#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৬
________________
হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা অভ্রের দিকে কারন অভ্রের হাতেই রয়েছে একটা গিটার। আদ্রিজা ভাবতেও পারে নি এই মুহূর্তে অভ্র গিটার নিয়ে আসবে রুমে। আদ্রিজা আবারও প্রশ্ন করলো অভ্রকে। বললো,
‘ এটা দিয়ে কি হবে?’
উওরে অভ্র গিটারটা বিছানার উপর রাখতে রাখতে বিস্মিত হয়ে বললো,
‘ গিটার দিয়ে মানুষ কি করে?’
‘ না মানে বাজায় কিন্তু আপনি কি করবেন বাজাবেন?’
‘ হুম বাজাবো তোমায় নিয়ে বাজানো।’
অভ্রের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আদ্রিজা,
‘ কি?’
‘ তোমার মাথা, শোনো আমার এখন অফিস আছে পড়ে সময় বুঝে এটা বাজাবো ঠিক আছে।’
বলেই চলে গেল অভ্র। আর আদ্রিজা জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রের যাওয়ার পানে। যেন অভ্র যা বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল।’
আদ্রিজা গিটারটাকে হাত দিয়ে ছুলো একবার, এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করলো তাঁর মাঝে। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বিষয়টা দেখলো অভ্র। আনমনায় মুচকি হেঁসে এগিয়ে গেল সে নিজের গন্তব্যের দিকে।’
সেদিনের মতো গিটারটা ওভাবেই থাকে কারন কাজের চাপটা সেদিন বেশি থাকায় অভ্র লেট করে বাড়ি ফিরে। আদ্রিজাও ভাবে নি বেশি।’
পরেরদিন সকালে,
ব্রেকফাস্ট টেবিলে গোল হয়ে বসে আছে আদ্রিজা, অভ্র, আরু, আরুর বাবা আর আরুর মা। এদের সাথে তুষারও আছে আজ। কাল রাতেই এসেছিল সে, তবে থাকবে না আর ব্রেকফাস্ট সেরেই চলে যাবে তুষার না খেয়েই যেতে চেয়েছিল কিন্তু অভ্রের মা যেতে দেয় নি তাঁকে।
বর্তমানে পিন পিনে নীরবতার মাঝেই খাবার খাচ্ছিল সবাই। টুকিটাকি কাটা চামচের শব্দ ব্যতীত তেমন কোনো শব্দই শোনা যাচ্ছিল না আর। হঠাৎই এই নীরবতার দরি ছিন্ন করে বলে উঠল অভ্রের বাবা,
‘ আমরা কিছুদিনের জন্য তোমাদের দাদুবাড়ি যাচ্ছি অভ্র, ভেবেছিলাম আদ্রিজাকেও আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাবো কিন্তু পরে ভাবলাম তোমায় ছাড়া প্রথমবারে একা নেওয়াটা ভালো দেখায় না। তোমার কি কাজের চাপ খুব বেশি অভ্র।’
উওরে খাবার খেতে খেতেই বলে উঠল অভ্র,
‘ তিন চারদিন চাপ আছে বাবা তারপর ঠিক আছি।’
‘ ঠিক আছে তুমি না হয় তিন চারদিন পর একদিনের জন্য হলেও আদ্রিজাকে নিয়ে ওখানে এসো। তোমার দাদুর শরীরটা ঠিক নেই একটু।’
উওরে অভ্র কিছুক্ষন ভেবে বললো,
‘ ঠিক আছে, আরুকে নেবে কি?’
অভ্রের কথা শুনে আরু উত্তেজিত হয়ে বললো,
‘ নেবে না আমি যাবো সবার আগে। কতদিন দাদু বাড়ি যাই না বলোতো।’
‘ তাইলে আর কি। আমি বলছিলাম কি আদ্রিজাকে সঙ্গে নিয়ে যাও একা একা বাড়িতে থাকবে আমি তো আর সারাদিন বাড়িতে থাকছি না।’
‘ তোমায় তো বললামই অভ্র,নতুন বউ তোমায় ছাড়া একা নেওয়াটা ঠিক দেখায় না।’
উওরে নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালো অভ্র তারপর চেয়ার থেকে কোটটা হাতে নিয়ে টিসু দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে বললো,
‘ ঠিক আছে তোমরা যা ভালো মনে করো?’
অতঃপর অভ্র বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আর অভ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো সবাই। আদ্রিজাও তাকিয়ে ছিল তবে বেশি ভাবলো না। কিছুক্ষনের মাঝে তুষারও চলে গেল। আজ আরু চলে যাবে তাই আর ভার্সিটি গেল না কেউই। আদ্রিজাও যায় নি। সবাই চলে যাবে শুধু সে আর অভ্রই থাকবে। অভ্রদের কাজের মহিলাটাও ছুটি নিয়েছে দু’দিন আগে। ধুর! ভালো লাগছে না আদ্রিজার।’
সকালের মতো সব নাস্তাপাতি সেরে আরু, আরুর মা আর আরুর বাবা তৈরি হতে লাগলো দাদুদের বাড়ির যাওয়ার জন্য। একটু দূরেই বাড়িটা তাদের সিলেটের ওদিকটায়। তাই তাড়াতাড়ি যাবে আরুরা আরুদের দাদুর বাড়ি যাওয়ার পথে সিলেটের চা বাগানের কিছু অংশ পড়ে। অসাধারণ সৌন্দর্য আর মৌলাত্বে ভরা। এছাড়া দাদুর বাড়িটা ওখানটাও ভীষণ সুন্দর। সহজে তেমন একটা যাওয়া পরে না আরুদের। তাই তো এখনকার যাওয়াটা ঠিক মিস করতে চাইছে না আরু। আর এমনিতেও ভাইয়া আর আদ্রিজার মাঝখানেও ঠিক থাকতে চাইছে না সে।’
এইরকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে আর নিজেদের গ্রামের বর্ননা দিতে দিতে নিজের রুমে তৈরি হচ্ছে আরু। আর তাঁর বিছানায় বসে চুপচাপ আরুর বকবকানি শুনছে আদ্রিজা। হঠাৎই আদ্রিজা বলে উঠল,
‘ তোদের দাদু বাড়ি এত সুন্দর কই আগে তো বলিস নি?’
‘ আসলে সহজে তেমন একটা যাওয়া হয় না ওখানে তাই প্রায় ভুলে যাই। তবে ভাইয়া তো বললো দু’চার দিন পর তোকে নিয়ে যাবে গেলে দেখিস জায়গাটা কত সুন্দর।’
‘ হুম বুঝেছি।’
হাল্কা মন খারাপ করে বলে আদ্রিজা। আদ্রিজাকে মন খারাপ করতে দেখে বলে উঠল আরু,
‘ আরে মন খারাপ করছিস কেন চারদিন পর তুইও যাচ্ছিস তো আমাদের কাছে।’
‘ আর এই চারদিন কি হবে, আমি একা একা এতবড় বাড়িতে কি করে থাকবো? তুই জানিস না আমার একা বাড়িতে থাকতে ভয় লাগে।’
উওরে হাসলো আরু। তারপর বললো,
‘ তুই একা কই ভাইয়া আছে তো।’
‘ উনি তো থাকবে রাতে, আর বাকি সময়।’
‘ কেন তোর কিটি আছে না।’
‘ 😒😒😒
‘ ওভাবে তাকাস না বোন ভয় পাই তো।’
উওরে আদ্রিজা কিছু বললো না।’
____
প্রায় আধ ঘন্টা পর পরই তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লো আরু, আরুর মা আর আরুর বাবা। আরু তো খুশির ঠ্যালায় আগে গিয়ে গাড়িতে আসে আছে। বর্তমানে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরুর মা আর আরুর বাবা। আরুর মা বলে উঠল আগে,
‘ শোন আমার ছেলের যত্ন নিস সাথে নিজেরও আর অভ্রের সময় হলেই চলে আসিস অভ্রের সাথে।’
উওরে মাথা নাড়িয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ ঠিক আছে মা।’
এবার অভ্রের বাবা বললো,
‘ ভালো থেকো আদ্রিজা।’
উওরে আদ্রিজা মুচকি হেঁসে বললো,
‘ তোমরাও ভালো থেকো। আর গিয়ে ফোন করো।’
‘ ঠিক আছে।’
বলেই চলে গেল আরুর বাবা আর আরুর মা। আদ্রিজা কিছুক্ষন সবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট শ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে দিলো।’
তারপর সারাদিন এটা ওটা করে সময় কেটে গেল আদ্রিজার। তবে একাকিত্বে তেমন একটা ভালো লাগে নি তাঁর।’
সন্ধ্যা_৭ঃ০০টা,,
সোফায় বসে রিমুট দিয়ে টিভির চ্যানেল পাল্টাচ্ছিল আদ্রিজা। চরম বিরক্ত লাগছে তাঁর। একা এত বড় বাড়িতে কেমন গা ছমছম করছে তাঁর। তবে আপাতত বেশি ভাবলো না আদ্রিজা, চুপচাপ মন মতো টিভি দেখতে ছিল সে। কফির মগটা ছিল হাতে। হঠাৎই একটা হিন্দি মুভিতে চোখ আঁটকে যায় আদ্রিজার। আদ্রিজা তক্ষৎনাত মুভিটা ছেড়ে টিভির ভলিউমটা হাল্কা বাড়িয়ে রিমুটা রাখলো পাশে। তারপর কফি খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো সে। প্রায় দু’ঘন্টার মুুভির শেষ হয়ে অন্য আরেকটা মুভি ছেড়েছে টিভিতে। আর মুভিটা হলো হরর মুভি। প্রথমে জিনিসটা না বুঝলেও পরক্ষণে বুঝতে পেরে হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে আদ্রিজার। কিন্তু এই মুহূর্তে মুভির অর্ধেক দেখে যদি সে ঘুমায় তাহলে সারারাত তো ঘুম আসবেই না উল্টো ভয় নিয়ে ধমকে থাকবে সারাদিন। তাই খানিকটা সাহস জুগিয়ে চুপচাপ মুভিটা দেখতে লাগলো আদ্রিজা।’
এভাবে কেটে গেল পুরো পঞ্চান্ন মিনিট। হঠাৎই আচমকাই লোডশেডিং হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে আঁতকে উঠলো আদ্রিজা। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা। আদ্রিজা শুরুতেই তাঁর মোবাইলটা সাঁতরে বের করলো। লাইট অন করে আশেপাশে তাকালো সে। খুঁজতে লাগলো মোমবাতি। এখন কি করবে এমনিতেও ভয়ে অবস্থা শেষ তারওপর লোডশেডিং।
এরই মাঝে আকাশটাও ডেকে উঠলো ভয়ংকরভাবে। এবার আদ্রিজা সত্যি সত্যিই শেষ। এটারই বাকি ছিল। আদ্রিজা ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ তোদেরও আজই নামা লাগলো। আর সময় পেলি না।’
অতঃপর বলতে না বলতেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আদ্রিজা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে হঠাৎই পায়ে কিছু বাজতেই আদ্রিজা ভয়ের চোটের দরজার দিকে দৌড়ে যেতে যেতে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
‘ মা ভূত?’
এরই মাঝে দরজা খুলে ভেজালো অবস্থায় ঘরের ভিতর ঢুকলো অভ্র। আদ্রিজা অভ্রকে দেখেই আট পাঁচ কিছু না ভেবেই ধুম করে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে সাথে বলতে লাগলো,
‘ ভূত ভূত ভূত, এখানে ভূত আছে।’
আচমকাই আদ্রিজার এমন এটাক সাথে ভূত ভূত বলে চেঁচানো শুনে থমকে গেল অভ্র। বললো,
‘ কিসব বাজে বকছো ব্ল্যাকবেরি আর দরজা খুলে রেখেছিলে কেন?’
‘ ওসব বাদ দিন আগে এই বাড়ি ছেড়ে চলুন এখানে ভূত আছে।’
‘ মাথা গেছে নাকি ভূত আসবে কোথা থেকে,
অভ্রের কথা শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আদ্রিজা,
‘ বিশ্বাস করুন আমি দেখেছি ওখানে আমার পায়ে যেন কি একটা বেজেছে।’
‘ ঠিক আছে চলো গিয়ে দেখি।’
‘ না না আমি যাবো না।’
‘ আরে কিছু হবে না চলো আমার সাথে,
‘ আমার ভয় হচ্ছে,
‘ আরে কিছু হবে না আমি তো আছি।’
অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজাও অভ্রকে ছেড়ে তাকালো অভ্রের মুখের দিকে। তারপর বললো,
‘ সত্যিই দেখবেন।’
‘ হুম চলো,
বলেই আদ্রিজার হাত ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো অভ্র। এরই মাঝে কারেন্ট চলে আসলো। অভ্র তা দেখেই বললো,
‘ এই তো কারেন্টও চলে এসেছে চলো গিয়ে দেখি কোথায় আছে ভূত?’
‘ হুম চলুন,
বলেই দু’কদম এগিয়ে চললো অভ্র আর আদ্রিজা। আদ্রিজা তো ভয়ের চোটে অভ্রের শার্টের হাতা খামচে ধরে আছে। হঠাৎ কিছু একটা দেখেই অভ্র অবাক হয়ে বললো,,
‘ লাইক সিরিয়াসলি! তুমি এটাকে ভূত ভেবেছিলে ব্ল্যাকবেরি?’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️
#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৭
________________
ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা সামনের প্রাণীটার দিকে। সে ভাবতেও পারে নি তারই পোষা কিটি বিড়ালটাকে দেখে ভয়ের চোটে ভূত ভূত বলে চিল্লাবে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তাঁর। কতক্ষণ আগেই অভ্রকে নিয়ে ভূত খুঁজতে এসে নিজের পোষা বিড়াল কিটিকে দেখে ভড়কে গেল অভ্র। আদ্রিজাও খানিকটা বিস্মিত হয়েছে। অভ্র তো বলেই ফেলেছে ‘লাইক সিরিয়াসলি! তুমি এটাকে ভূত ভেবেছিলে ব্ল্যাকবেরি?’
অভ্রের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে ঠিক কি বলবে এটাই ভাবছে আদ্রিজা। এদিকে অভ্র আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলে উঠল,
‘ কি হলো ব্ল্যাকবেরি কোথায় গেল তোমার ভূত?’
সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো আদ্রিজা। তক্ষৎনাত অভ্রের হাতটা ছেড়ে বলে উঠল সে,
‘ ইয়ে না মানে হয়েছে কি?’
‘ হুম বুঝেছি তোমার ইয়ে না মানে। নিজের বিড়াল দেখেই ভয় পাও তুমি। যাগ গে বাদ দেও। রান্না করেছো?’
উওরে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো আদ্রিজা,
‘ হুম।’
‘ ঠিক আছে তুমি খাবার বারো আমি আসছি?’
অভ্রের কথা শুনে খানিকটা ভয় মাখা মুখ নিয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ কোথায় যাবেন আপনি?’
উওরে খানিকটা বিস্মিত হয়ে বললো অভ্র,
‘ কোথায় আবার উপরে ফ্রেশ হবো তো।’
‘ আমিও যাই আপনার সাথে আসলে হয়েছে কি বাড়িতে কেউ না থাকায় মুভি দেখতে ছিলাম প্রথমটা ভালো দেখেছি কিন্তু সেকেন্ডটা ভূতের ছিল। এখন বার বার খালি মনে হচ্ছে ওই ভূতটা আমার আশেপাশেই আছে।’
আদ্রিজার কথা শুনে ভরাট কন্ঠ নিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো অভ্র,
‘ ওহ এতক্ষণে বুঝলাম তোমার কিটিকে দেখে ভয় পাওয়ার কারন। যা দেখতে পারো না তা দেখো কেন?’
উওরে খানিকটা ভিতু স্বরে বললো আদ্রিজা,
‘ বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে দেখি নি। প্রথমে বুঝি নি ওটা হরর মুভি হবে যতক্ষণে বুঝেছি ততক্ষণে আমার কাম সারছে।’
‘ হুম বুঝেছি।’
উওরে বিস্মিত কন্ঠে বললো আদ্রিজা,
‘ কি বুঝেছেন?’
আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র খানিকটা আদ্রিজার দিকে ঝুঁকে কানের সামনে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বললো,
‘ এই যে তুমি ভয় পাচ্ছো ব্ল্যাকবেরি?’
সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠলো আদ্রিজা। ভয়ে মুখটা শুকিয়ে গেল তার। অাদ্রিজার রিয়েকশন দেখে হেঁসে ফেললো অভ্র। তারপর বললো,
‘ কুল ডাউন ব্ল্যাকবেরি। ঠিক আছে চলো, তারপর না হয় একসাথেই খাওয়া যাবে।’
‘ আপনি আমায় এইভাবে ভয় দেখাচ্ছেন কেন?’
‘ ভয় কোথায় দেখালাম।’
‘ মাত্রই তো দেখালেন।’
‘ আচ্ছা যাও ভয় দেখাবো না এখন চলো তাড়াতাড়ি ভিজালো অবস্থায় আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো।’
অভ্রের কথা শুনে এতক্ষণে অভ্রের ভিজালো শার্টটা খেয়াল করলো অাদ্রিজা। খানিকটা বিস্মিত হয়ে বললো,
‘ আপনি ভিজে গেছেন আগে বলবেন না তাড়াতাড়ি চলুন নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে তো।’
‘ তোমার জন্যই তো যাই হোক চলো এখন,
‘ আপনিও চলুন।’
‘ তুমি আগে হাঁটো।’
‘ আগে হাঁটার কি আছে পাশাপাশি হাঁটলেই তো হয়।’
আদ্রিজার কথা আর রিয়েকশন দেখে অভ্র বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে ভয়ংকরভাবে ভয়ে টুইটুম্বর হয়ে আছে। তবে আপাতত বেশি ভাবলো না অভ্র। ফিস ফিসিয়ে বললো,
‘ ঠিক আছে চলো,
সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজা কেঁপে উঠে থমথমে গলায় বললো,
‘ আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?’
হেঁসে ফেললো অভ্র। মেয়েটাকে ভয় দেখাতে দারুণ লাগছে তাঁর।’
অতঃপর আদ্রিজা আশেপাশে তাকাতে তাকাতে অভ্রের হাত ধরেই এগিয়ে চললো সিঁড়ির ওপর। মনের ভিতর খুব ভয় জমেছে তাঁর। এর একমাত্র কারন পুরো মুভিটা শেষ করতে পারে নি আদ্রিজা। পুরো মুভিটা দেখতে পারলে এতটা ভয় করতো না তাঁর। আবার রাতে দেখেছে মুভি এর কারণেও ভয়টা একটু বেশিই হচ্ছে।’
____
ওয়াশরুমের বাহিরে পায়চারি করছে আদ্রিজা। ভয়ে হাত পা শেষ তাঁর। একই তো হরর মুভির ভূতের মুখটা বার বার চোখের সামনে ভাসছে তাঁরওপর বাহিরে মেঘ ডাকছে, রুম থেকেও কেমন শাঁ শাঁ শব্দ হচ্ছে আর এই সবকিছুতেই আদ্রিজার বর্তমানে চরম লেভেলের ভয় হচ্ছে। আদ্রিজা ভয়ে ভয়ে আবারও ডাকলো অভ্রকে বললো,
‘ আপনার কি হয় নি অভ্র?’
উওরে ওয়াশরুমে থাকা অভ্র বলে উঠল,
‘ মাত্রই তো ঢুকলাম এরই ভিতর হয় কিভাবে? আমি গোসল সেরে একেবারে বের হবো।’
অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা চোখ বড় বড় করে বললো,
‘ ওরে বাবা তাতে তো অনেকসময় ওতক্ষণ আমি রুমে একা থাকবো।’
বলতে বলতে রুমের মধ্যে ঘুরে ঘুরে পায়চারি করতে লাগলো আদ্রিজা। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে আদ্রিজার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল আজ করলো সে। কি দরকার ছিল টিভির ওই মুভিটা দেখার এতই যখন ভূত দেখার শখ জাগছিল তাহলে টিভির বাহিরে বসে কেন দেখছিলি ভিতরে গেলেই তো পারতি মাইয়া ইডিয়েট, খচ্চর, বান্দর,
লনচেঞ্চ ধুরও ভয়ের চোটে ইংলিসটা ভালোভাবে বের হচ্ছে না। বলেই আবারও চেঁচিয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ আপনার কি এখনো হয়নি অভ্র, আমারও তো এত সময় লাগে না গোসল করতে। তাড়াতাড়ি বের হন না প্লিজ। বাকি গোসল না হয় কাল করবেন।’
এরই মাঝে আকাশে মেঘ ডাকছে, বৃষ্টিও হচ্ছে খুব। আদ্রিজা ভয়ের চোটে কি করবে না করবে কিছু বুঝতে পারছে না। ভয়ার্ত গলায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো সে,
‘ একটু কম কম শব্দ কর না দেখছিস তো ভয় পাচ্ছি এমন করস ক্যান? আমার জন্য মায়া হয় না তোর।’
এরই মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাহিরে বের হলো অভ্র। পরনে তাঁর এস কালার ট্রাউজার। নেবি ব্লু কালার টিশার্ট। আদ্রিজা অভ্রের দিকে তাকিয়েই তক্ষৎনাত চোখ সরিয়ে নিলো তারপর বললো,
‘ এতক্ষণ সময় লাগে কারো?’
উওরে মাথা মুছতে মুছতে সামনে এগিয়ে এসে বললো অভ্র,
‘ কেন তোমার ভয় হচ্ছিল বুঝি?’
অভ্রের কথা শুনে খানিকটা ঘাবড়ানো ফেস নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আদ্রিজা,
‘ আপনার কি আমায় দেখে ভীতু মনে হয়।’
‘ না তা হবে কেন ব্ল্যাকবেরি তোমার পিছনে ওটা কি?’
সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজা ঘাবড়ে গিয়ে এগিয়ে আসলো অভ্রের দিকে। অভ্রের হাতটা চেপে ধরে বললো,
‘ কি আছে ওখানে?’
সঙ্গে সঙ্গে উচ্চস্বরে হেঁসে দিল অভ্র। বললো,
‘ কেউ একজন বলে ছিল তাঁকে দেখে ভীতু মনে হয় কি না।’
লজ্জায় পড়লো অাদ্রিজা। কি অসভ্য ছেলে ভীতু প্রমাণ করার জন্য এমন করলো। ঠিক আছে সময় আমারও একদিন আসবে। শুধু আজকের রাতটা যেতে দিন। আদ্রিজা তাঁর ভ্রু-জোড়া কুঁচকে বললো,
‘ এভাবে ভয় দেখাচ্ছেন তো ঠিক আছে আপনার সাথে কোনো কথা নেই, এই গেলাম আমি।’
বলেই রুম ছেড়ে যেতে নেয় আদ্রিজা। আদ্রিজাকে যেতে দেখে অভ্র হাল্কা হেঁসে ফিস ফিস করে ডাকলো,
‘ ব্ল্যাককককবেরি,
সঙ্গে সঙ্গে থমকে গেল আদ্রিজা। হাল্কা কান্না ভেজা কন্ঠ নিয়ে অভ্রের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ এভাবে ভয় দেখাচ্ছেন কেন? আমার ভয় লাগছে তো।’
এবার অভ্রের খারাপ লাগলো হয়তো সত্যি সত্যিই বারাবাড়ি করছে সে। অভ্র নিজেকে সামলালো তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
‘ আই এম সরি। আর ভয় দেখাবো না। চলো নিচে যাই। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে খেতে দিবে চলো।’
উওরে আদ্রিজাও অভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ সত্যি ভয় দেখাবেন না?’
উওরে অভ্রও বললো,
‘ না চলো আমার সাথে।’
অতঃপর অভ্র নিজেই আদ্রিজার হাত ধরে চললো নিচে। আর আদ্রিজাও বেশি না ভেবে চললো অভ্রের পিছু পিছু।’
_____
রান্নাঘরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে অভ্র আর আদ্রিজা। আদ্রিজা খাবার গরম করছে আর অভ্র পাশে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। আদ্রিজা খানিকটা দমে আছে। অভ্র বুঝতে পেরেছে ভয়টা হয়তো একটু বেশি আজ। কতক্ষণের মাঝেই আদ্রিজা খাবার গরম করে নিয়ে গেল ডাইনিং টেবিলের কাছে। অভ্রও গেলেও আদ্রিজার পিছু পিছু। হঠাৎই টেবিলে খাবার রেখে পিছনে ঘুরতে গিয়েই ধাক্কা খেল আদ্রিজা অভ্রের সাথে। কারন অভ্র একদম পিছনেই ছিল আদ্রিজার। তারওপর আদ্রিজা ঘাবড়ে ছিল। অভ্র আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এত ঘাবড়ালে চলে?’
উওরে শুঁকনো হেঁসে বললো আদ্রিজা,
‘ ঘাবড়াই নি আপনি বসুন আমি আপনায় খাবার দিচ্ছি।’
অভ্র শুনলো আদ্রিজার কথা গিয়ে বসলো চেয়ারে। তারপর বললো,
‘ তুমিও বসো এখনো খাও নি নিশ্চয়ই?’
উওরে আদ্রিজা বলে উঠল,
‘ আপনি খান তারপর আমি খাচ্ছি?’
‘ খাচ্ছি মানে এখনই খাও।’
অভ্রের কথা শুঁনলো আদ্রিজা। বসলো অভ্রের কাছাকাছিই তারপর দুজন দুজনকে খাবার পরিবেশন করে একসাথে সেরে নিলো ডিনারটা। আর তাদের টেবিলের নিচে বসে কচকচ শব্দ করে খাবার খাচ্ছিল কিটি।’
____
রাত দু’টোর কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। বাহিরে এখনও বৃষ্টি হচ্ছে খুব। সাথে মেঘ ডাকছে। আর এসবের ভিড়েই বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে আদ্রিজা। চোখ বন্ধ করতে পারছে না সে। যত বার চোখ বন্ধ করছে ততবারই হরর মুভির ছায়া জনিত ভূতের মুখটা ভেসে আসছে তাঁর সামনে। আদ্রিজা বিরক্ত হয়ে গায়ের থেকে কাঁথাটা সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। নিজের ওপর এই মুহূর্তে চরম রাগ লাগছে আদ্রিজার। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারতে গালে। অভ্র ঠিকই বলেছিল তখন, যেটা দেখতে পারি না সেটা দেখি ক্যান। তুই জানোস ওসব দেখলে রাতে তোর ঘুম হয় না তাহলে দেখোস কেন? আদ্রিজা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো অভ্রের ঘুমন্ত মুখের দিকে। তারপর বললো,
‘ আমি আজ কিভাবে ঘুমাবো অভ্র আমার ভীষণ ভয় লাগছে? এই মুহূর্তে আপনার জায়গায় মা থাকলে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম আমি। একটুও ভয় লাগতো না। খুব মিস করছি মাকে। অবশ্য মা থাকলেও প্রচুর বকতো আমায়। আসলে কি বলুন তো মুভিগুলো না খুব ইন্টারেস্টিং হয়, হুম ভয় লাগে ঠিকই তবে ভালোও লাগে। তবে আজ ভুল হয়েছে রাতে দেখে ধুর। আজ রাতে নির্ঘুমই কাটাতে হবে বোধহয়।’
এরই মাঝে আকাশটা আবার গর্জে উঠলো। আকাশের কাজে পুরো থমকে যাচ্ছে আদ্রিজা। একটু শান্তিতে বসে থাকবে তাও পারছে না।’
এরই মাঝে অভ্র শোয়া থেকে উঠে বসলো। বললো,
‘ কি হয়েছে ব্ল্যাকবেরি ঘুমাচ্ছো না কেন?’
আদ্রিজা পাশ ফিরে তাকালো সত্যি সত্যিই অভ্রকে বসে থাকতে দেখে বললো,
‘ আপনি ঘুমান নি?’
‘ তোমার বক বকের ঠ্যালায় ঘুমানো যায় নাকি।’
মাথা নিচু করে ফেললো আদ্রিজা বললো,
‘ আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।’
উওরে ঘুম জড়ানো গলায় বললো অভ্র,
‘ হুম বুঝেছি এখন বলো কি করলে তুমি ঘুমাবে কোনোভাবে আমি তোমায় হেল্প করতে পারি ব্ল্যাকবেরি। তবে শুনে রাখো নেক্সট টাইম যদি শুনি তুমি হরর মুভি দেখেছো তাহলে আমার একদিন কি তোমার একদিন বলে দিলাম।’
উওরে আদ্রিজা কিছু বলতে পারে না। আদ্রিজাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও ঘুম জড়ানো গলায় বললো অভ্র,
‘ তখন কি যেন একটা বলেছিলে বাড়ি থাকলে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে। জড়িয়ে ধরে ঘুমালে তুমি ঘুমাতে পারবে, ঠিক আছে আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাও তাহলে নিশ্চয়ই ঘুমাতে পারবে তুমি?’
অভ্রের লাস্টের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আদ্রিজা,
‘ কি?’
#চলবে….
#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৮
________________
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা অভ্রের মুখের দিকে। যেন অভ্র কি বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল। আদ্রিজাকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে আবারও ঘুম জড়ানো গলায় বলে উঠল অভ্র,
‘ তোমার কি কানে কথা যাচ্ছে না ব্ল্যাকবেরি, তোমার যদি জড়িয়ে ধরলে ঘুম আসে তাহলে তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাও?’
অভ্রের কথা শুনে বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে উঠল আদ্রিজা,
‘ আপনার মাথা ঠিক আছে তো অভ্র, কিসব ভুলভাল বকছেন আপনায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।’
অভ্র চরম ঘুমে আসক্ত। ঘুম ঘুম চোখে আর একবার তাকালো সে আদ্রিজার মুখের দিকে। তবে আর কিছু না বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিল সে। আর বললো,
‘ আমার খুব ঘুম পেয়েছে ব্ল্যাকবেরি, আর একটা কথা বললে আমি তোমার ভূতের ভয় একদম বার করে দিবো।’
বলেই ঘুমিয়ে পড়লো অভ্র। আর আদ্রিজা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো অভ্রের মুখের দিকে। সে বুঝতে পেরেছে ঘুমের ঘোরে অভ্র ভুলভাল বকছে।’
এরই মাঝে আকাশ পথের মেঘেরা আবার গর্জে উঠলো। আদ্রিজা ঘাবড়ে গেল। তবে শব্দ করলো না কোনো। শেষমেশ আদ্রিজা আর নিজেকে সামলাতে না পেরে তাদের মাঝখানে থাকা কোলবালিশটা সরিয়ে দিল। তারপর অভ্রের খুব কাছাকাছি গিয়ে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লো আদ্রিজা। চোখ বন্ধ করে নিলো আনমনে, কিন্তু না এবারও ঘুমাতে পারলো না আদ্রিজা চোখের সামনে সব ছায়াজনিত কিছু ভেসে আসছে তাঁর। অতঃপর আদ্রিজা কেঁপে উঠেই জড়িয়ে ধরলো অভ্রকে। সাথে বললো,
‘ আই এক্সট্রিমলি সরি। কিন্তু আমার খুব ভয় করছে। বিলিভ মি আর জীবনে কোনোদিন রাতের বেলা হরর মুভি দেখবো না।’
বলেই কাঁথা জড়িয়ে অভ্রের বুকেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো আদ্রিজা।’
অন্যদিকে অভ্র,
আচমকাই ঘুমের মধ্যে কিছু একটা ফিল হলো তাঁর। তবে আপাতত কিছু ভাবলো না, প্রচন্ড ঘুমে মগ্ন সে, আর এই মগ্নতার ঘুম নিয়ে আনমনেই নিজের হাতটা রাখলো সে আদ্রিজার গায়ে।’
নিকষ কালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। বৃষ্টি হচ্ছে খুব, মেঘ ডাকছে ভয়ংকরভাবে। জানালা জুড়ে থাকা সাদা পর্দাটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে টুইটুম্বর পুরো। আর এসবের ভিড়েই পাশাপাশি বিছানায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে আদ্রিজা আর অভ্র। একজন ভয়ের চোটে জড়িয়ে ধরেছে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে আর একজন ঘুমের মগ্নতায় জড়িয়ে ধরেছে তাঁর ব্ল্যাকবেরিকে।’
___
সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলো। পাখি ডাকছিল আনমনে,
জানালার কার্নিশ বেয়ে আসছিল মৃদু আলো। আর মৃদু আলোর ভিড়েই ঘুমিয়ে ছিল অভ্র আর আদ্রিজা। আদ্রিজা শক্ত করে চেপে ধরেছিল অভ্রের হাত। হঠাৎই অভ্রের ঘুমটা ভেঙে গেল, বুকের ওপর খানিকটা ভাড়ি কিছু অনুভব হতেই মিটমিটে চোখে পাশ ফিরে তাকালো সে, চোখের সামনে তাঁর এত কাছে আদ্রিজাকে দেখে খানিকটা ভড়কে গেল অভ্র। পরক্ষণেই ভাবতে লাগলো সে কাল রাতের কথা। সে নিজেই যে কাল ঘুমের ঘোরে আদ্রিজাকে জড়িয়ে ধরার কথাটা বলেছিল, কথাটা মাথায় আসতেই হকচকিয়ে গেল অভ্র। তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে আদ্রিজার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো সে। যে বুঝতে পেরেছে কাল অনেকটাই ভয় পেয়েছিল মেয়েটা যার দরুন তাঁকে জড়িয়ে ধরে বাধ্য হয়েছে ঘুমাতে। আদ্রিজার কপাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট চুলগুলো। অভ্র কিছু একটা ভেবে নিজের হাত দিয়ে ধরতে গেল আদ্রিজার কপাল জুড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলোকে। এরই মাঝে আদ্রিজা নড়েচড়ে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে অভ্র ঘাবড়ে গিয়ে হাত সরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো তাঁর। ভেবেছিল আদ্রিজা হয়তো উঠে গেছে। কিন্তু না খানিকটা নড়েচড়ে আবারও ঘুমে পড়ে আদ্রিজা। আদ্রিজা ঘুমিয়ে পড়েছে আবার বিষয়টা বুঝতে পেরে অভ্র চোখ খুললো। কিছুক্ষন ওভাবে থেকেই চটজলদি আদ্রিজাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে শুয়িয়ে দিল বিছানায়। কাঁথা জড়িয়ে দিল আনমনে।’
তারপর খানিকটা মুচকি হেঁসে চলে যায় অভ্র ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে। আর আদ্রিজা বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকে চুপচাপ।’
___
পরন্ত বিকেল। আজ শুক্রবার ছিল। তাই দুপুরেই অফিস থেকে চলে আসে অভ্র। যদিও কাজ শেষ হয় নি তাঁর। বাড়ি বসেই বর্তমানে ল্যাপটপে বসে নিজের কাজ করছিল অভ্র। এমন সময় হাতে এককাপ ব্ল্যাককফি বানিয়ে অভ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ আপনার ব্ল্যাককফি।’
হুট করেই কফির কথা শুনে সামনে তাকালো অভ্র। আদ্রিজা আজও ব্ল্যাক শাড়ি পড়েছে চুলগুলো খোঁপা করা, চোখে চশমা নেই আপাতত। অভ্র আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
‘ তুমি যে ব্ল্যাকে কি মজা পাও মাঝে মধ্যে আমি বুঝি না ব্ল্যাকবেরি।’
অভ্রের বিড়বিড়ানি শুনে আদ্রিজা বলে উঠল,
‘ আপনি কি কিছু বলছেন অভ্র?’
হকচকিয়ে উঠলো অভ্র। বললো,
‘ না কিছু না। হঠাৎ কফি বানালে?’
বলেই কফির কাপটা আদ্রিজার থেকে নিলো অভ্র। অভ্র কাপটা নিতেই বিছানায় বসে বললো আদ্রিজা,
‘ আসলে শাশুড়ী মা বলেছিল আপনি বাড়ি বসে কাজ করার সময় নাকি ব্ল্যাককফি খান তাই আর কি।’
উওরে কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠলো অভ্র,
‘ ওহ, খুব ভালো করেছো এটার খুব প্রয়োজন ছিল আমার।’
অভ্রের কথা শুনে খানিকটা বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ প্রয়োজন ছিল বলবেন না তাহলে তো আরো আগেই বানিয়ে নিয়ে আসতাম।’
উওরে আবারও কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠল অভ্র,
‘ ঠিক আছে। আমার মাত্রই খেতে ইচ্ছে করছিল এরই মাঝে তুমি নিয়ে এসেছো।’
‘ ওহ।’
‘ হুম।’
প্রতি উওরে আর কিছু বলে না আদ্রিজা চুপচাপ বসে রয় সে। কিছু ভালো লাগছে না তাঁর কবে যে সবাই আসবে বা সে যাবে সিলেটে কে জানে। এরই মাঝে আদ্রিজার পায়ের কাছে আসলো কিটি। আদ্রিজা তাঁকে দেখেই কোলে তুলে নিলো আনমনে। পিঠে হাত বুলাতে লাগলো আনমনে।’
অন্যদিকে,
অভ্র কফি খাচ্ছে সাথে তাকিয়ে আছে আদ্রিজার মুখের দিকে। সে বুঝতে পেরেছে আদ্রিজার একা একা এখানে ভালো লাগছে না। কিন্তু তাঁরও বা কি করার মিনিমাম আরো দু’দিন সময় লাগবে তাঁর কাজ শেষ করতে। অভ্র কিছু একটা ভেবে তাঁর ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো। আর ভালো লাগছে না বাকিটা রাতে করবে।’
ভেবেই কফির কাপটা টেবিলটার উপর রাখলো সে। তারপর আদ্রিজাকে উদ্দেশ্য করে বললো অভ্র,
‘ গিটার বাজাবে ব্ল্যাকবেরি?’
সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠে বললো আদ্রিজা,
‘ এখন।’
‘ হুম এখন আমি ফ্রি আছি যাও গিটারটা নিয়ে আসো?’
আদ্রিজা শুনলো তক্ষৎনাত ড্রয়ারে পাশে রাখা গিটারটা নিয়ে আসলো সে। তারপর অভ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ আগে গান শুনবো কিন্তু তাঁরপর বাকিটা,
আদ্রিজার কথা শুনে আগেই বলে অভ্র,
‘ গান শুনাতেই পারি কিন্তু আমার কন্ঠ কিন্তু ওতোটা ভালো না।’
‘ কোনো ব্যাপার না আপনি গান।’
অভ্র শুনলো আদ্রিজার কথা। অতঃপর গিটারের সুর টানলো সে। অভ্রের গিটারের আওয়াজ কানে আসতেই অভ্রের দিকে ঘুরে পা উঠিয়ে বিছানায় সুন্দর মতো বসলো আদ্রিজা। তারপর মনোযোগ দিলো সে অভ্রের গানের দিকে। অভ্র কতক্ষণ গিটার বাজিয়ে গাইতে শুরু করলো,
‘ পাগল হয়ে আছি, তোরই কারন
সাথে করে এনেছি মেঘেই মন,
তোর হাসির ছল, তোর চুলের দল
আমাকে কেঁড়ে নেয়।
তোর চোখের ঝিলললল জানি,
পেরোনো মুসকিললল মানি।
তাও পারি না যে এগিয়ে গিয়েছে আমারই দুটো পা
তোকে একারে দেখার লুকিয়ে কি মজা সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না?’
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয় রে সোজা সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না?’
পুরো মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা অভ্রের মুখের দিকে। কি ভাড়ি সুমধুর কন্ঠ অভ্রের। অথচ কতক্ষন আগে কি বললো তাঁকে। আনমনাই মুচকি হেঁসে ফেললো আদ্রিজা। এরই মাঝে অভ্র আবার গেয়ে উঠলো,
‘ সত্যি করে বল তোর কি মনে হয়
মনের কোলাহল, কেউ কারোর নয়
ব্যস্ত আছে খুব, বুকের চলাচল
মায়াবী লাগে সব,রূপোলি এ সময়।’
তোর চোখের ঝিলললল জানি,
পেরোনো মুসকিললল মানি।
তাও পারি না যে এগিয়ে গিয়েছে আমারই দুটো পা
তোকে একারে দেখার লুকিয়ে কি মজা সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না?’
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয় রে সোজা সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না?’
হঠাৎই গান গাইতে গাইতে অভ্রের মনে পড়লো তাঁর ভার্সিটির লাইফের টিএসসির সামনে বসে লাবণ্যকে পাশে বসিয়ে গান শোনার কিছু মুহূর্তের কথা। আগে লাবণ্য ভার্সিটিতে বসে প্রায় সময়ই বায়না ধরতো অভ্রের গান শুনবে সে। অভ্রও শুনতো লাবণ্যের কথা। আর শোনাতো গান। অভ্র জিনিসগুলো ভেবেই তাকালো আদ্রিজার মুখের দিকে। হুট করেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে উঠলো তাঁর। গান গাওয়া থামিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো অভ্রের। কিন্তু থামালো না সে, আদ্রিজার তাঁর দিকে তাকিয়ে মগ্ন হয়ে গান শোনার চেহারাটা দেখেই আবারও গেয়ে উঠলো অভ্র,
‘ একলা ছিল মন, ধূসর এতদিন
এক ঝলকে তোর হয়েছে কি রঙিন
শুনতে পেলে যেই নূপুর বাজে তোর।
বেঁচে থাকাই দায়, মরে যাওয়া কঠিন।’
তোর চোখের ঝিলললল জানি,
পেরোনো মুসকিললল মানি।
তাও পারি না যে এগিয়ে গিয়েছে আমারই দুটো পা
তোকে একারে দেখার লুকিয়ে কি মজা সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না?’
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয় রে সোজা সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না?’
অতঃপর পুরো গান গেয়ে আস্তে আস্তে গিটারের সুর থামিয়ে দিয়ে তাকালো অভ্র আদ্রিজার মুখের দিকে। পুরো একধ্যানে এখনো তাকিয়ে আছে আদ্রিজা তাঁর দিকে। অভ্র হাতের তুড়ি বাজালো আদ্রিজার সামনে তারপর বললো,
‘ এই যে মিস না মিসেস ব্ল্যাকবেরি কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি?’
হুট করেই অভ্রের কন্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠলো আদ্রিজা। হতভম্ব গলায় বললো,
‘ আপনার গান গাওয়া শেষ।’
উওরে অভ্রও বললো,
‘ সে তো কখন শেষ।’
অভ্রের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ সত্যি।’
‘ হুম।’
‘ আপনার গলা তো ভাড়ি সুন্দর তাহলে বললেন কেন গলা খারাপ।’
উওরে হাল্কা হেঁসে বললো অভ্র,
‘ না ভেবেছিলাম তোমার ঈশান প্রতিবেশীর মতো হবে না।’
অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা বললো,
‘ আপনার গলা ঈশানের চেয়েও সুন্দর।’
মুচকি হাসলো অভ্র। বললো,
‘ যাক তোমার পছন্দ হয়েছে এতেই আমি খুশি। এখন এদিকে আসো?’
আদ্রিজা শুনলো অভ্রের কথা এগিয়ে গেল সে অভ্রের কাছাকাছি। অভ্র তাঁর হাতের গিটারটা আদ্রিজার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ এটা ধরো।’
অভ্রের কথা মতো আদ্রিজাও ধরলো গিটারটা। বললো,
‘ তারপর,
অভ্র গিটারের সামনে থাকা তারগুলো দেখিয়ে বললো,
‘ তোমায় শুধু এই তারগুলোকেই স্পর্শ করতে হবে আদ্রিজা। একটু চেষ্টা করলেই পারবে তুমি। তোমার হাতের একেকটা আঙুল একেটা তার স্পর্শ করে একেক ধ্বনির সৃষ্টি করবে। জাস্ট ট্রাই,
আদ্রিজা শুনলো অভ্রের কথা সাথে গিটারের তাঁরে হাত রাখলো সে। কিন্তু হলো না, পর পর কয়েকবার চেষ্টা করলো আদ্রিজা কিন্তু হলো না তাঁর। যা দেখে বলে উঠল আদ্রিজা,
‘ হচ্ছে না তো।’
‘ ওভাবে করলে হবেও না তো। আঙুল নাড়াতে হবে ব্ল্যাকবেরি ধরে থাকলে বাজবে না তো।’
আদ্রিজা চেষ্টা করলো কিন্তু না হলো। অভ্র খানিকটা হতাশ হয়ে বললো,
‘ আমার কাছে দেও আমি আবার দেখাচ্ছি তোমায়।’
আদ্রিজা শুনলো সাথে দিলও অভ্রের কাছে। অভ্র গিটার হাতে নিয়ে দেখাতে লাগলো আদ্রিজাকে কিভাবে বাজাতে হয়। কিন্তু আদ্রিজার মাথায় কিছু ঢুকছে না। অভ্র আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
‘ কিছু বুঝেছো তুমি?’
উওরে মাথা নাড়িয়ে বললো আদ্রিজা,
‘ না।’
অভ্র হতাশ হলো অাদ্রিজার কথা শুনে।
‘ এবার তবে অভ্র কিভাবে শিখাবে গিটার বাজানো আদ্রিজাকে?’
#চলবে….