গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৩৪+৩৫

0
334

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৪
________________

গালে হাত দিয়ে সোফার সামনে বসে আদ্রিজার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অভ্র। এত রাতে এইভাবে আদ্রিজার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার কি মানে এটাই যেন বুঝচ্ছে না সে। হঠাৎই অভ্র বলে উঠল,

‘ আচ্ছা ব্ল্যাকবেরি আমি তোমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে কেন আছি বলো তো? আর তাঁর থেকেও বড় কথা আমি ঘুমাতে কেন পারছি না। লাবণ্যকে পাই নি বলে আমার যে একটা আফসোস হওয়ার কথা ছিল সেটাও বা কেন ফিল হচ্ছে না আমার। কই বিয়ের দিনও তো খারাপ লেগেছিল তাহলে আজ কেন লাগছে না। আচ্ছা আমি কি আধও কোনোদিন লাবণ্যকে ভালোবেসেছিলাম?’

হুট করেই কিসব উল্টোপাল্টা বকছে অভ্র। এটাই যেন বুঝতে পারছে না সে। অভ্র আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। তারপর বললো,

‘ আমার খাটটা তো কম বড় নয়, তাহলে তোমার সোফায় ঘুমানোর কি দরকার ছিল বলো তো। পরে যখন কোমড় পিঠ ব্যাথা করবে তখন কি হবে শুনি? আর তোমার তো এখানে হচ্ছেও না একটু নড়লেই তো পড়ে যাবে নিচে।’

অভ্রের কথাটা বলতে দেরি কিন্তু আদ্রিজার নড়তে দেরি হলো না হুট করেই আদ্রিজা তাঁর মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকে দিতে লাগলো সঙ্গে সঙ্গে অভ্র ধরলো আদ্রিজার মাথাটা। খানিকটা ভড়কেও গিয়েছিল সে বিষয়টায়।’

অভ্র নিজেকে সামলে নিয়ে আদ্রিজার মাথাটা সুন্দর করে রাখলো সোফায়। তারপর বললো,

‘ দেখলে তো বলেছিলাম পরে যাবে। আসলেই বড্ড অদ্ভুত তুমি।’

হুট করেই কিছু একটা ভেবে আদ্রিজাকে কোলে তুলে নিলো অভ্র। তারপর বললো,

‘ তুমি বরং বিছানায় ঘুমাও আমি না হয় দূরে থাকবো তোমার থেকে। আর এমনিতেও আমাদের কাছাকাছি আসাটা আধও কতটুকু যুক্তিসম্মত জানা নেই আমার। আধও কোনোদিন আমরা কাছাকাছি আসবো কি না তাও জানি না।’

অভ্র আদ্রিজাকে সুন্দর মতো বিছানায় শুয়ে দিয়ে কাঁথা জড়িয়ে দিল গায়ে। তারপর তাদের মাঝ বরাবর একটা বড় কোলবালিশ রেখে ঘুমিয়ে পড়লো সে। এতক্ষণে যেন খচখচ করা ভাবটা কমলো তাঁর।’

___

সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো আদ্রিজার। চোখ খুলতেই সামনে অভ্রকে দেখে হকচকিয়ে উঠল সে, সাথে একটু কর্নারে ঝুঁকে থাকায় ধপাস করে খাট থেকে নিচে গড়িয়ে পড়লো আদ্রিজা।’

আচমকাই ঘুমের মধ্যে কারো পড়ে যাওয়ার আলাপ পেতেই চোখ খুলে তাকালো অভ্র। সামনেই আদ্রিজাকে পড়ে যেতে দেখে না চাইতেও হেঁসে ফেললো সে। অন্যদিকে অভ্রকে হাসতে দেখে চোখ মুখ খিঁচে তাকালো আদ্রিজা অভ্রের দিকে। তারপর বললো,

‘ আপনি হাসছেন কেন?’

উওরে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো অভ্র,

‘ বারে তুমি সকাল সকাল বিছানা থেকে পড়ে ডিগবাজি খাবে আর আমি হাসলেই দোষ।’

‘ দোষ নয়তো কি আর তাছাড়া আমি তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কি করে?’

‘ আমি কি জানি, নিশ্চয়ই ঘুমের মধ্যে হাঁটার তোমার রোগ আছে।’

‘ মটেও না আমার ওইধরনের কোনো রোগই নয় নেই।’

‘ ডিগবাজি খাওয়ার রোগ আছে তো, যাইহোক আমি এখন ঘুমাবো ডিসটার্ব করো না তো।’

বলেই কাঁথা জড়িয়ে আবারও ঘুমের মাঝে মগ্ন হলো অভ্র। আর আদ্রিজা জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রের মুখের দিকে।’

‘ আশ্চর্য! সে কখন অভ্রকে ঘুমের মধ্যে ডিসটার্ব করলো?’

মনে মনে বললো আদ্রিজা।’

____

সকাল ১০টার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাগ গুছাচ্ছে আদ্রিজা। কারন সে আর অভ্র এখন তাদের বাড়ি যাবে। আদ্রিজা প্রথমে ভেবেছিল অভ্র হয়তো যেতে চাইবে না তাদের বাড়ি। কিন্তু না আদ্রিজাকে অবাক করে দিয়ে অভ্রের বাবা দু’বার বলাতেই রাজি হয়ে যায় অভ্র। আদ্রিজার যেতে ইচ্ছে করছে না। তাঁর মায়ের ওপর এখনও রাগ আছে আদ্রিজার। এরই মাঝে অভ্র রুমের ভিতর ঢুকে বলে উঠল আদ্রিজাকে,

‘ তোমার কি হয়েছে ব্ল্যাকবেরি?’

উওরে আদ্রিজাও পিছন ঘুরে বললো,

‘ হুম এই তো আমি তৈরি।’

নেভি ব্লু কালার শাড়ি পড়েছে আদ্রিজা। চুলগুলো বেনুনি করে চশমা পড়েছে সে। আজ কতদিন পর নিজের আসল লুকিং এ ফিরে এসেছে আদ্রিজা। এতে বেশ কনফিটেবলও সে। আসলে যে যে রূপে অভ্যস্ত, সৌন্দর্য তো খানিকক্ষনের জন্যই ভালোবাসাটা হলো আসল। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো আদ্রিজা। তারপর ব্যাগ নিয়ে অভ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ চলুন তাহলে যাওয়া যাক।’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্রও বেশি না ভেবে বললো,

‘ হুম।’

অতঃপর বাবা মা আর আরুকে বিদায় জানিয়ে চললো অভ্র আর আদ্রিজা আদ্রিজাদের বাড়ি।’

___

রুমের কলিংবেল বাজাতেই আদ্রিজার মা এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলেই আদ্রিজা আর অভ্রকে একসাথে দেখে মুচকি হাসলেন উনি। সাথে বললো,

‘ তোরা এসেছিস, সেই কখন থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি, আয় ভিতরে আয়।’

বলেই অভ্র আদ্রিজাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন উনি। অভ্র আদ্রিজাও ঢুকলো ভিতরে। তারপর গিয়ে বসলো তাঁরা সোফায়। অাদ্রিজার মা দ্রুত লেবুর শরবত বানিয়ে এগিয়ে দিল অভ্র আর আদ্রিজার গিয়ে। তারপর অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন উনি,

‘ আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো বাবা?’

উওরে অভ্রও শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বললো,

‘ না অসুবিধা আবার কিসের।’

এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিজার বাবা। অভ্রকে দেখেই মুচকি হাসলেন তিনি। গিয়ে বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বললেন,

‘ কেমন আছো অভ্র?’

উওরে অভ্রও বেশি না ভেবে হাল্কা হেঁসে আদ্রিজার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ জ্বী ভালো আপনি?’

‘ হুম ভালো। তোমার কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ অভ্র।’

‘ ছিঃ ছিঃ এভাবে বলছেন কেন। আর পুরনো কথা বাদ দিন যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে।’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজার বাবা আর কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না।’

ওভাবে কিছুক্ষন কথোপকথন চললো অভ্রের সাথে আদ্রিজার বাবা মার। হঠাৎই আদ্রিজার মা বলে উঠল আদ্রিজাকে,

‘ যা আদ্রিজা অভ্রকে ঘরে নিয়ে ফ্রেশ হ, তারপর না হয় খেতে দিচ্ছি।’

উওরে আদ্রিজাও বেশি না ভেবে বললো,

‘ ঠিক আছে,,

অভ্র আদ্রিজা চলে গেল। রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো অভ্র আর আদ্রিজা। আজ ক’দিন পর আদ্রিজা ঢুকলো তাঁর রুমে। রুমে ঢুকতেই শ্রাবণে সাথে কাটানো ফোনের মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়লো আদ্রিজার। তবে বেশি ভাবলো না আর এসব নিয়ে যত ভাববে ততই খারাপ লাগবে আদ্রিজার। আদ্রিজা তাঁর ব্যাগটা নিয়ে রাখলো বিছানার পাশে তারপর বললো,

‘ আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন, মা কিছুক্ষনের মধ্যেই খাবার খেতে ডাকবে আবার।’

অভ্র শুনলো আদ্রিজার কথা বিছানায় বসতে বসতে বললো,

‘ তোমার রুমটা তো বেশ বড়। সেদিন বিয়েতে রুমটা ওতোটা খেয়াল করি নি। বেশ পরিপাটিও বটে।’

‘ ওসব তো মা করেছে বলে, এমনিতে আসলে দেখতেন রুমটা একটা ময়লার কারাখানা ছিল।’

হেঁসে ফেললো অভ্র। বললো,

‘ লাইক সিরিয়াসলি তুমি তোমার রুম ময়লার কারখানা বানিয়ে রাখো।’

‘ আসলে হয়েছে কি রুমটা অগোছালো না থাকলে রুমটা যে আমার এটা ফিল আসে না।’

‘ অগোছালো থাকলে ফিল আসে বুঝি।’

উওরে দাঁত দেখিয়ে হাসলো আদ্রিজা। তারপর বললো,

‘ কিছুটা।’

এমন সময় হঠাৎই সামনের বিল্ডিং এর তিনতলার বেলকনির থেকে গিটারের শব্দ শোনা গেল। সাথে সাথে আদ্রিজা উত্তেজিত হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

‘ ঈশান গান গাইছে,

হুট করেই আদ্রিজার মুখে ঈশান নামের কোনো ছেলের নাম শুনে হকচকিয়ে উঠলো অভ্র। অবাক হয়ে বললো,

‘ এই ঈশানটা আবার কে?’

#চলবে…

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৫
________________

ঘুম চলে যায়,
তোমার চোখে বেড়াতে
পারি না তাঁকে,কোনোভাবে ফেরাতে!'(২)
আমার মন তোমার মনের পাড়ায় বোকাসোকা হয়ে আড়ালে আবডালে দাঁড়ায়।’
তোমাকে ছোঁয়ার নেই তো আমার সাধ্য দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য।’
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শো
কষ্টের বোঝা, বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ।’
ঘুম চলে যায়,
তোমার চোখে বেড়াতে
পারি না তাঁকে,কোনোভাবে ফেরাতে!’

গিটার হাতে নিজের বেলকনিতে দেয়াল ঘেঁষে বসে গানটা গাইছে ঈশান। আর ঈশানের গান শুনে অপরপ্রান্তের নিজের রুমের বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো আদ্রিজা। ঈশান হলো আদ্রিজাদের পাশের বিল্ডিংয়ের তিনতলায় থাকা প্রতিবেশী। আদ্রিজার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র সে। খুব ভালো গান গায়। মাঝে মধ্যে গিটার হাতে বেলকনিতে বসে গান গাইতো ঈশান। আদ্রিজার বেলকনি আর ঈশানের বেলকনিটা খুব কাছাকাছি হওয়ায় আদ্রিজার রুম থেকে স্পষ্ট শোনা যায় গান। বেলকনিতে আসলেই পুরোই কাছ থেকে। আদ্রিজা প্রায় সময়ই ঈশানের গান গাওয়ার আওয়াজ পেলেই ছুটে আসে বেলকনিতে যেমন আজ এলো। আজ অনেকদিন পরই ঈশান গান গাইছে। আদ্রিজা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো ঈশানের মুখের দিকে। ঈশান আবারও গিটার বাজাতে বাজাতে গেয়ে উঠল,

‘ বায়ুবীয় প্রেম আকাশ পাতাল সমতল
বাস্তবতায় খাবিখাব শুধু হারায় না তাঁর মনোবল!'(২)
তোমাকে ছোঁয়ার নেই তো আমার সাধ্য দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য।’
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শো
কষ্টের বোঝা, বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ।’
ঘুম চলে যায়,
তোমার চোখে বেড়াতে
পারি না তাঁকে,কোনোভাবে ফেরাতে!’

গেয়েই আবারও গিটার বাজাতে লাগলো ঈশান। আদ্রিজা খুব মুগ্ধ নয়নে সাথে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে। এরই মাঝে সেখানে এগিয়ে আসলো অভ্র। আদ্রিজাকে দেখেই বললো সে,

‘ ব্ল্যাকবে…

অভ্রের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আদ্রিজা অভ্রের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,

‘ হুস। কথা বইলেন গানটা শুনে নেই।’

বলেই আবার মনোযোগ দিলো আদ্রিজা ঈশানের গান আর গিটারের শব্দের দিকে। আর অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার দিকে। ঈশান নামের ছেলেটির গানটায় যেন একটু বেশি মগ্ন হলো আদ্রিজা। ভাবলো অভ্র। তক্ষৎনাত চলে আসলো সে সেখান থেকে। কেন যেন বিষয়টা ভালো লাগলো না তাঁর।’

অন্যদিকে ঈশান আবার ঠোঁট নাড়িয়ে গাইতে লাগলো,

‘ কেন যে তোমার সাথে মনের এত টান
কথা হয় নাই দেখেছি শুধু অভিমান!'(২)
তোমাকে ছোঁয়ার নেই তো আমার সাধ্য দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য।’
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শো
কষ্টের বোঝা, বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ।’
ঘুম চলে যায়,
তোমার চোখে বেড়াতে
পারি না তাঁকে,কোনোভাবে ফেরাতে!’

অতঃপর ঈশানের গান শেষ হলো। ঈশানের গান শেষ হতেই আদ্রিজা দু’হাতে তালি বাজিয়ে বললো ঈশানকে,

‘ গানটা কিন্তু খুব সুন্দর ছিল ঈশান।’

সঙ্গে সঙ্গে ঈশান অবাক হলো, গানের মগ্নতায় আদ্রিজাকে এতক্ষণ খেয়াল করে নি সে। ঈশান গিটারটা নিচে রেখে উঠে দাঁড়ালো তারপর বেলকনির রেলিংয়ের সামনে এসে বললো,

‘ আরে আদ্রিজা যে, কবে এলে তুমি?’

‘ এই তো মাত্র, তা এতদিন কোথায় ছিলে তোমার তো খোঁজই ছিল না কতদিন তোমার গান শুনিনি বলো তো, খুব মিস করেছি কিন্তু।’

আদ্রিজার কথা শুনে মুচকি হাসলো ঈশান। বললো,

‘ একটু খুলনা গিয়েছিল দরকারি কাজে। যাইহোক তোমার অবস্থা কি বলো বিয়ে হয়ে গেছে শুনলাম।’

উওরে আদ্রিজাও নিরদ্বিধায় বলে উঠল,

‘ ওই আর কি।’

বলেই এটা ওটা নিয়ে গল্প জুড়ে দিলো আদ্রিজা আর ঈশান। ঈশানের সাথে আদ্রিজার বেশ ভালো সম্পর্ক। আদ্রিজার জীবনে অভ্রের আগে আর বন্ধুমহলের পরে এই একমাত্র ছেলে যার সাথে ফ্রি মাইন্ডের যদিও শ্রাবণের বিষয়ে কিছু জানে না ঈশান।’

____

রুমের মধ্যে পায়চারি করছে অভ্র, খানিকটা বিরক্ত ফিল হচ্ছে তাঁর অভ্র বুঝচ্ছে না ঈশানের সাথে এত কথা কি নিয়ে হচ্ছে আদ্রিজার সাথে। অভ্র আবার তাকালো আদ্রিজার দিকে, মেয়েটা বেশ হেঁসেই কথা বলছে ঈশানের সাথে। মেয়েটা কি ভুলে গেছে সে এখন বিবাহিত।’

চরমভাবে রাগ নিয়ে টাওয়াল হাতে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল অভ্র। ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অভ্রের। কিন্তু রাগ হওয়ার কি আছে এটাই যেন বুঝচ্ছে না অভ্র, কথাই তো বলছে শুধু তাহলে। আর লুকিয়ে তো বলছে না তাঁর সামনেই তো কথা বলছে।’

অভ্র বেশি ভাবলো না মাথা ভনভন করছে তাঁর।’

অন্যদিকে,

আদ্রিজারা আচমকাই ঈশানের মা ডাকতেই বলে উঠল ঈশান,

‘ এখন যাই বুঝলে মা ডাকছে? আছো কয়দিন এখানে?’

‘ কালই চলে যাবো।’

আদ্রিজার কথা শুনে খানিকটা অবাক হয়ে বললো ঈশান,

‘ কালই চলে যাবে।’

‘ হুম আসলে অভ্রের অফিস আছে তাই আর কি।’

‘ ওহ আচ্ছা। তাহলে হয়তো আর দেখা নাও হতে পারে ভালো থেকো আর তোমার বিবাহিত জীবনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো ভালো থেকো।’

উওরে মুচকি হেঁসে বললো আদ্রিজা,

‘ তুমিও ভালো থেকো’

মুচকি হাসলো ঈশান। অতঃপর আদ্রিজাকে বাই জানিয়ে চলে গেল সে। আদ্রিজাও কিছুক্ষন ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসলো রুমে। আজ বহুদিন পর ঈশানের গান শুনে বেশ ভালো লাগলো তার আর মনটাও ফুড়ফুড়ে হলো যেন।’

আদ্রিজা রুমে ঢুকতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাহিরে আসলো অভ্র। অভ্রকে দেখেই চোখাচোখি হলো দুজনের। আদ্রিজা তক্ষৎনাত চোখ সরিয়ে নিলো অভ্রের থেকে। আর অভ্র আদ্রিজাকে দেখেই একটা গম্ভীর ভাব নিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,

‘ তাহলে ফাইনালি তোমার আর তোমার প্রতিবেশী ঈশানের বকবকানি শেষ হলো।’

‘ এভাবে বলবেন না জানেন কতদিন পর ঈশানের গান শুনলাম। বেশ ভালে গান গায় ও।’

উওরে গম্ভীর ভাব নিয়েই বললো অভ্র,

‘ হুম সত্যি অনেক ভালো গান গায়।’

‘ তাহলে বলছি কি। উনি গিটারও খুব ভালো বাজায়। জানেন আমারও না একটা সময় গিটার বাজানো শেখার ইচ্ছে ছিল। ঈশান বলেও ছিল শেখাবে আমায়। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো সময় করে শিখাতে পারলো না। যাইহোক আপনি বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। মা এক্ষুনি ডাকতে আসবে কিন্তু।’

বলতে বলতে চলে গেল আদ্রিজা। আর অভ্র আনমনে বলে উঠল,

‘ তোমার কি গিটার খুব বেশি পছন্দ ব্ল্যাকবেরি?’

মাঝপথে কেটে গেল একরাত। পরেরদিন সকালেই আদ্রিজার বাবা মাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে অভ্র আদ্রিজা অভ্রদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আদ্রিজার বাবা, মা অভ্র আদ্রিজাকে রাখতে চেয়েছিল খুব। কিন্তু অভ্র আদ্রিজা কেউ থাকতে চায় নি, অভ্রের অফিস আছে এমনিতেও এই বিয়ের চক্করে অনেক লস হয়েছে তাঁর। আদ্রিজাকে রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও পরে কেন যেন রাখে নি অভ্র। আর আদ্রিজাও জোর করে নি।’

বর্তমানে গাড়ি করে যাচ্ছে অভ্র আর আদ্রিজা। অভ্র ড্রাইভ করছে আর পাশেই আদ্রিজা চুপচাপ বসে আছে। মনটা হাল্কা খারাপ তাঁর। আদ্রিজার কোলে আছে আদ্রিজার পুঁচকে সেই বিড়াল ছানাটা। এটাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে আদ্রিজা। আদ্রিজার বিয়ে থেকেই বিড়ালটা একদম নিরিবিলি হয়ে গেছে। তারপর আদ্রিজা চলে আসায় আরো যেন মনমরা আর চুপচাপ হয়ে গেছে কিটি। আদ্রিজা তো কাল গিয়ে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না এটাকে। অনেক খুঁজে পরে দেখে খাটের তলায় বসেছিল চুপচাপ। বিয়ের চক্করে তো প্রায় ভুলতেই বসে ছিল সে কিটিকে।কিটির অবস্থা দেখে ভীষণই খারাপ লেগেছিল আদ্রিজার। একদম শুকিয়ে গেছে। আদ্রিজা অনেক ভেবে অভ্রকে বলে এটাকেও তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অভ্রও রাজি হয়ে যায় আর তাদের সঙ্গে নিয়ে আসে।’

অতঃপর নানা কিছু ভাবনায় মগ্ন হয়েই এগিয়ে চলছিল আদ্রিজা। হঠাৎই আদ্রিজার ভাবনার মাঝে বলে উঠল অভ্র,

‘ একটা কথা বলবো ব্ল্যাকবেরি?’

খানিকটা চমকে উঠলো আদ্রিজা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ জ্বী বলুন,

‘ গিটার খুব পছন্দের তোমার?’

খানিকটা বিস্মিত প্লাস অবাক হলো আদ্রিজা অভ্রের কথা শুনে। বিস্মিত চোখ নিয়ে অভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ মানে,

‘ মানে আবার কি তোমার গিটার বাজাতে ভালো লাগে?’

‘ ভালো লাগে বলতে আমি শিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু বললাম না সময় হয়ে ওঠে নি।’

‘ সুযোগ পেলে শিখবে কি?’

এবার যেন আরো বেশি অবাক হলো আদ্রিজা। অবাক হয়েই বললো সে,

‘ কে শেখাবে আমায়?’

‘ কে শেখাবে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো তোমার গিটার বাজানো শেখার কতটা আগ্রহ আছে সেটা।’

‘ আসলে আমার গিটার বাজার বিষয়টা হলো নিছকই শখের বসে। যবে থেকে ঈশানের গিটার বাজানো দেখেছি তবে থেকেই ওটাকে বাজানোর ইচ্ছে আছে খুব। কখনো কাছ থেকে কখনো ছোঁয়াও হয় নি বুঝলেন।’

উওরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো অভ্র,

‘ হুম বুঝেছি।’

অভ্রের কথা শুনে আর কিছু বললো না আদ্রিজা চুপ করেই রইলো। সাথে এগিয়ে চললো মুক্ত নীল রঙা মিশ্রিত আকাশের নিচে থাকা পিচঢালা রাস্তা বেয়ে।’
____

সময় কাটছিল সময়ের মতো। প্রায় সপ্তাহ খানেক কেটে গেল আদ্রিজা অভ্রের বিয়ের। আদ্রিজাও এখন ভার্সিটি যাওয়া শুরু করে দিয়েছে আজ দু’দিন হলো আদ্রিজা ভার্সিটি যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিল অভ্রের বাবা মা হয়তো তাঁকে পড়াশোনা করতে দিবে না কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো তাঁরাই বলেছে আদ্রিজাকে পড়াশোনাটাকে কন্টিনিউ করতে। আর আদ্রিজা খুশি হয়ে হয়ে করছে সবটা।’

বিকেল পাঁচটা।’

বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিল আদ্রিজা। এমন রুমে অভ্র ঢুকে ডাকলো তাঁকে। বললো,

‘ ব্ল্যাকবেরি কোথায় তুমি?’

আদ্রিজা তক্ষৎনাত দৌড়ে এগিয়ে গেল সামনে অভ্রের হাতে কিছু দেখেই অবাক হয়ে বললো,

‘ এটা দিয়ে কি করবেন?’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️