এক টুকরো মেঘ পর্ব-০২

0
765

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::০২

— অরিশ ভাইয়া এতো রাতে আপনি আমার ঘরে কি করছেন !!আমার ভয় করছে সবাই দেখলে কি ভাববে,,,, প্লিজ চলে যান ।। ( ভীত স্বরে বললাম আমি)

— কানের নিচে ঠাডিয়ে লাগিয়ে দিবো একটা,, কালকে রাতে কি গাঁজা খেয়ে বাড়িতে এসেছিলি নাকি ।। ভালো করে খেয়াল করে দেখ এটা তোর রুম না আমার রুম!!আর এখন সকাল ,,রাত না ।। ( অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে অরিশ)

ভাইয়া কথা শুনে চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম এটা সত্যি ভাইয়া রুম।। আমাকে যে ভাইয়া শাস্তি দিতে তার রুমে নিয়ে এসেছিলো ।। সেটা আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গেছিলো।। মনে থাকবে কিভাবে তখন তো আমি বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম,, কিন্তু এখন তো বেডে ব্লাকেট দিয়ে শুয়ে আছি ।। আমার ভাবনায় বেঘাত ঘটালো ভাইয়া বলে উঠলো….

— কালকে রাতে আমি তো তোকে মাথা টিপে দিতে বলেছিলাম।। আর তুই কি করলি ।। ঘুমিয়ে পড়লি ।। তাহলে তোর শাস্তিটা বাকি রয়ে গেলো যে ,,আচ্ছা কি শাস্তি দেওয়া যায় বল তো ।। ( ড্রেসিং টেবিলের উপর বসে ভাবতে ভাবতে অরিশ)

— এখন আবার শাস্তি ,,ভাইয়া এবারের মত ক্ষমা করে দিলে হয়না ।। আমি তো তোমার বোন আরশির মতোই।। প্লিজ !!( করুন সুরে আমি)

— শাস্তি তোকে পেতেই হবে ।।

বলেই আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো ।। আমি কি করবো ,, বুজতে পারছি না।। আসতে আসতে আমার একদম কাছে চলে এসেছে ।। দুজনের মাঝে মিনিমাম ২ ইন্ধিও ডিসটেন্ট নেই ।। ভাইয়া নিঃশ্বাস আমার মুখে আঁচড়ে পড়ছে ।। আমি যেন কথা বলার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছি ।। তিনি একহাত আমার চুলের বাজে দিয়ে আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে বললো…

— কি শাস্তি দেওয়া যায় তুই বল ।। দেখি আমার পছন্দ হল কিনা ।।

তার স্পর্শে আমি চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে হাত দিয়ে ব্লাকেট টাকে চেপে ধরলাম।। ছোট বেলা থেকেই আমি ভাইয়ার প্রতি দূর্বল ।। তার গায়ের ফর্সা রং ,, সিল্কের চুলগুলো ,, কপালের কোনে লালচে তিল ।। সবগুলোই যেন আমাকে ঘায়েল করে ।।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার কোনো রিসেপশন না পেয়ে চোখ খুলে দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল টা জারছে।। এতক্ষণ দম আটকে থাকলেও এবার একটু শান্তিতে দীর্ঘ শ্বাস নিলাম।।।

— আজ থেকে তোর মুভি দেখা অফ।। এইসব দেখে তোর মাথার ১২ টা বেজেছে ।। বুজেছিস।।‌এখন মা রেডি হয়ে আয় তোকে কলেজে পৌছে দিয়ে আমাকে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে ।। ( বেলকেনিতে গিয়ে টাওয়ালটা রোদ দিয়ে অরিশ)

— ভাইয়া আজকে নাগেলে হয়না ।। আসলে রাতে তো ঘুমা হয়নি তাই মাথাটা ব্যাথা করছে ।। ( মাথা নিচু করে আমি)

— ঠিক আছে।। আজকে যেতে হবে না । ( বলেই অরিশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল )

আমিও বেরিয়ে বাড়িতে এসে শাওয়ার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।।।

🍁 🍁 🍁

একা একা ছাদে বসে আছি কিছুই ভালো লাগছে না ।। হঠাৎ চোখ গেলো আকাশে থাকা অনেকগুলো ঘুড়ির দিকে ।। ঘুড়ি উড়াতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে ।
কিন্তু আমার কাছে তো একটাও ঘুড়ি নেই ।। কিছুদিন আগে যখন সাকরাইন উৎসব হয়েছিলো।। তখন আমি ঘুড়ি উড়িয়ে ছিলাম।। অনেকগুলো ঘুড়ি কেটে দিয়েছিলামও বটে।। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে অরিশ ভাইয়া এসে সবগুলো আর লাটাই নিয়ে গেছে ।। নাহলে কেউ আমার সাথে পাড়তো না।।
আকাশে ঘুড়ি উড়ানো মানে আমার কাছে আকাশকে ভালোভাবে চেনা জানা।। মন খারাপের দিনে আমার যেমন আকাশ দেখতে ভালো লাগে ।। ঠিক তেমনি ঘুড়ি উড়াতেও ভালো লাগে।। ছোট বেলায় দাদির মুখে শুনেছিলাল ,, ঘুড়ি উড়ানো মানে হচ্ছে,, নিজের সুপ্ত অনুভূতি গুলো আকাশে উড়িয়ে দিয়ে হালকা হওয়া।। তখন থেকেই ঘুড়ি উড়াই।।

— কিরে ঋনি আকাশে ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস ।। ( পেছন থেকে আরশি)

( আরশি অরিশ ভাইয়ার বোন ।। আমরা একই ক্লাসে পড়ি।।সব কাজ একই সাথে করি)

— চলনা দোস্ত একটু ঘুড়ী উঠাই ।। অনেকদিন হয়েছে আকাশে ঘুড়ি উড়ানো হয়না।। ( আমি)

— উড়াতে পারি কিন্তু ভাইয়া যদি দেখে ফেলে তখন কি হবে রে ঋনি।। গতবার তো পাপা ভাইয়ার হাত থেকে বাচিয়ে ছিলো ।।এবার কে বাঁচাবে!!( করুন সুরে আরশি)

— আরে চাপ নিস না ।। আর এফ এল পাইপের মতো।। তোর বজ্জাত ভাই আশার আগেই তো আমরা ঘুড়ি উড়ানো শেষ করবো।। তাছাড়া আজকে কোনো ঘুড়ি উৎসব না যে ,,তোর ভাই দৌড়ে চলে আসবে !!!( ভাব নিয়ে আমি)

— সেটা তুই ঠিকই বলেছিস !! কিন্তু ঘুড়ি কোথায় পাবি!!!(কৌতূহল নিয়ে আরশি)

— তোর ভাইয়ের বেডের নিচে দেখেছি ।। তুই দাড়া আমি আসছি তোদের বাড়ি ।।

বলেই দিলাম এক দৌড়।। তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে নেমে সোজা অরিশ ভাইয়াদের বাড়ির ।।ড্রয়িং রুমে গিয়ে মাম্মাম আর মামনি একসাথে বসে টিভি দেখছে আর চা খাচ্ছে‌। আমি সত্যি বুঝতে পারিনা এই চা মানুষ কেমন খায় ।।।আমি তো দুচোখে দেখতে পারিনা।। আমি আর কোনো দিকে না তাকিয়ে ভাইয়ার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।।

— আরে ঋনি যে,, আয় বস ।। চা খা!!( পেছন থেকে অরনিমা)

— মামনি তোমার আবার শুরু হয়ে গেলো প্রিন্ট করে কথা বলা।। আমি চা খাই না তাই সবসময় তোমরা আমাকে চা খেতে বলো ।। আমার যে ফুচকা এত প্রিয় ।।কই একদিনও তো বলো না চল ফুচকা খেতে চল!!( বলেই আবার দৌড় দিলাম)

— আমি সত্যি ই জানিনা ,, এই মেয়ের চায়ের উপর কেন এতো রাগ !!!( চা খেতে খেতে তামান্না)

( তামান্না আমার মাম্মাম)
ভাইয়া বেডের নিচ থেকে দুটো ঘুড়ি আর লাটাই বের করে সোজা ওদের ছাদেই গেলাম।।আরশির হাতে লাটাই দিয়ে আমি সুতো টানছি।। ঘুড়ি ছাড়তে না ছাড়তেই ছাদের রেলিং এর সাথে বেঁধে একটা ঘুড়ির মাঝ বরাবর ফুটো হয়ে গেল।। ফুটো ঘুড়িটা ছুটিয়ে অন্যএকটা ঘুড়ি গিট দিয়ে উড়াতে শুরু করলাম।। উদ্দেশ্য একটাই এবারের ঘুড়িটাকে কিছুতেই ছিঁড়তে দেওয়া যাবে না।।
উড়াতে উড়াতে কখন যে ঘুড়ি নিচে নেমে গেছে তা খেয়ালই করিনি।। যেকোনো সময় গাছের সাথে বেঁধে যেতে পারে ।। এদিকে আরশি সুতো আরো ছেড়েই যাচ্ছে,,আমি একবার সুতোর দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার আরশির দিকে তাকাচ্ছি।। টানতে টানতে কখন যে আমি ছাদের কিনারে চলে এসেছে ,,সেটা খেয়ালই করিনি।।
সামনে একপা বাড়াতে ছাদ থেকে পড়ে যেতে নিলেই ছাদের রেলিং টা কোনো রকম ধরে নেই।।। আমাকে পড়তে দেখে আরশি দৌড়ে আমার কাছে এসে কেবলার মতো তাকিয়ে আছে।। ইচ্ছে তো করছে ওর মাথায় একটা বাড়ি দেই ।।

— আরে তুই লাটাই টা আগে ফেলে আমাকে তুল।। কতোক্ষণ এভাবে ঝুলে থাকবো।। ( জারি দিয়ে আমি)

আমার কথা শুনে ঠাস করে লাটাই টা ফেলে দেয় সেটা এসে আমার মাথায় পড়ে ।। আমি একহাত দিয়ে ছাদের রেলিং ধরে অন্যহাত মাথায় দিয়ে আছি ।।

— তোরে কি আমি সাধে টিকটিকির লেজ বলি।। সবসময়ই ঠং ঠং করে হাঁটতে থাকস।। আর কেউ একটু কিছু বললে ,, হাতে যা থাকবে তা ফেলে দেস।। এজন্য তো বলি ।। ( চোখ রাঙিয়ে আমি)

— বিশ্বাস কর দোস্ত তুই ওখান থেকে পড়লে মরবি না।। এটা তো দোতলার ছাদ ।। ( করুন দৃষ্টিতে আরশি)

— তুই এই জায়গা থেকে যাবি নাহলে একটা বাড়ি মেরে তোর ৩২ টা দাঁত আমি তুলে ফেলবো।। এইখান থেকে পড়লে যে আমি মরবো না সেটা আমি জানি ,, তবে হাত পা সাথে থাকবে না।। ( মুখ বেঙিয়ে আমি)

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই দৌড় দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেল আরশি।।আমি আরশির যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি ।। আমি চলে যেতে বলেছি বলে চলে এভাবে বিপদে ফেলে আমাকে চলে যাবে।। আমি যে আর নিতে পারছি না।।।।।
প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেছে এখনো মহারানির আসার খবর নেই।। এদিকে হাতে প্রচুর ব্যাথা করছে।। আর এভাবে থাকতে পারছি না।।আমি শুধু এখন একটাই কথা ভাবছি ,, যদি আমি পড়ে যাই তাহলে কি সত্যি আমি মরে যাবো ।। না না মরবো না।। তখনই হাত দুটো পিছলে পড়ে যাবে ঠিক তখনি কোনো শক্ত পোক্ত হাত আমার হাত দুটো ধরে নিলো ।। আমি উপরের দিকে তাকিয়ে অরিশ ভাইয়াকে দেখে শান্তিন নিঃশ্বাস নিলাম।। অরিশ ভাইয়া আমাকে টেনে উপরে তুলতেই আমি আমার পুরো শরীরের ভার তার উপর ছেড়ে দিলাম ।। তিনি আমাকে নিয়ে নিচে পড়ে গেল।। সাথে সাথে আমার ঠোট দুটি তার ঠোঁটকে স্পর্শ করলো।। আমি এখনো সেখানেই স্তব্দ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।।

চলবে …💞💞

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)