#কারণে_অকারণে_ভালোবাসি০২
#সুরাইয়া_আয়াত
অন্তিম পর্ব.
‘এই মেয়ে চুপচাপ একটুও শান্ত হয়ে থাকতে পারো না তুমি?নাকি তোমার মাঝে শান্ত হওয়ার কোন ফিচার্স ই নেই কোনটা? ‘
আরিশের কথার এমন ধমক শুনে আরু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আর বলল,
‘আপনি কি করে বুঝলেন? ‘
আরুর উত্তরে স্পষ্ট প্রকাশ পায় আরুর চঞ্চলতা। আরিশ আরুর থেকে এমনই একটা উত্তর আশা করেছিল। আরুর কথাতে আরিশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘আপনাকে আমি চিনি না ভাবছেন? এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেলাম কদিন পর আর এক বাচ্চার বাপ হবো আর আপনি বলছেন আমি কি করে জানলাম? ‘
কাঠগোলাপের মালাটা আরুর খোপায় পরাতে পরাতে আরিশ কথাগুলো বলে উঠতেই আরু মুখ চেপে খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো এক নাগাড়ে। আরুর এই হাসিতে আরিশের কৌতুহল বাড়লো। কৌতুহল সহ বললো,
‘আপনি আমাকে আর একটা বাচ্চা নিতে দিবেন মি অভদ্র? ‘
আরিশ আনমনা হয়ে বলল,
‘হম। এখনো তো আমাদের আয়ূশি আসা বাকি তাইনা? ‘
আরু হাসতে হাসতে বলল,
‘তখন যদি আমি সত্যিই সত্যিই আর চোখ না খুলি? তাহলে? ‘
বেলিফুলের মালাটা আরিশ খোঁপায় বাঁধছিলো। হঠাৎ আরুর এমন কথা শুনে আরিশের হাতটা থেমে গেল। আরিশ আরুর চুল থেকে মালাটা খুলে একটানে ছিঁড়ে ফেলল আর আরুর চুলের খোপাটাও খুলে দিল। আরু চটজলদি আরিশের দিকে ঘুরে বেকুব দৃষ্টিতে ঠোঁট ফুলিয়ে চেয়ে রইলো। আরু মুখ গোমরা করে বলল,
‘ মালাটা ছিঁড়ে ফেললেন কেন? ‘
আরিশ গুমোট সুরে উত্তর দিলো,
‘তোমাকে দেখতে উদ্ভট লাগছে তাই? ‘
আরু রেগে বলল,
‘মোটেও না। সুন্দর ই লাগছিলো আমি জানি। আমি যেই কথাটা বললাম তার পরেই আপনি ওমন করলেন। আমি কি বুঝিনা ভেবেছেন হু। ‘
কথাটা বলে আরু মুখ গোমরা করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিলেই আরিশ বলল,
‘ কি জানো তুমি! ‘
আরু আরিশের দিক তাকিয়ে বলল,
‘ এই যে আমার ডেলিভারির সময় আমি চোখ খুলছিলাম না বলে আপনি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিলেন। ‘
আরিশ থতমত খেল। আরূর কথাটা সত্যি, আর কিছু কড়া সত্য আচমকা সামনে এলে উদ্ভট লাগে, আরিশের ও তাই। আরিশ আরুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ মোটেও না। আমি কাঁদিনি। আমি জানি তোমার জ্ঞান ছিলো না কিন্তু যে তোমাকে বলেছে একদম বানিয়ে বনিয়ে তোমাকে আজগুবি গল্প শুনিয়েছে। ‘
আরু আরিশের কাছে গিয়ে বলল,
‘ মোটেও না, শাশুড়ি আম্মু আমাকে সব বলেছে। আপনি মিথ্যা বলবেন না একদম। ‘
আরিশ আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ কিইইই কি বলেছে আম্মু শুনি! ‘
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল,
‘ওই যে সেদিন আপনি কাঁদছিলেন আমাকে জড়িয়ে আর ভীষনরকম উন্মাদের মতো বিহেভ করছিলেন। আচ্ছা সত্যিই কি আপনি আমার জন্য উন্মাদ হন? ‘
আরিশ শব্দ করে ফিচেল হাসলো। হাতে হাত গুটিয়ে নিলো আয়েশে। ফিরে গেল প্রায় এক বছর আগের দিনে। ‘
সেদিন হসপিটালে যখন আরুর নিথর দেহ থেকে কোনরকম কোন উত্তর আসছিলো না তখন উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল আরিশ। সম্পূর্ণ উন্মাদ।
‘ এই মেয়ে চোখ খোল না কেন? দেখ তোমার ছেলে কাঁদছে ওকে কোলে নিবা না? আরুপাখি! এই মেয়ে! ‘
আরিশের এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে ডক্টর মাহিম বলে উঠলেন,
‘ আরিশ এভাবে হবে না। ইমিডিয়েট সেলাইটা করা দরকার। ‘
আরিশ কে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে এলো আরাভ। নার্স বাচ্চাটাকে আরিশের হাতে তুলে দিলেন। কাঁপা কাঁপা হাতে বাচ্চাটাকে আরিশ কোলে নিয়ে একপলক চেয়ে রইলো, কি মায়াবী মুখ, একদম তার মায়ের মতো হয়েছে। মুখটা গোলগাল আর চুল গুলোও তার মায়ের মতো, হাতের নখগুলো আরুর নখের মতোই চওড়া কিন্তু ধারালো। আরিশ আর্শিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে আরাভের কাছে গিয়ে বলল,
‘আমি চাই না আমার অজান্তে আমার আর্শিয়ানের কোন ক্ষতি করতে। আরুপাখির কিছু হয়ে গেলে আমি কিছু বাদ রাখবো না, সব ধ্বংস করে দেব। ‘
আরাভের হাতে আর্শিয়ানকে তুলে দিয়ে আরিশ ফ্লোরে বসে গেল। হঠাৎ গুমরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতেই আরাভ কেঁপে উঠলো। সে আরিশ কে আগে কখনো কাঁদতে দেখেনি। আরাভ আরিশের বাচ্চাকে নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে রইলো। বাচ্চাটা অনবরত কাঁদছে তবে তার মায়ের কোন জ্ঞান নেই যে তাকে কোলে নিয়ে ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়ে তাকে থামাবে। আরিশ কে এভাবে দেখে আরাভ বলে উঠলো,
‘তোর ছেলেটা কাঁদছে। একবার কোলে নিবি না? ‘
আরিশ আরুর দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে, কোন সাড়া শব্দ করছে না। পাশ থেকে একজন নার্স বলে উঠলেন,
‘স্যার বাচ্চাটাকে একবার কোলে নিন। ‘
আরিশ কিছু বললো না। ফ্লোরে ঘেষড়াতে ঘেষড়াতে আরুর সামনে গিয়ে বসলো,বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘এই তো এবার আমার আরুপাখিকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছি আমি। ‘
আরুকে বেডে দেওয়া হলো, এখনো জ্ঞান ফেরেনি আরুর। হাতে স্যালাইনের সূচটা ঢুকিয়ে দিয়ে নার্স বেরিয়ে গেলেন। আরিশ চেয়ার টেনে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে আরুর মাথায় হাত বোলালো। আরুর হাতের আঙুলটা ঈষৎ নড়ছে। আরিশ আরুর হাতটা মুঠিবদ্ধ করে ধরলো। ঘুমন্ত আরুর চোখ গড়িয়ে জল গড়াচ্ছে কিন্তু চোখ খুলে তাকাচ্ছে না। আরিশ আরুর চোখটা মুছিয়ে দিয়ে বললো,
‘আরুপাখি! কষ্ট হচ্ছে খুব? কিছু বলছো না যে। তুমি না কষ্ট চেপে রাখতে পারো না। কিছু হলেই তো দৌড়ে ছুটে এসে বলো মি অভদ্র আমার এমন হচ্ছে অমন হচ্ছে। আজ একা গোপনে সব কষ্ট সহ্য করে নিচ্ছ? লেবার পেইন হলে নাকি সাংঘাতিক কষ্ট হয়, মানছি তুমি একা সহ্য করেছো তবে আমার ওপর এতো অভিমান? কই ডাকছো না তো মি অভদ্র বলে? বলছো না তো যে নিমপাতার ফ্যাক্টরি। ‘
আরুর চোখ দিয়ে থেমে থেমে জল গড়াচ্ছে, তেমনি আরিশও কাঁদছে অনবরত। এর আগে কখনো ওর নিজেকে এতোটা নিস্ব মনে হয়নি। কে জানতো তার এই পুতুল বউটা ওকে এতোটা পাগল করে দেবে।
‘ জানোতো রোজ হসপিটাল যাওয়ার আগে যখন তুমি চুলগুলো এলোমেলো করে দাও তখন তোমাকে ধমক দিলেও সেই চুল আমি ঠিক করি না, ওভাবেই পুরো ডিউটি আওয়ার কাটিয়ে দিই। একবার তো একটা পেশেন্ট বলেই ফেলেছিলেন যে ‘ ডাক্তাররা নাকি পড়াশোনা করতে করতে পাগল হয়ে যায়, আপনিতো দেখছি ডক্টর হয়েও পাগল হয়েই আছেন। ‘
আমি ওনার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠেছিলাম। উত্তর বলেছিলাম ‘ আমার বাড়িতে একটা ডল বেবি আছে, একদম টুইটুই, সে রোজ আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। আবার ঠিক করলে যদি সে কষ্ট পায় তাই আর ঠিক করি না, এমন পাগল হয়েই চলে আসি। ‘
বাসায় ফিরে যেদিন দেখি তুমি চুপচাপ হয়ে আছো তখন তোমাকে ওভাবে দখলে ভালো লাগেনা আমার। কখনো চুপচাপ থাকবে না, সবসময় কথা বলবে। তুমিই আমার ননস্টপ টেপরেকর্ডার বুঝলে? এভাবে চুপ করে থেকো না প্লিজ। কথা বলো। আচ্ছা সরি আমি আর কখনো চুপ করতে বলবো না, তবুও তুমি কথা বলো। ‘
আরিশ আরুকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে আরুর ঘাড়ে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো।
‘ এই মেয়ে ওঠো না, তোমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে ভালো লাগে না আমার। এই আরুপাখি। ‘
‘এই মেয়ে শুনো না কেন কি বলি।’
দরজার বাইরে থেকে সানা আর অনিকা খান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন দুজনকে। অনিকা খান চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
‘ আমার ছেলেটা এতো ভালোবাসতে কবে শিখলো রে! মেয়েটাও দেখ কতো ফাজিল ছেলেটা কেঁদে ভাসাচ্ছে তাও চোখ খুলছে না। একবার চোখ খুলুক যারপর আচ্ছা করে বকে দেব। ‘
কথাটা বলে উনি সানাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন। কয়েকঘন্টা পর আরুর জ্ঞান ফেরে। আরিশ আর্শিয়ানকে কোলে নেয়নি তারপর আর।
আরিশ আরুর বেডের একপাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। আরু আরিশের দিকে ঘুরে আধো আধো কন্ঠে বলল,
‘ আমার ছেলে! ‘
আরিশ ধীর পায়ে আর্শিয়ানের কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ওকে তুলে আরুর পাশে শুইয়ে দিল। আরু আর্শিয়ানের কপালে চুমু দিয়ে আরিশ এর হাত ধরে বললো,
‘আমাকে আদর করবেন না মি অভদ্র? নাকি ছেলে হয়ে আমাকে ভুলে গেলেন। ‘
আরিশ আরুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল,
‘থ্যাঙ্কিউ আর সরি আরুপাখি? ‘
আরু মুখের ইশারায় বলল,
‘কেন? ‘
‘থ্যাঙ্কিউ আমাকে আর্শিয়ানকে দেওয়ার জন্য আর সরি তোমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য! ‘
আরিশ এর মুখে হাসি ফেরাতে আরু বলল,
‘ আপনি সরি বলতে জানেন? ‘
আরিশ মাথা নীচু করে হেসে ফেলল।
‘ ফর দা ফাস্ট এন্ড ফর দা লাস্ট। ‘
আরু আধো স্বরে বলল,
‘ মি অভদ্র ওরফে নিমপাতার ফ্যাক্টরি।’
আরিশ সহ সবাই হেসে ফেলল।
পুরোনো সেই কথাটা মনে করতে লাগলো আরিশ, পিছন থেকে আরুর কোন উত্তর এলো না তবে ধপ ধপ করে আওয়াজ হতে লাগলো। আরিশ পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো আরু কাঠগোলাপ পাড়ার চেষ্টা করছে। এই এক বছরে গাছটা অনেকটাই বড়ো হয়ে গেছে যে আরুর নাগালে আসে না। আরিশ আরুর পাশে গিয়ে ডালটা ধরে নীচু করলো। আরু সহজে ডালটা ধরে একটা কাঠগোলাপ নিয়ে আরিশের সামনে ধরতেই আরিশ বলল,
‘সেকেন্ড ম্যারেজ আ্যনিভার্সারি বলে আজকে প্রপোজ ট্রপোজ করবে নাকি? সামনে ফুল ধরলে যে? ‘
আরু আরিশের নাকটা টেনে দিয়ে বলল,
‘বুদ্ধূ কোথাকার। আমি তো এটা আমার কানে গুজে দেওয়ার জন্য বললাম। হাজব্যান্ড রা কানে ফুল গুঁজে দিলে নাকি বেশি সুন্দর লাগে।
আরিশ মুচকি হাসলো। আরুর হাত থেকে ফুলটা নিয়েয়ারুর কানে ৎসুজে দিয়ে বলল,
‘এসব উদ্ভট কথা তোমাকে কেৎলেখায় আরুপাখি? ‘
আরু মুখ চেপে হেসে বলল,
‘আমার নিজের বানানো। ‘
আরিশ আরুর চোখে ফু দিয়ে বলল,
‘ তাই বলি এতো উদ্ভট কেন? ‘
আরু মুচকি হেসে বলল,
‘ আপনি আমাদের ভালোবাসেন? ‘
আরিশ আরুর চোখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একদম না মিস টুইটুই। ‘
আরু হেসে উঠলো। আরিশের এক হাত ধরে বলল,
‘চলুন বাসার ভিতরে, সবাই অপেক্ষা করছে, আর্শিয়ান ও বোধহয় আপনাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে। ‘
আরিশ হাসতে হাসতে বলল,
‘ আমার ছেলে আমার খোঁজ তো নেবেই।’
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল,
‘ আজকাল আপনি কিন্তু ওকে কি শেখাচ্ছেন। ‘
আরিশ হাটতে হাটতে বলল,
‘তোমাকে বলেছে? ‘
‘ বলবে না আবার? কালকে বলছিলো ‘ মিস টুলটুল তুমি তুব কিউত আল আমাল পাপাল পুপুল বুউউউউউউ। ‘
আরিশ উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। ওদের দুজনে এগোতে এগোতেই আর্শিয়ান ছোট ছোট পায়ে ওদের দিকে দৌড়াতে লাগলো। আরু চেঁচিয়ে বলল,
‘ আর্শিয়ান দৌড়ায় না পড়ে যাবে। ‘
বলা ও শেষ এবং আর্শিয়ান ও পড়ে গেল। পড়ে গিয়ে আর্শিয়ান মিথ্যা কান্না করতে লাগলো দেখে আরিশ আর আরু ছুটে গেল। আরিশ আর্শিয়ানকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
‘ কথায় লেগেছে তোমার? ‘
আর্শিয়ান হঠাৎ কান্না থামিয়ে মুখ গোমরা করে বলল,
‘ তোমলা আমাকে তালাতালি এতে ধলোনি কেন? ‘
আরু আর্শিয়ান এর গাল টেনে বলল,
‘ভুল হয়ে গেছে পাপা। ‘
আর্শিয়ান আরুর নাক টেনে বলল,
‘ থে থলি। ‘
আরু বলে উঠল,
‘ কিন্তু আমি তো সরি বলিনা আর্শিয়ান। ‘
‘এই তো তুমি বললে থলি। আবাল বলো। ‘
আরু মুখ কাচুমাচু করে তাকাতেই আরিশ বলল,
‘ এনাদার অপশন? ‘
আর্শিয়ান আরিশের কানে কানে ফিসফিসিয়ে কি একটা বলল আরু বুঝলো না। আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কি? ‘
আর্শিয়ান আরিশকে ওকে কোল থেকে নামাতে বলল, আরিশ নামাতেই আর্শিয়ান কোমরে হাত রেখে বলল,
‘ আমি ওতান তেতে আবাল আতবো, আবাল পলে যাবো। তোমলাও আমাল তাতে পলে যাবে ওকি? ‘
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনার ছেলে এসব কি বলে? ‘
আরিশ ফিসফিসিয়ে বলল,
‘তোমার থেকে এই দুষ্টুমির জিনটা পেয়েছে সো আমাকে দোষ দিয়া লাভ নাই কিন্তু। ‘
আরু উদাস সুরে বলল,
‘ ওকে ইউ ক্যান স্টার্ট। ‘
আর্শিয়ান আবার দৌড়ে ছুটলো আর কথামতো পড়েও গেল। ওর মতো করে আরু আর আরিশ ও একসাথে পড়ে দুজনেই হেসে ফেলল। আর্শিয়ান ও দৌড়ে এসে দুজনের গলা জড়িয়ে ধরলো আর ফিসফিসিয়ে বলল,
‘হ্যাপি ম্যালেজ আ্যানিভালসালি। ‘
আরিশ আরুর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,
‘থ্যাঙ্কিউ আর্শিয়ান। ‘
হঠাৎ আরু বলে উঠলো,
‘ মি অভদ্র? ‘
‘হমম? ‘
‘মনে আছে সেদিন বইটাতে কি লেখা ছিল? আরিশ মুচকি হাসলো তারপর দুজন এসাথে বলে উঠলো,
‘there is no specific source of love in this world because love goes without any reason. love for no reason. কারনে অকারনে ভালোবাসি। ‘
আর্শিয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
‘ মাম্মাম হোয়াত ইজ লাব? ‘
আরু আর্শিয়ানের কপালে চুমু দিয়ে বলল,
‘এটা আমাদের গল্প। আমাদের ভালোবাসার গল্প। কারনে অকারনে একে অপরকে ভালোবাসার গল্প।’
আরিশ আর আরু একে অপরের দিকে চেয়ে রইলো। বইয়ের ভাষা যেমন মনগড়া শব্দে পরিবর্তন করা সম্ভব না তেমনি সম্ভব না আরিশ আর আরুর ভালোবাসার কোন পরিবর্তন হওয়া। দুজন দুজনের জন্যই, আরুর ভাষায় যাকে বলে উইইইমা টুইটুই ভালোবাসা।
সমাপ্ত,
দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে আমি গল্পটা লিখছি। সবাইকে ধন্যবাদ এতো ভালোবাসা দিয়ে গল্পটা পড়ার জন্য। আরিশ আর আরুশি অলওয়েজ আমার মনের মাঝেই থাকে। তাদেরকে নিয়ে যা ভাবনা আসে তাই লিখি, তাদেরকে নিয়ে লিখতে আমার ভালো লাগে। তাদের গল্প শেষ হলে শুরু হয় লেখিকার ওক বিশাল মনখারাপের সূচনা। তারা দুজন আমার ভীষন প্রিয় যেন আমার খুব কাছের কেও। আপনাদের সকলকে ভালবাসা অবিরাম। এভাবেই কারনে অকারনে কাওকে ভালোবেসে দেখবেন তাহলে বুঝবেন আপনার ক্ষুদ্র জগতের কতোটা বিশাল জায়গা জুড়ে আছে সে। কারনে অকারনে ভালোবাসি। ভালবাসা অবিরাম সকলকে।
#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
#অনুগল্প
‘আপনি বাসায় ফিরবেন কখন? আর্শিয়ান ঘুমাচ্ছে না খালি সারা ঘর টইটই করছে আর খালি আপনার নাম জপ করছে। সারাদিন তো বাসায় আমি নিয়ে থাকি, পালাপালি সব আমিই করি আর নামের বেলা বাপ বাপ?’
আর্শিয়ানের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে ফোনের ওপাশে আরিশকে ধমক দিলো আরু। আরুর ধমক শুনে আরিশ উচ্ছাসের সাথে হেসে উঠলো। আরু ধমক দিয়ে বলল,
‘একদম হাসবেন না আপনি। আজ বাসায় যদি তাড়াতাড়ি না ফিরেছেন তো আপনার ছেলেকে আর আপনাকে সারা রাত বাইরে রাত্রি বিলাস করতে হবে বুঝেছেন? বাই। ‘
বাই বলে আরু কল কাটতে যাবে তখনই আর্শিয়ান ওর খেলনার ঘোড়ার গাড়িটা নিয়ে মুখে টগবগ টগবগ করতে করতে আরুর কাছে এসে বলল,
‘মাম্মাম পাপা কই? ‘
আরু ধমকের সুরে বলল,
‘সারাদিন বাপ বাপ, ওটা তোর বাপ না আমারও বাপ বুঝলি? থুড়ি আমার জামাই!’
আর্শিয়ান কোমরে হাত দিয়ে বলল,
‘না থুমি আমাল পাপাকে তোমাল পাপা বলতো কেন? হি ইজ মই পাপা। ‘
আরু ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরিশ কলে আছে এখনো, কাটেনি। তা দেখে আর ফোনটা কানে ধরে বলল,
‘খুব মজা লাগে না? ‘
আরিশ ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
‘আমি তোমার বাপ হলাম কবে আরুপাখি?’
‘মি অভদ্র আপনি আপনার নো মোর ওয়ার্ডস করে মুখ বন্ধ রাখেন আর বাসায় আসেন। ‘
আরিশ কল কাটার আগে বলল,
‘কি খাবে? ‘
আরু মিষ্টি করে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনার মাথা। জলদি বাসায় আসেন। ‘
কথাটা বলে আরু কলটা কেটে দিলো।
আরু কলটা কাটতেই আরু আর্শিয়ানের দিকে তাকালো। আরু দেখলো আর্শিয়ান আয়নার সামনে গিয়ে আরুর লিপস্টিক টা নিয়ে ঠোঁটে লাগাচ্ছে। তা দেখে আরু জলদি ছুটে গিয়ে বলল,
‘ আর্শিয়ান কি করছো তুমি ওটা? ওটা বেবিরা দেয় না। ওটা তো মাম্মামের তাই না? ‘
আর্শিয়ান আরুর ঠোঁটের সামনে লিপস্টিক টা ধরে বলল,
‘তুমি তো পাফার লিতিল বেবি, তাহলে তুমি কেন দাও মাম্মাম? ‘
আরু বিড়বিড় করে বলল,
‘এই লোকটার এই গুষ্টি কিলাই লিটল বেবি ওয়ার্ডটা আমার এই নাদান বাচ্চাটাকেও শিখিয়েছে। আসুক আজকে। ‘
আর্শিয়ানের গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
‘ তোমার মাম্মাম তো বেবি নয়, দেখো তোমার মাম্মাম অতো বড়ো। কতো বড়ো বড়ো হাত, পা।’
আর্শিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ Are u ghost? আমাল পাপা একটা ভূতুকে বিয়ে কলেতে। উইমমমমমা। ‘
আরু বকুনির সুরে বলল,
‘ এই ছেলে তুমি এতো পাকনা কেন? আমি না তোমার মাম্মাম। নিজের মাম্মামকে কেও ঘোস্ট বলে? মাম্মামকে সরি বলো। ‘
আর্শায়ান পিছনে হাত দুটো রেখে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘নো নো নো, নেভার নেভার নেভার। ‘
আরু ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘হোয়ই হোয়াই হোয়াই? ‘
আর্শিয়ান সিরিয়াস একটা ভাব নিয়ে বলল,
‘তুমি আল পাপা দুজনেই কেও থলি বলো না কাওকে, থালাদিন খালি মালপিট কলো। তোমলা বলো না তাহলে আমি কেন বলবো? ‘
‘তুমি আমার ছেলে না, তুমি তোমার নানুর মেয়ের ছেলে। নাও সে সরি। ‘
আর্শিয়ান আরুর গালে চুমু দিয়ে বলল,
‘ওয়েট আগে সিওল হয়ে আসি তুমি আমাল নানুর মেয়ে কি। নানুকে কল কলি। ‘
আর্শিয়ান ছোট ছোট পায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ছুটে গেল, আরু জোর গলায় বলল,
‘ আর্শিয়ান। ‘
আর্শিয়ান পিছন ঘুরে বলল,
‘শোনো না তুলতুল(টুইটুই), পাপা আতলে বলবে আমি দাদানের লুমে আতি। তাতা। ‘
আর্শিয়ান চলে গেল। আরু চিৎকার দিয়ে বলল,
‘আর্শিয়ান সাবধানে নামো, নাহলে পড়ে যাবে।’
আরু রুমে এসে বিছানার ওপর ধাম করে এসে শুয়ে পড়লো। সরাদিন পর কলেজ থেকে বাসায় ফিরে ছেলের এসব কথা শুনলে আরুর মনটা এমনিই ভালো হয় যায়। আরিশ যেমন শান্ত স্বভাবের তেমনি আরু তার বিপরীত। আরুর সব বৈশিষ্ট্য গুণাবলিই আর্শিয়ানের মাঝে বিদ্যমান। আরু বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলল,
‘ছেলেরা নাকি মা ভক্ত হয় কিন্তু আমার ছেলেটা এতো বাপ বাপ করে কিল্লাই। ‘
কথাটা বলে আরু ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুম যখন ভাঙলো তখন পিঠে দুমদুম করে স্বল্পাঘাতে কিলের জোরে ঘুম ভেঙে গেল আরুর। আর্শিয়ান তার পিঠের ওপর টগবগ টগবগ করছে আর নাচানাচি করছে। আরিশ দূরে দাঁড়িয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে। আয়নায় আরিশকে দেখতে পেলো আরু। চিৎকার করে বলল,
‘ওই দেখো তোমার পাপা বাসায় এসেছে। ‘
আর্শিয়ান নামলো না, সে টগবগ টগবগ করতে লাগলো আরুর পিঠের ওপর। আরু আরিশকে ডেকে বলল,
‘ এই ওকে নামতে বলুন। আমার কোমর! ‘
আরিশ আর্শিয়ানকে আরুর কোল থেকে নামিয়ে কোলে তুলে নিলো। আরু সোজা হয়ে বসে আরিশের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘আমাকেও কোলে নিন। ‘
আরিশ অবাক হয়ে বলল,
‘আরুপাখি! ‘
‘কোন পাখি টাখি না, কোলে নিন। ছেলেকে কোলে নিয়েছেন আর আমাকে পারবেন না কেন? আগে তো খুব বলতেন তোমার জায়গা তোমারই। আর্শিয়ানের আগে তো আমি আপনার কোলে উঠেছি তাহলে আপনার কোল আমার পার্সোনাল প্রপার্টি আর্শিয়ান উঠবে কেন? ‘
আর্শিয়ান বলে উঠলো,
‘ পাপা মাম্মাম বলেছে আমাকে থলি বলতে বলেতে। ‘
আরিশ আর্শিয়ান কে ইশারায় বলল,
‘ একদম বলবে না, একদম না। ‘
আর্শিয়ান আরিশের গলা জড়িয়ে ধরলো। আরু বলে উঠলো,
‘ আমার খাবার কই? ‘
আরুর কথার সাথে সাথে আর্শিয়ান বলল,
‘ আমাল খাবাল কই? ‘
আরিশ পকেট থেকে একটা চকলেট বার করে আর্শিয়ানের দিকে ধরলো। আর্শিয়ান নিতে গেলেই আরু ওটা নিয়ে বলল,
‘ আমারটা কই? ‘
আরিশ বলল,
‘ আরুপাখি ওটা ওকে দিয়ে দাও। ‘
আরু আর্শিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আর্শিয়ান আমি বিকালে না তোমাকে কলেজ থেকে ফেরার পথে অনেক চকোলেট কিনে দিলাম। ওগুলো তোমার্। বাট এটা আমার। ‘
আর্শিয়ান আরুর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে বলল,
‘ ওগুলোও আমার এতাও আমার। ‘
আরু আর্শিয়ানের হাত থেকে নিয়ে বলল,
‘ না এটা আমার ওগুলো তোমার। ‘
আরু এবার আরিশকে একদিক থেকে জড়িয়ে বলল,
‘ তাহলে মি অভদ্র আমার। ‘
আর্শিয়ান ও জড়িয়ে বলল,
‘এটাও আমাল। ‘
‘ নাহ উনি আমাল। থুড়ি আমার। ‘
‘ নাহ পাপা আমাল।
আরিশ পকেট থেকে আর্শিয়ানকে আর একটা চকোলেট বার করে বলল,
‘ তাহলে ওটা মাম্মামের থাক এটা তুমি রাখো। ‘
আর্শিয়ান চকোলেট টা নিয়ে বলল,
‘তুমি আমাল পাপা। ‘
আরুও চেচিয়ে বলল,
‘ ওটা আমার পাপ, থুড়ি আমার জামাই, আমার জামাই। ‘
আরিশ খেয়াল করলো দুজনেই নাছোড়বান্দা। কেও হার মানতে নারাজ, যতোই হোক আর্শিয়ান তো আরুর মতোই। ‘
আরু আরিশের বুকে মাথা রেখে বলল,
‘ আপনি আমার। ‘
আর্শিয়ান হাত বাড়িয়ে আরুকে জড়িয়ে বলল,
‘ মাম্মাম তুমিও আমাল। ‘
আরু আরিশ দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো।
আরুও আর্শিয়ানকে জড়িয়ে বলল,
‘আর্শিয়ান ও আমার। ‘
আরিশ বলে উঠলো,
‘ তাহলে আমার কে? ‘
আরু আর আর্শিয়ান দুজনেই একসাথে বলে উঠলো
‘আমলা তোমাল। ‘
সুরাইয়া আয়াত.
#সমাপ্ত,