এক টুকরো মেঘ পর্ব-২০+২১

0
481

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২০

শহরের ব্যস্ত নগরীর মাঝে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানো একবারে সহজ কাজ নয়।। জ্যামে পড়ে থাকতে থাকতেই দিন কেটে যায়। আমাদের ক্ষেত্রেও এর বেতিক্রম হয়নি।।‌
২ ঘন্টা গাড়ির জ্যামে থাকার পরে গাড়ি এসে থামলো শপিং মল সামনে।। এখন আবার অপেক্ষা করতে হচ্ছে মাম্মামদের জন্য ।। এমনিতেই ২ দিন ধরে মাথাটা ভার হয়ে আছে ,, কালকে তো একদমই রুমের থেকে একপাও ফেলিনি।। সবাই ফুফা ফিরে আসাতে কতো খুশি হয়েছিলো ,,আনন্দ করেছিলো ।। কিন্তু তার একটু ছোঁয়াও আমার গায়ে লাগাতে পারি নি।। হাত পায়ের ব্যাথায় শরীরটা একটু খারাপ ছিলো ,,, সাথে মাথা ব্যাথা তো ছিলোই।। আজকে শপিং এ আসার কথা আমার একদমই ছিলো না ।। শুধু আরশি কথায় এসেছি ,, আমি না আসলে সে আসবে না ।। আর আমরা দুজনের একজনও না আসলে সামিরা কষ্ট পাবে।। কারন ,, ইতিমধ্যে আমাদের ৩ জনের মধ্যে অনেক ভাব হয়ে গেছে।।
বর্তমানে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার এক কিনারে ।। আর আরশি স্যামি আর স্যামিরার কথায় তাল দিচ্ছি।। শরীর খারাপের কথাটা কাউকে বলতে পারছি না,, তাহলে আবার আরশিকে বকা শুনতে হতে পারে ।। আমি, আরশি ,স্যামি , সামিরা একসাথে এসেছি আর রাফি , মাম্মাম,মামনি আর আন্টি আসছে একসাথে।। আমি সত্যি বুঝতে পারিনা,, স্যামি কিভাবে রাস্তা চিনে চলে এলো।। শরীরটা খারাপ তাই আরশি আর স্যামির ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করা হয়নি।।আমার ভাবনার মাঝে একটা বাইক এসে ঠিক আমার গা ঘেষে থামলো ।। প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরক্ষনে অরিশকে দেখে সেটা কেটে গেল।। পড়নে ব্যাক জিন্স,, গোলাপি রঙের শার্ট ,, উপরের দুটো বোতাম খোলা যাতে বুক পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।। দুপুরের রোদে ঘামে ভিজে পুরো শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।। বোতামের সাথে সান গ্লাসটা আটকে রেখেছে।। হাতে ঘড়ি আর পায়ে সু!! কপালের কাছের কালো তিল টা রোদের তাপে লালচে আকার ধারণ করেছে।। ইচ্ছে করছে ,, সেদিনের মতো হিজাব দিয়ে ঘামগুলো মুছে দেই ।। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়,,আজকে আমি না থ্রিপিস পড়েছি ,,না আগের মানুষটি একটু ভালোবাসার অপেক্ষায় আছি ।।মামনি বলেছিলো ,, তিনি সকাল থেকে বেপাত্তা ।। কোথায় গেছে কাউকে বলে যায়নি ।।

— ভাইয়া তুই এসেছিস!! সকালে সবাইকে কিছু না বলে কোথায় গিয়েছিলি ,, মা কতো টেনশন করছিলো জানিস!! ( আরশি)

— অনেক দিন হয়েছে অফিসে যাওয়া হয়না ।। তারপর আবার রাফির বিয়েতে গ্ৰামে যাবো ,, তাই একটু অফিসে গিয়েছিলাম।।( ভাব নিয়ে অরিশ)

— ভাই তুমি অফিসে গিয়েছিলে !! দিনের বেলা আকাশে চাঁদের আভাশ পাচ্ছি !!( ইনোসেন্স ফেইস করে স্যামি)

— কাজ করবো না তো বসে বসে খাবো !! কিছুদিন পর বিয়ে হবে বাচ্চা হবে ।। বউয়ের শপিং,, বাচ্চার খেলনা কেনার টাকা কই পাবো ।। তাই এখন থেকে অফিসে যাবো !!( ভাব নিয়ে অরিশ)

— ভাইয়া আপনার তো বিয়েই হলো না আর এখনই বাচ্চার কথা ভাবছেন ।। (প্রিন্ট করে সামিরা )

— ভাবতে তো হবেই কারন আমার বউটা যে সেই লেভেলের হট ।।দেখলেই বাসরটা শেষে ফেলতে ইচ্ছে হয় ,, তাই ভাবতে তো হবই!! 😎😎(আমার দিকে তাকিয়ে,, ভাব নিয়ে অরিশ)

আর কোনো কথা বলার আগেই মাম্মামদের গাড়ি এসে থামলো আমাদের সামনে ,,আর আমরাও ভেতরে চলে এলাম।।

৪টা বেজে গেছে।। এখনো শপিং করছে ।। কথা ছিলো বিয়ের সব কেনাকাটার খরচ আমাকে দিতে হবে ।। তাই আগেই কার্ডটা নিয়ে গেছে।। আজ আমার সব টাকা শেষ না করে এরা কিছুতেই থামবে না আমি অবলা বাচ্চার মতো ওদের পিছুপিছু হাঁটছি ।। মাথা ব্যাথাটা আগের তুলনায় আরো বেড়েছে।। চারপাশে আরশিকে খুঁজছি ,, কিন্তু তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।। হঠাৎ চোখ গেলো সামিরার দিকে ,, চোখ দিয়ে রাফিকে ইশারা করছে ।। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারছি ।। আমি একটু এগিয়ে গিয়ে রাফিকে টেনে সামিরার পাশে দাড় করিয়ে ,, সামিরার গা থেকে শাড়িটা নিয়ে রাফির হাতে জড়িয়ে দিয়ে বললাম,…..

— দূর থেকে ইশারায় শাড়ি চয়েজ না করে সামনে থেকে কর ।। ( মাম্মামদের উদ্দেশ্য করে) তোমাদের কোনো সমস্যা নেই তো!!

তারা মাথা নিচু করে মুচকি হাসি দিয়ে না বললো।। তারপর আবার কেনাকাটা করা শুরু হয়ে গেলো।। কিছুক্ষণ পর মাথাটা হঠাৎ করে জিম দিয়ে চোখের সামনে থাকা সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল।।আমি হাত দিয়ে কোনো কিছু ধরার আগেই মাথা ঘুড়ে পড়ে যেতে নিলাম।।তখনই কোনো শক্ত পোক্ত হাত আমাকে ধরে নিলো ।। তা দেখার আগেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল।।

পানির ফোঁটা চোখে পড়তেই পিট পিট করে চোখ খুলে
তাকালাম আমি ।। চোখ খুলতেই নিজেকে কারো বুকে আবিস্কার করলাম।। তাকিয়ে অরিশের মায়াবী মুখটাকে দেখতে পেলাম।। তার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারলাম আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মাম্মাম বললো…

— ২ দিন ধরে এমনিতে ওর শরীরটা একদম ভালো নেই ‌। তারউপর সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি।। বেলা তো শেষ হতে চললো।। তুই একটা কাজ কর ,, সবাইকে নিয়ে সামনের রেস্তোরাঁ থেকে কিছু খেয়ে নে।। আমাদের সব কেনা হয়ে গেছে।। বিল পে করে আমরাও আসছি !!

আরশি আর স্যামিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।।তাই ওদের খুঁজতে লাগলাম।। আমি একটু এগুতেই যা দেখলাম ,,তাতে আমার চোখ চড়কগাছ।। আরশি আর স্যামি একসাথে টাওয়াল রুম থেকে বেরুলো।। আমাকে দেখেই আরশি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে একটা ঢোক গিলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।।

— এখানে কি হচ্ছিলো জানতে পারি !! ( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— আআসলে কি হয়েছিলো …!!

— তোরা এখানে,,, কতোক্ষন ধরে তোদের খুঁজছি কোথায় ছিলিস বল তো।।(পেছন থেকে অরিশ)

আর কিছু বলার আগেই অরিশ এসে হাজির হলো ।।আমি তার দিকে একবারও তাকিয়ে বললাম…

— আমার একটু ওদের সাথে কথা আছে আপনি যান ।।আমরা আস….

আমার কথা সম্পূর্ন হওয়ার আগেই আমাক কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলো রেস্তোরাঁয় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।।
সেখানে গিয়েও শান্তি পেলাম না ।। আমার একহাত তার একহাত দিয়ে বন্ধি করে ,, নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে।। আর সবাইকে বলেছে আমি তার হাত থেকে খাবো বলে নিজের হাতে খাচ্ছি না।। তাই বাধ্য হয়ে খাইয়ে দিচ্ছে।। আমি কিছু বলতে চাইয়ার আগেই খাবার দিয়ে আমার মুখ ভরিয়ে চোখ গরম করতো ।। মুখের খাবার শেষ হওয়ার আগেই আবার খাবার পুড়ে দিতো।। কিছুক্ষণ পর মাম্মামরাও চলে এলো ,, তারপর একসাথে খেয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।।।

_____________

বেডে শুয়ে শুয়ে আজকের দিনটার কথা ভাবছি।।বাড়ি ফিরে রুমে পৌছে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে কতোটা কেয়ার করেছে।। সারাক্ষণ কোলে নিয়ে হেঁটেছে।।একটুর জন্যও নামায় অবধি নি ,,রুমে এনে মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছে ,,,বেডে শুইয়ে ব্লাকেট টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেছে।। কতো সুন্দর ছিল সে মুহুর্তটা ।। হয়তো তাই বলে ,, মানুষের মন বোঝা বড্ড দায়।। ইচ্ছে করে তাকে খুব আপন করে নেই ,, আবার ভয় করে যদি ,, আগের মতো কষ্ট পাই ।। তখন তো ঠিক নিজেকে সামলে নিয়েছি ।। এখন আর পারবো না ।।এদিকে আরশি আর স্যামির ব্যাপারটাও ঠিক বুঝতে পারছি না।।ফারহান থাকতে স্যামি কেন???এই দোটানা থেকে বেরুনোর একটা রাস্তা সেটা হচ্ছে ঘুম।।তাই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম।। কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার করে তলিয়ে গেলাম ঘুমের অতল গহ্বরে।।

চলবে…💞💞

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২১

আমার চোখের সামনে একজোড়া ভালোবাসার মানুষ একে অপরকে আস্টে পিস্টে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ।। আমি একবার তাকিয়ে দিকে তাকিয়ে শরীরে চাদরটাকে ভালোভাবে পেঁচিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম।।কালো মেঘেরা যেন আকাশটাকে চাদরে ঢেকে রেখেছে।। বাহিরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে।।সেই হাওয়ার মাঝেও আমার শরীরে গরম তাপে যেন পুড়ে যাচ্ছে।। গলাটাও যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাহিরে তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে,, বৃষ্টির ফোঁটা ছিটকে পড়ে আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।। বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া আমার ভালো লাগলেও বৃষ্টিতে মাথাটা যেন আরো ভার হয়ে আসছে।। হাত দিয়ে চেষ্টা করেও গাড়ির জানালাটা আটকাতে পারছি না।।আরশিকে ডাক দেওয়ার মতো শক্তি টুকু যেনো উধাও হয়ে গেছে।। অনেক কষ্ট করে ডাক দিলাম কিন্তু গাড়ির আওয়াজের সাথে বাইরে বৃষ্টি আওয়াজ একসাথে মিশে আমার কথা ওদের কারো কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।।হাত দিয়ে চাদরটাকে চেপে ধরলাম।। একসময় শরীরের সব শক্ত টুকু নিমেষে উধাও হয়ে জ্ঞান হারালাম সেখানে।।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারছিলাম কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে আমার।। তার উপরে রাফির ইনভার্ট করা প্রেস মিডিয়ার ঝামেলায় পড়ে শরীরটা আরো ক্লান্ত হয়ে পরেছে ।। সে তার বিয়ের ব্যাপারটা গোটা পৃথিবীবাসিকে জানাতে ইচ্ছুক।। তাই আমার নাম করে তাদের ইনভার্ট করেছে।।সবাই সারাদিন প্যাকিং করে রাতে পাপার ভাড়া করা মাইক্রো বাসে করে দেশে ফিরছি আমরা।। বড়রা একটা মাইক্রো বাসে আর ছোটরা একটায়।। পাপাদের গাড়িকে ফলো করে আমাদের গাড়িটা চলছে।।অরিশ ড্রাইভ করছে ,,আর ফন্ট সিটে স্যামি।। পিছনে সামিরা আর রাফি ।।ব্যাক সিটে আমি আর আরশি।।
______________

ফোনে কারো সাথে টেক্স করতে ব্যস্ত আরশি।। তার গায়ে তুষারের মতো ঠান্ডা পানি পড়তেই হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেল।। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তুলে পাশে তাকাতেই দেখলো তরিন জানালার কাচ দিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছে।। বৃষ্টির পানিতে তরিনের গায়ের চাদরটা ভিজে একাকার হয়ে গেছে।।আরশি আবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো…

— ঋনি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিস তো ভেতরে আয়।এতো ঠান্ডা পানি এভাবে শরীর ছুঁয়ে গেলে ।। আরো অসুস্থ হয়ে পড়বি যে!!!

কিছুক্ষণ পরেও যখন ওপাশের মানুষটি কোনো রিসপনস পেলো না তখন হাত দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে আনতেই নুইড়ে পড়লো আরশির গায়ে।। তরিনকে দেখে বুঝতে বাকি রইল না,,,যে সে জ্ঞান হারিয়েছে।। হাত দিয়ে আলতো করে ধাক্কাতেই শরীর বরফের মতো ঠান্ডা অনুভব করলো।।কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে জোরে বলে উঠলো….

— ভাইয়া একটু ….

— আরু বিরক্ত করিস না ,,দেখছিস তো ড্রাইভ করছি ।। এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে তো।। বৃষ্টিতে এমনিতেই ড্রাইভ করতে সমস্যা হচ্ছে ,,এর পর যদি ঐগাড়িটা হারিয়ে ফেলি ,, তাহলে আমাদের আর সেখানে যাওয়া সম্ভব হবে না।।( আরশিকে বলতে না দিয়ে ড্রাইভ করতে করতে অরিশ)

— শুনছো !! তুমি একটু এখানে আসবে।। হঠাৎ করেই ঋনি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে ,, আমি একা কিছুতেই ওকে সামলাতে পারছি না।।( কোনো উপায় না পেয়ে অরিশকে শুনিয়ে স্যামিকে উদ্দেশ্য করে )

ঋনির কথা কানে আসতেই ড্রাইভ করা থেমে গেল অরিশের !!একবার পেছনে তাকিয়ে তরিনের শুকিয়ে যাওয়া ফেকাশে মুখটা দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে স্যামির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।।স্যামি অরিশের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো.. “” ভাইয়া তুমি যাও তোমার প্রিয়শ্রীর কাছে ,, এখানটা আমি দেখছি”!! অরিশও আর কথা না বাড়িয়ে দূ্রত্ব পায়ে এগিয়ে গিয়ে তরিনের পাশে বসে তার মাথা নিজের বুকে রাখতেই,,, আরশি বেরিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসলো আর স্যামিও ড্রাইভ করতে মন দিলো।।
অরিশ কাচটা বন্ধ করে তরিশের চোখে পানির ছিটে দিয়ে,, গালে হাত রেখে ডাক দিলো ,, কিন্তু সে কাঁপা ছাড়া কোনো রিসপনস করলো না,, তরিনের শরীর থেকে ভেজা চাদরটা টেনে ,,সেটার শুকনো দিকটা দিয়ে ভালোভাবে মুছিয়ে দিলো। ব্যাগ থেকে একটা স্যালাইনের বের করে পানির সাথে ভালো ভাবে তরিনকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।। কিন্তু সেটা তার শুকনো পাতলা গোলাপী রঙের ঠোঁট বেয়ে পড়ে যায়।।প্রায় মিনিট পনেরো চেষ্টায় অর্ধেক খাওয়ানো সক্ষয় হলে,,, পরক্ষনেই ব্যাগে থেকে একটা চাদর বের করে ,,,তরিনের সাথে নিজেকে সহ চাদরটা পেঁচিয়ে নিলো শরীরে।। নিজের ঠোঁট দুটি ছুয়িয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো অরিশ….
আজ যদি তার তরীরানী জেগে থাকতো ,,তাহলে তার কপালে চুমু খাওয়া তো দূরে থাক জরিয়ে অবধি ধরতে পারতো না ।।অনেক কষ্ট দিয়েছে ,,তার রানীকে ,, ভালোবাসায় রাঙিয়ে দেওয়ার অপেক্ষা।।
খুব শক্ত করে আর প্রিয়শ্রীকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে দেশে পাড়ি জমালাম সে ।

হোকনা কিছু অন্যরকম
থাকুক না যতো ভিন্নতা
বাড়ুক না আজীবনের দূরত্ব
তবুও ভালোবাসি তোমায়….❣️

— ইফা 🌿
_______________________________________

সময় সত্যিই এক অদ্ভুত জিনিস ।। এখন আছে তো এখনই ফুরিয়ে যায়।। বেশ কিছুদিন কেটে গেছে গ্ৰামে এসে পৌঁছেছি ।।কালকে সামিরা আর রাফির গায়ে হলুদ।।। আমার জন্যই পিছিয়ে ছিলো।। গ্ৰামের আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়ার আগেই শরীরটা আরো খারাপ হয়ে যায়।। ডাক্তার,,, মেডিসিন করতে করতেই দিন কেটে গেছে।। কালকে থেকে আমি মোটামুটি সুস্থ হয়ে গেছি ,, কিন্তু কেউ বাহিরে বের হতে দেয়নি।। অরিশ সারাক্ষন আমার পাশে বসে ছিল, ঘড়ির টাইম মেপে মেপে মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছে।। আজকে শরীরের একঘেয়েমি দূর হয়ে গেছে ,, তাই এখন বাহিরে পূর্ণিমার আলোয় সাথে ফোনের টচ জ্বালিয়ে চারদিকে সাইকেল খুঁজছি ।। বাড়িতে আসার সময় অরিশ আমাকে কোলে তুলে এনেছিলো ঠিকই কিন্তু আমার চোখজোড়া আটকে গিয়েছিলো,, গাছের সাথে থাকা সোনালি রংঙের ৪ টে সাইকেলের উপর।।গ্ৰামে চলাফেরার জন্য সাইকেলই যথেষ্ট।।আর কিছু পাওয়া যায় না।। এতোদিন অসুস্থতার জন্য সাইকেল চালাতে পারিনি ।। কিন্তু আজকে তো সুস্থ তাই আজকে চালাবো।।আমি তেমন সাইকেল চালাতে পারি না।। ঐআর কি একটু আধটু পারি ।। অরিশের কাছ থেকে শিখেছিলাম।। তখন জিএসসি এক্সাম ছিলো।। তাই পুরোপুরি শেখা হয়নি।।।
অবশেষে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে পেয়ে গেলাম সাইকেলের দেখা ।। সেখান থেকে একটা সাইকেল বের করে চালাতে শুরু করলাম।। অনেকদিন হয়েছে সাইকেল চালানো হয়না ,,তাই একটু আধটু কষ্ট হচ্ছে।। তবুও চালাচ্ছি।।

— থামো ,,থামো !! আমি কখনো সাইকেলে চড়ি নি প্লিজ আমাকে তুলো ।। (ইনোসেন্স ফেইস করে সামিরা)

আমি সামিরার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম…

— ঠিক আছে উঠো।।শক্ত করে ধরবে আর পড়ে গেলে কিন্তু আমি জানি না।।( মনে মনে আমি)জানি কষ্ট হবে তবুও উঠ ।। অনেক আশা নিয়ে বলেছো না করতে পারলাম না।।

সামিরা উঠতেই আমি আবার চালাতে শুরু করলাম।
সামিরা ধরা তো দূরে থাক লাইভে টিকটক করছে ,,যাতে সাইকেল অনেকটা নড়ছে ।। এতোক্ষন
একটু কাত হচ্ছিলো ,এবার ধপাস করে নিচে পড়ে গেলাম।। আমরা নিচে আর সাইকেল উপরে ।।
পাশেই সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো,, কিছু পরার আওয়াজ থেকে আমাদের কাছে এসে পড়ে থাকতে দেখে টেনে তুললো।।তারা আমাদের দুজনকে এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।।

— তুই তো নিজেই সাইকেল চালাতে পারিস না ।। তার উপরে আবার সামিরাকে কেন নিলি ।। (আরশি)

— আমি মোটামুটি সাইকেল চালাতে পারি।। কিন্তু ও সাইকেলে বসে নেচে নেচে টিকটক করছিলো ।।তাই পড়ে গেছি !!(জামা কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে আমি)

— জানিস তরী ,, আমি একসময় সাইকেল চালানোর মাস্টার ছিলাম।। ৮,,১০ জন নিয়ে সাইকেল চালাতে পারতাম।। এখনো পারি,, আমার মতো স্পীডে কেউ সাইকেল চালাতে পারে না।।( ভাব নিয়ে রাফি)

— সবই ডপের চপ ।।ওকে তাহলে একটা সাইকেল দিয়ে হয়ে যাক ,,, তাহলেই দেখা যাবে কে সবচেয়ে ভালো সাইকেল চালাতে পারে।।(স্যামি)

— তোরা ধর ।। আমি জিতবো এটা সিউর,,তাই বাচ্চাদের সাথে চ্যালেন্স ধরি না।। শুধু শুধু হেরে কান্না কাটি করে পাড়া মাথায় তুলবে।।(শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে অরিশ)

তারপর শুরু হলো আমাদের সাইকেলের প্রতিযোগিতা যারা সবাই আগে রাস্তার মোড়ের সামনে থাকা ভাঙা পুলের সামনে যেতে পারবে তারাই জিতবে।। যেহুতু সাইকেল মাত্র ৪ টা তাই ,,জোড়ায় জোড়ায় সাইকেলে চালাবে।। রাফি আর সামিরা ।। আমি স্যামির সাথে সাইকেল চালাতে চেয়েছিলাম কিন্তু অরিশ জোর করে টেনে তার সাইকেলের সামনে দিকটায় বসিয়ে দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে ,, তাই আমি অরিশ আর আরশি আর স্যামি !!

সাইকেল চলছে নাকি পিঁপড়ার গাড়ি চালাচ্ছে বুজতে পারছি না।।সবাই কতো আগে চলে গেছে আমরা পেছনে পড়ে আছি।।

— আপনি সাইকেল থামান,, আমি নামবো ।। এমন পিঁপড়ার মতো সাইকেল চালালে আজকে তো থাক ৫ দিনেও পৌছাতে পারবো না ।।তখন সবাই আমাকে পচাবে!!!( বিরক্তি নিয়ে আমি)

চলবে..💞💞