#লেখেনী-আরোহী ইসলাম
#গোধূলি বেলায়
#পর্বঃ৭
” সাইমা কান্না করে দিলো। সিফাত বুঝতে পারলো রাগের মাথায় সাইমাকে হার্ট করে ফেলেছে। সিফাত সাইমার হাত ধরে নরম কন্ঠে বললো সরি বউ আমি একটা সমস্যার মধ্যে ছিলাম যার কারনে তোমার সাথে এমন আচরণ করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ।
‘কি সমস্যার মধ্যে ছিলেন?
সাইমা বললো।
সিফাত দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো
‘ তাহলে শুনো আরবিন হলো আমার ফ্রেন্ড। ওকে কারা যেনো খু’ন করেছে ওর গার্লফ্রেন্ড আলিয়া ও ভেবেছে আমি ওকে খু’ন করেছি যার জন্য ওই প্রতিশোধ নিতে আমাকে ব্লাকমেইল করেছে এবং বলেছে তোমার সাথে যেনো খারাপ আচরণ করি। তোমাকে যেনো ডিভোর্স দেই।
সাইমা অবাক হয়ে গেলো। সাইমা ভেবেছিলো সিফাত হয়তো এইগুলো নিজে থেকে করছে সাইমা সিফাত কে জড়িয়ে ধরে বললো সরি আমি ভেবেছিলাম তুমি এইগুলো নিজে থেকে করছো সেই জন্য তোমার প্রতি রাগ হয়েছে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
সিফাত সাইমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
‘ আমি বুঝতে পারছি।
সিফাত মনে মনে বললো
‘ তোমাকে কখনো আমার আসল সত্যিটা বলা যাবে না তাহলে অনেক ক্ষ’তি হয়ে যেতে পারে তোমার এবং তুমি আমাকে ভুল বুঝতে পারো।
এদিকে
দরজার আড়ালে চাচি শাশুড়ি আর লিনা দাঁড়িয়ে আছে।
‘ ছোট মা এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভাইয়া দেখলে কি বলবে চলো চলে যাই।’
লিনা বললো। লিনার কথায় চাচি শাশুড়ি লিনার হাত টান দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা আটকিয়ে বললো এতো জোরে কথা বলে কেউ? আর একটু হলেই তো শুনতে পেতো।’
লিনা চুপ করে রইলো। চাচি শাশুড়ি মিসেস সায়েরা লিনাকে বললো লিনা শুন সাবিনাকে আসতে বলি ওই পারবে সাইমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে।
‘ আচ্ছা ছোট মা কিন্তু আমরা সাইমাকে তাড়িয়ে কষ্ট দিয়ে কি পাবো?
লিনা কৌতূহল নিয়ে বললো।
‘ দেখ তুই কি চাস তোর ভাই এই রকম ক্ষেত মেয়ের সঙ্গে সারাজীবন থাকুক?.
‘ না।
‘ তাহলে আমরা ওকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে সাবিনাকে সিফাতের সাথে বিয়ে দিবো।’
মিসেস সায়েরা বললো।
‘ আচ্ছা।
লিনা বললো।
তারপর লিনা রুম থেকে চলে গেলো মিসেস সায়েরা লিনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো
‘ বোকা মেয়ে আমি কি এমনি এমনি সাইমাকে তাড়াতে চাচ্ছি নাকি? এর পিছনে আমার অনেক কারন আছে এই বলে সে সিড়িতে আসতেই কিছু একটা ভেবে তেল নিয়ে সিড়ির কাছে এসে সিড়িতে ঢেলে দিলো।
এদিকে
” সাইমা রুম থেকে বের হতেই দেখে চাচি শাশুড়ি সিড়িতে তেল ফেলে টুপ করে রুমে চলে গেলো। সাইমা চমকে গেলো। সাইমা শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বললো
‘ ডিয়ার চাচি শাশুড়ি এতোদিন তুমি আমাকে জ্বালিয়েছো এইবার তুমি দেখবে আমি কি জিনিস
কিছুক্ষন পর সাইমা সিড়ির কাছে এসে লিনাকে ডেকে বললো লিনাআ আপুওও একটু এইখানে আসো।
লিনা সাইমার ডাক শুনে রুম থেকে এসে ভ্রু কুচকে বললো
‘ কি হয়েছে এইভাবে ডাকতেছিস কেনো?
‘ আপু ছোট মাকে ডাকে কে যেনো এসেছে তুমি একটু ডাক দাও।’
সাইমা এই বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
‘ আচ্ছা। তারপর লিনা মিসেস সায়েরাকে ডাক দিলো তিনি রুম থেকে এসে সিড়িতে পা রাখতেই ঠাস করে সিড়ি থেকে পড়ে গেলো। মিসেস সায়েরার মনে ছিলো না যে তিনি তেল ফেলেছে। ওনি ব্যাথা চিৎকার করে উঠলো। ওনার চিৎকার শুনে সাইমা তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে সিড়ির কাছে এসে দেখে চাচি শাশুড়ি সিড়িতে পরে আছে। সাইমা ওনাকে উঠিয়ে বললো ছোট মা আপনার কিছু হয়নি তো?
‘ তুমি তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে যাও আমার পা ভেঙে গেছে মনে হয়।’
কান্না করে বললো চাচি শাশুড়ি। তারপর সাইমা লিনাকে ডাক দিয়ে ওনাকে উঠিয়ে রুম নিয়ে শুয়াইলেন।
‘ লিনা তুই ডাক্তারকে তাড়াতাড়ি খবর দে।’
মিসেস সায়েরা বললো।
‘ ছোট মা আপনার কিছু হয়নি দাড়ান আমি পা এখনই ঠিক করে দিচ্ছি বলে সাইমা যে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে সে পায়ে জোরে করে টান দিতেই চাচি শাশুড়ি ব্যাথায় চিৎকার করে বললো আরে তুই কি আমাকে মে’রে ফেলতে চাস নাকি। এইভাবে কেউ টান দেয় সিফাতকে ডাক দে…
‘ আচ্ছা বলে সাইমা সিফাতকে ডাক দিতে রুমে এসে দেখে সিফাত নেই। সাইমা বিরবির করে বললো কোথায় গেলো একটু আগেও তো ছিলো? সাইমার টেবিলের দিকে চোখ পরতেই দেখে একটা কাগজ সাইমা কাগজটা খুলে দেখে তাতে লিখা
‘ আমি অফিসে যাচ্ছি তুমি সাবধানে থেকো কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল দিও।’
সাইমা মুচকি হাসলো তারপর দ্রুততার সঙ্গে মিসেস সায়েরার রুমে এসে দেখে সে ব্যাথায় কাতর হয়ে আছে ।
‘ ছোট মা ওনি তো অফিসে চলে গেছে। আর মা তো পাশের বাসাই গেছেন।’
মলিন কন্ঠে বললো সাইমা।
‘লিনা তুই সাবিনাকে আসতে বল।’
মিসেস সায়েরা বললো।
‘ সাবিনা কে?
অবাক হয়ে বললো সাইমা।
‘ সাবিনা হচ্ছে ছোট মার বোনের মেয়ে।’
লিনা বললো। তারপর লিনা সাবিনাকে কল দিয়ে আসতে বললো।
সাইমা লিনাকে বললো
‘ লিনা তুমি একটু গরম পানি নিয়ে আসো।
‘ কেনো? আমি পারবো না তুই যা।
বিরক্ত হয়ে বললো লিনা।
‘ ছোট মা আপনার পায়ে গরম পানি ঢাললে আপনার পা ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে তো আপনার কাছে থাকতে হবে আপনি প্লিজ লিনাকে গরম পানি করে আনতে বলেন।
সাইমা বললো।
‘লিনা যা গরম পানি করে নিয়ে আয়।’
চাচি শাশুড়ি বললো।
লিনা রাগি চোখে সাইমার তাকিয়ে বললো
‘ যাচ্ছি এই বলে গরম পানি করতে চলে গেলো।
—————
সিফাত বাড়ি থেকে বের হয়ে আলিয়াকে কল দিয়ে *** এই জায়গায় আসতে বললো। আলিয়া আচ্ছা বলে কল কেটে দিলো।
সিফাত আলিয়ার জন্য অপেক্ষা করতেছে কিছুক্ষন পর আলিয়া আসলো। সিফাত কিছুটা বিরক্ত বললো এতো দেরি লাগে চলো জেলখানায়।
‘ আচ্ছা ভাইয়া।’
তারপর সিফাত আর আলিয়া থানায় এসে ওসিকে বললো
‘ আমরা কেশবের সাথে দেখা করতে চাই। আপনি আমাকে ওর কাছে নিয়ে যান।’
‘আচ্ছা স্যার বলে থানার ওসি সিফাতকে কেশবের কাছে নিয়ে আসলেন। সিফাত কেশবকে দেখে বললো
‘ কেশব একজনের সম্পর্কে তোমার থেকে যানার ছিলো।
কেশব চোখ মেলে সিফাতের কথা শুনে বললো
‘ কার সম্পর্কে?
‘ নারী পাচার কারীর লিডার কে তার নাম যানো?
প্রশ্ন চোখে বললো সিফাত।
‘ না আমি নারী পাচার কারীর দলের লিডারকে চিনি না।
কেশবের কথায় সিফাত আলিয়া নিরাশ হয়ে গেলো। সিফাত আর কিছু না বলে জেলখানা থেকে বের হয়ে গেলেন।
————-
‘ ম্যানেজার তুমি কোনো খবর পেয়েছো?
অচেনা লোকটা বললেন।
‘ হ্যা স্যার।
ম্যানেজার বললো।
‘ কি খবর ?
‘ স্যার সিফাত আহমেদ আর তার সাথে একটা মেয়ে থানায় গিয়েছিলো কেশব নামে এক মা’ফি’য়ার কাছ থেকে আপনার সম্পর্কে যানতে। ‘
একদমে বললো ম্যানেজার।
ম্যানেজারের কথা শুনে লোকটা হেসে বললো
‘ হাহাহা আমার সম্পর্কে যানতে কেশবের কাছে গিয়েছে। কেশব তো আমার সম্পর্কে কিছু জানে না। আমি হলাম শয়তান হাহাহা আমার সম্পর্কে কেউ বলতে পারবে না। একমাত্র রায়হান ছাড়া কিন্তু রায়হান তো আর নেই ।
সাইমা বসে আছে মিসেস সায়েরার রুমে।
কিছুক্ষন পর কলিং বেল বাজার শব্দে সাইমা নিচে এসে দরজা খুলতেই চমকে যায়।
চলবে….