কারণে অকারণে ভালোবাসি০২ পর্ব-৪৮+৪৯

0
699

#কারণে_অকারণে_ভালোবাসি০২
#সুরাইয়া_আয়াত

৪৮.

রাত একটা বাজে প্রায়। নিশুতি রাত, চরিদিকে থমথমে পরিবেশ তো কখনো কখনো গাছের পাতার শনশন আওয়াজ কিংবা বিড়ালের ম্যাও ম্যাও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
অনিকা খানের পাশ থেকে অতি সন্তর্পণে পা টিপে টিপে কোনরকম আওয়াজ না করেই আরু দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। আরিশকে ছাড়া আজ ওর সত্যিই ঘুম হচ্ছে না। আরিশের বদঅভ্যাস গুলো যেন আরুর একান্ত প্রিয় হয়ে গেছে। আজ বুঝতে পারছে বেশ যে আরিশ কেন কখনো ওকে ছাড়া ঘুমায় না, কারন ওদের দুজনেরই দুশ্চিন্তা মুক্ত একটা রাত পার করার জন্য দুজন দুজনকে ভীষনরকম প্রয়োজন।

বারান্দায় আলো জ্বলছে। সানার রুমের সামনে দিয়ে আরুর রুমে ঢুকতে হয়। আরু অতি গোপনে তার রুমের সামনের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কপালে চিন্তার ভাজ। এতো রাতে কি আরিশ ঘুমিয়ে পড়েছে? তাকে কি ডাকা ঠিক হবে? ডাকলেও দরজায় নক করবে নাকি ধীর কন্ঠে ডাকবে? এতোসব প্রশ্ন আরুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বেশ কিছুখন নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই, বুঝে উঠতে পারছে না কিভাবে আরিশকে ডাকবে। তবে অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর মনে করলো যে দরজায় নক করবে, না হলে এতো রাতে যদি ডাকতে শুরু করে তাহলে সকলের ঘুম ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। যেই ভাবা সেই কাজ। আরু দরজায় নক করতে গেলেই দরজাটা যেন হালকা সরে গেল। আরু ভয়ে হাতটা সরিয়ে নিতেই দেখলো ঘরের মধ্যে আলো জ্বলছে। আরু ধীর পায়ে দরজাটা খুলতেই দেখলো আরিশ বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। আরু অবাক হলো না কারন রাত জেগে আরিশের কাজ করার অভ্যাস আছে, আর যেদিন আরিশ জেগে থাকে সেদিন অরুকেও জেগে থাকতে হয়। আরু দরজাটা খুলে রুমে প্রবেশ করতেই আরিশ ল্যাপটপটা বন্ধ করে বলল,
‘দরজাটা দিয়ে লাইট অফ করে দাও। ‘

আরিশের কথাতে আরু আরও বেশি চমকালো। এমন একটা সময়ে সে আরুকে দেখে সত্যিই অবাক হয়নি? আরু প্রশ্নটাকে আপাত সময়ের জন্য দমিয়ে রেখে দরজা দিলো। অতখনে আরিশ ল্যাপটপটা সোফার ওপর রেখে দিয়েছে। আরু লাইট অফ করলো না। আরিশের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

‘ আপনি এতো রাতে আমাকে দেখে অবাক হননি? ‘

আরিশ জল খেয়ে বোতল টা রাখতে রাখতে অতি স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘না তো। আমি তো জানতাম তুমি আসবে। ‘

আরু চমকালো, অতি দ্রুত উত্তর দিল,
‘ আপনি কি করে জানলেন যে আমি আবার আসবো? ‘

আরিশ এবার আরুর মাথায় হাত বুলিতে আরুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল,
‘ কারন আমিই হলাম তোমার সবচেয়ে প্রিয় বদ অভ্যাস যাকে ছাড়া না তুমি শান্তিতে থাকতে পারবে আর না তুমি ঘুমাতে পারবে। বুঝলে আরু পাখি।”

আরিশ সরে এসে বলল,
‘ অনেক রাত হয়েছে অরুপাখি এবার ঘুমাও। ‘

আরু আরিশের হাত ধরলো। জেদ নিয়ে বলল,
‘বলুন আপনি কি করে বুঝলেন যে আমি আসবো? ‘

আরিশ আরুর গালে হাত রেখে বলল,
‘ আমি সব বুঝি আরুপাখি এবার ঘুমাও। ‘

আরিশ ওর প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না, আরুর রাগ হলো।
বেশ সজোরে চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ তাহলে এটা কেন বোঝেন না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। ‘

আরিশ আরুর চোখে চোখ রাখলো, আরুর চোখ জোড়া অশ্রুসিক্ত। আরিশ উত্তর দিল না এবারও। আরু নাছোড়বান্দা।

‘ এভাবে আমার প্রশ্নটা ইগনোর করছেন কেন? বললাম না আমি আপনাকে ভালোবাসি। ‘

আরুর চোখ দিয়ে জল গড়ালো। আরিশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো যেমন আমি তোমাকে বাসি। ‘

আরু আরিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ নাহ আপনি জানেন না, আপনি কিছু জানেন না। যদি জানতেন তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন যে আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না। ‘

আরিশ চুপ করে রইল। আরুর পাগলামি রিতিমত বাড়ছে।
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়েই রইলো নিরবে কিন্তু কিছু বলছে না। আরু কাঁদতে কাঁদতে ব্যালকনিতে গিয়ে পেটে আলতো করে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগলো। চোখের সামনে সব কেমন ঘোলাটে লাগছে আরুর কাছে। আরিশ ধীর পায়ে আরুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। দুজনেই চুপচাপ। আরু কিছুটা শান্ত হলো। আরিশের দিকে তাকিয়ে থমথমে কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
‘আপনি সত্যিই জানতেন আমি আপনাকে ভালোবাসি? ‘

আরিশ বাকা হাসলো, আরিশ এখনো নিরুত্তর। এই অবুঝ মেয়েটাকে এখন সে কিভাবে বোঝায় যে সবকিছু বোঝার জন্য সবসময় প্রকাশ করার দরকার পড়ে না।

আরু এবার আরিশের বাম হাতটা আঁকড়ে ধরে আরিশের শরীরে ওর ভর ছেড়ে দিল। আর বলতে লাগলো,
‘আপনাকে না আমি আগে কখনও ভালোবাসসিনি জানেন তো। আপনি যেমন আমাকে সেই আমার ছোট বয়স থেকে ভালোবাসতেন আমি পারিনি আপনাকে কখনো ওই ভাবে ভালোবাসতে। আর আপনার ভালোবাসাও কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি। ‘

আরিশ কোন উত্তরই দিলো না, আজ যেন সে নিরব স্রোতা। আরু পুনরায় বলল,

‘ ছোটবেলা থেকে যখন আপনি আমাকে এতো আগলে আগলে রাখতেন তখন না আমার আপনার কেয়ার গুলো একদম ভালো লাগতো না, শুধু মনে হতো আপনি আমাকে বন্দী করে রাখতে চান নিজের মতো। কিন্তু আমি কখনো তা চাইনি। ছোটবেলায় বিষয়গুলো বুঝতাম না। তবে ক্লাস টেনে যখন আপনি আমার সব ফ্রেন্ডদের বলেছিলেন যে আপনি আমার জামাই তখন আপনার ওপর রাগ হয়েছিল অনেক। তারপর যখন আপনি আমার সময় অসময়ে পাশে থাকতে শুরু করলেন, আমার সব দায়িত্ব আপনি নিয়ে নিলেন তখন থেকে আমি নিজের প্রতি অমনোযোগী হয়, মনে হতো আপনি তো আছেন আমাকে দেখার জন্য। আমি তখন থেকে আপনাকে অনেক ভয় পেতাম কারন আপনি সবসময় আমাকে বকাঝকা করতেন। তেমনি আমার যা যা দরকার হতো আপনি চাইতে না চাইতেও সামনে এনে হাজির হতেন। আমি না বুঝতাম না আপনি কি করে আমার মনের কথা বুঝতেন। তারপর আমি আপনার হয়ে গেলাম, চিরকালই আপনাকে বিরক্ত করার সবরকম পন্থা আমি অবলম্বন করেছি আর আপনিও কখনো বিরক্ত হননি। বিশ্বাস করুন এভাবে আমাকে কেও ভালোবাসেনি, আমার বাবা মা ছাড়া। আপনি সত্যিই অনেক ভালোবাসা, অনেক সুখ, অনেক আনন্দ ডিজার্ভ করেন কিন্তু আমি আপনাকে দিতে পারি না। ‘

আরুর শেষের কথাটা শুনে আরিশ আরুর দিকে তাকালো,
‘ দিয়েছো তো। ‘

‘ নাহ আমি পারিনি। আর পারবো কি আমি জানি না। ‘

আরিশ আরুকে বুকে টেনে বলল,
‘ তুমিই তো আমার সবচেয়ে বড়ো হ্যাপিনেস। সত্যি বলতে আমার জীবনের দুটো বড়ো ড্রিম ছিল, একটা তোমাকে পাওয়া আর একটা ডক্টর হওয়া। তুমিই আমার ফাস্ট এন্ড লাস্ট প্রায়োরিটি। ‘

আরু আরিশ কে আঁকড়ে নিল। আরু বলে উঠলো,
‘Saranghaeyo’

আরিশ হাসতে হাসতে বলল,
‘Saranghaeyo নট। ‘

আরু নাক টেনে বলল,
‘ এই জন্যই আপনাকে আমি জাতীয় অভদ্র বলি। অলওয়েজ ত্যাড়ামো করেন। সোজাভাবে কথা বলেন না। ”

আরিশ মুখ গোমরা করে বলল,
‘ ওই নিম পাতার ফ্যাক্টরি নামটা তুমি আর বলবে না। আমি মোটেই নিম পাতার ফ্যাক্টরি না। ‘

আরু তিনবার বলে উঠলো,
‘নিমপাতার ফ্যাক্টরি, নিম পাতার ফ্যাক্টরি, নিম পাতার ফ্যাক্টরি। ‘

আরিশ মুচকি হেসে বলল,
‘ড্রামা কুইন। ‘

#চলবে,,,,,,

#কারণে_অকারণে_ভালোবাসি০২
#সুরাইয়া_আয়াত

৪৯.

দুই মাস পর,

রাত ১১.৩০টা,,,

‘দেখুন বেবি কিক করছে। ‘

মৃদু কম্পমান সুরে বলে উঠলো আরু। আরুর গলার স্বর কাঁপছে। এ এক অদ্ভুত অনুভুতি। আরুর মুখে একরাশ হাসি আর চোখে অশ্রুকনার ভিড়। আরিশ আরুর পেটের দিকে হাত বাড়ালো। আরিশের হাত কাঁপছে কোন এক অজানা অনুভুতিতে। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। আরু কে নিয়ে আরিশ যে ভয় গুলো পেত সে গুলো এখন আর হয় না কারন সব টেস্ট আর সিনিয়র ডক্টরের সাথে আরিশ কনসাল্ট করেছে আর জানতে পেরেছে যে আরুর ডেলিভারিতে হয়তো কোন সমস্যা হবে না আল্লাহর রহমতে। আরিশ আলতো করে আরুর পেটে হাত দিলেই বেশ একটু নড়াচড়া অনুভব করতেই আরিশ ভয়ে আচমকাই হাত সরিয়ে নিল। আরু আরিশের হাত ধরে বলল,
‘ভয় পাচ্ছেন কেন? হাত দিন দেখুন কিছু হবে না। ‘

আরু আরিশের হাতটা নিয়ে ওর পেটের ওপর রেখে বলল,
‘দেখুন ও ওর ছোট ছোট পা দিয়ে কিক করছে। ‘

আরিশ আরুর মুখের দিকে তাকালো, পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন আরুর হাসির মাঝেই আরিশ দেখতে পাচ্ছে। আরিশ আরুর গালে হাত রেখে বলল,
‘ তুমি ব্যাথা পাচ্ছ না তো? ‘

আরু হাসতে হাসতে বলল,
‘ দূর পাগল ব্যাথা পাব কেন? আমার তো এখন বেশ মজায় লাগছে বিষয়টাতে। মনে হচ্ছে আর্শিয়ান যেন আমার সাথে খেলা করছে।

আরিশ নিঃশব্দে হেসে উঠলো। আরুর কাছ থেকে উঠে গিয়ে রুম থেকে একটা পাতলা পশমের চাদর এনে আরুর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আরুর পাশে বসলো। আরিশ আরুর পাশে হতেই আরু আরিশের কাধে মাথা রেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ নানাভাইকে মিস করি মি অভদ্র।’

আরিশ আরুর হাতটা নিজের মুঠোয় ভাজ করে নিয়ে বলল,
‘ মন খারাপ আরুপাখি?’

আরু উত্তর দিলো না। খানিকখন থেমে বলল,
‘ আজ নানাভাইদ থাকলে ভীষন খুশি হতো জানেন তো। ‘

আরিশ একটা গভীর শ্বাস ছাড়লো। আরুপাখি বলে ডেকে উঠতেই আরু মৌন স্বরে জবাব দিলো,
‘হমম। ‘

‘তারপর কি হলো শুনবে না? ‘

আরিশের এমন বলাতে আরু বুঝে গেল নিমেষেই যে আরিশ কি বলতে চাইছে। আরিশের হাতটা আঁকড়ে ধরে বলল,
‘ হমম হমম বলুন বলুন। শুনবো তো। না শুনলে আমার নাতিপুতির কাছে গল্প করবো কি করে যে তার দাদান আমাকে কতোটা ভালোবাসতো। নাহলে বুড়ো বয়সে ওদের সাথে গল্প করার মতো কিছু থাকবে না তখন ওরাও আমাকে আপনার মতো নিমপাতার ফ্যাক্টরি ভাববে। ‘

আরিশ বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো।
‘ আরুপাখি আজকে কতো তারিখ তোমার মনে আছে? ‘

আরু চোখ বন্ধ করে বলল,
‘হমম হমম মনে আছে। এখনো বেশ কিছুখন সময় আছে। ততখন আপনি বলতে থাকুন। ‘

আরিশ আরুকে জড়িয়ে ধরলো আর বলতে শুরু করলো,
‘ তুমি যে বছর এস এস সি দাও তখন তোমাকে একটা ছেলে প্রপোজ করে মনে আছে? ‘

আরু চোখ বন্ধ রেখে বলল,
‘ নাম মনে নেই। ‘

‘ আচ্ছা। তার নাম ছিলো রিফাত উদ্দিন। সে রাজাউকে পড়তো সম্ভবত। আমি যখন রোজ তোমাকে বাইকে করে কলেজে দিয়ে আসতাম তখন ওই ছেলেটাকে লক্ষ করি যে সে তোমাকে গেটের বাইরে ফলো করে। আমি প্রথমেই কিছু বলিনি। কিন্তু যেদিন সে তোমাকে প্রপোজ করে হাতেহাতে ধরা খাই সেদিন আচ্ছা করে দিয়েছিলাম। ‘

আরু অবাক হয়ে বলল,
‘ আপনি মারপিট করেছিলেন নাকি? কারন এই দিনের পর তাকে আমি আর দেখিনি। ‘

‘মারপিট করিনি। ইভেন তাকেও কিছু বলিনি। সরাসরি তার বাসায় গিয়ে বলে এসেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সে ছিল আমার এক সিনিয়ার আপুর ভাই। আর সেইদিনের পর না জানি সেই সিনিয়ার আপুটা আমার মাঝে কি রত্ন খু্জে পেয়েছিল। সেই আপু আমাকে প্রপোজ ও করে বসে। ‘

আরু আরিশের কাধ থেকে মাথা সরিয়ে আরিশের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে বললো,
‘ আপনি আপনার সিনিয়ারের থেকেও প্রপোজ পেয়েছেন? হাউ টুইটুই ব্যাপার স্যাপার। আর আপনার জন্য আমি একটা ছাড়া দুইটা প্রপোজ পাইনি। ‘

আরিশ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
‘ আমিও তো ওই একটা ছাড়া কোন প্রপোজ পাইনি। ‘

আরু আরিশের হাতে ছোট্ট করে চিমটি দিয়ে বলল,
‘এক বাচ্চার বাপ হতে চলেছেন আর এখন বউকে মিথ্যা বলছেন? আমি কি জানি না নাকি কিছু। আপনি আপনার মেডিকেল কলেজের যতোগুলো মেয়ের থেকে প্রপোজাল পেয়েছেন আর সব লেটার গুলো যে আপনি ডাস্টবিনে ফেলতেন তা কি আমি জানি না। আপু গুলোও কি আবেগি ভাভা গো ভাভা। কতো আবেগ নিয়ে চিঠিপত্র লিখতো আর আপনি ফেলে দিতেন হ্যাঁ। আমি হলে তো যত্ন করে রাখতাম। লাভ লেটার বলে কথা। ‘

আরিশ ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ডাস্টবিন থেকে লাভ লেটার কুঁড়িয়ূ পড়তে? লাইক সিরিয়াসলি আরুপাখি! তাই বলি তুমি বাসায় আসলেই ডাস্টবিন খালি হয়ে যায় কেন। ‘

আরু মুখ কাচুমাচু করে বলল,
‘ শুধু কি আপনিই আমার নজর রাখতেন নাকি। আমি কি পারি না নাকি আপনার ওর জাসুসি করতে। ‘

আরিশ অবাক চাহহনিতে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনি তো মহান মিস টুইটুই। ‘

আরু হেসে ফেলল। আরিশ বলতে শুরু করলো।
‘ সেদিনের পর তোমার সব ক্লাস মেটদের সবাইকে জানিয়েছিলাম যে তুমি আর আমি এনগেজড আর তা করেছিলাম কারন কোন ছেলে কোন মেয়েকে পটাতে গেলে সর্বপ্রথম তার বান্ধবী দেরকে হাত করার চেষ্টা করে। তাই তাদেরকে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলে যেন তারা সরাসরি বলে দিতে পারে যে তুমি এনগেজড ততই ওমন করেছি।’

আরু চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
‘ জল্লাদ মানুষ। ‘

আরিশ আরুর গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,
‘ তারপর শুনবে না?’

আরু চোখ খুলে বলল,
‘ শোনান আপনার ডেভিলগিরি। ‘

‘হমম। তারপর তো তোমার সব দায়িত্ব আমি নিলাম। ভাবলাম যে বয়স বাড়লে তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি আর ম্যাচিওরিটিও বাড়বে কিন্তু তা হলো কই? দিনদিন তোমার ত্যাড়ামো বাড়তে লাগলো আর শুধু হলো আমার ধমক ঝমক। তবে আম্মু অনেক আগেই আমার মনের কথা জানতো যে আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। তাই আম্মু আমাকে কখনো আটকাইনি। ‘

আরু ধমক দিয়ে বলল,
‘ আর সেই সুযোগে আপনি আমাকে কতো বকা ঝকা করেছিলেন ঠিক নেই। তবে আপনি আমার গল্প পড়ার অভ্যাসটাকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন, ভীষন হার্ট হয়েছিলাম। ‘

কথাটা বলে আরু থেমে গেল। আরিশ বলে উঠলো।
‘ আমি কখনো তা চাইনি কিন্তু ভয়ে তা করেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি যদি এই উপনাস্যের নতুন নতুন চরিত্রের মাঝে যদি আমাকে সরিয়ে অন্য কাওকে খোঁজার চেষ্টা করো তাই। ‘

পরিবেশ থমথমে হতেই আরু বলল,
‘ আচ্ছা ওসব বাদ দিন। তারপরে বলুন। ‘

আরিশ বলল,
‘ তারপর আর কি। তোমার নানাভাই আমাকে একদম পছন্দ করতেন না, উনি কেবল চাইতেন তোমাকে আমার থাকে দূরে সরাতে। তাই তো আমি কখনো ওনার ধারে কাছে যেতাম না যদিও। কিন্তু উনি যখন তোমাকে জোর করে একেবারে বিয়ে দিতে চাইলেন তখন আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। সেদিনই তো তোমাকে ঢাকায় এনে এনগেজমেন্ট করলাম। ‘

আরু মিনমিনে করে বললাম,
‘ বিশ্বাস করুন সেদিন আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেছিলাম। শুধু মনে হচ্ছিল বিরাট এই যুদ্ধের ময়দান এ আমাকে একা করে আপনি বোধহয় চলে গেছেন আমাকে আর নিতে আসবেন না, বুকে টেনে বলবেন না আরুপাখি ভালঝবাসি। যদিও আগে আপনি কখনো আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলেননি। ‘

আরিশ মুচকি হেসে বলল,
‘ তোমাকে হারাবো এমন সাধ্য আমার নেই। আর আমি তা পারবোও না। কিন্তু বিয়েটা হয়তো তোমার অমতে এতো তাড়াতাড়ি আমি করতাম না কিন্তু তোমার ঘাড় ত্যাড়ামোতে না করে পারলাম ও না। চব্বিশ বছর বয়সে বিয়ে করে একেবারে পঁচিশ বছরে বাচ্চার বাপ ও হয়ে গেলাম। আমি তজমাককে আর একটু সময় দিয়ে আর নিজেকে আর একটু টাইম দিতে বিয়েটা করতাম বাট যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আর কতো রাত ই বা বউকে ছেড়ে থাকতাম বলো।’

আরু খিলখিল করে হেসে ঊঠলো। আরিশ আরুর হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। আরিশ মাতাল চাহনিতে তাকিয়ে বলল,
‘ আরুপাখি। ‘

আরু হাসি থামিয়ে বলল,
‘ হমম। ‘

‘ভালোবাসি। ‘

‘কি বললেন আর একবার বলুন শুনতে পেলাম না। ‘

আরিশ আর বললো না কিছু। কয়েক সেকেন্ড পরই ঘড়ির কাটার প্রথম ঘন্টাটা বাজতেই আরিশ আর আরু একে অপরকে বলে উঠলো,
‘ হ্যাপি ফাস্ট ম্যারেজ আ্যনিভার্সারি মি অভদ্র। ‘

‘হ্যাপি ফাস্ট ম্যারেজ আ্যনিভার্সারি আরুপাখি, ওরফে মিস টুইটুই। ‘

দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো।
আরু আরিশের দিক বেশ কিছুখন তাকিয়ে রইলো। আরিশ ওর পাশে লুকিয়ে রেখে দেওয়া গোলাপটা হাতে নিয়ে আরুর দিক বাড়িয়ে দিলো।
‘ ভালোবাসি। ‘

আরু গোলাপটা নিলো না। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ উহুম। এভাবে হবে না। বুড়ো হয়ে গেলেন তবুও প্রপোজ করা শিখলেন না। ‘

আরিশ হাটু গেড়ে বসতেই আরু আরিলের গালদুটো টেনে দিয়ে নাকে একটা চুমু দিয়ে বলল,
‘ আপনি এতো কিউট হয়ে গেলেন কবে থেকে মি অভদ্র? ‘

আরিশ চোখ টিপ মেরে বললো,
‘ আমি তো জন্মগতই কিউট আরুপাখি। ‘

আরু ফিক করে হেসে দিল। আরিশ আরুর দিকে গোলাপটা ধরে বলল,
‘তুমি কি আমার শেষজীবনের লাঠি ধরে একসাথে হাটার সঙ্গী হবে আরুপাখি। ‘

আরু গোলাপটা নিয়ে বলল,
‘ভেবে দেখবো। আগে আমার জন্য কি এনেছেন দেখি। ‘

আরিশ পকেট থেকে একটা আংটি বার করে আরুর হাতে পরিয়ে দিল। আরু আরিশ কে ধরে ওঠালো। আরিশের হাতে হাত রেখে আরিশের দিকে মুখ পাউট করে তাকিয়ে থাকতেই আরিশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আরু যে এই কদিনে তার থেকেও বেশি লুচু হয়ে গেছে তা আরিশ বুঝতে পারেনি। আরিশ আরুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল। আরু চোখ খুলে বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘নিরামিষ লোক। ‘

আরিশ আরুর হাত ধরে কাছে টেনে বলল,
‘ রুমে চলো তারপর সব বোঝাবো।’

আরু আরিশ কে আলতো করে ধাক্কা দিল। আপনি একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন।

আরিশ অবাক করে বলল,
‘ কি? ‘

‘ আপনি একটা গান করুন না শুনি। ‘

আরিশ আর কথা না বাড়িয়ে আরুর গালে হাত রেখে বলল,
তোমারে দেখিলো পরাণ ভরিয়া

আসমান, জমিন, দরিয়া

চলিতে চলিতে থামিও

দেখিবো তোমারে আমিও

ও, রূপে দিলা তুমি পাগল করিয়া।

আরু লজ্জায় চোখ নামালো। আরিশ বহুখন চেয়ে রইলো আরুর দিকে। এ দেখার শেষ নেই। আরু যে তার মায়াবতী।

#চলবে,,,