কালোবউ পর্ব-২৫

0
1027

#🖤কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ২৫

রিয়াদঃ কোনদিকে যাবো এখন??

লিজাঃ মানে??

রিয়াদঃ আমি কী আপনার বাসা চিনি??

লিজাঃ ওহ্ মনে ছিলো না। সোজা গিয়ে বামে যান।

রিয়াদঃ(এই মেয়ে এতো চুপচাপ কেন?? কথা বলতে পারে না। আমি কিছু বলবো?? কিন্তু কী বলবো??) ইয়ে মানে একটা কথা ছিলো।

লিজাঃ জি বলুন ভাইয়া।

রিয়াদঃ আমি তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি(চোখ কটমট করে)।

লিজাঃ মেঘলার যেহেতু ভাইয়া হন সেহেতু আমারও ভাইয়া।

রিয়াদঃ সবাই ভাইয়া ডাকুক সমস্যা নেই তুমি ডাকবে না।

লিজাঃ গাড়ি থামান এটাই আমাদের বাড়ি।

রিয়াদঃ (গাড়ি থামাতেই নেমে গেল লিজা) লিজা শুনো,,,

লিজাঃ কিছু বলবেন??

রিয়াদঃ টেক কেয়ার,,,, গুড নাইট।

লিজাঃ গুড নাইট।

রিয়াদঃ(লিজা চলে গেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম ওর যাওয়ার পথে তারপর চলে এলাম।)

চাঁদঃ ডোরবেল বাজছে কেউ শুনতে পায় না নাকি??( দরজা খোলে আমি অবাক) ভাইয়া,,,,,,,,, তুই ড্রিংক করেছিল,,,,,,

আকাশঃ হু,,হুম ক,,করছি এখন থেকে রোজ করবো।

চাঁদঃ (আমি বিশ্বাস করতে পারছি না ভাইয়া এভাবে ড্রিংক করে মাতাল হয়ে বাসায় আসছে। এক হাতে এখনো মদের বোতল। ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছে না। ভাইয়া ড্রিংক করলেও কখনোই এমনভাবে বাসায় আসেনি। যতটা করলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে ততটাই করেছে। আজ কী হয়েছে ওর??) ভাইয়া কী হয়েছে তোর?? এতো ড্রিংক করেছিস কেন??

আকাশঃ চাঁদ,,,, বোন আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার মেঘপরীকে(বাচ্চাদের মতো কান্না করে) ও আর আসবে না আমার কাছে। ওকে ছাড়া এই বাড়িতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। এনে দে না ওকে,,,,

চাঁদঃ (পরে যেতে নিলে ধরে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসিয়ে দিলাম। এটা কী সত্যি আমার ভাইয়া?? রুপ আপু চলে যাবার পর একটা দিন মন খারাপ করতেও দেখিনি। শুধু প্রতিশোধের আগুনে জ্বালতে দেখেছি। যে ভাইয়া কোনদিন মেয়েদের জন্য জীবনের দুটো মিনিট ব্যয় করতে রাজি না। সে আজকে একটা মেয়ের জন্য মাতাল হয়ে বাসায় চলে এসেছে। ভাগ্য ভালো মা আজকে একটু অসুস্থ তাই আগে ঘুমিয়ে গেছে। ভাইয়াকে এভাবে দেখলে কত কষ্ট পেতো। লেবু পানি এনে জোর করে খাইয়ে দিতেই বমি করতে চাইলে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতেই বমি করে দিলো। বমি শেষ হলে ধরে আবার ড্রয়িংরুমের সোফায় বসালাম) কেটেছে নেশা??

আকাশঃ হুম,,,,,,,, মাথা ভারী লাগছে।

চাঁদঃ এখন বল কী হয়েছে??

আকাশঃ কিছু না,,,,,,,

চাঁদঃ আমাকেও বলা যায় না??

আকাশঃ (তাকালাম চাঁদের দিকে। চাঁদ আমাকে ভয় পেলেও ছোট থেকে সব শেয়ার করতো। আমিও সব শেয়ার করতাম ওর সাথে। বেস্টফ্রেন্ডের মতো থাকতাম। লন্ডন থেকে ফেরার পর একটু দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে।) আমি আমার মেঘপরীকে হারিয়ে ফেলেছি রে বোন(চাঁদের কোলে বাচ্চাদের মতো শুয়ে)

চাঁদঃ মানে???

আকাশঃ (সব খোলে বললাম চাঁদকে)

চাঁদঃ এত সহজে হার মেনে গেলি ভাইয়া?? এতগুলো দিন ভাবী প্রতিটা মুহূর্ত তোর অপমান মুখ বোজে সয্য করেছে। আর ভাবির বলা কিছু কঠিন কথা শুনে তুই হার মেনে গেলি। অন্তত ততোগুলো দিন চেষ্টা কর যতগুলো দিন ভাবি তোর আঘাত সয্য করেছে।

আকাশঃ (চাঁদ ভুল কিছুতো বলেনি। আমি একদিনে হার মেনে গেলাম। এত সহজে ?? এবার আমিও দেখি মেঘপরী কতবার ফিরিয়ে দিতে পারো আমাকে।)

চাঁদঃ কী ভাবছিস ভাইয়া??

আকাশঃ কিছু না,,, অনেক রাত হয়েছে ,,,, যা ঘুমিয়ে পড় ??

চাঁদঃ ওকে,,,,,,

আকাশঃ(ধীরে ধীরে রুমের দিকে গেলাম। কাল থেকে শুরু হবে নতুন খেলা)

মেঘলাঃ (ভালোবাসি আপনাকে অনেক বেশি। কিন্তু আপনার করা অপমানগুলো এখনো কষ্ট দেয়। মাফ করতে পারছি না আপনাকে। কী করবো বলেন?? আপনার মুখটা না দেখে ঘুমাতে পানি না। না আপনাকে কাছে টেনে নিতে পারছি আর না ছেড়ে যেতে পারছি। কী করবো বলেন না?? কী করবো আমি?? আপনাকে কথাগুলো বলে আপনার থেকে আমি বেশি কষ্ট পেয়েছি। মনে হয়েছে বিষাক্ত তীর দিয়ে হৃদয়ে আঘাত করেছি। আকশের ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। প্রতিটা ছবি লুকিয়ে তোলা। বিয়ের ছবি ছাড়া। এই ছবিগুলো এখন আমার একাকিত্বের সঙ্গী। আমিও চাই আপনার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে। কিন্তু আপনাকে দেখলে আপনার করা অপমানগুলো চোখের সামনে ভাসে। জানি না কবে পারবো সেই কালো দিনগুলো ভুলতে।)

রুপঃ (হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। চোখ খোলে দেখি হাসপাতালে। সকালে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার পর নাকি হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। একটু জ্ঞান ফিরেছিলো আবার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলো। এখন ঘুম ভাঙলো। সবার মতো সৌভাগ্য না আমার। হাত ধরে পাশে বসে নেই কেউ। একটা নার্স দেখে ডাক দিলাম) ন,,নার্স,,,,,

নার্সঃ ইয়েস ম্যাম,,,,, এখন কেমন লাগছে??

রুপঃ হুম ভালো,,,,, কী হয়েছে আমার??

নার্সঃ গুড নিউজ,,,, মা হতে চলেছেন আপনি (মিষ্টি হেসে)

রুপঃ ম,,,,,,মা (আনন্দে কথা বলতে ভুলে গেছি। হাতটা আপনাআপনি নিজের পেটে চলে গেলো। সত্যি তুই এসেছিস বাবু। মা বলে ডাকবি আমাকে?? মা,,,,,,,,, চোখ বুজতেই চোখের কোন থেকে পানি গড়িয়ে গেলো। না না এ কষ্টের পানি না৷ জীবনের সবচেয়ে আনন্দের পানি এটা। আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী) নার্স,,,, এটা সত্যি??

নার্সঃ হুম সত্যি,,,,, কিন্তু আপনার শরীর অনেক দূর্বল। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন। কীসের এগুলো??

রুপঃ (কী উত্তর দিবো এই প্রশ্নের?? এর উত্তর যে কাউকে দিতে পারবো না। চুপ দেখে নার্স আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।)

নার্সঃ আপনাকে সাতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এরপর রিলিজ করে দিবে কিন্তু সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে। আর ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে হবে।

রুপঃ আমার সাথে কে এসেছে??

নার্সঃ আপনার শাশুড়ী,,,, উনিতো অনেক খুশি। ওয়েট আমি ডেকে দিচ্ছি আমি।

রুপঃ(বাবু আমার মতো তোকেও কী তোর বাবা অবহেলা করবে?? তোকেও যদি অবহেলা করে তোকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। তোকে কারো অবহেলার পাত্র হতে দিবো না আমি।)

রেহেনা বেগম(রুপের শাশুড়ী) এখন কেমন লাগছে বৌমা??

রুপঃ জী মা ভালো।(এই বাড়িতে একমাত্র মা আমাকে ভালোবাসে। নিজের মেয়ে নেই বলে নিজের মেয়ের জায়গা দিয়েছে। ইরাকে উনার পছন্দ না। ইরাকে রবিনের বাবা পছন্দ করেছিলো রবিনের জন্য। তাই রবিনের বাবা আমাকে দেখতে পারেন না।) মা রবিন জানে??

মাঃ হ্যা মা জানে। সে কী খুশি? কিন্তু হয়েছে কী কাজের চাপে আসতে পারছে না।

রুপঃ (একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো বুক চিরে) থাক না মা মিথ্যে কেন বলছেন?? এত রাতে তার কী কাজ আপনিও জানেন আর আমিও।(আমার কথা শুনে মা মাথা নিচু করে ফেলেছে)

মাঃ বৌমা এখন কিছু খেয়ে একটু ঘুমাও।

রুপঃ না মা ইচ্ছে করছে না।

মাঃ নিজের জন্য না যে আসছে তার জন্য।

রুপঃ (তোকে কারো অবহেলা সয্য করতে দেবো না আমি। যে তোকে ভালোবাসে না তার ছায়াও তোর ওপর পড়তে দেবো না আমি। আজ থেকে তোর জন্য নিজের যত্ন নেবো।) ঠিক আছে মা দিন খেয়ে নিচ্ছি।(মা নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন। তারপর চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। চোখটা বেহায়া,,, জানি সে আসবে না তবু বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছি। আমার জন্য না এলেও নিজের সন্তানের জন্য হয়তো আসবে এটা ভেবে।)

মেঘলাঃ (আযান শুনে ঘুম ভাঙলো। নামাজ পড়ে নিয়ে একটু কোরআন তিলাওয়াত করলাম। তারপর এক কাপ কফি নিয়ে বেলকনিতে গেলাম। আমার কী এখনো ঘুম ভাঙেনি?? রাস্তায় আকাশ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে। এদিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ কচলে আবার তাকালাম। না ঠিকই তো দেখছি। আবার গরম কফির কাপে আঙ্গুল ডুবিয়ে দিলাম। ওহ্ ছেঁকা লাগছে,,, তার মানে উনি সত্যি এখানে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু উনি এতো সকালে এখানে কী করছে??)

আকাশঃ (নামাজ পরে সোজা খান ভিলার সামনে দাড়িয়ে আছি। রাস্তা থেকে মেঘলার বেলকনি দেখা যায়। একটু পরই মেঘলা হাতে এক কাপ কফি নিয়ে বেলকনিতে এলো। ওড়না দিয়ে হিজাব বাঁধা দেখতে পবিত্র ফুলের মতো লাগছে। পাগলির কান্ড দেখে হাসি পাচ্ছে। চোখ কচলাচ্ছে, আঙ্গুল কফির কাপে ডুবাচ্ছে। হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না এটা সত্যি আমি। হাই দিলাম তারপর একটা ফ্লায়িং কিস)

মেঘলাঃ রুমে গিয়ে ফোন আনলাম,,,,,,,,,,,,,,,,, আপনি এখানে কী করছেন??

আকাশঃ আমার মেঘপরীকে দেখতে এসেছি।

মেঘলাঃ আপনার মাথা কী পুরো খারাপ হয়ে গেছে??

আকাশঃ তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তোমার ভার্সিটিতে নবীণ বরণ ছিলো। কালো শাড়ি, খেপায় বেলি ফুলের মালা, হালকা সাজে অপরূপা। ভালো লেগেছিলো কিন্তু গুরুত্ব দেইনি।

মেঘলাঃ মানে,,,,,,,,,? আপনি আমাকে আগে থেকে চিনতেন??

আকাশঃ হুম,,,, বিয়ের ১ বছর আগে থেকে।

মেঘলাঃ আমিতো আপনাকে আগে কখনো দেখিনি।

আকাশঃ তোমার সামনে আসিনি তাই দেখোনি। প্রথম দেখে ভালো লেগেছিলো কিন্তু সেটা গুরুত্ব পায়নি কারণ তখন প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বিয়ের পরদিন তুমি কালো শাড়ি পরেছিলে তখন মানা করেছিলাম আর কালো শাড়িতে যেন না দেখি। কারণ তোমাকে কালো শাড়িতে দেখলে চোখ ফেরাতে পারি না।

মেঘলাঃ (এটা কী আকাশ?? নাকি অন্যকেউ?? গম্ভীর, রাগী, বদমেজাজি মানুষ এমন হলো কীভাবে?? বিশ্বাস করতে পারছি না। উনি এতো আগে থেকে নোটিশ করেছে আমাকে।)

আকাশঃ আজ দেখো তুমি কালো ড্রেসই পরেছো। আমার প্রিয় ফুল সয্য ফোটা কালো গোলাপের মতো স্নিগ্ধ আর পবিত্র লাগছে তোামকে। এই রুপটা দেখার জন্য ছোটে এসেছি এই সকালে।

মেঘলাঃ (নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি কালো ড্রেস পরেছি। উনার কথাগুলো ঠিক হজম হচ্ছে না। উনার এই রুপ ভাবতে পারছি না।)

আকাশঃ কী হলো কথা বলছো না কেন??

মেঘলাঃ (ফোন কেটে রুমে চলে এলাম। উনি কী পাগল হয়ে গেছে?? আমার মাথা কাজ করছে না)

আকাশঃ (ফোনটা কান থেকে সরিয়ে তাকিয়ে রইলাম মেঘপরীর রুমের দিকে। এটুকুতেই অবাক হয়ে গেলে। আরো অনেক কিছু যে এখনো দেখার বাকি আছে। বাসায় চলে এলাম। জিম, শাওয়ার শেষ করে ব্রেকফাস্ট করতে এলাম) গুড মর্নিং,,,,,

মা+চাঁদঃ গুড মর্নিং।

মাঃ বৌমার কী খবর?? কবে আসবে রে?? এখনো রাগ ভাঙাতে পারিসনি?? বাড়িটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।

আকাশঃ তাড়াতাড়ি চলে আসবে(মুচকি হেসে)

চাঁদঃ (কাহিনিটা কী হলো?? গতকাল রাতে আসবে না বলে এতো কাহিনি করলো। ড্রিংক করে মাতাল হয়ে এলো। এখন আবার বলছে তাড়াতাড়ি চলে আসবে।)

আকাশঃ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??

চাঁদঃ কিছু না,,,,

আকাশঃ তাহলে চুপচাপ খাওয়া শেষ কর,,

চাঁদঃ হুম,,,

মেঘলাঃ (ব্রেকফাস্ট করে রিয়াদ ভাইয়ার সাথে ভার্সিটির দিকে রওনা দিলাম)
,,,,,,

আকাশঃ আজকে আবার আমার গাড়িতে কেন??

চাঁদঃ কাহিনি কী?? সেটা জানার জন্য।

আকাশঃ কোন কাহিনি নেই।

চাঁদঃ আমি হেল্প করলাম এখন আমাকেই বলবি না।

আকাশঃ তুই কী হেল্প করলি??(চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে)

চাঁদঃ যা না বললি।

আকাশঃ পাগলি একটা ( সকালের কথা সব বললাম চাঁদকে)

চাঁদঃ ওয়াও গ্রেট,,,, লেগে থাক কাজ হয়ে যাবে।

আকাশঃ(ওর কথা শুনে শুধু মুচকি হাসি দিলাম) এসে গেছি নাম,,,

চাঁদঃ আল্লাহ হাফেজ,,,,,

আকাশঃ(চাঁদকে নামিয়ে মেঘপরীর ভার্সিটির দিকে গেলাম)

ক্রিং ক্রিং ক্রিং

মেঘলাঃ আন নোন নাম্বার,,,, এটা আবার কে???

চলবে,,,,,,,,,,