একটু বেশিই ভালোবাসি পর্ব-১৩

0
3206

#একটু_বেশিই_ভালোবাসি
#Maishara_Jahan
Part……………13

কিছু ক্ষন পরে টিভিতে একটা মাডার্ নিউজ শুনে সবাই দাঁড়িয়ে যায়।

পুলিশ আসে মেঘাদের বাড়িতে, সেখানে রাফিও আসে।

অয়ন,,,,,,,,তুমি এখানে।

রাফি টিভি দিকে তাকায়, তাকিয়ে বলে,

রাফি,,,,,,,,, কে খুন হয়েছে সেটাতো জেনেই গেছো, এর খুনের পিছনে তোমার হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

মেঘা,,,,,,,,, মানে অয়নকে সন্দেহ কেনো হচ্ছে।

রাফি,,,,,,,,,, অয়নের নামে কমপ্লেন করেছে এর মা বাবা।

ফারিয়া,,,,,,,,, রিমানের ফোন লাগছে না।

অয়ন,,,,,,,,,, বাবা কি বলেছে।

রাফি,,,,,,,, বলেছে সে আপনাকে সন্দেহ করে। আপনি নীলকে পছন্দ করতেন না।

মেঘা,,,,,,,,, পছন্দ করে না বলে এই না যে, অয়ন নীলকে মেরে ফেলবে। অয়ন তুমি কিছু বলছো না কেনো।

রাফি,,,,,,,,,, সরি বাট আমাকে অয়নকে এরেস্ট করতে হবে।

রিমান,,,,,,,,, কোনো প্রমান আছে তোমার কাছে যে, নীলকে আমার অয়ন মেরেছে।

রাফি,,,,,,,,,,, যথেষ্ট প্রমান নেয়, তবে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে আমাদের কাছে। চলো অয়ন।

ফারিয়া,,,,,,,, কোথায় ছিলেন আপনি,ফোন কেনো ধরছিলেন না।

রিমান,,,,,,,,, ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে, আর নীলেকে আমাদের হসপিটালেই ভর্তি করানো হয়।

অয়ন,,,,,,,,, কিভাবে হত্যা করানো হয় নীলকে।

রিমান,,,,,,,, যে এই নীলকে হত্যা করেছে বা করিয়েছে সে একটা পাগল, প্রথমে চারটা গুলি করে মেরেছে, মারা যাওয়ার পর ছুরি দিয়ে অনেক আঘাত করেছে।

রাফি,,,,,,,,এখন কিছু করার নেয়, অয়ন তোমাকে থানায় যেতে হবে।

মেঘা,,,,,,,,, না অয়ন কোথাও যাবে না।

অয়ন,,,,,,,, তুই থাক আমি আসছি।

রিমান,,,,,,,,, আমিও আসছি তোর সাথে।

অয়নকে পুলিশ স্টেশন নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেঘা রিমান ও আসে। অয়ন গিয়ে দেখে তার বাবা আর সৎ মা বসে আছে। অয়নকে দেখে তারা দৌড়ে আসে। এসে অয়নের বাবা অয়নকে একটা থাপ্পড় মারে। রিমান দৌড়ে আসে।

রিমান,,,,,,,,, আংকেল কি করছেন।

বাবা,,,,,,,,,,, এতো কি শত্রুতা ছিলো নীলের সাথে, যে ওকে মেরেই দিলি।

অয়ন,,,,,,,, আমার শরীরে আপনার রক্ত থাকলেও চরিত্র আপনার মতো না, আমি কারো জান নিয়ে খেলা করি না।

মা,,,,,,,,, এই মেরেছে আমার নীলকে, প্রতিশোধ নিচ্ছে। নীল আমাকে বলতো অয়ন নাকি ওকে মারার হুমকি দিছে।

অয়ন,,,,,,,,,আপনার ছেলে আপনার মতোই সত্যবাদী।

বাবা,,,,,,,,,তুমি যদি এর পিছনে থাকো থাহলে এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।

রিমান,,,,,,,,,, আংকেল বিনা অপরাধে অনেক শাস্তি দিছেন অয়নকে আর না।

বাবা,,,,,,,,,ইন্সপেক্টর আপনি কিভাবে সত্যটা বের করবেন সেটা আপনার উপর।

বলে চলে যায়। অয়ন খেয়াল করে মেঘা রাফির সাথে কথা বলছে।

মেঘা,,,,,,,,,, রাফি দেখো না, যদি কোনো ভাবে অয়নকে ছুটানো যায় কিনা।

রাফি,,,,,,,,এখন বলতে পারছি না তবে দেখা লাগবে।

মেঘা,,,,,,,,,,, প্লিজ দেখো না,তুমি চাইলে কিছু একটা করতে পারবে।

রাফি,,,,,,,,,, চিন্তা করো না, তোমার জন্য আমি এটা আমি অবশ্যই করবো। (মেঘার হাতে হাত রেখে)

অয়ন এসে মেঘাকে টান দিয়ে সরিয়ে নেয়। মেঘার কাঁধে হাত রাখে।

অয়ন,,,,,,,,,, মেঘার জন্য তোমাকে কিছু করতে হবে না। তার জন্য আমি আছি। আর বাকি রইলো এই জেলের কথা। ডার্লিং তোমার চিন্তা করার কোনো দরকার নেয়, বেস দুমিনিট অপেক্ষা করো।

অয়ন মেঘাকে অন্য পাশে নিয়ে যায়। মেঘার কাঁধে শক্ত করে হাত রাখে, যেটা মেঘা অনুভব করতে পারছে। অয়ন মেঘার কাঁধে হাত রেখে ওর দিকে শক্ত ভাবে তাকায়।

অয়ন,,,,,,,,, তুই রাফিকে তুমি করে কবে থেকে বলিস।

মেঘা,,,,,,,, তুমি ডাকটা এসে গেছে মুখ দিয়ে ভ ভ ভুলে।

অয়ন,,,,,,,,,,,আমাকে আপনি আর রাফিকে তুমি করে ডাকিস। আজ থেকে আমাকে তুমি বলে ডাকবি। কি বলে,,(কাঁধে চাপ দিয়ে ধরে)

মেঘা,,,,,,,, তু তু তুমি করে।

অয়ন,,,,,,,,,, আর রাফিকে আপনি করে,,,, কি করে

মেঘা,,,,,,,,, আ আ আপনি করে।

অয়ন,,,,,,,,,,মনে থাকে যেনো, না হলে তোর জন্য ভালো হবে না।

অয়নকে এভাবে মেঘাকে ধরে থাকতে দেখে একজন রাগে জ্বলে যাচ্ছে।

কিছু ক্ষন পরে রাফির কাছে তার সিনিয়রের ফোন আসে, সে অয়নকে ছেড়ে দিতে বলে। রাফি অয়নকে যেতে দেয়।

রিমান,,,,,,,,, একটু আগে বললে কি হতো, শুধু শুধু পুলিশ স্টেশন আসা লাগতো না।

অয়ন,,,,,,,,, দেখতে চেয়েছিলাম যারা অভিযোগ করেছে তারা ঠিক কতোটা অপরাধী ভাবে আমাকে।

রিমান,,,,,,, দেখা হয়ে গেছে এবার চল।

রিমান অয়ন আর মেঘাকে তাদের বাসায় রেখে, নিজের বাসায় চলে যায়। অয়ন সোফায় এসে বসে।

মেঘা,,,,,,,,,,তুমি বসো আমি রান্না করছি।

অয়ন,,,,,,,, ঠিক আছে (মন খারাপ করে)

মেঘা,,,,,,,,, খুব কষ্ট হচ্ছে অয়ন তাই না। (অয়নের সাথে বসে)

,,,,,,,,,, কষ্ট কেনো হবে অদ্ভুত,আমাকে দেখে মনে হচ্ছে যে,আমার কষ্ট হচ্ছে।

,,,,,,,,, তোমার মনের খবর আমি ভালো করে জানি, তুমি না বললেও জানি।

অয়ন মেঘার কোলে মাথা রেখে লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে।

,,,,,,,, বাবা আমাকে মেরেছে এটার জন্য কষ্ট পাইনি, কষ্ট তো লেগেছে এ কারনে যে, ওরা আমাকে এতোটা নিম্ন ভাবে। আর নীলকে আমি যতোই ঘৃণা করি কিন্তু মেরে ফেলার কথা চিন্তা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আমি এটাও জানি আমাকে নিচে দেখিয়ে নীল আনন্দ পেতো ঠিক আছে তবে আমাকে মেরে ফেলার চিন্তা ওর মনেও কোনো দিন আসবে না। নীলকে যে মেরেছে তাকে খুঁজে বের করে চরম শাস্তি দিবো।

মেঘা,,,,,,,, কিন্তু ওনাকে মেরেছে কে আর কেনো।

অয়ন,,,,,,,,,,, এখন জানি না তবে জানতে হবে।

,,,,,,,,,,,

,,,,,, জান পাখি তোমার জন্য কতো কিছু করলাম তাও তোমাকে নিজের করতে পারলাম না। যেখানে আমার হওয়ার কথা ছিলো সেখানে আজ অয়ন। শুধু মাত্র এই নীলের কারনে। তাকে এতো সহজে কিভাবে ছেড়ে দিয়। (পাগলের মতো করতে থাকে)

তোমাকে ঐ অয়নের পাশে দেখে আমার রক্ত গরম হয়ে যায়। আমার হাত কাঁপতে থাকে ওকে মারার জন্য। অয়নকে মারা এতো সহজ না তবে এতো কঠিন ও না।

জান পাখি কিছুতো করবো তোমাকে পাওয়ার জন্য। কারন তুমি শুধু এই রাফির আর কারো না। আমি জানতাম বিয়ের দিন অয়ন কিছু তো করবে আমাকে আটকানোর জন্য।

তাই আমি বাসা থেকে কতো গুলো খালি গাড়ি সাজিয়ে অন্য দিকে পাঠিয়ে দিয়। আর আমি অন্য দিক দিয়ে আসতে থাকি। সব ঠিক ছিলো শুধু এই নীল তার লোক পাঠিয়ে আমাকে কিটনাপ করে জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুলটা করে ফেললো। তার জবাব তো তাকে দিতেই হতো।

তোমরা আমাকে ঠিক বলো, সাইকো আমি। মেঘা শুধু তোমার প্রেমে আমি সাইকো না। আমার মাথায় এমনিও সমস্যা আছে। তাই তো মা বাবা চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছিলো। তোমার থেকে দূরে, মনে তো চেয়েছিলো তাদের মেরে ফেলি, কিন্তু মারি নি,মাফ করে দিয়েছি।

কিন্তু অয়ন তোকে মাফ করবো না, চার বছর আগে মেঘাকে প্রথম দেখে ঠিক করে নিয়েছিলাম মেঘা শুধু আমার। আর যেটা আমার সেটা আমারি। অয়ন তোকে আমি এমন ভাবে মারবো না যে, সবাই তোর লাশ দেখে ভয় পেয়ে যাবে।

,,,,,,,,,

ফারিয়া,,,,,,,,, শুনো রিমান তুমি গিয়ে মেঘার জিনিস গুলো দিয়ে আসো। এগুলো নিতেই তো এসেছিলো, কিন্তু নিতে আর পারলো কই।

,,,,,,,, এখন যেতে পারবো না, কাল যাবো।

,,,,,,,,, কাল তো ওরা এমনি আসবে।

,,,,,,,,, তাহলে আর যাওয়ারি দরকার নেয়, কাল এসে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে।

ফারিয়া,,,,,,,,,, কি অলস তুমি।

,,,,,,,,, একদমি না, তাছাড়া এখন রাত হয়েছে আর আজ তাদের বাসর রাত, ভাই হয়ে এই দিনে না মানে রাতে যায় কিভাবে।

,,,,,,,,,, ওও তাও ঠিক,,, তার মানে আজ মেঘার ভালোবাসার রাত।

রিমান এসে ফারিয়াকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে। ফারিয়া চমকে যায়।

,,,,,,,,তুমি চাইলে আজ আমাদের ও ভালোবাসার রাত হতে পারে।

,,,,,,,,,, আমাদের কাল হয়ে গেছে।

,,,,,,,,,, কখন আমার তো কিছু মনে নেয়, চলো আমাকে মনে করিয়ে দিবে।

বলে ফারিয়াকে কোলে করে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় , ফারিয়ার দু হাত ধরে ভালোবাসায় ডুবে যায়।

,,,,,,,,,

অয়ন এসে সোজা মেঘার পাশে শুয়ে পড়ে। মেঘা চুয়া থেকে উঠে বসে পড়ে।

মেঘা,,,,,,,,, কি হলো আপনি এখানে কেনো।

,,,,,,, সোফায় ঘুমাতে পরবো না, পিঠ ঘাড় সব ব্যাথা করে।

,,,,,,,,,,, তো অন্য রুমে গিয়ে ঘুমান। এতো বড় বাড়ি আপনার।

,,,,,,,,, আমি চাইলে অন্য রুমে ঘুমাতে পারবো। কিন্তু তুই এই রুমে একা থাকতে পারবি তো। দেখ বারান্দা দিয়ে শিউলি ফুল গাছটা দেখা যাচ্ছে। শুনেছি ফুল গাছে নাকি পরীরা থাকে। রাতে ফুল কুড়াতে আসে।

মেঘা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়।

,,,,,,,,, এতো বড় গাছ কেনো লাগিয়েছেন বাগানে।

,,,,,,,,,, কেনো তোর না শিউলি ফুল অনেক পছন্দ।

,,,,,,,,,,হ্যাঁ,, কিন্তু তাও।

,,,,,,,,,,ঠিক আছে আমি অন্য রুমে চলে যায়, তুই থাক।

অয়ন উঠে যেতে নেয়।

,,,,,,,,,,, শুনেন, না মানে শুনো জানালার পর্দাগুলো মেলে দাও আর বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে এখনে শুয়ে পড়ো।

অয়ন হালকা হেসে জানালার পর্দা মেলে দেয়, আর বারান্দার দরজা লাগানোর সময় চমকে যাওয়ার মতো ভাব করে।

,,,,,,, কি হলো।

,,,,,,,,,,, বাহিরে সাদা কাপড় পড়া কি জেনো দেখলাম।

,,,,,,,, কিহহহ (লাফ দিয়ে উঠে) আমাকে ভ ভ ভয় দে দেখাচ্ছো তাই না।

,,,,,,,,,, আরে পাগল না, কে যেনো দেখলাম গাছে বসা।

,,,,,,,,,,,,, তুমি চুপচাপ এখানে এসে শুয়ে পড়ো।

মেঘা সূরা পড়া শুরু করে দিয়েছে। অয়ন এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। শুয়ে বাতি নিভিয়ে দেয়। মেঘা ভয় পেয়ে যায়।

,,,,,,,,,,, আপনি লাইট বন্ধ করলেন কেনো।

,,,,,,, আমার আলোতে ঘুম আসে না।

মেঘা শুয়ে আস্তে আস্তে অয়নের দিকে যেতে যেতে , অনেকটাই চলে যায়, অয়ন খেয়াল করে মেঘা তার সাথে মিশে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই অয়ন মেঘার দিকে ফিরে। অয়ন মেঘার মুখের একদম কাছে চলে আসে। মেঘা চোখ বড় বড় করে ফেলে।

,,,,,,,,, কি আমার কাছে আসার ধান্দা।

,,,,,,,,,, মানে।

,,,,,,,,, মানে আজ আমাদের বাসর রাত তাই আমার কাছে আসার ধান্দা নাকি।

,,,,,,,,,, ছিঃ কখনো না।

বলে উল্টো দিক ফিরে সরে যেতে নেয়, অয়ন মেঘার পিছন থেকে মেঘার পেটে হাত দিয়ে নিজের কাছে টানে।

অয়ন মেঘার চুলে নাক মুখ ডুবিয়ে দেয়। মেঘার শরীর নিস্তর হয়ে গেছে।

মেঘা,,,,,,,,,, কি করছো, ছাড়ো।

,,,,,,,,,, আমার অনেক ভয় করছে, পিল্জ আমার থেকে দূরে যাস না।

,,,,,,,,,,, তুমি জ্বীন পরীকে ভয় পাও।

,,,,,,,,, হুমম অনেক (মেঘাকে আরো শক্ত করে নিজের কাছে টেনে।)

মেঘা আর কিছু বলে না, অয়ন তার পেটে হাত দিয়ে রেখেছে তার কেমন জানি একটা অনুভুতি হচ্ছে। একটা ভালো লাগা অনুভূতি। মেঘা অয়নের সামনে ফিরে তার বুকে মাতা রেখে চোখ বন্ধ করে দেয় লজ্জায় আর বলে,,,

মেঘা,,,,,,,,,, আমারো অনেক ভয় করছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,

ভালো লাগলে like, comment করে সাথে থাকুন ধন্যবাদ।