কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে পর্ব-০৭

0
676

#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-৭

জয়ী আজ এফডিসিতে এসেছে সুজয় সরকারের সঙ্গে দেখা করার জন্য। সুজয় সরকার একজন পরিচালক। প্যাকেজ নাটক, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানায়। একজনের রেফারেন্সেই এখানে আসা। সঙ্গে অবশ্য সৌমিও আছে। জয়ী যেখানেই যায় ওর সঙ্গে সৌমি থাকে। সৌমির পড়াশোনা শেষ হলেও চাকরি, বাকরি কাজ নিয়ে কোনো টেনশন নেই। ওর যাবতীয় মনোযোগ, টেনশন সব গল্পের বই, টিভি সিরিজ, সিনেমা আর খাবার দাবারে। এতো এতো খায় তবুও মোটা হয় না।

সৌমির হাতে আজও একটা বই আছে। আজকের বইটা প্রেমের উপন্যাস। চকলেট খেতে খেতে বইটা পড়ছিল। জয়ী একটা ধাক্কা মেরে বলল,

“তোর বই টা রাখবি। যেখানেই যাস বই নিয়ে যাস। ইচ্ছে করছে ঠাস করে একটা চড় মারি।”

সৌমি বইটা রাখতে রাখতে বলল,

“এতো ক্ষেপেছিস কেন?”

“কতক্ষন ধরে বসে আছি অথচ এখনো সেই লোকের দেখা নেই। ”

“এরা এমনই। ”

“ঠিক বলেছিস। এরা এমনই, দেমাগে মাটিতে পা পড়ে না।”

সৌমি হেসে ফেলল শব্দ করে। জয়ী বলল,

“হাসছিস কেন?”

“তুই সবাই কে সেইম কথা বলছিস। আদনান কে বললি আবার ওনাকেও বললি। তাই….

জয়ী সৌমিকে কথা শেষ করতে দিলো না। বলল,

“এক সেকেন্ড… তুই আদনান আদনান করছিস কেন?”

সৌমি চোখ কপালে তুলে বলল,

“তাহলে ভাইয়া ডাকতে হবে?”

“না। তুই যেভাবে আদনান আদনান করছিস তাতে মনে হচ্ছে উনি তোর বন্ধু বা অন্যকিছু। ”

সৌমি হেসে ফেলল। বলল,

“আচ্ছা অনীশ কে কী বলে ডাকব?”

জয়ীর কপাল টা কুচকে গেল। এই অনীশ ব্যটার সঙ্গে আজ দেখা করার কথা আছে। ব্যটা নিজেই ফোন করে। জয়ীকে অনিচ্ছায় হলেও ফোন ধরতে হয়। কিন্তু বিরক্তিকর সব প্রশ্ন শুনেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তবুও মেজাজ ঠান্ডা রেখে কথা চালিয়ে যেতে হয়। আফটার অল লিজা ভাবীর ভাই বলে কথা!

সৌমি জয়ীকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কী ভাবছিস? হাওয়ায় ভাসতে শুরু করছিস?”

“ধ্যাৎ! ওই লোকের সঙ্গে আজ দেখা করতে যেতে হবে সেটা ভেবেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে।”

সৌমি হেসে বলল, বেচারা তোর জন্য হাফ পাগল! আর তুই শুধু শুধু মেজাজ খারাপ করছিস!

“চুপ করে থাক। লোকটাকে রীতিমতো আমার অসহ্য লাগতে শুরু করেছে। ”

“কেন কেন?”

“ফোন করে অথচ কথা বলে না। মিনিটের পর মিনিট চুপচাপ থাকে। বলে তুমি কথা বলো, আমি শুনি। আমার তো শুনতেই ভালো লাগে। ”

সৌমি হাসতে লাগলো। জয়ী মেজাজ খারাপ করে বলল,

“এতো হাসিস না তো। সহ্য হচ্ছে না।”

“তোর কী হবে শেষ পর্যন্ত? কোনো ছেলেকেই ভালো লাগে না। সবারই কিছু না কিছু দোষ খুঁজে বেড়াস। ”

জয়ী মৃদু হেসে বলল,

“তুই বুঝবি না। আমার মতো পরিস্থিতি হলে বুঝতি। ”

“সবাইকে তোর সাইমুন মনে হয়?”

জয়ী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“কী করে বুঝব বল! অনীশের চাহনিতে তুই যেমন মুগ্ধতা খুঁজে পাচ্ছিস, আমিও তেমন সাইমুনের কথাবার্তার ধরনে আমার প্রতি মুগ্ধতা খুঁজে পেতাম। কিন্তু শেষমেস শুনলাম সব টা নাটক। কী করে বুঝব কে নাটক করছে আর কে সত্যি বলছে!”

সৌমি নরম গলায় বলল,

“তুই তোর মাথা থেকে সাইমুন নামের চাপ্টার টা মুছে ফেল। ভাববি যে ওরকম কোনো ইনসিডেন্ট তোর লাইফে ঘটেই নি৷ ইভেন তুই সাইমুন কে চিনিসও না। ”

জয়ী হেসে ফেলল। সৌমি বলল,

“ওভারথিংকিং বন্ধ কর। দেখবি লাইফ টা খুব ইজি। সবকিছু বড্ড কঠিন করে দেখিস৷ এতো কঠিন করে না দেখে একটু সহজ ভাবে দেখ; দেখবি সব ই সহজ। ”

“বই পড়ে পড়ে তোর কিন্তু ভালোই উন্নতি হয়েছে। ”

সৌমি হাসলো।

সুজয় সরকারের ওখানে সন্ধ্যে পর্যন্ত বসে থাকলেও কোনো লাভ হলো না৷ শেষ পর্যন্ত জানালো যে আজ হচ্ছে না। অন্যদিন আসুন।

জয়ী মেজাজ খারাপ করলো না। বেরিয়ে এলো। সেখান থেকে বেরিয়ে লিজা কে টেক্সট পাঠালো,

“ভাবী অনিশ সাহেব কে বলে দিও আমি আর এগুতে চাচ্ছি না। আমার বড্ড বিরক্ত লাগছে। বিয়ের মতো ব্যাপার এখনো আমি ভাবতে পারছি না। ওনাকে বলবে যেন উনি এটাকে অপমান না ভাবে। ”

****
“আপনার কী গার্লফ্রেন্ড আছে?”

আদনান সরু চোখে তাকালো। রোজি তখনও জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে। আদনানের এবার মনে হলো মেয়েটার বড্ড বেশী অহেতুক কৌতূহল। আজ শ্যুটিং এর লাস্ট ডে। গতকাল আলাপ হবার পর আদনান নিজেই কথা বলেছে। প্রথমে রোজির মধ্যে জড়তা থাকলেও পরে আদনানের মিশুকে স্বভাবের জন্য সহজ হয়ে গেছে।

আদনান হেসে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি কী মিডিয়ার লোক? কোন পত্রিকা? কোন চ্যানেল?”

রোজি বুঝতে না পেরে বলল,

“সরি?”

“না মানে সাংবাদিক কিংবা চ্যানেলের রিপোর্টার রাই তো এমন প্রশ্ন করে। একটা দুটো কথা বলার পর ই পারসোনাল প্রশ্নে চলে যায়। ”

রোজির মুখ ভোতা করে ফেলল। আদনান যে মিষ্টি মিষ্টি কথার মধ্যেও এমন কিছু বলবে সেটা আন্দাজ করতে পারে নি।

তবে আদনানের জীবনের মোড় ঘোড়ানোর কারণ হিসেবে রোজির বড়সড় একটা ভূমিকা আছে।

****
জুলিনা আজ আবারও জয়ীদের বাসায় এসে হাজির। আজ বাসায় লিজা আর জিহাদ দুজনেই ছিলো। লিজা দরজা খুলতেই জুলিনা বলল,

“আমি জয়ীর খালা৷ জয়ী বাসায় নাই?”

লিজা জিহাদের দিকে তাকালো। জিহাদ মাথা নেড়ে না বলল। যার অর্থ হলো এই খালাকে ওর অচেনা। লিজা জয়ীকে ডাকলো। জয়ী এসে জুলিনাকে দেখে বলল,

“আপনি এই সময়?”

“একটু ভালো, মন্দ রান্না করলাম ভাবলাম নিয়া আসি তোমার জন্য। ”

সত্যিই অনেক পদের রান্না করে নিয়ে এসেছে জুলিনা। পোলাও, হাতে মাখা চিংড়ি, চিকেন কাবাব, মিঠা বিফ, মুগডালের একটা আইটেম। জুলিনা বেশীক্ষন বসলো না। কাল ওর বাসায় মিলাদ আছে। সেখানে যেন জয়ী অবশ্যই যায়; সেটা বলার জন্যই এই অবধি এসেছে।

জুলিনা চলে যাবার পর লিজা বলল,

“তোমার ব্যাপার টা কী ঠিক বলতো?”

“কী ব্যাপার?”

“রাস্তাঘাটে খালা, বন্ধু বানাচ্ছো!”

জয়ী হেসে বলল, বন্ধু তো রাস্তাঘাটেই হয়। ভাইয়াও তো তোমাকে রাস্তায় খুঁজে পেয়েছিল তাই না?

জিহাদ ওখানেই ছিলো। জয়ীর উদ্দেশ্যে বলল,

“ভুল বললি। নিকেতনের মাঠে খুঁজে পেয়েছিলাম। ”

জয়ী শব্দ করে হেসে ফেলল।

লিজা চোখ গরম করে স্বামীর উদ্দেশ্যে বলল,

“সবকিছু এতো ইজি ভাবে নিও না। তোমার বোন অসুস্থ বলে এতো এতো ফল, খাবার পাঠাচ্ছে কেউ একজন। তাতে কোনো হেলদোল নেই!”

জিহাদ হাই তুলতে তুলতে বলল,

“এই তোকে এসব কে পাঠিয়েছে? বয়ফ্রেন্ড? নাম কী হারাম*জাদার?”

জয়ীও নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“আদনান ফয়সাল। ক্রিকেটার আদনান ফয়সাল। ”

জিহাদ লাফ দিয়ে উঠলো। লিজা অবিশ্বাস্য গলায় বলল,

“আদনান ফয়সাল তোমার বন্ধু?”

জিহাদ উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,

“তোর সঙ্গে আলাপ আছে। ”

জয়ী আর কোনো জবাব দিলো না। আদনানের সঙ্গে ওর দেখা হবার অভিজ্ঞতা খুব বাজে। সেটা ঘটা করে বলার মতো কিছু না। তাই চুপ থাকাই ভালো। লিজা তীর্যক হেসে বলল,

“জয়ী মনে হয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প বানাচ্ছে। আমরা তো আর আদনান ফয়সাল কে জিজ্ঞেস করতে যেতে পারব না। ”

জিহাদও নিভে গেল। কঠিন গলায় বলল,

“এই এরপর ক্রিকেট সংক্রান্ত বিষয়ে মিথ্যে বলবি না। ফাজলামোর একটা লিমিট থাকে।”

জয়ী রুম থেকে আদনানের সাইন করা কার্ড টা জিহাদ কে দেখালো। তারপর জিহাদ আর লিজার সামনেই আদনানের ম্যানেজার কে ফোন করলো।

****
আদনান রাত ১০ টার পর আর ফোন রিসিভ করে না। তাই এই সময়ে ওকে কেউ ফোন করে বিরক্তও করে না। দশ টা থেকে সাড়ে দশ টার সময় টা ওর বই পড়ার সময়। রোজই নিয়ম করে এই সময়ে কিছু না কিছু পড়ে। এটার একটা কারণ ও আছে। বই পড়তে শুরু করলেই ঘুম পেয়ে যায়। আদনান বই পড়ছিলো, তখনই ওর ম্যানেজার বাবলু ফোন করলো। এতো রাতে ফোন দেখে আদনান খানিকটা অবাক হলো। ফোন রিসিভ কর‍তেই বাবলু জানালো,

“স্যার জয়ীতা ম্যাম আবারও ফোন করেছিলো।”

“আচ্ছা। কিছু বলেছে?”

“বলেছে ওনার বাসায় আরও কিছু ফল আর চকলেট পাঠাতে। খুব আর্জেন্ট নাকি।”

আদনান বিস্মিত হলো। জয়ীতার অর্ডার শুনে মনে হচ্ছে ও ফল, চকলেটের দোকানদার।

চলবে…..