক বলল,“আপনি প্লিজ আমার কাছে আসার সময় মানে আমাকে পড়াতে আসার আগে সিগারেট খাবেন না। গন্ধ সহ্য হয় না আমার। আপনার গা থেকে কড়া গন্ধ আসছিল। সিগারেটের গন্ধ কেমন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কাঁশি হয়। যদিও কাঁশি আমার পিছু ছাড়ে না তবে এই পরিস্থিতিতে বেশি হয়।”

নিশো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ফালাকের কথাগুলো শুনলো। কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

#চলবে……