এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-০৫

0
478

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখাঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ০৫

শশীর ম‌তে, একটা সম্পর্ক টি‌কি‌য়ে রাখ‌তে দুজনার বরাবর ক‌ন্ট্রি‌বিউশন লাগে। হয়তো মা‌ঝে মা‌ঝে দেখা যায় প‌রি‌স্থিতির ভি‌ত্তি‌তে একজন একটু কম দেয়, তো অন্যজন একটু বে‌শি দেয়। কিন্তু একজন শুধু দি‌য়েই যাবে, আরেকজন নি‌য়ে যা‌বে তাহ‌লে তো সম্পর্কটা ভা‌লোবাসার হলো না বরং দেওয়া নেওয়ার হ‌য়ে গে‌ল। শশীর ম‌নে হ‌চ্ছে, বর্তমা‌নে শশীর আর সজ‌লের সম্পর্ক অনেকটা দেয়া নেয়ার হ‌য়ে গে‌ছে। গত এক বছর যাবতই শশী খেয়াল কর‌ছে সজল সম্প‌র্কের প্র‌তি কম যত্নশীল। শশী ওদের সম্পর্কটার প্র‌তি যত্ন যত বা‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছিল, সজল ধী‌রে ধী‌রে ক‌মি‌য়ে দি‌চ্ছিল। বর্তমা‌নে ম‌নে হয়, যত্নটা কেবল শশীর দিক থে‌কে আর সজল যে‌নো যত্ন করা একদম বন্ধ ক‌রে-ই দি‌য়েছে।

সম্পর্ক শুরু হবার পর পর থে‌কেই শশী সজ‌ল‌কে ব‌লে‌ছি‌ল,
‘সজল তু‌মি এখন থে‌কেই টুকটাক কিছু করা শুরু ক‌রো। আমিও কিছু একটা করা শুরু করব। তারপর কিছু টাকা জমা হ‌লে তু‌মি ছোটখা‌টো একটা বিজ‌নেস শুরু ক‌রো। দুজ‌নেই য‌দি আয় করা শুরু ক‌রি তখন আর আমা‌দের প‌রিবার আমা‌দের সম্প‌র্কে দ্বিমত প্রদান কর‌বে না। তা‌তে যতই আমা‌দের সমবয়সী সম্পর্ক হোক না কেন! আর এখন চাই‌লে আমরা দ‌ুজন মি‌লে একটা কো‌চিং সেন্টারও খুল‌তে পা‌রি। দুজ‌নেই যে‌হেতু হিসাববিজ্ঞা‌নে অনার্স কর‌ছি সে‌হেতু আমরা নাইন-টেন থে‌কে শুরু ক‌রে ইন্টা‌রের বাচ্চা‌দের হিসাব‌বিজ্ঞান পড়াব। আমি ইং‌রেজী‌তেও মোটামু‌টি ভা‌লো, আমি ক্লাস সিক্স থে‌কে শুরু ক‌রে ইন্টার পর্যন্ত বাচ্চা‌দের ইং‌রেজীও পড়া‌তে পারব। বা‌কি অন্য বিষয়ও পারব।
‌কো‌চিং বে‌শি বড় হ‌লে আমরা আলাদা আলাদা ক‌য়েকজন শিক্ষক রাখব। আজকাল কোচিং এ বহু বাচ্চা প‌ড়ে। সপ্তা‌হে তিন‌দিন, মা‌সে বা‌রো কি চৌদ্দ দিন, চারশ টাকা ক‌রে, য‌দি বিশজন ছাত্রও থা‌কে ত‌বে কতটাকা আসে ভে‌বে দে‌খো। এরকম ছোট ছোট অবস্থা থে‌কেই তো মানুষ বড় হয়।

শশীর কথা শু‌নে সজ‌ল ওর উপর অনেকটা বিদ্রুপ হে‌সেই ব‌লে‌ছি‌ল,
‘মাই ডিয়ার লাভ এখন আমা‌দের না তো বি‌য়ে করার বয়স, না আয় করার, আমা‌দের এখন পড়া‌-লেখা আর এনজয় করার বয়স। আর পড়া-লেখা আর এনজয় করার জন্য টাকা তো ঘর থে‌কেই পা‌চ্ছি। ত‌বে এখ‌নি এত চিন্তা কেন?’
শশী সে‌দিন মু‌খে কিছু না বল‌লেও ম‌নে ম‌নে নি‌জে‌দের সম্পর্কটা নি‌য়ে বেশ ভীতু হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছি‌ল। একে‌ তো সমবয়সী সম্পর্ক তার উপর সজ‌লের ম‌ধ্যে কো‌নো সি‌রিয়াস‌নেস নেই। শেষ পর্যন্ত ওদের সম্পর্কটা কো‌নো নাম পা‌বে তো! আজকাল শশী প্রচন্ড ভ‌য়ে থাকে। সজল‌কে নি‌য়েও অনিরাপত্তায় ভো‌গে খুব।

কো‌নো উপায় না পে‌য়ে শেষ পর্যন্ত ওর দূর-সম্প‌র্কের খালাতো ভাই আদ্র‌কে কল করল। আদ্র‌রা ওদের দূর-সম্প‌র্কে আত্মীয় হ‌লেও আসা যাওয়ার কার‌ণে সম্পর্ক খুব ভা‌লো। বি‌শেষ ক‌রে শশীর মা আদ্রর মা‌কে খুব পছন্দ ক‌রেন। তার অবশ্য কিছু কারণ আছে। আদ্রর মা একজন গাই‌নোকোলজিস্ট। শশীর মা, শশী কিংবা লি‌পি যত বারই তার কা‌ছে গি‌য়ে‌ছে তি‌নি কো‌নো ভি‌জিট নেন‌নি। তার কার‌ণে হস‌পিটালে দেয়া ফি‌জিক্যাল টেস্ট গু‌লো‌তেও বড়সর ডিসকাউন্ট পেয়ে‌ছে। তাছাড়া তা‌দের যে‌ কো‌নো সমস্যায় তারা তার সা‌থে পরামর্শ ক‌রেন। তি‌নি সবসময়
সুপরামর্শ দেন। সে কার‌ণে হা‌সি বেগম, দোলাকে মা‌নে আদ্রর মা‌কে একটু বে‌শিই পছন্দ ক‌রেন। আর শশীর সা‌থেও আদ্রর সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ। সজ‌লের বিষ‌য়েও আদ্র জা‌নে। তাছাড়া দোলা বেগম মানুষটা এমন যে, তা‌কে পছন্দ না ক‌রে থাকা যায় না! তার কার‌ণেই আদ্র-অথৈর সম্পর্ক এত সুন্দর।

শশী আদ্র‌কে কল কর‌ল। কল রি‌সিভ করার সা‌থে সা‌থেই শশী বলল,
‘হ্যা‌লো! আদ্র ভাইয়া।’
ওপাশ থে‌কে মে‌য়েলী ক‌ন্ঠে ব‌লে উঠল,
‘হ্যা‌লো! কে?’
মে‌য়ে কন্ঠ পে‌য়ে শশী বলল,
‘হ্যা‌লো কে বল‌ছেন? আদ্র ভাইয়া কোথায়?’
‘আ‌মি আদ্রর স্ত্রী। আপ‌নি কে?’
‘ওহ ভা‌বি। আমি শশী। চিন‌তে পে‌রে‌ছেন?’
‘আ‌রে হ্যাঁ হ্যাঁ কেমন আছো?’
‘ভা‌লো। আপ‌নি?’
‘আলহামদু‌লিল্লাহ্। শশী তোমার নাম্বার তো আদ্রর ফোনে সেইভ ছি‌লো।’
‘আ‌রে ভা‌বি এটা আমার নতুন ফোন নাম্বার।’
‘ওহ আচ্ছা।’
‘আদ্র ভাইয়া কোথায়?’
‘ও ওয়াশরু‌মে। বের হ‌লে তোমা‌কে কল কর‌তে বলব।’
‘আচ্ছা।’

অথৈ ফোনটা রে‌খে বিছানাটা গোছা‌তে নি‌লো। বিছানা গোছা‌তে গোছা‌তে বলল,
‘আদ্রটা ইদানিং এত বে‌শি অগোছা‌লো হ‌য়ে‌ছে না! কথায় আছে না, ঘোরা দেখ‌লে খোড়া হয়। আমা‌কে পে‌য়ে নি‌জে কাজ করা বন্ধ ক‌রে‌ছে। আজ ওর খোড়া হওয়া দেখা‌চ্ছি!’
আদ্র গান গাই‌তে গাই‌তে বাথরুম থে‌কে বের হ‌লো। বের হ‌তেই অথৈই রা‌গি চো‌খে বলল,
‘এসব কী আদ্র?’
আদ্র হে‌সে বলল,
‘‌মেরা দিল ভি কিতনা পাগল হে। এ পেয়ার তো তুম‌ছে করতা‌ হে।’
অ‌থৈ ধমক দি‌য়ে বলল,
‘চুপ গাঁধা। তো‌কে যত বোঝাই কথা কা‌নে ঢো‌কে না!’
‘আ‌মি কী করলাম? আর তু‌মি আবার তুই‌তে চ‌লে গেলা কেন?’
‘‌তো কী করব? কতবার বল‌ছি ভেজা তোয়া‌লে এভা‌বে বিছানায় রাখ‌বি না, ঘা‌মে ভেজা শার্ট এমন জ‌ড়ো ক‌রে বিছানায় রাখ‌বি না। কথা শু‌নে‌ছিস একবারও?’
‘আ‌রে বউ থাক‌তে এসব কাজ বর কর‌লে পাপ হ‌য় জা‌নো না?’
অথৈ আদ্রর কান টে‌নে বলল,
‘গাঁধা তোর স্বামী‌গি‌রি ছুটা‌চ্ছি। গোছা সব। আজ বিছানা গোছা‌বি, মশা‌রি টানা‌বি, সা‌থে কে‌বি‌নেট দু‌টোও গোছা‌বি।’
‘এত জুলুম নি‌জের একমাত্র স্বামীর উপর!’
‘আস‌ছে আমার স্বামী! আর হ্যাঁ আমার ওষুধ এনে‌ছো?’
‘‌কি‌সের ওষুধ? তোর পিলস তো আছে?’
‘মাথার ম‌ধ্যে সারা‌দিন খা‌লি উল্টা পাল্টা জি‌নিস ঘো‌রে? আরে আমার মাথা ব্যথার ওষুধ।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ।’

অ‌থৈ চুপ ক‌রে বিছানায় ব‌সে পড়ল। তা দে‌খে আদ্র, অথৈকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘আ‌মি কী তোমাকে খুব জ্বালাই?’
‘হুঁ অনেক।’
‘স‌রি।’
অ‌থৈ হে‌সে বলল,
‘আই লাভ ইউ।’
আদ্র হে‌সে অথৈর কোম‌রে সুরসুরি দি‌তে দি‌তে বলল,
‘লাভ ইউ টু।’
হ‌াসতে হাস‌তে অথৈ বলল,
‘আদ্র ভা‌লো হ‌চ্ছে না কিন্তু।’
‘ভা‌লো কেন হ‌বে না। এখন শুধু ভা‌লোবাসা হ‌বে। আর ভা‌লোবাসা সব‌চে‌য়ে ভা‌লো।’
অ‌থৈ হে‌সে বলল,
‘ভা‌লোবাসা প‌রে হ‌বে এখন তোমার বোন শশী‌কে কল ক‌রো। তোমা‌কে কী যেনো জরু‌রি কথা বল‌বে ক‌রে কল ক‌রে‌ছি‌ল।’
‘আচ্ছা। আগে শশীকে দেখ‌ছি তারপর সারারাত তোমা‌কে দেখব।’
অ‌থৈ লজ্জা পে‌য়ে বলল,
‘ফা‌জিল একটা।’

অ‌থৈ‌কে বুকে নি‌য়েই আদ্র শশী‌কে কল করে। কল রিসিভ কর‌তেই আদ্র বলল,
‘ব্যাদ্দপ এত রা‌তে কেউ ভাই-ভাবী‌কে কল ক‌রে। উই আর ভে‌রী বি‌জি।’
শশী হে‌সে বলল,
‘‌সি‌রিয়াস‌লি ভাইয়া তোমার দুষ্টু স্বভাব জীব‌নে যা‌বে না।’
‘‌তোর ভা‌বিও সেটাই ব‌লে।’
‘মাইর দেয় না?’
‘‌দেয় না আবার। তুই জা‌নিস না তোর নিরীহ এ ভাইটার উপর তোর ভা‌বি কত অবিচার ক‌রে। তার সা‌থে আমার পু‌রো প‌রিবার ওর সা‌পো‌র্টে, আমি বেচারা এতিম।’
শশী এবার আরও শব্দ ক‌রে হে‌সে বলল,
‘খালা-খালু আর অদ্রিতা কেমন আছে?’
‘আরে আমার ম‌তো মানুষ যে ঘ‌রে থা‌কে সে ঘ‌রের লোক খারাপ থাক‌তে পা‌রে না‌কি?’
শশী আবার হে‌সে বলল,
‘তা ভা‌বি তোমা‌কে এখনও নাগরাজ ডা‌কে?’
‘আ‌রে না। প্রেম করার সময় কত কত মধুর না‌মে ডাকত। আর এখন খা‌লি মাইর দেয়। বউ হ‌য়ে অথৈটা আমার বড্ড আন‌রোমা‌ন্টিক হ‌য়ে গে‌ছে।’
আদ্রর কথা শু‌নে অথৈ ওর বু‌কে কয়েকটা চিম‌টি কাটল। আদ্র উফ শব্দ ক‌রে বলল,
‘দেখ‌লি আবার মার‌ছে। এ জন্য নি‌জের বেস্ট ফ্রেন্ডকে বি‌য়ে কর‌তে নেই। ইজ্জত দেয় না। বরং ইজ্জত লুটপাট ক‌রে।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে শশী বলল,
‘ত‌বে কি আমি সজল‌কে ছে‌ড়ে দিব?’
আদ্র ছোট্ট একটা ধাক্কার ম‌তো খে‌লো। তারপর বলল,
‘আ‌রে আমি তো মজা কর‌ছিলাম। শশী শোন অথৈ‌কে বি‌য়ে ক‌রে আমি কত সুখী তা কেবল আমি জা‌নি আর সৃ‌ষ্টিকর্তা জা‌নেন। আর নিশ্চয়ই তো‌কে বল‌তে হ‌বে না আমরা কত সুখী!’
‘আ‌মি জা‌নি। তোমার আর ভা‌বির ম‌তো এমন সুখী কাপল সচারাচার চো‌খে প‌ড়ে না। কিন্তু ভাই আমার কপা‌লে বোধ হয় তোমাদের ম‌তো সুখ লেখা নেই!’
‘‌কেন কী হ‌য়ে‌ছে?’
শশী কান্নাভেজা ক‌ন্ঠে বলল,
‘সজল পা‌ল্টে যা‌চ্ছে।’
‘মা‌নে?’
‘বাসা থে‌কে আমার বি‌য়ের জন্য খুব চাপ দি‌চ্ছে কিন্তু সজ‌লের তা নি‌য়ে কো‌নো ভ্রু‌ক্ষেপ নেই।’
ফোন স্পিকা‌রে ছি‌লো বিধায় অথৈও ওদের কথা শুন‌ছি‌লো। অ‌থৈ বলল,
‘‌তোমার ‌কেন এমন ম‌নে হ‌ল?’
শশী, সজল আর ওর বিষয় সব‌কিছু খু‌লে বলল। সব শু‌নে অথৈ বলল,
‘এ-ও তো হতে পা‌রে সজল কো‌নো প্রব‌লে‌মে আছে? হয়তো তোমা‌কে বল‌ছে না।’
‘না ভা‌বি তেমন কিছু-ই না। নি‌জের ভা‌লোবাসার মানু‌ষের প‌রিবর্তন কি আমি বুঝ‌তে পারব না? এত বছ‌রের সম্পর্ক আমা‌দের। এতটু‌কো তো ওকে বু‌ঝি!’
আদ্র‌ কিছু সময় নীরব থে‌কে বলল,
‘আ‌মি কি একবার সজ‌লের সা‌থে কথা বলব?’
‘হ্যাঁ, সে কার‌ণেই তো কল করা তোমা‌কে। আমি নিজ থে‌কে কিছু ভাব‌তে পার‌ছিলাম না। তখন তোমার আর ভা‌বির কথা ম‌নে হ‌ল। তোমরা সমবয়সী হ‌য়েও তোমা‌দের সম্পর্ক কত সুন্দর, স্বচ্ছ। তু‌মি হয়ত সজল‌কে বোঝা‌লে ও বুঝ‌বে।’
‘আচ্ছা আমি বুঝাব ওকে।’
‘‌দে‌খো একটু প্লিজ। আমি ঘ‌রে আর কো‌নো বাহানা দি‌তে পার‌ছি না। বাহানা দি‌তে দি‌তে চার বছর তো পার করলাম।’

‌ফোন রে‌খে আদ্র অথৈ‌কে বলল,
‘অ‌থৈ, সজ‌লের সা‌থে কথা বলা কি ঠিক হ‌বে আমার?’
‘আমিও সেটাই ভাব‌ছি। তু‌মি আমি তৃতীয় ব্য‌ক্তি। আর এ ধর‌নের সম্প‌র্কে তৃতীয় কেউ ঢুক‌লেই ঝা‌মেলা বে‌শি হয়?’
‘আমা‌দের সমস্যার সময়ও তো মা আমা‌দের বু‌ঝি‌য়ে‌ছি‌লেন।’
‘আদ্র তি‌নি আমা‌দের মা। আর মা‌য়ের ব্যাপারটাই আলাদা। তাছাড়া তোমার আমার ম‌ধ্যে অন্য বিষ‌য়ে অনেক অনেক সমস্যা হ‌লেও আমরা কখ‌নো একে অপর‌কে নি‌য়ে ইন‌সি‌‌কউরি‌টি ফিল ক‌রি‌নি। আমা‌দের দু’জনার একে অপ‌রের প্র‌তি বিশ্বাস ছি‌লো তীব্র। কিন্তু শশীর কথা স্পষ্ট বোঝা যা‌চ্ছে ও ওদের সম্পর্ক নি‌য়ে বড্ড ইন‌সি‌কিউর ফিল কর‌ছে। তাছাড়া দু’জনার প্র‌তি দু’জনার বিশ্বাসটাও বুঝলাম নড়‌বড়ে। এমত অবস্থায় তু‌মি যা-ই কর‌বে ভে‌বে কর‌বে কিন্তু।’
‘মা‌য়ের সা‌থে আলাপ কর‌লে কেমন হয়?’
‘বেস্ট হ‌বে। দে‌খো তি‌নি কী ব‌লেন? তি‌নি তো আমা‌দের বেস্ট পরামর্শ দ‌াতা।’
‘হুঁ।’
‌কিছু একটা ভে‌বে আদ্র অথৈর গা‌লে ঠোঁট ছুঁ‌য়ে বলল,
‘কত ভাগ্য ক‌রে তোমার ম‌তো বন্ধু পে‌য়ে‌ছিলাম!’
অ‌থৈ হে‌সে বলল,
‘বন্ধু‌কে বু‌ঝি গা‌লে চু‌মো খায়?’
‘বন্ধু‌কে চু‌মো খায় না। ত‌বে বউ‌কে চু‌মো খায়। কোথায় কোথ‌ায় সেটা বলব?’
‘বল‌তে হ‌বে না বদ ছে‌লে। যাও ঘুমাও। তোমার নীল চো‌খে আজ অসংখ্য দুষ্টু‌মি খেলা কর‌ছে। যাও ঘুমাও।’

‌ফোন রে‌খে কান্নায় ভেঙে পড়ল শশী। ইদা‌নিং ওর নি‌জে‌কে এত একা লা‌গে যে মরে যে‌তে ইচ্ছা ক‌রে। কাউ‌কে নি‌জের ম‌নের কথা বোঝা‌তেও পা‌রে না, বল‌তেও পা‌রে না। শুধু নি‌জে নি‌জে কষ্ট পায় কা‌ঁদে। কিছু‌দিন আগে এরকম কষ্ট পে‌য়ে নি‌জের অনেকগু‌লো চুল কে‌টে ফে‌লে‌ছি‌লো। আজ এত কষ্ট হ‌চ্ছে যে নি‌জের গলাটা কে‌টে ফেল‌তে ইচ্ছা কর‌ছে। বিড়বিড় ক‌রে বলল,
‘কা‌রো কপা‌লে ধারণার বাই‌রে ভা‌লোবাসা থা‌কে, আর কা‌রো কপালে এক বিন্দুও থা‌কে না বোধ হয়।’

মনঃক‌ষ্টে কিছু ভাব‌তে না পে‌রে শশী, সজল‌কে কল করল। সজল ফোনটা তু‌লে শশীর নাম্বার দে‌খে বেশ বিরক্ত হ‌ল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘এখন কল রি‌সিভ কর‌লেই আবার সেই বি‌য়ে নি‌য়ে প্যানপ্যান শুরু কর‌বে। বিয়ে ছাড়া কো‌নো চিন্তাই নাই মে‌য়েটার মাথায়। তারপরও কলটা রি‌সিভ করে বলল,
‘হ্যাঁ ব‌লো।’
কান্না‌ভেজা গলায়ই শশী বলল,
‘‌কিছু ভাব‌লে সজল?’
‘কী বিষ‌য়ে?’
‘আমা‌দের বি‌য়ের।’
সজল বেশ ধমক দিয়েই বলল,
‘এই এক বা‌*লের কথা ছাড়া তোমার আর কো‌নো কথা না‌কি?’
কান্না কর‌তে কর‌তেই শশী বলল,
‘তাহ‌লে কী বলব?’
‘‌দে‌খো ষোল বছ‌রের নি‌ব্বির ম‌তো ন্যাকা কান্না করবা না। মেজাজ খাবাপ লা‌গে। সারা‌দিন বি‌য়ে বি‌য়ে ক‌রে কা‌নের পোকা বের ক‌রে দি‌চ্ছো। আরে বি‌য়ে কী ছে‌লের হা‌তের মোয়া না‌কি? তু‌মি বু‌ঝো না না‌কি? বয়স তো কম হয়‌নি? সমবয়সী সম্প‌র্কে বি‌য়েটা কতটা জ‌টিল তু‌মি বো‌ঝো?’
‘‌সেটা সম্পর্ক করার সময় ম‌নে ছি‌লো না? আমার ভাই আদ্রও তো…’
বা‌কিটা বলার আগেই সজল আরও জো‌রে ধমক দি‌য়ে বলল,
‘কিছু বল‌লেই খা‌লি ন্যাকা কান্না আর কোথাকার কোন আদ্র অথৈ তা‌দের তুলনা দি‌তে চ‌লে আসো। আরে তা‌দের প‌রিবার, তা‌দের সিচু‌য়েশন কি আমার ম‌তো এত ক্রি‌টিক্যাল। তারা কি আমার ম‌তো সমস্যা ফেইস ক‌রে‌ছে?’

কান্না বন্ধ ক‌রে বেশ শক্ত গলায় শশী বলল,
‘আদ্র অথৈ ওদের সম্প‌র্কে যতটা সমস্যা ফেইস কর‌ছে তার সি‌কিভাগও তু‌মি আমি ফেইস ক‌রি‌নি। যা জা‌নো না, তা নি‌য়ে কথা বল‌বে না।’
‘তাহ‌লে যা‌দের জা‌নি না তা‌দের আমা‌দের মা‌ঝে টা‌নো কেন?’
‘সজল আমার এখন আমার ঝগড়া করার ম‌তো কো‌নো ইচ্ছা নেই।’
‘তাহ‌লে ফোন কর‌ছো কেন? না নি‌জে শা‌ন্তি‌তে থাক‌ছো আর না আমা‌কে শা‌ন্তি‌তে থাক‌তে দি‌চ্ছো। যত্তসব!’
সজল রাগ ক‌রেই কলটা কে‌টে দিও। সজ‌লের ব্যব‌হা‌রে শশী অনেকটা তব্দা খে‌য়ে ব‌সে রইল।

৮!!

রাত দু‌টো রেনু বাথরু‌মে যাবার জন্য উঠ‌তেই শিহাব দরফর ক‌রে উঠে বলল,
‘কী হ‌য়েছে রেনু? কো‌নো সমস্যা?’
‘আ‌রে আরে আপ‌নি এত উত্তে‌জিত হ‌লেন কেন? আমি তো শুধু ওয়াশরুমে যাবার জন্য উঠ‌ছি।’
‘ওহ। চ‌লো আমি নি‌য়ে যা‌চ্ছি।’

বাথরু‌মে থে‌কে ফি‌রে রেনু বলল,
‘‌শিহাব আপ‌নি কী কিছু ম‌নে ক‌রে‌ছেন?’
‘সন্ধ্যা‌বেলা আমি অনেক কথা ব‌লে‌ছি।’
‘হুঁ তা‌তে ম‌নে করার কী আছে?’
‘আমার প্রাক্তন স্বামীর বিষ‌য়েও অনেক কথা তখন ব‌লে‌ছি। তখন আবে‌গে কথাগু‌লো বলে ফেল‌লেও, এখন ম‌নে হ‌চ্ছে আপ‌নি কী না কি ম‌নে ক‌রে‌ছেন?’
‘হ্যাঁ আমি অনেক কিছুই ম‌নে ক‌রে‌ছি।’
‌রেনুর মুখটা ভ‌য়ে চুপসে গে‌লো।

চল‌বে______