কারণে অকারণে সে পর্ব-০৯

0
601

#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:৯
#লেখক:রিয়ান আহমেদ
;
সাভাশ হেসে বলল,
“তুমি কি কান্না করছো?”
আরশি কখনোই নিজের ইমোশন কাউকে দেখাতে চায় না কারণ তার বাবা তাকে বলেছিল,”A princess doesn’t cry” তাই আরশির খুব বেশি কান্না না আসলে সেটা সবার চোখের আড়ালেই রয়ে যায়।
আরশি চোখ কয়েক পলক ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ধরা গলায় বলল,
“বাড়িতে অনেক রান্না বান্না হচ্ছে সেই ধোঁয়ার কারণে চোখে পানি আসছে।”
“কই আমি তো কোনো ধোঁয়ার দেখতে পাচ্ছি না।”
আরশি এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলতে পারে না।কিচেন চিমনির কারণে ধোঁয়া আসা সম্ভব নয় তাই তার কথাটা অহেতুক।আরশি ধপ করে সোফা হতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি যাচ্ছি আমার একটা জরুরি কাজ আছে।”
আরশি মিথ্যা বলে নি সত্যিই তার জরুরি কাজ আছে।তার জরুরী কাজটা হলো সবার চোখের আড়ালে গিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করা।আরশির সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে সাভাশের মতো কেউ তার জীবনসঙ্গী হবে।

আভাস সাভাশের পাশে এসে বসে।সে বেশ ইতস্তত বোধ করে বলল,
“ভাই আরশি আপু কোথায়?”
“ওর জরুরি কাজে গেছে।”
“ভাই আমি একটা কথা বলতে চাই আসলে,,,,।”
তখনই আরশির মা চলে এলেন।বিউটি খালার হাতে নাস্তা পানি।আয়েশা বেগম আর শবনম বেগমের হাতে অনেকগুলো ব্যাগ।এইসব সাভাশের আর সাভাশের পরিবারের মানুষদের জন্য এংগেজমেন্ট উপলক্ষে কেনা হয়েছে।
আভাসের আর কথাটা বলা হলো না।
;
;
;
আরিয়ানা বাড়ির বাইরে চলে এসেছে হাঁটতে হাটতে।বাগানে ডেকোরেশন চলছে সবকিছুর সেটাই সে দেখছে।হঠাৎ একটা চেনা বুক দেখে সে নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে লোকটিকে ডেকে বলল,
“আরে মিস্টার আরহাম আপনি এখানে!”

আরহাম চকিতেই ঘুরে তাকালো।মা তার জন্য যা নাস্তা বানিয়েছিল তা সে কাজের চাপে খেতে পারে নি তাই এক কাপ কফি হাতে নিয়ে সবাইকে এটা ওটা বলে দিচ্ছিল।সেই কফিটা আরিয়ানাকে দেখতেই হাত থেকে ঘাসের উপর পড়ে যায়।ঘাসগুলোকে পানির জায়গায় কফি পান করতে হচ্ছে আরহামের কারণে।
আরিয়ানা আরহামের কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“কেমন আছেন আপনি?আপনাকে এখানে পাবো এটা আমি ভাবি নি।ওষুধ রেগুলার খাচ্ছেন তো?”
আরহাম নিচু গলায় বলল,
“জ্বী ডক্টর আমি মেডিসিন রেগুলার খাওয়ার চেষ্টা করছি।”
“শুনুন শুধু ওষুধ খেলেই হবে না মনের শান্তির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন বুঝলেন?”
আরহাম মাথা নেড়ে বলল,
“আমি অনেক ছোট বয়স থেকেই নামাজ পড়ি।”
“বললেন না যে আপনি এখানে কেন?”
“আমার বাড়িতে আমি থাকবো না?”
“ওহ আরশি আপনার বোন?”
“জ্বী কিন্তু আপনি?”
“আমি সাভাশের ফুফাতো বোন।কংগ্রের্টস এখন থেকে আমরা বেয়াই বেয়ান।”
আরিয়ানা মিষ্টি হেসে কথাটা বলল।আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

“আপনি প্লিজ আমার পরিবারকে বলবেন না আমি আপনার পেশেন্ট।আমাদের মাঝে পূর্ব পরিচয় আছে এই কথাটা গোপন রাখলে খুশি হবো।”

আরিয়ানা ভ্রূ কুঁচকে বলল,”কেন?”
আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,”আমি আপনার সঙ্গে আপনার চেম্বারেই এই বিষয়ে আলোচনা করবো।”
আরহাম আর কিছু না বলে সেখান থেকে সরে দাঁড়ায়।

আরিয়ানা পেশায় একজন psychiatrist বা মনোচিকিৎসক যাকে বলে।আরহাম গত কয়েকদিন যাবত তার থেকেই মেন্টাল থেরাপি নিচ্ছে।
;
;
;
নেহার সঙ্গে তীব্রর আজ মোবাইল ফোনে প্রচন্ড রকমের ঝগড়া হচ্ছে।নেহা ঝগড়ার এক পর্যায়ে বলল,
“তীব্র সত্যি বলতে আমার মনে হয় না আমরা পারফেক্ট ম্যাচ।”
“কেন?আমরা দুজনেই স্ট্যাবলিস্ট আমরা দুজনেই একে অপরের বিজন্যাস পার্টনার আর ভবিষ্যতে লাইফ পার্টনারও হবো।”
“তীব্র পারফেক্ট ম্যাচ হওয়ার জন্য এসবের প্রয়োজন নেই মনের মিলটা আসল। তাছাড়া আমাদের বিয়েটা তো বিজনেস পারপাসে হচ্ছে এটা তুমিও জানো আমিও জানি।”
তীব্র দমে গেল।কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল,
“কিন্তু আমরা তো ভালো বন্ধু।”
“তীব্র ভালো বন্ধু হওয়াটা এনাফ নয়। রাফিউল আঙ্কেল আর আমার বাবা আমাদের উপর এই বিয়েটা চাপিয়ে দিয়েছে।ওনারা নিজেদের বিজন্যাসটাকে বাঁচানোর জন্য এসব করছেন।”

তীব্র কথাগুলো শুনে চুপ হয়ে যায়।
আসলে তীব্রর বাবা রাফিউল আহসানের আর নেহার বাবা তানভীর আলমের কম্পানি বেশ কিছুদিন যাবত লসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই তারা দুজন নিজেদের ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে একটা পাকাপোক্ত সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে নিজেদের কম্পানি দুটো মিলিয়ে দিয়েছেন।এতে কম্পানির সব সমস্যা সল্ভ হয়ে যাবে সাথে একে অপরের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় ধোঁকা দেওয়ার কোনো সম্ভাবনাও থাকবে না।

তীব্র একটা ঢোক গিলে বলল,
“যা বলার সোজাসুজি বলো।”
“আমি বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে চাই।”
তীব্র বোঝানোর জন্য বলল,
“দেখো নেহা তুমি এভাবে বিয়েটা ভাঙ্গতে পারো না।আমাদের এংগেজমেন্ট হয়েছে,,, কিছুদিন পর বিয়ে।এখন তুমি একটা ছোট্ট ঝগড়ার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দিতে কেন চাইছো?”
“দেখো তীব্র এংগেমেন্ট হয়েছে বিয়ে তো আর হয় নি।তাছাড়া আমাদের মাঝে বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই।,,আর,,,”
তীব্রর মাথা গরম হয়ে গেছে।সে কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
“আর কি?বলো থেমে গেলে কেন?”
“তীব্র মাথা গরম করো না।,,আসলে আমাদের কলেজের এক সিনিয়র আমাকে অনেকদিন আগে থেকে ভালোবাসে।আমি তাকে অনেকবার রিজেক্ট করেছি কিন্তু সে গত পাঁচ বছর যাবত আমার পেছনেই পড়ে আছে।আজ হঠাৎ যখন তাকে অন্য একজন মেয়ের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে দেখলাম তখন আমার হঠাৎ খুব খারাপ লাগলো।বুঝতে পারলাম মানুষটাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।পরে জানতে পারলাম মেয়েটি ওনার বোন হয়।এখন তুমিই বলো যাকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে না করে তোমাকে বিয়ে করাটা কি ঠিক?”
“তাহলে এতদিন তুমি এসব কেন বললে না।এই পর্যায়ে এসে তোমার এসব কথাবার্তা আমি ঠিক কিভাবে নেবো বুঝতে পারছি না।”
“তীব্র প্লিজ কথাটা বোঝার চেষ্টা করো যে সম্পর্কে ভালোবাসা নেই সেখানে কিছু নেই।”
“আমি সামনাসামনি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।”
“সরি তীব্র আমার এই মুহূর্তে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে।আমি আজ তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারবো না পরে একদিন দেখা হবে রাখছি।”
নেহা ফোন কেঁটে তীব্র স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে।সে এমনটা আশা করে নি।তার মতো একজন ছেলেকে নেহা রিজেক্ট করে দিল।

তানহা এসে তীব্রর দরজায় নক করে বলে,
“ভাইয়া তুমি রেডি হও নি কেন?”
তীব্র উদাসীন চোখে তাকিয়ে বলল,
“কেন কি হয়েছে?”
“ভাইয়া তুমি ভুলে গেছো!আজ না আরশির এংগেজমেন্ট।বিকাল শেষ হয়ে সন্ধ্যা হতে চললো আর তুমি এখনো রেডি হও নি।যাইহোক রেডি হয়ে চলে এসো চাচ্চুদের বাসায় আমি যাচ্ছি।”
তানহা চলে গেল কথাটা বলে।তীব্রর মনে পড়লো আরশির এংগেজমেন্টের কথা।দুই সপ্তাহ আগে তার এংগেজমেন্টের রাতে আরশি যেই কথাটা বলল সেটা কি তাহলে সত্যি হয়ে গেল?,,হ্যা সত্যিই তো হয়ে গেছে।নেহা তাকে ধোঁকা দিয়েছে।
;
;
আরশির কথা কেউ শুনে নি সবাই আজ সেজেছে নিজের মন মতো।আরশি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কাজিনদের কর্কশ গলায় বলল,
“তোমরা সেজেছো কেন?আমি কি কখনো তোমাদের জন্য করা অনুষ্ঠানে সাজি?সাজি না তো। তাহলে তোমরা কেন সাজবে?”

আরশিকে তার মামাতো বোন বলল,
“আমাদের সাজাটাই তো আসল।তুই সেজে কি করবি তোর বিয়ে করার মানুষ রেডি এখন আমাদের খুঁজতে হবে নিজেদের জন্য।একটু সাজুগুজু না করলে তো ছেলেরা ঘুরেও তাকাবে না।”
আরশির বান্ধবী বলল,
“একদম ঠিক বলেছো।বিয়ে বাড়ি গুলোতেই তো আরেকটা শুভ বিবাহের কাহিনী শুরু হয়।তাছাড়া আরশির দেবরটাকে দেখেছি।হেব্বি দেখতে, ছেলে নাকি ইঞ্জিনিয়ার আবার।এমন ছেলে পটাতে পারলে আমার বাপ মা হাসতে হাসতে বিয়ে দিয়ে দেবে।”

“এসব আটা ময়দা দেখে সব ছেলে ভুত ভুত বলে পালাবে।এসব দিয়ে আর যাইহোক ছেলে পাবি না তুই।”
সবাই আরশির কথায় ভেঙচি কাটলো।তানহা দৌড়ে এসে বলল,
“আপু তোমার বর চলে এসেছে।সাভাশ ভাইকে যা লাগছে না।”
আরশি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“আমার চেয়ে সুন্দর ওনাকে লাগতেই পারে না।তুই দেখ আমাকে কি লাগছে।”

আরশি হা করে আছে।এ কি দেখছে সে এই ছেলে এতো সুন্দর সেজে গুঁজে এসেছে কেন?আরশির নিজের চশমাটার প্রতি এখন রাগ হচ্ছে।এটার কারণে তার নিজের কাছেই নিজেকে অসহ্য লাগছে।তবুও আরশি নিজের ভেতরে পজিটিভ ভাইবস আনার জন্য বলল,
“আমি আজকের অনুষ্ঠানের তারা।আমার চেয়ে বেস্ট কাউকে লাগতেই পারে না।হুহ উনি যত যাই করুক আমার চেয়ে চার্মিং কোনোমতেই হতে পারবেন না।”

তীব্র মন মরা হয়ে এক কোনায় একটা চেয়ারে বসে আছে।সে নিজের পরিবারের লোকজনকে নেহার ডিসিশন সম্পর্কে জানায় নি।নেহার বাবা কখনোই মেয়ের কথার বিরোধ করবেন না তাই তীব্র এই মুহূর্তে এমন কোনো আশা রাখছে না।

আরশি সাভাশের সামনাসামনি গিয়ে হেসে বলল,
“বাহ্ এডভোকেট সাহেবকে তো আজ টম ক্রুজ লাগছে।”
সাভাশ আরশিকে দেখে মুগ্ধ।এটা কি সেই তরুণীই যাকৈ সে ভালোবেসেছে?আজ তো মেয়েটা আগের তুলনায় বেশি মোহনীয় লাগছে।সাভাশের মনে হচ্ছে এই রূপ তার জন্য বেশিক্ষণ দেখাটা কষ্টসাধ্য।গতকাল রাতের ছটফট ভাবটা এখন যেনো হাজার গুণে বেড়ে গেছে।সাভাশের হঠাৎ ইচ্ছে করলো আরশির গালটা টেনে দিয়ে বলতে,
“তুমি কি নিজের কিউটনেস দিয়ে আমাকে মারতে চাও?”
সাভাশ সবার সামনে গাল টানতে না পারলেও আরশিকে বলল,
“আজকে কি তুমি কিউটনেস দিয়ে আমাকে শেষ করতে চাও না কি?আমি বুঝি না তুমি এতো কিউট কিভাবে হও।”
সবাই সাভাশের কথা শুনে হাসতে লাগলো।আরশি কিছু বলতে যাবে তখন ওর এক বিবাহিত কাজিন আস্তে করে বলল,
“আরশি উল্টাপাল্টা কিছু বলবি না।শশুড় বাড়ির লোকজনদের সামনে যথাসম্ভব নিজের মুখটি সামলে রাখ।”

কিন্তু আরশি তো আরশি’ই সে নিজের কথা বলেই ছাড়বে।আরশি সাভাশকে বলল,
“কিউট ফিউট কিছুই না আমি তো স্মার্ট,চার্মিং।আচ্ছা আমার সম্পর্কে আপনি যেহেতু অপেনিয়ন দিলেন এখন আমিও দেবো।আপনাকে সবসময়ের মতো ক্লাস সেভেনের বাচ্চার বাবা আজকে লাগছে না।আজকে আপনাকে অত্যন্ত সুদর্শন একজন যুবক মনে হচ্ছে।”
সাভাশ এক ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“এটা অপমান ছিল না কি প্রশংসা।”
“ছিঃ ছিঃ অপমান করবো কেন প্রশংসা করেছি।এখন আমি যাচ্ছি খাবারের ঘ্রাণের টানে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছিলাম আপনাকে দেখতে না তাই খাবার খেতে যাচ্ছি,বায়।অনুষ্ঠানে আনন্দ করবেন এবং মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্ট করতে ভুলবেন না।”
আরশি লেহেঙ্গ দুই হাতে ধরে একটু উপরে উঠিয়ে দৌড় দেয়।সাভাশ আরশির কথা শুনে হেসে দেয়।

#চলবে!