এক ফোঁটা প্রেমের বিষ পর্ব-০৮

0
422

#এক ফোঁটা প্রেমের বিষ
#Tahmina Akhter

৮.

একদিন কলেজ ছুটি হবার পর আমি এবং আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিঝুম চলে গেলাম কাছের এক শপিংমলে। আগামীকাল কলেজে কালচারাল প্রোগ্রাম আছে। তাই দুই বান্ধবী শাড়ি কেনার জন্য কলেজ থেকে বাড়িতে না ফিরে গিয়ে সোজা শপিংমলে চলে গেলাম।

কয়েকটি শপ ঘুরেও যখন পছন্দসই শাড়ি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হুট করে একটি শপের দিকে আমার নজর পরে যায় । কালো এবং এ্যাশ কালারের সংমিশ্রণের জামদানী। আমি অতি উৎসাহিত হয়ে নিঝুমের হাত ধরে এগিয়ে গেলাম সেই শপের দিকে। শপে ঢুকে উনাদের স্টাফদের বলতে উনারা শাড়ির ভাজ খুলে দেখায়। বেশ চমৎকার লাগছিল। তাই দুই হাজার টাকা দিয়ে শাড়িটা কিনে ফেললাম। যেহেতু নিঝুম অন্য শপ থেকে শাড়ি কিনে ফেলেছে। তাই আর অপেক্ষা না করে রওনা হলাম বাড়ির পথে।

নিঝুমকে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে।রিকশাওয়ালা মামা এগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের বাড়ির পথে। এমনসময় আমার মোবাইল কল আসে। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করি দেখি খালার নাম্বার। আমি খুশি মনে কল রিসিভ করো বলি,

—আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো,খালা? জানো, আমি তোমাকে অনেক অনেক মিস করছি।

—আমিও তোমাকে অনেক মিস করছি, মন।

চিরচেনা সেই কন্ঠস্বর শুনে মিলির গায়ে কাটা দিয়ে যায়। খালার মোবাইল উনার কাছে কেন?খালার কোনো ক্ষতি করে ফেলেনি তো?

— খা..লা কোথায়? আর আপনি কেন কথা বলছেন?

— তোমার খালা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি যদি তোমার সাথে কথা না বলি তাহলে কে কথা বলবে?

— মোবাইলটা খালার কাছে দিন। আমি কথা বলব খালার সাথে।

—যেমন তোমার ইচ্ছা। নিন কথা বলুন।

মোবাইলটা জেসমিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো শোয়েব। জেসমিন শোয়েবের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে জিজ্ঞেস করে।

— কেমন আছিস, মিলি?

—আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ওই সাইকোটা কিছু করেনি তো তোমাকে? যদি কিছু করে সোজা হাজতে ভরে দিবে। তখন, এমনিতেই এসব পাগলামি বের হয়ে যাবে।

জেসমিন ঢোক গিলে শোয়েবের দিকে তাকিয়ে আছে। স্পিকার অন থাকার কারণে মিলির বলা প্রত্যেকটি কথা শোয়েব শুনছে।

মিলির খালার হাত থেকে মোবাইলটা ছোঁ মেরে নিয়ে যায় শোয়েব। চার কদম এগিয়ে ছাঁদের কার্নিশের কাছে দাঁড়িয়ে শোয়েব মিলিকে বলছে,

—মন, রাখছি তাহলে। খুব শীঘ্রই তোমার আমার দেখা হবে। নিশ্চয়ই সেদিনটা হবে তোমার জন্য স্মরণীয়।

— আপনি আমার চোখের সামনে এলে আমি সুইসাইড করব।

—করবে সমস্যা নেই। আমাকে বললে আমি হ্যাল্প করব তোমার। তবুও, আমার তোমার সামনে যেতে হবে। কারণ, আজ দুদিন, তিনঘন্টা, একান্না মিনিট, দশ সেকেন্ড তোমাকে না দেখে কাটছে আমার।

—আপনি কি জানেন, আপনি একটা সাইকো?

শোয়েব মুচকি হেসে চিৎকার করে মিলিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— You are my love. You are my night. And you are the reason of my madness. That’s why you called me psycho! Yes, I am your psycho lover.

মিলি অতিষ্ট হয়ে কল কেটে দিয়ে মোবাইল সুইচ অফ করে দেয়।

—মিলিকে যদি ভালোবেসে থাকো তবে অন্যভাবে তোমার ভালোবাসা বুঝাও। এভাবে ভালেবাসা জাহির করলে মিলি কখনোই তোমার হতে চাইবে না, শোয়েব।

জেসমিনের কথা শোনার পর শোয়েব চোখ বন্ধ রেখে বলে,

— মিলি যেহেতু আমার এমন রূপ দেখে দূরে সরে যেতে চাইছে। তবে, ওকে আমার এই রূপ দেখেই কাছে আসতে হবে। কারণ, মিলি আমার আশেপাশে থাকলে এমন হাজার পাগলামি আমার দ্বারা ঘটতে পারে।

—কিন্তু, মিলি কখনোই রাজি হবে না। আর দুলাভাই কখনো তার মেয়ের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার সঙ্গে মিলির বিয়ে দেবে না।

— সময় কথা বলবে। আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। কারণ, না চাইতেও আপনি আমার কত বড়ো উপকার করেছেন। আপনি ভাবতেও পারবেন না।

— বুঝলাম না তোমার কথা।

—কুমিল্লায় কোন এলাকায় মিলি থাকে এতদিন জিজ্ঞাসা করার পরও আপনি বলেননি। কিন্তু, একটু আগে আপনার মোবাইল দিয়ে মিলির সাথে কথা বলার সময় ওর লোকেশন ট্র্যাক করা হয়েছে।

— কাজটা কি ঠিক হয়েছে, শোয়েব?

রাগান্বিত সুরে কথাটি বললো জেসমিন। কিন্তু, শোয়েব সেই কথার উত্তর না দিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে নীচে চলে যায়।

— এখন আমি কি জবাব দিব মিলির কাছে?মিলি ভাববে আমি শোয়েবকে ওদের বাড়ির ঠিকানা দিয়েছি। চিন্তিত সুরে কথাটি বলে জেসমিন।

রিকশা মিলিদের বাড়ির কাছে এসে থেমে যায়। মিলি চুপচাপ রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেইট দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।

বাবা-ভাইদের সাথে বসে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে যায় মিলি। কিন্তু, বিছানায় শোবার পরও যখন মিলির চোখে ঘুম নেই। তখন মিলি অজস্র গালি দিতে থাকে শোয়েবকে। কারণ, সন্ধ্যায় শোয়েবের সাথে কথা বলার পর থেকে দুশ্চিন্তায় মিলির অবস্থা টাইট।

কিন্তু, না ঘুমালেও হবে না। কারণ, আগামীকাল কলেজে অনুষ্ঠান আছে। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে মিলি।

সকাল সাতটা বাজে।

মিলি তখনো ঘুমিয়ে আছে। মোবাইল সুইচ অফ থাকার কারণে নিঝুম মিলির সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। নিঝুম একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে কলেজের ফ্যাংশনের জন্য কেনা শাড়ি এবং ম্যাচিং জুয়েলারী সহ যাবতীয় সবকিছু নিয়ে মিলিদের বাড়ির উদ্দেশ্য বের হয়।

নিঝুমকে এত সকালে নিজের বাড়িতে দেখে অবাক হয় রাসেল। এই ব্যাপারে নিঝুমকে প্রশ্ন করলে নিঝুম সবকিছু জানায়। সবটা জানার পর রাসেল দরজার কাছ থেকে সরে ওর ঘরে চলে যায়। আর নিঝুম মিলির ঘরের দিকে চলে যায়।

মিলির ঘরের দরজায় কয়েকবার কড়া নাড়তেই মিলি ঘুমের ঘোড়ে নড়েচড়ে উঠে। তারপর, ঘুম ঘুম চোখে শোয়া থেকে উঠে দরজা খুলে নিঝুমকে দেখে মিলি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো,

—কি রে তুই আমাদের বাড়িতে তাও আবার এত সকালে?

—তুই যে মোবাইল সুইচ অফ করে মরার মতো ঘুমিয়ে আছিস সেটা কে বলবে? আজ যে কি সেটাও হয়তো তোর মনে নেই।

নিঝুমের কথায় মিলির কলেজের ফাংশনের কথা মনে পরে। নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—সরি দোস্ত গভীর ঘুমের কারণে ভুলে গিয়েছিলাম। তুই বস আমি পাঁচমিনিটের মধ্যে গোসল করে আসছি।

মিলি নিঝুমকে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিঝুম ঘরে ঢুকে শপিংব্যাগ গুলো খাটের উপর রেখে সব কিছু বের করতে লাগলো।

মিলি গোসল করে এলে নিঝুম খুব যত্ন এবং সুন্দর ভাবে শাড়ি পরিয়ে দেয়। তারপর, কানে কালো স্টোনের ঝুমকো। চোখে কাজল, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক। দু-হাত ভর্তি চুড়ি। কোমড় অব্দি লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। ব্যস, মিলির সাজ কমপ্লিট।

নিঝুম আরও একবার খুব ভালো করে মিলিকে দেখে বললো,

—দোস্ত, তুই কেন আমার ভাইয়ের বৌ হলি না? তাহলে তোকে আমি সারাক্ষণ তোকে পুতুল মতো করে সাজিয়ে রাখতাম।

—এই জন্যই তোর ভাই নেই। আমার কিন্তু তিনভাই আছে। তোকেও আমার অনেক ভালো লাগে ভাবি হিসেবে।

—কি যে বলিস, মিলু?
লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে মুখ ঘুরিয়ে নেয় নিঝুম।

মিলি হাসতে হাসতে মজার সুরে বলছে,

— তুই যে আমার রাসেল ভাইকে পছন্দ করিস আমি বুঝতে পেরেছি। তুই খালি মুখে একবার বল তোদের বিয়ে থেকে শুরু করে বাসরঘরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার।

—দেখ মিলি ভালো হচ্ছে না কিন্তু। মাইর খাবি এখন আমার হাতে।

—রাগ করিস ক্যান দোস্ত? চল বের হয়ে পড়ি নয়তো লেইট হয়ে যাবে। এমনিতেই সাড়ে নয়টা বাজে।

—হুম হুম চল।

দুই বান্ধবী মিলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ড্রইংরুমে আসতেই রাসেলের সামনে পরে মিলি এবং নিঝুম।

রাসেলের চোখ তখন নিঝুমের দিকে। হলুদ রঙের জামদানী পরনে নিঝুমকে আজ হলুদিয়া পাখির মতো দেখাচ্ছে। নিঝুম এত সুন্দর করে সেজেগুজে কলেজে যাবে। এই কথাটি ভাবতে গিয়ে বিতৃষ্ণায় পুরো মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায় রাসেলের। কিন্তু, মিলি আর নিঝুমকে বুঝতে না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় রাসেল।

মিলি ওর বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিঝুমকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয় কলেজের ফাংশনে। কলেজে যাবার পর দেখা মিললো অনন্য এক দৃশ্য। কারণ,আজ ম্যাডাম এবং স্যারদের ড্রেসের সঙ্গে সকল স্টুডেন্টদের ড্রেসের কালার সেইম।

একে একে সকল বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা এবং কথা হয় মিলির।

অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিভিন্ন রকমের আয়োজন। কেউ গান গেয়েছে। তো কেউ নাচ। কেউ আবার আবৃতি। মিলি কোনো কিছুতেই অলংগ্রহন করেনি।

যথারীতি সন্ধ্যার সময় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটলে মিলি আর নিঝুম একসাথে বের হয় কলেজ থেকে। এমন সময় কলেজেরই সিনিয়র একটি ছেলে এসে মিলির হাত ধরে বলে,

— আমি তোমাকে ভালো…

কথাটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি। তার আগে কেউ এসে ছেলেটির গালে ঘুষি মেরে বসে। মিলি আর নিঝুম আতংকিত হয়ে তাকায়।

সেই ব্যক্তির দিকে তাকানোর পর মিলি ভুত দেখার মতো চমকে উঠে কারণ সে আর কেউ নয় শোয়েব।

#চলবে