কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-৩৭+৩৮

0
2181

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩৭

— আমি কোথায় যাবো এখন কি সেটা তোমাকে বলে যেতে হবে।।দেখ ভালো ভাবে বলছি,, নিজের লিমিটের মতো থাকো ,,,আর উপর খবরদারি দেখাতে আসবে না।।(কড়া কড়া গলায় আবির)

— আবির আমি সত্যি অনুতপ্ত।। আমি অনেক বড় ভুল করেছি আমি জানি,,প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো ,, ছেড়ে চলে যাওয়া তো দূরে থাক,,, তোমাকে অবিশ্বাস অবধি করবো না ।।(আমি)

আবির আমার কথা শুনেও না শোনার ভান করে বাহিরে থেকে দরজা লক করে চলে গেল,,আর বলে গেল খেয়ে নিতে।। আমিও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম।। আমার একদমই না খেয়ে থাকার অভ্যাস নেই।।

সেই সকালে বেরিয়েছে এখন রাত ৮ টা ,,এখনো আশার নাম নেই ,,, কিন্তু এলেই তো আমার কথা বলবে না।। কি করবো ,,সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।। অবশেষে ভাবলাম আজকে সাজবো,, আবিরের জন্য ।।তাহলে ও আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারবে না।। একটা লাল রঙের শাড়ি পড়ে নিলাম।। চোখে মোটা করে কাজল,, ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক।। চুলগুলো হাত খোঁপা করে কানে একজোড়া ঝমকো ,,, হাতে মোটা বালা।। আয়নাতে নিজেকে দেখছি ,,একদম বাড়ির বউ বউ লাগছে।। এর মধ্যেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আবির।। আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ।।এক হাতে তার একগুচ্ছ গোলাপ আরেক হাতে খাবারের প্লেট।। ফুলগুলো আর খাবার টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ার থেকে ট্রাউজার আর টি শার্ট বের করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।। আমি ধীরে পায়ে হেঁটে গোলাপ গুলোর কাছে গেলাম।। কালো রঙের গোলাপ দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার ,,, আবিরের জন্য দেখা হলো।।
শাওয়াল নিয়ে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে আবির ।। অনেক সুন্দর লাগছে তাকে ।। আমি আস্তে করে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে ,,তাকে আমার দিকে ফিরিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,, কেঁদেই দিলাম।। প্রথমে আবির আমাকে ছাড়াতে চাইলে আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি ,,তখন আর না পেরে আমাকেও জরিয়ে ধরে ।।

— আমি সত্যি বলছি আবির আমি আর কখনো আপনাকে কষ্ট দিবো না,, সারাজীবন আপনার সাথে থাবো।। এবার আর রেগে থেকো না ।। (কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি)

— কে বললো আমি তোমার উপর রেখে আছি।। আমি মোটেও রেগে নেই ।। আমি কি আমার মিষ্টির উপর রেগে থাকতে পারি ।।আর তোমাকেও সারাজীবন আমার সাথেই থাকতে হবে ।।

— তাহলে যে আপনি আমার সাথে কথা বলেন কি ।। সারাদিন বাড়ির বাহিরে ছিলেন।।( মাথা তুলে আমি)

— এটা তোমার শাস্তি ছিলো।। যাতে আর নেক্সাস টাইম থেকে এমন না করো।। বুঝলে।।চল এবার খেয়ে নিবে ,, ঘুমাবেন না ।।( আমার নাক টেনে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আবির)

— বলছিলাম কি,,কালকে যে কাজটা বাকি ছিল,,সেটা কিন্তু আজকে করাই যেতে পারে ।।

— কালকে আবার কি কাজ বাকি ছিলো!!!( একটু ভেবে আবির) ও আচ্ছা,,তো সোজা ভাবে বললেই তো হয় ,,, আমার আদর পেতে ইচ্ছে করছে।।

— ছিঃ কথার কি ছিড়ি।।

— হইছে আপনার জ্ঞান দেওয়া ম্যাম তাহলে কিছু খেয়ে নি।।

আবির আর আমি একসাথে ডিনার করে নিলাম।। তারপর পাড়ি জমালাম এক ভালোবাসার রাজ্য ।। যেখানে শুধু আমি আর আবির ।।‌ সাক্ষী হয়ে থাকলো ঐ দূর আকাশের চাঁদ।।

🍁🍁🍁

ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আবিরের বুকে আবিস্কার করলাম।। আবির এখনো ঘুমিয়ে আছে ।। একদম নিঃপাপ বাচ্চাদের মতো লাগছে আজ তাকে ।। ইচ্ছে করছে আর ঠোট দুটি তার কপালে ছুঁয়ে দেই।। আমারই তো হাসবেন্ড ।।তাই আর ওয়েট করলাম না,,, দিয়ে দিলাম।। দিয়ে উঠে আসবো,,তখনই আবির আমার হাতটা টেনে তার খুব কাছে নিয়ে গেল।।

— তুমি কিন্তু এটা ঠিক করলে না ,, আমার ভার্জিন একবারে নষ্ট করে দিলে ।। দিলে তো দিলেই শুধু কপালে কেন ,,এখানেও একটু দাও !!( ঠোঁট দুটি কে উদ্দেশ্য করে আবির)

— লাইক সিরিয়াসলি আবির,,আপনি এখনো ভার্জিন।। রাতে এতো কিছু হওয়ার পরেও ।। আমি তো সেদিনই আপনার ভার্জিন নষ্ট করে দিয়েছি ,, তাসফির বার্থ ডে পার্টিতে।।(দাঁত কেলিয়ে আমি)

— হে তো দাও !!( ঠোঁট দুটি উদ্দেশ্য করে আবির)

উঠতেই পারছি না,,শাড়িটা একদম খুলে গেছে।। তাই রাজি হয়ে গেলাম।। তিনি চোখ বন্ধ করতেই আমি আরেকটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে দৌড়।।আর বাহিরে থেকে একটা কথাই শুনতে পেলাম চিটিং।।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছি আর আড় চোখে আবিরকে দেখছি ,,সে এখনো শুয়েই আছে ।। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। হঠাৎ উঠেই আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ,,,আমার চুলগুলো সরিয়ে কাঁধে তার থুতনিটা রাখল।। আস্তে শাড়ির ফাক দিয়ে হাত দিয়ে সেদিনের খুলে রাখা বেলি চেইনটা পরিয়ে দিলেন ,,,আমি চোখ দুটো বন্ধ করে শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে চেপে ধরে আছি।। হাতটা টেনে নিয়ে রিংটা পড়িয়ে দিলেন।। হাঁটু গেড়ে বসে আমায়ে পায়ে নূপুর টা পরিয়ে দিলেন।। আমি মাথা নিচু করে আছি দেখে আমার মাথাটা উপরে তুলে বললেন….

— এগুলো কখনো খুলবে না তুমি ,,,সারাক্ষন তোমার সাথে রাখবে ।। সেদিন খুলেছো কিছু বলিনি ,,তার মানে এই না,, আবার খুললে কিছু বলবো না।। (আমি মাথা নিচু করে রেখেছি,,তা দেখে আবার বলে উঠলেন ) এখনো লজ্জা পাচ্ছো তুমি।। তাহলে লজ্জা ভাঙার কাজ তো করতেই হয় ।।
বলেই আমার দিকে দিকে এগুতে লাগলো ।। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ।। আবির বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ।। যেটা বললো ,,সেটা আমার ধারনার ই বাহিরে ছিলো।। কালকে রাত ১০ নাগাদ জানভিকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে।। জানভি সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে ।। দুপুরের দিকে জানভি বাড়ি ফিরেছে।। কিন্তু তার কোনো রেসপন্স না পেয়ে দরজা নক করে ,,যখন দরজা খোলে তখন তার হাতে কতো গুলো ঘুমের ওষুধ পাওয়া যায়।।

🍂 🍂 🍂

খবর শোনা মাএ আমরাও বেরিয়ে পড়লাম।। হসপিটালের করিডোরে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ।। জানভির বাবা মা তো কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছেন।। আমি যেতেই ফুফু বলে উঠলো….

— ভাইজান,,,,জীবনে তোমার সব সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি আমি ,, তুমি যা বলেছে তাই করেছি ।। কিছুই চাই নি,,,আজ চাইছি ।।প্লিজ হানিকে আমায় দিয়ে দাও ,,ওকে পেলে আমার ছেলের ভালো হয়ে যাবে ,, আগের মতো হাসি খুশি হয়ে যাবে ।। জীবনে যখন আমি নিজে মা হতে পারি নি ,,তখন এতিমখানা থেকে ওকে এনে আমি মাতৃত্বের স্বাদ নিয়েছি ।‌। ওকে পেয়ে আমি বাঁচতে পেরেছি নতুনভাবে।। জান পেয়েছি ,,তাই ওর নাম রেখেছিলাম জানভি ।। যদি ওর কিছু হয়ে যায় আমি মরেই যাবো।। ভিক্ষা দাও আমার হানিকে!!!!( কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জেরিন)

— ফুফু এইসব কি বলছো তুমি ,,আমি বিবাহিতা মেয়ে।। আমার স্বামী আছে ,, সংসার আছে ।। আমি না পারবো তোমার এই কথা রাখতে।। পাপা বললেও না ।। জানকে বোঝালে ও ঠিক বুঝবে ।। (আমি)

— আপনাদের পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে,,,যান গিয়ে দেখা করে আসুন ,,আর হে শান্তভাবে কথা বলবেন,,উত্তেজিত করবেন না।।(নার্স এসে )

নার্সের কথা শুনে সবাই ভেতরে চলে গেলেও গেলাম না আমি ।। একটা চেয়ারে বসে পড়লাম আমি।। আবির আমার পাশে বসে ,,আমার হাতে রেখে বললো…..

— মিষ্টি তুমি একদম ভেঙে পড়ো না,,তোমাকে জানভিকে বোঝাতে হবে ।। আমি জানি আমার মিষ্টি পারবে ।। আমার জন্য।।।

— আচ্ছা আবির ,,আমি পারবো তো ।।

— পারবে ,, এবার ভেতরে চলো ।।।

তারপর ভেতরে গেলাম।। আমি ভেতরে যেতেই সবাই বেরিয়ে গেল।। আমি আস্তে করে জানভির পাশে বসে পড়লাম।।

— জান আমার সাথে কথা বলবে না।। দেখো আমি এসেছে তোমাকে দেখতে ।। এবার মুখ ফিরিয়ে থাকবে।।

— মিষ্টি জান তুই এসেছিস।। ভালো করেছিস ।। কেমন আছিস তুই।। আবির তোকে কোনো কষ্ট দেয় না তো ।।

— না,, জানভি আমি খুব ভালো আছি ।। খুব সুখে আছি ।।আমি তো আবিরকে ভালোবাসি।। আর ওর সাথে থাকলেও আমি ভালো থাকবো ।। তুমি কি চাই না আমি সুখে থাকি,,শান্তিতে থাকি ,,,ভালো থাকি !!!( করুন সুরে আমি)

চলবে…💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩৮

— এতো সহজে বলে দিতে পারলি,, তুই আবিরকে ভালোবাসিস ।। দেখিস ,, আবির তোকে ভালোবাসে না।এটা তার মোহ ।।আর তোর কি মনে হয় ,, আমি চাই না,,তুই সুখে থাকিস।। পৃথিবীতে যদি একজন মানুষ তোকে সুখী দেখতে চায়,,তাহলে সেটা এটা জানভি।। তোর কাছে হয়তো আমি ভিলেন,, কিন্তু না এটা আমার ভালোবাসা।। তোকে আমি দেখতে চাই,,সেটা যদি আবিরের সাথে হয় ,,, তাহলেও আমি খুশি।। ভালো থাকিস,,মিষ্টিজানটা আমার।।

— থেংকিউ জান।। তাহলে এখন নিজের জীবনটা গোছাতে আমার জন্য একটা মিষ্টি ভাবি নিয়ে এসো তো ।। দেখবে তুমি খুব তাড়াতাড়ি মুভ অন করতে পারবে ,, আমার বিশ্বাস।।(আমি)

— মুভ অন।। আমি সত্যিই চাইনা না মুভ অন করতে ।। মুভ অন করতে হলে যে তোকে ভুলে নতুন কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধতে হবে।। তুই আমাকে তোর জীবন থেকে চলে যেতে বলেছিস ,,আমি রাজি হয়েছি।। কিন্তু আমার জীবনে আমি ,,অন্যকাউকে তোর জায়গায় বসাতে পারবো না।। তুই থাকবি তবে শারীরিক ভাবে না মানসিক ভাবে ,, আমার ভালোবাসার রাজ্য।।আর একটা কথা,, একসাথে বাঁচতে পারি নি ঠিকই ।। একসাথে মরতে তো পারবো।। কোনোদিন যদি তোর কিছু হয়ে যায়,,তাহলে সেদিনই তোর আগে আমি এই পৃথিবী ছাড়বো।।(জানভি)

🍁 🍁 🍁

দেখতে দেখতে কেটে গেলো ৩ টা বছর।। বদলে গেছে আমাদের প্রত্যেকের জীবন।। অনেক সুখে আছি আমি।। আবিরের ফাইনাল এক্সাম শেষ করে এখন আমাদেরই অফিসে জয়েন্ট করেছে ।। সেদিনের পর থেকে জানভির সাথে আমার আগের মতোই সম্পর্ক।।জানভি আমাকে ভালোবাসলেও সেটা শুধু সে কেয়ারিং করে বোঝায়।। মাঝে মাঝে দেখা হয় ঠিকই ,,তবে ওকে এভোয়েট করার চেষ্টাই সারাক্ষন করি ।। যাতে আমাকে দেখে ওর কষ্ট না হয় ।। আর এর মধ্যে ভাইয়া আর ঋতুর বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে ।। প্রথমে পাপা রাজি হয়নি,,আমি জোর করে রাজি করিয়েছি‌।।
আপি আর নিবিড় ভাইয়ার একটা ছোট প্রিন্সেস এসেছে ।। তার বয়স ২ বছরে বেশি ।।নাম রেখেছে হীড়।। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ,,আপিরা এখন আমাদের সাথে থাকে না গত ১ বছর ধরে ”হিয়াতে নিবিড় ” বাড়িতে থাকে ।। মাঝে মাঝে আসে।। যখন হীর এই পৃথিবীতে এসেছিলো ,, সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলো আবির ,,সারাক্ষন তার কোলে কোলে রাখতো ।। যখন আপিরা আলাদা হয়ে যায়, তখন আবির খুব ভেঙে পড়েছিল।। প্রতিদিন হীড়ের সাথে দেখা করতে যেত।।‌এখনও যায় তবে ,,বেশি না।। হীড়ের চলে যাওয়ার পর আবির আমার কাছে একটা ছোট বেবী চেয়েছিলো ,,আমি না করতে পারি নি ।। তার ইচ্ছে পূরণ করার জন্য আমি কনসেভ করেছিলাম।। এখন আমার ৯ মাস চলছে ।। আগামী মাসে ডেলিবেরির ডেট পরেছে।। তবে মাঝে মাঝে মাথায় অনেক ব্যাথা অনুভব করি ,, আবার ভুলেও যাই,,তবে সেটাকে বেশি গুরুত্ব দেই না ,,হয়তো এটা মুডসুয়িং।।

এখন একটা বাজে ।। আবির সোফায় বসে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে।‌। আমার আবার আবিরের বুকে মাথা না দিলে ঘুম একদমই হয় না।। তাই জেগে আছি ।। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে,, কিন্তু শুলে আর ঘুম হয়না।। আমি চুপ চাপ আবিরের কোলে গিয়ে বসে পড়ে বললাম….

— আবির চলুন না ,,ঘুম পাচ্ছে ,,ঘুমাবো ।। আপনার ছোট সোনা তো ঘুমাতে চাইছে ।।

— মিষ্টি প্লিজ ডিস্টার্ব করো না,, গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ।। একটা দিন আমার বুকে না ঘুমালে কিছু হবে না।।(আবির)

— আবির প্লিজ।। আপনি তো জানেন আমি আপনার বুকে না শুয়ে ঘুমাতে পারি না,, তাহলেও এমন কেন করছেন!! ( ল্যাপটপ টা নিয়ে পাশে রেখে আমি)

— জাস্ট শাট আপ,,নামো বলছি ।। এইসব আমার একদম পছন্দ না।। পাগল হয়ে গেছো তুমি।। এখান থেকে উঠো আর গিয়ে ঘুমাও।। তোমার বাবা কি আমাকে তোমার জন্য কাজের লোক রেখেছে।। যে সারাদিন তোমার কথা শুনে চলবো ।। আমার নিজেস্ব একটা জগৎ আছে ।।প্লিজ নিজের লিমিটে থাকো।।(চেঁচিয়ে বললো আবির)

আবিরের চেঁচানোতে আমি এক প্রকার কেঁপে উঠলো।। তার কোল থেকে উঠে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।। এই মানুষটা নাকি একদিন আমাকে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো।। আর আজ কিনা আমি তার কাছে পাগল হয়ে গেছি।। আবির আবার ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে লাগলেন।। আমি ধীর পায়ে হেঁটে আবিরের কোলে মাথা দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম।। আবির একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার কড়া কড়া গলায় বললেন…

— তুমি তোমার বোনকে তো দেখেছো ,,তাকে দেখেও তো শিখতে পারতে।। সে তো প্যাগনেন্সির সময় ভাইকে এতো জ্বলাই নি তাহলে তুমি কেন জ্বলাচ্ছো।।

— আজ আপনাকে একটু ছুলে আপনার আমাকে অসহ্য লাগে।। একটু সময় চাইলে বিরক্ত লাগে ।। কথা বললে জ্বলানো হয়ে যায় ।। সত্যিটা কি জানেন আবির,, ভালোবাসা মানুষটি কাছে থাকলে তার কদর থাকে না।। আজ আমি আপনার কাছে একটু সময় চেয়েও পাইনা ।। হয়তো একদিন আমি আপনাকে ছেড়ে ,,এই পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো ।। সেদিন আপনি নিজ থেকে আমাকে সময় দিতে চাইবেন,, কিন্তু সেই সময়ের আমার কোনো প্রয়োজন হবে না।। (কাঁদতে কাঁদতে আবিরের কোলে মাথা রেখে আমি)

আবিরের কোল থেকে মাথা তুলে তার পড়নের শার্টটাকে খুলে ওয়াশরুমের গিয়ে শার্টটা পড়ে নিলাম।। আমি আগের চেয়ে তুলনামূলক অনেক মোটা হয়ে গেছি,, এইসময় তো এমন মোটা হওয়ার কথা।। তাই নিচের দুইটা বোতাম লাগাতে পারছি না।। আয়নার সামনে বসে বোতাম লাগাচ্ছি ।। আর আবির এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। আমার বলা কথাগুলো হয়তো ভাবছে ।। অনেক কষ্ট করে বোতাম গুলো লাগালাম ঠিকই কিন্তু এবার বোতাম দুটোই ছিঁড়ে গেলো।। আমি একবার বোতামের দিকে তাকাচ্ছি,, আরেকবার আয়না দিয়ে আমার পেটের দিকে তাকাচ্ছি।।

— আমি অনেক মোটা হয়ে গেছি ,,তাই তোদের পাপার আমাকে ভালো লাগে না।। সেজন্য তো আমাকে এতো কথা শোনার । কোনো সমস্যা নেই,,,তোরা এসে তোদের পাপাকে বেশি করে বোকে দিস ,, কেমন…..!!( পেটে হাত রেখে আমি)

হঠাৎ কেউ পেছন থেকে আমাকে জরিয়ে ধরলো ।। প্রথমে চমকালেও পড়ে আবিরের ছোঁয়া আর আয়নাতে দেখা প্রতিচ্ছবি দেখে বুঝলাম।। এটা আবির।।

— কে বলেছে ,, আমার বউটা মোটা হয়ে গেছে।। আমার বউটা তো আস্তে কিউটের বস্তা হচ্ছে,,, নাদুসনুদুস মিষ্টি গুলুগুলু হচ্ছে।। একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে ,,আর তাকে কিনা আমার ভালো লাগবে না।।(আবির)

আমি কোনো কথা বললাম না।। চুপচাপ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছি।। আবির আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে ,, আমার গালে হাত রেখে বললেন…

— আই এম সরি মিষ্টি।। এক্সচুয়ালি অফিসে একটা ইনপ্রটেন্ট কাজ করার দরকার ছিলো।। সবটা কম্পিলিট করে কালকে জমা দিতে হবে।। তাহলে আমি ২ দিন পর থেকে আমার মিষ্টি বউটার সাথে থাকতে পারবো।। আর সেই কাজটায় একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল।।(একটু থেমে আবার) এবারের মতো ক্ষমা করে দিলে হয়না ।। আর করবো না বললাম তো।।

— আহহ।।(পেটে হাত দিয়ে আবির)

— কি হয়েছে।।

— বেবী কিক করছে।।

— দেখেছো আমাদের বাচ্চাগুলো চাইছে আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।। অনন্ত বাচ্চাদের জন্য।।(ইনোসেন্স ফেইস করে আবির)

( আবিরের ইচ্ছে মেয়ে হবে ।।আর আমার ইচ্ছে ছেলে হবে।।এই নিয়ে আমাদের মধ্যে সবসময় লেগে থাকতো ।। তাই অবশেষে আবির ঠিক করলো আমাদের টুইন বেবী হবে)

— ঠিক আছে ,, দিলাম ।। তবে এটাই শেষ বার।।এটা হাক করো (আমি)

আমি আমারে জরিয়ে ধরলো।। কিন্তু এতো মোটা পেটের জন্য জরিয়ে ধরতে পারছে না।। আমি তো আবার কেঁদে দিলাম।। তখন আবির আবির ঘুড়িয়ে পেছনে থেকে জরিয়ে ধরলো।। কিন্তু বাচ্চাদের কিক করা কিছুতেই থামছে না।। আবির আমাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে ,, পেটের কাছ থেকে পুরো শার্ট টাকে সরিয়ে দিয়ে ,, পেটের কাছে মুখটা নিয়ে বলতে লাগলেন…

— দেখ আদ্র,,আদ্রিতা।। পাপা কিন্তু তোমাদের একটুও ভালোবাসবে না ।। তোমরা মাম্মামকে এতো কষ্ট দাও কেন ।। মাম্মাম ব্যাথা পায় না বুঝি।।

অমনি কিক করা থেমে গেল আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে আছি ।। বলতে কিভাবে থেমে গেলো ,,নিশ্বই ,,জন্ম নিলে পাপার কথা শুনবে।। আবির আমার পেটে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে আমাকে কোলে করে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে ,, আমার মাথাটা তার বুকে রেখে দিলেন।। তারপর আমিও আবিরকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।।।।।

🍂 🍂 🍂

আমি আর আবিরকে রেডি করিয়ে দিচ্ছি।। এটা আমার প্রতিদিনের কাজ ।। সকল কাজ থেকে মুক্তি থাকলেও মুক্তি নেই এই কাজটা থেকে।। আবির আমাকে একদমই নিচে যেতে দেয়না ।। আমার রুমেই সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।। আমি একটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবিরের টাইটা বেঁধে দিচ্ছি।। তার মধ্যেই দৌড়ে হীড় ঢুকলো।।

— তালামনি ,,তালামনি।। আমাল তোট বনু করে আতবে!! (হীড়)

— আসবে খুব তাড়াতাড়ি আসবে ,,তবে বনু না ভাই !!(আমি)

— না গো হীড় সোনামনি ,,, বনু আসবে ।।(আবির)

— না বললাম না ভাই !!

— তোরা আবার শুরু করে দিলি ।। বনু আর ভাই দুজনে আসবে কেমন!!(( রুমে ঢুকতে ঢুকতে হিয়া)

— তত্যি ,,মাম্মা ।। কি মতা হবে !!( হীড়)

চলবে…💞💞