কালোবউ পর্ব-২+৩

0
1116

🖤 #কালোবউ 🖤

লেখিকাঃ Tahmina Toma
মেঘ কন্যা তিলোত্তমা (ছদ্মনাম)

পর্বঃ২

মেঘলাঃ (হঠাৎ খেয়াল করলাম সে বিছানা থেকে ওঠে আমার দিকে আসছে। এখন কী আবার মারবে নাকি?? নাকি নিজের অধিকার চাইবে?? 😰😰😰😭😭😭 নাহ আমাকে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এদিকে কপাল থেকে যে রক্ত বের হচ্ছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই। সারাদিনের ধকল, ক্ষুধা আর এখনকার আঘাত শরীর নিতে পারলো না। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো আর কিছু মনে নেই। )

আকাশঃ আর কারো মায়ায় জড়াবো না আমি🥺🥺🥺। সব মেয়ে ঐ কালনাগিনীর মতো। আর এই মেয়েতো ঐ ছলনাময়ীর বোনই। এখন আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য শুধু টাকা। যার জন্য ও আমাকে একা ফেলে গেছে। টাকার পাহাড় গড়ে তুলবো আমি। খুব ভালবাসতে না তোমার এই বোনকে। এবার দেখো তোমার এত আদরের বোনের সাথে কী হয়😈😈😈??

(আকাশ ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো বলে বেড়িয়ে এলো। একবার নিজের সদ্য বিয়ে করা বউয়ের দিকে তাকাতে চেয়েও তাকালো না। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। সকালে ফজরের নামাজের আগে ঘুম ভাঙলো আকাশের। ওয়াশরুম থেকে ওযু করে নামাজের জন্য চলে গেল মসজিদে। একবার মেঘলাকে ডাকতে চেয়েও ডাকলো না। নামাজ পড়ে গার্ডেনে জিম করতে লাগলো। এটা তার প্রতিদিনের রুটিন। রুমে এলো সকাল ৮ টা বাজে। এসে দেখলো মেঘলা কাল রাতে যেভাবে শুয়ে ছিলো এখনো সেভাবেই শুয়ে আছে।)

আকাশঃ এই মেয়ে ওঠো 😠😠😠এটা তোমার বাবার বাড়ি না যে নাক ডেকে বেলা ১০ টা পর্যন্ত ঘুমাবে। ওঠো বলছি😡😡😡।

মেঘলাঃ…..

আকাশঃ এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছো না।

(অনেক ডাকার পর যখন কোন সারাশব্দ পেলো না তখন আকাশ ভয় পেয়ে গেলো)

আকাশঃ মরে গেলো নাকি 😰😰😰(ভাবতেই ভেতরটা অজানা কারণে কেঁপে ওঠলো) নাহ শ্বাসতো চলছে(নাকের কাছে হাত নিয়ে)। তার মানে ঘুমাচ্ছে 😠😠😠।

(সে যে অজ্ঞান হয়ে আছে বুঝতে পারলো না।পাশের টেবিলে রাখা পানির জগের পুরো পানিটাই মেঘলার মুখে মারলো।)

মেঘলাঃ( ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়ে আসতে আসতে চোখ খুলে দেখি উনি সামনে দাড়িয়ে আসে পানির জগ হাতে। উঠার শক্তি পাচ্ছি না।)

আকাশঃ নিজেকে কী মহারানী মনে হয়? বেলা ১০ টা পর্যন্ত আপনি ঘুমাবেন আর বাড়ির কাজ আপনার বাবার পাঠানো কাজের লোক করবে। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে যেন দেখি পুরো রুম গুছানো।

মেঘলাঃ (কথাটা বলে উনি হনহনিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। শরীরটা এতো দুর্বল কেনো লাগছে? সারারাত কী আমি সেন্সলেস ছিলাম?? এতো ভাবার সময় নেই। কোন রকমে ওঠে রুমটা সুন্দর করে গুছিয়ে নিলাম এটা ভালোই পারি । গুছানোর সময় খেয়াল করলাম রুমটা অনেক সুন্দর, সব ব্লাক আর হোয়াইট। ওয়ালে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং। একটা বড় বেড, বেডের পাশে একটা ছোট সাইড টেবিল, একপাশে একটা আলমারি, ডেসিং টেবিলে অনেক রকমের কসমেটিক সব ছেলেদের, ছেলেরা এতো কসমেটিক ইউজ করে?? একটা বড় সোফা। মেঘলার বেডের কাজ হয়ে যাবে সোফা দিয়ে। একপাশে একটা বুক সেলফে অনেক বই বেশির ভাগ ইংরেজি বই, পাশেই কাঁচের দরজা হয়তো বেলকনিতে যাওয়ার। সবশেষে চোখ গেলো বেডের ওপর দেয়ালে আকাশের বড় একটা ছবিতে। কত সুন্দর লাগছে আকাশে, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। হয়তো এই হাসিটা সরাসরি দেখার সৌভাগ্য আমার হবে না। চোখের কোন থেকে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে যাবার আগে মুছে নিলাম। ১ ঘন্টা হলো ওয়াশরুমে ঢুকেছে। ছেলে মানুষের গোসল করতে এত সময় লাগে😒😒😒। আমারতো ওয়াশরুম যাওয়া খুব দরকার কী করি 😰😰😰?? ঘুরতেই ডেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। কপালে রক্ত শুকিয়ে আসে, কাজল লেপ্টে পুরো মুখ আরো কালো লাগছে। পুরো মুখের মেকআপ নষ্ট হয়ে পেত্নীর মত লাগছে। এখন আমাকে যে দেখবে নিশ্চিত হার্টঅ্যাটাক করে মারা যাবে। উনি বাহিরে আসার আগেই আমি বরং বেলকনিতে চলে যাই। এমনি বলছে উনার সামনে না যেতে। এই চেহারা নিয়ে উনার সামনে পড়লে এখনি বাড়ি থেকে বের করে দিবে 😢😢😢। বেলকনিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মাথাটা ঘুরে উঠলো।

আকাশঃ শাওয়ার নিয়ে বাইরে আসতেই দেখি মেয়েটা মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে।…

চলবে”””””

🖤 #কালোবউ 🖤

লেখিকাঃ Tahmina Toma
মেঘ কন্যা তিলোত্তমা (ছদ্মনাম)

পর্বঃ ৩

আকাশঃ (ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি মেয়েটা মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে ধরলাম)

মেঘলাঃ (পড়ে যাওয়ার আগেই উনি ধরে ফেললেন। আমি কী স্বপ্ন দেখছি?? না সত্যি। একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগছে। যখন অনুভব করলাম উনার ভেজা লোমশ বুকে আমার গাল লেগে আছে শরীরে যেন শিহরণ খেলে গেল। এই প্রথম কোন পুরুষের এত কাছে এলাম তাও নিজের স্বামীর। আমি ৫ ফুট ৪” লম্বা তাও উনার বুক পর্যন্ত । কত লম্বা উনি।)

আকাশঃ (মেয়েটাকে ধরতেই ওর মাথা বুকে এসে পড়লো। গাল আমার বুকে লেগে আসে। গরম নিশ্বাস বুকে লাগছে। কেমন অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে?? না না এসব আমি কী ভাবছি?? এরা সবাই বিশ্বাসঘাতক 😠😠😠। আর এই মেয়েতো আমার যোগ্যই না। এক ঝটকায় বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে দুই কাধ ধরলাম) এই মেয়ে কী হয়েছে?? দেখে চলতে পারো না??

মেঘলাঃ ( ঝটকায় ঘোর কেটে গেল। কিন্তু উনার দিকে তাকানো সাহস হলো না। বুকের দিকেই তাকিয়ে আছি। জিম করে বডি বানিয়েছে সিক্সপ্যাক। ফর্সা বুকে কালো কুচকুচে ভেজা লোমগুলো লেপ্টে আছে ঘোর লেগে গেছে আবার। আচ্ছা শুনেছি যে ছেলেদের বুকে লোম থাকে তাদের বুকে ভালোবাসাও নাকি অনেক বেশি থাকে। তাহলে উনার নেই কেন??)

আকাশঃ কী বলছি শুনতে পাচ্ছো না?? নাকি কথাও বলতে পারো না 😠😠😠??( কাধ ধরে ঝাকিয়ে)

মেঘলাঃ (এবার উনার মুখের দিকে তাকালাম। চুলগুলো কপালে পড়ে আছে। ফোটা ফোটা পানিও পড়ছে। অসম্ভব সুন্দর দুটি চোখ, হালকা নীল রঙের, বাঁশির মতো নাক, গোলাপি চিকন দুটি ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলছে। এককথায় অসম্ভব সুন্দর, হলিউড হিরো । আমার দেখা সেরা সুন্দর একজন পুরুষ। ছেলেরা এতো সুন্দর হয়?? আমি সত্যি উনার যোগ্য না। একবিন্দু পানি অজান্তেই গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে)

আকাশঃ(মেয়েটার চোখে পানি দেখে থমকে গেলাম। খেয়াল করলাম মুখের দিকে। কপালে রক্ত শুকিয়ে আছে। কাজল, মেকআপ লেপ্টে বাজে লাগছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে এক দিনে। এতকিছুর মাঝে গভীর চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর। যে কোন পুরুষ ঘায়েল হয়ে যাবে একটু তাকালে। মনে হচ্ছে কত অভিযোগ জমে আছে ঐ চোখে। না তাকানো যাবে না এই চোখ। হাতটা আলগা হয়ে যেতেই আবার পড়ে যেতে নিলো। শক্ত করে ধরলাম। একি এর শরীরে দেখছি অনেক জ্বর।)

মেঘলাঃ ( কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না?? শুধু তাকিয়ে আছি মুখের দিকে।)

আকাশঃ এই মেয়ে জ্বর এলো কীভাবে?? 😠😠😠(জোরে ধমক দিয়ে)

মেঘলাঃ আ,,আমার ন,,নাম মে,,মেঘলা ( সেই কাল থেকে এই মেয়ে এই মেয়ে করছে)

আকাশঃ whatever,, যাক কথা বলতে পারো। জ্বর এলো কীভাবে?? 😠😠😠

মেঘলাঃ আ,,আমি ফ,,ফ্লোরে শুতে পারি না। ঠান্ডায় এলার্জি আছে।

আকাশঃ তাহলে কাল বলনি,,,,,,(বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। নিজের ব্যবহারের কথা মনে পড়ে গেল। কেন জানি না খারাপ লাগলো।) ওকে তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। একা যেতে পারবে নাকি হেল্প করতে হবে?

মেঘলাঃ একাই পাড়বো।

আকাশঃ আর একটা কথা। এই রুমে কী হচ্ছে তা যেন বাইরে না যায়।

মেঘলাঃ আচ্ছা🥺🥺🥺( লাগেজ খোলে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পড়লাম। কী হচ্ছে এসব?? কালকের আকাশ কী এই আকাশ?? এই বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না বাবার দেওয়া ওই সামান্য কিছু টাকার জন্য উনি আমাকে বিয়ে করছেন। তাহলে কেন হচ্ছে এসব???😭😭😭)

আকাশঃ (প্যান্ট আর একটা টিশার্ট পরে চুলে জেল লাগিয়ে নিচে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে। চাঁদনি ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। ও আপনাদের বলাই হয়নি। আমার পরিবারে আমি, আমার মা আর আমার ছোটবোন চাঁদনি। সবাই চাঁদ বলে ডাকি। বাবা মারা গেছে ৩ বছর আগে। চাঁদনি ইন্টার ১ম বর্ষের ছাত্রী। যেমন সুন্দর তেমন মেধাবী ) মা খাবার দাও।

মা (মারিয়া খান) বস দিচ্ছি। মেঘলা কোথায়??

আকাশঃ মেঘলা কে,,, ওহ্ ঐ মেয়েটা??

মাঃ যাকে এতো জেদ করে বিয়ে করে আনলি তার নাম জানিস না??

আকাশঃ জানি (গম্ভীর গলায়) জ্বর এসেছে। খাবার আর মেডিসিন রুমে পাঠিয়ে দাও।

চাঁদঃ ভাইয়া তুই ঠিক করছিস না। একজনের শাস্তি আর একজনকে দিস না। এই মেয়েটাতো কিছু জানেও না।

আকাশঃ চাঁদ,,,,,,(ধমক দিয়ে) ছোট ছোটদের মত থাক। বড়দের বিষয়ে নাক গলাতে আসবি না 😡😡😡।

চাঁদঃ একদিন না পস্তাতে হয় এই ছোট মেয়ের কথা না শুনার জন্য 😠😠😠

(চাঁদ খাওয়া অর্ধেক রেখেই ওঠে চলে গেলো। আকাশ ও রাগ করে ওঠে চেয়ার লাথি মেরে ফেলে চলে গেলো।)

মাঃ একটা কালবৈশাখী ঝড় আমার হাসিখুশি সুন্দর সংসারটাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো😭😭😭।ছেলেটা ধংসের খেলায় মেতেছে।

(রুমে গিয়ে আকাশ থমকে গেলো মেঘলাকে দেখে)

চলবে,,,,