ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-০৯

0
640

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— ” সেটা তোমার হাতে ফুচকা খাওয়ার একটা বাহানা ছিলো, দ্যাটস ইট। ”

আভা আহনাফের অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। কি সরল স্বীকারোক্তি। কোনো সংকোচ নেই। না আছে কোনো ভাবনা। পাশের মানুষটা এতে রাগ করতে পারে কিংবা কলার ধরে দাতে দাত চিবিয়ে বলতে পারে “কথাটা মুখে বললেই হতো।বাহানার কি দরকার?” কিন্তু আভা এসবের কোনোটাই করতো না। ছেলেটার সাথে সে এখনো ততটা সহজ হয়ে উঠতে পারেনি। হয়তো এইজন্যেই আহনাফের ওমন বেপরোয়া ভাব।
চন্দ্রা নামক মেয়েটা টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনটা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে আবারও নতুন খদ্দের খুঁজছে। এটাই হয়তো তাদের জীবন। প্রতিদিন একই নিয়ম,একই ধারা। তবে আজ চন্দ্র খুশি। কারো কাছে সুখ কিনতে পেরেছে সে। তাই সুখে পাগল হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে সে। আভা সেদিকে তাকিয়ে হাঁটু সোজা করে উঠে দাড়ালো। হাওয়াই মিঠাই একটা আহনাফের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— ” খাবেন? ”

আহনাফ হাওয়াই মিঠাইর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
— ” আমি সুগার কম খাই। ”

আভা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো আহনাফের দিকে। তারপর হঠাৎ-ই আহনাফের হাতে হাওয়াই মিঠাইর কাঠি ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— ” একদিন বেশী সুগার খেলে কিছু হয়না। খেয়ে দেখুন। ভালো লাগবে। ”

আহনাফ কাঠি হাতে নিয়ে খাবারটায় একবার চোখ বুলালো। সে এই জিনিসটা একদমই খেতে চাইছে না। কিন্তু আভার ওমন আগ্রহী মুখ দেখে না করতে পারছে না। আভা আহনাফের দিকে চেয়ে আছে, হাওয়াই মিঠাই টা খেতে কিরকম লাগছে,জানতে। আহনাফ আভার ওমন দৃষ্টি দেখে গলে গেলো। আভার হাতে এখন বিষ খেলেও তার আফসোস নেই। তাই আহনাফ সব জড়তা ঝেড়ে ফেলে হাওয়াই মিঠাইয়ে দাত বসালো। মুখের ভিতর এক মুঠো মিঠাই পুড়ে নিতেই মুহূর্তেই গলে গেল মিঠাই। ব্যাপারটা দারুন তো! বাতাসের মত মুখে যেতেই নিঃশেষে হয়ে যায়। আহনাফ আরো এক কামড় মিঠাই খেলো। এবারও নিঃশেষ হয়ে গেলো। আভা ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ” ভালো লাগছে? ”

আহনাফ মৃদু হেসে মাথা নেড়ে বললো,
— ” দারুন খেতে। ”

আভা হেসে নিজেও হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে হাটা শুরু করলো। আহনাফ পাশাপাশি হাঁটছে। আভা একসময় খেতে খেতে বললো,
— ” মা বলেন, কোনো খাবার সামনে এলে সেটা কখনো না খেয়ে ফিরিয়ে দিতে নেই। খেয়ে একবার দেখা উচিত। ভালো না লাগলে তখন ফিরিয়ে দিও। ”

আহনাফ খাওয়া শেষ করে কাঠিটা ফেলে দিলো ডাস্টিবিনে। আভা একটা শেষ করে দ্বিতীযটায় মুখ দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আহনাফ বললো,
— ” একা একাই খাচ্ছো? ”

আভা আহনাফের দিকে তাকালো। বললো,
— ” কেনো? আপনি খাবেন? ”
— ” কেউ দিলে খেতে পারি। ”

আভা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— “সেটা সরাসরি বললেই হতো। এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার কি আছে? ”

আভা কথাটা বলেই আহনাফের দিকে নিজের হাওয়াই মিঠাই এগিয়ে দিলো। আহনাফ সেটা হাতে নিলো না। বরং বললো,
— ” তুমি নিজ হাতে খাইয়ে দিলে খেতে পারি। ”

আভা এবার অস্বস্তিতে পরে গেলো। কি করবে ভেবে না পেয়ে আহনাফের হাতে হাওয়াই মিঠাইর কাঠি ধরিয়ে দিলো। বললো,
— ” নিজে খান নয়তো ফেলে দেন। ”

আহনাফ মুচকি হেসে নিজেই খেতে লাগলো। থাক! মেয়েটাকে আর অস্বস্তিতে ফেলার দরকার নেই। আহনাফ একটু মিঠাই ছিঁড়ে আভার মুখের দিকে এগিয়ে দিলো। আভা তখন নিজের মুখ পিছিয়ে নিয়ে বললো,
— ” আপনি খান। আমার পেট ভরে গেছে। ”
— ” একটা হাওয়াই মিঠাই খেয়ে পেট ভরে গেছে? ”
— ” আব.. হ্যাঁ! ”
— ” মিথ্যে কম বলো। নিজে তো খাইয়ে দিবে না। তাই আমি খাইয়ে দিচ্ছি। খাও।”

আভা না চাইতেও আহনাফের হাত থেকে মিঠাই খেয়ে নেয়।
এভাবেই তারা এসে দাঁড়ায় একটা কদম ফুলের গাছের নিচে। আহনাফ ততক্ষণে একবার আভার মাকে তাদের একসাথে পার্কে আসার কথা জানিয়ে দিয়েছে। নয়তো তিনি চিন্তা করবেন। আভা কদম ফুলের গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কতক কদম ফুল কুড়ালো। ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে সাদা কাগজ ছিঁড়লো। অতঃপর ফুলগুলো কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে আবার ব্যাগের একসাইডে যত্ন করে রেখে দিলো। আহনাফ কদম গাছের নিচে একটা বেঞ্চে বসে পড়ে। আভাকে হাত দিয়ে ইশারায় বসতে বলে তার পাশে। আভা ব্যাগের চেইন লাগিয়ে বেঞ্চে আহনাফের থেকে দূরত্ব নিয়ে বসে। আহনাফ আভার দিকে চেয়ে বললো,
— ” কদম ফুল ব্যাগে নিলে কেনো? ”

আভা হাতে একটা কদম ফুল নিয়ে সেটার পাঁপড়ি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো,
–” মালা বানাবো। ”
— ” মালা? ”
— ” হুম। গলার মালা। ”
— ” কিন্তু এই ফুলগুলোতো আজকের মধ্যেই পচে যাবে।”
— ” মালা বানিয়ে কয়েক মিনিট গলায় পড়ে থাকবো। তারপর পঁচে গেলে ফেলে দিবো।”
— ” গ্রেট..! এত ধৈর্য্য? ”
— ” হুম। ”

আহনাফ হঠাৎ আভার খুব কাছে চলে এলো। আভার শরীরের থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে বেঞ্চে বসলো। আভার আহনাফের দিকে অবাক চোখে তাকালে আহনাফ আভার চোখে চোখ রেখে গভীর গলায় বললো,
— ” কিন্তু আমার একবারে ধৈর্য্য নেই। মনটা তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে,জানো? তোমার চোখে একটিবার নিজের জন্যে অনুভূতি দেখার জন্যে ছটফট করছি আমি। যে দহনে আমি পুড়ছি, তোমাকেও সেই দহনে পুড়িয়ে ছাই করার ইচ্ছে হচ্ছে। তোমাকে দেখার পর কতশত অদ্ভুত ইচ্ছে হয়,জানো?
মাঝেমধ্যে মন চায় তোমায় বুকের ভিতরের কয়েকশত গভীর কোনো জায়গায় লুকিয়ে ফেলি। যেখান থেকে তুমি কখনোই বেরুতে পারবে না। সারাক্ষণ আমার বুকের মাঝেই থাকবে। সারাক্ষণ.. সর্ববস্থায়। ”

আভা আহনাফের চোখের দিকে চেয়ে রইলো। বুকটা কি কেপে উঠলো? কত জোরে? আগুনের ফুলকির তেজে নাকি বৃষ্টির বেগে? আভা চোখের পানি পলক ফেলতে ভুলে গেলো। অন্যদিনের মত আহনাফের থেকে চোখ সরালো না। চেয়ে রইলো আর চেয়ে-ই রইলো। আহনাফের চোখের মধ্যে কডুবে গেছে সে। একটা মানুষের চোখেও এতটা প্রেম.. এত অনুভূতি লুকিয়ে থাকে? কিভাবে? আভার ইচ্ছে হলো সে এখন আহনাফের চোখের সমুদ্রে সাঁতার কাটতে। কিন্তু তার আগেই তার মেয়েলি মস্তিষ্ক জানান দিলো” সে লজ্জাহীন কাজ করছে। এভাবে একটা ছেলের দিকে চেয়ে থাকা উচিত না। ” আভা চোখ সরিয়ে নিলো। পায়ের কাছে বিছিয়ে থাকা কদম ফুলের দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক।কিন্তু অবাধ্য মনটা চাইছে, তার দিকে চেয়ে থাকা মুগ্ধ দৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিস্পলক চেয়ে থাকতে অপরপাশে মানুষটার দিকে। কিন্তু তা ত সম্ভব না। মেয়ে তো ও..!

আহনাফ সরে এলো আভার থেকে। বেঞ্চে দুহাত ঠেসে আকাশের দিকে চেয়ে রইলো। পাশে নতজানু হয়ে বসে আছে তার আকাশরানী। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ অনুভূতি আর কি হতে পারে? কেটে গেলো কয়েক মুহূর্ত। নিরবতার মত বিশেষ শব্দখেলায় কথা হলো তাদের। একসময় আহনাফ হাত ঘড়ি দেখলো। একটু পরেই আসরের আযান দিবে। আহনাফ উঠে দাঁড়ালো। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে বললো,
— ” আমাদের এখন যাওয়া উচিত। অনেক লেট হয়ে গেছে। যাওয়ার সময় রেস্টুরেন্টে খেয়ে যাবো। চলো এখন। ”

আভা বেঞ্চ থেকে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আহনাফের আগেই হাটা শুরু করলো ও। আহনাফ আভার পিছু হাঁটতে লাগলো।

#চলবে.