কালোবউ পর্ব-৪+৫

0
1213

🖤 #কালোবউ 🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
মেঘ কন্যা তিলোত্তমা (ছদ্মনাম)
পর্বঃ৪

(রুমে গিয়ে আকাশ থমকে গেলো মেঘলাকে দেখে)

আকাশঃ (চোখ সরছে না মেঘলার থেকে। হুমায়ুন আহমেদ স্যার যথার্থ বলেছিলেন,
“মেয়েরা যদি জানতো গোসল করার পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থায় তাদের কত সুন্দর লাগে। তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেতো।””
অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেঘলাকে। ছোট ভেজা চুলগুলো গালে লেগে আছে আর সারা মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। ভেজা গলায় একটা কালো তিল যেন আমাকে টানছে। খুব ইচ্ছে করছে গভীর একটা,,,,একটা??? না না একটা না মন ভরে কিস করতে। কালো রঙের জামদানীতে সদ্য ফোঁটা কালো গোলাপ মনে হচ্ছে😍😍😍😍। (আকাশ এক পা এগোতে গিয়ে) না না এসব আমি কী ভাবছি 😠😠😠?? এই মেয়ের জন্য আজ চাঁদের কাছে কথা শুনতে হলো। এই মেয়েকে আমি ছাড়বো না। আর জ্বর নিয়ে গোসল কেন করেছে??😡😡😡)

ঠাসসসস,,,,

মেঘলাঃ( গোসল করে অনেকটা ফ্রেস লাছিলো। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে শাড়ী ঠিক করার চেষ্টা করছিলাম। আসলে আমি শাড়ী পরতে পারি না। কিন্তু বিয়ের পরের দিনই থ্রি-পিস পড়া ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। হঠাৎ কোথা থেকে এসে উনি গালে থাপ্পর মেরে বসলেন। মনে হচ্ছে কেউ পাথর মেরেছে গালে, দাঁত খুলে যাবে। গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম)

আকাশঃ জ্বর নিয়ে গোসল করতে কে বলেছে😡😡😡?? আমাকে কী তোমার কাজের লোক মনে হয়?? তুমি অসুস্থ হবে আর আমি তোমার সেবা করবো??? নাকি তোমার বাবা-মা তোমার জন্য সাথে কাজের লোক পাঠিয়েছে। আর নেক্সট টাইম যেন কালো শাড়ীতে না দেখি।😡😡😡😡😡(গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম বাড়ি থেকে। একটু রিলাক্স দরকার)

মেঘলাঃ(কথাগুলো বলে কিসের যেন চাবি নিয়ে হনহনিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আচ্ছা আমার অপরাধটা কোথায়?? কী করেছি আমি?? যার জন্য এসব আমার সাথে হচ্ছে। আমি কী ইচ্ছে করে কালো হয়েছি 😭😭😭 নাকি ইচ্ছে করে অসুস্থ হয়েছি? যার কাছে দুটো ভালো কথা শুনতে পাই না, তার কাছে আমি সেবা আশা করবো (একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)। আর আমি যেই শাড়ী পড়ি উনার প্রবলেম কী? কালো রং আমার বারাবরই প্রিয় কিন্তু গায়ের রং কালো বলে কখনো পড়া হয়নি। ভেবেছিলাম কখনো পড়া হবেও না। কারণ বিয়ের পর স্বামীর পছন্দে চলতে হবে। এখন যেহেতু দেখলাম আমার প্রতি তার কোনো ইন্টারেস্ট নাই তাই নিজের পছন্দের শাড়ীটাই পড়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলো কই। শাড়ী চেঞ্জ করে গোলাপি রঙের একটা থ্রি-পিস পড়ে নিলাম।

,,,,, ম্যাডাম আসবো??

মেঘলাঃ হ্যাঁ আসুন।

,,,,আমার নাম টিয়া। এই বাসায় কাজ করি। বড় ম্যাডাম আপনার খাবার আর ঔষধ পাঠাইছে।

মেঘলাঃ টিয়া আপু আপনি খাবারটা ঐ টেবিলে রাখুন। আর আমাকে ম্যাডাম বলতে হবে না। আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট। মেঘলা বলেই ডাকবেন কেমন😊😊😊??

টিয়াঃ আপনি অনেক ভালো বউমনি। আমি আপনাকে বউমনি বলেই ডাকবো😊😊😊।

মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলেন।

টিয়াঃ আপনাকে অনেক মিষ্টি লাগছে বউমনি😍😍😍।

মেঘলাঃ আমাকে,,, আর মিষ্টি??? ( একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

টিয়াঃ গায়ের রঙে সব সময় সৌন্দর্য প্রকাশ পায় না বউমনি। আপনি যে কতটা মিষ্টি দেখতে যে ভালো করে তাকাবে সেই বুঝতে পারবে। আর মানুষের আসল সৌন্দর্য চেহারা দেখে না মন দেখে বুঝা যায়।

মেঘলাঃ বাহ্ টিয়া আপু। আপনি তো খুব সুন্দর কথা বলতে পারেন। যাক এই বাড়িতে কাউকে অন্তত পাওয়া গেল কথা বলার। 😊😊😊

টিয়াঃ কিন্তু বউমনি আপনার গালে দাগ কিসের??

মেঘলাঃ ক,,,কই কিছু না। আসলে আমার মেকআপ সয্য হয় না। তাই এলার্জি হয়ে গেছে।

টিয়াঃ ( হায়রে বাঙালি নারী। একরাত হয়েছে বিয়ের এখনি স্বামীর সম্মান বাঁচাত মিথ্যা বলছে। আমি জানি বউমনি ছোট সাহেব আপনাকে থাপ্পড় মেরেছে। ছোট সাহেব কেন এমন করছে??)

মেঘলাঃ এই বাড়িতে আর কেউ নেই??

টিয়াঃ আছে আপনার শাশুড়ী আর ননদ।

মেঘলাঃ ওহ্ ,,,,,,, আর আপু এই আপনি আপনি করেন না তো।

টিয়াঃ নিজে করে আর আমাকে না করছেন 😊😊😊

মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও তুমি করে বলবো।

টিয়াঃ আচ্ছা বউমনি তাহলে তুমি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নাও আমি যাই আমার কাজ আছে।

মেঘলাঃ আচ্ছা 😊😊😊( টিয়া আপু চলে যেতেই আমি খাবার খেতে লাগলাম। আপুটা অনেক ভালো। কত সুন্দর করে কথা বলে। মনেই হয়না কাজের লোক। খাওয়া শেষে ঔষধ খেয়ে নিলাম। বেডে বসতে গিয়েও বসলাম না। সোফায় শুয়ে পরলাম। ভাবতে লাগলাম কী থেকে কী হয়ে গেল। এবাড়িতে মনে হয় রিসিপশন হবে না। কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ফোন নিয়ে বেলকনিতে গেলাম। বেলকনিটাও অনেক বড় আর সুন্দর। কিছু জানা আজানা ফুল দিয়ে সাজানো। একটা দোলনা আছে সেটায় বসে পড়লাম। মাকে কল দিলাম)

মেঘলাঃ আসসালামু আলাইকুম মা। কেমন আছো🥺🥺🥺?

মরিয়ম বেগমঃ তোকে ছাড়া ভালো নেইরে মা 🥺🥺🥺। তুই কেমন আছিস??

মেঘলাঃ আমি ভালো আছি মা 🥺🥺🥺। এই বাড়ির মানুষ অনেক ভালো।

মাঃ আর জামাই বাবাজী??

মেঘলাঃ উনিও অনেক ভালো 😢😢😢। আমার অনেক খেয়াল রাখে ( তোমাকে যদি সত্যিটা বলতে পারতাম মা 😭😭😭)

মাঃ সে আমি আগেই বুঝেছিলাম 😊😊😊। ছেলেটা অনেক ভালো। তোর আব্বার দেয়া টাকাতো নিলোই না ওল্টো বিয়ের সব খরচ নিজে করতে চেয়েছে। কিন্তু তোর আব্বা করতে দেয়নি। নিজের আদরের মেয়ে বিদায় নিজের টাকায় করবে বলে দিয়েছে।

মেঘলাঃ (এসব কী বলছে মা?? উনি টাকা নেয়নি। তাহলে বিয়ে কেন করেছে??) উনি টাকা নেয়নি??

মাঃ এক টাকাও না 😊😊😊।

মেঘলাঃ আ,,আচ্ছা মা এখন রাখছি।

মাঃ তোর আব্বার সাথে কথা বলবি না??

মেঘলাঃ পরে বলবো।

মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থাকিস আর ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করবি আর সবার মন জুগিয়ে চলবি। তোর শাশুড়ি মা বলছে এখন বউভাত করবে না। কী নাকি প্রবলেম হয়েছে একটু। কিছুদিন পর করবে। ততদিন ঐ বাড়িতেই থাকতে হবে।

মেঘলাঃ আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।

মাঃ আল্লাহ হাফেজ

মেঘলাঃ (ফোন রেখে ভাবতে লাগলাম টাকা না নিলে কেন বিয়ে করেছে। এটাতো সত্যি আমি উনার যোগ্য না। উনি কত সুন্দর, আমাদের তুলনায় কত ধনী। তাহলে কেন কেন??? ভাবতে পারছি না মাথা ব্যাথা করছে)

ক্রিং ক্রিং ক্রিং

আকাশঃ হ্যালো

,,,,,,,,,,,

আকাশঃ What 😲😲😲😲?????? it’s true????

,,,,,,,,,,,,

আকাশঃ ওকে😊😊😊 বাই। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। এবার খেলা জমবে 😈😈😈 আমি আসছি রুপ, এবার সামনাসামনি খেলা হবে (শয়তানি হাসি দিয়ে)

(এই রুপ আবার কে?? মেঘলাকে আকাশ বিয়েই বা কেন করছে?? কিসের খেলার কথা বলছে আকাশ??)

চলবে,,,,,,,,,

🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ৫

আকাশঃ ওকে,, বাই। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। এবার খেলা জমবে। আমি আসছি রুপ, এবার সামনাসামনি খেলা হবে (শয়তানি হাসি দিয়ে)

মেঘলাঃ (যোহরের আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেল। বেলকনির দোলনায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আকাশের কথা ভাবতে ভাবতে। ওঠে ওয়াশরুম থেকে ওজু করে এসে নামাজ পড়তে নিলাম টিয়া আপুকে বলে জায়নামাজের ব্যবস্থা করে । ফজরের নামাজের কাযা আদায় করে নিলাম। নামাজ শেষ করে মোনাজাত তোললাম আল্লাহর দরবারে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে যেমন সৃষ্টি করেছ তাতেই আমি খুশী। অনেক মানুষ আছে চোখে দেখতে পায় না, হাটতে পারে না, কথা বলতে পারে না, কানে শুনতে পায় না, সেখানে আমি একটা সুস্থ জীবনযাপন করছি। তোমার দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া। আমি যেমন আছি তেমনি থাকতে চাই সারাজীবন, পরিবর্তন হতে চাই না। শুধু মানুষের কথা সয্য করার ধৈর্য্য দান করো খোদা। আমার বাবা-মা, স্বামী, ভাই, শাশুড়ী, ননদ, আত্মীয়স্বজন সবাইকে সুস্থ রাখুন, হেদায়েত ও নেক হায়াত দান করুন। যারা মারা গেছেন তাদের মাফ করে বেহেশত নছিব করুন। আমার স্বামীর মনে একটু জায়গা করার তৌফিক দান করুন দয়ার সাগর । হে পরম করুণাময় আমি বিশ্বাস করি আপনি যা করেন বান্দার ভালোর জন্য করেন। “আমিন”)

আকাশঃ (রুমে এসে দেখি মেঘলা জায়নামাজে বসে মোনাজাতে কিছু বিরবির করছে আর নাক টানছে, গালে পানির স্রোত। কী পবিত্র লাগছে দেখতে। আচ্ছা ও কী আমার নামে অভিযোগ প্রকাশ করছে আল্লাহর কাছে ?? আচ্ছা কেন বারবার এই কালো মেয়েটাকে দেখেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি?? আমিতো হুর-পরীর মতো সুন্দরী রুপকে ভালো বেসেছিলাম। আচ্ছা আমি কী রুপকে সত্যি ভালো বেসেছিলাম?? নাকি ওর সৌন্দর্যের মোহে পড়েছিলাম?? না না আমি ওকে ভালো বেসেছিলাম। কিন্তু ও ছেড়ে যাবার পরতো আমি কখনো তীব্র কষ্ট অনুভব করিনি বুকের বা-পাশে। শুধু প্রচন্ড রাগ আর জেদ চেপেছে মনে। সেটা কী ভালোবাসা হারানোর কষ্টে?? নাকি ইগোতে আঘাত করার অপমানবোধে???)

মেঘলাঃ(মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করতে করতে পিছনে ফিরতেই দেখি উনি দরজার সামনে দাড়িয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে। উনার দৃষ্টি এদিকে থাকলেও মন এদিকে নেই। গভীর কোন ভাবনায় ডুবে আছে। ডাকবো?? যদি রাগ করে?? যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে না ডাকলে রুমের বাইরেও যেতে পারবো না। ডাকি যা হবার হবে,,, বুকে ফু দিয়ে) শু,,,শুনছেন?? এই যে শুনছেন???

আকাশঃ (মেঘলার ডাকে ভাবনা থেকে বাইরে আসলাম। ওর দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম)

মেঘলাঃ যা বাবা কিছুইতো বললো না। আমি বরং নিচে যাই। কিছুতো চিনিও না।

টিয়াঃ বউমনি আসবো।

মেঘলাঃ হুম, এসো। আমি কেবলই নিচে যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ভাবছিলাম কিছুতো চিনি না।

টিয়াঃ আচ্ছা চলো বড় ম্যাডাম লান্সের জন্য ডাকছে। বিকেলে বরং তোমাকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাবো, কেমন??

মেঘলাঃ আচ্ছা।(টিয়া আপুর সাথে নিচে চলে এলাম)

আকাশঃ ( ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি। কেন বারবার একই ভুল করছি আমি?? না না আর কিচ্ছু ভাববো না। এই জীবনে শুরু একজনকে ভালোবেসেছিলাম। যে আমাকে ভরা রেস্টুরেন্টে এত মানুষের সামনে অপমান করেছে। (কথাটা মনে পড়তেই আকাশের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল) যে সময়টাতে ওকে আমার সবচাইতে বেশী প্রয়োজন ছিল সেই সময়ে ও আমাকে আঘাত করে চলে গেছে। আর এই মেয়েতো তারই সবচাইতে আদরের বোন, সুযোগ পেলে এই মেয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করবে না তার কী নিশ্চিয়তা আছে? আর কারো মায়ায় জড়াবো না আমি। এবার শুরু প্রতিশোধের পালা( রহস্যে হাসি দিয়ে) আর মেঘলা আমার কাছে শুধু প্রতিশোধ নেবার একটা মাধ্যম মাত্র। কাজ শেষে ছোড়ে ফেলবো রুপের সামনে। মেঘলার জীবন নষ্ট হওয়ার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে তিলেতিলে শেষ হয়ে যাবে রুপ, হাহাহাহাহাহা।)

নিচে,,,,

মাঃ এখন কেমন লাগছে বউমা?? জ্বর কমেছে??(মুখটা কালো করে জিজ্ঞেস করলেন)

মেঘলাঃ এখন ভালো আছি। সকালে মেডিসিন নেবার পর আর জ্বর আসেনি। আমি কী আপনাকে মা বলে ডাকতে পারি??(ভয়ে ভয়ে)

মাঃ ওকে ডেকো।( কী করবো বলো? আমার রাজপুত্রের মত ছেলের পাশে তোমার মতো কালো মেয়েকে যে মানতে পারছি না। ভেবেছিলাম একটা পরীর মত পুত্রবধু আনবো। কিন্তু ছেলে আমার একদম নিষেধ করে দিয়েছিল বিয়ে করতে, বলেছিলো করবে না কোনদিনও বিয়ে । তোমাকে করলেও বিয়েটা অন্তত করেছে এটাই অনেক। আর তোমার তো কোন দোষ নেই। চেষ্টা করবো মেনে নিতে)

টিয়াঃ কী ভাবছেন বড় ম্যাডাম??

মাঃ কিছু না। আর তোকে কতবার বলেছি এই ম্যাডাম ফ্যাডাম ডাকবি না। এখন যা চাঁদ আর আকাশকে ডেকে নিয়ে আয়। সকাল বেলা ছেলেমেয়ে দুটো ভালো করে খেলো না।

টিয়াঃ আচ্ছা ম্যা,,, থুরি খালাম্মা।

(টিয়া চলে গেলো)

মাঃ শুনো বউমা তোমাকে কিছু কথা বলি।

মেঘলাঃ জ,,জী বলুন ,,,,,,

মাঃ এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছো আকাশ তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি। কেন বিয়ে করেছে ওর থেকেই জানতে পারবে। কিন্তু তোমার কাছে একটা অনুরোধ ছেলেটার মনে জায়গা করার চেষ্টা করো। একটা ভুল ধারণা পোষে রেখেছে মনের মধ্যে। সেটা দূর করার দ্বায়িত্ব তোমার।

মেঘলাঃ ছি ছি মা আপনি অনুরোধ কেন বলছেন?? আদেশ করুন আমি আপনার আদেশ পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

মাঃ হুম (মুগ্ধ হয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে। কতটা নম্রভাষী) এখন বসো খেতে দিচ্ছি।

মেঘলাঃ উনারা আসুক।

মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

চাঁদঃ আমি এসে পড়েছি। এখন কেমন আছো ভাবি? (মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে)

মেঘলাঃ জ,,জী ভালো (হঠাৎ করে এসে জড়িয়ে ধরায় চমকে গেছি)

চাঁদঃ প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ভাবি( একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে) আমি একটু ফ্রি মাইন্ডের। সকালে তোমার রুমে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পড়ে ভাবলাম থাক এখন ভাইয়া আছে পড়ে দেখা করে নিবো।

মেঘলাঃ কেন আপু আসতেন? আপনার ভাইয়াতো রুমে ছিলো না।

চাঁদঃ ও মাই গড। ভাবি আমি তোমার ননদ বয়সেও ছোট। তুমি কী না আপু আপনি এসব বলছো??

মেঘলাঃ আসলে আমি,,,মানে,,,

চাঁদঃ থাক আর মানে বলতে হবে না। ভাবি আমি কিন্তু ওই ননদিনী রায় বাঘিনী টাইপ ননদ হবো না। তুমি আমাকে ছোটবোনের মত দেখবে। চাঁদ ডাকবে আর তুমি করে কথা বলবে।

মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

মাঃ এখনি সব কথা শেষ করে ফেলবি নাকি? কথা বন্ধ করে বস খাবার দিচ্ছি। কিরে টিয়া আকাশ কোথায়??

টিয়াঃ আইতাছে।

মাঃ আবার,,, তোকে এত বছর ধরে কী শিখাইলাম?? আইতাছে না আসছে।

টিয়াঃ আসলে মাঝে মাঝে মুখ ফসকে বের হয়ে যায়(বোকার মত হেসে)।

মেঘলাঃ (চুপচাপ এদের কথা শুনছিলাম। তখনই চোখ গেলো সিঁড়িতে। উনি নামছে টিশার্টের হাতা ওঠাতে ওঠাতে। ধূসর রঙের একটা ফুলহাতা টিশার্ট পড়েছে আর কালো টাউজার। উনাকে যেভাবেই দেখি সুন্দর লাগে। উনি চাঁদের পাশে চেয়ার টেনে বসতেই চোখ নামিয়ে নিলাম।)

আকাশঃ মা খাবার দাও।

মেঘলাঃ (শাশুড়ী মা সবাইকে খাবার দিয়ে নিজেও বসে পড়লেন। টুকিটাকি যা লাগবে টিয়া আপু এগিয়ে দেবে। সবাই খাচ্ছে আমি খাবার নাড়াচাড়া করছি আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না।)

মাঃ বউমা খাচ্ছো না কেন??

মেঘলাঃ কই মা খাচ্ছি তো।

মাঃ আচ্ছা এটা নাও। তোমার জন্য ঝাল করে ভর্তা করেছি। জ্বর হলে কিছু স্বাদ লাগে না জানি। এটা দিয়ে খাও ভালো লাগবে।

মেঘলাঃ হুম ( চোখে পানি টলমল করছে। কত ভালো মানুষ উনি। কতটা ভেবেছে আমার জন্য। বাসায় মাও এমন করতো জ্বর হলে, নিজে খাইয়েও দিতো। উনারই বা কী দোষ? এমন রাজপুত্রের মত ছেলের জন্য সব মা চাইবে পরীর মত বউ আনতে । এমন ছেলের পাশে কোন মা আমার মত কালো মেয়েকে হাসি মুখে মেনে নিবে? হয়তো আমি নিজেও পাড়তাম না।)

আকাশঃ মা একটা কথা ছিলো।

মেঘলাঃ (উনার কথা শুনে সবাই খাওয়া রেখে উনার দিকে তাকালো। এরপর উনি যা বললেন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই উনার দিকে আর আমি কিছু না বুঝে তাকিয়ে আছি)

চলবে,,,,,,