কথা দিলাম পর্ব-০৭

0
2399

#কথা_দিলাম?
#পর্ব:৭
#নিশাত আহমেদ
.
.
“আয়ান,তুই সিয়াকে বিয়ে করেছিস?” বাড়ি ফিরে সবার কাছ থেকে এই প্রশ্নটারই আশা করেছিল আয়ান।আয়ানের হাত ধরে চৌধুরী বাড়ির চৌকাঠ পেরোয় সিয়া।ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে ওর।হুটহাট নতুন পরিবেশে এসে কীভাবে মানিয়ে নেবে ও সেটাই ভাবছে।বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে।আয়ানের বাড়ির লোকেরা বিষয়টাকে কীভাবে নেবে সেটাও চিন্তার বিষয়।

-“কী হলো ভাই,বল তুই সিয়াকে বিয়ে করেছিস?”
-“হ্যাঁ।”
-“এভাবে কথা নেই বার্তা নেই।হুট করে বিয়ে করে নিলি?”
-“আমার ইচ্ছা হয়েছে বিয়ে করে নিয়েছি।তোদের সমস্যা থাকলে আমার কিছু করার নেই।”
-“আর তিয়া?তিয়ার কী হবে?তুই তো ওকেও কথা দিয়েছিলি?”
-“তিয়ার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস্ নেই আপু।ওকে বিয়ে করলে না ও সুখী হতো না আমি।যা হয়েছে ভালো হয়েছে।”
-“বললেই হলো?তিয়াকে কে বোঝাবে?ও তো তোকে ভালোবাসে।”
-“তিয়ার সাথে আমি কথা বলব।তবে হ্যাঁ আমি সিয়াকে বিয়ে করেছি।তাই সিয়া আমার স্ত্রীর সম্মান পাবে।আমার স্ত্রী হিসেবে এই বাড়ি থেকে সব অধিকার যেন ও পায়।ওর কোনো রকম অসম্মান যেন না হয়।”

আয়ানের কথা শুনে অবাক সিয়া।তবে কি আয়ান এখনো ওকে ভালোবাসে?নাকি এটা ওর নারীর প্রতি সম্মান?নাকি সিয়ার প্রতি দয়া দেখাচ্ছে ও?আয়ান উপরে রুমে চলে যায়।মীরা গম্ভীর মুখ নিয়ে সিয়ার কাছে আসে।সিয়া ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।সবাই তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখছে সিয়াকে।সিয়ার এভাবে ভয় পাওয়া দেখে সবাই হাসা শুরু করে।সিয়া বুঝতে পারছে না কী হলো সবার।

-“এই পাগলি!ভয় পাচ্ছ নাকি আমাদের?”
-“না,মানে….আসলে….”
-“রাগ তো আমার হয়েছেই।কিন্তু আমার ভাইয়ের উপর।এত কিপ্টা যে দাওয়াতটাও দিল না।তিয়াকে এই বাড়ির কারোর পছন্দ না।আমরা তো তোমাকে ভাবি হিসেবে ধরেই নিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি….”

মাথা নিচু করে নেয় সিয়া।ভুল তো ও করেইছিল।কিন্তু নিরুপায় হয়ে।

-“যাই হোক।আমি জানি বিয়েটা নিশ্চয়ই আয়ান জোর করে করেছে।নাহলে তুমি এরকম করবে না।যাই হোক,তোমার আর কি করার।এখন সামলাও বাদরটাকে আজীবন।”
-(বিড়বিড়িয়ে)”বাদরই বটে!”
-“জামা-কাপড় তো সব ঐ বাড়িতে।চল আজকের দিনটা আমার কাপড়ই পর।”

মীরা সিয়াকে নিয়ে রুমে চলে যায়।একটা জলপাই রঙের সুতি শাড়ি বের করে ধরিয়ে দেয় সিয়ার হাতে।সিয়া শাড়ি হাতে মীরার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন প্রথমবার এই বস্তু দেখছে।মীরা হেসে সিয়াকে শাড়ি পরিয়ে দেয়।এক কাপ কফি হাতে আয়ানের রুমে যায় সিয়া।আয়ান বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।সিয়া ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে কফিটা আয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়।আয়ান সিয়ার দিকে তাকায়।আজ প্রথমবার কোনো মেয়েকে শাড়িতে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে আয়ান।কিন্তু মুগ্ধতা প্রকাশ না করে কফিটা নিয়ে সিয়ার হাতে মোহরানার টাকাটা ধরিয়ে দেয়।

-“এই নাও তোমার মোহরানার টাকা।এরপর থেকে আমার যখন ইচ্ছা তোমাকে জড়িয়ে ধরব।যখন ইচ্ছা কিস করব।কিছু বলতে পারবে না।”
-“মানে?”
-“তুমি বুঝবা না।”

আয়ান আবার সিগারেটটা মুখে দেয়।

-“তুমি আবার সিগারেট টানা শুরু করছ?”
-“কী আর করব বলো।যার জন্য ছেড়ে দিছিলাম সেই আমাকে ছেড়ে চলে গেল।”
-“তাই বলে সিগারেট খাওয়া লাগবে?”
-“সিগারেট খাব না তো কি তোমাকে খাব?যদি পারমিশন দাও তাহলে সিগারেট ফেলে তোমাকে খাওয়া শুরু করি।”
-“হুহ!যত্তসব ফালতু কথাবার্তা।”

সিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসে আয়ান।তারপর কফির মগে চুমুক দেয়।

-“চিনি কম।”
-“মোটেও না।আমি মেপেই দিছি।”
-“মোটেও না।চিনি কম।খেয়ে দেখ।”

সিয়ার দিকে কফির মগটা বাড়িয়ে দেয় আয়ান।আয়ানের হাত থেকে মগটা নিয়ে চুমুক দেয় সিয়া।

-“কোথায় চিনি কম?ঠিকই তো আছে।”
-“দেখি।”

সিয়ার হাত থেকে মগটা নিয়ে নেয় আয়ান।

-“হুম।এবার ঠিক আছে।”

সিয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে আয়ান।”স্টুপিড!” রেগে ভেতরে চলে যায় সিয়া।এমন সময় মীরা রুমে ঢোকে।সিয়াকে রাগে ফুঁসতে দেখেই বুঝে যায় ভাইটা আবার কিছু করেছে।বারান্দায় গিয়ে আয়ানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মীরা।

-“এভাবে তাকাস না,আপু।আমার ভয় করে না বুঝি।”
-“তুই?আর ভয়?মজা করিস না।আমার ভাবিকে রাগিয়েছিস কেন বল।”
-“তোর ভাবি এমনি এমনিই রেগে যায়।রাগানো লাগে না।”
-“ভাই,মেয়েটা এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে ছিল।তারমধ্যে তুই হুট করে বিয়েটা করে নিলি।এখন ওর তোর সাপোর্টের দরকার।”
-“সাপোর্ট তো আমিও করতে চাই আপু।কিন্তু তার আগে ওকেও যে আমাকে সাপোর্ট করতে হবে।”
-“মানে?”
-“মানে ওকে স্বীকার করতে হবে।নিজের মুখে বলতে হবে যে ও আমাকে ভালোবাসে।তার আগ পর্যন্ত আমি ওকে জ্বালাবোই।”
-“হুম।বুঝলাম।তবে দেখিস।ওকে কষ্ট দিস না।মেয়েটা খুব ভালো রে।”
-“হুম”

মীরা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।খানিক্ষণ বাদে রুমে আসে আয়ান।সিয়া খাটের এক কোণায় শুয়ে আছে।আয়ান বিছানার কাছে যেতেই লাফিয়ে উঠে বসে সিয়া।

-“তুমি এখানে শোবে নাকি?”
-“বাড়ি আমার,বিছানা আমার।মেঝেতে শোবো নাকি?”
-“না,এখানেই শুতে হবে?সোফায় গেলে হয় না?”
-“না।আমার অভ্যাস নাই।”
-“আচ্ছা।তাহলে তুমি ঐ পাশে শোও।আমি এই পাশে আছি।”
-“না।”
-“আচ্ছা।তাহলে তুমি এই পাশে শোও।আমি ঐ পাশে যাচ্ছি।”
-“না।”
-“না মানে?”
-“এই পাশ ঐ পাশ বুঝি না।পুরো বিছানা আমার।আমি পুরো বিছানা জুড়েই শোবো।তোমার গায়ের উপরেও শুতে পারি!”
-“এক্সকিউজ মি!যেখানেই শোও মাঝখানে কোলবালিশ থাকলেই হলো।”
-“হুম।কোলবালিশটা যদি তুমি হও তাহলে সমস্যা নাই।”
-“ধ্যাত!শোও তুমি।আমিই সোফায় যাচ্ছি।”
-“তুমি সোফায় শুতে পারবে না।সোফা আমার।আর আমি তোমাকে বিছানা ছাড়া অন্য কোথাও শোয়ার পারমিশন দেব না।আর এই ঘরের বাইরেও যেতে পারবে না।বাড়ির নতুন বউ স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও থাকবে এটা শোভা পায় না।”
-“আচ্ছা মুশকিল তো!”

বাকা হেসে লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পরে আয়ান।সিয়া বসে বসে কিছুক্ষণ ভাবে যে কী করা যায়।কিছু ভেবে না পেয়ে ভয়ে ভয়ে শুয়ে পরে ও।কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে যায়।আয়ান তাকিয়ে আছে ঘুমন্ত সিয়ার দিকে।ঘুমন্ত অবস্থায় কি মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে।জেগে থাকলেই বাড়ি মাথার তুলে রাখত।সিয়ার নেশায় ভেতরটা ভরে উঠেছে আয়ানের।এই মুহূর্তে মেয়েটাকে কাছে না পেলে দম বন্ধ হয়ে যাবে ওর।সিয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয় আয়ান।ভেতরের সব অস্থিরতা যেন নিমেষে শান্তিতে পরিণত হয়ে যায়।ঘুমের ঘোরে সিয়াও বাচ্চাদের মতো জড়িয়ে ধরেছে আয়ানকে।আয়ান মুচকি হেসে সিয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে চোখ বুজে নেয়।

চলবে…