কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে পর্ব-০৯

0
655

#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-৯

জুলিনার এতো মিথ্যেতেও কাজ হয় নি। আদনান আসেনি। অসংখ্য বার ফোন করলেও ফোন ধরে নি। জুলিনার গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। যাকে পারছে তাকেই বকা দিচ্ছে। তাসিন, নওশিন এরা জুলিনার এই আচরণের সঙ্গে পরিচিত হলেও জয়ী পরিচিত না। তবে বেশ মজা লাগছে ওর। জুলিনার মাও খানিকটা জুলিনার মতোই। বিনা কারনেই সবাইকে বকাঝকা করছেন। কিছুক্ষন পর পর এসে সবাইকে বলে যাচ্ছে,

“তোরা খাইয়া বিদায় হ। এতো গ্যাঞ্জাম পছন্দ হচ্ছে না।”

জয়ী একবার বেশ লজ্জা পেল। ও তাসিন আর নওশিনের সঙ্গে গল্প করছিল। হাসির টপিকে আলোচনা হচ্ছিলো বলে জোরে হেসে ফেলায় জুলিনার মা এসে বলল,

“ছিনালের মতো হাসিস ক্যান? খাইতে আইছিস খাইয়া চইলা যাবি। ”

জয়ী লজ্জা পেল। নওশিন বুঝে গেল। বলল,

“তুমি কিছু মনে কোরোনা। বয়সের ভারে ওনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে। ”

জয়ী আচ্ছা বলে পরিস্থিতি সামলে নেবার চেষ্টা করলো। কিন্তু সৌমি আর তাসিন মুখ চেপে হাসছে।

জুলিনার মেজাজ তখন চরমে। মিলাদের পর মাওলানা সাহেব জানালেন সে বিরিয়ানি খাবে না। তাকে যেন এক প্লেট ভাত দেয়া হয়। এদিকে বাড়িতে ভাত রান্না হয় নি। সেই নিয়ে আরেক দফা ঝামেলা। ওদিকে জুলিনার মা সমানে বলে যাচ্ছেন,

“সব হাভাতের দল এই বাসায় আইসা জুটছে। যা যা মর তোরা…”

জয়ী আর সৌমি কোনোরকম নাকে, মুখে ক’টা খেয়ে নিলো। খাওয়ার সময় সৌমি জয়ীকে নিচু গলায় বলল,

“তোর সঙ্গে এই মহিলার কী হাসপাতালে আলাপ হইছিল?”

“না। পার্লারে।”

“এর থেকে দূরে থাকিস। উনি তোর চেয়েও ভয়ংকর। ”

জয়ী চোখ পাকিয়ে তাকালো সৌমির দিকে। জুলিনা আসার সময় জয়ী কে এক বক্স বিরিয়ানি দিয়ে দিলো জোর করে। অনিচ্ছায় হলেও জয়ীকে বিরিয়ানি নিয়ে ফিরতে হলো।

আসার সময় তাসিন বলল,

“আপু আমাদের বাড়ি একদিন এসো। ভাইয়া থাকবে না, আর অস্কার কেও আটকে রাখব। ”

জয়ী হেসে বলল,

“আচ্ছা।”

আসার সময় জয়ী একটা ভয়ংকর কাজ করলো। ইচ্ছে করেই জুলিনার মায়ের সামনে গেল। ওকে দেখেই জুলিনার মা বকাঝকা শুরু করলো। জয়ী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ডাইনি বুড়ি, এর পরের বার এসে তোমার কল্লা চিবিয়ে চিবিয়ে খাব। ”

সৌমি ফিক করে হেসে ফেলল। জয়ী আবারও বলল,

“শরীরে ঠিকঠাক মাংস পর্যন্ত নেই, অথচ মুখ চলে!”

ভদ্রমহিলা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছেন৷ নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেন না। চিউ চিউ করে মেয়েকে ডাকতে লাগলেন,

“জুলেখায়ায়ায়ায়া… ওই হা/রা/মজাদী….

***
সৌমি রাস্তায় দাঁড়িয়েই হাসছে। জয়ীর এখন একটু ভালো লাগছে। মেজাজ টাও ফুরফুরে লাগছে। সৌমি কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলল,

“এটা কী করলি তুই?”

জয়ী নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“প্রথমে ভেবেছিলাম উনি হয়তো বয়সের কারনেই এসব উল্টাপাল্টা বলে। পরে শুনলাম যে এগুলো ইচ্ছে করেই করে। মেয়েকে জ্বালানোর জন্য নাকি এসব করে। ”

“কে বলল?”

“নওশিন। ”

“তবে যাই বলিস, তুই কিন্তু এখন সেলিব্রিটি। ”

“আমি? কিভাবে? ”

“সেলিব্রিটি ক্রিকেটার তোকে ফুল পাঠায়। তার বোনেদের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব!’

জয়ীর হঠাৎ করে আবার আদনানের কথা মনে পরে গেল। আদনান তো ও’কে একরকম ইনসাল্ট করেছে। ব্যটা ম্যানেজার ওর ফোন টা অবধি ধরে নি। নিশ্চয়ই বারন করেছে। জয়ীর মাথায় হঠাৎ করে একটা শয়তানি বুদ্ধি এলো। ব্যাপার টা যদিও রিস্ক। তবুও যদি একটু রিস্ক নেয়া যায় তাহলে ওই ব্যটা আদনানের থোতা মুখ ভোতা হবে।

সৌমি দেখছে জয়ী একা একাই হাসছে। ধাক্কা দিয়ে বলল,

“কিরে কী ভেবে এতো হাসছিস? ”

“কিছুনা। ”

“কিছু তো বটেই। আমায় বল।”

“তুই বাসায় চলে যা। আমার একটু কাজ আছে। ”

সৌমি আঁতকে উঠে বলল,

” এই এখন কোথায় যাবি? অলরেডি দশ টা বেজে গেছে। ”

“কাল বলব।”

সৌমি জয়ীকে ডাকলো কিন্তু কাজ হলো না। জয়ী ছুটে গেল সিএনজি ধরতে।

****
তাসিন, নওশিন দুজনে ফিরে দেখলো আদনান জেগে আছে। তাসিন হেসে বলল,

“পাগলা মামী কিন্তু আজ খুব ক্ষেপেছে।”

আদনান হেসে বলল,

“জানি। আমি তো থাকব না। তোরা সামলে নিস।”

নওশিন বলল,

“সবকিছুই আমরা সামলে নেব?”

আদনান বলল, ইনিয়ে বিনিয়ে না বলে সরাসরি বল।

“আজ কিন্তু জয়ীতা এসেছিল। ”

“আচ্ছা। এটা নেক্সট ইয়ার ভার্সিটির এডমিশন টেস্টে প্রশ্ন থাকবে নাকি!”

নওশিন বলল, উঁহু আসলে…..

আদনান নওশিন কে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“আসলে, নকলে কোনো ব্যাপারেই শুনব না৷ এখন ঘুমাব। ”

দুজনেই বিরসমুখে আদনান কে গুডনাইট জানালো।

****
জয়ীতা দাঁড়িয়ে আছে আদনান দের গেটের সামনে। আজ ই প্রতিজ্ঞা করেছিল যে আদনানের ব্যাপারে আর নাক গলাবে না। ও’কে নিয়ে ভাববেও না। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত নিলো একটু বদমায়েসশী করার। জয়ীতা মনে মনে বলল,

“হে আল্লাহ আজকে রহম করো৷ এরপর আর ব্যটার সামনে তো দূরে থাক, মুখও দেখব না। বাংলাদেশের খেলা শুরু হলেই কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাব। ”

জয়ী নওশিন কে ফোন করলো। নওশিন ফোন ধরে বলল,

“হ্যাঁ আপু পৌছে গেছ?”

“না। আসলে… আমি তোমাদের বাড়ির সামনে। একটু গেট টা খুলবে।”

***
তাসিন এসে আদনান কে ডাকতে লাগলো। আদনান দরজা খুলে ভীত গলায় বলল,

“কী হয়েছে?”

“জয়ীতা আপু এসেছে। তোর সঙ্গে একটু কথা বলবে।”

আদনান হকচকিয়ে গেল। বসার ঘরে গিয়ে দেখলো জয়ীতা বসে আছে। হাতে বিরিয়ানির বক্স। আদনান কে দেখে বিরিয়ানির বক্স টা বাড়িয়ে দিলো। আদনান হাত বাড়িয়ে নিলো। জয়ীতার সব গুলিয়ে গেছে। মাথা ভনভন করছে। যা কিছু চিন্তা করে এসেছে সব ভুলে গেছে। আদনান জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি এটা দিতে এসেছিলেন?”

জয়ীতা আমতা আমতা করে বলল, না। বাবলু সাহেব ফোন ধরছিলেন না কেন?”

আদনান হতভম্ব হয়ে গেল। রাত সাড়ে এগারোটায় বাবলুর ফোন নাম্বার নিতে এসেছে!

আদনান ঠান্ডা গলায় বলল,

“আমি বারন করেছিলাম তাই। কাল বলে দেব যেন ফোন ধরে। ”

“আচ্ছা। ”

আদনান আর কিছু বলল না। জয়ীতা বলল,

“বক্স টা দিন আমি চলে যাচ্ছি। ”

আদনান এতক্ষন বক্স নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলো। বক্স টা জয়ীতার হাতে দিতেই জয়ীতা বলল,

“আপনি কী বিরিয়ানি খাবেন?”

“না।”

“তাহলে আসি?”

“জি আসুন। ”

জয়ীতা সিড়ি অবধি গেল। পায়ের জুতা, কাঁধের ব্যাগ সব ই ঠিক ছিলো। তবুও তিনটা সিড়ি ভাঙতেই ধড়াম করে পড়ে গেল। বিরিয়ানির মাংস, আলু, শসা সব অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো সিড়িতে পড়ে গিয়ে।

আদনান, তাসিন, নওশিন তিনজনেই দৌড়ে এলো।

চলবে…..