কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-২৫+২৬

0
2124

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::২৫

তিনি আমার কোমর আঁকড়ে ধরে আমাকে তার বুকে মিশিয়ে নিলেন ।। এমন ভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।।মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার সব হাড় ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে।। এতোক্ষণে খেয়াল করলাম তার ব্যবহার করা পারফিউমের স্মেমটা আমার খুব পরিচিত।। শুধু পরিচিতই না,,বরং এই স্মেমটা জন্য আমি পাগল।। আমিও মিষ্টি প্রেমিককে জরিয়ে ধরে তার পায়ে আমার পা স্লাইড করলাম।।
প্রায় অনেকক্ষন পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার থেকে দুপা পিছিয়ে গিয়ে কিছু একটা হাতে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।।‌ তার এগিয়ে আসা দেখে আমি পেছনে পিছিয়ে যেতে লাগলাম , পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে বেধে গেলাম,,আমি ভয়ে চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে হাত দিয়ে পড়নের আঁচল টাকে মুচড়াচ্ছি।। হঠা গালে ঠান্ডা কিছু অনুভব করাতে চোখ দুটো খুলে গালে হাত দিয়ে অনুভব করে বুঝলাম হলুদ ছিলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি!!!

— আমি তোমাকে হলুদ লাগালাম,,তুমি লাগাবে না!!( টেনে টেনে )

— আমি তো হলুদ নিয়ে আসি নি।।আচ্ছা আপনি টেনে টেনে কথা বলছেন কেন?? (কৌতূহল নিয়ে আমি)

— কেন আবার,,,যাতে তুমি আমাকে চিনে না ফেলো তাই ??

— তার মানে আমার পরিচিত !! আর আমি আপনাকে চিনি তাই তো!!

— হয়তো আবার হয়তো না ।।

— আমি সিউর আপনি আমার কাছের কেউ ,,,

— হলেও বা সমস্যা কোথায় ।। আচ্ছা বাদ দাও ,, তুমি তো আমাকে হলুদ লাগলেই না ।। তার চেয়ে বরং আমিই লাগিয়ে নেই।।

বলেই আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে একটু উঁচু করে,,,তার গায়ে আমার গাল মিলিয়ে দিলো।। তার গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার শরীরে প্রতিটা পশম দাড় করিয়ে দিয়েছে।। আমি যেনো সেখানেই ফ্রিজড হয়ে গেছি।। আমি কিছু বলবো তার আগেই মিষ্টি প্রেমিক আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল আর যাওযার আগে বলে গেল ,,,আমি যাতে শাড়ি পড়াটা ভালো ভাবে শিখে নেই।। দরজা খোলার আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙে ঠিকই কিন্তু দরজা পর্যন্ত গিয়ে তাকে আর খুঁজে পেলাম না।।
আর দেরি না করে সোজা নিচে নেমে গেলাম।। সেখানে গিয়ে দেখি হলুদ লাগানো শেষ কিন্তু এখন রং খেলা চলছে।।আমার সব ভাই বোনেরা রঙে পুরো মাখামাখি হয়ে গেছে।। কিন্তু আবিরকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।। আমি চারদিকে তাকিয়ে আবিরকে খোঁজার চেষ্টা করছি,, কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।। অনেকক্ষন খোঁজার পর দেখতে পেলাম,,কোথা থেকে আবির আসছে ।। হলুদ রঙের একটা পাজ্জাবি পড়েছে।। চুলগুলো একপাশে কাল করা ।। হাতে কোনো ঘড়ি নেই ,,পায়েও কোনো জুতো নেই ।। হয়তো রঙে নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই পড়েনি।। হঠাৎ আমার চোখ গেলো আবিরের পায়ের দিকে ।। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো।। আমি আর দেরি না করে রং দিয়ে আবিরকে মাখিয়ে দিলাম।। প্রথমে একটু রেগে গিয়েছিলো কিন্তু পরে আবির নিজেই আমাকে রং মাখিয়ে দিয়েছিলো।। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা রং খেলে যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।।

রুমে একা একা ইউটুব দেখে দেখে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করছি ।। প্রথমে অনেক কষ্ট হয়েছে পরে ঠিক হয়ে গেছে।। এই নিয়ে ১০ বার শাড়ি পড়লাম।। নিজের অনেক আনন্দ হচ্ছে এই ভেবে যে এখন আমি শাড়ি পড়তে পারি।। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছি আবার মিষ্টি প্রেমিকের কথা ভাবছি ।। কালকে আপির বিয়েটা পর আমি মিষ্টি প্রেমিকের আসল রহস্য উন্মোচন করবো।। মিষ্টি প্রেমিক কে সেটা আমি যেনে গেছি এবার শুধু তাকে দিয়ে সিকার করানোর পালা ।।
” ডিয়ার আমার মিষ্টি প্রেমিক ,, আমার চোখে ফাঁকি দিয়ে তুমি থাকতে পারলে না তাই তো ।। কি আর করার এই হানির চোখে ফাঁকি দিয়ে যে কেউ থাকতে পারে না।। শুধু কালকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করো তারপর দেখো কি হয়।।জাস্ট ওয়েট এন্ড গুলুলুলুটা…..”

বলেই শাড়িটা চেন্জ করে নিলাম।। হঠাৎ মনে হচ্ছে ড্রয়িং রুম অনেক চেঁচামেচি হচ্ছে।। তাই নিজের কৌতুহল মেটাতে সেদিকে পা বাড়ালাম।। গিয়ে দেখলাম সবাই একসাথে সেখানে ,, গোল মিটিং বসিয়েছে।। জানভি বারবার একটা কথাই বলছে ,, আমি যাবো না,,,যাবো না মানে যাবো না,,ব্যাস।।
কিন্তু কোথায় যাবে না,,সেটাই বুঝতে পারলাম না।। এর মধ্যেই ফুফা বলে উঠলো….

— দেখ ছোটো ,,, তুই একটু বোঝার চেষ্টা করে । তুই যদি এখন লন্ডনে না যাস তাহলে ৭৫ কোটি টাকা আমার লোকসান হয়ে যাবে ।।।(অজয়)

— বাবা আমি তোমাদের চেয়ে কোথাও যেতে পারবো না!! (আমাকে উদ্দেশ্য করে জানভি) মিষ্টি জান তুই পিলিজ তোর ফুফাকে বোঝা ।।।

— হে ফুফা ,,থাকনা,,ওকে যেতে হবে না।।(আমি)

— মিষ্টি তুমিও কি জানভির মতো পাগল হয়ে গেলে নাকি ।। কতো টাকা তোমার হিসাব আছে ।। একবার যদি লোকসান হয়ে যায়।। তাহলে কি হবে ভাবতে পারছো !!( আবির)

আমি নিশ্চুপ হয়ে একবার আবিরের কথাটা ভাবলাম ।। সত্যি ই তো আবির তো মিথ্যা বলছে না।। হাজার না চাওয়ার সওেও জানভিকে বললাম….

— হে জানভি তুমি যাও।।

— শেষে তুই ও ।। ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।।

বলেই পাসওয়ার্ড,, টিকেট , নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।।আমি বুঝতে পারছি জানভি আমার উপর রাগ করেছে,,তাই আমিও জানভির পেছনে পেছনে গেলাম।।
গিয়ে দেখছি সে একা একা জামা কাপড় গোছাচ্ছে আর সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে।। আমাকে দেখা না দেখার ভান করে আবার কাজে মন দিলো।। আমি গিয়ে জানভিকে বেডে বসিয়ে ওর হাত থেকে জামা কাপড় গুলো নিয়ে গোছাতে শুরু করলাম।। গোছানো শেষ করে জানভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললাম…

— দেখো জান আমার উপর রাগ কেন করছো ।। তুমি জানো না,, তুমি রাগ করলে আমার একদমই ভালো লাগে না।। ( একটু থেমে আবার আমি)তুমি কি চাও সবাই বলুক ,, আমার জন্য তোমার বাবা এতো বড় ক্ষতি হয়েছে।।

— তুমি আবার কি ক্ষতি করলে!!( কৌতূহল নিয়ে জানভি)

— এই যে আমি যদি তোমাকে যেতে না বলি তাহলে তো তুমি যাবে না ।। তাহলে তো দোষটা ঘুরে ফিরে আমারই হলো ।। তাই নয় কি ??(আমি)

— ঠিক আছে আমি যাবো ।। কিন্তু ২ টা মাস তো তোকে না দেখে থাকবো কিভাবে??( জানভি)

— কে বলেছে ,, দেখতে পারবে না।। দেখবে তো ভিড়িও কলে !!(আমি)

— সে দেখা আর এই দেখা এক হলো নাকি!!

— কে বলেছে এক নয় ।। একই তো ।। এবার চলো তো।।

তারপর জানভিকে বিদায় দিয়ে এলাম।। সত্যি ই আমার ওর জন্য একটু হলেও কষ্ট হচ্ছে।। কিন্তু ওকে বুঝতে দেই নি ।। নাহলে জানভি যে নাছড় বান্দা কিছুতেই যেতো না।। আমার বিয়ের পর যে জানভি কি করবে তা কে জানে।।আর কোনো চিন্তা না করে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম।।

🍁 🍁 🍁

বাসর ঘরে বসে আছে আপি।। মাথায় এক হাত ঘোমটা দিয়ে নয় বরং এক হাত ঘোমটা ফেলে।। কারন আমরা সবাই আজকে ঠিক করছি ,,, আপি আর নিবিড় ভাইয়ার সাথে গল্প করবো।। আপি তো মাথা নিচু করে বসে আছে আর নিবিড় ভাইয়া তো করুন সুরে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।। বিয়ের প্রথম রাতে কিনা তাকে সালা আর সালিদের সাথে গল্প করতে হবে।। আর কোনো উপায় না পেয়ে নিবিড় ভাইয়া তার পকেট থেকে এক বান্ডিল টাকা বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আর বললো…..

— সালি মানে আধি ঘর ওয়ালি ।। কিন্তু সালা তো আর না ।।তাই বলছিলাম কি চাইলে তোমরা থাকতেই পারো ।। কিন্তু একবার ভেবে দেখো তোমরা যদি এভাবে আমাদের রুমে থাকো তাহলে তো আমার আর নানা হতে পারবো না।।

বলে কি নিজের ছেলে মেয়ে দের কথা না চিন্তা করে তার ছেলে মেয়ে দের বাচ্চাদের চিন্তা করছে। তাই আর কোনো কথা বললাম না ।। টাকার বান্ডিলটা নিয়ে সাদিব সামান্তা কে চোখের ইশারা করলাম।। ইশারা করে পাশে তাকাতেই দেখলাম আবির ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। কিন্তু সেদিকে আর তাকিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম।। আসলে আমি ওদের ইশারায় এটা বোঝালাম যে,, আমি যতোক্ষণ না পর্যন্ত ওদের সেমেজ দিবো ততক্ষণ পর্যন্ত যাতে ওরা ঐ রুম থেকে বের না হয়।।
রুমে এসে পাক্কা ভুতের মতো সেজে নিলাম।। লক্ষ্য হচ্ছে,,,আপিদের বেডের নিচে লুকিয়ে থাকা আর ভয় দেখানো ।। তারপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে আপিদের বাসর ঘরে জানালা দিয়ে ঢুকে সবার চোখের আড়ালে বেডের নিচে লুকিয়ে সাদিবকে একটা মেসেজ করে চলে যেতে বললাম।।।
ওরা চলে যেতেই নিবিড় ভাইয়া দরজা লক করে দিলো আপির পাশে বসলো।। জানি অন্যোর পার্সোনাল কথা শুনতে নেই তাই কানে ইয়ারফোন গূজে নিলাম।।

কিছুক্ষণ পর অন্ধকারে কিছু জ্বলতে এক চিৎকার দিয়ে বেড থেকে বেরিয়ে এলাম।। শেষে কিনা ভূত সেজে ভয় দেখাতে এসে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম।।
আমাকে বেরিয়ে আসতে দেখে সেও বেরিয়ে আসলো ।। সে আর কেউ নয় আপনাদের সবার প্রিয় আবির ছিলো!!!!!!

চলবে…..💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::২৬

— ভূত সেজে অন্যকে ভয় দেখাতে এসে ,, সত্যি কারের ভূতে নিজের ঘাড় মটকে দিলো রে ,,,,বাঁচাও ।। বাঁচাও(বলেই আমি বেডের নিচ থেকে বেরিয়ে এলাম)

আমাকে আর আবিরকে বের হতে দেখে আপি আর নিবিড় ভাইয়া এক ঝটকায় দুজন দুজনার দিক থেকে সরে গেল।। দুজনে সরে গেছে ঠিকই ,, কিন্তু আপি আমাকে দেখে আবার নিবিড় ভাইয়াকে জরিয়ে ধরলো ।।বেচারি ভয়ে মরে মরে অবস্থা।। আমি তো এখনো ভূত সেজেই আছি ।। আমি একবার ঢোক গিলে আপি আর নিবিড় ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার আবিরের দিকে তাকাচ্ছি।। আপি আমাকে না চিনতে পারলেও নিবিড় ভাইয়া ঠিক চিনতে পেরেছে।।

— তোরা কি আমাকে শান্তিতে বাসর টাও করতে দিবি না ।। আমি মানলাম হানি এখনো ছোট তাই ও এইসব করেছে কিন্তু তুই তো অনেক বড় তাহলে তুই কেন এমন করছিস আবির !!( নিবিড়)

— আমি আবার কি করলাম 😕,, যা করার সব মিষ্টি করেছে ।। দেখলাম ,, মিষ্টি সাদিবকে হাতে দিয়ে ইশারা করছে ।। তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো ।।তাই ওর পিছু নিয়ে দেখলাম ও ভূত সাজছে।। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না,, ওর মাথায় কি দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরছে ।। তাই তো ওর আগেই এখানে এসে লুকিয়ে রইলাম।।

— হানি তুই এখানে কি করছিস!!( হিয়া)

— আমি আবার কি করলাম ।।আমি তো জাস্ট কিভাবে দেখতে এলাম ।। কিভাবে ক্রিকেট টিম বানানোর চেষ্টা করছে।। শুধু ট্রেনিং টা !! আমি তো অবুঝ বাচ্চা কিছু বুঝি নাতো তাই( করুন সুরে আমি)

— বোনের বাসর ঘরে এসে বোনকে ভূতের ভয় দেখানো হচ্ছে ।। আবার বলছিস ,, ট্রেনিং দেখতে এসেছিস ।। আজকে তো তোকে আমি ।।

বলেই আপি আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ।। জানি এখন ধরলে ,,, আর কিছু পারুক আর পারুক আমার কানটা আর থাকবে না।। তাই দৌড় দিয়ে দরজা খুলতে যাই।। সেখানে ঘটলো আরেক বিপওি ।। সবাই একসাথে দরজায় আড়ি পাতছিলো।। হঠাৎ দরজা খোলাতে সবাই আমার উপরে পরে ,, যাতে নড়াচড়া করার শক্তিটাই হারিয়ে গেল।।

— ওরে আল্লাহ গো ।। এই অবুঝ বাচ্চাটাকে বাচাও।। (চেঁচিয়ে বললাম আমি)

সবাই আস্তে আস্তে আমার উপর থেকে উঠে যাই।। আমিও উঠে পড়লাম।। আমি তো এসে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিলো।। আমরা সবাই চুপচাপ তা শুনে নিজেদের রুমে চলে এলাম।।

বেলখেনিতে বসে কফি খাচ্ছি আর রাতের তারা ভরা আকাশ দেখছি ।। হঠাৎ নিচের দিকে চোখ যেতেই কাউকে একটা দেখতে পেলাম।। কিছুক্ষণ ভালোভাবে দেখার পর বুঝতে পারলাম,, এটা আবির ।। কিন্তু এতো রাতে কোথায় যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।। আমি যে নিচে গিয়ে দেখবো তার ও উপায় নেই ।। আমি যেতে যেতেই সে গাড়ি নিয়ে চলে যাবে ।। তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে যে শাড়িটা দিয়ে ভূত সেজেছিলাম সেইটা বেলকেনির গ্ৰিলের সাথে বেঁধে নেমে গেলাম।। তারপর আবিরের দিকে হাঁটা দিলাম।। কিন্তু আমি যাওয়ার আগেই গাড়িটা চলতে শুরু করছো ।। আমিও তার পেছনে পেছনে ছুটছি।। বেশি জোরে চলছিলো না তাই গাড়ির ডিকিটা খুলতে পারলাম।। ডিকিটা খুলে সোজা ডিকিটার মধ্যে ঢুকে গেলাম।। নিজের শক্তির বাহবা দিতে লাগলাম,, হঠাৎ করেই উপরের কভার টা আমার মাথায় পরে ওখানেই সেন্সলেস হয়ে পড়ি।।

চোখে পানি পড়তেই লাফিয়ে উঠে বসলাম।। সামনে তাকিয়ে আবিরকে দেখতে পেলাম,, সে এখনো বোতলটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।। আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম,,আমি এখনো ডিকির মধ্যে ই আছি।
আমি আমার দিকে তার হাত দুটি বাড়িয়ে দিয়ে উঠতে বললো।। আমিও উঠে দাঁড়ালাম।। মাথায় একটু ব্যাথা করছে সাথে কোমরে ব্যাথা তো আছেই।। আমি উঠে দাড়াতেই আবির আমার হাতে একটা নীল রঙের শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে চেন্জ করে নিতে বললো।। কি আমি চেন্জ করবো কোথায়।। সামনের দিকে তাকিয়ে একটা কুঁড়েঘর দেখতে পেলাম।। জায়গাটা খুবই নির্জন।। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালাম।। তিনি বললেন…

— আমি জানি ,, তোমার মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন আছে।। তার কিছু প্রশ্নের উত্তর তুমি নিজেই সমাধান করে নিয়েছো।। বাকিটা আমি করে দিবো ।। কিন্তু এই অবস্থায় না ।। আগে গিয়ে এই শাড়িটা পড়ে এসো ,,তারপর।।

আমি আর কোনো কথা না বলে শাড়িটা নিয়ে কুঁড়েঘরের ভেতরে চলে গেলাম।। শাড়িটা খুলতেই ভেতরে কাজল, হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক, এক জোড়া জুমকো আর সাথে আছে কিছু সেফটিপিন।। আমি চেন্জ করে শাড়িটা পড়ে নিলাম,,আর একটু সেজে নিলাম।। এখন আর শাড়ি পড়তে সমস্যা হয় না আমার।। সেফটেপিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে নিলাম যাতে পেটের কোনো অংশ দেখা না যায়।। নাহলে আবার আবির শুরু করে দেবে তার বকবকানি।।

বাহিরে বেরিয়ে দেখতে পেলাম আবির একটা দোলনায় বসে আছে,,দোলনাটা সম্পূর্ণ বেলুন দিয়ে সাজানো।। সাদা আর নীল রঙের বেলুন।।সাদা আর নীল রঙটা আমার বরাবরই খুব পছন্দের রং।। আবির আমার কাছে এসে আমাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। তারপর কড়া কড়া গলায় বললো….

— এখন তো এখানে শরীর দেখানোর মতো কেউ নেই,,তাই বুঝি এতো প্যাকিং হয়েছো।। আমার সামনে এতো প্যাকেড হওয়ার কিছু নেই।।

বলেই আমার কোমর থেকে শাড়িটা জোরে টেনে সরিয়ে ফেললো।। সেফটিপিন দেওয়ার কারনে অনেকটা অংশ ছিলে রক্ত বের হয়ে যায়।। না চাইতেও মুখ থেকে আহহহ বেরিয়ে যায়।। রক্ত বের হতে দেখে আবির তার রুমাল টা বের করে মুছিয়ে দিতে চাই কিন্তু আমি তাকে বাঁধা দিলাম।। তিনি আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।আমি সেদিকে তোয়াক্কা না জিজ্ঞাসা করলাম….

— তো মিষ্টি প্রেমিক ।। আপনি কি নিজেই নিজের পরিচয় দিবেন নাকি আমি দিবো ।। কোনটা।।

— তার মানে তুমি যেনো গেছো ।। আমিই তোমার মিষ্টি প্রেমিক ।। এখন তোমার মনে দুটো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।।১ম.. আমি কেন তোমার সামনে মিষ্টি প্রেমিক হয়ে এলাম?? ২ য় … আর কেনই বা তোমাকে সবসময় এমন অপমান করতাম??তাই তো ।।

আমি মাথা নাড়ালাম ।। যার অর্থ হে।। তারপর তিনি দোলনায় বসে পরলেন আর আমাকেও টেনে দোলনায় তার কোলে বসালেন ।। আমার চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে আমার কাঁধে থুতনিটা রেখে বলতে শুরু করলেন…

— আমি তোমাকে আগেই বলেছি,,ভার্সিটিতে সে প্রথমদিনই আমি তোমার নেশায় আসক্ত হয়েছি ।। তোমাকে নিয়েই ভাবতাম ।। না চাইতেও তুমি আমার ভাবনায় এসে পড়তে ।। ২য় দিন তুমি যখন তোমার ফ্রেন্ডদের কাছে আমাকে প্রোপজ করার চ্যালেজটার কথা বলছিলে ,, তখন আমি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম আর তোমার সব কথা শুনে ফেলেছিলাম।।আর যখন তুমি আমাকে প্রোপজ করেছিলে তখন তোমাকে এতো কিউট লাগছিলো আর তোমার বলা কথাগুলোতে এতো মুগ্ধতা ছিলো যে ২য় বার নেশায় পড়ি ।। তখন কিছুতেই নিজেকে আটকে রাখতে পারছিলাম না,, ইচ্ছে করছিলো,, তোমার ডাকে সারা দেই ।। তাই তো তোমাকে সেদিন থামিয়ে দিয়ে ,, ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে এলাম।। তারপর থেকে তোমাকে সবসময় খেয়াল করলাম,,, হে তোমাকে অপমান করতাম কারন ,, তুমি যাতে একটু হলেও আমাকে নিয়ে ভাবো ।। ঘৃণা করো আমাকে তবুও তোমার মনের কোথাও তো আমার জায়গা থাকবে ।।একদিন না একদিন ঠিকই আমি সেই ঘৃনাটাকে ভালোবাসায় পরিনত করবো।। আর হে জানো ,, তখন প্রথম শুনেছিলাম,, তুমি আমার বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে বিপদে ফেলেছিলে তখন আমার কতোটা কষ্ট হয়েছিলো।। একদিকে সেদিন আমি তোমাকে বাজে কথা শুনিয়েছি অন্যদিকে সন্তানের ব্যরথতা।। সেদিন যখন আমার কারনে তোমার এলার্জির সমস্যা টা দেখা দিয়েছিলো,, তখন আরো কষ্ট যেনো আমাকে ঘিরে ধরেছিলো।। এবার বুঝলে !!

আবিরের কথা শুনে একটু হলেও কষ্ট হচ্ছে।। আমার জন্য ও কষ্ট পেয়েছি আর আমি সেটা একদমই বুঝতে পারি নি।।আমি পেছনে ফিরে পা দুটো উঠিয়ে আবিরের গলা আকরে ধরে বললাম…

— আর মিষ্টি প্রেমিক সাজার কারনটা ।।

— সেটা তো তোমার বিহেবের জন্য।। আমি তোমার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি ,, তুমি আমার আগে ৩২ টা ছেলেকে প্রোপজ করেছো ।। তাই যদি আমি তোমার সামনে যাই তাহলে তুমি বলবে তুমি চ্যালেজটা জিতে গেছো ।। তাই মিষ্টি প্রেমিক হয়ে তোমার জীবনে এসে ,,তোমার মনে ভালোবাসা জন্ম দিয়েছি ।। এবার তো বুঝলে !!( আমার নাক টেনে আবির)

— হম আমার মিষ্টি প্রেমিকটা ।।(আবিরের গালে একটা টাইট কিস করে আমি)

— এবার বলো ।।। তুমি কিভাবে জানলে ,, আমি তোমার মিষ্টি প্রেমিক ।।(কৌতূহল নিয়ে আবির)

— তাহলে প্রথমে থেকে শুরু করি ।।১ম তো …. সেদিন আমাকে অপমান করার পর আমার বেডে রক্তের দাগ,, পরের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে জানতে পারি ,,আপনি আমার গায়ে হাত তোলার জন্য নিজের হাত কেটেছিলেন।।২য় … তো আপনি যখন আমাকে খুঁজতে ক্লাভে গিয়েছিলেন ।। ৩ য় তো আমি যতোদূর জানি মিষ্টি প্রেমিক বলেছিলো ,,আমার বেসলেট তার কাছে কি আমি আমার বেসলেটটা আপনার রুমে দেখেছিলাম।।৪ থ তো আপনি আমার কাছে আসলে আমি তেমন ফিল করি তেমনটা আমি মিষ্টি প্রেমিক আসলে ফিল করি ।। আর ৫ম তো সেদিন আপনি আমাকে তাহসিনের সাথে দেখা রিয়েক্ট করা।।আর শেষ হচ্ছে… মনে আছে ,,কালকে যখন আপনি আমাকে জরিয়ে ধরেছিলেন,,তখন আমি আমার পা দিয়ে আপনার পায়ে স্লাইড করেছিলাম,,,

— হম!!!!

— তখন আমি আপনার পায়ে আলতা লাগিয়ে দিয়েছিলাম।। তারপর গিয়ে চেক করে দেখি আপনার পায়ে আলতা আছে ।। তাই সিউর হয়ে গেলাম।।কেমন দিলাম এবার বলুন!!( ভাব নিয়ে আমি)

— ও আচ্ছা,,, তাই বুঝি ।। তাহলে চলো !! (আবির)

— কোথায়??(আমি)

— গেলেই দেখতে পাবে।।

বলেই আবির আমাকে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিলো।। আমিও আবিরের সাথে সাথে হাঁটছি ।। কিছুদূর আসতেই দেখতে পেলাম হাজারো প্রদীব দিয়ে লাভ বানানো ।। আর তার মাঝে লেখা …” আমি বিষ্টির””
যার মানেটা আমার অজানা ।। আমি আবিরের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকালাম,।।। তিনি আমার হাত ধরে লাভটার ভেতরে নিয়ে গেল।। তারপর আমাকে পেছন ফিরে দাড় করিয়ে দিয়ে ,, আমার পিঠের সাথে তার বুক মিলিয়ে দিলো।। আমার হাত দুটো কাকতাড়ুয়ার মতো সোজা করে দিয়ে,, চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা হাওয়া অনুভব করতে বললো ।। আমিও চোখ বন্ধ করে হাওয়ায় অনুভব করার চেষ্টা করছি।।

চলবে…💞💞