এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-৪+৫

0
1093

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৪.
#WriterঃMousumi_Akter

তোমায় বহু বার ছুঁতে গিয়ে ছোঁয়া হয়নি,
তোমায় বহু বার বলতে গিয়ে বলা হয়নি,
তোমায় বহু বার ডাকতে চেয়েছি ;
কেনো যেনো ডাকা হয়নি।
আমি তো প্রায় স্বপ্নে তোমার সাথে বহু দূর হারায়!
সেটা কখনো তোমায় বলা হয়নি।
আমি তোমাকে আমার প্রিয় ভাবি সেটাও তুমি কখনো জানোনি,
আচ্ছা তুমি তো আমার আশেপাশে থাকো,
তাহলে আমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা এ অনুভূতি গুলো বুঝো না কেন?
তুমি বুঝো কেন আমার আমি শুধু তোমাকে চাই,
একান্ত করেই আমার আমি শুধু তোমাকে চাই।
দিন শেষ আমিও বলতে চাই সেও আমায় বুঝেছে-
তাই সে আমার হয়েছে।

সে
আসাদ ~

চিঠিটা পড়ে অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে উনি বললেন,

“এটা কি ছিলো পিচ্চি?হোয়াট ইজ দিস পিচ্চি।এই বয়সে প্রেম করছিস।তোর বয়স কত দিয়া?এখনো হামাগুড়ির বয়স ই তো শেষ হয় নি তোর।আর এই বয়সে তুই কিনা প্রেম করছিস।ফুপ্পি কে বলতেই হচ্ছে ব্যাপার টা।হাউ স্ট্রেইঞ্জ।”

“কি বলবেন আপনি বিহান ভাই?এ চিঠি কে দিয়েছে আমি জানিনা?আমি তো মাত্র ই এখানে পেয়েছি চিঠিটা।ভয়ে বুক কাঁপছে আমার।বিহান ভাই এর পক্ষে সব ই সম্ভব। আমাকে জব্দ করতে উনি সব ই পারেন।”

“উনি কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছেন,ভয়ানক মুডে বললেন,আমার কাছে মিথ্যা বলে কোনো লাভ নেই দিয়া।ফুপ্পি কে না বললেই নয়।”

“দেখুন আপনার হাতে পায়ে ধরছি বিহান ভাই তবুও আম্মুকে বলবেন না প্লিজ।আম্মু আমাকে মেরেই ফেলবে।”

“আমার পাঞ্জাবী তে মেহেদী লাগানোর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে দিয়া।”

–উনি ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।আমিও উনার পিছ পিছ গেলাম।উনি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আড়ালে চিঠিটা আম্মুর হাতে তুলে দিয়ে বললেন,ফুপ্পি মান সম্মান বাঁচাতে চাইলে তোমার মেয়েকে আজ ই বিয়ে দিয়ে দাও।এই দেখো তোমার প্রেম করছে।কি সাংঘাতিক ব্যাপার ফুপ্পি ভেবে দেখেছো দিয়ার কি এখন প্রেম করার বয়স।কোন বাজে ছেলের পাল্লায় পড়বে তার ঠিক নেই।আজ কাল রিলেশন করলে দুই দিন পরে পরে ইন্টারনেটে ভিডিও বের হয়।ছেলেরা মেয়েদের ভুলিয়ে ভালিয়ে অনেক বাজে কাজ করে।তোমার মেয়ে যে বলদ ওর সাথে কি কি হবে তার ঠিক নেই।তোমার মেয়ে ভেবে দেখো কি করা উচিত।

আম্মু আমার দিকে প্রচন্ড রাগী চোখে একবার তাকালো।আমার বুঝতে বাকি রইলো না আমার কপালে কি আছে আজ।অন্যদের আম্মু আর আমার আম্মু পর্থক্য আকাশ পাতাল সমান।
এক গ্রাম মানুষের সামনে আম্মু আমার দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে দিলো স্ব জোরে।আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম আম্মু না হয় আমাকে আড়ালে নিয়ে মারতো,এইভাবে মানুষজনের সামনেই মারবে ভাবতে পারিনি।লজ্জা আর অপমানে আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।চারদিকে মানুষ কানাকানি করছে কি না কি ঘটিয়েছি আমি।সবার দৃষ্টি এই মুহুর্তে আমার দিকেই আছে।আত্মীয়রা সবাই জিজ্ঞেস করছে ভাবি দিয়াকে মারলেন কেনো?কি করেছে দিয়া।সব কিছু তো ঠিক ঠাক ই ছিলো হঠাত মেয়েকে মারলেন কেনো?এত বড় অপমান আমার বয়সে কোনদিন হয় নি আমি।আমার কয়েক জন বান্ধবী ও এসছে বিয়েতে।তাদের সামনে মায়ের হাতের চড় খাওয়ার থেকে মরে যাওয়া অনেক বেশী ভালো।বান্ধবীরা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

এই মুহূর্ত থেকে ওই মানুষ টাকে আমি সব থেকে বেশী ঘৃনা করি।যতদিন বেঁচে থাকবো এই অপমান আমি ভুলবো না।একটা মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম ই না।সামান্য পাঞ্জাবীর জন্য এত বড় সিনক্রিয়েট না করলেই তো পারতেন উনি।

সব মানুষ জড় হয়ে গেলো ধীরে ধীরে চারদিকে।আমাকে মারার কারণ হিসাবে যার যেটা মন চাইছে সে সেটা বলছে।আম্মু রাগে ফুঁশছে।দুঃখে কষ্টে আমি কাঁন্না আটকাতে পারছি না।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আমার।

বাবা,ভাইয়া,মামি, কাকি সবাই এগিয়ে এলো।বাবা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,তুমি কি পাগল এত বড় মেয়ের গায়ে হাত দেয় কেউ।

আম্মু ফুঁশে উঠে বললেন,তুমি একদম ই কথা বলবে না, তোমাদের প্রশ্রয় পেয়ে মেয়েটার এই হাল হয়েছে এখন।তোমার মেয়ে আস্ত একটা বেয়াদব এ পরিণত হয়েছে।আম্মু রাগ দেখিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।আমিও নিজের ঘরে চলে গেলাম।বিছানায় উপুড় হয়ে সুয়ে কাঁদছি।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গিয়েছে আমার।

পাশের রুমে আম্মু বাবা কে বলছে তোমার মেয়ে কার সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্লান করছে।তোমার মেয়ে প্রেম করা শিখেছে।ছিঃছি আমি ভাবতেই পারছি না।ভাইয়া আর ভাবি বলেছিলো বিহানের ডাক্তারি শেষ হলে দিয়ার সাথে বিয়ে দিবে।আমরাও তো কথা দিয়েছিলাম তাইনা?কিন্তু এখন কি ভাবি কে বলতে পারবো সেই বিয়ের কথা।তাছাড়া বিহান কি আর দিয়াকে বিয়ে করতে রাজি হবে।বিহান তো আর জানেনা বিহান মেডিকেল এ পড়ার সময় ওর আর দিয়ার বিয়ের কথা হয়েছিলো।বিহান এখন জানে দিয়া প্রেম করে বেড়াচ্ছে দিয়াকে নিয়ে ওর মনে এখন কোনো ভাল চিন্তা ভাবনা নেই।বিহান এখন দিয়াকে বিয়ে ও করবে না।তুমি আজকের মাঝেই ছেলে দেখবা।কাল রুশার বিয়ে মিটে গেলেই তোমার মেয়ের বিয়ে দিবো।আমি জানিনা ছেলে কোথায় পাবা।

পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে আমার।এই বিয়ে বাড়ি নিয়ে কত শত স্বপ্ন ছিলো।আজ আমার জীবন টা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমার।বিয়েতে আনন্দ করবো বলে একমাস ধরে প্লান করেছি,শপিং করেছি আজ সেই বিয়ে কিনা আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।রুশা আপুর বিয়ে বাদ দিয়ে সবাই আমার বিয়ে নিয়ে প্লান করছে।আম্মু যখন জিদ ধরেছে তখন আমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।এই বয়সে বিয়ের কথা আমি ভাবতেই পারছি না।

আম্মুর কাছে মনে হচ্ছে আমি এমন কোনো অন্যায় করে ফেলেছি যে আম্মু আর কোথাও মুখ দেখাতে পারবে না।আম্মু দুঃচিন্তায় কেঁদেই চলেছে, বাবা ও খাটের এক কোণে মুখ ভার করে বসে আছে।বাইরের কাউকেই তারা বুঝতে দিচ্ছে না তাদের ভেতরে কি চলছে।বড় মামা, বড় মামি,ছোট মামা, ছোট মামা রুমে প্রবেশ করলো।মামা,রা আম্মুর কাঁন্না দেখে আম্মুকে একটু ধমক ও দিলো।বড় মামা বলছেন তুমি কি পাগল সানজিদা এত চিন্তার কি আছে।বাচ্চা মানুষ এই বয়সে একটু আধটু ভুল করবেই তাই বলে এইভাবে ভেঙে পড়লে হবে।আম্মু বললো,তোমরা কি বুঝতে পারছো না কারো সাথে পালিয়ে গেলে কি হবে, বাজে কারো পাল্লায় পড়লে ওর জীবন ই শেষ হয়ে যাবে।আমি কিছু শুনতে চাই না যেভাবেই পারো একটা ছেলে দেখে দিয়ার বিয়ে দিয়ে দাও তোমরা।বড় মামি বললেন,ছেলে কি বললেই পাওয়া যায়,তাছাড়া যার তার হাতে তো আর দিয়াকে তুলে দেওয়া যায় না তাইনা?ছেলে খুজতে তো সময় লাগবে?

–ছোট মামি বললেন,নতুন করে ছেলে খুজতে হবে কেনো?বলায় তো ছিলো বিহানের সাথে দিয়ার বিয়ে হবে।

–ছোট মামা বললেন আমাদের তো সে ইচ্ছায় ছিলো কিন্তু বিহানের তো লেখাপড়া ই শেষ হয় নি।এই মুহুর্তে বিয়ের কথা বললে কেমন রিয়্যাক্ট করবে সেটাই ভাবছি।বিহান এর কাছে কথাটা পাড়বে কে?

–বড় মামা বললেন,সানজিদা দিয়া কে আমরা বুঝিয়ে বলবো।বুঝালে দিয়া নিশ্চয়ই বুঝবে।বিহানের ডাক্তারি টা শেষ হলে তখন বললে বিহান না করতে পারবে না।কিন্তু এখন বিহান বিয়ে করবে বলে মনে হয় না

–বড় মামি বললেন,বিহান তো বিয়ের নাম ই শুনতে পারে না।মেয়েদের সাথে কথায় বলে না।ও আবার বিয়ে করবে এটা ভাবাই যায় না।

–ছোট মামি বললেন,ছেলের জেদ অনেক দেখেছি আর না।বিয়ে বিহান কে করতেই হবে।সব ঝামেলা সে সৃষ্টি করেছে তাই এর সমাধান তাকেই করতে হবে।বলেই মামি বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৫.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

–উঠানের এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে কিছু একটা ভাবছেন বিহান ভাই।গভীর চিন্তাধারা উনার চোখে মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

–মামি ছেলের হাত ধরে টেনে নিয়ে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন,সব সময় কি একটু অতিরিক্ত করোনা তুমি বিহান।খুব প্রয়োজন ছিলো কি তোমার ফুফুর কাছে গিয়ে দিয়ার নামে উল্টা-পাল্টা বলার।কি সমস্যা কি তোমার।দিয়া ওইটুকু একটা মেয়ে।কি ক্ষতি করেছে তোমার।বাচ্চা মেয়ে তাকে কষ্ট পেতে দেখে, শাস্তি দিয়ে কি শান্তি পাও তুমি।আজ তোমাকে বলতেই হবে দিয়াকে নিয়ে সমস্যা টা কি তোমার।দিয়া কি তোমার বাবার সম্পত্তির ভাগ নিবে যে স্বি রাগে তুমি তাকে সহ্য করতে পারো না।না এতদিন অনেক দেখেছি দিয়াকে রাগানো টা আমরা সবাই মজা হিসাবেই নিয়েছি কিন্তু এখন তুমি বাড়াবাড়ির চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে ব্যাপার টা।

–আম্মু দিয়ার মতো তুমিও আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ।তুমি অন্তত আমাকে বুঝার চেষ্টা করো আম্মু।প্লিজ আম্মু ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।

–কি বুঝবো বিহান।বোঝার আর কি বাকি রেঝেছো তুমি।নতুন করে আবার কি বুঝাতে চাইছো তুমি।সব সময় তুমি যেটা বলবে সেটাই ঠিক,তুমি যেটা বুঝাবে সেটাই ঠিক,সামান্য পাঞ্জাবী তে দাগ লাগানোর জন্য দিয়াকে তুমি নিজে মারতে না পেরে এক ঘর মানুষের সামনে ফুফুকে লেলিয়ে দিয়ে মার খাওয়ালে।এত রাগ কেনো তোমার বলতে পারো।একটা ছেলে বলে তোমাকে কখনোই কিছু বলি না আমরা কিন্তু তুমি আজ বাড়াবাড়ির সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো বিহান।

–আম্মু প্লিজ মাথা ঠান্ডা করো তুমি।আমার কি কম খারাপ লাগছে।বিশ্বাস করো আম্মু আমি বুঝতে পারিন যে ব্যাপার টা এতদূর গড়াবে।আমি ভেবেছিলাম ফুপ্পি দিয়াকে ঘরে নিয়ে দরজা আটকে শাষন করবে কিন্তু ফুপ্পি যে উত্তেজিত হয়ে সবার সামনে দিয়ার গায়ে হাত তুলবে আমি বুঝতেই পারি নি।

–আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি বিহান।মানে তোমার উদ্দেশ্য ছিলো তোমার ফুফু দিয়ার গায়ে হাত তুলুক।তুমি জানোনা তোমার ফুফু মেয়েকে নিয়ে কত চিন্তা করে।যা নিয়ে চিন্তা করে সেই দূর্বল জায়গা তুমি আঘাত করেছো।দিয়ার কাজিন কে নিয়ে কয়েক দিন আগেই ইন্টারনেটে অনেক বাজে কিছু ছড়িয়েছে।বাজে ছবি ছড়িয়েছে সেখান থেকে তোমার ফুফু মেয়ের চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারে না।একটা মেয়ের মান সম্মান যখন সামাজিক যোগাযোগ এ ছড়িয়ে পড়ে সেই বাবার অবস্থা কি হয় তুমি নিশ্চয়ই জানো।তোমার ফুফু মেয়েকে নিয়ে ইদানিং খুব চিন্তা করে।তাছাড়া কিছুদিন আগে তুমি বলেছো সাইমন এর সাথে দিয়ার রিলেশন। তোমার কি গুন একটা বিহান,গুনের তো শেষ নেই।দিয়া আমাকে সব বলেছে।তোমার ফুফুর মাথায় রক্ত উঠে গেছিলো।চিন্তায় পাগল হওয়ার মতো অবস্থা তার।বাড়ি ভর্তি মানুষ তার খেয়াল ই নেই।মেয়েকে মানুষের মাঝে মেরে তার খারাপ ও লাগছে কষ্ট ও হচ্ছে।

–আহা আম্মু!দিয়া এই টুকু পিচ্চি।ওর কি এমন মান সম্মান হয়েছে। মা মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছে তাতে কি এমন হয়েছে।

–দিয়াকে এখনো পিচ্চি লাগে তোমার।

–পুচকি কে পুচকি ছাড়া কি লাগবে।

–তোমার ফুফু সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিয়ার বিয়ে দিয়ে দিবে।সেটা আজ কালের মধ্যই।

–আম্মু এত ভেবো না ফুফু কে আমি বুঝিয়ে বলবো। এত সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছো কেনো ব্যাপার টা আম্মু।

–আমরা এই মুহুর্তে সব কিছুই সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছি।আমরা দিয়া আর তোমার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

–বিহান ভাই কথাটা শুনেই যেনো আকাশ ভেঙে পড়লাও।খানিক টা কপাল কুচকে তাকালেন নিজের মায়ের দিকে।

–কার বিয়ে আম্মু আমার।

–এভাবে আকাশ থেকে পড়ার কিছু নেই তুমি ঠিক ই শুনেছো তোমার বিয়ে।ক্লিয়ার ভাবে শুনে রাখো তোমার সাথে দিয়ার বিয়ে।

–ইম্পসিবল আম্মু আমি এই মুহুর্তে কোন কিছুর বিনিময়েও বিয়ে করতে পারবো না।আমার ক্যারিয়ার এর বারো টা বাজাতে চাও তুমি?

–ক্যারিয়ারের কিছুই হবে না।তোমার মতো অনেকেই আছে বিয়ে করে সংসার ও করছে ক্যারিয়ার ও গড়ছে।তাছাড়া তুমি এখন ফাইনাল ইয়ারে।বিয়ের বয়স হয়েছে তোমার।

–আমার না হয় বিয়ের বয়স হয়েছে কিন্তু দিয়ার?দিয়া তো আমার হাঁটুর বয়সী আম্মু।দিয়ার কি বিয়ের বয়স হয়েছে। দিয়া এখনো চকলেটের আবদার করে। মাত্র সতেরো তে পা রেখেছে।সেই মেয়ে বিয়ের কি বুঝে আম্মু।

–আমার বিয়ে এর থেকেও কম বয়সে হয়েছিলো বিহান।

–তখন আর এখন কি সময় টা এক হলো।আমি বাল্যবিবাহ করতে পারবো না।সো সরি আম্মু।

–দেখো বিহান তোমার সাথে দিয়ার বিয়ে আরো অনেক আগেই ঠিক ছিলো।আমাদের দুই পরিবারের ইচ্ছা তোমাদের বিয়ে দেওয়ার।তুমি যদি এখন এই বিয়ে না করো তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।আর তুমি ফুফু যদি এটা শোনেন যে তুমি তার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি নও তাহলে তার কেমন লাগবে ভেবেছো।তোমার ফুফুকে কষ্ট দিতে চাইলে যাও গিয়ে তোমার ফুফুকে বলে এসো তুমি বিয়ে করবে না।

–এইভাবে ইমোশনাল ব্লাক মেইল কি না করলেই নয় আম্মু।যা ভাল মনে করো তোমরা করো।বাট বিয়ে করছি মানে এই না তোমার ছেলে চেঞ্জ হয়ে যাবে।দিয়ার সাথে আজন্মকাল আমার এই যুদ্ধ চলবে।

–একটুও বাড়াবাড়ি করবে না তুমি।আগে বিয়ে টা তো করো।

–আম্মুদের রুমে মিটিং চলছে আমার আর বিহান ভাই এর বিয়ে নিয়ে।আমার বিয়ের বয়স হয় নি সেজন্য এখন শুধু কলেমা পড়ানো হবে।আমার আঠারো বছর বয়স হলে কাবিন হবে।সবাই যে যার মতো আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললো।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।কেউ আমার কাছে শোনার ও প্রয়োজন মনে করলো না।ভাবতেই কেমন লাগছে ওই বিরক্তিকর মানুষ টার সাথে আমার বিয়ে হবে।যে আমাকে সহ্য ই করতে পারে না।আমার পুরো জীবন টা ধ্বংস করতে কি উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলো আমার পরিবার।

–আম্মু আর বাবা ভাইয়ার সাথে কথা বলে আমাএ রুমে এলো তিনজন।বাবা আমাকে বললো,মা দিয়া আগামি সপ্তাহে বিহানের সাথে তোমার বিয়ে।ভয় পেও না তোমার লেখাপড়া বন্ধ হবে না।আমাদের কাছেই থাকবে তুমি।বাবা রুম থেকে এটুকু বলেই বেরিয়ে গেলেন।আম্মু বললো,দিয়া বিহান আমাদের চেনা জানা। ছেলে হিসাবে ওর মতো ছেলে পাওয়া যায় না আজকাল।

অশ্রুভেজা চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,সারাজীবন তো নিজের সন্তানের থেকে অন্যর গুরুত্ব বেশী দিলে আম্মু।আমার থেকে বিহান ভাই তোমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বিহান ভাই যেটা বলবে ওইটাই রাইট আর আমি ভুল।উনার কথায় মানুষ ভর্তি সবার মাঝে আমার গায়ে হাত দিতেও দুবার ভাবলে না তুমি?কি ভেবে অমন বদ মেজাজী গম্ভীর একটা মানুষের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলে আম্মু তুমি।নিজের মেয়েকে এমন একটা জেদী ছেলেএ হাতে তুলে দিচ্ছো তুমি।আমি কি বেশী হয়ে গিয়েছি আম্মু তোমার কাছে।

আম্মুর চোখের পানি মুছে বললো,দিয়া আমার মাথা ঠিক ছিলো না।তুমি নেহাত ই বাচ্চা মেয়ে এখনো।তোমার অতিরিক্ত ভাল ভাবতে গিয়ে তোমার গায়ে হাত তুলে ফেলেছি আমি।মা হিসাবে আমার কত খারাপ লাগছে আমি বোঝাতে পারবো না।আজ যদি বলো আমি তোমার থেকে বিহানের গুরুত্ব বেশী দিচ্ছি তাহলে দিচ্ছি।মা হিসাবে আমি স্পষ্ট দেখতে পারি বা বুঝতে পারি কে আমার মেয়ের ভাল চায়,বা ভাল রাখবে।তোমার বাবা বা আমি কেউ তোমার খারাপ চায় না দিয়া।বিহানের গুরুত্ব আমি দিচ্ছি কেননা আমার মেয়ের ভালো যে চায় তার গুরুত্ব আমার কাছে সবার আগে।একদিন তুমি বুঝবে দিয়া আমরা তোমার জীবনের সব থেকে উত্তম জিনিস টা দিয়েছি।

আম্মু বেরিয়ে গেলে, ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,দিয়া একটা ছেলে হয়ে আমরা অনেক কিছুই করি, অনেক খারাপ কাজ ও করি এদিক সেদিক ঘুরি।কিন্তু ট্রাস্ট মি দিয়া বিহান রাগী হলেও ওর মন টা অনেক সুন্দর। ভাই হয়ে কি আর বোনের খারাপ চাইবো।বিহানের মতো ছেলে এই যুগে পাওয়া যায় না দিয়া।আজ না হোক কাল ঠিক ই বুঝবি।মনে মনে আমি সব সময় চেয়েছি বিহানের সাথেই যেনো তোর বিয়েটা হয়।

রুশা আপুর বিয়েটা মিটে গেলো,সেখানে সবাই আনন্দ করলেও আমি পড়ে ছিলাম ঘরের এক কোণে।ইতিমধ্য কাজিন রা সবাই অনেক খুশি আমার আর বিহান ভাই এর বিয়ের কথা শুনে।সবার কাছে যেনো ব্যাপার টা মিরাক্কেল এর মতো লাগছে।আগামি পরশু সেদিন শুক্রবার বিহান ভাই এর সাথে আমার কালেমা হবে।

চলবে,,