এক টুকরো মেঘ পর্ব-১০+১১

0
539

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১০

রুমের এককোণে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কাঁদছি আমি।। আমার একটু ভুলের জন্য আজ সবাইকে কষ্ট পেতে হচ্ছে।। এলাকার সবাই আমাদের দুই পরিবারকে নিয়ে বাজে কথা বলছে।। সেদিন ,, আরশির কথায়,, ওকে ছেড়ে চলে কেন ,, সেই দোষারোপ নিজেকে করছি!!
গত দু’দিন ধরে আরশিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না। মামনি তো একবারে ভেঙে পরেছে।। মাম্মাম মামনিকে থামাতে পারছে না।। আর আঙ্কেল সে তো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।। অরিশ ভাইয়া তো সারাদিন না খেয়ে ,, না ঘুমিয়ে শুধুমাত্র আরশিকে খুঁজে যাচ্ছে।। পাপাও বসে নেই ,, চারদিকে লোক লাগিয়েছে।।আরশির ছবি সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ,, তবুও কোনো খবর মেলেনি তার।। আর আমি সারাক্ষন নিজেকে দোষারোপ করে যাচ্ছি,, কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।। কিভাবে খুঁজে পাবো আরশিকে।।আচ্ছা কেউ কি নেই,, যে আরশির খবর আমাদের দিতে পারবে।। কি দিবে ,, আমি ছাড়া তো আরশির কোনো ফ্রেন্ড নেই। হঠাৎ করেই সেদিনের কথাটা মনে পড়লো
। আরশি বলেছিলো,, ও তার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে।। কিন্তু তার ফোন নম্বর আমি কোথায় পাবো।।
একবার আরশির এক্সাম ফাইল চেক করে দেখলে খারাপ হয়না।
এইকথা চিন্তা করে দৌড় লাগালাম ওদের বাড়িতে।। আরশির রুমে গিয়ে আর আমাকে কষ্ট করতে হলো না ,, ফাইলটা বেডের উপরে রাখা ।। ভেতরের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেডের উপর।। মনে হচ্ছে ,,কেউ এই ফাইলটা চেক করছে ।। আর আমি কিছু না ভেবে ফাইলটা ভালোভাবে চেক করে একটা নম্বর পেলাম।। কিন্তু অনেক ডায়াল করার পরেও রিসিভ হলো না।। যাও একটু এগুলাম ,, তাও আবার পিছিয়ে গেলাম।। অবশেষে লোকেশন ট্র্যাক করে জানতে পারলাম ,, আমাদের এক্সাম হলের কাছাকাছি ,, সিউর জানি না কোথায় ।। তারপরও বেড়িয়ে গেলাম।।
সেখানে পৌঁছে ফোন করার পর কেউ একজন রিসিভ করলো ।।নম্বরটা তানজু নামের কোনো মেয়ের ।। তার কাছ থেকে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে ,, তাদের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম।। দরজা নক করার সাথে সাথেই প্রায় দরজা খুলে দিল।। হয়তো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল।।আর কোনো কিছু চিন্তা না করে ,, মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলাম…..!!

— বলছিলাম ,,তুমি আরশি নামের কোনো মেয়েকে চেনো ,, এইবার এইচএসসি এক্সাম দিয়েছে!!

— হে!! আমি আরশি নামের একজনকেই চিনি এবার আমরা একসাথেই এইচএসসি এক্সাম দিয়েছি ।। তুমি কে ?? বলো তো !!(কৌতূহল নিয়ে তানজু)

— আমি তরিন।। ওর বেস্টফ্রেন্ড,, আর বোন দুটোই।। প্লিজ তুমি কিছু জেনে থাকো তাহলে বলো !!( অস্থির হয়ে আমি)

— একটু আগে একজন ছেলে এসে আরশির খোঁজ করলো ,, এখন আবার তুমি খোঁজ করছো ।। আচ্ছা তুমি কি ওর সত্যি বেস্টফ্রেন্ড তো ।। যদি ব্রেস্টফ্রেন্ডই হতে তাহলে এতোবড় একটা সত্যি আরশি কিভাবে লুকাতো।।( হাত ভাঁজ করে তানজু)

— এতোবড় সত্যি ,, মানে !! কিসের সত্যি!!!

— আরশি যে দুদিন আগে মানে ,, শেষ এক্সামের দিন ফারহান ভাইয়ের সাথে পালিয়ে গেছে।।আচ্ছা তুমি সত্যিই জানো না।।

মেয়েটার কথায় যেন আমার লাফ দিয়ে ৭ম আসমানে উঠে গেলাম।। কি বলছে এই মেয়ে ফারহানের সাথে পালিয়ে গেছে।। এই ফারহানটাই বা কে ।। আর আরশি আমাকেই বা কেন জানায়নি।। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম আমি ।। আমার এই অবস্থা দেখে মেয়েটা এক গ্লাস পানি এনে আমার সামনে দিলো ।। আমি গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক বারে পুরো গ্লাসটা ফাঁকা করে ফেললাম।। আমার মনে বারবার একটা কথাই জানান দিচ্ছে ,, আরশি এটা কিছুতেই করতে পারে না।।

— তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো তাই না ।। ( করুন সুরে আমি)

— আমি তোমাকে কেন মিথ্যা বলবো আজব তো ।। দাড়াও আমি তোমাকে প্রমান দেখাচ্ছি ।।

বলেই হনহন আমি রুমে চলে গেল।। কিছুক্ষণ পর হাতে কিছু পেপার নিয়ে হাজির হলো ।।। পেপারগুলো আমার দিকে এগিয়ে বললো…

— বাড়িতে নিলে ওকে সবাই সন্দেহ করবে,তাই এগুলো আমার কাছে রেখে দিতো ।। আমি এনে রেখে দিয়েছিলাম।।

আমি আর দেরি না করে ওর হাত থেকে পেপার গুলো নিয়ে দেখতে লাগলাম।। যেখানে আরশি ফারহানের নামে অনেক চিঠি লিখেছে আর ফারহান ও লিখেছে ।।আরশির হেন্ডরাইটিং চিনতে আমার এক মুহুর্তও দেরী হলো না।। বুজতে পারছি না,, এখন আধুনিক যুগে চিঠি কেন??হয়তো মেয়েটা আমার প্রশ্ন বুজতে পেরেছে।। তাই বললো…!!

— আসলে ফারহান ভাইয়ার ফোনটা ভেঙ্গে গেছে ।।আর তার পাপা তাকে এক্সামের আগে ফোন কিনে দিবে না ।। তাই বন্ধুদের ফোন থেকে কথা বলতো আর বাকিসময় চিঠি লিখতো!!

এখন যেন আমি পাথর হয়ে গেলাম।। নিজের হাতে আরশি আর ফারহানের চিঠিগুলো নিয়ে বেড়িয়ে এলাম ,, তানজুর বাড়ি থেকে।।
আনমনে হাঁটছি আমি আর ভেবে চলেছি আরশি কথা ।। বাড়িতে গিয়ে কি জবাব দিবো আমি ।। আরশি একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।। মামনি কতোটা ভেঙে পড়বে ,, ভাবতেই চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো।। সত্যি টা তো সবাইকে জানাতে হবে ।। তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।।

বাড়িতে পা রাখতেই সবাই আমার দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেন তাকালো।। আমি আরেক পা বাড়ানোর আগেই ঠাস ঠাস দুটো চড় পড়লো আমার গালে ।। গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে অরিশ ভাইয়ার মুখটা দেখতে পেলাম।। তার চোখ দুটি দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।। যেটা দেখে আমি ভয়ে একটা ঢোক গিললাম।।আমাকে মারার কারণটা আমি এখনো বুঝতে পারলাম না।।আমি কিছু বলবো ,,তার আগেই আমার হাত থেকে চিঠিগুলো নিয়ে নিলো।। একবার তাতে চোখ বুলিয়ে ,, সেগুলো ছিড়ে আমার মুখের উপর ছুড়ে মারলো।। তা দেখে মামনি আর আঙ্কেল দৌড়ে এলো ।।

— কি করছিস টা কি তুই ।। তোর বোনের রাগ কেন ওর উপর জারছিস ।। এতোক্ষণ চুপ করে ছিলি আর এখন ওকে মারছিস!!!( ধমকিয়ে অবিদুল )

— তুমি এই মেয়ের জন্য আমাকে ধমক দিচ্ছো ,, যানো আজ এই মেয়ের জন্যই তোমার মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।।(অরিশ)

— কি বলছিস তুই,, আরশি পালিয়ে গেছে!!(অরনিমা)

— হে !! আমি ঠিক বলছি ।। যাকে তোমরা ,,,তোমার মেয়ের মতো ভালোবাসতে ,, আজ তোমদের মুখে ছিঃ ছিঃ দেয়ার কারন এই মেয়েটা ।। ( আমার দিকে আঙুল তুলে অরিশ)

— বিশ্বাস করো ভাইয়া,, আমি কিছুই জানতাম না ।।

আর কিছু বলার আগেই তিনি আমার গাল জোরে চেপে ধরলো ।।ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছি আমি।। কিন্তু কোনো আওয়াজ করছি না আমি ।। নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছি।।

— তুই আর বিশ্বাস ।। পাশাপাশি মানায় না।। তুই আমাকে কি মনে করিস ,,আমি ঘাসের মুখ দিয়ে চলি।। এতো টুকু বোঝার ক্ষমতা আমার নেই।। সারাজীবন তোর সাথে থেকেছে ওর আর তুই বলেছিস ,, তুই কিছুই জানিস না।। এটাও আমাকে বিলিভ করতে হবে ।। হাউ ফানি তাই না।।তাহলে সেদিন কেন বলেছিলি ,, সবাই একসাথে ঘুরতে যাবে ।। কান খুলে শুনে রাখ ,, আমার বোনের যদি কিছু হয়ে যায় ,, তাহলে তোর কি অবস্থা করবো তুই ভাবতেও পারবি না।। ( বলেই আমার গাল দুটো ছেড়ে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল অরিশ)

— আজ আমার ভাবতে অবাক লাগছে,, আমার এক মেয়ের জন্য আরেক মেয়ের এই অবস্থা । শুধুমাত্র তোর জন্য আজকে সকলের কাছে আমাদের অপমানিত হতে হচ্ছে।। আজকের পর থেকে তোর মুখটাও আমি দেখতে চাই না।। মনে করবো ,, ঋনি নামের কোনো মেয়ে আমার ছিলো না।। থাকবে কিভাবে পর তো কখনো আপন হয়না।। এতোদিন আমি কালসাপ পুশেছি আজ সেই সাপ আমাকে ছোবল দিয়েছে।।

— মামনি !!( করুন সুরে আমি)

— একদম চুপ ।। আর একবারও আমাকে মামনি বলে ডাকবি না।। ( আঙ্গুল তুলে কথাটি বলে অরনিমা চলে গেল)

— আজকের পর থেকে তোদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের কোনো যোগাযোগ থাক আমি সেটা চাইনা ।। ( সাজিদ কে উদ্দেশ্য করে অবিদুল)

— কি বলছিস তুই অবি ।। আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই একসাথে ।। তুই আমার জানের দোস্ত।।

আর কিছু বলার আগে সাজিদকে থামিয়ে অবিদুল বলতে লাগলেন….!!!

— আজ থেকে আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ।। যাদের জন্য আজ আমার মান সম্মান সব শেষ সে কখনো আমার বন্ধু হতে পারে না।। তুই বন্ধু নামের শত্রু।।

বলে তিনিও বেরিয়ে গেলেন।।
এমন কি করেছি আমি যাতে আজ আমাকে এতোবড় শাস্তি পেতে হচ্ছে।। বুকের ভেতরের কষ্টটা যেন বেড়িয়ে বেড়ুতে চাই না ।। কিছু বোঝার আগে ঠাস করে আরো একটা চড় পড়লো আমার গালে ।। নিচের দিকে তাকিয়ে যতটা বুজতে পারছি এটা আমার পাপা ।। জীবনে যে আমাকে মাম্মামের মারের হাত থেকে বাচিয়ে এসেছে।। একটা ফুলের টোকা অবধি দেই নি সেই মানুষটা আজ আমার গায়ে হাত দিলো।। আচ্ছা আমাকে কি সত্যি বিশ্বাস করা যায় না।। একবারও কি ভাবা যায় না ,, আমি তা বলছি সব সত্যি।।

— জানিস ,, তোর মায়ের যখন একটাও বাচ্চা হচ্ছিলো না ।। তখন আমি তোর মাকে ভরসা দিতাম এটা বলে,, দেখো একদিন আমাদের ঘর আলো করে একটা মিষ্টি মেয়ে আসবে ।। তারপর অনেকগুলো বছর পর তুই এলি।। কতো খুশি ছিলাম তোর জন্য জানিস।। তখন যদি জানতাম ,,আজ এই দিনটা দেখতে হবে।। তাহলে তোকে এই পৃথিবীর আলো দেখতে দিতাম না।।

— মারছো কেন মেয়েটাকে ।। ( পেছন থেকে তামান্না)

— আমি আর মারবো না তোমার মেয়েকে ।। দেখছি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার মেয়েকে ওর ফুফুর কাছে লন্ডনে পাঠিয়ে দিচ্ছি ।।

ফোনটা বের করে কথা বলতে বলতে চলে গেল সাজিদ!!হাঁটু ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেলাম আমি।। মাম্মাম এসে আমাকে ধরতেই তাকে জরিয়ে ধরলাম।।।তার বলতে লাগলাম….!!

— মাম্মাম সত্যি কি আমি অপয়া।। সে পাপা কখনো আমাকে একটুও কষ্ট দিতো না আজ সে আমাকে মারলো ।।তুমিও কি বিশ্বাস করো ।। তোমার মেয়ে কাউকে আঘাত করতে পারে ।। কাউকে ব্যাথা দিতে পারে ।। এবার বিশ্বাস করো মাম্মাম,, আমি সত্যি কিছু জানতাম না ।। আরশি আমাকে বলে যায় নি।। (কাঁদতে কাঁদতে আমি)

— আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে কখনো কারো ক্ষতি চাইতে বা করতে পারে না।।তোকে অবিশ্বাস করলে যে আমার স্বতিত্বকে অবিশ্বাস করা হবে।।( আমার চোখের অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে তামান্না)

হঠাৎ করেই মাথাটা কেমন যেন ঘুরতে লাগলো।। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে জেতে থাকে।। মনে হচ্ছে এই বুঝি জ্ঞান হারালাম।।

চলবে….💞💞

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১১

নিরবে চোখের অশ্রু ফেলছি আমি ।। বাহিরের বৃষ্টিও আজ আমার সাথে তাল মেলাচ্ছে।।বাহিরে থেকে আসা পানি আমাকে ভিজিয়ে কাক ভেজা করে দিয়েছে।। বেলকেনিতে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি অরিশ ভাইয়ার বেলকেনির দরজাটার দিকে। মাঝখানে আরো কেটে গেছে ৫ দিন।। এখনো আরশির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।। এলাকার লোকেরা আমাদের ২ পরিবারের দিকে আঙুল তুলে বাজে কথা বলছে আর বাড়ির সবাই তার দায় আমাকে দিচ্ছে।।এই ৫ দিনে অরিশ ভাইয়ার সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি ,, কিন্তু একবারও পারি নি।। সারাদিন ফোন করতাম ,, একবার তার গলার আওয়াজ শুনবো বলে ,, কিন্তু তিনি রিসিভ করতো না।। মেসেজ দিলে রিপ্লে তো দূরে থাক সিন অবধি হতো না ।। অবশেষে ব্লোক করে দিয়েছে।।
তার চোখের দিকে তাকানোর শক্তি টুকু আমার ছিলো না ,, সেখানে ছিলো আমার জন্য পাহাড় সমান ঘৃনা।। সারাক্ষণ আমার ফোনে থাকা তার ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম ।। মাঝে মাঝে ভেবেই পাইনা ।। আমার উপর তার একটু বিশ্বাস নেই।।
বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে,, হাওয়ায় ভাইয়ার বেলকেনির দরজাটা নরছে।। যা দিয়ে তার একটু ছায়া দেখা যাচ্ছে।। সেটা দেখার জন্যই আমি বেলকেনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি।।
আর পারছি না,, এখানে সবার ঘৃণার পাএি হয়ে বাঁচতে,, তাই ঠিক করছি ,,এখন ভাইয়ার রুমে যাবো।। তাকে একটু বোঝাবো ।। আমার বিশ্বাস তিনি বুঝবে।। জানি এখন দরজা দিয়ে যাওয়া যাবেনা ,, তাই আমার বেলকেনির পাইপ বেয়ে নেমে ভাইয়ার বেলকনির পাইপ বেয়ে উঠে পড়লাম ।। বাহিরে যা হাওয়া দিচ্ছে ,, ঠান্ডায় আমি পুরো কাঁপছি ।।কাঁপা কাঁপা হাতে দরজাটা খুলতে আয়নাতে ভাইয়ার মুখটা দেখতে পেলাম।।কার সাথে যানো কথা বলছে ,, একটু সাহস সঞ্চয় করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ডেকে উঠলাম…..!!

— ভাইয়া !!

আমার ডাক তার কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই ,, একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।।আমি মাথা নিচু করে বললাম…!!

— ভাইয়া , তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিলো ,,শুনবে !!

— ৫ মিনিট অপেক্ষা কর।। ( বলে ফোনটা রেখে দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো)কি চাই তো ।। দেখতে পারছিস না আমি ব্যস্ত আছি ।। আমার বোনটার ক্ষতি করে এখন এসেছিস আমার সাথে কথা বলতে!!

— বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি সত্যিই কিছু জানতাম না।। আমি তো সারাক্ষণ তোমাতে বিভোর ছিলাম।। তাই আরশির কাছে কখনো জানতে চাই নি।। আর আরশি বলেও নি !! ( একটু সামনে এগিয়ে )

— হয়েছে থাম ।। আরশিকে পাওয়া গেলেই জানা যাবে ,, তুই সত্যিই জানতিস কিনা।। এর আগে তোকে বিশ্বাস করে ভুল করতে চাই না।। সো নাও লিভ!!

— ভাইয়া তুমি তো আমাকে ভালোবাসো ।। তাহলে এইটুকু বিশ্বাস আমায় করতে পারছো না।। (অরিশের হাত ধরে আমি)

সাথে সাথে এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে নিলো ।। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো….

— ভালোবাসা আর তোকে।। কি এমন গুন আছে তোর মধ্যে যে তোকে ভালোবাসবো।। ভালোবাসা পেতে হলে যোগ্যতার দরকার ।। আর সেটা তোর মধ্যে নেই ,, বুঝলি!!

— তাহলে যে আমাকে বলেছিল !!!

— বলেছিলাম তৃনাকে ভালোবাসি না ।। একবারও কি বলেছিলাম যে ,,তোকে ভালোবাসি।। বলি নি তো ।। বলেছিলাম,, তোর এক্সামের পরে বলবো ।। তাহলে এখন বলি কান খুলে শোনে রাখ ,, আমি তৃনাকেই জান দিয়ে ভালোবাসি ,, আর সারাজীবন ভাসবো।। এবার বের হ আমার রুম থেকে।।

— আচ্ছা ভাইয়া ।। সব মিথ্যা ছিলো।সব ভুল ছিলো।। তাহলে সেদিন একসাথে কাটানো মুহূর্তগুলো।।আমাকে কিস করা ।।

আমাকে থামিয়ে দিয়ে অরিশ ভাইয়া পকেট থেকে ব্যাগটা বের করে ,, কিছু টাকা আমার মুখের উপর ছুড়ে মেরে বললো….!!

— সেদিন তোর গায়ে লেপ্টে থাকা টি শার্ট।। ভেজা চুল গুলো ।।আর বৃষ্টির পানি ঠোঁট বেয়ে পড়ছিলো ।। যাতে আমাকে নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলো ।। তাই সেদিন ভুল করে কিস করেছিলাম।। ( নিচের পড়ে থাকা টাকাগুলো কে উদ্দেশ্য করে বললো) আশা করি এই পড়ে থাকা টাকাগুলো তার দাম দিয়ে দেবে !!

ভাইয়ার কথায় কি রিয়েকশন দেবো সব ভুলে গেছি।। অবাক হয়ে তার মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি।।তিনি সামান্য কিছুদিনের মধ্যে এতোটা বদলে যাবে ভাবতে পারি নি।। নাকি আগেই এমন ছিলো শুধু আমার চোখ ধরা দেই নি।। আমাকে চুপ থাকতে দেখো ,, ব্যাগে থাকা সব টাকাগুলো ছুঁয়ে মেরে বললো….!!!

— এই নে আরো দিলাম।। আশা করি হয়ে যাবে।।এতেও যদি নাহয় তাহলে একটা কাজ পতিতালয়ে গিয়ে দেহ বিক্রি করা শুরু করে দে ।। তাহলে আই হোপ হয়ে যাবে।।

আর আর নিতে পারলাম না ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম তার গালে।। তারপর শার্টের কলার চেপে ধরে বললাম….!!

— তুই আমাকে কি মনে করিস হে ।। তোর হাতের পুতুল।। যখন ইচ্ছে হবে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবি আবার যখন ইচ্ছে হবে টাকা ধরিয়ে দিবি।। আরে মানুষ একটা কুকুর 🐶 পুষলেও তার উপর এই বিশ্বাস রাখে ,, কুকুরটি তাকে কামরাবে না।। আর আমি তো একজন মানুষ ,, যে তোকে পাগলের মত ভালোবাসে ।। তার উপর এইটুকু বিশ্বাস রাখা যায় না।। তুই তো তুই,, জীবনে কোনো কিছুর মূল্য নেই তোর কাছে।। ((কলার টা ছেড়ে দিয়ে নিচে পড়া থাকা টাকা গুলো তুলে ব্যাগটায় ঢুকিয়ে ,, অরিশের হাতে দিয়ে ঘৃণার দৃষ্টিতে বললাম))এই সামান্য টাকা দিয়ে তুই আমার পবিত্র ভালোবাসা কিনতে পারবি না।। তবে তোর জন্য যোগ্য একজন পতিতা কিংবা রক্ষিতা রাখতে পারবি ।।

আর কিছু বলার আগেই তিনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে টানতে টানতে আমাকে তাদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে এনে ছুঁয়ে মারলো।। নিজেকে সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম আমি।। পাপা মাম্মাম নিচেই ছিলো ।। তাই দৌড়ে আমাদের কাছে চলে এলো ।।

— আঙ্কেল আমি আপনাকে বলছি ।। পাপা আপনাদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে,, তাই আমিও চাইনা আপনাদের সাথে আমাদের কোনো রকম কিছু থাক ।। তাই বলছি,, আপনার এই অবাধ্য মেয়েকে প্লিজ আমাদের বাড়িতে যেতে দেবেন না।।প্রয়োজন পড়লে আটকে রাখবেন।। ( বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল অরিশ ভাইয়া)

— দেখতে পারছিস তোর জন্য এতোসমস্যা সৃষ্টি হয়েছে ।। তারপরেও তুই ওদের বাড়িতে যাচ্ছিস ।। তোর একটুও লজ্জা করছে না।। এক মিনিট দাড়া আমি আসছি ( বলেই পাপা রুমে চলে গেলেন।। কিছুক্ষণ পর হাতে কিসব পেপার নিয়ে এলেন ।। সেগুলোকে আমার হাত ধরিয়া দিয়ে বললেন)এই দেশে থাকার মেয়াদ তোর শেষ ,, আগামীকাল বিকালে তোর ফ্লাইট । সেখানে তুই তোর ফুফুর কাছে থাকবি আর পড়াশোনার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।। সো গেট রেডি।। (তামান্নাকে উদ্দেশ্য করে সাজিদ)ওর কি কি লাগবে সব প্যাক করে দাও আর নিজের মেয়েকে ভালোভাবে দেখে নাও ,, আবার কবে দেখতে পাবে ।।

আর কিছু শুনতে পারলাম না আমি । দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।। মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমার গলায় দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে দুদিকে টানছে ।। অনেক কষ্ট করেও সামলাতে পারলাম না আমি।। চোখের অশ্রু যেনো কিছুতেই বাঁধ মানছে না।। কাঁদতে কাঁদতে মাথাটা ভার হয়ে এসেছে।। প্রচন্ড ব্যাথা করছে।।তাই ভেজা অবস্থায় বিছানায় গা হেলিয়ে দিলাম।। চোখ বন্ধ করলেই শুধু একটু আগের দৃশ্যটা ভেসে উঠছে।। কানে তার বলা কথাগুলো বাড়ি খাচ্ছে‌।। তাই ঠিক করে নিলাম ,, থাকবোনা এখানে যেখানে আমার উপর কারো বিশ্বাস নেই।। উঠে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার থেকে জামা কাপড় বের করে প্যাকিং করতে লাগলাম।। হঠাৎ ভাইয়া দেওয়া সেই শাড়িটার দিকে চোখ পড়তেই ,, মনে হলো ,,এইসব জামা কাপড়ের সাথে ভাইয়া স্মৃতি জরিয়ে আছে ।। তাই আবার ড্রয়ারে পেঁচিয়ে রেখে দিলাম।।
হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে দরজার খুলে দেখি মাম্মাম এসেছে।। হাতে খাবারের প্লেট ।। চোখে আমাকে হারানোর ভয় স্পষ্ট।। খাবারের প্লেটটা টেবিলে রেখে আমার হাতে জামাকাপড় ধরিয়ে দিয়ে চেন্জ করে নিতে বললো।।যখন না করলাম তখন একটা কথাই বললো,,
“” আমার মেয়েটা কালকে চলে যাবে ,, আবার কবে তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবো, ঘুম পাড়িয়ে দিবো জানি না।। শেষবারের জন্য হলেও কথাটা রাখ।””
তাই আর না করলাম না।। ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম।। আজকে মাম্মাম আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে।। খাওয়া শেষ করে গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।।আজ আমিও ঠিক করে নিয়েছে।। যে আমার জন্য আমি শুধু তার জন্য।।।।

চলবে…💞💞