এল এ ডেইস পর্ব-২২+২৩

0
163

#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২২
লেখনী মাহীরা ফারহীন

মাহীনের বাড়ির গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রায়েদ ও মাহীন। কড়া রোদ উঠেছে। তবে ওরা বাড়ির বাহিরের গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে। তিরতির করে গাছের ঝাকড়া ডালপালা গলে বাতাস বয়ে চলেছে। মাহীন ভ্রু কুঁচকে বলছে, ‘কিন্তু আমি তোমার সাইকেলে বসে কিভাবে যেতে পারি?’
রায়েদ গাঢ় কন্ঠে বলল, ‘দেখো তুমি হাঁটতে তো পারছো, কিন্তু সাইকেল চালানোর মতো অবস্থা নেই তোমার। আর এমনিতেও তোমার সাইকেল স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পর সেটা বাসায় আনবে কে? তাই আমার সাইকেলে করে গেলেই ভালো না?’

মাহীন তবুও দ্বিধা নিয়েই আলতো করে সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। বলল,’হুম তোমার কথায় যুক্তি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আমাকে আবার ফেলে দিও না যেন নাহলে এবার পা ভেঙ্গেই যাবে।’

রায়েদ সাইকেলে বসে বলল, ‘তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো মিস ফারুকী।’ মাহীন একদিকে পা ঝুলিয়ে ওর পেছনে উঠে বসল। মাহীন আলতো করে রায়েদের বাহু ধরে রেখেছে। রায়েদ বলল, ‘শক্ত করে ধরে বসো। পরে পড়ে গেলে আবার আমি এটেমট টু মার্ডার কেসে ফেঁসে যাবো।’ মাহীনের মিনি স্যুটকেসটা সাইকেলের পেছনে ব্যাগ আটকানোর হুকে খুবই কষ্টে আটকেছে। মাহীন এবার আরেকটু শক্ত করে রায়েদের বাহু ধরে বসল।
এই কড়া রোদে হঠাৎ শরীরে কাটা দিয়ে উঠল। বুকের ভেতর বেগতিক ভাবে হৃৎস্পন্দন হচ্ছে। মাহীন ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে চুপচাপ কাঠ হয়ে বসে রইল। রায়েদ সাইকেল চালাতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও খুবই দ্রুত গতিতে সাইকেল চালাতে লাগল। বাতাস কেটে সাই সাই করে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা। এইসব নেইবারহুডগুলো সাধারণত ওয়ার্কিং আওয়ার ছাড়া শান্তিপূর্ণ ও নির্জন থাকে। রাস্তাঘাটে কদাচিৎ দু একজন পথচারী চোখে ধরা দেয়। মাহীন ভীত কন্ঠে বলল, ‘ওহ মাই গড! তোমার সাথে সাইকেলে চড়ে কতজন এক্সিডেন্ট করেছিলো একবার বলো তো?’

রায়েদ মুচকি হেসে বললো,’হ্যা একবার এক্সিডেন্ট তো হয়েছিলো কিন্তু সেবার রাবিত সাইকেল চালাচ্ছিল এবং আমি বসে ছিলাম।’

মাহীন শুকনো কন্ঠে বলল, ‘আস্তে চালাও না। আমি সদ্য সাইকেল এক্সিডেন্ট করেছি।’

‘চিন্তা করো না। আমি সাবধানেই চালাচ্ছি। এবং দ্রুত চালাচ্ছি কারণ আমাদের সময় মতো স্কুলে পৌছুতে হবে। সময় নেই হাতে।’

মাহীন আর কিছু বললো না। মনে মনে আয়াতুল কুরসি পরতে লাগল। আরোও পাঁচ মিনিটের মাথায় ওরা স্কুল পৌঁছে গেল। দেখা গেল স্কুল গেটের সামনে তিনটা হলুদ বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাসের চারিদিকে ছাত্র ছাত্রীদের ভিড়। মাহীন ও রায়েদ কে একই সাথে আসতে দেখে অনেকেই অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। হৈ-হুল্লোড়টা বোধহয় একারণেই একটু বেরে গেল। এখানে প্রচুর চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে। বাসও প্রায় ভরে গিয়েছে। বাসের কনডাক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন ওদেরই ক্যামিস্ট্রি টিচার মি.ডিউইট। তিনি বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে শেষ মুহূর্তে মাহীনের স্যুটকেস বাসে তুলে দিতে সাহায্য করলেন। কড়া রোদ বাইরে। আকাশ পরিষ্কার। অতি পাতলা পেলব সাদা মসলিন কাপড়ের মতো মেঘরা ভেসে চলেছে। রায়েদ বলল,’তুমি বাসে উঠে যাও। এই বাসেই তোমার ফ্রেন্ডরা আছে। আমি আসছি।’ মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। তারপর সামনে গিয়ে বাসে উঠে পরল। মাহীন বাসে প্রবেশ করতেই পেছন থেকে জেনেট চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ওহ মাই গড! দেখো মাহীন অবশেষে ঠিকই এসেছে!’ জেনেটের চিৎকারে বাসে উপস্থিত সকলেই গল্পগুজব হইচই থামিয়ে দিয়ে সামনে দৃষ্টি ফেরাল। সাইলোহ মাঝে দাড়িয়ে থাকা সকলকে প্রায় ঢাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছুটে এসে মাহীনের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। বাসের ভেতর মেঝে থেকে আরম্ভ করে সিলিং সবই হলদেটে রঙের। ডান পাশের জানালা চুইয়ে রোদ এসে পরছে মেরুন রঙা সিটে। সাইলোহ উৎকন্ঠিত গলায় বলল,
‘তোমার ঘটনাটা কী? রায়েদ নিতে গেল আার তুমি এক নিমিষেই সুস্থ হয়ে গেলা?’

লিও ভ্রু উঁচু করে বলল, ‘ওউ ব্যাপারটা কোয়াইট ইন্টারেস্টিং।’

ক্যারোল উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,’ওয়েল ওয়েল এট লিস্ট তুমি আমাদের সাথে পিকনিকে যাচ্ছো। এখন আর কোনো কিছু ইনকমপ্লিট লাগবে না।’
মাহীন কিছু বলতে যাচ্ছিল তবে মাঝখান থেকে র‌্যবিট পেছন থেকে এসে বলল, ‘হেই! ওফ ভাই কখনো তো কিছু কাজের কাজ করেছে। বাই দ্যা ওয়ে তুমি ভাইয়ের ওপর কেনো রাগ করেছিলা?’
মাহীন এতক্ষণ দৃঢ় কন্ঠে বলল, ‘ওফ! একটু থামো তোমরা! আর আমি কারোও ওপর রাগ করে ছিলাম না। আমি তো রায়েদ আসার আগেই সুস্থ বোধ করছিলাম এবং ভাবছিলাম আসব। আর তখনই দেখি রায়েদ এসে হাজির।’ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বিরশ ভাবে বলল। ওরা সকলেই বাসের পেছনের দিকের সিটগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সবার পেছনের সিটে একটা বড় সাউন্ড বক্স রাখা। মাহীন এর পূর্বে কখনো স্কুল বাসে উঠেনি। লিম জু বলল, ‘ওয়েল আমরা এতক্ষণ ধরে আলোচনা করে যেই কনসেপ্টটা বের করেছি ওটা জেনেটের বলার খুব ইচ্ছা। যেহেতু ব্যাপারটা ওর মাথা থেকে বেরিয়েছিল।’

‘কিসের আলোচনা? আর কিসের কনসেপ্ট?’ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল মাহীন।

সাইলোহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, ‘আবারও ও ক্রিন্জি ওয়াটপ্যাড স্টোরি পড়া শুরু করেছে।’
জেনেট সাইলোর ওসব কথা তোয়াক্কা না করে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, ‘তো আমরা আলোচনা করে যেই বিষয়ে এসে একমত হয়েছি তা হলো রায়েদ মাদিহ তো রায়েদ মাদিহ। সবাই জানে ও কেমন। বাট! ও তোমার জন্য দুই দুইবার তোমার বাড়ি গেল একবার তোমাকে দেখতে এবং আরেকবার তোমাকে নিতে।’
মাহীন এখনো ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে রয়েছে একটা সিটে বসে। কিছুটা আচ করতে পারছে ওরা কী বলতে চাচ্ছে। তবুও না বোঝার ভান করে বলল, ‘তো?’
র‌্যবিট চোখের মণি ঘুরিয়ে বলল, ‘তো এদের মনে হয় ভাই নাকি তোমাকে পছন্দ করে। সিরিয়াসলি আই কান্ট বিলিভ দিজ!’

মাহীন উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলল, ‘ওয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ! তোমরা বারবার ঘুরে ফিরে একই কথায় কেনো এসে আটকায় যাও? আমাদের কেনো একে-অপরকে পছন্দই করতে হবে? আমি তো বুঝলাম না!’

নায়েল বলল,’ওয়েল দেখো দেখো এটা কিন্তু পুরো জেনেটের কনসেপ্ট। আমরা কিছু করিনি।’

লিম জু বলল, শুধু তাই নয়। জেনেট তরকারি বসিয়েছে এবং ক্যারোট মসলা ঢেলে তরকারিটাকে সুস্বাদু বানিয়েছে।’

ক্যারোল ইতস্তত করে বলল, ‘আমি অনেক রিস্ক নিয়ে কথাটা বলছি। তবুও বলছি যে আমি যতটুকু শুনেছি রায়েদ সম্পর্কে। ও তোমাকে পছন্দ না করলে ও এত কিছু কেন করল?’

লিও বলল,’দেখো দেখো জেনের প্রেডিকশন কিন্তু এতটাও ভুল হয় না। বেশ কয়েক বছর আগে যখন আমরা রিলেশনে ছিলাম না, ও নায়েলকে বলেছিল যে ওর মনে হয় আমি ওকে পছন্দ করি। এন্ড ইট টার্নড আউট টু বি আমি একচুয়েলি ওকে পছন্দ করি। সি?’

র‌্যবিট উচ্চস্বরে বলল,’থামো! থামো! থামো! আমিহ বারিত মাদিহ, রায়েদ মাদির ভাই এখানে উপস্থিত থাকতে তোমরা নিজেদের মতো দুনিয়ার প্রেডিকশন করতে পারো না। আমি ওর ভাই। আমি ওকে ভালো করে চিনি। এন্ড লাইক সিরিয়াসলি ভাই অল্প কয়েকদিনের সাক্ষাতেই কাউকে পছন্দ করে ফেলবে না। এন্ড ভাই যা করসে সেটা বন্ধুত্ত্বের স্থান থেকে করসে।’

মাহীন সঙ্গে সঙ্গে তীব্র কন্ঠে তাল মিলিয়ে বলল, ‘হ্যা আমিও সেটাই বলতে চাচ্ছিলাম। আমিও যাই করসি বন্ধুত্বের স্থান থেকেই করসি।’

জেনেট কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই রায়েদ বাসে উঠলো এবং সব হইহট্টগোল নিমিষেই থেমে গেলো। একমুহূর্তের জন্য কারোও মুখে কোনো রা নেই। রায়েদ ভ্রু কুঁচকে তাকাল এবং ভাবল, কি ব্যাপার আমি আসতেই এরা সবাই থম মেরে গেলো কেন।

মাহীন ফিসফিস করে বলল, ‘স্বাভাবিক আচরণ করো না তোমরা। এমন স্ট্যাচু হয়ে গেলা কেন?’

লিম জু ইতস্তত হাসি দিয়ে বলল,’হেই রায়েদ।’

তারপর ধীরে ধীরে আবার সকলে যে যার যার সাথে কথা বলা শুরু করল। তবে বারবার সকলেই কথার মাঝে আড়চোখে রায়েদের দিকে তাকাচ্ছে। বোধহয় আশা করছে এই ছেলেটাকে ঘিরে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেও যেতে পারে।রায়েদ বামের দ্বিতীয় সারিতে বসতে যাচ্ছিল তখনই র‌্যবিট ছুটে গিয়ে ওর পাশে দাঁড়াল। উৎফুল্লতার সঙ্গে তুর্কিশ ভাষায় বলল,
‘ভাই আমি সামনে বসবো না। চলো পেছনে বসবো আমরা।’
রায়েদ এমন ভাবে ওর দিকে তাকাল যেন ও বদ্ধ উন্মাদ। টার্কিশ ভাষায়ই উত্তরে বলল, ‘তোর যদি এক টেবিল চামচ পরিমাণ কমন সেন্স থাকত তাহলে আমাকে পেছনে বসতে বলতি না। এখনই দেখতে পাচ্ছি পেছনে একটা বিশাল সাউন্ড বক্স এনে রেখেছিস। ওখানে কি হবে আমার ভালো করে জানা আছে।’

র‌্যবিট অনুনয়ের স্বরে বলল,’না প্লিজ ভাই। এই সামনে বসে আমি কোনো মজা করতে পারবো না। আমার পেছনেই বসা লাগবে। আর তোমাকেও ওখানেই বসতে হবে। আমি বলছি বেশি ডিস্টার্ব করবোনা।’ রায়েদ বিরক্তিতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

লিম জু মাহীনের কাঁধে মাথা রেখে বলল, ‘তোমার কি মনে হয় রায়েদ বেচারা র‌্যবিটকে শাসাচ্ছে?’

‘কিভাবে বুঝবো? ওরা তো টার্কিশ ভাষায় কথা বলছে।’
বলল মাহীন।

সাইলোহ টিটকারির স্বরে বলল,’তোমাদের ওদের দেখে কি মনে হচ্ছে, ও র‌্যবিটকে আদর করে বলছে, ছোট্টো ভাই চকলেট খাবা?’ নায়েল ও লিও হেসে উঠল। জেনেট মুখ ফুলিয়ে বসেছিল। নায়েল বলল, ‘মেনে নাও জেনেট। ওরা যা বলছে মেনে নাও।’

লিও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল জেনেট ওর আগেই বলল, ‘দেখো আমার প্রেডিকশন যদি সত্যি না হয় তাহলে আমি লিওর গার্লফ্রেন্ড না।’
লিও প্রথমে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তারপর ওর চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল। চোয়াল ঝুলে পরল। ওখানে উপস্থিত সকলেই বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে ওদের তাকিয়ে আছে। র‌্যবিটও আবার এখানে এসে দাড়িয়েছে। লিও বলল,’ওহ মাই গড! ওহ মাই গড! দ্যাটস টু অফেন্সিভ!’

সাইলোহ বিরক্ত কন্ঠে বলল, ‘বলার আগে ভেবেও দেখে না কি বলছে।’

ক্যারোট উত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘ওহ মাই গড! যাত্রার শুরুতেই ব্রেকআপের সুচনা! এটা অমঙ্গলের লক্ষণ!’

র‌্যবিট ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে বলল, ‘বাকি সব বুঝলেও এই অমঙ্গলের ঘটনাটা আমি এখনো বুঝলাম না।’ তখনই আরোও দুই তিনজন সহ ওদের পাঁচজন টিচার মি.ডিউইট, মিস লিভলি, মি.বেনজেলো,মিস স্ক্যাম্বিও, মি.কার্টার বাসে উঠলেন। প্রতিটা বাসে ষোল থেকে বাইশ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে দুইজন করে টিচার রয়েছে। আজ যেই বাসগুলো যাচ্ছে এগুলো সব ফ্রেসম্যান,সোফামোর,জুনিয়র এবং সিনিয়রদের। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তার পরের দিন পিকনিকে যাবে। বাসে মোট সকল ছাত্র ছাত্রী উঠেছে কিনা তা যাচাই করা হয়ে গেলে বাসের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। এখনই বাস ছাড়বে। অবশেষে রায়েদকে বিরক্ত করতে করতে রাবিত পেছনের বামদিকের সিটের আগের সিটে এনে বসিয়েছে। মাহীন ডান দিকের সারির পেছনের সিটের দুই সিট আগে লিম জুর সাথে বসেছে। ওর পেছনে নায়েল ও লিও। পাশে বাম দিকে ক্যারোল ও সাইলোহ। এবং জেনেট জোড় করে রাবিতের ফ্রেন্ড লেক্সির সাথে পেছনের সিটে সাউন্ড বক্সের সাথে লেগে বসেছে। প্রফেসররা সকল ছাত্র ছাত্রীদের স্বাগতম জানালেন।এবং দশটার বাস প্রায় দশটা চল্লিশে যাত্রা শুরু করল। র‌্যবিট পেছনে দাঁড়িয়ে সাইন্ড বক্স সেটাপ করছে। রায়েদ ওর ব্যাগ থেকে একটা ঔষধের পাতা বের করছে দেখে র‌্যবিট জিজ্ঞেস করল, ‘কি ব্যাপার ভাই? বাসে উঠতে না উঠতেই তোমার মাথা ব্যথা?’

রায়েদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,’না মাথা ব্যথা নেই।’

‘তাহলে?’

‘আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

র‌্যবিট আর কিছু বলল না। একদম সামনের দিকে বিল মুরেই ওর দুইজন বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বসেছে। বাসের পরিবেশ এখন পর্যন্ত শান্তশিষ্ট রয়েছে। কিন্তু আধা ঘণ্টা পার হতে না হতেই র‌্যবিট সাউন্ড বক্সে হাই ভলিউমে ওয়ারিয়ার্স গানটা চালু করল। রায়েদ বিরক্তিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। প্রথম গানটা শেষ হতেই ‘আমেরিকান কিডস’ গানটা শুরু হলো। এতেই সকলে লাফ দিয়ে উঠলো। কোথা থেকে যেন একগাদা উদ্যম এসে জড়ো হলো সকলের মাঝে।
প্রথমেই সামনের দিকের কেউ কোরাস গুলো গাইল। এর পর তাল মিলিয়ে অনেকেই গাওয়া শুরু করল,
Yellow dawn school bus kickin’ up red dust
Pickin’ us up by a barbed wire fence
MTV on the RCA, no A/C in the vents.
দুই পাশের সারিতেই একেক পর এক সিটগুলো থেকে পরপর প্রতিটা লাইন গেয়ে আসছে। জেনেট গাইছে,
We were Jesus saved me, blue jeans baby
Born in the USA. এবং সকলে তুড়ি বাজাচ্ছে আবার তালি বাজাচ্ছে। বাসে রীতিমতো হইচইয়ের ঝড় বয়ে চলেছে। সামনে বসা টিচাররাও কিছু বলছেন না। মাহীন উঠে দাঁড়িয়ে গাইল, ‘Trailer park truck stop, faded little map dots
New York to LA.

র‌্যবিট কিছুক্ষণ পর আবার চিৎকার করে বলল,
‘উই আর আমেরিকান কিডস!’

লিও গাইল, ”Sister got a boyfriend, daddy doesn’t like.”
তখনই জেনেট বিরশ কন্ঠে বলল, ‘তোমরা জানলে অবাক হবা আমার ভাই অল দ্যা টাইম এই দুটো লাইন গেয়ে আমাকে খেপাতে থাকে।’
মাহীন হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘মানে? কেন?’
লিও বলল, ‘কারণ জেনের ভাইয়ের সিসটারের বয়ফ্রেন্ড আমি। এবং দূর্ভাগ্যবশত জেনের বাবা আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না।’

তারপর রাবিত দ্যা ঈগলের ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া চালু’ করল। এটাতেও সকলেই সুর মিলিয়ে গাইতে লাগলো। সকলেই উচ্চস্বরে কয়েকটা লাইন গাইল। গলার স্বর বেশ ভালোই ওর। মি.ডিউইট মাঝের প্যাসেজ দিয়ে হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলেন,
‘তোমাদের মধ্যে কে কে অন্যান্য স্টেট থেকে আছো? আর কে কে পিওর ক্যালিফোর্নিয়ান?’

সামনের দিকের অনেকেই গানের মাঝ দিয়ে উচ্চস্বরে উত্তর দিলো। অনেকেই বিভিন্ন স্টেট থেকে এখানে এসেছে। জেনেট বলল, ‘আমি ফিলাডেলফিয়া থেকে! বাট যখন থেকে সবকিছু মনে পরে তখন থেকে এখানেই থাকি।’

নায়েল বলল, ‘আমি পিওর ক্যালিফোর্নিয়ান।’
সাইলোহ বলল, ‘আমি ম্যানহাটেন থেকে, ওর সিম্পলি নিউইয়র্কার।’
লিম জু বলল, ‘ওয়েল দেখো আমি একচুয়েলি কোনো স্টেটেরই না। আমি বেইজিংয়ে জন্মেছি এবং তার কয়েক বছর পরই ডিরেক্ট ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসি। তখন থেকে এখানেই থাকি।

ক্যারোল বলল,’আমি ছোট বেলায় ফ্লোরিডায় ছিলাম। এরপর মোট আটটা স্টেট পাল্টেছি। এন্ড এই বছরই এখানে মুভ করেছি।’ এই পর্যায়ে এসে সকলেই বেশ অবাক হলো ওর কথা শুনে।

মাহীন বলল, ‘আমিও কোন স্টেট থেকেই না। আমি বাংলাদেশ থেকে। এই কয়েকমাস আগে এখানে মুভ করেছি।’

রাবিত বলল, ওয়েল আমি পিওর আমেরিকান তো না। বাট জন্ম থেকে ক্যালিফোর্নিয়াতেই আছি।’ ওদের এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল। দুপুর দেড়টার দিকে লাঞ্চ ব্রেক এর জন্য বাস থামলো ‘লা কোপিন’ নামক একটি ফুড ভিলেজে।
এই জায়গাটা মরু অঞ্চল। হাইওয়েরের দুই পাশেই দূরদূরান্ত পর্যন্ত শুধু মরুভূমি দেখা যায়। মরুভূমির বাদামি বালুর মাঝে প্রচুর মরু ঘাস দেখা গেল। এরই মাঝে দূর থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ফুড ভিলেজটা। রাস্তার পাশে কাঠের বড় ব্যানারে লেখা ‘লা কোপিন’। কিছুক্ষণ পরপর বাতাস হলেই প্রচুর বাদামি বালু কুন্ডলী পাকিয়ে উড়ছে। এখনো ওদের অনেকটা পথ যাত্রা করতে হবে। এখান থেকে এরিজোনা হয়ে নিউ মেক্সিকো তারপর টেক্সাস হয়ে আরকানসাসে পৌঁছবে। বিশ মিনিটের মধ্যে লাঞ্চ সেরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র টুকটাক কারোর লেগে থাকলে তা কিনে নিয়ে আবার বাসে উঠে পরল। সকলে এবার সকলে বেশ ক্লান্ত। ফলে গান বাজনা না করে অনেকেই চুপচাপ নিজের মতো বসে ফোনে বুদ হয়ে আছে বা গান শুনছে। অনেকে বইও নিয়ে এসেছে। যদিও এই আমলে পিডিএফ এই বই পাওয়া যায়। তবুও হাতে ধরে বই পড়ার এবং পিডিএফ এ বই পড়ার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ থাকে। বারিত রায়েদের পাশে বসে থেকেই পেছনে মুখ ঘুরিয়ে লেক্সির সাথে গল্প করছিল। এবং রায়েদ মুখের সামনে বই মেলে ধরে আছে বলে ওকে দেখাই যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর রাবিত পাশে মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলে,’আচ্ছা ভাই শোনো?’

রায়েদ মুখের সামনে থেকে বই না সরিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘হুম।’

‘মাহীন কি একবারও জিজ্ঞেস করেনি তুমি কেনো ওকে নিতে গিয়েছিলা? অথবা তুমি ওর না যাওয়ার ব্যাপারটা কিভাবে জানলা?’

রায়েদ মুখের সামনে থেকে বই সরিয়ে বলল, ‘হ্যা জিজ্ঞেস করেছিল তবে আমি ওর প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গিয়েছি।’

‘আর মাহীন তোমাকে এত সহজে ছেড়ে দিলো? তবে আমার মনে হচ্ছে ও আমাকে এসে ধরতে পারে এসব ব্যাপারে।’

‘হ্যা তা অবশ্য ঠিক। যদিও তুই তো আবার কোনো কথাই পেটে রাখতে পারিস না। আর আজকাল দেখছি ওই দলের সাথে তোর ভালোই সখ্যতা হয়েছে।’

র‌্যবিট ইতস্তত হাসি দিয়ে বলল, ‘তা ঠিক। ওদের সাথে ঘুরে বেড়াতে বেশ মজাই লাগে এন্ড ওরাও কিছু মনে করেনা। আর ওদের সাথে আজকাল গল্পও করা যায়। এই যেমন আমার সামনেই তো কী প্রেডিকশনটাই না করল তোমাকে আর মাহীন কে..বলতে বলতে মাঝপথে থেমে গিয়ে জ্বিব কামড়াল। তারপর মনে মনে ভাবল, ইয়া আল্লাহ! আসলেই আমার পেটে কোনো কথা থাকে না।’
রায়েদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমাকে আর মাহীনকে নিয়ে কী?’

র‌্যবিট ইতস্তত করে বললো, ‘উম আসলে..আহ তুমি আর মাহীন…এতটুকু বলে থামল।
রায়েদ পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ‘আরে বলবি তো কী? আমি আর মাহীন কী?’

র‌্যবিট এবার বলল,’মানে এই কিছুদিনে তোমাকে আর মাহীনকে নিয়ে যা যা ঘটেছে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করছিল।

রায়েদ বলল,’হুম ভালোই কহিনী বানালি। প্রেডিকশনের ব্যাপারটা কী? এখন সত্যি করে সব বল।’

র‌্যবিট দ্বিধান্বিত দৃষ্টিতে চাইল। ভাবল, ওফ ভালোই ফাঁসা ফেঁসেছি তো। এখন ভাইকে কাটাই কিভাবে?’ ভাবতে ভাবতেই বলল,’প্রেডিকশন হচ্ছে তোমার এবং মাহীনের বন্ধুত্ত্ব নিয়ে।’

রায়েদ চোখ ছোট করে শুধালো, ‘ওহ তাই না। আমি তোকে ভালো করে চিনি। তুই এখনো আসল কথা মুখ থেকে বের করিসনি।’

র‌্যবিট কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই বাস সজোরে ঝাঁকি খেল। এবার রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘আচ্ছা ভাই ঠিক আছে। আসল কথা হলো ওদের মনে হয় যে..তুই সম্ভবত মাহীনকে পছন্দ করিস। এক টানে কথাটা বলেই অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাল। রায়েদ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। তারপর হেসে ফেললো। বলল,
‘কী? আমি মাহীনকে পছন্দ করি? এমন চিন্তাও তোদের মাথায় কিভাবে আসে বুঝলাম না।’

রায়েদ কে হাসতে দেখে রাবিতও বিচলিত হেসে বললো, ‘আমার মাথায় নয়। ওদের মাথায়। বললাম না এটা ওদের প্রেডিকশন ছিলো।’

রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘তোদের আসলেই গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল অবস্থা।’

র‌্যবিট বলল,’আরেহ তুমি শুনলে অবাক হবা যে জেনেট ইতোমধ্যেই বাজি ধরেছে যে ওর প্রেডিকশন যদি সত্যি না হয় তাহলে ও আর লিওর গার্লফ্রেন্ড না।’

রায়েদ বলল,’হুম যা ভাবছিলাম তাই। ওটা ওদের সমস্যা। আমাকে এবং মাহীনকে নিয়ে আজাইরা কাহিনী না বানিয়ে নিজের চরকায় তেল দিতে বলিস।’

রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল, ওফ আল্লাহকে হাজার বার শুকরিয়া আমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। ভাই যে এমন একটা রিয়াকশন দিবে ওইটা অবশ্য অপ্রত্যাশিত ছিলো।”
রায়েদ মনে মনে ভাবলো, ‘আমি মাহীনকে পছন্দ করি। এটাই ভাবে ওরা? হয়তো আসলেই মাহীনকে আমি পছন্দ করি কিন্তু সেটা ওরকম ভাবে নয়।’ ভেবে ঠোঁট প্রসারিত হয়ে এর কোণে ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠল। জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি ওর। এখনো বাস মরু অঞ্চলের মাঝ দিয়ে চলছে। দূরে মরু দিগন্তে অর্ধ কমলা থালাটি ডুবতে ধরেছে। সোনালি বালুর সঙ্গে আকাশের কমলা ও লালাভাব রঙ মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে।

#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২৩
লেখনী মাহীরা ফারহীন

মরুর বুক চিরে টানা চলেছে বাস। শুষ্ক মরু অঞ্চল ছেড়ে সবুজ অভয়ারণ্যও পার হলো এক সময়। পরের দিন সকাল সাতটার দিকে টেক্সাস অতিক্রম করেছে। এখন প্রায় ঘড়িতে দুপুর দুইটার কাটা ছুঁই ছুঁই করছে। ওরা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পিনাকেল মাউন্টেইন পৌঁছে যাবে।প্রায় আধঘন্টা পূর্বে বাস আরকানসাসে প্রবেশ করেছিল। বাসের মধ্যে সকলেই ব্যস্ত হয়ে নিজের নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। অনেকের জুতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তো অনেকের হেডফোন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সামনের দিকে একটা মেয়ের পরনে ছিলো অদ্ভুত ঝুলমুলে জামা। সেটা নাকি সিটের চিপায় কোনো ভাবে আটকে গিয়েছে বলে ভালোই কোলাহল হচ্ছে সেখানে। র‌্যবিট ও লেক্সি নিজেদের মস্ত সাউন্ড বক্সটাকে প্যাকেট করতেই হিমশিম খাচ্ছে। গত রাতে বাসের সিটে বসে ঘুমানোর ফলে অনেকেরই ঘাড়ে ব্যথা হয়েছে। ফলে বারবার ঘাড় এদিকওদিক ঘুরিয়ে ব্যাথা সারানোর চেষ্টা করছে। সকলেই প্রস্তুত হয়ে বসে আছে। আরোও আধাঘন্টা পর বাস দুইপাশে ঘন জঙ্গলে ঘেরা বড় একটা প্রসস্থ রাস্তায় প্রবেশ করল।
মনে হয় যেন গহীন বন হঠাৎ করেই উবে গিয়ে এক প্রসস্থ রাস্তা আপনাআপনি গজিয়ে গিয়েছে। বাস আরো বেশ কিছুক্ষণ পূর্বেই এখানে পৌছে যেত কিন্তু মিইউ মেক্সিকোতে বেশ অনেকক্ষণ জামে পরেছিল বাস। বাস মাত্র থেমেছে। বাসের মধ্যে বাইরে বের হওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। চিৎকার চেচামেচি এবং হইচই হচ্ছে ফলে কেউ পাশের মানুষটার কথাও শুনতে পাচ্ছে না। মাহীন নিজের ছোট ব্যাকপ্যাক টা কাঁধে এবং স্যুটকেসটা নিচে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। লিম জু এখনই একটা বড় ভিডিও ক্যামেরা বের করে ভিডিও করা শুরু করেছে। র‌্যবিট ও লেক্সি খুব কষ্টে সাইন্ড বক্সটাকে প্যাকেট করে পেছনের সিট থেকে নিচে নামিয়েছে। জেনেট কিছুক্ষণ পূর্বে ওর মেকআপের বড় একটা সেট খুলে বসেছিল। সেটা এখন গুছাচ্ছে মাত্র। রায়েদের সবকিছুই গুছানো আছে। ফলে ও চুপচাপ বসে আছে। টিচাররা প্রথমে বাইরে বের হলেন। তার কিছুক্ষণ পর সকল শিক্ষার্থীকে সারিবদ্ধ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসার অনুমতি দিলেন। সাথে সাথে একে একে প্রথম দিকে যারা ছিল তারা বের হয়ে যেতে লাগল। একে একে সকলে বেরিয়ে যাচ্ছে। মাহীন, লিম জু, ক্যারোল এবং সাইলোহ একসাথে পরপর বের হলো। ওদের বাস থেকে কয়েক গজ দূরে সামোহির আরেকটা হলুদ বাস রাখা। এই বাসটা বোধহয় আরো কিছুক্ষণ পূর্বেই পৌঁছে গেছে। বাইরে রাস্তার দুইপাশের বড় গাছগুলোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্তর ডালপালা একটা প্রাকৃতিক ছাউনি তৈরি করেছে রাস্তার ওপর। তবুও ডালপালার ফাঁক ফোকর থেকে ঝুড়িঝুড়ি হয়ে রোদ উঁকি দেয়। অচেনা পাখির অনেক ধরনের সুরেলা ডাক মিলেমিশে একাকার। ছেলেমেয়েদের হইচই ছাপিয়ে যাচ্ছে সেসব সুরেলা সুমিষ্ট গান। খালি নির্জন রাস্তা ক্রমেই ছেলে মেয়েদের হইচইয়ে মুখরিত হয়ে উঠল। সকলে পূর্ণ উদ্যমে জিনিস পত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্রও সকলে ভাগ ভাগ করে বহন করে নিয়ে চলেছে। ছেলে মেয়েদের বিশাল দলটা হেঁটেই চলেছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে তবে রাস্তা আর শেষ হয় না। জেনেট ক্লান্ত স্বরে বলল, ‘আহ মাত্র মেকআপ ঠিক করলাম আর এখন লম্বা রাস্তা ধরে মালপত্র নিয়ে শুধু হেঁটে চলেছি।’

সাইলোহ বিরক্ত কন্ঠে বলল, ‘তুমি কি ভেবেছিলা এখানে আমরা প্রম পার্টিতে এসেছি?’
জেনেট বিরক্ত মুখে শ্রাগ করল। ক্যারোট জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কে কে ক্যাম্প করতে পারো?’

সাইলোহ শ্রাগ করে বলল, ‘কেউ না।’

নায়েল দ্রুত হেঁটে ওদের পাশাপাশি এসে বলল, ‘আমি পারি।’

লিও বলল, ‘হ্যা নায়েল তো বিভিন্ন ক্যাম্পিং ফেস্টিভ্যালে গাইড হিসেবে কতবার কাজ করেছে। ও তো পারবেই।’

‌রাবিত সাউন্ড বক্সের পুরো ভার হঠাৎ করে লেক্সির ওপর ছেড়ে দিয়ে ঘুরে পেছনের দিকে চলে গেল। লেক্সি হাতির মতো ভারি সাউন্ড বক্সটা নিয়ে টলমল করে উঠল। কোনো রকমে রাস্তায় ধপ করে রেখে দিয়ে উচ্চস্বরে বলতে লাগল, ‘র‌্যবিট ওয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ! কোথায় গেলি। আমি এটাকে একা ধরে রাখতে পারব না।’ কিন্তু ‌‌‌‍র‌্যবিটের সেসব দিকে কান নেই। রায়েদ ইচ্ছাকৃত ভাবেই শেষের দিকে ধীরে ধীরে হাঁটছে। রাবিত পেছনে গিয়ে ওর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,’ভাই তুমিও না ক্যাম্পিং করতে পারো?’

রায়েদ বলল, ‘হুম পারি। কিন্তু অনেকদিন করা হয়নি।’

র‌্যবিট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘তোমার সবই তো অনেক ধরে করা হয়নি।’

ওরা লম্বা রাস্তাটা পার করে এসেছে। সামনে জঙ্গল কমে এসেছে। এবং রাস্তাও সরু হয়ে এসেছে। আরেকটু সামনে এগোতেই একটা বড় লোহার গেট চোখে পরল। সেটা ভেজিয়ে রাখা ছিল। নকশা করা জং ধরা লোহাা গেট গুল্ম লতায় ভরে রয়েছে। টিচাররা সেটা খুলে দিতেই কর্কশ শব্দে চেঁচিয়ে উঠল। সকলে গেট পার হয়ে সারি বেঁধে ভেতরে প্রবেশ করছে। অপর পাশে কোনো গাছপালা বা জঙ্গলের চিহ্ন মাত্র নেই। সেখানে বিস্তারিত মাঠ এবং মাঠের অপর পাশে আবারও জঙ্গল। জঙ্গল পার করে দূরে পিনাকেল মাউন্টেইন দেখা যায়। পাহাড়টা কুয়াশায় ঢেকে নীলচে ধূসর পিরামিডের মতো দেখাচ্ছে। পিনাকেল পাহাড় উত্তর মাউমেল ও পশ্চিমে মাউমেল নদীর মাঝে পরেছে। এই মাউমেল নদী আবার আরকানসাস নদীতে গিয়ে মিশেছে। সকলে মাঠে প্রবেশ করেই এদিক ওদিক ছুটে যাচ্ছে। ওদের পূর্বেই আরেকটা যেই বাস এসেছিল সেটার শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে তাঁবু খাটানোর কাজ প্রায় সেরে ফেলেছে। যে যার যার পছন্দ মতো জায়গা বেছে নিলো তাঁবু খাটানোর জন্য। তাঁবুতে তিনজন করে থাকতে পারবে। এখন সাইলোহ, জেনেট, লিম ও ক্যারোটের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে কে কোন তাবুতে থাকবে। মাহীন যদিও তর্কাতর্কির মধ্যে নেই। তবুও ওরা ওকেও টেনে আনছে এর মধ্যে। রাবিত ও রায়েদের একসাথে তাঁবু। এর মধ্যে লেক্সিও থাকবে। আকাশ একদম পরিষ্কার এবং গাড়ো নীল। মস্ত মাঠ জুড়ে টিয়া রঙা নরম ঘাসের চাদর বিছানো। মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কপাল বিরক্তিতে কুঁচকে রয়েছে। অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে বলল, ‘আচ্ছা শোনো আমরা কয়েন ফ্লিপ করে ঠিক করবো কে কোন তাঁবুতে থাকবে।’
‘ওহ হ্যা এই আইডিয়াটা ভালো।’ সন্তুষ্ট কন্ঠে বলল লিম।

সাইলোহ সম্মতি দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা তো কয়েন ফ্লিপ করি।’ মাহীন জিনসের পকেট থেকে ফিফটি সেন্টের পয়সা বের করল।তারপর বলল, ‘হেডস নীল তাঁবুর জন্য এবং টেলস হলুদ তাঁবুর জন্য।’

ক্যারোট বলল, ‘যদি আমাদের সকলেরই হেডস পরে? বা টেলস পরে?’

মাহীন বলল, ‘প্রথম যেই তিনজনের হেডস পরবে বা টেলস পরবে তাদের ধরা হবে।’

ওর এই বুদ্ধিতে সকলে সম্মতি জানালো। মাহীন বলল,
‘প্রথমে লিম জু।’এই বলে কয়েনটা উল্টে শূন্যে ছুঁড়ে দিল। ওটা মাটিতে পরার পর দেখা গেল টেলস। অর্থাৎ ও হলুদ তাবুতে। এবার জেনেটের পালা। ওর হেডস পরলো অর্থাৎ ও নীল তাঁবুতে। এরপর ক্যারোটের পালা। ওরও পরল হেডস। এখন শুধু সাইলোহ ও মাহীন বাকি রয়েছে। সাইলোর পরল টেলস। অর্থাৎ দুই তাবুতেই দুইজন দুইজন। মাহীন এবার নিজের জন্য পয়সাটা ফ্লিপ করলো। ওর পরলো হেডস। ক্যারোট ও জেনেট আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সাইলোহ এবার নিরাশ কন্ঠে বলল, ‘ওফ এখন আমাদের একটা জায়গা ফিলআপ করতে অন্যকেউ আমাদের জয়েন করবে।’
জেনেট বিজ্ঞের মতো বলল, ‘পিকনিক মানেই তো মিলেমিশে থাকা এবং শেয়ার করা।’

মাহীন এবার টিপ্পনি কাটতে ছাড়লো না, ‘এতক্ষণ এটা নিয়েই আপনিও ঝগড়া করতেসিলেন।’
জেনেট ইতস্তত হাসল। নায়েল ও লিও এগিয়ে আসল ওদের তাঁবু খাটাতে সাহায্য করতে। ওদের নিজেদের তাঁবু খাটানো হয়ে গিয়েছে। নীল তাঁবুটাই খাটাতে দশ পনেরো মিনিট চলে গেল। মাহীন তাঁবু থেকে কিছুটা দূরে সরে গেল এবং নিজের সেলফোনটা বের করল। মায়ের নম্বরটা ডায়েল করে কানে ধরল। কিছুক্ষণ রিং হতেই কল রিসিভ হলো এবং ওপাশ থেকে মিসেস নাসরিনের উদ্বিগ্ন কন্ঠস্ব ভেসে এলো, ‘তুই ঠিক ঠাক পৌঁছেছিস?’
‘হ্যা মা। কিছুক্ষণ পূর্বে আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি। মাত্র তাবু খাটানোর কাজ চলছে।’
‘দেখিস এদিকওদিক জঙ্গলের মধ্যে ভুলেও যাবে না। একা কোথাও যাবি না।’
‘মা তুমি এই উপদেশগুলো অলরেডি কয়েকশো বার বলে ফেলেছো।’
‘তাও তো তোর কানের পাশ কাটিয়ে চলে যায়।’ মাহীন চোখের মণি ঘোরাল। তারপর আরো অল্প কিছু টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিলো। ওদের থেকে প্রায় পনেরো গজ দূরে রায়েদের তাঁবু। এবার মাহীন দৃষ্টি দিয়ে ওদের খুঁজে বের করে সেদিকে এগিয়ে গেল। কাছাকাছি পৌঁছে দেখল রায়েদ তাঁবুর পাশে ব্যাগের মধ্যে কিছু একটা করছে। রাবিত একটা ডোরিটোস চিপসের প্যাকেট হাতে নিয়ে ওর সাউন্ড বক্সের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মাহীন ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
‘রাবিত তোমার সাথে কিছু কথা বলবো।’
ওকে দেখেই র‌্যবিটের কপাল কুঁচকে গেল। কেমন জানি ঘাবড়েও গেল। বেশ দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল,’হ্যা বলো।’
মাহীন শান্ত কন্ঠে বলল, ‘রায়েদ কিভাবে জানলো আমি আসব না?’
র‌্যবিট অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাল। শুকনো ঢোঁক গিলে বলল, ‘আমি কি জানি। তোমার ফ্রেন্ডরা কথা বলছিল শুনেছে হয়তো।’
মাহীন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর পানে তাকাল। তীব্র গলায় শুধালো, ‘আমার তো মনে হয় না রায়েদ ওদের কাছ থেকে শুনেছে। তুমিই বলেছো তাই না? সত্যি করে বলো?’
‘আরেহ না। আমি কিছু জানি না। আমি কিভাবে বলবো?’
‘র‌্যবিট শোনো আমি জানি। আর লুকাচুরি করে লাভ নেই। আর ওর কেনো মনে হলো ওই নিতে আসলেই আমি যাবো?’
‘আমি তো জানি না। তুমি ভাইকে জিজ্ঞেস করো।’
মাহীন ভাবলেশহীন মুখে বললো, ‘ঠিক আছে তোমার ভাইকেই জিজ্ঞেস করছি। এবং সাথে আরোও জিজ্ঞেস করছি বিলের সাথে তোমার ভাইয়ের কি ঝামেলা লেগেছিল।’
র‌্যবিট চমকে উঠে উত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘এ্যই না! মানে…বলতে বলতে থেমে গেল। আমতা আমতা করে বলল, ‘আচ্ছা..মানে ঠিক আছে, আমিই বলছি। ভাইকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই।’
মাহীনের ঠোঁটের কোণের কোণে ফিচেল হাসি ফুটে উঠলো। র‌্যবিট ইতস্তত করে বলল, ‘তো হয়েছে কি আমি আর ভাই দুইজনেই মিসেস রেয়ের সাথে কথা বলছিলাম তখন কি কথায় কথায় যেন মিসেস রে বললেন যে, উনি তোমাকে বলেছেন ভাই আসছে না। এবং পরে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানলাম তুমিই নাকি না আসার জেদ ধরেছো। তখন আমিই ভাইকে গিয়ে এই কথা জানিয়েছি। এবং আরকি ভাইয়ের মনে হয়েছে আবারও ওর কিছু একটা ঠিক করার আছে। তাই ও তোমাকে নিতে গিয়েছে।’
মাহীন তুড়ি বাজিয়ে বলল, ‘আমার মনেই হয়েছিল এমন কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে।’
তারপর একটু থেমে বলল, ‘আচ্ছা কাল মাছ ধরতে যাচ্ছো?’

‘আরেহ মাছ ধরার মতো এক্টিভেটি হবে আর আমি যাবো না? অবশ্যই যাচ্ছি।’ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলল র‌্যবিট।

‘আচ্ছা আমি আমাদের তাঁবুর কাছে গেলাম।’ বলেই হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল মাহীন। রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল, ওফ! এতো মহা ঝামেলা। ভাই তো আছেই সাথে মাহীনও দেখি আমার মুখ থেকে সব কথা বের করে নিয়ে যায়। কিভাবে নিজের সিকিইউরিটি সিস্টেম অাপডেট করে নিজেকে সেভ করতে পারি সেই ফন্দি বের করতে হবে।’ ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল এবং তাবুর খিলের সাথে পা বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পরল। এবং খিলটা খুলে গিয়ে খাটানো তাঁবুটা ঝুপ করে গুটিয়ে পরল। রায়েদ পাশেই বসেছিল। রায়েদ ওর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাল। র‌্যবিট বিচলিত হাসল। লেক্সি সেদিকে ছুটে গেল। রায়েদ কঠিন স্বরে বলল, ‘তোকে আমার কি করা উচিৎ বলতো?’
র‌্যবিট বিচলিত ভাবে হাসিটা ধরে রেখেই ইতস্তত করে বলল, ‘খালি জ্যান্ত কবর না দিলেই হবে।’ রায়েদ চোখের মনি ঘুরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

মাহীন নিজের তাঁবুর কাছে ফিরে দেখে হলুদ তাঁবুর আরেকটা ফাঁকা স্থান সম্ভবত দখল করেছে একটা মেয়ে। মেয়েটা ক্রসলেগে একটা টুলের ওপর বসে নিজের ফোনের স্ক্রিনে ডুবে আছে। মেয়েটার চুল বাদামি সোনালি। ফরসা হলেও বোধহয় ত্বক ট্যান করিয়েছে। চোখেমুখে কী অদ্ভুত ধার আবার রুক্ষতাও আছে। ক্যারোট নীল তাবুটার ভেতরে ছিলো। ভেতরে সব গুছিয়ে রাখছে ও। মাহীনও হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। তাঁবুটা নীল হওয়ায় ভেতরে সবকিছুই নীল আলোকিত মনে হচ্ছে। মাহীন পা মুড়িয়ে বসলো। ক্যারোটের কমলা লাল চুলগুলো খোঁপা করেছে। ক্যারোটকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ক্যারোট বাইরে যেই মেয়েটা টুলে বসে আছে ওকি সাইলোর তাঁবুতে থাকবে?’

ক্যাটোর মুখ তুলে তাকাল। বলল, ”হ্যা। ওর নাম এসিসিয়া জুহোড।’
মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। ক্যারোট আরোও বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে ও বিলের বেস্ট ফ্রেন্ড।’

মাহীন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘বিল মুরেই?’

‘হ্যা।’ তখনই তাঁবুতে জেনেট হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। তারপর হাঁটু উঁচু করে বসে। মুখ ভর্তি এক রাশ বিরক্তি এবং ক্লান্তি। বলল, ‘আহ দেখো আমার হাঁটুর অবস্থা। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে বের হতে আমি শেষ।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘তোমাকে মিনি স্কার্ট পরতে কে বলেছিল? এমন তো হবেই।’
জেনেটকে হতাশ দেখাল। তারপর বলল, ‘আহারে সাইলোহ খুবই বিরক্ত এবং নিরাশ হয়ে পরেছে।’

মাহীন জিজ্ঞেস করল,’কেন?’

‘তুমি ওই মেয়েটাকে বাইরে দেখোনি? এসিসিয়া?’ জিজ্ঞেস করল জেনেট।

মাহীন কপাল কুঁচকে বলল, ‘হ্যা দেখেছি তো। ওকে নিয়ে সাইলোহ বিরক্ত কেন?’

জেনেট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘কি জানি। আসলে এত বছরে জীবনেও এসিসিয়াকে আমাদের ধারে কাছে দেখিনি। ও তো সবসময় বিলের আগে পিছে ঘুরে বেড়ায় অথবা নিজের অতি বড়লোক ঢঙ্গি বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। সেখানে ও ওরা থাকতে আমাদের সাথে কেন এসে জুটেছে সেটা ভাবার মতো বিষয়।’

ক্যারোট বলল, ‘সোজা কথায় এসিসিয়া হলো পিওর পশ। যদিও আমি এসব কাহিনী জানি না এবং ওকে চিনিও না তবুও ওকে দেখে মনে হলো ও আমাদের সাথে থাকার মতো মেয়ে না।’

জেনেট বলল, ‘আর এমনিতেই আমি কোই সামান্য একটু মেকআপ করি এবং স্টাইল করি দেখে সাইলোহ তো আমাকে দেখতেই পারে না সেখানে এসিসিয়া তো আমার আলট্রা ম্যাক্স প্রো ভার্সন।’ মাহীন ও ক্যারোট দুইজনই হেসে ফেললো।

বিকেল পৌঁনে পাঁচটা বাজে। বাইরে ইতোমধ্যেই রান্নাবান্নার আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটা পোর্টেবল স্টোভ আনা হয়েছে। রান্নার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবই বয়ে আনা হয়েছে। তবে রান্নার জন্য খাবার কাছাকাছি ছোট শহর ‘লিটল রক’ থেকে আসার সময় কেনা হয়েছে। কারণ স্যান্টা মনিকা থেকে আনলে একদিনের বাস যাত্রায় সেসব কিছুই তরতাজা থাকত না। ছাত্র ছাত্রীরাই সবকিছুতে হাত লাগিয়েছে। সঙ্গে টিচাররাও সাহায্য করছেন।এখানে প্রায় আটটা বড় বড় ফোল্ডিং টেবিল রাখা হয়েছে। তার ওপরই সব কাজ করা হচ্ছে। সাথে ওপরে ছাউনির ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে মাত্র দুটো টেবিলে ছাউনি লাগানো হয়েছে। বাকিগুলো এখন খালি রয়েছে। রায়েদ দাঁড়িয়ে মি.ডিইউটের সঙ্গে ক্যাপসিকাম কাটছে। অন্যরা ওকে পছন্দ করুক না করুক সকল টিচাররা রায়েদকে অসম্ভব স্নেহ করেন। তার কারণ সর্বদাই রায়েদ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং রেজাল্টও ভালো করে। এবং কখনোও ওকে ক্লাস ফাঁকি দিতেও কেউ দেখেছে বলে মনে পরে না। সাইলোহ ও লিম এতক্ষণ তাঁবুর মধ্যে গোছগাছ করছিল। মাত্র বেরিয়ে আসল সাইলোহ। এসিসিয়া টুল নিয়ে তাঁবুর সামনেই বসেছিল। সাইলোহ ওকে দেখা মাত্রই টিটকারির স্বরে বলল,
‘এভাবে বসে না থেকে কোনো কাজও তো করতে পারো।’
মেয়েটা ফোন থেকে মুখ তুলে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কি কাজ করব?’

‘ওইযে সামনে সকলে রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত। সেখানে তো সাহায্য করতে পারো। রান্না তো পারো বলে মনে হয় না। এট লিস্ট তুমি কাটাকুটি তো করতে পারো।’

মেয়েটা মুখ কুঁচকে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, ‘আমি? করব কাটাকুটি?’ বলে নিজের একটা হাত সামনে তুলে ধরে বলল, ‘দেখো আমার এখানে আসার আগেই মাত্র মেনিকিওর করা নখ সব নষ্ট হয়ে যাবে। এই নখ মেনিকিওর করতে আমার একবারেই আটশ ডলার খরচ হয়েছে।’ এসিসিয়ার নখগুলো অন্তত দুই ইঞ্চি লম্বা। ফিরোজা রঙের এবং দুনিয়ার চুমকি পুঁতি বসানো। সাইলোহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত কন্ঠে বলল,
‘আমার তাঁবুতে জায়গা দেওয়ার আগে তোমাকে কি শর্ত দিয়েছিলাম মনে আছে? এখন হাতের সাজসজ্জা উঠাও সে তা আটশ ডলারের হোক আর হাজার ডলারের। এবং বসে না থেকে গিয়ে কিছু করো।’
এসিসিয়া মনে মনে ভাবল, ওফ ভালো জ্বালা তো। এখানে আসাটাই ঘাট হয়েছে। কিন্তু যখন আমি একবার আসছি এখানে, তখন সহজে নড়ব না সে আমার নখের বিসর্জন দিতে হলেও হোক।’
ভেবে উঠে দাঁড়াল তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা ওই মেয়েটা মিহীন কোথায়?’
সাইলোহ ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কি? মিহীন আবার কে?’

‘আরেহ ওই যে ওই ট্যান মেয়েটা যে রায়েদ মাদির সঙ্গে ইভেন্টে কাজ করেছে। গতকাল আবার ওর সাথেই সাইকেলে করে স্কুলেও এসেছে।’
সাইলোহ বলল, ‘ওহ আচ্ছা। ওটা মা..হী..ন। মিহীন না। এবং ও তোমাদের মতো ট্যান না। ও আসলেই শ্যামলা। এবং তোমার ওকে দিয়ে কি কাজ?’

‘না এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম। মেয়েটাকে আমার অনেক ইন্টারেস্টিং লাগে। মিহীন মেহীন এনিওয়েজ।’
সাইলোহ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল এসিসিয়ার দিকে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্য দিকে চলে গেল।

ইনশাআল্লাহ চলবে।