গোধূলি বেলায় পর্ব-০৬

0
322

#লেখেনী-আরোহী ইসলাম
#গোধূলি বেলায়
#পর্বঃ৬

” অন্ধকার রুমে একটা লোক চেয়ারে বসে আছে। লোকটা টেবিলে রাখা মদের বোতল থেকে মদ ঢেলে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো
‘ সিফাত আহমেদ তুই কি ভেবেছিস এতো সহজে আমাকে ধরবি হাহাহা, আমাকে ধরা এতো সহজ না। তোর ফ্রেন্ডকে যেভাবে মে’রেছি ঠিক সেই ভাবে তোর পুরো পরিবারকে মা’ রবো। আমার কাজে কেউ বাধা দিলে আমি তাকে জীবিত রাখি না মাই ডিয়ার সিফাত হাহাহা বলেই লোকটা শব্দ করে হাসতে লাগলো।

লোকটার ম‍্যানেজার ভয়ে ভয়ে বললো
‘স‍্যার একটা কথা ছিলো।’

লোকটা বিরক্ত কন্ঠে বললো
‘ বলো।’

‘ স‍্যার আপনার সঙ্গে সিফাত আহমেদে শত্রুতা কি?
তোতলাতে তোতলাতে বললো দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা।

‘ সিফাত আমার কাজে বা’ধা দেয় প্লাস ওর পরিবারের সঙ্গে আমার জন্মগত শত্রুতা আছে।’
বিরক্ত চাহনিতে বললো অচেনা লোকটা।

দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা আর কিছু বললো না। অচেনা লোকটা বললো কোনো খবর পেয়েছো ওইদিকের?

‘ না স‍্যার।
মাথা নিচু করে।

লোকটা হাতে থাকা গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে রেগে বললো তোমাদেরকে টাকা দিয়ে এমনি এমনি রেখেছি নাকি? এখনো কোনো খবর পেলে না।

” সিফাত আর আলিয়া একটা বাড়ির কাছে আসলো। আলিয়া ভ্রু কুচকে সিফাতকে বললো
‘আমরা এই জায়গায় আসছি কেনো? এইটা কার বাড়ি সিফাত?

‘ এইটা হচ্ছে মিস্টার আজিজুলের বাড়ি। ওনি একজন সৎ পুলিশ অফিসার ছিলেন কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় ওনার এক হাত ভেঙ্গে যায় তারপর ওনি চাকরি থেকে রিটার্ন নেই।’
সিফাত বললো।

‘ বুঝলাম কিন্তু আমরা ওনাকে দিয়ে কি করবো?
আলিয়া বললো।

‘ ওনি অনেক মা’ফি’য়া, কালো বাজার এর লোকদের ধরেছে ওনি নিশ্চয়ই বলতে পারবে নারী পাচার কারীর লিডার কে? ওনাকে কোথায় পাবো।’
আলিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো সিফাত।

‘ আচ্ছা তাহলে আমাদের বাড়ির ভিতরে যাওয়া যাক। কিন্তু এতো রাত্রে ওনি কি দরজা খুলবে?
আলিয়া বললো।

‘হ‍্যা! ওনি এই বাড়িতে একা থাকে সমস্যা নেই খুলবে দরজা।’
সিফাত বললো।

‘একা থাকে কেনো ওনার পরিবার কোথায় থাকে?
কিছুটা অবাক হয়ে বললো আলিয়া।

‘ এতো প্রশ্ন করো না তো? ভিতরে চলো পরে তোমায় সব বলবো।’
বিরক্ত নিয়ে বললো সিফাত।

তারপর সিফাত আর আলিয়া বাড়ির দরজায় নক দিলো কিছুক্ষন পর লোকটা দরজা খুলে ওদেরকে দেখে বললো তোমরা কারা আর এতো রাতে এইখানে এসেছো কেনো?

‘ স‍্যার আমি সিফাত আহমেদ। আলিয়াকে দেখিয়ে বললো ও হচ্ছে আলিয়া আমরা এইখানে একটা লোকের সম্পর্কে যানতে এসেছি।’
সিফাত বললো।

‘ আচ্ছা ভিতরে আসো।’
লোকটার কথায় সিফাত আর আলিয়া ভিতরে আসলো। লোকটা ড্রয়িং রুমের সোফায় ওদেরকে বসতে বললো। লোকটা ওদের সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বললো হুম বলো কার সম্পর্কে যানতে চাও?

‘ আপনি তো অনেক মা’ফি’য়াদের ধরেছেন। আপনি তো জানেনই এই দেশে এখন নারী পাচার হচ্ছে। দেশে কোনো নারীই এখন নিশ্চিত এ বাড়ি থেকে স্কুল, কলেজ, কোথাও যেতে পারছে না। আতঙ্কে আছে।’
নরম সুরে বললো সিফাত।

‘ হুম। কিন্তু এখন আমি কি সাহায্য করবো?
দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো লোকটা।

‘ আমরা কিভাবে নারী পাচার কারীর লিডারের খোঁজ পেতে পারি?
সিফাত বললো।

‘তোমাকে কেশবের কাছে যেতে হবে ওই অনেক মা’ফি’য়া কালো বাজারের লোকজনকে চিনে।’
লোকটা বললো।

‘ ওনাকে কোথায় পাবো আমরা?
কৌতূহল নিয়ে বললো সিফাত।

‘ ও এখন জেলে আছে। ও এইগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলো যার কারনে ওকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তোমরা ওকে জেলে পাবে।’
লোকটা বললো।

‘ আচ্ছা ধন্যবাদ আপনাকে।
মুচকি হেসে বললো সিফাত।

আলিয়া কথার মাঝ খানে বলে উঠলো
‘ স‍্যার আপনি বিয়ে করেননি? আপনার পরিবার কোথায়?

আলিয়ার কথা শুনে সিফাত চোখ মুখ ছোট করে বিরবির করে বললো এই মেয়ে এনার সম্পর্কে না জেনে যাবে না মনে হচ্ছে। লোকটা আলিয়ার কোথায় বললো তোমার মনে হয় সব বিষয়ে কৌতূহল বেশি।’

‘ না মানে স‍্যার,
চোখ মুখ ছোট করে বললো আলিয়া।

লোকটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো
‘ আমার পরিবারে কেউ নেই। আমার বাবা মা রোড এক্সিডেন্টে মা’রা গিয়েছে অনেক আগে।

‘ আপনি বিয়ে করেননি?
আলিয়া বললো।

‘ নাহ্।

‘ কেনো স‍্যার?
আলিয়া অবাক হয়ে বললো।

‘ আচ্ছা তাহলে শুনো
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন একটা মেয়েকে আমার ভালো লাগে ওর নাম ছিলো মায়াবতি।ও আমার সঙ্গে পড়তো। তারপর আমি প্রথমে ওর সাথে বন্ধুত্ব করি। মেয়েটার নামের সাথে চেহারার অনেক মিল নামও যেমন মায়াবতি চেহারাও ছিলো মায়াবী।

আস্তে আস্তে মেয়েটার প্রতি আমার ভালো লাগা থেকে কখন যে ভালোবাসায় পরিনত হয় বুঝতেই পারিনি এইভাবেই চলতে থাকে বেশ কিছু মাস তারপর আমি যখন ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে ওঠি তখনো ও আর আমি এক কলেজে ছিলাম। আস্তে আস্তে আমার প্রতি ও দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন কলেজে আসার সময় বাসে ওর এক্সিডেন্ট হয়। এক্সিডেন্টে ও না ফেরার দেশে চলে যায়। আমি ওর এইভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারিনি ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। আস্তে আস্তে ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আমি পড়ালেখায় মনোযোগ দেয় এবং প্রতিজ্ঞা করি আমি আর কখনো বিয়েই করবো না।’
এই বলে লোকটা থামলেন। লোকটার চোখ দিয়ে পানি পরতেছে। আলিয়া চুপ করে আছে।

সিফাত বললো
‘ স‍্যার আমরা এখন যাই তাহলে।’

‘ আচ্ছা সাবধানে যেও।
হালকা হেসে বললো।

তারপর আলিয়া আর সিফাত ওই বাড়ি থেকে বের হলেন। সিফাত আলিয়াকে বললো আলিয়া সব বিষয়ে কৌতূহল ভালো না কিন্তু। আলিয়া মন খারাপ করে বললো হুম।

‘ অনেক রাত হয়েছে তোমাকে এখন তোমার বাসাই পৌঁছে দেই।’
সিফাত বললো।

‘ আচ্ছা। কিন্তু তুমি কোথায় যাবে?
ভ্রু কুচকে বললো আলিয়া।

‘ আমি এখন বাড়িতে যাবো কাজ আছে বাড়িতে ।’
চিন্তিত সুরে বললো সিফাত।

তারপর সিফাত আলিয়াকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে যেতে লাগলো।

———————–

” সাইমা রুমে এসে কান্না করতেছে। সাইমার শাশুড়ি বললো সাইমা কান্না করিস না। শুন সিফাত আসবে কখন কিছু জানিস?

সাইমা চোখের পানি মুছে বললো
‘ মা আমি তো জানিনা ওনি আমাকে কিছু বলেননি। আচ্ছা মা আপনাকে একটা জিনিস দেখানোর আছে বলে সাইমা ড্রয়ার থেকে আরবিন আর সিফাতের পিক বের করে শাশুড়িকে দেখালো।
সিফাতের মা পিক দেখে চমকে গেলেন। সিফাতের মা বললো এইটা তো আরবিন আহমেদ আর সিফাতের পিক।

‘ হুম মা। কিন্তু আপনার ছেলেকে যখন জিগ্গেস করেছিলাম আরবিন আহমেদকে চিনেন তখন তো ওনি সাফ সাফ বলেছে আমি চিনি না। ওনি আমাকে মিথ্যা বলেছে কেনো?

‘ আজ আসুক তারপর জিজ্ঞেস করিও।
শাশুড়ি বললো।

‘ আচ্ছা মা।’
সাইমা বললো।

কিছুক্ষন পর
কলিংবেল বাজতেই সাইমা দরজা খুললো। সাইমা কে দেখে সিফাত বললো তুমি? ঘুমাওনি কেনো?

‘ আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।’
সাইমা বললো।

‘ আমার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে বলিনি আর কখনো অপেক্ষা করবে না।’
সিফাত বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো।

সাইমা সিফাতের কথায় হেসে বললো
‘ এখন আমি কেনো অপেক্ষা করবো এখন তো আপনার জীবনে অন্য কেউ এসেছে। যাইহোক খাবার টেবিলে আছে খেয়ে নিন বলেই সাইমা রুমে আসলো।

সিফাত টেবিলে খাবারের দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেলো। সাইমা রুমে এসে বিছানায় এক পাশে শুয়ে আছে। সিফাত রুমে এসে সাইমার পাশে শুয়ে রইলো।

সকালবেলায়
‘ সাইমা ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ করতে লাগলো। সাইমা ড্রয়িংরুম মুছতেছে ঠিক সে সময় লিনা সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলো হঠাৎ সাইমাকে রুম মুছতে দেখে লিনা কিছু একটা ভেবে পৈশাচিক হাসি দিলো। তারপর লিনা ড্রয়িং রুমে আসলো। সাইমা মুছতেছে লিনা ফ্লোরে পারা দিতেই জুতার দাগ হয়ে গেছে।

সাইমা তা দেখে বললো
‘ লিনা আপু তুমি কি করলে আমি মুছতেছি তো।

‘ সরি আমি দেখতে পারিনি বলে রুমে চলে গেলো। সাইমার এখন চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে এখনো কত কাজ বাকি রান্না করতে হবে দেরি হলে চাচি শাশুড়ি আর আস্ত রাখবে না। সাইমা তাড়াতাড়ি করে আবার মুছতে লাগলো।

সিফাত ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে আলমারি খুলতেই দেখি সব সুন্দর ভাবে সাজানো। সিফাত তাড়াতাড়ি করে পিকটা খুজতে লাগলো কিন্তু পেলো না সিফাত রেগে গিয়ে চিৎকার করে সাইমাকে ডাক দিলো। সাইমা সিফাতের ডাক শুনে রুমে এসে দেখে সিফাত রেগে আছে।

‘ কি হয়েছে ডাকছিলেন কেনো?
সাইমা বললো।

‘ তোমাকে না বলেছি আমার কোনো জিনিসে হাত দিবে না তারপরও কেনো তুমি আমার আলমারি খুলেছো কোন সাহসে?
প্রচন্ত রেগে বললো।

সাইমা সিফাতের রাগ দেখে মাথা নিচু করে আছে। সিফাত বললো
‘ পিকটা কোথায়?

সাইমা ড্রয়ার থেকে পিকটা এনে বললো
‘ এই যে পিক।
সিফাত পিকটা নিয়ে বললো
‘ আর কখনো যেনো আমার জিনিসে হাত না দিতে দেখি।

‘ আপনি না বলে ছিলেন আরবিন আহমেদ কে আপনি চিনেন না তাহলে আপনার সাথে পিক কেনো?
সাইমা বললো।

‘ তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়।

সাইমা সিফাতের কথায় হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো
‘ stop..! মিস্টার সিফাত। আমি অনেক সহ‍্য করেছি আমি আর পারছি না। বিয়ের আগে তো আপনি কখনো আমার সাথে এমন আচরণ করেননি যতটা বিয়ের পর করতেছেন। আপনি আমাকে দিনের পর দিন মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। আপনি আরবিনকে চিনেন তারপর আমাকে বলেছেন চিনি না চমৎকার।

আপনি আমার সাথে যতটা বাজে আচরণ করেন না বিশ্বাস করুন আর কোনো স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে এই রকম আচরন করে না। আমি কি এতোটাই অবহেলার পাত্রী হয়ে গেছি?

সাইমা কান্না করে দিলো,

#চলবে…..