কালোবউ পর্ব-২৪

0
1013

🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ ২৪

মাহিনঃ (দরজা ভাঙবো?? আগে ডেকে দেখি) মেঘ দরজা অফ করেছিস কেন??

রিয়াদঃ কী হয়েছে মাহিন?? মেঘকে ডাকছিস কেন??

মাহিনঃ ও তো কখনো দরজা অফ করে ঘুমায় না। আজ কেন অফ করেছে?? আবার কিছু করে বসবে না তো??

রিয়াদঃ আরে বোকা ধূর কী বলিস?? আমি বলেছি দরজা অফ করে দে।

মাহিনঃ ওহ্

রিয়াদঃ যা ঘুমিয়ে পর অনেক রাত হয়েছে।

মাহিনঃ হুম,,,,,,,

আকাশঃ আমার শালাবাবুটার না কোন বুদ্ধি নেই। বোন আর দুলাভাই ঘুমিয়ে আছে ডিস্টার্ব করতে চলে এসেছে। নাহ,,,, ও তো জানেই না আমি এসেছি,,,,,,,,,,,কী শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে মেঘপরীটা?? তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে। কখন সকাল হয়ে গেছে টেরই পাইনি। ফজরের আযান শুনে আস্তে করে বালিশে শুইয়ে দিলাম মেঘলাকে। ওঠে দাড়ালাম বেড থেকে। মেঘলার কপালে একটা কিস করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বেলকনির গ্লাসটা খুলে বের হলাম।

মেঘলাঃ গ্লাস খুলার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। তাড়াতাড়ি ওঠে বসলাম। উনি কোথায়,,,,,চলে গেছে?? ওঠে বেলকনিতে গেলাম তাড়াতাড়ি। গার্ডেন দিয়ে বের হচ্ছে উনি। দেয়াল টপকে একটু দূরে রাখা গাড়িতে ওঠে বসলো। বাড়ির গেটে সামনে গাড়ি এনে ফ্লায়িং কিস ইশারা করতেই আমি রুমে চলে এলাম। ফালতু লোক একটা। নামাজটা পড়ে নিলাম।

আকাশঃ (একেবারে নামাজ পড়ে বাসায় আসলাম। আজকে অনেক ভালো লাগছে। জিম করে শাওয়ার নিয়ে রেডি হলাম। তারপর ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম।) গুড মর্নিং মা,,,,,, গুড মর্নিং চাঁদ।

চাঁদঃ (মা আর আমি একে পরের দিকে তাকাচ্ছি) কী রে ভাইয়া?? তিনদিন ধরে দেবদাস লুক নিয়ে ঘুরলি। আজ এত খুশি কাহিনি কী??

আকাশঃ তুই বুঝবি না(মাথায় গাড্ডা মেরে)

চাঁদঃ তুই কী ভাবির সাথে দেখা করেছিস রাতে??

আকাশঃ (চাঁদের কথা শুনে বিষম খেয়ে গেলাম)

মাঃ পানি খা,,,,,

আকাশঃ(পানি খেয়ে নিলাম মা মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর চাঁদ ফাজিলটা গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে )

চাঁদঃ কী এমন বললাম যে বিষম খেয়ে গেলি??

মাঃ খাবার সময় এত বকবক করলে বিষমতো খাবেই। চুপচাপ খেয়ে ওঠো। আকাশ বউমার কোন খবর জানিস??

আকাশঃ ভালো আছে। (খাওয়া শেষ করে অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠে বসতেই পাশে তাকাতেই দেখি চাঁদ) কী হলো তুই ওঠেছিস কেন??

চাঁদঃ কলেজ যাবো তাই।(সিট বেল লাগাতে লাগাতে)

আকাশঃ যাবি ভালো কথা আমার গাড়িতে ওঠেছিস কেন?? ড্রাইভার নেই??

চাঁদঃ আছে কিন্তু আজ তুই আমাকে নামিয়ে দিবি।

আকাশঃ চাঁদ,,,,

চাঁদঃ কথা বাড়ালে তোরই লেট হবে।

আকাশঃ ধুর,,,,,,(গাড়ি স্টার্ট দিলাম)

চাঁদঃ ভাবির সাথে তোর দেখা হয়েছে??

আকাশঃ হুম,,,,,,

চাঁদঃ কবে,,, কীভাবে???

আকাশঃ গতকাল রাতে দেখা করে এসেছি।

চাঁদঃ বাড়ির মানুষ কিছু বলেনি?? মাহিন ভাইয়া কিছু বলেনি??

আকাশঃ লুকিয়ে গিয়েছিলাম,,,,,,,

চাঁদঃ (হা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ তারপর জোরে হেঁসে ওঠলাম) হা হা হা হা আকাশ চৌধুরী কিনা শেষে চোরের মতো করে বউয়ের সাথে দেখা করলো।

আকাশঃ চাঁদ,,,,,,,,

চাঁদঃ ওকে(হাসি থামানোর চেষ্টা করে) বলেছিলাম ভাইয়া এমন কিছু করিস না যার জন্য পস্তাতে হয়।

আকাশঃ,,,,,,,,,,,,,, এসে পরেছি নাম।

চাঁদঃ আল্লাহ হাফেজ

আকাশঃ আল্লাহ হাফেজ (চাঁদকে নামিয়ে দিয়ে মেঘলায় ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামালাম। এসেছে কিনা বুঝতে পারছি না।)

মেঘলাঃ ( ব্রেকফাস্ট করে রিয়াদ ভাইয়ার সাথে ভার্সিটির দিকে রওনা দিলাম।) ভাইয়া তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই।

রিয়াদঃ নাহ্ (মুচকি হেসে)

মেঘলাঃ হায় আল্লাহ আমার এত সুন্দর, হান্ডসাম ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড নেই??

রিয়াদঃ পড়াশোনার বাইরে কখনো কিছু ভাবার সময়ই পাইনি। একজনকে ভালো লেগেছিলো কিন্তু সে আমার হয়নি।

মেঘলাঃ কে সে??

রিয়াদঃ অতীত না ভাবাই ভালো। সে এখন অন্যকারো স্ত্রী।( আমি চাই ও ভালো থাকুক। সুখে থাকুক নিজের ভালোবাসা নিয়ে৷ কিন্তু ওর ভালোবাসা যে তোর জীবনটা এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। তাও বলবো রুপ তুমি ভালো থাকো। হ্যা রুপ,,, ভালোবেসেছিলাম ওকে। যেদিন ওকে মনের কথা জানিয়েছিলাম ও বলেছিলো আমাকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখে। আমিও আর কোনদিন ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়ায়নি ওর সামনে। ও ভালো থাকলেই আমি খুশি। তবে এবার সময় হয়েছে নিজের জীবন গুছিয়ে নেওয়ার)

মেঘলাঃ আচ্ছা সরি,,,,,,

রিয়াদঃ আরে মিষ্টি বোন আমার,,, সরি বলতে হবে না,,, চলে এসেছি নাম।

মেঘলাঃ ওহ্ খেয়ালই করিনি,,,, আমি আসছি।

রিয়াদঃ হুম নাম( আমিও নেমে দাঁড়ালাম)

মেঘলাঃ ঠিক আছে আমি আসছি ভাইয়া,,,,

আকাশঃ এতক্ষণ পর মহারানীর আসার সময় হয়েছে। এই রিয়াদকে নিয়ে ঘুরতে হবে??

লিজাঃ এই মেঘলা,,,,,, কেমন আছিস??(জড়িয়ে ধরে)

মেঘলাঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,,,, তুই কী হারামি রে একদিন দেখে এসে আর এলি না দেখা করতে।

লিজাঃ বাড়ি থেকে বাবা বের হতে দিতে চায় না। একদিন তাও নিজে নিয়ে গিয়েছিলো দেখেছিস তো। শুধু ভার্সিটি টাইমটা আমি পাই।

মেঘলাঃ ওকে যা মাফ করে দিলাম। ওহ্ মিট করিয়ে দেই,,,,,,ভাইয়া আমার ফ্রেন্ড লিজা (রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে) আর লিজা উনি আমার খালাতো ভাই রিয়াদ।

লিজাঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।(মিষ্টি হেঁসে)

রিয়াদঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। (রুপের পর এই প্রথম কোন মেয়েকে ভালো লাগলো। হাসিটা কী সুন্দর?? রুপ আমার ছিলো না তাই আমার হয়নি। কিন্তু তোমাকে আমার হতে হবে।)

লিজাঃ (এভাবে তাকিয়ে আছে কেন??)

মেঘলাঃ ভাইয়া আমরা তাহলে আসি।

রিয়াদঃ হুম ওকে আমি আসছি,, আল্লাহ হাফেজ।

আকাশঃ এভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন?? আমার মেঘপরীর দিকে হাত বাড়ালে হাত ভেঙে গুড়িয়ে দেবো(রাগে মুখ লাল করে)

(লিজা আর মেঘলা পাশাপাশি দাড়িয়ে ছিলো তাই আকাশ দূর থেকে বুঝতে পারেনি রিয়াদ মেঘলার দিকে না লিজার দিকে তাকিয়ে ছিলো। না বুঝেই রাগে ফুঁসছে। আকাশ রাগে লাল হয়ে অফিসে চলে গেলো। লিজা আর মেঘলা ক্লাসে চলে গেছে আর রিয়াদ হাসপাতালে )

লিজাঃ তোর ভাইয়া ওভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন??

মেঘলাঃ কীভাবে (বোকার মতো লিজার দিকে তাকিয়ে)

লিজাঃ কেমন হাবলার মতো।

মেঘলাঃ তুই আমার এমন হান্ডসাম ভাইয়াকে হাবলা বললি।

লিজাঃ হাবলার মতো তাকালে হাবলা বলবো না কী বলবো??

মেঘলাঃ সত্যি তাকিয়ে ছিলো??

লিজাঃ তাহলে কী আমি মিথ্যা বলছি??

মেঘলাঃ তাহলে তো ভালো,,,, বেস্টু থেকে ভাবি হয়ে যাবি হি হি হি।

লিজাঃ (আবার কারো মায়ায় জড়াবো না রে। যাকে মনে মনে ভালো বাসলাম সে আমার সামনেই আমার বেস্টুকে প্রপোজ করলো। সেদিনই ভেবে নিয়েছি বাবা-মার পছন্দে লক্ষী মেয়ের মতো বিয়ে করে নিবো। সেদিন আরো কষ্ট পেয়েছিলাম যখন জানলাম বন্ধুত্বটাও অভিনয় ছিলো। সত্যি সজীব তুমি অনেক বড় অভিনেতা। কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না তুমি)

মেঘলাঃ কোথায় হারালি??

লিজাঃ কিছু না,,, তোর ভাবি হবার চান্স নেই রে। এই মাসের ২০ তারিখ নাকি ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। ছেলে নাকি ইন্জিনিয়ার।

মেঘলাঃ ওয়াও গ্রেট,,, ১৫ দিন বাকি আছে,,,, ইচ্ছে মতো এনজয় করবো ওকে??

লিজাঃ ওকে,,, (মুখটা মলিন করে)

মেঘলাঃ মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন??

লিজাঃ কিছু না,,, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে চল।

মেঘলাঃ হুম চল,,,,,,

সজীবঃ হেই মেঘলা কী খবর তোর?? মরতে গিয়েছিলি কেন রে ??(টিস করে)

মেঘলাঃ ক্লাসে লেট হচ্ছে চল লিজা।(লিজা আর আমি পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম ক্লাসের দিকে।)

সজীবঃ হাসবেন্ড রেখে চলে এসেছিস আবার যেন ফুড়ুৎ হয়ে না যায়।

মেঘলাঃ,,,,,,

লিজাঃ(ছি এই জানোয়ার কে আমি ভালোবেসেছিলাম??)

,,,,,,

রুপঃ কোনরকমে ওঠে গোসল করে বেলকনিতে গিয়ে বসলাম। রবিন সকালে ওঠে অফিস চলে গেছে।

সার্ভেন্টঃ ম্যাম আসবো??

রুপঃ হুম আসো,,,,

সার্ভেন্টঃ আপনার ব্রেকফাস্ট,,,,,,,,

রুপঃ টেবিলে রাখো আমি আসছি,,,,(রুমে যাওয়ার জন্য ওঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে ওঠলো সব ঝাপসা হয়ে এলো)

,,,,,,,

মেঘলাঃ (ভার্সিটি শেষে বাসায় যাওয়ার জন্য গেট থেকে বের হতেই দেখি রিয়াদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে) ভাইয়া তুমি??

রিয়াদঃ হুম চল তোদের নিয়ে ঘুরতে যাবো।

লিজাঃ আমি কোথাও যাবো না বাবা রাগ করবে।

মেঘলাঃ আমি বলে দিবো তুই আমার সাথে আছিস তাহলে কিছু বলবে না চল।

লিজাঃ কিন্তু,,,,

মেঘলাঃ চলতো,,,,,

আকাশঃ ভেবেছিলাম যাওয়ার সময় একা পাবো কিন্তু এখনও এই রিয়াদ আমার আগে এসে হাজির হয়ে গেছে। একেতো আমি খুনই করে দিবো।(ওরা গাড়িতে ওঠে চলে গেলে আমিও ওদের পিছু নিলাম।)

মেঘলাঃ (সারাদিন খাওয়াদাওয়া ঘুরাঘুরি অনেক মজা হয়েছে। সন্ধ্যার সময় ভাইয়া আমাকে গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে লিজাকে ড্রপ করতে গেছে)

আকাশঃ (মেঘলা গেটের ভেতরে যাওয়ার আগেই হাত টেনে আড়ালে নিয়ে এলাম)

মেঘলাঃ (হঠাৎ এমন করায় ভয় পেয়ে চিৎকার করার আগেই মুখ চেপে ধরেছে। একটু পর বুঝতে পরলাম এটা আকাশ)

আকাশঃ এত কিসের ঘুরাঘুরি ঐ রিয়াদের সাথে? খুবতো হাসছিলে রিয়াদের কথা শুনে। কী এমন বলছিলো যে হাসি থামছিলোই না??

মেঘলাঃ উমমমমমম

আকাশঃ কী উম উম করছো?? আমার সামনেতো কোনদিন হাঁসতে দেখলাম না।

মেঘলাঃ উম মমম

আকাশঃ আবার উমমম কথা বলতে পারো না এখন,,,,,,,ও সরি (হাত সরিয়ে নিলাম)

মেঘলাঃ এটা কোন ধরনের অসভ্যতা??

আকাশঃ কী অসভ্যতা করলাম??

মেঘলাঃ দূরে গিয়ে দাড়ান।

আকাশঃ দূরে দাড়াবো কেন?? (আরো কাছে ঘেসে দাড়িয়ে) এত কী কথা রিয়াদের সাথে??

মেঘলাঃ রিয়াদ আমার ভাইয়া হয়??

আকাশঃ মাহিন ছাড়া আর কারো সাথে যেন ঘুরাঘুরি করতে না দেখি।

মেঘলাঃ আমার যার সাথে ইচ্ছে ঘুরাঘুরি করবো, যার সাথে ইচ্ছে কথা বলবো। আপনি বলার কে??

আকাশঃ আমি তোমার কে তুমি জানো না??

মেঘলাঃ না জানি না কে আপনি??

আকাশঃ আমি তোমার হাসবেন্ড।

মেঘলাঃ হা হা হা হাসবেন্ড,,,?? কথায় কথায় যখন অপমান করতেন তখন মনে ছিলো না আপনি আমার হাসবেন্ড?? ফাংশনের রাতে যখন সবাই আমাকে অপমান করছিলো তখন মনে হয়নি আপনি আমার হাসবেন্ড,,,,, আপনার প্রতিবাদ করা উচিত। দিনের পর দিন আমাকে মানসিক ভাবে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন তখন মনে হয়নি আপনি আমার হাসবেন্ড? তখন মনে হয়নি আপনি আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন? এখন আমার মুখে হাসি আপনার সয্য হচ্ছে না। তখন যেহেতু মনে হয়নি আপনি আমার হাসবেন্ড এখনও সেটা মনে করার চেষ্টা করবেন না। (উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে আসতে লাগলাম)

আকাশঃ (ওর কথাগুলো বিষাক্ত তীরের মত বুকে এসে বিঁধেছে। আজ বুঝতে পারছি আমার কথাগুলো ওকে কতটা কষ্ট দিয়েছে। হাটু গেঁড়ে বসে পড়লাম রাস্তায়)

মেঘলাঃ আর হ্যা সময় মতো ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবেন।(কথাটা বলে দ্রুত গেটের ভেতরে চলে গেলাম)

আকাশঃ রাস্তায় বসে পড়লাম। তবে কী সত্যি হারিয়ে ফেলেছি আমার মেঘপরীকে??

চলবে,,,,,,,,,,,