এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-১২+১৩

0
1018

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
১২+১৩
#WriterঃMousumi_Akter

রাত সাড়ে এগারোটার পরে বিহান ভাই ধীর গতিতে প্রবেশ করলেন বাসরঘরে।উনাকে দেখেই এক অজানা ভয় বাসা বাঁধলো ভেতরে।এই মধ্যরাতে উনি কি আমায় ঘর থেকে বের করে দিবেন,নাকি অন্য ছেলেদের মতো স্বামির অধিকার ফলাবেন।বিছানায় বসে উনার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি আমি,বুকের মাঝে সাউন্ড হচ্ছে দুরুম দুরুম।উনাকে তো চেনা মুশকিল হয়তো এসে বলবেন বেরিয়ে যা এক্ষুণি আমার রুম থেকে।কিন্তু আমিও তো এখানে আসতে চাই নি,এক প্রকার জোর করেই আমাকে রেখে যাওয়া হয়েছে এখানে।এতক্ষণে একটা ছবি দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলাম আমি। উনার পড়ার টেবিলের উপর একটা বড় ছবি টাঙিয়েছেন উনি।ছবি টাতোএর আগে দেখি নি আমি।আমি হাসছি আর উনি আমার নাক টিপে ধরে রেখেছেন এমন ই একটা ছবি।ছবিটা আরো তিন বছর আগের ই হবে।আমরা মেহু আপুদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি।আমি কিছু একটা নিয়ে হাসছিলাম খুব,আর উনি কোথা থেকে এসে আমার নাক টেনে ধরেছিলেন।আর বিভোর ভাই ছবি উঠিয়েছিলেন।ছবি টা নিয়ে সবাই তখন সমালোচনা করেছিলো।ছবিটা নাকি জীবন্ত উঠেছিলো।বিহান ভাই সেই ছবিটা উনার ওয়ালে টাঙিয়েছেন।উনার মুখেও ভীষণ মিষ্টি হাসি।

ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আবার ও দরজার দিকে তাকালাম।

বিয়ের আগে মেহু আপু, তোহা আপু, রিয়া আমাকে বাসর ঘর নিয়ে অনেক কিছু এডভান্স বলে দিয়েছে।আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি বাসর ঘরে ঢুকে আমার সাথে ঘনিষ্ট হতে চাইছেন সেকথা বুঝবো কিভাবে।

মেহু আপু বলেছে,শোন দিয়া রোমাঞ্চ এর আগে ছেলেরা প্রথমে ঘরে প্রবেশ করেই সিটকিনী লাগিয়ে গায়ের কাপড় খুলতে শুরু করে।তার পর ধীরে ধীরে তোর দিকে আগাবে।এগিয়ে খাটের কাছে যাবে।তারপর তোর দিকে ঝুঁকে গিয়ে শুরু হবে রোমান্স।

বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করছি উনার মতিগতি কিরুপ হতে পারে।উনি সেরওয়ানির বোতাম খুলতে খুলতে প্রবেশ করবেন ভেতরে প্রবেশ করলেন।সেরওয়ানির বোতাম খুলতে দেখে নিজের ভেতরে হার্টবিট আরো গতিতে চলতে শুরু করলো৷ উনার বোতাম প্রায় সব গুলো খোলা হয়ে গিয়েছে।এক হাতে বোতাম খুলছেন অন্য হাতে ঘরের সিটকিনি লাগিয়ে দিলেন।সিটকিনীর শব্দে কেঁপে উঠলাম আমি।ভেতরের ভয়টা আরো তীব্র হতে শুরু করলো।

উনাকে বললাম আ”’আপনি এখানে এইঘরে৷ কেনো?

উনি আমার কথা শুনে মিনিট দুয়েক আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,”ফুলসজ্জা করতে এসেছি।”

উনার কথা শুনে আরেকটু কৌতুহল নিয়ে বললাম,”কিসের ফুলসজ্জা।”

“আমার আর আমার বউ এর ফুলসজ্জা।”

কৌতুহল নিয়ে বললাম,”কি বলছেন এসব।”

“উনি কপাল কুচকে বললেন,পুচকি টা বিবাহিত ভাবা যায়।সে এখন ফুলসজ্জার খাটে স্বামির জন্য অপেক্ষা করছে।”

“উনার কথা শুনে খানিক টা লজ্জা পেয়ে বললাম,, আমি কোনো বিবাহিত টিবাহিত কিচ্ছুই না।শুনুন বিহান ভাই আমি বিয়ের আগেই বলেছিলাম আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।তবুও আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন।বিয়ে করেছেন ভালো কথা আমি আপনার সাথে এক ঘরে কিছুতেই ঘুমোবো না।না মানে না। আর এই বিয়ে আমি জীবনেও মন থেকে মেনে নিবো না।”

“উনি আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, এসব কথা আমাকে শুনিয়ে লাভ কি?আমার তো শ্বশুরের মেয়ে আছে।তুই আমাকে মানলেই বা কি আর না মানলেই বা কি।যা আছে মনের মাঝে রাখলেই তো হয়।আমাকে ষাড়ের মতো চিৎকার করে জানিয়ে লাভ আছে কিছু।আমার মনে কি আছে আমি কি তোকে জানিয়েছি কখনো।”

“শ্বশুরের মেয়ে যখন আছে তাহলে আমাকে বিয়ে করতে গিয়েছেন কিজন্য।আর আপনি আমাকে ষাড় বলছেন কেনো?আপনার তো চরিত্রের ই ঠিক নেই চোখে মুখে অগ্নিবর্ষণ আমার।”

“এই পিওর ভার্জিন ছেলেকে কিনা এক পুচকি চরিত্রের সমস্যা বলছে।দিয়া আজ কিন্তু রাগ কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করছি।সো তুই উল্টাপাল্টা না বলে মুখ টা অফ রাখ।এখন কিছু বললে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে বাড়িসুদ্ধ মানুষ এক জায়গা করে ছাড়বি।এই নিয়ে বাড়ির সবাই আমাকে ভুল বুঝবে।সবাই ভাববে তোকে আমি কি না কি করেছি।”

“তো তাহলে সেরওয়ানি খুলছেন কেনো আপনি!”

“তাহলে কি আমি সারারাত এই পোশাক পরে ঘুমোবো।লাইক সিরিয়াসলি।বিয়ে করেছি বলে কি বিয়ের পোশাক আজন্ম ক্যারি করতে হবে আমাকে।”

“না মানে আমি ভেবেছি… ”

“এই কারণে বিবাহিত মহিলাদের সাথে কথা বলতে নেই,সব সময় চার লাইন বুঝে বেশী।এমনি তেই এই পোশাক পরে প্রচন্ড আনইজি লাগছে আমার।জীবনে এসব ও পরতে হবে ভাবতে পারিনি আমি।তোদের এইসব বিয়েশাদীর ধান্দায় আজ সারাদিন এই সেরওয়ানি পরতে হয়েছে আমার।তোর কাকা নতুন তাল বাহানা করেছে আমাকে নাকি সেরওয়ানি পরতে হবে।এই শীতের মাঝেও আজ আমি সারাদিন ঘেমেছি খুব।ডিজগাস্টিং।”

–মাত্র আজ ই আমার বিয়ে হয়েছে আর উনি কিনা বলছেন আমি বিবাহিত মহিলা আশ্চর্য ব্যাপার।

–গায়ের সেরওয়ানি খুলে আলনায় রেখে একটা সাদা টি-শার্ট আর একটা কালো ট্রাউজার বের করলেন আলমারি থেকে।ওয়াশ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এলেন।চোখে মুখে পানির ফোঁটা মুক্তার মতো চিক চিক করছে উনার।চুলের এক গোছা কপালে এসে পড়েছে উনার।চুল গুলো উচিয়ে দিতে দিতে বললেন,এই ভারী শাড়ি আর কত সময় পরে থাকবি।তোর সুটকেস থেকে যা বের করবি কর। আর ওয়াশ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নে।গো ফাস্ট আমার ঘুম পাচ্ছে।

–বিছানা থেকে নেমে সুটকেস থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে গেলাম।আজ নতুন বিয়ে হয়েছে তাই শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু সাথে দেয় নি।এই শাড়ি কিভাবে পরবো বুঝতে পারছি না।ওয়াশ রুমে গিয়ে শাড়ির সেফটিন খুলছি।এটা কি শাড়ি খুলছি নাকি সেফটিনের রাজ্য খুলছি নিজেও জানিনা।শাড়ির পেছনের সেফটিন কিভাবে খুলবো সেটাও বুঝছি না।আমি তো নাগাল ই পাচ্ছি না।এর ই মাঝে ফ্লোরে পড়ে থাকা সাবানে পা পিছলে বালতি ভরা পানি নিয়ে পড়ে গেলাম ফ্লোরে।কতক্ষণের পানি সেটা জানিনা মনে হচ্ছে ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে পানি।উহু করে শব্দ করতেই বিহান ভাই দ্রুত এগিয়ে এলেন।উনি এসে বিরক্ত হয়ে আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন,ষ্টুপিড ই থেকে গেলি তুই।উনি দ্রুত আমাকে টেনে তুললেন।ঠান্ডায় কাঁপছি আমি ভীষণ ভাবে।

“উনি একটু গম্ভীর কন্ঠেই বললেন,দ্রুত চেঞ্জ করে নে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

“আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি একভাবে।”

“উনি বললেন কি হলো দিয়া।কথা কানে যাচ্ছে না।”

“আমি সেফটিন খুলতে পারছি না বিহান ভাই।”

“উনি এগিয়ে এসে পেছনের সব সেফটিন গুলো খুলে দিতে দিতে বললেন এসব ভারী শাড়ি পরার কি দরকার।এইটুক পিচ্চি মানুষ কি এইসব সামলাতে পারে।”

“সেফটিন খোলা হলে বললেন,কোথায় লেগেছে দিয়া?”

“আমি মাথা নেড়ে বললাম কোথাও লাগে নি।”

“তাহলে চেঞ্জ কর দ্রুত! ঠান্ডা বসে যাবে।আমি বাইরে যাচ্ছি।”

শাড়ি পরার ই অভ্যাস নেই তাই কোনভাবে শাড়িটা পেচিয়ে ঘরের ভেতরে আসতেই উনি একনজরে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।আমি চুল মুছে, চুল গুলো ছেড়ে কাঁপছি ঠান্ডায়।

“উনি রুমের লাইট অফ করে দিলেন।”

“লাইট অফ করতে দেখে বললাম,আপনি রুমের লাইট অফ করলেন কেনো?”

“তাহলে কি লাইট অন রেখে ঘুমোবো।”

“আপনি কোথায় ঘুমোবেন।এই ঘরে।”

“এই ঘরে ছাড়া কোথায় ঘুমোবো,আজ না আমার বাসর রাত মিসেস বিহান।”

“বাসর ঘর মানে?”

“উনি ভ্রু উচিয়ে বললেন,বাসর ঘর মানেও জানিস না।ওকে ফাইন বলছি তোর সুবিধার জন্য সোহাগ রাত।যে রাতে বউ কে প্রচুর সোহাগ করতে হয়।কাম ফার্স্ট মিসেস বিহান।দ্রুত বিছানায় এসো।”

“অসম্ভব,আমি আপনার সাথে কিছুতেই এই খাটে ঘুমোবো না।কোনো বাসর টাসর হবে না।আপনি এমন সব কথা ও বলতে পারেন বিহান ভাই।আপনি এত অসভ্য কথা শিখেছেন।”

“দিয়া এই ঘরে এসেছি থেকে শুনছি তোর উদ্ভট সব কথা।তোর কিভাবে মনে হলো তোর সাথে আমি ফুলসজ্জা করবো।অনেক বার বাজে কথা বলেছিস আমি কিছুই বলি নি।আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত ঘুম নিড আমার।এখন আমি ঘুমোবো,আমাকে যদি একটুও ডিস্টার্ব করিস আরেক বার ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে আসবো তোকে।চুপচাপ ঘুমোতে মনে চাইলে ঘুমো মনে না চাইলে যা ইচ্ছা কর বাট ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!তুই যদি চাস বাংলা সিনেমায় নায়কাদের মতো ঘরের বাইরে গিয়ে ঘুমোবি তাহলে ঘুমোতেই পারিস।আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু সামনের যে শিউলি গাছ টা আছে ওখানে পা দুলিয়ে সাদা কাপর পরে কে যেনো রোজ রাতে বসে কাঁদে।দেখিস তোর ঘাড় ধরে যেনো তুলে নিয়ে না যায়।
আর রইলো সোফা ওখানেও ঘুমোতে পারিস,বা ফ্লোরেও ঘুমোতে পারিস।শিউলি গাছের ওইটার কথা ভুলে যাস না যেনো।এই বিছানাতেই শুধু আসে না সে।এবার তোর ইচ্ছা। গুড নাইট।”

গুড নাইট বলেই উনি কম্বল মুড়ি দিয়ে সুয়ে পড়লেন।

ডিসেম্বর মাস মানেই ঠান্ডার কোনো কমতি নেই কোনো দিকে।প্রচন্ড কাঁপছি আমি ঠান্ডায়।সোফাতেই সুয়ে পড়লাম কিছুই না ভেবে।কিছুক্ষণ পরেই মনে হচ্ছে শিউলি গাছের ভুত টা আমার আশে পাশে আছে।চোখ বুজলেই ভুতের কথা মনে হচ্ছে।সোফা থেকে এক লাফে উঠেই বিছানায় গেলাম।কম্বলের নিচে বিহান ভাই এর সাথে একদম মিশে সুয়ে পড়লাম।ভূতের কথা মনে হতেই উনার বুকে মুখ লুকালাম ভয়ে,আষ্টে পিষ্টে উনাকেই জড়িয়ে ধরলাম।

চলবে,,

(দীর্ঘ টাইম পরে গল্প দিলাম।কেমন আছেন আপনারা।)
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
১৩.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

উষ্ণ আবেশে ঠান্ডায় আর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে উনার বুকে মাথা গুজতে হলো আশ্রয়স্হল হিসাবে আমাকে।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে উনি ছাড়া বাঁচানোর মতো কেউ নেই আমাকে।চোখ অফ করে উনার বুকে মাথা লুকালাম আমি।প্রচন্ড ভয়ে কাঁপছি আমি এই ভয়ার্ত মুহুর্ত আর ঠান্ডায় কাঁপা আমিটা চুম্বকের মতো এটে গেলাম উনার বুকের সাথে।চুপটি করে পড়ে রইলাম কিছুক্ষণ উনার বুকে।মনে হচ্ছে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছি।উনার বুকে মাথা দিয়ে যেনো নিশ্চিন্ত হলাম আমি।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে উনি আমাকে আগলে ধরলে আমার ভয়টা মনে হয় কিছুটা কমে যেতো,ভয়ে চোখ ই খুলতে পারছি না আমি।অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না,শুধু চারদিক থেকে ভেষে আসছে ফুলের মিষ্টি সুবাস।ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতাল করে তুলেছে পুরা রুম।কিন্তু ভেষে আসা ফুলের ঘ্রাণ নিতে পারলেও অন্ধাকারে কোনো ফুল বা কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তবে পিঠের নিচে যে ফুলের পাপড়ি পড়েছে সেটা বোঝায় যাচ্ছে।ফুলের বিছানায় উনাকে আকড়ে ধরে আছি আমি।আম্মু কি তাহলে ঠিক ই বলেছিলো স্বামি হলো মেয়েদের নিরাপদ আশ্রয়স্হল।উনাকেই আষ্টে পিষ্টে ধরতে হলো আমাকে।চোখ বুঝলেই মনে হচ্ছে চারদিক থেকে ভূত প্রেত ধরতে আসছে আমাকে যতবার ভূতের ভয় পাচ্ছি ততবার আরো বেশী জোরে জড়িয়ে ধরছি উনাকে।উনার ভেতরে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছি।

এমন সময় আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা ঘটে গেলো।সহসায় এমন একটা ঘটনা ঘটলো মেঘ গর্জন এর মতো চমকে উঠলাম আমি।উনি উনার দুই হাতে উনার বুকের সাথে আলিঙ্গন করলেন আমাকে।উনার এই স্পর্শতে অন্যরকম এর অনূভুতি সৃষ্টি হলো আমার ভেতরে।এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো নিজের ভেতরে।উনার এই স্পর্শ টা আমার এত ভাল লাগে কেনো?এই সেই শিহরণ যে শিহরণ আমার অনেক পরিচিত।অনেক দিন আগে বিহান ভাই কে বলেছিলাম আপনি স্পর্শ করলে আমার এমন লাগে কেনো বিহান ভাই।এই সেই অন্যরকম শিহরণ যে শিহরণে নিজের ভেতরে ভাললাগা আর ভালবাসার সৃষ্টি করে।অদ্ভুত এক আকর্ষণ আর কাছে পাওয়ার টান।যা পৃথিবীর অন্য কোনো ছেলের স্পর্শতে আজ ও হয় নি আমার।উনার স্পর্শতে কেঁপে কেঁপে উঠছি আমি।
ক্রমশ উনার ভেতরে অন্যরকম কিছু মনে হলো আমার।এই অন্ধকারময় রুমে ফুলের বাসরে উনি আমাকে চমকে দিয়ে আমার ওষ্টে উনার উনার ওষ্টের আলতো স্পর্শ দিলেন।ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠলাম আমি।এই কম্পন সমুদ্রের ঢেউয়ের থেকে অধিক উথাল,পাথাল।উনার এই একটা চুম্বনে নিজের ভেতরে শুরু হলো অন্যরকম তোলপাড়।শরীরে বয়ে গেলো তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ।উনি ক্রমশ আরো কাছাকাছি চলে এলেন।উনার দুই ওষ্টদ্বার ধীরে ধীরে যেনো আসক্ত হচ্ছিলো,নেশাক্ত মনে হচ্ছিলো উনাকে।নেশাক্ত ভাবে গালে, মুখে চুমু এঁকে দিচ্ছেন।এত দিনে উনার মাঝে এই অদ্ভুত আচরণ আমি দেখি নি।আমি কোনো ভাবেই দম নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না।আবদ্ধ আছি উনার দুই হাতের শক্ত বাঁধনে। যেখান থেকে চাইলেও নিজেকে আর সরিয়ে আনতে পারছি না।এই মুহুর্তে উনাকে আটকাতেই হবে।উনি কন্ট্রোল এর বাইরে চলে যাচ্ছেন।

“উনাকে কোনরকম দম নিয়ে বললাম,এসব কি করছেন বিহান ভাই।আমি ভাবতে পারছি না এটা আপনি?”

“হ্যাঁ এটাই আমি পিচ্চি।ইওর লিগ্যাল হাজবেন্ড।”

“কেনো করছেন এমন?”

“ভালবাসি তাই?”

“আমাকে ভালবাসেন আপনি।”

“ভীষণ ভালবাসি,তুই, তোর এই চোখ তোর ঠোঁট, তোর হাসি, তোর অগ্নিচোখ, তোর রাগ এগুলো না দেখে আমি থাকতে পারি না।আমাকে ভীষণ টানে তোর এই কিচির মিচির ঝগড়া তোর দিকে।তুই ছাড়া প্রতিটি নিঃশ্বাস ই দীর্ঘ নিঃশ্বাস মনে হয় আমার।গালে চুমু দিতে দিতে বললেন তুই এত ছোট কেনো?কেনো বুঝিস না এই অবাধ্য ছেলেটা তোর কাছে এতটা বাধ্য কেনো?এই জেদী ছেলেটা ক্রমশ তোর কাছে পারাজিত হচ্ছে,প্রতিনিয়ত হচ্ছে।”

“আপনি কি ভুল ভাল বলছেন বিহান ভাই।এটা আপনি হতে পারেন না।কখনোই না।”

“তোকে ভালবাসি, এক পৃথিবী সমান ভালবাসি। এই পৃথিবীতে বড় একটা নোটিস লাগাবো।যেখানে লিখে রাখবো এই পিচ্চি টা আমার মানে আমার।এই পিচ্চিকেই লাগবে আমার।এই আনম্যাচিউর, কম বোঝা পিচ্চিকেই চাই আমার।পিচ্চির শহরে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ শহরে থাকবে শুধু আমার বসবাস।”

“আপনি সত্যি কি এসব বলছেন?”

“আমার সব কথা কেনো তোর বিশ্বাস হয় না। অন্ধকারে হাতড়িয়ে আমার আঙুল খুজে একটা রিং পরিয়ে আঙুলে চুম্বন দিয়ে বললেন,পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট হাতে রিং পরিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।”

বলেই উনি আমাকে আরো খানিক টা কাছে টেনে নিলেন।

“আমি হাতড়ে উনার ফোন পেয়ে, ফোনের আলো জ্বালাতেই সুদর্শন যুবকের মুখে আলো পড়লো।কম্বলের নিচে ইনোসেন্ট ফেস টা আমার গালে ঠোঁট ডুবিয়ে পাগলামি করছে।আমি ঠিক কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।ঘুমের ঘরে উনি এসব কি করছেন। উনাকে না আটকে দিলে এইসব অনর্থ ঘটলে পরে আমাকেই বকা দিবেন।”

“ফোনের আলো উনার চোখে ধরলাম,ফোনের আলো পড়তেই উনি চোখে খুলে তাকালেন।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,”দিয়া তুই এখানে। ”

“আমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম উনার চাহনি তে।এত সময় অসভ্যতা করে এখন ন্যাকামো করা হচ্ছে দিয়া তুই এখানে।হালকা একটু কেশে নিয়ে বললাম,কেনো আপনি মনে হচ্ছে জানেন না।”

“নাতো।তুই না সোফাতে ঘুমিয়ে ছিলি।”

যাক বাবাহ নিশ্চয়ই ঘুমের ঘরে করেছেন এসব।না হলে উনার এসব মনে থাকলে কি করতাম।

“কি করবো শীত লাগছিলো তো।এইভাবে নিজে আরাম করে ঘুমোচ্ছেন আর আমার মতো বাচ্চা মেয়েকে শীতে কষ্ট দিচ্ছেন।”

“দিয়া তোর মনে এই ছিলো তাহলে?আমি ডাকলাম ঘুমোতে না এসে আমি ঘুমোলে আমার ঘুমের ফায়দা উঠাইলি।আমি তো তাই বলি কোলবালিশ টা আজ এত সফট হলো কিভাবে?”

“দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না।আপনি কত অসভ্য সেসব জানতে বাকি নেই আমার।আমি কিভাবে ঘুমের ফয়দা উঠালাম।”

“এই যে লিপ কিস করে আমার লিপের ভার্জিনিটি নষ্ট করেছিস।এইভাবে জড়িয়ে ধরে কিস করা হচ্ছিলো।এইসবের মানে কি দিয়া।”

“আমার নামে মিথ্যা বললে এই মধ্যরাতে কিন্তু এই জেলার মানুষ এক জায়গা করে ফেলবো।একটু আগে কিসব করছিলেন।এইযে আমার হাতে এই রিং পরিয়ে কি কি বলছিলেন।অসভ্য লোক কোথাকার।”

“স্বপ্নতে শ্বশুরের মেয়ে এসছিলো তার সাথে সেই রোমান্টিক মুডে ছিলাম।আমি কিভাবে জানবো ঘুমের মাঝে তুই এসে সঙ্গ দিবি।তুই যে আমার সাথে রোমান্স করবি আমি কি জানতাম।এইসব তো তোর পূর্বপরিকল্পনা ছিলো যে আমাকে একা পেয়ে রোমান্টিকতার সাগরে পাড়ি জমাবি।শুধু শুধু মুখে মুখে আপনার সাথে ঘুমোবো না, বিয়ে মানি না এসব করার কি প্রয়োজন ছিলো।আমি তো জানি তুই কত ধুরন্ধর মহিলা।তার উপর এখন আবার বিবাহিত মহিলা তুই।ভয়ানক রকমের ঝগরুটে বিবাহিত ফাজিল মহিলা তুই।”

“আজে বাজে কাজ আপনি আমার সাথে করে আমার ই দোষ দিচ্ছেন।আপনি যেসব করেছেন আপনি বলতেই পারছি না লজ্জায়।”

“লিসেন দিয়া!আমি যা করার শ্বশুরের মেয়ের সাথেই করেছি।আমি ভেবেছি শ্বশুরের মেয়েই পাশে ঘুমোচ্ছে।সেখানে তোর মতো ভয়ানক দুম্বার মতো বিবাহিত মহিলা আসবে আমি কিভাবে জানবো।”

“আপনার রিং…..”

“সাট আপ দিয়া।জাস্ট সাট আপ।ফোনের লাইট অফ কর।হাউ ডেয়ার ইউ দিয়া।আমার ফোন তোর হাতে কেনো?এই ফোন ই যত সমস্যার মূলে।এখানে ঘুমোলে চুপচাপ ঘুমো।আর একটা কথা বললে বুঝবি বিহান কত ভয়ানক।”

আমাদের মাঝে কোল বালিস দিয়ে উনি পাশ ঘুরে সুয়ে পড়লেন।আর কোনো কথা বলার সাহস ই পেলাম না।বলতেই পারলাম না আপনার রিং টা নিন।যাক গে সকালে বলবো।সুয়ে পড়ে ভাবছি মানুষ টা কি অসভ্য।ছিঃছি নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে এসব ভাবেন উনি।আমার সাথে এসব কি করলেন উনি।ভাবতেই কেমন একটা লাগছে আমার।উনাকে দেখে কেউ বিলিভ করবে এই রষ কষ হীন গুরুগম্ভীর মানুষ এইভাবে চুমু ও দিতে পারে।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি উনি বিছানায় নেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ছয়টা বাজে।মারুফা খালার ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।খালা অনেক ক্ষণ ডাকাডাকির পর ও বিছানা ছাড়তে মন চাইছে না আমার।বাইরে থেকে বিহান ভাই রাগি মুডে বলছেন খালা এমনিতে না উঠলে ওয়াশরুম থেকে ঠান্ডা পানি এনে ওর গায়ে ঢেলে দাও।দেখবে ঠিক ই উঠবে।খালা আমি বাইরে অপেক্ষা করছি ও যেনো দশ মিনিটে নিচে চলে আসে।চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বললাম খালা এত সকালে ডাকছো কেনো?এ টাইমে এ বাড়ির কেউ এখনো ওঠে নি।তারপর আবার শীতকাল এখন।

মারুফা খালা বললো বিহান বাবা উঠতে বলেছে।

বাইরে শোনা যাচ্ছে মামি বলছে,বিহান আজ ওর প্রাইভেট এ না গেলে হয় না।

উনি রেগেই বলছেন,কেনো আম্মু আজ ওর কি?আজ কি চাঁদে অবতরণ করবে দিয়া।প্লিজ আম্মু এই পর্বটা যেনো অফ হয় এক গাদা মানুষ এসে দিয়ার সামনে বসবে আর এক গাদা প্রশ্ন করবে।কাল রাতে একবার প্রচন্ড ফেড আপ হয়েছি আমি।দিয়ার আনইজি লাগছে এই বিষয় গুলো।ইন্টারে প্রিপারেশণ ভাল না হলে ভাল কোথাও চান্স হবে না ওর।ওর এখন লেখাপড়ার সময়।এইসব আজেবাজে মহিলাদের যেনো বাড়িতে আর না দেখি যারা এসে উচ্চতা,গায়ের রং,যোগ্যতার বিচার করে।

পাঁচ মিনিট পরে দেখি বাইকে বসে বার বার হর্ন দিচ্ছেন উনি।

চলবে,,