এক টুকরো মেঘ পর্ব-০৩

0
632

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::০৩

— তুই কি আমার ঠোঁটের মায়ায় পড়ে গেছিস।। এই নিয়ে কতোবার চুমু খেয়েছিস,, তোর হিসাব আছে।। আমি ঘুমিয়ে থাকলে ,, তখনও আমাকে ছাড়িস না !!!( নেশাগ্ৰস্থ দৃষ্টিতে অরিশ)

অরিশ ভাইয়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি তার উপর থেকে উঠে গেলাম ।। একবার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,, হাতের অনেকটা ছিলে গেছে ,, রক্ত ঝরছে ।। তাই হাত দুটো পেছনে সরিয়ে নিচু দৃষ্টি দিয়ে বললাম…

— আসলে ভাইয়া আমি বুঝতে পারি নি।। এমন একটা কান্ড হবে!!

— তুই তো অনেক কিছুই বুঝতে পারিস না।। এইযে ঘুড়ি উড়াতে এসে নিজেই একটু হলে মাটিতে শুয়ে উড়াউড়ি করতি।। তোকে আমি কতোবার বলছি তুই ঘুড়ি উড়াবি না ।। তারপরও কেন আমার কথা অমান্য করলি।।পড়ে গেলে কি হতে পারতো,, তোর ধারনা আছে ( অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে অরিশ)

— ভাইয়া এটা তো দোতলার ছাদ ।। পড়ে গেলে একটু বরংচ ব্যাথা পেতাম ।। হাত পা ভাঙতো ,,মরে যেতাম না ।।( নিচের দিকে তাকিয়ে আমি)

আর কিছু বলার আগেই অরিশ ভাইয়া ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল আমার গালে।। এমনিতেই ক্লান্ত শরীর তার উপর আবার চড় ।। সামলে আর উঠতে পারলাম না।। সেখানেই পড়ে গেলাম।। ফ্লোরের পড়েও শান্তি পেলাম না,, গালে ঘসা লেগে রক্ত বের হতে লাগলো।। খুব জ্বলছে ব্যাথা করছে ।। কিছু বলতে পারছিনা।। হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ পেয়ে একবার আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ,, সামনে থাকা দোলনাটা উল্টো হয়ে পড়ে আছে।। ভাইয়া যেন আর ভাইয়া নেই আগ্নেয়গিরি হয়ে গেছে।। যার থেকে লাভা বের হচ্ছে।। এখন যদি একটা কথা বলি তাহলে আজ আমার রক্ষে নেই।। তাই মাথা নিচু করে আছি!!!

— ঋনি প্লিজ তুই আমার সামনে থেকে যা ।। নাহলে ঠিক কি করবো আমি ,, তা আমার নিজেরই জানা নেই ।। ( চেঁচিয়ে বললো অরিশ)

আমি ভয়ে একটা ঢোক গিলে ভাইয়ার কাছে গেলাম ।। ভাইয়াকে কিছু বলবো তাই আগেই ,,তিনি আমাকে টেনে ছাদের অন্যপান্তের নিয়ে গিয়ে ,, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য হেলিয়ে ধরতেই আমি ভাইয়ার কলার চেপে ধরলাম।।

— খুব মরার শক না তোর ।। এবার তাহলে মর ।। আমি নিজে তোকে সাহায্য করবো।।

আমি কোনো রকম ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে তাদের বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে এসে পড়লাম।। আমি এখন আর তার সামনে যেতে চাই না।। আমি খুব ভালো করে ভাইয়া রাগ জানি ,, যখন তখন যা ইচ্ছে, করতে পারে ।।

🍂 🍂 🍂

এখন পর্যন্ত রুমে থেকে একপা ও ফেলি নি ।‌ গালে আর
হাতে ডেসিং করেছি ঠিকই ।। কিন্তু মাম্মাম বা পাপা দেখলে আবার হাজার প্রশ্ন কিভাবে হলো ,, কেমন করে হলো।। ইভেন্ট ডিনারও করি নি ।। এখন বেলকেনিতে বসে আছি ।। আমার সামনে অরিশ ভাইয়া ফোনে কার সাথে যেন হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।। যেটা আমি স্পষ্ট বেলকেনি থেকে দেখতে পারছি।। আমার বেলকেনি আর অরিশ ভাইয়ার বেলকেনি প্রায় মুখোমুখি ।। অনেকবার কান পেতে শোনার চেষ্টা করেছি কিন্তু ফলাফল জারো ।। তাই রুমে ড্রসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে একবার হাত দিয়ে গালে হাত বুলালাম ।। একগালে পাঁচ আঙুলের দাগ ভেসে আছে ,, অন্যগালের কিছুটা অংশ ছিলে সাদা হয়ে আছে।। হাতে প্রচুর ব্যাথা করছে তাই ব্যান্ডজ করেছি।।

— আচ্ছা তুমি আমাকে মেরেছো তোমার একটুও কষ্ট হয়নি ।। জানো আমার একটুও কষ্ট হয়নি।।‌ভালোবাসি যে তোমার ।। শুধু একটু আঘাত পেয়েছি তার চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি তোমাকে অন্যের সাথে কথা বলতে দেখে ।। আচ্ছা ঐটা কি তোমার জিএফ ,, যার সাথে তুমি হেসে হেসে কথা বলছো।। হতেও পারে।।

আর কোনো চিন্তা না করে সোজা ঘুমিয়ে পড়লাম।।।

🍁🍁🍁

ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে অরিশ।। কিছুই ভালো লাগছে না তার।। কালকে অমন রুড বিহেবটা তার একদমই করা উচিত হয়নি ।। অভিকের সাথে কথা বলার সময় একবার বেলকেনিতে দেখেছিলো ঋনিকে ।। পরে অনেকবার গিয়েছিলো বেলকেনিতে ,, কিন্তু তখন আর দেখতে পায়নি ঋনিকে।। অনেকবার ফোন দিয়েছিলো কিন্তু রিসিভ হয়নি।। এটা ঋনির নিওদিনের অভ্যাস সবসময় ফোন সাইলেন্ট রাখা ।। কিন্তু ফোন করলেই রিসিভ করে কালকে কেন করে নি সেটা অরিশের অজানা ।। ফেসবুক ওয়াটসএপপ চেক করে সেখানেও দেখা মেলেনি ঋনির ।। আবার দেখতে যখন বেলকেনিতে পা রাখলো তখন চোখ গেল তার নিজের রাখা শার্টটার দিকে ,, রক্তের দাগ স্পষ্ট।। কালকে রাগের কারনে খেয়াল করেনি সে ।। ঋনির কিছু হয়েছে এই ভেবে দৌড় লাগালো ঋনিদের বাড়ির দিকে।।
চিন্তিত হয়ে বসে আছে সাজিল তামান্না।। তাদের চিন্তিত মুখ দেখে কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করল অরিশ….

— কি হয়েছে আঙ্কেল । আপনারা এভাবে বসে আছেন কেন ?? কোনো সমস্যা!!!

— আসলে কি করবো বল তো অরিশ ।। কালকে রাত থেকে ঋনির কোনো খবর নেই ।। দরজা নক করলে বলে ,, বিরক্ত করো না ।। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।। এভাবে কিছু না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।।( চিন্তিত হয়ে সাজিল)

— আপনি খাবারটা আমাকে দিন ।। আমি দেখছি ।।

কেউ এমনভাবে দরজা নক করছে যে এখনি ভেঙে ফেলবে।। কালকে রাতে একটু দেরী করে ঘুমিয়ে ছিলাম।। তাই এখনও উঠি নি।। ঘুম ঘুম চোখ না তাকিয়ে জোরে জোরে বললাম….

— প্লিজ এভাবে ধাক্কা দাও না ,, ঘুমাচ্ছি।। ঘুমাতে দাও তো।।

— একটা যদি ভেতরে ঢুকি তাহলে তোর ঘুম আমি সারাজীবনের জন্য দূর করে দিবো ।। ডাফার দরজা খোল!!( চেঁচিয়ে বললো অরিশ)

অরিশ ভাইয়ার গলা শুনে তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিলাম।। ভাইয়া তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে খাবারটা টেবিলের উপরে রেখে বেডে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। আমি মাথা নিচু করে আছি বিধায় চুলগুলো দিয়ে আমার মুখ ঢেকে আছে।।হাত দুটো এখনো পেছনে।।

— তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার খেয়ে রেডি হয়ে নে,, তোদের কলেজে পৌছে দিয়ে ভার্সিটিতে যেতে হবে আমাকে !!!

— ভাইয়া আজ আমরা কলেজে যাবো না ।। আসলে কালকে আমাদের ফেয়ারওয়েল ।। তাই কিছু কেনাকাটা করতে যাবো।। তুমি চলে যাও !! ( মাথা নিচু করে আমি)

— কি হয়েছে তোর বল তো ।। দূরে দাঁড়িয়ে চোরের মতো করছিস কেন?? কখনো এমন করতিস না।। ( আমার দিকে এগুতে এগুতে অরিশ)

অরিশ ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার মাথাটা উপরে তুলে চুলগুলো সরিয়ে গালে হাত রাখতেই আঁতকে উঠলাম আমি ।।

চলবে…💞💞

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)