এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-৬+৭

0
1031

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৬.
#WriterঃMousumi_Akter

ঘড়িতে রাত বাজে ঠিক ঠিক ৩ টা।বিছানায় রাত জাগা পাখির মতো সুয়ে এপাস, ওপাস করছি শুধু।ধরণির বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে মানুষ সহ সমস্ত প্রাণ থাকা জীব।আকাশে চলছে সাদা মেঘের খেলা,মনে হচ্ছে আকাশ নেমে এসেছে খানিক টা নিচে পৃথিবীর বেশ খানিক টা কাছাকাছি।ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ তার ক্ষয় হওয়া অর্ধরূপে আলো ছড়াচ্ছে চারদিকে।চাঁদের এই আলোকে পৃথিবীর বুকের টর্চের আলো মনে হয় আমার।রাতজাগা পথিকের পথ চলার সঙ্গী এই চাঁদ।পৃথিবীর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও ঘুম নেই আমার দু’চোখে।শুনেছি মেয়েরা বিয়ের আগে আনন্দে ঘুমোতে পারে না।আমার ক্ষেত্রে ব্যাপার টা সম্পূর্ণ উলটা হলো।আমার ও ঘুম হচ্ছে না তবে সেটা আনন্দে নয় অতি কষ্টে।আসলে মানুষ যখন যা চায় তখন তা পায় না।

অতীতের কিছু স্মৃতি মনে পড়ছে আজ, ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে।যখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন প্রথমবার কিশোরী মনে জেগেছিলো আমার শিহরণ,শরীরে এসেছিলো কারো ছোঁয়াতে অদ্ভুত কম্পণ,যে কম্পণ শরীরের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়েছে অন্যরকম অনুভূতি।

‘সেদিন বাচ্চাদের মতো বিহান ভাই কে বলেছিলাম আপনি আমাকে স্পর্শ করলে কেমন যেনো অদ্ভুত লাগে আমার।’

‘উনি অবাক হয়ে আমাকে বলেছিলেন, এটা কেমন কথা কেমন লাগে দিয়া।উনার চোখে মুখে ছিলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন।?’

‘আমি বাচ্চাদের মতো অসহায় নির্বিকার তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে।’

‘উনি আবার ও বলেছিলেন কি দেখছিস এইভাবে তাকিয়ে।কি হয়েছে তোর।তোর চোখে মুখে এমন অদ্ভুত পরিবর্তন কেনো?’

‘উনার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলেছিলাম জানিনা তো বিহান ভাই।কেনো এমন হয় আমার।?তাই আপনার কাছে শুনতে এসেছি।কেনো আপনি সংস্পর্শে আসলেই আমার এমন হয়।’

‘উনি ভ্রু কুচকে বললেন,কতদিন থেকে এমন হয় তোর দিয়া।সব ছেলে দেখলেই এমন হয় নাকি শুধু আমাকে দেখলেই।’

‘আমি এক কথায় উত্তর দিয়েছিলাম, ইদানিং এমন হচ্ছে বিহান ভাই।আর কোনো ছেলে দেখলেই এমন হয় না।শুধু আপনাকে দেখলেই এমন হয়।’

‘এমন তো হয় কাউকে ভালবাসলে?তুই কি তাহলে আমায় ভালবাসিস দিয়া।’

‘এমন হওয়া কে ভালবাসা বলে বুঝি বিহান ভাই।তাহলে আমি আপনাকে ভালবাসি বিহান ভাই।’

‘উনি চোখ বড় বড় করে বললেন,সিরিয়াসলি?তোর ভয় করছে না দিয়া এতটুকু মেয়ে যে কিনা হামাগুড়ি দেয় এখনো, সে একটা দাঁড়ি- গোফ গজানো ছেলেকে ভালবাসার কথা বলছে।এখন যদি আমি তোকে পানিসমেন্ট দেই তাহলে কি হবে?’

‘আমি চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।’

‘উনি নিজেই ভ্রু নাচিয়ে বললেন, পানিসমেন্ট না চাইলে কান ধরে চোখ অফ করে দশ বার বল, আই লাভ ইউ বিহান ভাই।’

‘সেদিন বাচ্চাদের মতো কান ধরে উনাকে আই লাভ ইউ বলেছিলাম।’

‘উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন ভালবাসা বুঝিস তুই?’

‘আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,হ্যাঁ বুঝি তো,আম্মু,বাবা,ভাইয়া,মামা, মামি সবাইকেই তো ভালবাসি।ভালবাসা বুঝবো না কেনো?’

‘উনি খানিক টা হেসে বললেন,ঠু মাছ পিচ্চি।এক্ষুণি গিয়ে পড়তে বস।না হলে সারাদিন কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো।ষ্টুপিড কোথাকার।’

সেদিন প্রেম ভালবাসার সঙ্গা আমি বুঝতাম না।বয়সের সাথে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বিহান ভাই এর এক্সট্রা কেয়ার ধীরে ধীরে উনার প্রতি আমাকে আসক্ত করতে থাকে।যতটা বয়স বেড়েছে আমি বুঝতে পেরেছি আমার পুরো মনের দখল উনি করে নিয়েছেন।ভয়ে আমি কখনো প্রকাশ করতে পারি নি।বান্ধবীরা রিলেশন করে চারদিকে আমার কেনো যেনো মন চাইতো বিহান ভাই আমাকে ভালবাসুক,অন্য নজরে দেখুক,আমাদের যেনো ম্যাজিকের মতো কখনো বিয়ে হয়।কিন্তু ধীরে ধীরে উনি যেনো কেমন চেঞ্জ হলেন।দিন দিন আমাকে বিরক্ত করা শুরু করলেন।এমন ই বিরক্ত উনি আমায় করেন উনাকে দেখলেই দোয়া দুরুদ পড়ি আমি।আমি দিনে দিনে অতিষ্ট হয়েছি উনার প্রতি।আর আজ দাঁড়িয়ে আছি জীবনের সব থেকে বাস্তব সত্যর মুখোমুখি। যে মানুষ কে বিয়ের জন্য পাগল ছিলাম মনে মনে, সেই মানুষ টার সাথে আমার বিয়ে অথচ আজ আমি সেই বিয়ে মেনে নিতে পারছি না।যখন উনাকে চেয়েছি পায় নি অথচ আজ চাইছি না জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।ওই বিরক্ত করা মানুষ টার একটা গুন আছে আমার সব সমস্যা গুলো কখনো মুখে বলা লাগে নি।ঘুরিয়ে পেচিয়ে কোন না কোন ভাবে দূরে থেকে হলেও সাহায্য আর সাপোর্ট দুটোই করেছেন উনি।খুব অবাক লাগছে আজ আমার একটা বিষয় ভেবে যে মানুষ আমার বিয়ের কথা শুনতে পারে না সে আম্মুকে বলেছে আমার বিয়ে করিয়ে দিতে।কি আশ্চর্য তাইনা? ব্যাপার টা।উনি খারাপ ব্যাবহার করলেও জীবনের সব থেকে খারাপ সময়ে উনাকেই পাশে পেয়েছি।আচ্ছা উনার করা ব্যবহার কি সত্যি খারাপ নাকি শুধু মাত্র আমাকে রাগাতেই এমন করেন।তার থেকেও অবাক লাগে আমার এটা ভেবে কতশত মেয়ে উনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী উনি সবাইকে ইগনোর করে ঘুরে ঘুরে আমার সাথেই রাগানো কথা বলেন।উনি কি এতটায় ঘৃণা করেণ আমায়?রাত জেগে হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়।উনি আমাকে ঘৃণা করুক আর যায় করুক আই ডোন্ট কেয়ার আমি উনাকে বিয়ে করবো না এটাই ফাইনাল।

ঘুম আসছে না বলে নেটেই ঘোরাঘুরি করছি আমি।অন লাইনে কেউ নেই সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে।চ্যাট লিস্টে এক্টিভ শুধু মাত্র একজন মানুষ সেটা হলো বিহান ভাই।সবুজ বাতি জল জল করছে চোখের সামনে।উনার প্রফাইলে দীর্ঘ পাঁচ বছরে একটা গুগল থেকে ডাউনলোড করা হার্টের পিকচার।গত পাঁচ বছরে চেঞ্জ করেন নি এই প্রফাইল।আইডি তে নিজের কোনো ছবি ও নেই।কভারে একটা থার্মোমিটার এর পিকচার।কার্ডিওলজি নিয়ে লেখাপড়া করেণ উনি।রাত জেগে লেখাপড়া করেন উনি ঘুম যা দিনেই ঘুমোন।ফ্রেন্ড লিস্টে হাতে গোনা কয়েকজন আছে উনার।কোনো পাব্লিক গ্রুপে এড হন না,কোনো পেজে ফলো দেন না,কেউ ইনভাইট দিলেই ব্লক করেন।ফেসবুকে অন্য কোনো একটা আইডি দিয়ে যেনো নিউজ দেখেন।উনাকে হোয়াটস এপ এ ছাড়া পাওয়া যায় না।পরীক্ষার সময় তো কারো সাথে কথায় বলেন না।তার উপর ফ্রিল্যান্সার উনি।

উনাকে এক্টিভ দেখে নক দিবো ভেবে ভেবে কিভাবে দিবো ভেবে পাচ্ছি না।

অতঃপর উনাকে মেসেজ দিলাম,আছেন?
উনি সিন করলেন না।মেসেজ টা আনসেন্ড করে আবার মেসেজ দিলাম,আপনার সাথে কথা আছে দ্রুত রিপ্লাই দিন।
তবুও সিন করলেন না।আবার আনসেন্ড করে দিলাম।ইগো তে লাগছে আমার।আবার মেসেজ দিলাম,গফ নিয়ে বিজি আছেন নাকি?
তবুও সিন করলেন না।আবার আনসেন্ড করে দিলাম।এবার মেসেঞ্জারে কল দিয়ে দেখলাম এনাদার কল।এত রাতে নিশ্চয়ই উনি গফ নিয়ে বিজি আছেন।সব মেসেজ আনসেন্ড করে দিলাম।আমার মেসেজের উত্তর নেই অথচ গফ নিয়ে বিজি।আমি কি এতই সস্তা হয়েছি।

–এতক্ষণে উনার আইডি থেকে মেসেজ এসছে তবুও লাল লাল টমেটো মানে এংরি রিয়্যাক্ট। এংরি রিয়্যাক্ট এর পর মেসেজ দিয়েছেন এত রাতে কল দিচ্ছিস কেনো?মেসেজ দিয়ে আনসেন্ড করে লাভ কি? আমি যদি সব দেখতেই পেয়ে যায় তাহলে আনসেন্ড করে ফয়দা আছে কোনো।কি কথা আছে দ্রুত বল আমি বিজি আছি।

–শ্বশুরের মেয়ে নিয়ে বিজি আছেন তাইনা?এত রাতে এনাদার কল।

–মধ্য রাতে ফাউল কথা বলতে মেসেজ দিয়েছিস।আমার এত সময় নেই তোর আজাইরা কথা শোনার মতো।কি কথা আছে বল। অল রেডি চার মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে।

–আমার সাথে দেখা করেন?যা বলার সরাসরি বলতে চাই।

–.কাল সকাল সাড়ে পাঁচ টায় রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়াবি,আমি হাঁটতে বেরোবো তখন দেখা হবে।
আনসেন্ড করা মেসেজ কি লিখছিলি গফ নিয়ে বিজি।হ্যাঁ মহারাণী মাত্র ই আমাকে নক দিয়েছেন রণচন্ডী মুডে।কপাল ভালো আমার কাছে নেই সে এখন,থাকলে ওর খবর ছিলো আজ।বলেই ফোন টা কেটে দিয়ে একটা স্ক্রিনশট দিলেন।টাইমের জায়গা কালার করে দিয়েছেন।প্রুভ হিসাবে দিয়েছেন একজন বিদেশী ক্লাইন্ট এর সাথে কলে আছেন।

আমাকে প্রুভ দেওয়ার কি আছে অদ্ভুত। কাল দেখা করে সাফ সাফ বলে দিবো আপনার মতো অসভ্য মানুষ কে দিয়া কখনোই বিয়ে করবে না।বিয়ে টা ভেঙে দিয়ে ঢাকায় ফিরে যান।

আবার ও মেসেজ এসছে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি
স্ক্রিনশট এর নিচে লিখে দিয়েছেন,”মধ্যরাতে সে আমাকে ভুল না বুঝলেও পারতো।”

অদ্ভুত উনি কি উনার গফের মেসেজ ভুলে আমাকে দিয়ে দিলেন।কি ঢং এর প্রেম ভাবা যায়।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৭.
#WriterঃMousumi_Akter

সময় টা শীতকাল,মাত্রই পাখি কিচির কিচির করে জানান দিচ্ছে ভোর হয়েছে দোর খোলো,কিন্তু বাইরে টা এখনো স্পষ্ট হয় নি।চারদিক আবছা অন্ধকার, উপরে আকাশ টা শুধু স্পষ্ট ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে আর আকাশের নিচে গাছ পালা গুলোর মাঝে অন্ধকার বিরাজ করেছে,ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ টাও দিনের আলোর আগমনে বিলীন হয়েছে।চারদিকে হালকা কুয়াশা ও পড়েছে।আমি চটজলদী ব্রাশ করে নিয়ে, নামাজ পড়ে রেডি হতে শুরু করলাম।পায়ে কেমন শীত শীত লাগছে প্লাজু চেঞ্জ করে কালো কালারের জেগ্যান্স পরে নিলাম।কালো কালারের জন্য মনে হচ্ছে গ্যাবাডিং প্যান্ট।গায়ে লাল কালারের কামিজ।লং শীতের কোর্ট ও পরলাম,মাথায় যে টুইন টুপি গুলা আছে পরলাম।বারান্দায় জুতার র‍্যাক থেকে লাল কালারের জুতা টা পরে হাতে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।আমার এত গুলা কাজ করতে করতে বাইরে টা ফর্সা হয়ে গিয়েছে।রাস্তার মোড়ে যেতে প্রায় পাঁচ মিনিট সময় লাগলো আমার।

সকাল সকাল উনাকে দেখে একটা হোচট খেলাম আমি।দূর থেকে কি সাংঘাতিক হ্যান্ডসাম টা’য় না লাগছে উনাকে।উনার পরণে কালো ট্রাউজার,গায়ে কালো কালারের হুডি পরা মানে টুপি ওয়ালা একটু মোটা গেঞ্জি টাইপ।মাথার পেছনে টুপি টা ঝুলছে,উনিও টুইন টুপি মাথায় দিয়েছেন শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে উনার।কালো টুপির মাঝে উনার ফর্সা আবরণের চোখ,আর ফর্সা কপালে কালো ভ্রু যুগল অসম্ভব সুন্দর লাগছে।যে কোনো মেয়ে দেখলে নির্ঘাত হার্ট ফেইল করবে।হুডির সাম নে যে পকেটে তাতে উনার হাত গুজে রাখা,পায়ে কালো বুট জুতা।এসব ড্রস পরেই উনি রেগুলার হাঁটতে বেরোণ।হুডির সামনের পকেটে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলাম আমি মনে মনে ভাবছি আজ স্টাইল চেঞ্জ করেছেন ক্যানো উনি,অন্য দিন তো প্যান্টের পকেটে হাত গোজা থাকে।উনি কি স্টাইলের পরিবর্তন ঘটাতে চান নাকি।ভাবনা থেকে বেরিয়ে উনার কাছে গেলাম।

‘আমি উনার সামনে গিয়ে তড়ি ঘড়ি করে বললাম,দেখুন যা বলার ক্লিয়ার রি বলে দিচ্ছি।সোজা সাপ্টা বলে দিচ্ছি।’

‘উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে টুপি নামিয়ে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,তার আগে বল পাঁচ মিনিট দেরি করেছিস কেনো?’

‘উনার কথা শুনে আবার ও হোচট খেলাম।উনি কি কাল সারারাত ভেবে রেখেছেন আমার টাইমের একটু এলোমেলো হলেই উনি জেরা করবেন।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।মানুষের মাথায় এসব বুদ্ধি কিভাবে থাকে।এত কিছু একটা মানুষের মাথায় আসে কোথ থেকে।’

‘উনি ভ্রু কুচকে আবার ও বললেন,উত্তর দিস না কেনো?পাঁচ মিনিট লেট করলি কেনো?’

‘দেখুন পাঁচ মিনিট আবার কোনো সময় হলো নাকি।সময়ের এটুকু হের ফের তো হয় ই।এটা আবার কেউ ধরে নাকি।’

‘এখানে কেউ দাঁড়িয়ে নেই আমি আছি দিয়া।আমার সাথে অন্যদের গুলিয়ে ফেলার মতো ভুল যেনো সেকেন্ড টাইম আর না দেখি ড্যামেড।আমার কাছে এক সেকেন্ড সময়ের ও অনেক মূল্য।সময় কে আমি অবহেলা করি না।সময়ের সঠিক মূল্যায়ন না করলে পস্তাতে হয়।এইজন্য আমি যেটা সময় উপযোগী মনে করি যে কোনো উপায়ে সেটা সময় থাকতেই করি আন্ডারস্ট্যান্ড।’

‘আচ্ছা সরি! শুনুন যা বলতে এসেছি।’

‘উনি আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে একবার তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।’

‘আমি অবাক হয়ে গেলাম আমার কথা না শুনেই হাঁটতে শুরু করলেন।উনি তো জানেন ই আমি কিছু বলতে এসছি তাহলে হাঁটা দিলেন কেনো?আমি উনার সাথে হেঁটে পারবো না সেটা আগেই জানতাম খানিক টা দৌড় মেরে গিয়ে উনাকে ধরলাম।উনার পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললাম,আপনাকে আমি বলেছিলাম আপনার সাথে কথা আছে আপনি না শুনেই হেঁটে যাচ্ছেন।’

‘উনি আবার ও দাঁড়িয়ে পড়লেন আমার দিকে চক্ষু নিক্ষেপ করে বললেন,তোর কথা শোনার জন্য কাল রাতে আমি পাঁচ মিনিট সময় রেখেছিলাম কিন্তু তুই সেটা নষ্ট করেছিস,আজ আর হবে না কাল আবার আসিস।তোর সময় আজ শেষ দিয়া।’

‘দেখুন আপনাকে কে বললো যে আমি পাঁচ মিনিটে কথা শেষ করবো। আমার অনেক সময় লাগবে।কিন্তু আপনি একটু আস্তে হাঁটুন তাহলে হাঁটতে বলতে পারি।’

‘উনি মুখে কিছু না বলে,আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,আচ্ছা এবার বল তোর কি গুরুত্বপূর্ণ কথা। ‘

‘তাহলে শুনুন আমি কাট কাট বলে দিচ্ছি, আমি আপনাকে এটুকু বলতেই উনি আবার বলে উঠলেন,’

‘তুই তো সাংঘাতিক রকমের বেয়াদব মহিলা দিয়া।চরম লেভেলের বেয়াদব। শুনেছি তোর দাদী তোর দাদা কে একটুও সম্মান করতো না।সাংসারের মহিলা মাতব্বর ছিলেন।মহিলারা কেনো স্বামির উপর মাতব্বরি করবে।তোর দাদাকে কেনো সম্মান করবে না বল তো।দাদীর এই গুন টা কি তোকে দিয়ে গিয়েছে।?’

আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো উনার সব কথা।এখন উনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে আমাকেই বিরক্তিকর কথা বলবেন।

আমি একটু রুড ভাবেই বললাম,’তা সব পুরুষ কি আপনার মতো অত্যাচারী হবে।’

‘আমি কি আসলেই অত্যাচারী। ছোট বেলা থেকে তো তুই আমাকে অত্যাচার করছিস।তোর জন্য বার বার নিজের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে আমাকে।মন আমার অথচ আমার কথা শোনে না ভাবা যায় কি সাংঘাতিক ধুরন্ধর মহিলা তুই।’

‘এখন কি আপনার মনের সমস্যার জন্য আমাকেও দায়ী করবেন।আমার দাদী কে আর দাদা কে নিয়ে পড়লেন কেনো সাজ সকাল?তারা আপনার কি করেছে।আর আমি বা বেয়াদব এর কি করলাম।’

‘বেয়াদব না হলে সকালে ভোরে যে একজন সিনিয়র এর সাথে তোর দেখা হলো কোন আদবের কাজ টা করেছিস।একটা সালাম তো দিবি কিছু না হলেও।কোন ভদ্রতা পালন করেছিস তুই।’

উনার এইসব উদ্ভট কথার চোটে আসল কথা টা ই তো বলা হলো না।যা বলার জন্য এসেছি চান্স ই পাচ্ছি না।

‘উনি আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বললেন,সালাম দে আগে,না হলে তোর কোনো কথা শুনবো না।’

‘মুখ কাজুবাজু করে বললাম,আসসালামু আলাইকুম বিহান ভাই। ‘

‘উনি বিনয়ের সাথে উত্তর দিলেন ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওবারাকাতুহু।’

‘আবার ও বললাম এর সাথে দাদীর দাদা কে অস্মমান করার কি সম্পর্ক ছিলো?’

‘উনি থেমে গিয়ে বললেন,জানতে চাস তুই?সিরিয়াসলি।’

“হ্যাঁ বলুন।”

” তোর দাদা তোর দাদীর স্বামী ছিলেন,অথচ নিজের স্বামি কে কখনো সালাম ই দিতো না।এটা কি অসম্মান নয়।তুই ও তোর দাদীর মতো হয়েছিস।”

‘মনে হচ্ছে আমি আমার স্বামি কে সালাম দিবো না।’

‘কই দিচ্ছিস না তো।দিলে তো আর আমি বলতাম না।’

‘আপনি কিভাবে বুঝলেন।সময় হলে সালাম দিবো তখন আপনাকে ডেকে দেখাবো।’

‘উনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
বোঝেনা সে বোঝেনা।’

‘কি বুঝিনা?সন্দিহান ভাবে জিজ্ঞেস করলাম।’

‘তোকে কোথায় আবার বোঝার কথা বললাম,আমি গান গাইলাম। ‘

‘এবার তাহলে শুনুন, আমি ক্লিয়ার লি একটা কথা বলে দিচ্ছি আমি আপনাকে..’

‘সকালে নামাজ পড়েছিস দিয়া।নামাজ আর পড়বি কি সারারাত ছেলেদের সাথে চ্যাটিং করে ঘুমোবি হলো সকালে তাহলে ফজরে উঠবি কিভাবে।’

‘আমি নামাজ পড়েছি, না জেনে আন্দাজে কথা বলেন কেনো?’

‘রেগে যাচ্ছিস কেনো?সিওর পড়েছিস।’

‘বললাম তো পড়েছি!’

‘একটা সূরা বল তো যেটা তুই ভাল পারিস।জানি সূরা ইখলাস ছড়া কোন টায় পারবি না।’

‘শুনুন আপনার এসব অসহ্য কথা শুনতে চাই না আমি।আমি আমার কথা টা বলেই চলে যাচ্ছি।আমি আপনাকে,,’

‘রাতে কি মেকাপ করে ঘুমোস তুই।না মানে স্বপ্নে কি কারো সাথে দেখা করতে যাস।’

‘কোথায় মেকাপ একটু বলবেন।?’

‘উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন মনে হচ্ছে কাজল পরেছিস।মুখে সাদা সাদা কি মেখেছিস।ফুপ্পির ময়দা কি সব মুখে মেখে সকালে নড়াইল শহর কে আতঙ্কে ফেলতে বেরিয়েছিস।’

‘এটা সকালেই পরেছি।এখানে মেকাপ কোথায় অসহ্য।আমি জাস্ট ক্রিম দিয়েছি মুখে।আটা মাখবো কেনো?নড়াইল শহরের মানুষ ভয় পাবে কেনো?’

‘আমি তাই ভয় পেয়েছি,অন্য মানুষ পাবে না।আমি ভেবেছি একজন পেত্নি এসেছে রাস্তায়।পরে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম তুই।একটা সূরা পড়ে ফু দিয়ে দে ভয় যা পেয়েছি তা দূর হয়ে যক।’

‘শুনুন আমার কিন্তু প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।’

‘রাগ তো আমার হবার কথা।কারণ তুই ডিরেক্ট আমাকে কপি করেছিস।’

‘কোথায় আপনাকে কপি করেছি আমি।’

‘এইযে জিন্স পরেছিস,আমার মতো টুপি পরেছিস,খেয়াল করে দেখ দুজনের ই সেইম টুপি। ‘

‘আমি তাকিয়ে দেখি আসলেই সেইম টুপি,সেইম কালার টুপির।’

‘আমার টা দেখে তুই কিনেছিস তাইনা?কেনো অন্য কালার পাস নি।’

‘এটা মামি দিয়েছে আমাকে।’

‘ওহ আচ্ছা!তাহলে আমার আম্মু দিয়েছে তোকে।দিবে না কেনো এই টুপির জন্য না খেয়ে ছিলি সাত দিন।’

‘আপনার কি তাতে কোনো সমস্যা।’

‘হ্যাঁ সমস্যা জিন্স এর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছিস তোরা মেয়েরাই, এইজন্য বলি মেয়ে মানুষ মানেই সমস্যা।’

‘এবার আমি চেচিয়ে বললাম,আমার কথা কি শুনবেন,কিছু বলতে চাই আপনাকে।আপনি আমাকে বলতেই দিচ্ছেন না।বার বার কথার মাঝে ডিস্টার্ব করছেন।’

‘উনি কানে হাত দিয়ে বললেন,উফফ ঝগরুটে মহিলা একটা।বল কি বলবি।?’

‘শুনুন বিহান ভাই আমি সাফ সাফ বলে দিচ্ছি আমি আপনাকে,,’

ওয়েট দিয়া তোকে বলতে হবে না।আমি তোকে হেল্প করছি।উনি পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের পাসওয়ার্ড খুললেন,ডি লাভ ডি।ওএমজি উনার সেই শ্বশুরের মেয়ের নাম ও ডি দিয়ে বাহ।এত প্রেম উনার।ঢং দেখে আর বাঁচি না।

‘উনি একটা ফোল্ডারে গিয়ে একটা অডিও আমার কাছের কাছে প্লে করে বললেন,এটাই বলতে চাস তো তাইনা?’

আমি অবাক হয়ে গেলাম,আমি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।উনি কি আসলেই অদ্ভুত কোনো মানুষ।

সেই যে কিশোরী বয়সে কান ধরে বলেছিলাম আই লাভ ইউ বিহান ভাই সেটাই রেকর্ড করে রেখেছিলেন।আর এখন সেটাই প্লে করে দিয়েছেন।

নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে উনি নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছেন।উনার এই হাসিতে মারাত্মক গা জ্বলছে আমার।কিছু বলতে যাবো তখন ই উনি পেছনে ইশারা দিয়ে দেখালেন।আমি তাকিয়ে দেখি রিয়া-বিভোর ভাই,মেহু আপু,তোহা আপু,তিয়াস ভাই আসছেন।

চলবে,,