এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-৮+৯

0
986

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৮.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

লজ্জায় পড়ার মতো বিশ্রি জিনিস কি আর কোনো কিছুতে আছে।ছিঃকি লজ্জা টায় না পেলাম।বিভোর ভাই,রিয়া,তোহা আপু,তিয়াস ভাই,মেহু আপু সবাই জানে যে আমি এই বিয়েতে রাজি না।এটা নিয়ে তুমুল ঘূর্ণিঝড় চলছে বাড়িতে।বিয়েতে রাজিনা অথচ তার সাথে সকালে ভোরে হাঁটতে বেরিয়েছি,এর মানে কি হতে পারে স্বাভাবিক সবাই যেটা ভাববে ওরাও সেটাই ভাবছে।আর না ভাবার ই বা কি আছে,এখন আমি বোঝাতে চাইলেও কি ওরা বুঝবে।

তিয়াস ভাই বললো,নতুন দম্পত্তিদের ঘাসফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আমরা চলে এলাম।বলেই এক গুচ্ছ ঘাস ফুল এগিয়ে দিলাম।কিন্তু এটা কি ঠিক হলো বিহান ভাই আপনারা লুকিয়ে চুরিয়ে সময় কাটাচ্ছেন আমাদের বাদ রেখে।আমরা কি আপনাদের ডিস্টার্ব করতাম।

“বিহান ভাই কপাল কুচকে বললেন,আমি তো জানতাম তিয়াস তোমরা হলে জাতীয় প্রাণি ছুঁচার থেকে কম না।নাকে শুকে ঠিক ই চলে আসবে সেই গুন টা তোমাদের আছেই।এইজন্য আর আমি বলি নি কিছুই।”

“রিয়া বললো,কিরে দিয়া এই ছিলো তোর মনে।আমাকে টয়লেটে গিয়ে কিভাবে সময় কাটাস সেটাও শেয়ার করিস অথচ এইভাবে আমাদের হবু দুলাভাই এর সাথে দেখা করতে আসবি একবার বললি ও না।আহা কি প্রেম দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়।”

“রিয়ার কথা শুনে বিহান ভাই শুকনো কাশি দিলেন আর আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালেন।আমি উনার দিকে চোখ পড়তেই মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।”

“বিভোর ভাই রিয়ার কথা ধরার সুযোগ পেলেই আর দেরি করেন না।চটজলদী বলে উঠলেন,রিয়া আমার সাদা মনে একটা কথা জানতে চাইছে তুমি টয়লেটে গিয়ে কিভাবে সময় কাটাও।”

“আপনাকে বলাটা কি খুব জরুরি হে!আপনাকে কেনো বলতে যাবো আমি।
এত ভাব নাও কেনো বালিকা,ছেলে কি আমি খারাপ।”

“খারাপ না আপনার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র।বিহান ভাই না থাকলে আমি ঠিক ই বলতাম।”

“কি বলতে আমি যায় করি না কেনো আমি কিন্তু পাক্কা ভার্জিন।তিয়াসের মতো না আমি।”

“বিহান ভাই বললেন,গ্যারান্টি কি বিভোর?”

“তিয়াস ভাই বললেন,দেখলেন বিহান ভাই বিভোর ভাই আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।”

“তুমিও বিভোর কে ফাঁসিয়ে দাও।”

“বিভোর ভাই ফাঁস করলাম তাহলে?”

“বিহানের ফাঁদে পা দিস না ভাই।বিহান তোকেও ফাঁসাবে কায়দা করে টের ও পাবি নাহ।”

মেহু আপু বললো আপনারা কি ভাল হবেন না।সারাজীবন যে যাকে ইচ্ছা তাকে পচাতে থাকেন।আমার দিয়ার সাথে কথা আছে বলেই,

“মেহু আপু বললো,কি ব্যাপার দিয়া অন্য দিন হাঁটতে আসতে চাস না।আজ আমাদের না বলেই চলে এসছিস, কাহিনী কি দিয়া।”

“তোহা আপু বললো,কি ব্যাপার কি দিয়া হোয়াট ইজ কাহিনী।এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হ্যাগো ওগো করছিস।”

“বিভোর ভাই বললেন,বিহান আমার বোন নিয়ে ঘুরতে এসছিস ট্যাক্স দে এইবার।সেকেন্ডে দশ টাকা।”

“বিহান ভাই বললেন,ট্যাক্স তুই আমাকে দে উলটা।তোর এই অলস বোন সারাদিন খেয়ে খেয়ে পেটে মেদ জমাচ্ছে আমি যে মর্নিং ওয়ার্কিং করাচ্ছি এইজন্য ট্যাক্স আমি পায়।গাইস আজ বিভোর তোমাদের ট্রিট দিবে।ওর হাতির মতো বোনের ওজন কমানো উপলক্ষে।”

“আপনি কি আমাকে হাতি বললেন।”

“না হাতি কে হাতি বলেছি।তুই কি হাতি।”

“বাজে কথা আর কত বলবেন শুনি।
নিজে হচ্ছে হাড় কিপ্টা অন্য একজন কে ট্রিট দিতে বলছে?”

“আমি কিপ্টা না অপেক্ষায় ছিলাম বিয়ের পর শ্বশুরের সম্পত্তি বেঁচে একটা মহিশ কিনে জবাই দিবো।”

“আপনার শ্বশুরের টাকায় খাওয়াবেন,ওকে ফাইন চলুন।এতদিন শুধু শুনেছি আপনার শ্বশুরের মেয়ের গুনগান।এবার তার গোয়ালের মহিশ ই খাওয়া যাক।আপনি যে কিপটা আপনার শ্বশুর ও নিশ্চয়ই আপনার ই মতোই কিপ্টা হবে।”

“ঠিক বলেছিস একদম ই তোর বাবার মতো কিপ্টা।কিপ্টা পাশাপাশি রাজাকার।খাঁটি শাসক খাঁন দের নাম রেখেছে।দেখতে হবে বাপটা কার।”

“বিভোর ভাই উনাকে নিষেধ করুণ আমার বাপ দাদা বংশ কিছু না তুলতে।তাহলে খারাপ হবে কিন্তু।উনার শ্বশুরের কথা হচ্ছে সেখানে আমার বাবাকে টানা হচ্ছে কেনো?”

“কারণ আমার শ্বশুর আর তোর বাবা মানুষ তো একই।”

“আমার বাবা আপনার শ্বশুর ছিলো কবে?”

“এই যে হবু শ্বশুর। সবাই আমাকে জোর করছে বিয়ে করার জন্য।ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক বিয়ে তো হবে।তাই আপাতত সেকেন্ড পক্ষের শ্বশুরের টাকায় মহিশ জবাই দিবো।”

“রিয়া বললো,ওরা ইচ্ছা করেই ঝগড়া করে টপিক্স চেঞ্জ করছে।এখন বল দিয়া এইভাবে প্রেম ট্রেম করতে আসবি আমাদের বলবি না।”

“আমি কোনো প্রেম ট্রেম করতে আসি নি।একটা কথা বলতে এসেছিলাম কিন্তু উনি বলতেই দিলেন না।”

-উনি দুই ভ্রু কুচকে বললেন,”আহারে বেচারী একটা কথা বলতে এসছিলো কিন্তু পারলোই না সো স্যাড।”

–কিভাবে পারবো আপনি তো বলার সুযোগ দেন নি।যতবার ই বলতে গিয়েছি কিছু না কিছু বলে আটকে দিয়েছেন।আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।

–মেহু আপু বললো,বাড়ি যাবি কেনো চল সকাল সকাল হেঁটে আসি।সকাল সকাল হাঁটলে শরীর মন ভাল থাকে।

–আমি যাবো না,তোমাদের সামনে আমাকে হাতি বলেছো কেউ কোনো প্রতিবাদ করো নি।উনাকে সরি বলতে বলো তা না হলে আমি যাবো না।

–উনি কপাল টান টান করে বললেন,হাতি বলেই তো হাঁটতে পারিস না।হেঁটে দেখা যদি আমরা যতদূর যাবো তুই ও যেতে পারিস তাহলে সরি বলে দিবো।

–প্রমিজ করেন?

–আচ্ছা বিভোর এর মাথা ছুয়ে বলছি।

–কেনো বিভোর ভাই কেনো পারলে আপনার সেই শ্বশুরের মেয়ের মাথা ছুয়ে বলুন।

–সে তো নেই, আর থাকলেও আমার সব থেকে দূর্বলতা সে।তার নামে কখনো কোনদিন কোনো কসম কাটবো না, নেভার এভার।

–কেনো?

–ধর,যাচ্ছি কয়েক পা যাওয়ার পর আমি মারা গেলাম।আমি তো আর প্রমিজ রক্ষা করতে পারলাম না।তাহলে তার কোনো ক্ষতি হলে কি হবে তখন।বেঁচে থাকি আর মরে যায় তার সেফটির গুরুত্ব সবার আগে আমার কাছে আন্ডারস্ট্যান্ড।

–উনার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম,মনে মনে মারাত্মক জেলাস ও হলাম।একটা মানুষের ভালবাসা এতটাও গভীর হতে পারে।এত ভালবাসেন উনি সেই মেয়েকে।নিশ্চয় অনেক সুন্দরী হবে। হলে হোক তাতে আমার কি।

–বিভোর ভাই বললেন,বিহান তোর না দুইদিন পর বিয়ে এখনো এক্স গফের নাম জপে যাচ্ছিস ভুলে যা ভাই।এখন সব ই অতীত মনে কর।

–সাজ সকালে কুয়াশা ঘেরা আমার স্বপ্নের শহর নড়াইলে আড্ডা দিতে দিতে ছুটে চলেছি আমারা কাজিনসমূহ।কিন্তু সমস্যা আমি ওদের সাথে হেঁটে পারছি না।বিহান ভাই মাঝে মধ্য বলছেন দিয়া এমন কচ্ছোপ এর মতো হেঁটে আসলে কোনো সরি টরি কিচ্ছুই পাবি নাহ।আমি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ অলস, এই হাঁটাহাটি একটুও ভাল লাগে না আমার।মাঝে মাঝে ছোট ছোট দৌড় দিয়ে ওদের ধরছি আমি।

–আমার মনে হচ্ছে এসব সরি ফরি আমার লাগবে না,এখন একটা অটো বা ভ্যান পেলে বাড়িতে চলে যেতাম।তোহা আপুকে ডেকে বললাম আপু একটা ভ্যান ডেকে দাও আমি বাড়ি যাবো।আমার কথা শুনে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বললো দিয়া এই হলো তোর মর্ণিং ওয়ার্ক এর নমুনা।এই প্রথম বার দেখলাম কেউ হাঁটতে এসে ভ্যান বা অটো খোজে।

–আমার অত স্লিম হওয়ার দরকার নেই,আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা এক্ষুণি আমাকে বাড়ি যেতে হবে, হবে মানে হবেই।

–সামনে একটা চায়ের দোকান থেকে বিহান ভাই একটা চিপস এর প্যাকেট আমার হাতে এনে দিয়ে বললেন খা এটা অতঃপর আবার হাঁটবি তুই।

–মেহু আপু বললো,বিহান ভাই দিয়ার মাথায় এই না সেই টুপি আপনি ঢাকা থেকে এনেছিলেন।

–আমি বিহান ভাই এর দিকে আশ্চর্যজনক ভাবে তাকালাম মানে কি এই টুপি উনার এনে দেওয়া।মানে মামি আমাকে দিয়েছিলো তার মানে এটা উনার ই আনা।

–আমি টুপি খুলে উনার দিকে ছুড়ে মেরে বললাম যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা বাড়ি গিয়ে ফোনে জানিয়ে দিবো আপনাকে।

–উনি বললেন সামনে আগাতে পারি এখন।মেহু চলো তো ও থাকুক এখানে।বলেই টুপিটা মাথায় পরিয়ে দিতে দিতে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,একদম খুলবি না দিয়া।এটা তোর বাপের টাকায় কেনা না বুঝলি।শ্বশুরের থেকে যৌতুক নিয়ে ও কেনা নয়।আমার উপার্জনের হালাল টাকায় কেনা।পাপ হবে না তোর বুঝলি।আর টুপিতে মানিয়েছে তোকে খুব দেখ পিক উঠিয়েছি।

অতঃপর আবার হাঁটতে শুরু করলাম আমরা।হঠাত একটা অটো দেখে খুশিতে অটো দাঁড় করিয়ে অটোতে করে আসলাম।মনে মনে ভাবছি কি হবে আমাকে দিয়ে।সামান্য একটু হাঁটতেও পারিনা।হাইরে আমার মর্ণিং ওয়ার্ক।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৯.
#WriterঃMousumi_Akter

–ঘড়িতে সময় বিকাল চার টা।শীতকালের বিকাল চারটা মানেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে গিয়েছে,কিছুক্ষণের মাঝেই অস্ত যাবে।সূর্যের তেজহীন কমলা কালারের আভা জানালার মেরুণ কালারের পর্দা ভেদ করে খাট থেকে সোজা গিয়ে ওয়ালে পড়েছে।ওয়ালে লাগানো রঙিন প্রজাপতি গুলো সূর্যের আলোতে ঝলমল করছে বেশ,আমি খানিক টা মুগ্ধ হয়েই সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম।মিনিট দশেক আগেই ঘুম ভেঙেছে আমার। মাত্রই ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিন টেবিলের সামনে টুল টেনে বসে চিরুনি দিয়ে চুল ঠিক করছি অতঃপর হাতে পায়ে লোশন লাগানোর জন্য হাতে খানিক টা লোশন ঢেলে নিলাম।হঠাত বাবার কথা আমার কানে এলো।আমার কান অধীর আগ্রহে ও ঘরের দিকে খেয়াল দিয়ে আছে।

‘পাশের রুমে বাবা বলছেন,যতই এভাবে বিয়ে হোক মেয়ের জন্য গহনা তো বানাতে হবে।আমার একটা মাত্র মেয়ে গহনা ছাড়া আমি বিয়ে দিবো না।আম্মু বলছে,এখুনি তো আর তুলে দিচ্ছি না যা আছে গহনা তাতেই হবে।দিয়ার তো সিম্পল কানের৷ দুল,চেইন আর একটা আঙটি আছেই।তবে কিছু শাড়ি কিনতে হবে যতই হোক কালেমা পড়ানো হবে শাড়ি না কিনলে হয় না। বাবা বলছেন,বিহানের জন্য তো কিছু বানাতে হবে।আম্মু বললো,একটা চেইন বানিয়ে এনো যদিও জানি বিহান ওগুলো কখনোই পরবে না,তবে আমার যা দায়িত্ব সেটা আমাদের পালন করতে হবে।

‘ভাইয়া আম্মু আর বাবা কে বলছে আমার একটা কথা ছিলো জানিনা কিভাবে নিবে তোমরা।’

‘বাবা বললেন,কি কথা আবির?’

‘বাবা দিয়া এমনিতেই বিয়ে তে রাজি নয়, এখান শুধু বিয়ে দিয়ে রাখলে দূরত্ব আরো বাড়বে।আমার মনে হয় ওদের বোঝাপড়ার জন্য ওদের কাছাকাছি থাকার প্রয়োজন টা বেশী।যদিও দিয়ার বয়স কম বিয়ের জন্য উপযুক্ত নয় আবার দিয়ার বয়সী মেয়েদের যে বিয়ে হয় না সেটাও না।ইন্টার লেভেলে মেয়েদের বিয়ে হয় কিন্তু বাবা।’

‘তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো আবির?’

‘বাবা দিয়া এমনিতেও দিনে দুই-একবার মামা বাড়িতে যায়।মাসের অর্ধেক সময় মামা বাড়িতেই কাটায়।তাই ওর জন্য শ্বশুরবাড়িটা খুব একটা অসুবিধার হবে না।তাছাড়া বিহান তো বেশী বাড়িতেই থাকে না।মাসে দুই -একদিন থাকে বাড়িতে।ওদের কাছাকাছি থাকাটা বেশী জরুরী।তাই দিয়াকে বিয়ের পরে বিহানের সাথেই রাখতে হবে।আমার মনে হয় এটাই ঠিক হবে।’

‘তোমার মামাদের সাথে কথা বলে দেখি কি বলে?..’

‘এখন বিহান আসবে আম্মু।আমি বিহান কে বলেছি দিয়ার সাথে একটু আলদা কথা বলে নিয়ে দিয়াকে বোঝাতে।বিয়ে যখন হবেই নিজেদের একটু বোঝাপড়া করে নেওয়ায় ভালো হবে।’

কথাটা শুনেই আবার চমকে গেলাম।কেনো আসবেন উনি? উনি আবার আসবেন।আমি তো মামিকে বলে দিয়েছি যে আমি তার ছেলেকে কোনো কিছুর মূল্য বিয়ে করতে পারবো না।মামি কি তার ছেলেকে আমার কথাটা জানায় নি।উনার তো প্রেজটিজ আর ইগো অনেক বেশী।নিশ্চয়ই আমি রিজেক্ট করেছি শুনে উনার আত্মসম্মানে লাগবে আর আমার সামনে মুখ ও দেখাবেন না।কিন্তু ভাইয়া যে বলছে একটু পরেই বিহান আসবে।উনি কি আসছেন উনাকে রিজেক্ট করেছি সেই বিষয়ে আম্মুর কাছে নালিশ দিতে।একবার আম্মুর কাছে নালিশ দিয়ে আমাকে গুষ্টিসহ মানুষের সামনে মান অপমান করেছেন।এইবার আম্মুকে কিছু বলুক আমিও আম্মুকে সাফ সাফ বলে দিবো প্রয়োজনে পাশের বাসার রিক্সাচালক রফিকের সাথে বিয়ে দাও আমার তাতেও কোনো আপত্তি নেই কিন্তু আম্মুর ওই হৃদয় হীন ভাতিজার সাথে নয়।

বলতেই বলতেই বাড়িতে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।উনি প্রবেশ করতেই আয়রা উনার কোলে দৌড়ে গিয়ে উঠলো।উনি আয়রা কে কোলে নিয়ে আয়রার হাতে পকেট থেকে চকলেট বের করে দিলেন।আয়রা চকলেট পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে বললো,ভাইয়া শুনলাম তোমার আর দিয়াপুর বিয়ে।উনি আয়রার নাক টেনে বললেন,কে বলেছে তোমাকে আয়রা।আমাকে রিয়াপু বলেছে।বিহান ভাই আয়রার কথায় আর কোনো উত্তর করলেন না।এমন সময় মেজ কাকি আর ছোট কাকি বিহান ভাই এর কাছে এগিয়ে গেলেন।উনি মিষ্টি হেসে সবার সাথে কথা বললেন।এমন ভাবে কথা বলছেন যেনো উনার মতো মারাত্মক মিষ্টভাষী ছেলে এ দুনিয়াতে আর একটি ও নেই।শাকিব খানের মতো নিঁখুত অভিনেতা উনি।মানুষ ভাবে এমন লক্ষি ছেলে যেনো ঘরে ঘরে সবার হয়।আসলে উনার আসল চরিত্র তো আর জানে না,জানলে নিশ্চয়ই বলতো না।এরই মাঝে আম্মু ও এগিয়ে গেলো।আম্মুর মুখ রাশভারী দেখে বিহান ভাই বললেন ফুপ্পি আমাকে আবির ডেকেছিলো কোনো সমস্যা হয়েছে?আর তোমার মন খারাপ ফুপ্পি।আম্মু মুখ ভার করেই বললেন,বাবা তুই তো ঢাকায় লেখাপড়া করিস তোর ওখানে কোনো পছন্দ আছে কিনা না জেনেই হুট করেই এমন একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলো ভাই আর ভাবি।তুই মন থেকে দিয়া কে মেনে নিতে পারবি তো।তোর মনের উপর জোর করে হলে দরকার নেই।বিহান ভাই একটু হেসে বললেন,ফুপ্পি কাউকে পছন্দ করবো এমন সময় কি আমার আছে।ঢাকায় যেটুকু সময় থাকি লেখাপড়ার বাইরে তোমাদের মিস করি।তুমি চিন্তা করো না ফুপ্পি আমি জানি আমার কি করা উচিত কোনো দায়িত্বর অবহেলা আমি করবো না।অন্তত আমার জন্য তোমাকে কখনো কষ্ট পেতে হবে না।আম্মু অনেক নিশ্চিন্ত হলো বিহান ভাই এর কথা শুনে।

সবার সাথে কুশল বিনিময় করে আমার রুমে প্রবেশ করলেন গম্ভীর মুডে।আমাকে দেখলেই উনার কি হয়।উনার মুখের হাসি কি আমাকে দেখেই পালিয়ে যায়।আমি হাতে পায়ে লোশন লাগাচ্ছিলাম উনাকে দেখে ওড়না টা ঠিক ঠাক ভাবে গায়ে দিলাম।উনি গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।মাত্রই না দেখলাম হাসি খুশি মিষ্টভাষী ছেলে।এক্ষুণি মুডের কি হলো উনার।বেগুনে লস হয়েছে নাকি উনার।উনার পরণে ব্লু জিন্স,গায়ে সাদা টি-শার্ট, প্যান্টের পকেটে হাত গুজে উগ্র মেজাজে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন।দরজা থেকে এক দু’পা করে এগোতে লাগলেন আমার দিকে মুখে কোনো কথা নেই।অতি সত্য কথা মাঝে মধ্য উনি রেগে গিয়ে যখন নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে অগ্নি চোখে তাকিয়ে থাকেন উনার ফর্সা গালে এক রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে।

উনাকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম উনাকে পাত্তা না দিয়ে।উনাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতেই,উনি সাথে সাথেই আমার হাত হেচকা টানে নিয়ে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে ঝুঁকে দাঁড়ালেন আমার দিকে।ওনার এক হাতে আমার হাত চেপে ধরা অন্য হাত ওয়ালে ঠেকানো।

আমার কাছে বেশ অবাক লাগলো ব্যাপার টা।উনার উপর প্রচন্ড রেগে আছি আমি অথচ উনি নিজেই রাগ দেখাচ্ছেন।আমি একটু ফুঁশে উঠে বললাম ছাড়ুন আগে।ছাড়ুন আমার হাত।

উনি অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘তুই নাকি আম্মুকে বলেছিস আমাকে বিয়ে করবি না?’

‘হ্যাঁ বলেছি।’

‘তোর সাহস হলো কিভাবে আম্মুকে একথা বলার।’

‘সব কিছুতে সাহসের কি আছে বিহান ভাই।আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না ব্যাস।আই হোপ বিয়ে টা ভেঙে দিবেন আপনি।’

‘বিয়ে না করার কারণ কি? তোর ক্লাস ফ্রেন্ড সাইমন নাকি দিয়া।’

‘এখনো কারণ জানেন না।আপনি আমাকে পুরো বিয়ের বাড়ির সামনে অসম্মান করেছেন।আপনি আম্মুকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়েছেন।এখন কি আমার বিয়ের বয়স।আপনার করা এই অপমান আমি কোনদিন ভুলবো না।তাই আপনাকে বিয়ে করার ও বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার।সাইমন হলেও আপনার কি যায় আসে তাতে।আপনার যে প্রেমিকা আছে তা নিয়ে কি আমি কিছু বলতে গিয়েছি কখনো।’

‘আমার প্রেমিকা নিয়ে তেমন অসুবিধা থাকলে নিশ্চয়ই বলতি।এখানে তো তোর কোনো অসুবিধা নেই।ওনি ওয়ে
আমার ও ইচ্ছা নেই তোকে বিয়ে করার কিন্তু সিসুয়েশন বাধ্য করেছে।কে চায় পেত্নী নিয়ে জীবন কাটাতে।?’

‘চান না যখন বিয়ে ভেঙে দিন।’

‘আমি কি নিজের ইচ্ছায় নিজের উইকেট পতন ঘটাচ্ছি।আম্মুর কথা আমি ফেলতে পারবো না।’

‘আপনি তাহলে বিয়েটা করছেন?’

‘হ্যাঁ করছি।’

‘আপনার না জিএফ আছে?’

‘কে?’

‘আপনার শ্বশুরের মেয়ে।’

‘জিএফ নয় হবু বউ।’

‘আপনার না রিলেশন তার সাথে।’

‘হুম তো।’

‘তাকে রেখে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন।’

‘হুম করবো।’

‘একটা মেয়ে আপনাকে ভালবাসে বিহান ভাই।আপনার কি কোনো দায়িত্ব নেই।’

‘দায়িত্ব আছে, নেই বলেছি কখনো।’

‘তাহলে বিয়ে কেনো?’

‘এত কথা না বলে চুপচাপ বিয়ের জন্য রেডি হয়ে নে দিয়া।আফটার অল বিয়েটা তোর আমাকেই করতে হবে।হবে মানে হবেই।’

‘কারো মন নিয়ে খেলার কোনো অধিকার নেই আপনার।?’

‘মন নিয়ে কখন খেললাম।’

‘একটা মেয়ে আপনাকে ভালবাসে আর আপনি তাকে রেখে পরিবারের জন্য অন্যাত্র বিয়ে করছেন।এটা কি মন নিয়ে খেলা নয়।’

‘ওকে ফাইন দুইটা বিয়ে করবো।হ্যাপি তুই।সতিন নিয়ে ঘর সংসার করার খুব শখ তাইনা মিসেস সরি মিস দিয়া।’

‘যে কয়টা ইচ্ছা করুণ বিয়ে সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।যাকে ভালবাসেন তাকে কি বলবেন আপনি?’

উনি আমার দিকে ঝুঁকে তো আছেন ক্রমশ উনি আরো খানিক টা এগিয়ে এলেন খুব সাবধনতার সাথে।আমার সাথে স্পর্শ না লাগলেও উনি আমার মুখের এতটা কাছাকাছি চলে এলেন আমার বুকের মাঝে হৃদপিন্ডতা দুরুম দুরুম করছে।ওয়ালে ঠেকানো হাত টা দিয়ে আমার বাম গালে আলতো স্পর্শ করতেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।উনি উনার মুখ নিয়ে আমার কাছে বললেন ফিস ফিস করে,,

‘আই লাভ ইউ’ আই স্টিল লাভ ইউ,আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ,উইল ইউ ম্যারি মি।প্লিজ এক্সেপ্ট মি!’

উনার এমন কথা শুনে চট করেই চোখ খুলে তাকালাম আমি।

চলবে,,,