গল্প:- #এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-১০
লিখা:- AL Mohammad Sourav
।
আজ আমার স্বামী তাঁর সবকিছু ছেড়ে আমার হাত ধরে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে এসেছে। আমার জন্য সৌরভ আজ এত বড় সিদ্ধান্ত নিবে আমি কল্পনা করতে পারছি না। সৌরভের বাবা মা ভাই বোন সবাইকে রেখে আমার হাত ধরে বাড়ী থেকে সবার সামনে দিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রাখছে সৌরভ। দুজনে রাস্থার পাশে দাঁড়িয়ে আছি কি করবে সৌরভ সেইটা চিন্তা করছে তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সুমি তোমাদের বাড়ীতে গেলে কোনো সমস্যা হবে?
সুমি:- সমস্যা হবে কেনো? বরং মা বাবা খুব খুশি হবে।
সৌরভ:- বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে গেলে ওনারা তো চিন্তায় পড়ে যাবে না?
সুমি:- কোনো চিন্তা করবে না। আমি বলবো হঠাৎ করে তোমাদের কথা মনে পড়ছে তাই তোমাদের জামাই নিয়ে এসেছে।
সৌরভ:- তাহলে এক কাজ করি তোমাকে তোমাদের বাড়ীতে কিছুদিনের জন্য দিয়ে তোমাকে দিয়ে আসি। আমি অন্য কোথাও একটা ফ্লাট ভাড়া করে তোমাকে নিয়ে আসবো।
সুমি:- সেইটা করা যায়।
সৌরভ:- ঠিক আছে চলো আমার সাথে।
সুমি:- আচ্ছা আমাকে দিয়ে কি আপনি চলে আসবেন?
সৌরভ:- হ্যা।
সুমি:- মানে? তখনি সৌরভ আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে।
সৌরভ:- দেখো আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি তোমার সাথে কোনো মজা করছি না। চলো আমার সাথে। সৌরভ কিছুটা রেগে গিয়ে একটা সি এন জি ডেকে আনছে। আমরা দুজনে উঠে বসেছি সৌরভ কোনো কথা বলছে না। আমার উপর পচন্ড রেগে আছে সেটা আমি বুঝতে পারতেছি। আমাকে সৌরভ বার বার বলেছে যা কিছু হোক সৌরভকে বলতে কিন্তু আমি সবসময় ওর কাছ থেকে লুকিয়ে গেছি। আমিও বা কি করবো সংসারে সবার সাথে সুসর্ম্পক রাখতে হলে সব কথা স্বামির কাছে বলা ঠিক না। শ্বাশুড়ির সাথে কত কথা নিয়ে টুকিটাকি ঝগড়া হবে তা যদি স্বামির কাছে বলি তাহলে তো আর সবার সাথে মিলে মিশে থাকা যাবে না। এর সাঝে আমাদের বাড়ীর সামনে চলে এসেছি। দুজনে নেমেছি সৌরভ ড্রাইভারকে টাকা দিছে। তখনি সৌরভ বলে। সুমি তুমি বাড়ীতে যাও আমি পড়ে আসতেছি।
সুমি:- আমি জানি আমার উপরে আপনি রেগে আছেন। আমার সাথে আমাদের বাড়ীর ভেতরে জেতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এখন আমার সাথে আপনাকে বাড়ীর ভেতরে জেতে হবে।
সৌরভ:- কেনো জেতে হবে?
সুমি:- কারণ বাবা মা জিজ্ঞেস করবে এত সকালে আমি একা একা কেনো এসেছি!
সৌরভ:- বলবে তোমাদের দেখতে ইচ্ছে হয়ছে তাই এসেছি।
সুমি:- তখন বাবা মা বলবে তাই বলে একা একা চলে আসবি! আর কত ধরনের কথাবার্তা বলবে। এমনকি আপনাকে আর আপনার বাড়ীতে ফোন করতে পারে।
সৌরভ:- তাহলে এখন আমার কি করতে হবে?
সুমি:- আপনাকে আমার সাথে বাড়ীর ভেতরে জেতে হবে। তখন বাবা মা কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি বলতে পারবো যে তোমাদের দেখতে ইচ্ছে হয়ছে তাই ওনি অফিসে যাবার সময় নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
সৌরভ:- ঠিক আছে চলো।
সুমি:- হ্যা চলেন। আমরা দুজনে বাড়ীর ভেতরে ঢুকেছি। আমাদের দেখে আম্মা কাছে এসেছে। আমার ছোট দুই বোন স্কুলে যাবার জন্য রেডি হয়ছে।
আম্মা:- বাবা সৌরভ এসো ভিতরে এসো।
সৌরভ:- মা আমি অফিসে যাবো। আপনাদের মেয়ে আপনাদের দেখতে চাচ্ছে তাই আমি নিয়ে এসেছি। সুমি তুমি কি আজকে যাবে নাকী দুই তিনদিন থাকবে। (আমি বুঝতে পারছি ওনি কেনো জিজ্ঞেস করছে তখন আমি বলেছি)
সুমি:- আমি এখন কিছুদিন থাকবো। আপনাকে ফোন করলে পরে এসে নিয়ে জায়েন।
সৌরভ:- ঠিক আছে তাহলে আমি যাই। তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- তা বাবা সৌরভ ঘরে যাও কিছু নাস্তা পানি খেয়ে তারপর অফিসে যাও।
সৌরভ:- না মা আমার সময় নেই। পরে আসবো তখন খাবো বলেই সৌরভ বেড়িয়ে গেছে। আমি বাড়ীতে আম্মার সাথে বসে গল্প করছি। আর ঐদিকে সৌরভ অফিসে চলে গেছে। সৌরভ মন খারাপ করে অফিসে ঢুকেছে তখন তার বস্ ডেকে পাঠিয়েছে। সৌরভ স্যারের রুমে ঢুকতেই বলে।
স্যার:- মিষ্টার সৌরভ এই নেন আপনাকে আমাদের আর দরকার নেই। এখানে আপনার ভাংতি মাসের বেতনটা দেওয়া আছে। আপনি দয়া করে আসতে পারেন।
সৌরভ:- স্যার আমার অপরাধ কি? আমি কি করেছি?
স্যার:- দেখুন মিষ্টার আপনার অপরাধ কিছুই না। তবে আমরা এখন আপনাকে রাখতে পারছি না। দয়া করে আপনি আসতে পারেন।
সৌরভ:- প্লিজ স্যার এমনটা বলবেন না। এখন আমি হঠাৎ করে কোথায় যাবো? আর কোথায় চাকরি খুঁজবো?
স্যার:- এসব কিছু আমি জানি না। সবকিছু উপর থেকে নির্দেশ এসেছে। আপনার কোনো আত্বীয় এই কাজটা করিয়েছে। প্লিজ দয়া করে আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না। আপনি এখন আসতে পারেন।
সৌরভ:- বুঝতে পারছি। তবে স্যার এর জন্য আপনাকে প্রস্তাতে হবে একদিন কথাটা বলেই। বেড়িয়ে গেছে সৌরভ। আজকেই বাড়ী থেকে বেড়িয়ে এসেছি আর আজকেই চাকরিটা চলে গেছে। এখন কি করবো? নিজের কাছে তো তেমন জমানো টাকা নেই যেইটা টাকা আছে তা দিয়ে বাসা ভাড়া আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে পারবো। তবে এর পরে কি করবো? যাক আল্লাহ ভরসা বলে হাটা দিলাম। কিছুটা হেটে আসার পর দোস্ত সাজুকে ফোন করেছি। সাজু ফোন রিসিভ করতেই ওকে বিস্তারিত সব খুলে বলেছি।
সাজু সব শুনে বলে।
সাজু:- আপদত একটা রুম আমি জোগার করে দিতে পারবো। তবে রুমটা ছোট আর বাথরুম আলাদা।
সৌরভ:- নাহ তা হয় কি করে? তুই আরেকটু ভালো রুম দেখ।
সাজু:- দেখ বর্তমানে তোর যে অবস্থা এখন এই রুমে আপদত কিছুদিন থাক। যখন চাকরি পেয়ে যাবি তখন একটা ফ্লাটে উঠে যাস কেমন? আর তাছাড়া ঐ বাড়ীতে শুধু দুইজন বৃদ্ধা থাকে। ওনাদের দুইটা রুম আছে একটা ভাড়া দিবে। যদি বলিস তাহলে আমি কথা বলতে পারি।
সৌরভ:- ঠিক আছে। তখন সাজুর সাথে গিয়ে দেখা করে ঐ রুমটা ঠিক করে নিলাম। আর দুজনে মিলে ঘরের কিছু জিনিস পত্র কিনেছি। নিজের কাছে খুব অসহায় লাগছে তবে মনের মধ্যে অন্য রকম ভালো লাগছে। দুই দিনে সুমিকে একদম ফোন করতে পারিনি। আস্তে আস্তে সুন্দর করে সংসারের সবকিছু গুচিয়ে নিয়েছি। আজ তিনদিন হলো বাড়ী থেকে কেউ আমাকে ফোন করেনি আমিও ফোন করিনি কাওকে তবে আজ একটা চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছি। চাকরিটা আমার হয়ছে তবে বেতন খুব কম যা দিয়ে চলতে খুব কষ্ট হবে আর তাছাড়া এমন কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না তাও আপদত রাজি হয়ে গেলাম। এখন বিয়ে করেছি বেকার থাকা একদম বোকামি ছাড়া কিছুই হবে না। আর এখন যে টাকা আছে যদি বেকার থাকি তাহলে বসে বসে টাকা গুলি নষ্ট করে হাত একদম খালি হয়ে যাবে। তার চাইতে ভালো হবে এই চাকরিটা আপাদত করি আর ভালো কোথাও চাকরির খুঁজ রাখি। আজ চারদিন পর সুমিদের বাড়ীতে গেলাম। আমি ঘরের ভেতরে ঢুকতেই সুমি জড়িয়ে ধরেছে।
সুমি:- আপনি এই চারদিন আমাকে ছেড়ে থাকছেন কি করে? সৌরভ শুধু বলেছে।
সৌরভ:- সুমি রেডি হয়ে যাও আমরা এখুনি আমাদের বাসাতে যাবো।
সুমি:- আবার আপনাদের বাড়ীতে যাবেন?
সৌরভ:- নাহ আমরা আলাদা ভাড়া বাসাতে থাকবো।
সুমি:- আমার জন্য আজ আপনাকে এতটা কষ্ট করতে হচ্ছে।
সৌরভ:- বোকার মত কথা বলে কি হবে? এখন চলো আমরা আমাদের নিজেদের বাড়ীতে যাই। যেখানে আমাদের মাঝে ঝগড়া লাগানোর কেউ থাকবে না। যেখানে আমাদের মাঝে সন্দেহ ঢোকানোর কেউ থাকবে না। এখন চলো আমাদের বাসাতে যাই।
সুমি:- ঠিক আছে চলেন। তবে আম্মা অনেক কিছু রান্না করে রাখছে আপনার জন্য। আসেন আগে খেয়ে নিবেন। তখন আমরা দুজনে খেয়ে নিলাম। তারপর বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম। আমরা দুজনে ছোট একটা ঘরের ভিতরে এসেছি। আমি ঘরটার চারদিকে তাকিয়ে দেখছি আর মনে মনে ভাবছি আমার জন্য আজ সৌরভ এমন রুমে থাকতে রাজি হচ্ছে। আমি ওর জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করে দিবো। খুব ভালোবাসবো খুব।
সৌরভ:- সুমি ঘরটা তোমার পছন্দ হয়ছে?
সুমি:- হ্যা খুব পছন্দ হয়ছে। তখন আমাকে নিয়ে রান্না ঘর আর বাথরুমটা দেখিয়ে দিছে। আমি এসব দেখে সৌরভের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কি করে থাকবে ওনি? আচ্ছা ওনি এমন ভাবে সারাটা জীবন পাশে থাকবে তো! মনের ভিতরে হাজারো প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
সৌরভ:- সুমি তাহলে আজ থেকে এইটা আমাদের ঘর আর এইটা আমাদের সংসার!
সুমি:- হ্যা।
সৌরভ:- আচ্ছা তুমি একা থাকতে কোনো সমস্যা হবে না তো? আর যদি সমস্যা হয় তাহলে পাশের ঘরের আঙ্কেল আন্টি আছে ওদের সাথে বসে গল্প করো কেমন। আমি হ্যা বলেছি। তখন সৌরভ আমাকে ঘরে রেখে একটু বাহিরে গেছে। প্রায় চার ঘন্টা পরে এসেছে। হাতে দুইটা ব্যাগ তবে ব্যাগ গুলি খুব চেনা চেনা লাগছে দেখে মনে হচ্ছে সৌরভ ওদের বাড়ীতে গেছিলো। আর সেখান থেকে ব্যাগ গুলি নিয়ে এসেছে। ঘরের ভিতরে ঢুকতেই জিজ্ঞেস করি।
সুমি:- এই ব্যাগ গুলি কোথায় পেয়েছেন?
সৌরভ:- কোথায় আবার আমাদের বাড়ী থেকে গিয়ে নিয়ে এসেছি। আমাদের কাপড় গুলি তো ওদের কোনো কাজে আসবে না তাই নিয়ে এসেছি। এই যে নাও তোমার ব্যাগ আর এইটাতে আমার কাপড় আছে।
সুমি:- মা আপনাকে থাকতে বলেনি। বাড়ীতে যাবার জন্য বলেনি?
সৌরভ:- হ্যা বলেছে। তবে তোমাকে ডির্ভোস দিতে হবে। এখন আমি তো তোমাকে ডির্ভোস দিতে পারবো না তাহলে যাবো কি করে! আচ্ছা এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করোনা। এখন আমরা আমাদের মত করে সংসার করবো। সৌরভ আমাকে জড়িয়ে ধরে আর ছোট ছোট আদর করতে থাকে। আজ অনেকদিন পরে মনে হচ্ছে আমাদের মাঝে খুব ভালো একটা সময় গেছে। আমি নিজে থেকে কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সৌরভ আমাকে বলেছে কিন্তু তাও আমি রাজি হয়নি। এখন আমার একটা চিন্তা আমাদের বেবিটাকে সুস্থমতে দুনিয়াতে কিরে আনবো। এখন সৌরভ আমাকে আগের চাইতে বেশী আদর যত্ন করে খুব বেশী যত্নশীল হয়ছে আমার প্রতি। এখন আমাদের মাঝে খুব ভালোই যাচ্ছে দেখতে দেখতে চার মাস চলে গেছে। আমার প্রেগন্যান্সির সারে পাঁচমাস হয়ে গেছে।
সুমি:- আপনার কি একটু সময় হবে আমাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবার জন্য?
সৌরভ:- আমার হাতে তো সময় নেই তবে আমি তোমার মাকে ফোন করে বলেছি ওনি তোমাকে নিয়ে যাবে।
সুমি:- ঠিক আছে। দুজনে ঘুমিয়ে থাকলাম সকালে উঠে নামায পড়ে সৌরভ হাল্কা নাস্তা করে বেড়িয়ে গেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে একদম রেডি হয়ে বসে মাকে ফোন করবো তখনি দেখি কেউ একজন দরজা টুকা দিছে। আমি গিয়ে দরজাটা খুলেই দেখি আমার শ্বাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
।
চলবে,,,