কথা_দিলাম পর্ব-০৬

0
2751

#কথা_দিলাম ?
#পর্ব:৬
#নিশাত আহমেদ
.
.
সেদিন রাতে দিশা আর আরহানের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলোর ছবি আর ভিডিও পাঠানো হয়েছে সিয়ার ফোনে।সিয়া এসব দেখে আরও বড় ধাক্কা খেল।
“কী মেসেজ,সিয়া?” দিশার কথার ঠিক কী উত্তর দেবে বুঝতে পারে না সিয়া।কীভাবে বলবে যে সিয়ার কাছে দিশার ধুলোয় মিশে যাওয়া ইজ্জতের এক অংশ এসে পৌঁছেছে।সিয়া ফোনটা দিশার দিকে বারিয়ে দয়।ভিডিওটা অন করতেই ফোনটা মাটিতে পরে যায় দিশার হাত থেকে।মুখে হাত চেপে বসে পরে ও।

-“তারমানে…”
-“তারমানে ও বাড়িতেও এতক্ষণে ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে গেছে।”
-“ও কেন করলো আমার সাথে এরকম?কী ক্ষতি করেছিলাম আমি ওর?”
-“দিশা আপু,তুমি প্লিজ কেঁদো না।একটু শান্ত হও।আমি আরহানের সাথে কথা বলছি।”
-“কীভাবে শান্ত হব সিয়া?ও বাড়িতে সবাই জেনে গেছে।এবার আমার কী হবে?”

ফোনটা তুলে আরহানের নাম্বারে ডায়াল করে সিয়া।অন্তত বিশবার ডায়াল করেছে কিন্তু ফোন তোলেনি আরহান।কিছুক্ষণ পর আরহান কলব্যাক করে সিয়ার ফোনে।

-“আরহান….”
-“আ’ম সরি সিয়া।আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।বিশ্বাস কর তোমার প্রতি আমার ফিলিংস্ এতটুকুও মিথ্যা না।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।কিন্তু এই মুহূর্তে তোমাকে বিয়ে করাটা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
-“আরহান!!”
-“আ’ম রিয়েলি সরি সিয়া।কিন্তু আমি নিরুপায়।আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
-“তুমি এখন কোথায়?”
-“এয়ারপোর্টে।”
-“এয়ারপোর্টে?কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
-“নিউইয়র্ক যাচ্ছি।কবে ফিরব জানি না।সরি।ভালো থেকো।”
-“আরহান!আরহান আমার কথা শোনো।”

সিয়ার কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয় আরহান।সিয়া আবার কল করলে সুইচড অফ দেখায়।এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সিয়ার মনে হচ্ছে ওর সবকিছু শেষ।এত বড় বেইমানি করলো আরহান?কিন্তু তার থেকেও বড় ভয় জেকে বসেছে ওকে।এবার আয়ান কী করবে?ওকে তো আয়ান ছাড়বে না।ভাবতে ভাবতেই কলিংবেল বেজে উঠল।আর সিয়ার ভেতরটা কেঁপে উঠল।ও নিশ্চিত আয়ানই এসেছে।কাজের লোক দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে ঝড়ের বেগে ভেতরে ঢুকল আয়ান।রাগে লাল হয়ে আছে ও।সিয়ার রুমে ঢুকে সিয়ার দিকে অএক পলক অগ্নিদৃষ্টি দিয়েই দিশার দিকে তাকালো।
“এসব কী দিশা?” চিৎকার করে ওঠে আয়ান।আয়ানের চিৎকারে কেঁপে ওঠে দিশা।দৃষ্টি নত হয়ে আছে ওর।রাগলে আয়ানের মাথা ঠিক থাকেনা।যা খুশি তাই করে ফেলতে পারে।আর আজ তো ওর রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেছে।”ভাইয়া,আমার কী দোষ?আমি তো আটকানোর চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু…” আর কথা বলতে পারে না দিশা।কেঁদে দেয়।”দিশা আপু,এই সময় তোমার চাপ নেওয়া ঠিক নয়।বাচ্চার উপর ব্যাড এফেক্ট পরতে পারে।” দিশাকে ধরে বসায় সিয়া।”বাচ্চা?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে আয়ান। “ভাইয়া,আমি…আমি প্রেগনেন্ট।” কাঁপা স্বরে উত্তর দেয় দিশা।”হোয়াট??” চেঁচিয়ে ওঠে আয়ান।দিশার থেকে সরে এবার সিয়ার দিকে আসে আয়ান।

-“খুশি তো সিয়া এবার?খুব খুশি হয়েছো।এটাই তো বাকি ছিল তাই না?তোমার ফিঅন্সে আমার বোনের লাইফটা হেল করে দিয়েছে।শান্তি পেয়েছ তো এবার?আমাদের পরিবারটাকে শেষ করার লক্ষ্যই তো ছিল তোমাদের।ভুল আমারই ছিল যে তোমার মতো একটা মেয়েকে আমার লাইফে এনেছিলাম।”

সিয়া বলার কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না।কান্না চেপে রাখার খুব চেষ্টা করেছিল কিন্তু চোখ থেকে পানি গড়াচ্ছে।আয়ান দিশার হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে।গাড়িতে ওঠার আগেই আয়ানের হাত থেকে টান দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় দিশা।

-“ভাইয়া,কিছু না জেনে রাগের মাথায় কাউকে যা তা বলাটাও অন্যায়।তুই জানিস সিয়া এখন কী অবস্থায় আছে?তুই জানিস সিয়া সেদিন কেন তোকে রিজেক্ট করে আরহানের হাত ধরে ছিল?তুই জানিস সিয়া তোকে কতটা ভালোবাসে?”

দিশার কথায় মাথা থেকে রাগ দূর হয়ে চিন্তা ঢোকে আয়ানের।কী বলছে দিশা এসব?

-“আমি দেখেছি সেদিন সিয়া কতটা এক্সাইটেড ছিল তুই ওকে প্রপোজ করবি বলে।কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছিল ঐ একটা মেসেজে।”
-“কোন মেসেজ?কী বলছিস তুই এসব?”
-“সেদিন সিয়া অনেক আগেই বেরিয়ে পরেছিল ক্যাফের উদ্দেশ্যে।কিন্তু গাড়ির মধ্যে একটা মেসেজ আসে ওর কাছে।ওটা আরহানের সুইসাইড নোট ছিল।ও বলেছিল যে যদি সিয়া সেই মুহূর্তে ওর কাছে না যায় ও মরে যাবে।তাই সিয়া বাধ্য হয়ে গিয়েছিল আরহানের বাড়িতে।আর আরহানের বাবার ক্ষমতা তো তুই জানিস।নিজের একমাত্র ছেলের খুশির জন্য উনি সবকিছু করতে পারেন।উনি দেখিয়েছিলেন যে সিয়াদের বিজনেসের জন্য ২২ কোটি টাকা লোন নেওয়া হয়েছিল আর সেই লোন শোধ না করলে সিয়ার বাবাকে জেলেও যেতে হতে পারে।আর শর্ত হিসেবে দিয়েছিলেন যদি আরহানকে বিয়ে করতে সিয়া রাজি হয় তাহলে লোন শোধ দিতে হবে না।সুইসাইডের নাটক সাজিয়েছিল ওরা।যেখানে ফেসে যায় সিয়া।এবার তুই বল ও কী করত?নিজের সুখের জন্য বাবাকে জেলে পাঠিয়ে দিত?আর জানিস আজকে ওর সাথে কী হয়েছে?আরহান কত বড় একটা চিট যে এংগেজমেন্ট হওয়ার পরেও সিয়াকে ছেড়ে নিউইয়র্ক চলে গেছে।এই ওর ভালোবাসা।”
-“আরহান নিউইয়র্ক চলে গেছে?”
-“হ্যাঁ।সিয়ার জীবনটা শেষ করে দিয়ে গেছে।মেয়েটা এমনিতেই ভেঙে ছিল, ভাইয়া।তারমধ্যে তুই এতগুলো কথা বলে আসলি।না জানি বেচারি কী অবস্থায় আছে।”

দিশার কথা শুনে আয়ান বুঝতে পারে কতবড় ভুল করে ফেলেছে ও।না জেনেই নিজের সবথেকে কাছের মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।

-“দিশা,তুই বাড়ি যা।আমি আসছি।”
-“কোথায় যাবি তুই?”
-“তোকে বাড়ি যেতে বলেছি যা।বেশি কথা বলিস না।”

আয়ানের ধমক শুনে চুপ করে যায় দিশা।চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে ওঠে।আয়ান আবার সিয়ার বাড়িতে ঢুকে যায়।টেবিলে মাথা গুজে কাঁদছিল সিয়া।আচমকা আয়ানকে ফিরে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায় ও।

-“চল।”
-“কোথায় যাব?”
-“আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানে যাবে।চল।”

সিয়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে গাড়িতে এনে বসায় আয়ান।পুরো রাস্তায় সিয়া আয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিল কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আয়ানের কান পর্যন্ত যেন সিয়ার কথা পৌঁছাচ্ছে না।

-“ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিস!এখানে কেন নিয়ে এলে আমায়?”

সিয়ার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওকে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে যায় আয়ান।নিজে সাইন করে সিয়ার দিকে পেনটা বাড়িয়ে দেয়।

-“সাইন কর।”
-“মানে?”
-“বাংলাতেই বলেছি সাইন কর।এক কথা বারবার বলা পছন্দ না আমার।যা করতে বলেছি তাড়াতাড়ি কর।”
-“এভাবে বিয়ে হয় না আয়ান।হঠাৎ এভাবে…”
-“ইচ্ছা থাকলে সবকিছুই সম্ভব।সাইনটা কর।”
-“ইচ্ছাই নেই আমার।”
-“২২ কোটি অনেক কম,সিয়া।আমি চাইলে কিন্তু ৪৪ কোটি লোনও দেখাতে পারি।”

আয়ানের কথায় থমকে যায় সিয়া।আজ আয়ানও ওকে ব্ল্যাকমেল করছে?আয়ান যা বলল তা ও করতেই পারে তাই চুপচাপ সাইন করে দেয় সিয়া।পেপারস্ জমা দিয়ে সিয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে আয়ান।

-“সো,মিস সিয়া হুসেইন।সরি,মিসেস সিয়া হুসেইন চৌধুরী।ইউ আর ফিনিশড।এখন আর কোনোদিন ভালোবাসার মুখও দেখবে না তুমি।গাড়িতে ওয়েট করছি।তাড়াতাড়ি আস।”

আয়ানের কথা শুনে সিয়ার মনে হয় সত্যি বোধহয় ওর জীবনটা শেষ।যাকে একবার ফিরিয়ে দিয়ে ওর মনে এত ঘৃণা তৈরি করে দিয়েছে সে তো আর কোনোদিন ভালোবাসবে না ওকে।চোখের পানি মুছে গাড়িতে গিয়ে ওঠে সিয়া।আয়ান সিয়াকে নিয়ে রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে…