এক টুকরো মেঘ পর্ব-১৮+১৯

0
511

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৮

গাড়ি ছুটেছে নিজের গতিতে ।। আমি সিটে গা হেলিয়ে দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়েছি।। এই মুহূর্তে ঝগড়া করা কিংবা হেটে যাওয়ার শক্তি আমার নেই ।। তাই এটিটিউট দেখিয়ে নেমে যাওয়ার কোনো মানেই নেই।। আমার পাশে অরিশ আপন মনে ড্রাইভ করছে ।।আর আড় চোখে আমাকে দেখছে।। একটু আগে তিনিই আমাকে টেনে গাড়িতে তুলেছে ।। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই।।
বেশ কিছুক্ষন পর চোখজোড়া খুলে বাহিরে তাকাতেই থমকে গেলাম আমি।। কারন ,, এই রাস্তাটা আমার অচেনা ।। তবে ভুল করে একবার চলে এসেছিলাম ,, সেদিন অরিশ নিজেই ড্রাইভ করে এসে আমাকে নিয়ে গেছে।।যতদূর জানি এটা বাড়ির একবারে উল্টোরাস্তা।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।। আমি একবার তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম…

— এটা তো বাড়ির রাস্তা নয় ,,,তাহলে আমরা যাচ্ছিটা কোথায়।। আমি বাড়িতে যাবো ।। আপনি গাড়ি থামান।।

কিন্তু অন্যপাশের কোনো জবাব এলো না চুপ করে রইলো।।যেটা আমার একদম পছন্দ নয়।। তাই আবার তার কানের কাছে গিয়ে জোরে জোরে বললাম..

— কথা কি কানে যাচ্ছে না ।।আমি বাড়ি যাবো,, আপনি গাড়ি থামান ।।

তিনি নিজের কান চেপে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে আরো স্পিডে ড্রাইভ করতে করতে বললো,….

— আমি কি তোর হাত পা বেঁধে রেখেছি নাকি ,, দরজা খোলা আছে নেমে যা।।

বলেই আবার সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ।। তার বিহেব আর গা জ্বালানো কথায় মেজাজটা যেন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে।। আমি একবার অরিশ ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে বাহিরে দিলাম,, দরজাটা এখনো খোলাই আছে।।মেডিসিনের প্যাকেটটা কোনো রকম জিন্সের পকেটে রেখে ঝাঁপ দিলাম বাহিরে ।। লেপ্ট পায়ের জায়গায় রাইট পা দেওয়ায় পা মচকে গেছে।। হাতের কনুই বরাবর ছিলে রক্ত বের হয়েছে।। একবার গাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম,, গাড়িটা স্পীডে এখনো চলছে।। হঠাৎ এমন হওয়াতে হয়তো অরিশ গাড়িটা কন্টোল করতে পারে নি ,, তাই এখনো চলছে।।আমি আর সেদিকে না তাকিয়ে উঠে হাঁটতে চেষ্টা করলাম ।। কিন্তু ফলাফল জিরো।। অপরপায়ে যে হাঁটু বরাবর ছিলে গেছে ,,সেটা আমি একদমই দেখতে পাই নি।। প্রচুর জ্বলছে + রক্ত বের হচ্ছে।।আমি করুন দৃষ্টিতে আমার পায়ের দিয়ে তাকিয়ে আছি।।অরিশের গাড়িটা কিছুদূর গিয়ে আবার আমার কাছে এসে থেমে গেল।।তিনি নেমে এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ফন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে ,,,,বাহিরে থেকে লক করে করে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে ,,,,,একটা ফাস্ট এইড বক্স এগিয়ে দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।। আমি ব্যান্ডেজ না করে ,, অরিশের দিকে তাকিয়ে কড়া কড়া গলায় বললাম…

— আপনি আমাকে নেমে যেতে বলেছেন !! আমি তো নেমেই গেছিলাম ,,তাহলে আবার কেন ফিরিয়ে নিয়ে এলেন।।

— কথা না বলে ড্রেসিং করে নে ।। নাহলে পরে…

— আপনাকে আমার কথা ভাবতে হবে না ।। গাড়ি থামান আমি নামবো।। ( অরিশকে থামিয়ে দিয়ে আমি)

— তখন তো বাহাদুরের মতো নেমে গেলি।। এখন নাম তো দেখি.!!!

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই হাত দিয়ে জোরে আঘাত করলাম দরজায় ।। খোলার বদলে হাতে আরো ব্যাথা করছে।। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করে আমার দিকে একটু ঝুঁকে,, আমার হাতের বাজে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিয়ে টেনে তার কোলে বসিয়ে দিলেন।। তারপর বক্সটা খুলে তুলোয় সেভলন লাগিয়ে হাঁটুতে ছুঁইয়ে দিতেই ,, ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি।। আস্তে আস্তে সব জায়গায় তুলো লাগাতে দিলেন ।। এতোটাই জ্বলছে ,,আমি অরিশকে শক্ত জরিয়ে ধরলাম।। আমার নখের দাগ হয়তো তার পিঠে বিদ্যমান।। তিনিও
আমাকে জরিয়ে ধরে ড্রাইভ করতে মন দিলেন।।

প্রায় ২-৩ ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামে একটা বীচের সামনে ।। ততক্ষনে চারদিকে সূর্য লাল রঙের আকার ধারণ করেছে।। ডুবে যাবে এমন অবস্থা।। একবার অরিশের কাছে বায়না ধরেছিলাম,,,যাতে তিনি আমাকে গোধূলি দেখতে নিয়ে আসে ,, তার ব্যস্ততার কারনে নিয়ে আসতে পারেনি।। আজ হঠাৎ এখানে নিয়ে আসবে ভাবতে পারি নি।। কিন্তু এখন আর এই নদী,, সমুদ্র,, সূর্য অস্ত,,সূর্যদয় দেখতে আমার আর ভালো লাগে না।। আমার ভাবনার মাঝে তিনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিলো।। অনেকবার ছুটতে চেয়েছিলাম,, কিন্তু এই দূর্বল শক্তি নিয়ে তার সাথে পেরে উঠেনি।। সূর্য অস্তের পর কিছুক্ষণ সেখানে থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে এলাম।। যতক্ষন ওখানে ছিলাম ,, আমার অনিচ্ছার সত্ত্বেও সারাক্ষন আমি অরিশের কোলেই ছিলাম।। কতোছবি তুলেছি দুজনে একসাথে ।। সবাই তো আমাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।।লজ্জায় তখন মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো ।।।।

🍁🍁🍁

৯ টার মধ্যেই আমরা বাড়িতে ফিরে এসেছি।।‌বাড়িতে ফিরতেই মাম্মাম ভালোভাবে পায়ে মালিশ করে দিয়েছে ।। এখন একটু একটু হাঁটতে পারি।।
এখন আমি ছাদে একা একা দোলনায় বসে আছি।।
আরশি কিচেনে আমার জন্য গ্ৰিন টি বানাতে গেছে।। চা কিংবা কফি খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই ।। অনেক অভ্যাসই বদলে গেছে।। হাঁটতে কষ্ট হয় তাই ছাদে আসতে চাই নি। আরশি আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে এখানে এনে বসিয়ে দিয়ে গেছে। প্রথমে দু কাপ কফি এনেছিলো ,,আমি খাই না জানার পর গ্ৰিন টি বানাতে গেছে ।। বারন করেছিলাম ,, কিন্তু আমার কথা তার কানেই তুলে নি।। আজ রাতের আকাশটা একটু মেঘলা মেঘলা ,, চারদিকে ঝড় হাওয়া দিচ্ছি ,, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,, যখন তখন বৃষ্টি হতে পারে ,, কোনো এক বৃষ্টির দিনে আমি আর অরিশ ছিলাম খুব কাছাকাছি ।। এখন বৃষ্টি দেখলেই মনটা তোলপাড় হয়ে যায় যদি ,, সেদিনের মত কিছু হয়।।
এর মধ্যে আরশি এসে আমার হাতে কাপটা ধরিয়ে দিয়ে ,, দোলনায় বসে পড়লো ।।তারপর দুজনে একসাথে কাপে চুমুক দিলাম।। হঠাৎ করেই আরশির ফোনটা বেজে উঠলো ।। রাশি ফোনটা হতে নিলে ,,আমি আড় চোখে দেখলাম ফারহান নামটা জ্বলজ্বল করছে।। ফোনটা রিসিভ করে ,, ছাদের অন্যপ্রান্তে গিয়ে কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে।। আমি একবার ওর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আবার কাপে চুমুক দিলাম।।। হঠাৎ কেউ আমার হাত থেকে কাপটা নিয়ে গেল তাকিয়ে দেখি ,,, অরিশ দোলনায় বসে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।। আমার কাপটা নেওয়া জন্য হাত বাড়াতেই ,,কাপটা দূরে সরিয়ে দিলো।।আমি একবার তার দিকে অগ্নদৃষ্টি দিয়ে দোলনা থেকে উঠে আস্তে আস্তে হেটে ছাদের অন্য প্রান্তে গেলাম।। সেখানেও শান্তি নেই।। অরিশ আমার কাছে গিয়ে পেছন থেকে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার কাঁধে থুতনিটা রাখলো।। এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও এভাব আর পারলাম না।।।ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ঠাস করে একটি চড় বসিয়ে দিলাম তার গালে।। গালে হাত দিয়ে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।। হয়তো ভাবতে পারেনি,, এমন কিছু আমি করবো।। অরিশের কলারটা চেপে ধরে বললাম…..

— কি মনে করেন আপনি আমাকে আপনার হাতে পুতুল ।। যখন যা ইচ্ছে করবেন।। এতোদিন আমাকে ভালো লাগতো না ,, তাই আমার কাছে আসতেন না অপমান করতেন ,,, এখন আমার টাকা পয়সা ,, ব্যাংক ব্যালেন্স,, প্রোপাটি ,, পপুলারিটি হয়েছে তাই আমাকে ভালো লাগতে শুরু হয়েছে।। একটা সত্যি কথা বলুন তো ,, আপনি তৃনার বাবার টাকার লোভে তার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছেন আর এখন আমার টাকা পয়সা হয়েছে তাই আমার সাথে অভিনয় করতে শুরু করে দিয়েছেন।। বলুন,, আপনার কতো টাকা চাই আমি সেটাই আপনাকে এনে দিবো।। তবুও এইধরনের নিংরামি আমার সাথে করবেন না

এক ঝটকা আমার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললেন….

— বিশ্বাস কর আমি সত্যি তোকে খুব ভালোবাসি।। তোর কিংবা তোর বাবার টাকা,, পয়সা,, ব্যাংক ব্যালেন্স,, প্রোপাটি পপুলারিটি এইসবের কোনো দরকার আমার নেই !! নিজের করা ভুলের সংশোধন করছি !!

— ও আচ্ছা তাই নাকি,!!! আমাকে খুব বোকা ভেবেছেন ,,, আমার কোনো কিছুর উপর আপনার লোভ নেই ।। তাহলে হঠাৎ আমার উপর আপনাদের পুরো পরিবারের এতো ভালোবাসা কোথা থেকে এলো ।। আসলে সত্যি টা কি জানেন,আপনি ,,আপনার বাবা মা,, বোন সবাই লোভি!! ( চেঁচিয়ে বললাম আমি)

ঋনি বলে অরিশ আমার গায়ে হাত তুলতে নিলেই আরশি এসে হাতটা ধরে ফেলে !!! স্পষ্ট দেখতে পারছি অরিশের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে,, কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা না করে,, আবার চেঁচিয়ে বললাম….

— মারতে ইচ্ছে করছে আমাকে মারুন ।। আপনি তো সারাজীবন আমাকে মেরেই এলেন ।। তবুও আমি বলবো ,, আপনারা সবাই লোভী।। আমি তো কাল সাপ কেন আসেন আবার দুধ কলা খাওয়াতে ।। একবার তো
ছোবল দিয়েছি আবার দেবো ।। কারন ,, সাপের ধর্মই ছোবল দেওয়া।।

বলেই কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে এলাম।। যখনই ভাবী আমাদের মাঝে ,, সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে ,, তখনই আবার সব এলোমেলো হয়ে যায়।।

চলবে…💞💞

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৯

সূর্যের আলো চারদিকে ছেড়ে গেছে ।। বেলা অনেক হয়েছে।। সকালে পাখির চিকিরমিচির শব্দ শোনে ঘুম থেকে উঠা এখন আর হয়ে উঠে না শহরের এলাকায়।। এটা শুধু গ্ৰামেই সম্ভব।।কালকে রাতে দেরী করে ঘুমিয়েছি ।। তাই এখন ঘুমা থেকে উঠা বড্ড মুস্কিল।। হঠাৎ ফোনের রিংটোনের আওয়াজে হালকা হয়ে যায় আমার ঘুম । ঘুম ঘুম চোখে পিট পিট করে তাকিয়ে হাত দিয়ে খুজে কলটা রিসিভ করে নেই ।। ওপাশের কথা শুনতেই ঘুমটা যেন গায়েব হয়ে গেল।। লাফ দিয়ে উঠে বসে কলটা কেটে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকতেই বাজ পড়লো আমার মাথায় ।। কালকে রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো ঠিকই ,, কিন্তু কোনো বাজ পড়নি ।। সেটা হয়তো আমার জন্যই তোলা ছিলো।। ফোনটা পাশে রেখে তাড়াতাড়ি নিচে গেলাম।। হাঁটুতে ব্যাথা নামতে কষ্ট হচ্ছে ,, তবুও নামলাম।। ড্রয়িং রুমে মোটামুটি সবাই বসে ছিলো ।। কিন্তু সেদিকে খেয়াল না করে টিভির দিকে চোখ বোলালাম।। পাপা টিভিতে বক্সিং দেখছে ।।

— এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন ?? তোকে কি পাগলা কুকুরে তাড়া করেছে !!( কৌতূহল নিয়ে আরশি)

— নারে বোন কুকুরে তাড়া করেনি !! তার চেয়েও বড় কুকুর ,, মানে প্রেস মিডিয়া।।

বলেই পাপার হাত থেকে রিমোট টা নিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করে সময় চ্যানেলে দিতেই থমকে গেলাম।। যার জন্য এতো লুকোচুরি,, সেটাই ফাঁস ।।

— রকস্টার তরিনের আমাদের দেশে আগমন ।। কালকে হঠাৎ ফার্মেসিতে মেডিসিন কিনতে আসে।। যতক্ষন ছিলেন ,, সারাক্ষনই মুখে হাত দিয়ে আড়াল করতে চেষ্টা করে ,, কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা করে দেই তার স্মার্ট কার্ড।। তিনি তাড়াহুড়ো করে বেরুতে গিয়ে স্মার্ট কার্ড টা ফেলে যায়।। কেন তার এই লুকোচুরি ,, সেটা জানতে হলে ,, সময়ের সাথেই থাকুন ?!!

কালকে ফার্মেসির সিসি ক্যামেরায় আমাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।। মাথায় হাত দিয়ে করুন দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে আছি।। এবার আমাকে প্রেস মিডিয়ার ঝামেলায় পড়তেই হবে।। নিজের স্মার্ট কার্ডের জন্য।।

____________________

আজ কাল হঠাৎ করেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে যায় ‌।। যার কোনো কারন থাকে না ।। এরজন্যই হয়তো মনকে আকাশের সাথে তুলনা করা যায়।। আকাশে যেমন হঠাৎ মেঘ ,, বৃষ্টি দেখা যায় তেমনি মনের মাঝেও দুঃখ কষ্ট অনুভব হয়।।একটু আগেও আমার মন খারাপের কারনে চুপ করে বসে ছিলাম ,,বেলকেনির এককোনে ,, কিন্তু এখন ড্রয়িং রুমে সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি আর ফুপির হাতের গরম গরম পকোড়া খাচ্ছি।। হ্যা একটু আগে ফুপিরা এসেছে ।। হঠাৎ করেই তাদের আসা।। প্রথমে বিশ্রাস হয়নি ।। পরে নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করেছি।।ফুপিরা মানে ফুপি ,, রাফি ,, সামিরা ,,স্যামি ,, আর তাদের বাবা মা সবাই ।।
এখন সবাই চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর বিয়ের সমস্ত প্ল্যান করছে ।। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে তারা আবার দেশে ফিরে যাবে‌। অবশেষে ফাইনাল হলো ,, বিয়ের সব আয়োজন।। একদিন রেক্ট নিয়ে ফুপি আর ফুফার সব মান অভিমান দূর করে দেবে ।।তারপর সবাই বিয়ের শপিং করতে যাবে ।। তারপরের দিন সবাই মিশে ফুফাদের বাড়ি যাবো,, সেখান থেকেই সামিরা আর রাফির বিয়ে হবে।।
হঠাৎ করে না জানিয়ে আসার জন্য রুমগুলো ক্লিন করে রাখতে পারে নি ,,তাই একটা রুমে আমি ,,,সামিরা আরশি থাকবো।। আর আরাশির রুমে সামিরার বাবা মা।। অরিশের রুমে রাফি আর স্যামি।। আজ সবাই ক্লান্ত তাই আর কথা না বাড়িয়ে ডিনার করে যার যার জন্য ঠিক করা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।।

_____________________

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে আমার।। একদিকে বিদ্যুৎ নেই আবার সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম।। তাই ঘুমও আসছে না।।গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছি , দেশে ফেরার পর এমন ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয় নি আমাকে।। অন্ধকারে কাউকে দেখে যাচ্ছে।। আমি কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে ফোনের টচ টা জ্বালিয়ে ছাদের উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলাম।।
ছাদে গিয়ে যা দেখলাম,,সেটা আমার আশার বাহিরে ছিলো।।আরশি স্যামির বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে এক হাতে জরিয়ে ধরে আছে,,আর স্যামি আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অন্যহাতে জরিয়ে আছে।। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ,, সামনে এগিয়ে গেলাম।। কোনো হালকা টর্চের আলো আর পায়ের আওয়াজে দুজন দুজনার থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল।। দুজনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,,আমি কিছু বলার আগেই আরশি বলে উঠলো….

— ততুই এএখানে কি ককরছিস!!( কাঁপা কাঁপা গলায়)

— গরম লাগছিলো তাই হাওয়া খেতে এসেছি ।। এবার বল তুই কেন এখানে এসেছি !!( একটু আগে আবার) আবার বলিস না হাওয়া খেতে এসেছিস। স্যামির শরীর কোনো এসি নয় যে,,তার সাথে লেপ্টে থাকলে হাওয়ায় পাওয়া যাবে!!(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম আমি)

— আসলে কি হয়েছিলো…..!!

স্যামি আর কিছু বলার আগেই এসে হাজির হলো ।। তাই আর কথা বাড়ালাম না।। চাইনা এতো রাতে আবার সিনক্রেট হক।। আরশি তো ফারহানকে ভালোবাসে তাহলে স্যামির সাথে যেটা দেখলাম সেটা কি ছিলো।।আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম ।। রুমে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে আমার কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ।। ঘটনাচক্রে হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেল।।আমি চোখ দুটি খিচে বন্ধ করে নিলাম।।আস্তে আস্তে তাকিয়ে আবছা আলোয় সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। তিনি আমাকে ছাড়িয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।। তারপর শীতল সুরে বলতে লাগলো….

— জানো তরীরানী তোমার সাথে দেখা করতে আমাকে কতো বেগ পেতে হয়েছে।। পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছে ।। তারপর সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ছাদে পাঠাতে হয়েছে ।। ( আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে অরিশ)

তরীরানী শব্দটা যেন বুকের ভেতরে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল।। তার তুমি সম্মোধন যেন ,,শীতল গলা বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করলাম।।

— বুজলাম।। কালকে মারতে পারেন নি।। তাই আজকে গায়ে হাত তুলতে সবাইকে ছাদে পাঠিয়ে এখানে এসেছেন??( অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আমি)

— তোমাকে সারাদিন দেখিনি ,,মনে হচ্ছিলো বুকের ভেতরের শ্বাস যেন‌ ভারি হয়ে উঠেছে।।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো !!( একটু থেমে আবার) আর কষ্ট দেওয়া কথা বলছো,, তোমাকে কষ্ট দেওয়ার শক্তি আমার নেই।। যতটা কষ্ট তোমাকে দিতে চাই ,,তার হাজার গুণ বেশি আমি নিজে পাই।।(হাত দুটো দেখিয়ে অরিশ)তাই তো নিজের ক্ষতি করেছি,, দেখো !!

একবার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ব্যান্ডজ করা ।।
ব্যান্ডেজের উপরে রক্তের দাগ স্পষ্ট ।।এক ধ্যানে তার হাতের দিকে তাকিয়ে বললাম…

— তাহলে কেন কষ্ট দেন আমাকে।। যে কষ্ট দিয়ে নিজেকে আবার ফিরে পেতে হবে সেটা কেন দেন??

— দিতে তো চাই নি কিন্তু ভুল করে দিয়ে ফেলি যে।।
এটা কথা কি জানো ,, বাবা মায়ের নামে কেউ কিছু বললে কতোটা কষ্ট হয় তুমি নিশ্চই জানো ।। তাহলে তুমি একবার ভেবে বলো ,,,আমার বাবা মায়ের নামে কেউ বাজে কথা বললে ।।আমি তার সন্তান হয়ে কিভাবে সহ্য করি ।। হে মানছি ,,আমার পুরো পরিবার আরশির জন্য তোমাকে ব্লেম করেছিলো।। তারজন্য কিন্তু একমাত্র আমি দায়ি ,, কারন আমি সবাইকে বলেছিলাম,, তুমি সবটা জানো ।।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে আমাকে তার বুকের মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।। আমি কিছু না বলে অরিশের বুকে মাথা রাখলাম।। মাথা রাখলাম বললে ভুল হবে ।। নিজের করা কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে কখন যে মাথা রেখেছি খেয়ালই করিনি।। সত্যি তো কিভাবে পারলাম কথাগুলো বলতে ,, আমিতো একসময় মামনি কে অনেক ভালো বাসতাম।। এখনও বাসি ।।তারা আমাকে কথা বলেছে বলে কি আমিও বললো ।। তাহলে তো তাদের সাথে আমার কোনো পার্থক্য রইলো না।। আমার ভাবনার মাঝে অরিশ আমাকে তার বুক থেকে তুলে গালে হাত দিয়ে বললো,…

— এখন নিজের করা কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল তাই না।। সবসময় যা করবি তা ভেবে করবি।। আমি একটা ভুল করে ,,সরি ভুল না অন্যায় করে দেখছিস কিভাবে তার মাসুল দিচ্ছি।। জানি না সেই অন্যায়ের ক্ষমা কখনো তুই করবি কিনা ।।।

চলবে….💞💞