কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-৩৫+৩৬

0
2011

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩৫

এসেই আমার পোড়া হাতটা পেছন থেকে সামনে এনে জোরে চেপে ধরলো।।ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি।।
চোখের অশ্রু যেন টলটল করছে।।কান্না মিশ্রিত গলায় বললাম….

— ছছারুন ,,লাগছে আমার।।

— লাগলে লাগুক ।। লাগার জন্যই তো ধরেছি।। (আবির)

কথা বলছে আর আমার দিকে এগুচ্ছে,,,আমি পেছনে পিছিয়ে যেতে যেতে পেছনে থাকা দেওয়ালটার সাথে লেগে গেলাম।। কিন্তু তবুও আবির দমে গেল না,,সে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে হাতটা আরো জোরে চেপে ধরে বললেন….

— তোমার সাহস হয় কি করে এতো বড় একটা সেনসিটিভ কথা আমার কাছ থেকে লুকানোর।। যখন তুমি আমাকে চোখ বন্ধ করে খাইয়ে দিতে চাইলে,,তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো।।তাই তখন একটু একটু চোখ ফাঁক করে দেখেছিলাম,, তোমার হাতের ব্যান্ডেজ।। আর তখন কিচেনে তো তুমি হাতে ব্যাথা পেয়েছিলো তাই না।।

আমি হাত সহ্য করতে পারলাম হাতেই এই যন্তন্য ।। কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদেই দিলাম।।

— মিষ্টি ,,এই কি হয়েছে কাঁদছো কেন ?? (আবির)

আমি চোখ দিয়ে হাতকে ইশারা করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম….

— আপনি খুব পঁচা,, সবসময় আমাকে কষ্ট দেন।। আমার হাতে প্রচুর জ্বলজে,,আর আপনি তা যেনেও আমার সাথে এমন করছেন।।

আমি বলতেই আবির আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে আমাকে টেনে বেডে বসিয়ে দিলো ।। আস্তে আস্তে আবার আমার হাতটা ধরে ফু দিতে লাগলো।। আমার এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছি।। তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আমার কাছে না এনে আলমারিতে তুলে রাখলো।। কি করছে কিছুই বুঝতে পারছি না।।

— কি করছেন টা কি আপনি !! দেখছেন তো আমার হাত জ্বলছে ,, একটু কমানোর বদলে আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছেন???

তিনি কোনো কথা বললেন না,,, সোজা আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালেন।। রুমে এসে বেডে শুইয়ে দিয়ে ব্লাকেটটা টেনে আমার কোমর অবধি দিয়ে,, টেবিলের উপর থেকে একটা বাটি নিয়ে তার টাকনা টা খুললেন।। সেখানে আমি নুডুলস দেখতে পেলাম।। নুডুলস দেখে আমি আর লোভ সামলাতে পারলাম না।। বাটিটা কেড়ে নিবো ,, কিন্তু তা আর হলো না,, নিতে গেলেই জোরে দিলো এক ধমক ।। আমি চুপ করে মাথা নিচু করে আছি।। তিনি এক চামচ করে আর মুখে তুলে দিচ্ছে।। কিন্তু আমার যে নুডুলস এক চামচ করে খাওয়ায় অভ্যাস নেই।। নুডুলস পেলেই আমি হাত দিয়ে সব একসাথে মুখে পুড়ে দেই।। আপাতত এই ইচ্ছে টা ত্যাগ করতে হচ্ছে।। আমি চুপ চাপ সবটা খেয়ে ফেললাম।। শেষ করতেই আবির আমাকে পানি খাইয়ে দিয়ে ।। আমার পাশে শুয়ে পড়লেন।। তারপর কড়া কড়া গলায় বললেন…

— এখন চুপচাপ ঘুমাবে ,, এতো টুকু জানি ।।

— আমি তো এইমাএ উঠলাম।। সাথে তো আপনিও উঠেছেন ।। আপনি কি এখন ঘুমাতে পারবেন।।

— আমি যদি ঘুমাই,,তাহলে তুমি ঘুমাবে তো ।।।

— আচ্ছা ,,আপনি নুডুলস টা বানালেন কখন ।।আপনি তো সবসময়ই আমার সাথেই প্রায় ছিলেন।।আর আমি যখন আপির রুমে গেলাম,,আই হোপ এতটুকু সময়ের মধ্যে কিছুতেই আপনি নুডুলস বানাতে পারবেন না।।( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— বলবো ,,তাহলে ঘুমাবে তো ।।

— আচ্ছা ।।(মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে আমি)

— ঠিক আছে,,তাহলে শোনো।। যখন তুমি জামা কাপড় ধুয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে ,,তখন ।।আমি ভেবেছিলাম,, তোমার হাতে ব্যাথা তুমি জামা কাপড় গুলো ধুবে না কিন্তু না ,,,তুমি ধুয়ে ফেললে।।তাই গিয়েছিলাম তোমার জন্য নুডুলস বানাতে ।। এবার তাহলে ঘুমাও(আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবির)

আমিও আর কথা বাড়ালাম না ঘুমের পড়লাম।।জানি ঘুম আসবে না,, তবুও একটু চেষ্টা করলে দোষ হয় না।। কিন্তু না কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।।

🍁 🍁 🍁

ঘুম থেকে জেগে এমন কিছু হবে সেটা আমার আশার মধ্যে ছিলো না।। ঘুম ভাঙতেই পুরো রুমে তখন অন্ধকার বিরাজ করছিলো।। জানি এখন রাত তাহলে অন্ধকার কেন।। হয়তো আবিরও ঘুমিয়েছে,,যাতে আলো চোখে পড়তে না পারে তাই অফ করেছে।।আমি পাশে হাত দিয়ে আবিরকে খোঁজার চেষ্টা করছি,, কিন্তু না পুরো বেড একদম ফাঁকা।। আমি আস্তে আস্তে উঠে লাইট অন করতেই পুরো চমকে গেলাম।। পুরো রুম ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।। মাঝে লাল রঙের বেলুনও আছে।। আজকেও হাজার গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো ।। আমি ফুলগুলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে ,,একটা ফুল তুলে,,তার স্মেল নিতে লাগলাম।।
এর মধ্যেই পেছন থেকে আবির আমার হাত ফুলটা নিয়ে নিলো।।আমি পেছনে তাকিয়ে আবিরের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছি।। তখনই আবির হাঁটু গেড়ে আমার সামনে বসে পড়লো।।

— খুব ভালোবাসি আমি আমার মিষ্টি বউটাকে।। সারাজীবন আগলে রাখবো তাকে আমার এই বুকে কখনো ছেড়ে যেতে দিবো না।। (বুকে হাত রেখে) কি ভাবছো ,,এতো ফুল দিয়ে কেন এই রুম সাজিয়েছি।। আমি তোমার সাথে আমার জীবনটা আবার সুন্দর করে সাজাতে চাই ।। তোমার ভালোবাসার পরশ আমার সারা শরীরে মাখতে চাই ।। ঠিক করে নিতে চাই তোমার আর আমার যত মান অভিমান আছে।। দেবে কি একটা সুযোগ আমাকে ।। তোমার সব অতীত বুলিয়ে দিয়ে,,, নতুন করে বাঁচানো।।তুমি ভাবছো ,,এতোই যখন ভালোবাসি তাহলে সেদিন আমার ভালোবাসার মানুষটিকে একা সেদিন কেন ছেড়ে এলাম,,আমি ছেড়ে আসি নি তোমার।।। আমার ছিলাম খুব কাছে।। আমি ঠিক সেভাবেই আগলে রাখবো,, সেভাবে সেদিন আগলে রেখেছিলাম।।(ফুলটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে আবির)

আবিরের এতোক্ষণ বলা কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।। কিন্তু এবার আমার শুনতে পারলাম।। আবিরের বলা শেষ কথাগুলো আমার অতীতটাকে আবার মনে করিয়ে দিয়ে।। আবিরের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলাম।। মাথাটা ধরে বেডে বসে পড়লাম।। কেমন যেনো হিংস্র মনে হচ্ছে নিজেকে।। তাই নিজের মাথা চেপে রেখে হিংস্রতা কমানোর চেষ্টা করছি।।

— মিষ্টি কি হয়েছে তোমার।।মাথা ব্যাথা করছে।। শরীর খারাপ লাগছে।। ডাক্তারে ডাকবো।। কি হয়েছে মিষ্টি প্লিজ বলো ,, আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।।(বেডে বসে আমার হাত ধরে আবির)

আমার হাত ধরতেই এক ঝটকায় তার হাতটা সরিয়ে ফেললাম।। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললাম…

— প্লিজ আপনি এখন থেকে চলে যান ,,আমাকে একটু একা থাকতে দিন ।। পারছি না,, আপনার এই বিহেব নিতে।।প্লিজ জান…!!

— মিষ্টি তোমার শরীর বেশি খারাপ লাগছে ,,তাহলে থাক আজকের রাতটা।। কিন্তু আমাকে তো তোমার পাশে থাকতে দাও ।।।(করুন সুরে আবির)

— কি থাকবে আজকে রাতটা হে …..!! ঘৃনা করি আমি আপনাকে ।। হ্যা ভালোবাসি,, আগেই ভাসতাম,, কিন্তু তার চেয়ে বেশি ঘৃনাটাই করি।। আপনি আমাকে ভালোবাসেন , বললেন না একটু আগে।। কিসের ভালোবাসা ,,যেখানে কোনো বিশ্বাসই নেই।। জানভি আমার ভাই হয় ।। ও আমাকে ভালোবাসতেই পারে ,, কিন্তু আমি তো তাকে ভাইয়ের চোখে দেখি ।। আমি চাইলেই ওর কাছে ফিরে যেতে পারতাম ,,, কিন্তু আপনাকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।। আর তার জন্য আপনি একটা মেয়েকে মাঝ রাতে,,মাঝ রাস্তায়,,, মাঝ বয়সের একটা মেয়েকে ফেলে একা চলে এলেন।। আর তাকে ফেলে এলেন ,,যাকে আপনি ভালো বাসেন।। জানেন আমি জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত আপনাকে খুঁজেছি।।(একটু থেমে আবার আমি) কেন আমাকে ভালোবাসেন আপনি ,,এটা শরীরটার জন্য ।। তাহলে আমি আপনাকে বলছি ,, নিন আপনার প্রয়োজন মতো নিজের চাহিদা মিটিয়ে নিন।।(শাড়ির আঁচলটা টেনে নিচে ফেলে দিয়ে আমি) দাঁড়িয়ে আছেন কেন ,,আপনি আপনার কাজ শুরু করুন ,,এরজন্যই তো আপনি আমার মতো একজন ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করছেন।। যদি আপনার দেহ ই দরকার ছিলো তাহলে পতিতালয়ে গেলেই পারতেন।। আমার কাছে কেন এলেন।।

আর কিছু বলার আগেই ঠাস,,ঠাস করে ২ দুটো চড় বসিয়ে দিল আমার গালে।। শাড়িটা টেনে খুলে ফেললো আমার থেকে।। নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে রাগ কন্টাল করে বললো….

— তোর কি মনে হয় সে….!! আমি শুধু তোর এই দেহটার জন্য তোর কাছে পড়ে আছি ।। আরে দেহটা যদি পেতেই চাইতাম ,,,তাহলে তোর নিজেরও আটকানো ক্ষমতা ছিলো না আমায়।। আমি তোর স্বামী হই ,, এটা আমার হক ।। যার থেকে বন্ধিত করার অধিকার তোর নেই ।। আমি শুধু চেয়েছিলাম,,তোকে ভালোবাসতে।। তোকে নিয়ে আমার বাকি জীবনটা সুন্দর করে সাজাতে।।তোর সমস্ত অভিযোগ আমি আমার এই বুকে চেপে রেখে তোর অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করেছি ।। তুই বুঝবি না,,, ভালোবাসার মানুষ কষ্টে থাকলে কতোটা কষ্ট পেতে হয়।। আমার যদি সেটা তার নিজের দোষে হয়।। সারাদিন অপেক্ষা করতাম কখন রাত হয়ে আমার সেই প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পারবো।। প্রতিদিন রাতে এসে তোকে দেখে যেতাম ‌।।

চলবে…💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩৬(ফিরে দেখা)

— তোর শুধু দেহটাই সুন্দর,,,মনটা কুচ্ছিতে ভরা ‌। কাউকে ভালোবাসার যোগ্যতা তোর নেই।। একবারও আমার ভালোবাসা টা দেখলি না,,,ভাবলি না,,আমি কিকরে তোর ক্ষতি হতে দিতে পারি ।।

— মমমমানে..!!( কাঁপা কাঁপা গলায় আমি)

— মানে তুই এখনো ঠিক তেমন আছিস যেমন তোর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো।।তাহলে শোন সেদিন কি হয়েছিলো।।।

_______ ফ্লাসব্যাক__________

আবির হানিতে সেদিন গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলো ঠিকই ।। কিন্তু তাতে ছেড়ে একপাও চোখের আড়াল হয়নি।। হ্যা ,,তার অভিমান হয়েছিলো ঠিকই ।।। কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে একা ছেড়ে যাওয়া যায় না।। আর বিপদে তো কখনোই না।।
আবির গাড়ি নিয়ে শো শো শব্দ করে একসময় হানির চোখের আড়াল হয়ে গেল ঠিকই,, পরে গাড়িটা একটু দূরে রেখে আবার ফিরে আসে ।। একটু দূরে লুকিয়ে থেকে হানির উপর নজর রাখতে থাকে।। সে জানতে চাই ,,হানি আবিরকে কতোটা বিশ্বাস করে ।।আবির তার তার ফিরে আসবে ,,এই আশায় সে আবিরের জন্য অপেক্ষা করে কিনা।। হানি ঠিকই অপেক্ষা করছিলো ,, যাতে আবির একটু শান্তি পেল।।
হঠাৎ আবিরের ফোনে ফোন আসলেই,,সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ,,তার বাবা ফোন করেছে ,,তাই সে রিসিভ করে নিলো।। বাড়িতে আবির আর হানিকে পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় ফোন করেছে।। আবির বাবার সাথে কথা বলে ফোনটা রেখে পেছনে তাকাতে ,, হানিকে দেখতে পেল না।।সে দৌড়ে সেখানে গেলো ,,যেখানে হানি বসা ছিলো।। সেখানে হাতের চুড়ি ভেঙ্গে পড়ে আছে ।। পাশে তাকাতেই একটা গাড়ি শো শো শব্দ করে বেরিয়ে যেতে আবিরের বুঝতে বাকি রইল না,,হানিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।। তাই আবির গাড়ির পেছনে ছুটতে লাগলো।। কিন্তু গাড়ির পেছনে ছুটে গাড়ি ধরতে পারলো না।। তাই গাড়ি নিয়ে আবার ছুটতে লাগলো। । ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পাগলের মত চারপাশে দেখছে ।। গাড়িটা অনেক আগেই আবিরের চোখের আড়ালে চলে গেছে।। আবিরের কোনো দিকে কোনো খেয়াল ই নেই,,,সে শুধু হানিকে খুঁজতে ব্যস্ত।। হঠাৎ গাড়ি একটা গাছের সাথে বেঁধে এক্সিডেন্ট করে ।। সিট বেল্ট না বাঁধার কারণে মাথা ফেটে ব্লিডিং হচ্ছে,, কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা না করে আবার ড্রাইভ করে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।। কিন্তু এক্সিডেন্টের কারনে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়ে ।। যাতে গাড়ি আর চলছে না।। তাই আবির আর অপেক্ষা না করে গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে চিৎকার করে হানিকে ডাকছে,, কিন্তু কেউ সারা দিচ্ছে না।।
এভাবে অনেকক্ষন ডাকার পর আবির গিয়ে থামে একটা টং দোকানের সামনে।। আবির তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে এখানে কোনো গাড়ি যেতে দেখেছে কিনা ।। দোকানদার হ্যা জানায়।। সে জঙ্গলের দিকে একটা পুরোনো বাড়ি দেখিয়ে দেয় আবির কে।।
আবির অনেকক্ষন দৌড় সেই বাড়ির সামনে যেতে পারে ।। কিন্তু চারপাশে ছেলেগুলো ঘুরছে ।। সে সবার চোখের আড়ালে ভেতরে ঢুকে যায়।। সেখানে অনেক গুলো রুম দেখতে পেল ,, কিন্তু কোনটায় হানিকে রাখা আছে ,,সেটা বুঝতে পারছে না।।কারন সব রুমের দরজায় বাহিতে থেকে তালা দেওয়া।। সব রুমে চেক করার পর একটা রুমের ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পেল,,, যেখানে স্পষ্ট বলছে…

— পপপিজ আমমাকে ছেড়ে দিন ভাইয়া।।

কন্ঠটা শুনে আবিরের চিনতে বাকি রইল না,,,যে এটা হানি ।। কিন্তু বাহিরে থেকে বড় একটা তালা দেওয়া ।। চারপাশে খুঁজেও একটা ইট কিংবা কোনো কিছু পেলো না,,,সেটা দিয়ে তালাটা ভাঙা যাবে।। হাতের কাছে কিছু না পেয়ে হাত দিয়ে আঘাত করে তালাটা ভাঙলো।। কিন্তু হাতের অবস্থা নাজেহাল ।। হাতে বের ব্লিডিং হচ্ছে।। আর তাতে পুরো মাটি লাল হয়ে গেছে।।দরজা খুলে আবির ভেতরে গিয়ে যা দেখলো ,, তাতে একদমই প্রস্তুত ছিলো না সে।। রুমের ফ্লোরে রক্তে মেখে গেছে।। শাড়িটা নিচে পড়ে আছে।। হানি বেডের উপর অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে ।। চুলে রক্তে মেখে আছে ।। ব্লাউজের হাতাটা ছেঁড়া ,, শরীর নখের দাগ স্পস্ট।। বেডে শুয়ে আছে ।। আর ঐ লোকটা হানির দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে।। হানিকে এই অবস্থায় দেখে আবিরের বুকের ভেতর পুরে যাচ্ছে ,,, নিজেকে এই ভেবে শান্তনা দিচ্ছে,,তার মিষ্টি এখনো সেইভ আছে।। দস্তাদস্তির কারনে তার এই অবস্থা।।

পরক্ষনেই তার চোখ দুটি লাল হয়ে গেল।। আবির পেছন থেকে জোরে আঘাত করলো ,,লোকটার মাথা ।।সাথে সাথে সে চিৎকার করে জ্ঞান হারালো।। তারপর হানির কাছে গিয়ে হানিতে ডাকছে,, কিন্তু কোনো শব্দ তার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।। তার হানিকে কোলে করে বেরুতে গেলে ,,,বাটি ছেলে গুলো এসে হাজির হয়।। আবির হানিকে বাহিরে মেঝেতে শুইয়ে দিয়ে ,, ওদের ধাক্কা দিয়ে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা লক করে সেখান থেকে ওদেরই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।।
হানি মাথা থেকে এখনো ব্লিডিং হচ্ছে যাতে ওর লাইফ রিস্ক হতে পারে,,নাহলে হয়তো আবির ওদের ওখানে মেরে পুতে দিয়ে আসতো ।।
শাড়িটা এখনো ওখানেই পড়ে আছে ,,, তাই হানির পড়ে আসা জিন্স আর টি শার্ট টা তার গায়ে জরিয়ে তার শরীর ডেকে দিলো আবির।।
পুরো হসপিটালে নিরবতা ।। হানিকে হসপিটালে এডমিট করে বাড়ির সবাইকে ফোন করে সবটা জানান আবির।। সবাই এসে এক ধ্যানে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে।।
৩ দিন পরও যখন হানির কোনো জ্ঞান ফিরছিলো না তখন তাকে ইমিডিয়েট ঢাকায় ট্রান্সফার করা হয়।।।
৫ দিন পর হানির জ্ঞান ফিরে ,,তখন প্রায় ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছিলো।। আর এই ৫ দিনে আবিরের অবস্থায় দেখার মতো ছিলো।। সারাক্ষণ হানির হাত দুটো ধরে বসে ছিল,,, কিছু খাইনি।। ভেবেছিলো হানি জ্ঞান ফিরে তার নাম ধরে ডাকবে ।। কিন্তু তা হয়নি ,,সে তার দিকে একবারও চোখ তুলে তাকায় অবধি নি।।।

_________ বর্তমানে____________

আমি একবার ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়িটার দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার দরজার দিকে তাকাচ্ছি। একটু আগে আমাকে কথাগুলো বলে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।। আবিরের বলা বলা কথাগুলো এসে তীরের মতো বিঁধছে আমার শরীরে।। আবির আমার জন্য পাগলের মত করেছে আর আমি কিনা তাকে কষ্ট দিয়ে নিজের সবার থেকে লুকিয়ে অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে রেখেছি।।আমার কোনো মুখ আবিরের কাছে যাওয়ার।। কিন্তু আবিরের কাছে আমাকে যেতেই হবে,,ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে তার কাছ থেকে,,,, মেঝে থেকে শাড়িটা তুলে কোনো রকম শরীরে পেঁচিয়ে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।।
গিয়ে দেখি আবির স্মোকিং করছে।। এই প্রথম আমি আবিরকে স্মোক করতে দেখছি।। আবির ধীর পায়ে আবিরের কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখতেই সে একবার আমার দিকে তাকিয়ে,,হাতটা সরিয়ে দিয়ে আমার স্মোম করতে লাগলো ।।

— আবির আই এম এক্সটেমলি সরি।।আসলে আমি….

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হনহন করে নিচে চলে গেল।। আমিও আবিরের পিছুপিছু নিচে গেলাম ,,, গিয়ে দেখলাম আবিরের রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ,,,অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে।। আমি আবিরের সামনে গিয়ে তার চুলে হাত দিতেই,,,সে উঠে বসে কড়া কড়া গলায় বললেন….

— তুমি কি আমাকে এই রুমে থাকতে দেবে না ।। যদি থাকতে না দাও সোজা সোজা বলো,,আমি চলে যাচ্ছি !!!

বলেই আবার শুয়ে পরলেন।।

— আবির প্লিজ আমার একটা কথা তো শুনো ।।

আবির উঠেই বাহিরে চলে গেলো।যাওয়ার আগে বাহির থেকে দরজা লক করে দিয়ে গেল।। যাতে আমি যেতে না পারি ।। আমি দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছি ।। কিন্তু খুলছে না ।। আমি কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই বসে পড়ি ।। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই জানিনা।।।

🍁 🍁 🍁

দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ালাম।। আবির রুমে ঢুকে একটা খাবারের প্লেট টেবিলের উপরে রেখে ,, আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,….

— এই খাবার রাখা রইল খেয়ে নিও আর হে ,,আমি আজকে একটু বেরুবো ।। আসছি !!!

— কোথায় যাবেন আপনি …!!!( কৌতূহল নিয়ে আমি)

চলবে….💞💞