এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-১০+১১

0
1039

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
১০.
#WriterঃMousumi_Akter

‘আই লাভ ইউ’ আই স্টিল লাভ ইউ, আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ, উইল ইউ ম্যারি মি। প্লিজ এক্সেপ্ট মি!’

উনার কথা শুনে চট করে চোখ খুলে ফেললাম আমি।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি আমি উনার দিকে।আমার বুকের মাঝে যেমন দুরুম দুরুম বাড়ি দিচ্ছে তেমনি তপ্ত নিঃশ্বাস উপচে উপচে পড়ছে ঘন ঘন।কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেলাম আমার রাগ,আমি যে উনার প্রতি রেগে ছিলাম সেটা বেখায়াল হয়ে গেলো।উনার মুখে এমন সুন্দর ভাবে আই লাভ ইউ শুনে হঠাত মনে হলো এই কথাটা শোনার অধিকার একমাত্র আমার আছে।এই অমূল্য ভালবাসার অধিকারীনী একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।উনার ওষ্টদ্বারে যতবার প্রেমের অমূল্য বানী আসবে ততবার যেনো আমার জন্য ই হয়।আমার চক্ষুযুগল অপলক উনার মুখপানে চোখ বুলালো।কেমন যেনো লজ্জা বোধ হচ্ছে উনার দিকে তাকাতে,অথচ উনি নির্লজ্জের মতো এক পলকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আচ্ছা আমার যা ফিল হচ্ছে উনার তা হচ্ছে না কেনো?উনার এমন ফিল হলে তো উনিও লজ্জা পেতেন।তবে উনার ওষ্টের মাঝে মিষ্টি হাসির ছড়াছড়ি।মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বলতে বাধ্য হলাম একটা ছেলেকে এতটা সুন্দর হতে হলো কেনো?কেনো এমন আকর্ষণীয় চাহণি উনার।উনার এই চাহনিতে বারবার দূর্বল হয়েছি।হাজার গুন রাগ পানি করেছি,নিজ ইচ্ছায় নয় অনিচ্ছায় রাগ পানি হয়ে গিয়েছে আমার।এই ছেলেটির মাঝে ফর্সার কোনো কমতি নেই,টানা নাক,টানা চোখ, সব কিছু কি সৃষ্টিকর্তা আপণ মনে সৃষ্টি করেছেন।ইস একটা ছেলে এতটা সুন্দর কেনো হতে গেলো,আর সেই সুন্দর ছেলেটা আমার মুখের উপড় ঝুঁকে এসে ভালবাসার বুলি আউড়াচ্ছেন।

আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,’আপনি কি বললেন।’

‘উনি ভ্রু ইশারা করলেন যার মানে কি বললাম?’

‘আমি ওষ্টদ্বয় কাঁপছে,উনাকে বললাম এসব আমাকে বলছেন।’

‘হুম তোকেই তো বললাম।’

‘কৌতুহল নিয়ে জানতে ইচ্ছা হলো সত্যি কি আমাকে বললেন।উনার মুখ থেকেই শুনতেই চাই আমি যে উনি বলুক দিয়া আই লাভ ইউ।তাই আবার ও বললাম আমাকে কেনো বললেন,আমাকে বলবেন ই বা কেনো?আপনার শ্বশুরের মেয়েকে বলুন।’

‘শ্বশুরের মেয়েকেই তো বললাম।তোকে আবার কখন কি বললাম।’

‘আমাকেই তো বললেন।’

‘তোকে বললাম কারণ,তুই এই মেসেজ টা আমার শ্বশুরের মেয়েকে পৌছে দিস।তাকে জানিয়ে দিস তোর শ্বশুরের ছেলে তাকে কত বেশী ভালবাসে।’

‘এই কথাটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।সাথে সাথে রাগ আমার শরীরে দানা বাঁধতে শুরু করলো।আবার আগের দিয়া ফিরে এলো আমার ভেতরে।ধীরে ধীরে ক্ষিপ্ত হতে শুরু করলাম।চোখে রক্তবর্ণরূপ ক্রমশ প্রবল হতে থাকলো।’

‘আমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললাম আমি কি আপনার ভালবাসার ডাকপিয়ন নাকি বিহান ভাই।আপনার এইসব প্রেমের অমূল্য বানী আপনি গিয়ে বলুন না, আমাকে টানছেন কেনো এসবের মাঝে।আপনি এক্ষুণি সরুন মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার।’

‘এই টুকু শরীরে এত রাগ কোথা থেকে আসে দিয়া।শরীরের ওজনের থেকে রাগের ওজন বেশী তোর।’

‘দেখুন চরম মেজাজ খারাপ আমার!’

‘ইস রে!এইটুক পুচকে মানুষের এত রাগ। আমাকে বাতাস কর আগে,তোর বাবাকে বলবি তার জামাই এর জন্য এসি কিনতে?’

‘এসি,এই ঠান্ডায় এসি লাগবে আপনার।আমার বাবার ঠেকা পড়ে নি আপনার জন্য এসি কিনতে?’

‘তার মেয়ে ডিস্টার্ব করবে,আর এসি কি অন্য কেউ কিনবে?গরম তো তার মেয়ের জন্য ই লাগছে আমার।’

‘কি করেছি আমি আপনার বলবেন প্লিজ।চোখে মুখে অগ্নিরুপ আমার।’

‘এই যে কেমন গরম গরম নিঃশ্বাস ছাড়ছিস।চোখে মুখে এসে পড়ছে, উফফ মেয়েদের নিঃশ্বাসে এত উত্তাপ আগে জানতাম নাতো!গরম পানি খেয়েছিস নাকি দিয়া কিছুক্ষণ আগে।তোর এই উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে প্রচন্ড গরম লাগছে আমার।আই থিংক আমি।’

‘ইউ থিংক ইউ হট!বিহান ভাই।তো যান না ফ্রিজ থেকে আইস নিয়ে গোসল করে আসুন।একদম ঠান্ডা হয়ে যাবেন।’

‘উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,তুই তো আর ছোট নেই দিয়া।তুই আমাকে এইগুলা কি বলিস,ওহ মাই গড!আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে স্ট্রেইঞ্জ করতে পারে নি এই প্রথম বার তুই।আমি মারাত্মক আকারে শিহরিত দিয়া।বাট এই এত্ত অসভ্য কিভাবে হলি দিয়া।’

‘এই যে আমাকে হট বললি।’

‘হট মানে গরম তাই তো বললাম,আপনি তো বললেন আপনার গরম লাগছে খুব।’

‘বাট তুই তো আমাকে অন্য কিছু বলেছিস।’

‘কি বলেছি বিহান ভাই।’

‘ওকে আয় তোকে দেখায় কি বলেছিস,গুগলে সার্চ কর দেখি কি আসে।’

‘আমার এমবি নেই।’

‘উনি উনার ফোন বের করে সার্চ করে আমাকে দেখালেন।’

‘আমি একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলাম,এই মানুষ টা এত অসভ্য কেনো?প্রতিটা কথার উদ্ভট কিছু কথা আর মানে উনি বের করে ফেলেন।ছিঃছি আমি বা কি বললাম উনি বা কি দেখালেন।গুগলে এত অসভ্য কেনো কেউ বলতে পারেন।’

‘আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,সবার নিঃশ্বাস ই এমন গরম হয়। ‘

‘উনি বললেন কই দেখ তো আমার নিঃশ্বাস তোর মতো নাকি।উনি একটু ঝুঁকতে গিয়েই অসাবধনতায় উনার অনিচ্ছায় উনি হোচট খেলেন।আর সাথে সাথে উনার ডান গাল আমার গালের সাথে লেগে গেলেন।আমি উহু বলতেই উনি বললেন কি হলো আমি কি তোকে মেরেছি।’

‘আপনার দাঁড়ি আমার গালে লেগে ব্যাথা লেগেছে।’

‘উনি নিজের গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমার দুই গালে খুব জোরে উনার গাল ঘষে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।’

উহু এই মানুষ টা ভাল হবে কবে।এ কেমন অদ্ভুত দাঁড়ি গোফ।আজন্ম দেখছি এই এতটুকুই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।বড় ও হয় না ছোট হয় না।আমি সামান্য চুল ম্যানেজ করতে পারি না আর উনি দাঁড়ি গোফ এত পরিপাটি রাখেন কিভাবে।

‘আমি চিল্লায়ে বললাম,শুনুন ভালো ভালোই বলছি আমি জীবনেও আপনাকে স্বামি হিসাবে মানবো না।এই জীবনে কখনো আপনাকে মেনে নিবো না।’

–আগামিকাল আমার গায়ে হলুদ। শুনেছি ছোট আকারে অনুষ্টান করে আমাকে বিদেয় দেওয়া হবে।বিষয় টা আমার মারাত্মক অপমানে লাগছে।একজনের প্রেমিকা আছে সে তাকে কন্টিনিউ ভালবেসে যাচ্ছে আর আমি তাকে বিয়ে করতে যাবো।তাছাড়া উনার জন্য ই তো আজ আমার এই অবস্থা। এক মাত্র উনার বাড়াবাড়ির জন্য আমাকে ঘরভর্তি মানুষের মাঝে অপমানিত হতে হয়েছে। শুনেছি উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো ফ্যামিলি থেকেই।কই আমি তো কখনো জানলাম ই না।উনার সাথে কি আমার বিয়ে হওয়ার ই ছিলো।যেহেতু ফ্যামিলি থেকে ঠিক করেছিলো বিয়ে সেহতু বিয়ে হওয়ার ছিলো।এক অভিশপ্ত জীবনের জন্য তৈরি হয়ে নিলাম আমি।কোথাও যে পালিয়ে যাবো কোথায় যাবো আমি।আত্মীয় স্বজন যে যেখানে আছে সবার মুখে একই কথা বিহানের মতো ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে এটা অত্যান্ত আনন্দের কথা।উনার জন্য আম্মু আমাকে মেরেছে এটা ছাড়া উনার আর কোনো দোষ নেই।না আছে চারিত্রিক কোনো খারাপ দিক না আছে অন্য কোনো বাজে রিপোর্ট। এলাকার আইডল হলেন বিহান ভাই।যাকে দেখে ছেলে মেয়েরা অনুপ্রাণিত হয়।

–রিয়া আর আমি সুয়ে আছি এক জায়গা।রিয়া ব্রাইডাল গহনা চয়েজ করবে।আমার জীবন তেজপাতা হতে চলেছে ওদের মনে ঈদ লেগেছে।বাহ রে মানুষ বাহ!।

–রিয়া আমাকে বললো,দিয়া তোর ফোন টা ইউটিউব দেখি।

–এমবি নেই।

–রিয়া আমার ফোন নিয়ে বললো দিয়া ৫০ জিবি এমবি আছে,তবুও বলছিস এমবি নেই।এত কিপ্টা কবে হলি রে।

–রিয়ার কথা শুনে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম,সত্যি ৫০ জিবি এমবি।এত এমবি কোথা থেকে এলো।কেউ ভুলে রিসার্চ করে আমার টায় দেয় নি তো আবার।

–রিয়াকে বললাম এই রিয়া আমি তো টাকা লোড দেয় নি।তাহলে এত এমবি কিভাবে এলো।

–নিশ্চয়ই বিহান ভাই দিয়েছেন দিয়া।

–উনি কেনো দিতে যাবেন।কেউ ভুলে দিয়ে দিয়েছে হয়তো।

–ইস রে কেউ আমার নাম্বারে কেনো ভুলে দেয় না বুঝলাম নাহ।যেহেতু ফ্রি এমবি অর্ধেক আমার কিন্তু দিয়া।

–আমি বললাম যা ইচ্ছা কর আমার ভাল লাগছে না রিয়া।

একদিন পরেই ছোট আকারে গায়ে হলুদ লাগানো হলো আমার।কথা হয়েছে পরে আবার ও বড় অনুষ্টান হবে।আপাতত ঘরোয়া ভাবে কালেমা হবে কিন্তু আমাকে বিহান ভাই এর সাথেই থাকবে হবে।যে কয়দিন উনি বাড়িতে থাকবেন আমাকেও থাকতে হবে উনার সাথে।

কেমন যেনো ছোট্ট এক ভূমিকম্পন এর মতো বিয়ে হয়ে গেলো আমার।আসলে আমি বিবাহিত। ভাবতেই কেমন লাগছে আমি তাহলে বিবাহিত হয়ে গিয়েছি।

চলবে,,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১১.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

যে বাড়িটা এতদিন মামাবাড়ি ছিলো সেই বাড়িটা আজ আমার শ্বশুরবাড়ি।যে বাড়িতে প্রবেশ করতে সকাল সন্ধ্যা দুপুর লাগতো না সেই বাড়ির গেটে আমাকে ঘন্টাখানিক দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে বাড়িতে প্রবেশের জন্য।আজ আমাকে বরণ করার সময় চাইলেই হুট করে পারিনি সবাইকে উপেক্ষা করে বাড়ির ভেতরে গান গাইতে গাইতে প্রবেশ করতে।আজ এই বাড়িতে পা রেখে কেমন যেনো অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।আগের মতো ইজি হতে পারছি না।আগে যেমন বড়িতে প্রবেশ করেই লাফাতে লাফাতে বিভোর ভাই বিভা আপুর ঘরে প্রবেশ করতাম সেটা আর পারছি না।অন্য দিন গাউন পরে প্রবেশ করেছি আর আজ লাল বেনারসি পরেছি।এই বেনারসি গায়ে জড়ালে বড্ড ভারী লাগে,এই বেনারসির সাথে নিজের পরিচয় পালটে যায়, নিজের ভিতরে জড়তা,লজ্জা,ভয় সংকোচ কাজ করে আগে জানতাম না।আগে ভাবতাম বউ সাজার মতো আনন্দ বোধহয় পৃথিবীতে নেই।বউ সাজা শুধু আনন্দের বিষয় ই নয় নিজেকে সম্পূর্ণ নতুন জীবন নতুন পরিবেশের জন্য তৈরি ও করা।কবুল বলার সাথে সাথেও পাল্টে যায় একটা মেয়ের জীবন।কবুল বলার সাথে সাথে নিজের ভেতর থেকেই যেনো অনেক কিছু বদলে গিয়েছে আমার।তিন অক্ষরের কবুলের সাথে বদলে গিয়েছে আমার পরিচয়।আজ থেকেই সবাই কেউ আর বাবার নাম ধরে বলছে না আরমান খাঁনের মেয়ে সবাই বলছে বিহানের বউ।বিহানের বউ কথাটা যত শুনছি ভেতরে কেঁপে উঠছে।এই নামের সাথেই কি তাহলে জড়িয়ে গেলো আমার জীবন।

আম্মু কাকিমনিরা আমাকে বিয়ের আগে বার বার বুঝিয়েছেন বিহানের বাম পাজরের হাড় দিয়ে উপরওয়ালা আমাকে সৃষ্টি করেছেন।বিয়ে এমন এক বন্ধন যে বন্ধনের সেতু উপর থেকেই সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা।বাবার পরে স্বামি একমাত্র অবিভাবক হয়ে যায় মেয়েদের।তার জীবনের সাথে জীবন জড়িয়ে যায়।স্বামির পরিচয়েই পরিচিত হতে হয়।আম্মু এমন কি এইভাবেই বুঝালো একটা মেয়ে বাবার এতটা আদরের হয়েও প্রাপ্তবয়স্ক হলে বাবার পাশে আর ঘুমোতে পারে না কিন্তু স্বামি একমাত্র পুরুষ যার কাছে বাকি জীবন এক রুম,এক বেড,এক সংসার,শেয়ার করে জীবন পাড়ি দিতে হয়।
এই কবুলের সাথে জড়িয়ে আছে এমন এক সম্পর্ক যে সম্পর্ক দিনে দিনে প্রবল হতে থাকে।স্বামিকে অসম্মান করলে মহা পাপ হবে।মেয়েদের আরেক টা আশ্রয়স্হল তার স্বামি।এ বড় অমূল্য সম্পদ।স্বামি নামক মানুষ টা এমন ই ভালবাসার মানুষ যাকে ঘিরে শুরু হয় নতুন জীবন,যার ভালবাসার জোরে মেয়েরা নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যর বাড়ি আপন করে নেয়।

উনার গুরুত্বটা আমার জীবনে অনেক বেশী সেটাই সবাই আমাকে বার বার বুঝিয়েছে।কিন্তু আমার মন সেটা মানতে পারছে না।ঢুকরে ঢুকরে কাঁন্না পাচ্ছে আমার।যে মানুষ টা আমাকে বিয়ে করে ভালবাসবে অন্য কাউকে তাকে নিজের জীবনের সব আমি কিভাবে মনে করবো।আমার বয়স কম,বুদ্ধি কম, ছেলে মানুষ এগুলো হতেই পারে তাই বলে আমি এতটা ছেলেমানুষ নই যে নিজের স্বামি অন্যর হয়ে থাকবে আর আমি সেটা মেনে নিয়ে তার সাথে জীবন কাটাবো।তাছাড়া ওই মানুষ টাকে আমি এই ভাবে মেনে নিতেও পারবো না।ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ছে উনার জন্যই পরিবাত আমাকে ভুল বুঝলো,বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো,উনি আমাকে ঘৃণা করে অপছন্দ করে জেনেও বিয়ে দিলো।উনার জন্যই মা বাবা তাদের থেকে দূরে করে দিলো আমায়।ঘৃণা করি উনাকে আমি,এসব যতই ভাবছি ততই কাঁন্না পাচ্ছে আমার।

মামির ঘরে নিয়ে আমাকে বসানো হয়েছে,চোখ দিয়ে পানি ঝরছে অঝরে।আশে পাশে পাড়ার মানুষ সবাই আমাকে চিনে তবুও তারা দেখতে এসছে কেননা নতুন বউ আজ আমি।বউ এর সাজে কেমন লাগছে সেটা দেখতেই মানুষের ভীড়।পাড়ার কেউ কেউ আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে এই ভালবাসার পরেও কেউ কেউ বলছে বিহানের মা বাবা কি পাগল নাকি। এমন সুন্দর ছেলেটার সাথে কিনা বোনের মেয়ের বিয়ে দিয়ে আনলো।সানজিদার মেয়েও দেখতে ভালোই তবে বিহানের সাথে মানায় নি খুব একটা।ছেলেটা এবার ডাক্তার হবে বিহানের সাথে চাইলেই তো অনেক বড় ডাক্তার এর বিয়ে দিতে পারতো।কি ভেবে এমন বিয়ে দিলো বুঝলাম না।বিহানের হাঁটু অবধি ও তো হবে না দিয়ার হাইট,তালগাছ আর বেলগাছ হয়ে গিয়েছে।

“পাশের বাসার মামির এমন কথা শুনে আরেক জন পাড়াপ্রতিবেশী মামি বললেন,এটা কোনো ব্যাপার না আপা,দিয়া তো একেবারেও খাটো না।আমার কাছে তো মনে হচ্ছে মানিয়েছে সুন্দর। সব সময় ডাক্তার ই বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি।বিহানের কানে গেলে এ বাড়ির ত্রিসীমানায় আর পা রাখতে দিবে না।এ বাড়ির কারো কানে গেলেই রেহায় হবে না, বিভোর শুনলেও পাড়ার মানুষ ডেকে শালিস ডাকবে।এ বাড়িতে সানজিদা আর ওর ছেলে মেয়ে অনেক আদরের।বুঝছো না অনেক আদরের না হলে যোগ্যতা চেহারা এসব না ভেবেই একমাত্র ভাগনি কে ঘরের বৌ করে নিয়ে এসছে।”

“কিন্তু বিহান মেনে নিলো এই বিয়ে।”

“মেনে না নেওয়ার কি আছে?বিহান কি আমাদের ছেলেদের মতো বাবা মায়ের মুখের উপর কথা বলবে।কখনো দেখেছো রাস্তায় মেয়ে নিয়ে ঘুরতে।আমাদের ছেলে পেলে আয়ে পাশ করতে পারে নি একেক টা ঘরে এনে উঠেছে।”

“আমার মনে হচ্ছে বিহান রাজি না দেখছো না বিহান কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।ফোন কানে নিয়ে রাস্তায় দেখলাম।”

“তো কি করবে নির্লজ্জের মতো বউ নিয়ে বসে থাকবে।বিহান এমন ই ছেলে ফুফুর মেয়েকে এমন যোগ্য ভাবে গড়ে তুলবে দেইখো।বিহানের পাশে যে মেয়ে থাকবে সেই বিহানের আদর্শে নিজেকে পালটে ফেলবে।”

“মানুষের এমন কথাও আজ সহ্য করতে হচ্ছে আমাকে।কি এমন পাপ করেছিলাম আমি।জীবন টা এমন উপহাসের পাত্র হয়ে গেলো।”

“ক্রমশ রাত হতে শুরু করলো আর মানুষের ভীড় কমতে শুরু করলো।আমাদের বাড়ি আর মামাদের বাড়ি খুব একটা দূরে নয় তাই তিয়াস ভাইয়া,রিয়া,মেহু আপু,তোহা আপু সবাই এসছে।খানিক পরে ওরা আবার চলে যাবে।বাইরে দাঁড়িয়ে উঠানে বিভোর ভাই বলছেন বিহান ঘরের চাবি আমার কাছে টাকা দে দশ হাজার না হলে ফুলসজ্জা আর তোর হবে না।বিহান ভাই কপাল কুচকে বললেন কিসের ফুলসজ্জা।”

“এতদিন যার স্বপ্ন দেখেছিস।ফুলসজ্জার চিন্তায় তো এতদিন ঘুমোস নি ঠিকভাবে।”

“মানে কি আমার ঘরে তালা কেনো?ঘর আমার বিয়ে করেছি বলে ট্যাক্স দিতে হবে।”

“আমরা যে ফুল কিনে সাজিয়েছি তার টাকা দে।”

“হোয়াট দ্যা হেল আমার রুমে ফুল দিয়ে বিদিগিস্হা করে রেখেছিস।”

“তুই এত আনরোমান্টিক কেনো বিহান?তোর এই আদি কালের ভাব কমা বলে দিচ্ছি।নইলে দিয়া কার সাথে পালাবে সিরিয়াসলি?”

“কে পালাবে দিয়া?ওর সেই সাহস আছে।”

“সাহস দেওয়ার জন্য আমরা আছি।দিয়ার পালানো ই উচিত।দিয়া কেনো যে কোনো মেয়ের ই থাকা উচিত নয়।শোন সময় আছে নিজের মুড পালটে ফেল।”

“সময়ের কাজ সময়ে করতে বিহান ঠিক ই পারে।”

“রিয়া বললো,বিহান ভাই দিন না।এই দিনে অধিকার আছে আমাদের।”

“মানে রিয়া ওই বাড়িতে,গেট, হাত ধোয়ানো,বউ সাজানো,ইটিছি আরো কি কি যেনো বলে আমার পকেট খালি করেছো।এখন আবার এখানে এসে আমার ঘর আটকে চাঁদা চাইছো।আচ্ছা বর পক্ষ বা কারা কনে পক্ষ বা কারা কিছুই বুঝলাম না।সব কটাতে মিলে ই তো টাকা আদায় করে বেড়াচ্ছো।এ কেমন অদ্ভুত বিয়ে বুঝলাম না।”

“বিভোর ভাই বললেন,এক মাসের পেমেন্ট ও দিস নি এখনো।এত কিপ্টামি করিস না বিহান।”

“আমি সারারাত বাইরে থাকবো তবুও টাকা দিবো না।তোর বিয়ের সময় আসলে দেখিস বিভোর কি করি।”

“হাহহা আমার ওসব নিয়ে চিন্তা নেই।রাত দশ টার আগে আমার ঘর ক্লিয়ার করবি সবাই।আমি রিয়াকে নিয়ে ফুলসজ্জা করবো।আর যদি কেউ না বেরোয় আমি সবার সামনেই রোমান্স শুরু করবো।”

“রিয়া বললো নির্লজ্জ যাকে বলে। ”

এমন সময় বড় মামি গিয়ে বললেন,এই বিভোর দরজা খুলে দে।দিয়ার খুব মাথায় যন্ত্রণা করছে।ওর ঘুমের প্রয়োজন।অনেকক্ষণ হয়েছে মেয়েটা মাথায় পেইনে ছটফট করছে।

বিভোর ভাই বললেন,সেটা বিহান বুঝছে না আম্মু।

বিহান ভাই তখন আর কথা না বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিলেন।

বিভা আপু,রিয়া, তোহা আপু সবাই মিলে আমাকে বিহান ভাই এর ঘরে দিয়ে আসলেন।চুপ করে খাটের উপর বসে আছি আমি।সবাই চলে গিয়েছে এতক্ষণে বাড়িতে।ঘড়িতে রাত সাড়ে এগারোটা বাজে বিহান ভাই এর এখনো খোজ নেই,যাক না আসলেই শান্তি।এবার উনি এক মাসের জন্য নড়াইল এসেছেন,উনার কলেজ অফ আছে।মাত্র সাত দিন হয়েছে এখনো তেইশ দিন বাকি আছে।বিহান ভাই এর ঘর টা আজ চেনায় যাচ্ছে না।দেখে মনে হচ্ছে কোনো ফুলের রাজ্য এটা।উনি আর আসবেন না ভেবে বিছানায় কাত হলাম মাত্র।মনে মনে অনেক খুশি ও হলাম যাক অন্তত আমাকে বিরক্ত তো আর করবেন না।উনি নিশ্চয়ই বাইরে কোথাও আছেন।কিন্তু আরাম কে হারাম করে উনার আগমন ঘটলো।

চলবে,,,,,