কারণে অকারণে সে পর্ব-০৮

0
648

#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:৮
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
সাভাশ সকালে ঘুমিয়ে ছিল তখন কেউ একজন এসে তার পিঠে চড়ে বসলো।সাভাশ বুঝতে পারছে এটা কে কিন্তু চোখ খোলা তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কাল প্রায় অর্ধরাত পর্যন্ত বিছানায় ছটফট করেছে সে।ঘুম যেন চোখে ধরা দিতে চায় না তার।এংগেজমেন্টের আগের রাতেই তার এমন দুর্দশা না জানি বিয়ের আগের রাতে তার কি অবস্থা হবে।সাভাশের রাতে মনে হচ্ছিল সময় যেন কাটছেই না কখন সকাল শেষ হবে আর কখন সে আরশির বাড়িতে যাবে।সাভাশ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিল।তার এতো সুন্দর চোখ জোড়া কেমন লাল হয়ে গেছে রাতে না ঘুমালে চোখের নিচে তো কালি পড়ে যাবে।চোখের নিচে কালি পড়লে যদি আরশি বিয়ে না করে তাকে?এমনিতেই তো বিয়ে ভাঙতে মেয়েটার কতো বাহানা।চোখের নিচে কালি দেখলে নিশ্চিত বলবে,”সাভাশ আমি বুঝতে পারছি আপনি বিয়েটাতে খুশি নন।আপনার লাল লাল চোখ আর চোখের নিচের কালিই তা বলে দিচ্ছে।আপনি বোধহয় আপনার প্রাক্তনকে মনে করে কান্না করে সারা রাত ঘুমাননি।”
সাভাশের এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনার কোনো মানে হয় না।তবুও সাভাশ কোনো রিস্ক নিতে চায় না তাই একটা হাই পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে।

এখন সেই ঘুমের ওষুধ তাকে চোখ মেলতে দিচ্ছে না।পিঠে চড়া মানুষটা নিজের সত্তর কেজি ওজনের পুরোটা সাভাশের ওপর দিয়ে দেয় কিন্তু সাভাশের তবুও পাত্ত নেই।মানুষটা বেশ বিরক্ত হয়ে এবার টেবিলের ওপরের গ্লাসে পানি নিয়ে সাভাশের উপর ঢেলে দেয়।আর বলে,
“এডভোকেট সাহেব উঠেন ঘুম থেকে।সময় তো কম না প্রায় দশটা বাজে।”
কথাটা শুনতেই সাভাশের ঘুম ছুটে যায়।সে দড়ফড়িয়ে উঠে বসে।তার পিঠে থাকা ব্যাক্তিটাও কাত হয়ে বিছানায় গিয়ে পড়ে।সাভাশ ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে বেশ বিরক্ত হয় এরপর মানুষটার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
“আভাস তোর সমস্যা কি?মাত্র আটটা বাজে ঘড়িতে আর তুই আমার উপরে পানি ঢেলে দিলি?”

আভাস চৌধুরি সাভাশের ছোট ভাই যে এই কয়েকদিন রিসার্চের জন্য দেশের বাইরে ছিল।

আভাস বিছানায় এক হাতে ভর দিয়ে শুয়ে গালে হাত দিয়ে সাভাশের দিকে তাকিয়ে একটু ঢং করে বলল,
“কেমন ভাই তুমি?তোমার ছোট ভাইটা এ কদিন বাড়ি ছিল না আর তুমি তাকে ভালো মন্দ না জিজ্ঞেস করে তার উপর রাগ ঝাড়ছো।ভালোই বউ পেয়ে ভাই ভুলে গেছো।”
“মেলো ড্রামা করবি না একদম।তুই আমাদের না জানিয়ে হুট চলে গিয়েছিলি চৌদ্দ দিন আগে তাই আমরাও তোর খবর রাখি নি।”
“ওহ আমি ভুলে গেছিলাম বলতে।”
“যাই হোক রিসার্চের কাজ কেমন হলো।”
“ধুর!আর কাজ! সবকিছুই প্যারা লাগে। মাটি নিয়ে সারাদিন ল্যাবের মধ্যে পরীক্ষা করা এই আর কি?”
“বাসায় কখন এসেছিস?”
“এই তো এক ঘন্টা।”
“এসেই আমাকে জালানো শুরু।”

সাভাশ বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজের চেহারা দেখছে। নাহ্ খারাপ লাগছে না।
আভাস সাভাশের মোবাইল হাতে নিয়ে বলল,
“ভাই ভাবীর ছবি দেখবো।তুমি তো আমাকে পাঠাও নি।”
“ছবি দেখা লাগবে না।সকালে নাস্তা করে আরশিদের বাড়িতে যাব বিয়ের শপিংগুলো দিয়ে আসতে। তখন সামনাসামনি দেখে নিস।”
“ওকে।”
;
;
আরশি টেবিলে বসে মোবাইল টিপছিল।বাড়িতে মানুষ অনেক বেশি বিশেষ করে তার রুমে।কাজিনরা আজকে তার রুমকে নিজেদের বিউটি পার্লার বানিয়ে ফেলেছে।সকাল সকাল এসে তাকে ঘুম পাড়িয়ে থেকে টেনে তুলে নিজেরা রুম দখল করে বসে আছে।আরশি সবাইকে দুই তিনটা ঝাড়ি মেরে কথা বলার পরেও তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাই বাধ্য হয়ে আরশিকেই নিজের ঘর ছাড়তে হয়েছে।আরহাম আর রিজা আহসান ডেকোরেশন দেখতে ব্যস্ত আর তার মা। চাচী,মামী,ফুফুরা রান্না করতে ব্যস্ত।আরশি বুঝতে পারছে না এতোজন মিলে রান্না করছে তবুও এখনো রান্না হচ্ছে না কেন।সকাল দশটা বাজতে চলেছে।আর এর মধ্যেই আরশির পেটের ক্ষিদে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

কলিং বাজাচ্ছে কেউ।আরশি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে ভাবে অন্য কেউ এসে খুলে দেবে।কিন্তু সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত তাই আরশি নিজেই দরজা খুলতে যায়।দরজা খুলে একটা অচেনা ছেলেকে দেখে আরশি ভ্রূ কুঁচকে তাকায় আর বলে,
“আপনি কে?কি চাই?”
ছেলেটা কিছু বলছে না সে তব্দা খেয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে তার চেহারা দেখে।আরশি বলল,
“ব্রো আপনার সমস্যা কি?কি চান বলবেন তো।”
তখনই সাভাশ পেছন থেকে এসে ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আভাস একটু সরবি তো।,,আরু কেমন আছো মাই কিউটি।”
আরশি বিরক্ত সাভাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এসব অদ্ভুত নামে ডাকবেন না।”

আরশি দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।সাভাশ আর আভাস হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।আরশি দরজা আটকাতে যাবে তখনই আরেকজন আসে।একজন মেয়ে সে।আরশিকে দেখে হেসে বলল,
“ভাবী দরজাটা দয়া করে লাগাবেন না আমি আপনার ননদ বুঝলেন।আমাকেও আপ্যায়ন করতে হবে।”
আরশি ভ্রূ কুঁচকে রইলো কতক্ষণ এরপর তাকেও ভেতরে আসতে বলল।এই মুখগুলো সম্পূর্ণ নতুন তার জন্য।এর আগে সাভাশের পরিবারের থেকে যারা এংগেজমেন্টের তারিখ দিতে এসেছিল এরা তাদের মধ্যে নয়।

আরশি সাভাশকে জিজ্ঞেস করলো,
“ওনারা কারা?”
“এটা আমার দুই বছরের ছোট ভাই আভাস আর এটা আমার ফুফাতো বোন আরিয়ানা আমরা স্যাম এজের।”
আরশি সৌজন্যতামূলক হাসি দিয়ে দুজনকে বলল,
“আপনাদের সঙ্গে দেখা করে ভালো লাগলো।আমার যা মনে হয় আপনারা কেউই সাভাশের মতো নন।”
আরিয়ানা অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“এই লোকটা আমাকে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।আমার লাইফের যত প্যারা আছে তার এক তৃতীয়াংশ ওনার কারণে।”
আরিয়ানা আরশির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলল,
“কি বলো আমার ভাই সাভাশের মতো ছেলে তোমাকে জ্বালায়?,,বোধহয় আমার ভাইটা তোমার প্রেমে পড়েই এমন করছে।না হলে স্কুল কলেজে তো তার মতো ভদ্র ছেলে আর একটাও ছিল না।”
আরশি আরিয়ানার কথায় একটু লজ্জাবোধ করলেও তা কাউকে বুঝতে দিল না।সাভাস আভাসকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কিরে আসার আগে না ভাবী ভাবী করে লাফাচ্ছিলি এখন কিছু বলছিস না কেন?”

আভাস বোধহয় এতক্ষণ অন্য পৃথিবীতে ছিল।সাভাশের ডাকে এখানে ফিরতে বাধ্য হয়েছে।সে মুখে একটা জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,
“আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাবী।আমি আভাস।আমার কারণেই আপনাদের এংগেমেন্টটা ডিলে করতে হয়েছিল।”
আরশি গম্ভীর গলায় বলল,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইয়া।ভাবী বলে ডাকবেন না আমার অদ্ভুত লাগে আপনি এবং আরিয়ানা আপু দুজনেই আমার থেকে বেশ বড় নাম ধরে ডাকবেন অথবা আপু বলে ডাকবেন।”

“জ্,,,জ্বী ঠিকাছে।আপনাদের ওয়াশরুমটা কোনদিকে আমি একটু যাবো।”

হলরুমে আরশির এক আত্মীয়ের সাত বছরের ছেলে খেলা করছিল।আরশি তাকে ডেকেই সাভাশকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিতে বলে।

আরিয়ানা দেখলো সাভাশ কেমন হাঁসফাঁস করতে বোধহয় আরশির সঙ্গে ব্যক্তিগত সময় কাটাতে চায় সে।আরিয়ানা মুচকি হেসে ফোনের বাহানা দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
;
;
;
আভাস ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে এবং মাথায় মানি ছিটিয়ে নেয়।সে যা দেখেছে তা কি সত্যি?চৌদ্দ দিন আগে তো এই মেয়েটাকে সে দেখেছিল মাতাল অবস্থায়।
আভাস তীব্র আর নেহার ভার্সিটি ফ্রেন্ড তারা একসাথেই বুয়েটে পড়েছে।তীব্রর এংগেজমেন্টের দিন পুরোপুরি জ্ঞান হারিয়ে ফেলার আগে আরশি যেই ছেলের কন্ঠ শুনেছিল সেই ছেলেটাই আভাস।
(সেদিনের ঘটনাটা জেনে নেয়া যাক।)

আভাস আর তীব্রর অন্যান্য বন্ধুরা অনুষ্ঠান নিয়ে খুব উৎসাহিত না থাকলেও অনুষ্ঠানের পরের আড্ডার ব্যবস্থা নিয়ে তাদের সবার মাঝেই অন্যরকম উচ্ছ্বাস।দামী বিদেশি মদ, ভোটকা,বিয়ার সবকিছুর ব্যবস্থাই সবাই করে রেখেছে।কিন্তু সব একসাথে রাখে নি তারা।একেকটা একেক জায়গা রেখেছিল যাতে ধরা পড়লে কেউ যেন সবগুলো না পায়।এক জায়গায় রাখলে যদি সেগুলো কারো চোখে পড়তো তাহলে আমও যেতো ছালাও যেতো।

আভাসও তেমনই ভাবে একটা টাঙ্কির পেছনে লুকিয়ে রেখেছিল।কিন্তু নিজেকে সামলাতে না পেরে তাড়াহুড়ো করে এক গ্লাস খেয়ে নেয় এরপর আবার অনুষ্ঠানে চলে যায়।সেই সময়ই আরশি সেখানে যায় আর ড্রিংক।
আভাস আবার ছাদে এসে দেখে একজন স্কার্ট আর ফতুয়া পড়া তরুণী তাদের মদের বোতল পুরোটা শেষ করে দিয়েছে।আভাস নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“এই মেয়ে এটা তুমি কি করলে?”

আরশি কথাটা শুনে আভাসের দিকে তাকিয়ে মাতাল কন্ঠে বলল,
“কি করেছি তাই না?আমি কিছুই করি নি?সবাই আমার সঙ্গে অনেক বাজে ব্যবহার করেছে।আমি কাউকে পছন্দ করি না আমাকেও কেউ পছন্দ করে না।হাউ ফানি তাই না?”
আভাসের কেন যেন মনে হলো আরশি কথাগুলো খুব জরুরী তাই তাকে যেকোনো কিছুর মূল্যে কথাগুলো শুনতেই হবে।আভাস ছাদে আরশির মতোই আসন করে বসে।আরশি আবার বলে,
“হেই ইউ তুমি কেমন মেয়ে চাও নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে?”
আভাস কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“উমমম,,যে আমার জীবনসঙ্গী হবে তাকে অবশ্যই ভালো মনের মানুষ হতে হবে।সবাইকে ভালোবাসতে জানতে হবে।এবং সবচেয়ে বড় কথা আমাকে বুঝতে হবে।”
“লায়ার!ইউ আর আ লায়ার।কেউই এমন মেয়ে চায় না।”
“মিথ্যা কেন বলবো?সব ছেলেরাই এমন ওয়াইফ চায়।”
“you are wrong,, সবাই মুখে এটা বলে কিন্তু মনে আরেক।সবাই ওয়াইফ হিসেবে পারফেক্ট কাউকে খুঁজে।তার চরিত্র কতটা পারফেক্ট সেটা কোনো ব্যাপার না।আসল ব্যাপার হলো সে সব কাজে কতটা পারফেক্ট।তাকে কোথাও নিয়ে গেলে সে আপনার সম্মান রাখতে পারবে কি না সেটা আগে যাচাই করেন।আপনাদের কাছে আপনাদের জীবনসঙ্গী বাছাই করা হচ্ছে একটা প্রোডাক্ট নির্বাচন করার মতো।আমি পারফেক্ট নই and that’s why now I’m here।”
“আপনি ভুল ভাবছেন সব ছেলেরা একরকম নয়।”
“আমি ভুল ভাবি আর সঠিক ভাবি তাতে কার কি?আমি সঠিক ভাবলে কি আমি যাকে ভালোবাসি তাকে পাবো?,,সে ভাবে আমি স্বার্থপর ব্যক্তি।,,আজ একটা গোপন কথা আপনাকে বলি শুনবেন?”
“বলুন আমি শুনছি।”
“ঐ ছেলেটা যখন কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা দেবে তখন হঠাৎ তার খুব জ্বর হলো।সবাই ভেবেছিল এই জ্বরের কারণে সে পরীক্ষাই দিতে পারবে না কিন্তু আমি তাকে বিশ্বাস করতাম।আমি টানা সাতদিন রোজা রেখেছিলাম তার সুস্থতার জন্য কিন্তু কাউকে বুঝতে দেই নি।মাকে বলেছিলাম নিজের পরীক্ষায় ভালো করেছি বলে রোজা রাখছি।,,,,সত্যি বলতে আমি আসলেই স্বার্থপর।স্বার্থপর বলেই তো নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য যা পেরেছি তাই করেছি।”
আভাস কি বলবে বুঝতে পারছে না।এই মেয়েটার কষ্টের কাহিনী শুনে তারও কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আভাস বলল,
“আপনি তাকে কখনো নিজের ভালোবাসার কথা বলেন নি?”
“বলেছি কিন্তু সে রিজেক্ট করে দিয়েছে।আসলে কি বলুন তো আমি এমন একজন মানুষ যাকে প্রায় বেশিরভাগের মানুষের কাছেই অসহ্য লাগে তারও অসহ্য লাগে হয়তো।,,,আমি না কি কাউকে বুঝি না,,জানেন,,,সে পায়েস খেতে ভালোবাসে শুনে আমি নিজের হাতে হাতে পায়েস বানাতে শিখেছি।যেই আমি নিজের প্রয়োজন ছাড়া রান্নাঘরের ত্রিসীমানায় যাই না সেই আমি তার জন্য পায়েস বানানো শিখতে গিয়ে নিজের পা পুড়ে ফেলেছি।পায়ে গরম দুধ পড়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল এক মাস স্কুলে যেতে পারি নি।”

আভাস এই মেয়েটিকে চিনে না ইভেন এই মেয়েটির নাম পর্যন্ত জানে না তবুও ওর মনে হচ্ছে মেয়েটা সম্পর্কে ও অনেক কিছু জানে।এই মেয়ে যে এখন বলা কথাগুলো সজ্ঞানে কখনোই বলবে না তা আভাসের বুঝা হয়ে গেছে।

আরশি উঠে দাঁড়ায় হেলেদুলে।আভাসও উঠে দাঁড়ায়।আরশি বলে,
“অনেক কথা বলে ফেলেছি আপনাকে ব্রো।এই কথাগুলো কাউকে বলবেন না।আর দয়া করে আপনি একটু আমার পেছন পেছন আসুন।পৃথিবীর ঘূর্ণন আমার মস্তিষ্ক বোধহয় উপলব্ধি করতে পারছে।আমার মনে হচ্ছে আমি এখনই পড়ে যাব।তাই সিড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে গেলে ধরবেন কেমন?অল্প বয়সে মরার ইচ্ছা নেই তার উপর অনুষ্ঠানের বাড়ি মরে গেলে সবার আনন্দ ফুস হয়ে শোকে পরিণত হবে।”

আরশি ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নেমে গেল।আভাস তার পেছন পেছনই হেঁটেছে।আভাসের এক বন্ধু ডাক দেওয়ায় সে আরশিকে দাঁড়াতে বন্ধুর কাছে যায়।কিন্তু এই সুযোগে আরশি নিচে গার্ডেনে চলে যায়।এরপর আরশি স্টেজে গিয়ে কি করেছে এটা সবাই জানেন।

(বর্তমানে ফিরি আমরা।)

আভাস আয়নায় নিজের চোখে চোখ রেখে বলল,
“এই মেয়েটা তো অন্য একজনকে ভালোবাসে।আমার ভাই কি এসব জানে?”
;
;
;
সাভাশ আরশির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে আজ খুব কিউট লাগছে।বিশেষ করে তোমার মাথার কিউট হেয়ার ব্যান্ডটার জন্য।”
“এতোই যখন পছন্দ হয়েছে আপনিই পড়ুন।”
“নাহ্ আমাকে অতো ভালো মানাবে না।তোমাকেই মানায়।”
“আচ্ছা শুনেন জরুরী কথা বলি,,,এখনো এংগেজমেন্ট হয় নি তাই আপনার কাছে সুযোগ আছে বিয়ের জন্য মানা করে দেওয়ার।অনেক ভালো মেয়ে পাবেন আপনি আমি দোয়া করবো।”
“আমার অনেক ভালো কিছু চাই না আমার তোমাকেই চাই।”
আরশি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“ভেবে বলছেন তো এংগেমেন্ট মানে হাফ বিয়ে কম্প্লিট?”
“একদম ভেবে বলছি আমি ক্লাস সেভেনে ছেলে যে আবেগে ভেসে তোমাকে বিয়ের কথা বলবো?”
“ছিঃ আপনাকে আমি কখনোই ক্লাস সেভেনের ছেলে ভাবি না।আপনাকে দেখলে সেভেনের ছেলের বাপ মনে হয়।”
“সমস্যা বিয়ের পর বাচ্চা ছেলে মেয়েকে জলদি স্কুলে ভর্তি করে দেবো যেন জলদি সেভেনে উঠে।”
আরশি মনে মনে বলল,
“একে তো কিছুতেই রাগানো যায় না।সব কথার সুন্দর করে পাল্টা উত্তর দিয়ে দেয়।”

আরশি কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল,
“দেখুন সবাই লাইফে পারফেক্ট কাউকে চায় আমার মনে হয় আপনিও পারফেক্ট কাউকে চান।,,,আপনার কল্পনায় অবশ্যই এমন একজন নারী আছে যে দেখতে হবে রাজকুমারীর মতো,সব কাজে সে হবে নিপুণ।”
“আমার কল্পনায় এমন কোনো নারী নেই।আমি কখনোই জীবন সঙ্গী কেমন হবে তা ভাবি নি।আমি সবসময় ভেবে এসেছি আমি তাকে কিভাবে ট্রিট করবো।আমার বাবা আমার আইডল।আমার মায়ের সঙ্গে কখনোই তিনি উচু গলায় কথা বলেন নি।আমার মা জমিদার বংশের মেয়ে ছিলে।আমার বাবা সঙ্গে যখন তার বিয়ে হয় তখন আমার বাবার তেমন কিছুই ছিল না।সে সাধারণ একজন ভার্সিটির প্রফেসর।আমার মা না কি রান্নাও করতে পারতেন না তাই বাবা মাকে রান্না করে খাওয়াতো।আমার মায়ের খুব কম বয়সে বিয়ে হয়েছিল এই সতেরো আঠারো।সে প্রায়ই বাবার সঙ্গে ইচ্ছে ঝগড়া করতো নিজের বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য।আসলে তখন সংসার বিষয়ে তার তেমন কোনো ধারণা ছিল না।,,আমার বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া না করে উল্টো মাকে শান্ত করতেন।,,এসব কথা বাবা কখনো আমাদের বলেননি মা নিজেই বলেছেন। আল্লাহ্ কার ভাগ্যে কেমন মানুষ জীবনসঙ্গী হিসেবে পাঠাবেন তা তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।তাই তার মধ্যে যোগ্যতা খোঁজার আগে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা উচিত।”
কথাগুলো শুনে আরশির চোখে কখন পানি চলে এসেছে আরশি জানে না। আরশি নিজের চোখের জল লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে।

#চলবে!