গোধূলি বেলায় পর্ব-০৮

0
341

#লেখেনী-আরোহী ইসলাম
#গোধূলি বেলায়
#পর্বঃ৮

” সাইমা নিচে এসে দরজা খুলতেই চমকে যায় কারন দরজার সামনে একটা মেয়ে চোখে কালো চশমা পরা, দেখতে খুব মডার্ন মেয়েটা মনে হয় আমেরিকা থেকে এসেছে। মেয়েটা সাইমাকে দেখে বললো
‘Who Are You..?

মেয়েটার কথা শুনে সাইমা ভ্রু কুচকে বললো
‘ আমি এই বাড়ির বউ।আপনি কে?

লিনা এসে সাবিনাকে দেখে হালকা হেসে বললো
‘ সাইমা ও হচ্ছে সাবিনা তোকে বললাম না, এই বলে লিনা সাবিনাকে বললো হেই আপু কেমন আছো কতদিন পর তোমার সাথে আবার দেখা হলো।

‘ ভালো।এই মেয়ে বলে এই বাড়ির বউ ?
সাবিনা সাইমার দিকে তাকিয়ে বললো।

‘হ‍্যা ওই হচ্ছে সিফাত ভাইয়ার বউ। আপু চলো ছোট মার রুমে। সাইমা তুই এই ব‍্যাগটা উপরের গেষ্ট রুমে নিয়ে যা।

তারপর সাবিনা আর লিনা মিসেস সায়েরার রুমে আসলো। সাইমার কেনো যানি সাবিনাকে ভালো লাগছে না। সাইমা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে উপরের গেষ্ট রুমে ব‍্যাগ রাখতে গেলো।

লিনা সাবিনাকে মিসেস সায়েরার রুমে নিয়ে আসলেন মিসেস সায়েরা সাবিনাকে দেখে খুশি হয়ে উঠতে গেলে লিনা বললো
‘ উঠো না ব‍্যাথা পাবে।

‘ সাবিনা সোনা কেমন আছিস?
খুশি হয়ে বললো মিসেস সায়েরা।

‘ আলহামদুলিল্লাহ্। তোমার এই অবস্থা কেমন করে হলো?

সাবিনার কথা শুনে রাগে দুঃখে মিসেস সায়েরা বললো
‘ সাইমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করতেছি কিন্তু কোনোটাই সফল হচ্ছে না। আমি আজ সিড়িতে তেল ফেলেছি যাতে ওই অ’ল’ক্ষি মেয়ে পরে যায় কিছুক্ষন পর লিনা ডাক দেয় কে বলে এসেছে আমার মনে ছিলো না আমি সিড়িতে পা রাখতেই সাইমার বদলে আমি পরে যায়। শুন তোকে ওই অপায়া সাইমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে হবে।’

‘ কোনো চিন্তা করো না আমি এসে গেছি তো এই বার দেখবে এই বাড়ি থেকে ওই ছোট লোকের মেয়েকে কিভাবে তাড়ায়।’
শয়তানি হাসি দিয়ে বললো সাবিনা।

‘ আমি জানি তো তুই পারবি। এই জন্যই তো তোকে আসতে বলছি।’
মিসেস সায়েরা মুচকি হেসে বললো।

‘ আন্টি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে আসলে সেইটা না যেনে তো আমি কোনো কাজ করতে পারবো না।’
সাবিনার কথা শুনে মিসেস সায়েরা লিনাকে বললো
‘ লিনা তুই আপাকে ডাকদে তো। লিনা ওকে বলে রুম থেকে চলে গেলো। লিনাকে যেতে দেখে মিসেস সায়েরা বললো কি কথা বল?

‘ তুমি লিনাকে রুম থেকে যেতে বললা কেনো?
সাবিনা বললো। সাবিনার কথা শুনে মিসেস সায়েরা বিরক্ত হয়ে বললো আমি জানি তুই কি প্রশ্ন করবি আর ওই বোকা মেয়ে শুধু জানে যে সাইমা ক্ষেত সেই জন্য ওকে আমরা এই বাড়িতে তাড়াচ্ছি কিন্তু ও আসল রহস্য যানে না।

‘ কি রহস্য?

‘ শুন তাহলে আমার শ্বশুর সব সম্পত্তি সিফাতের বাবার নামে দিয়ে গেছেন। তোর আংকেল খুবই বোক সে তার ভাইকে অনেক ভালোবাসে যার কারনে সে কোনো সম্পত্তি নেয়নি। সিফাত হওয়ার পর সিফাতের বাবা মা’রা যাওয়ার কিছুদিন আগে সিফাতের নামে সব সম্পত্তি বলে লিখে দিয়ে গেছে।
সায়েরা বেগম শয়তানি হাসি দিয়ে আবার বললো
‘ কিন্তু ওই সম্পত্তি আমার চাই যে করেই হোক। সাইমা থাকলে সেটা সম্ভব হবে না তাই তুই সাইমাকে তাড়িয়ে সিফাতকে বিয়ে করবি তারপর ওর যাবতীয় সম্পত্তি তুই অর্ধেক আমি অর্ধেক ভাগ করে নিয়ে নিবো।’

—————-
” সিফাত জেলখানা থেকে বের হয়ে আলিয়াকে বললো আলিয়া তুমি বাড়িতে চলে যাও।

‘ সিফাত কখনো নিরাশ হয়ও না আমরা ওই নারী পাচার কারীর দলের লিডারকে ধরবোই।’
আলিয়া বললো। সিফাত কিছু বলবে তার আগেই ফোনে কল আসলো সিফাত কল ধরতেই অপর পাশ থেকে একজন বললো
‘ মিস্টার সিফাত নারী পাচার কারীর দলের লিডার কে আমি জানি। আপনি তাড়াতাড়ি *** এই রেস্টুরেন্টে দেখা করেন বলে লোকটা কল কেটে দিলো।

সিফাত আলিয়াকে বললো
‘একজন নারী পাচার কারীর দলের লিডার কে তা যানে আমাদের তাড়াতাড়ি ** এই রেস্টুরেন্টে যেতে হবে।

তারপর সিফাত আর আলিয়া এই রেস্টুরেন্টে গেলো। সিফাত রেস্টুরেন্টে এসে একটা টেবিলে বসে আছে দুই মিনিট পর মুখে মাক্স পরা একটা ছেলে এসে সিফাতের পাশে বসে বললো
‘ সিফাত আমি জানি তুমি অনেক দিন ধরে ওনাকে খুজতেছো আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।

সিফাত ভ্রু কুচকে বললো
‘ তুমি কে?

ছেলেটা সিফাতের কথায় মাক্স খুলে বললো
‘আমি আরিফ একজন পুলিশ অফিসার।

সিফাত আর আলিয়া চমকে গেলো।
সিফাত আরিফকে বললো
‘ নাম কি লিডারের ?

‘ ওর নাম হচ্ছে আরফান খান। ও নিজের আসল চেহারা কাউকে দেখাই না।’
আরিফ বললো।

‘ এই নামটা কেমন জানি চিনা লাগে।’
মনে করার চেষ্টা করে বললো সিফাত।

‘ তাকে কোথায় পাবো তা জানো?
আলিয়া বললো।

‘ ও এই দেশেই আছে তবে লুকিয়ে।’
আরিফ বললো।

‘ ধন্যবাদ তোমাকে। চিন্তা করো না ওকে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ধরবো।’
সিফাত কিছু একটা ভেবে বললো।

‘ আচ্ছা তাহলে আমরা যায়। কোনো খবর পেলে আমাদের যানাবেন।
আলিয়া বললো।

‘ আচ্ছা।
আরিফ হালকা হেসে বললো।
তারপর সিফাত আর আলিয়া আরিফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। সিফাতের কেনো জানি মনে হচ্ছে লোকটাকে ও চিনে নাম টা আগে কোথাও শুনেছে। সিফাত আলিয়াকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিজেও বাড়ির দিকে রওনা দিলো।



মিসেস সায়েরার কথা শুনে সাবিনা হাসি দিয়ে বললো
‘ আন্টি তোমার মাথায় তো প্রচুর শয়তানি বুদ্ধি।

‘ চুপ শয়তানি বুদ্ধি না।
চোখ গরম করে বললো মিসেস সায়েরা।

এদিকে
সাইমা গেষ্ট রুম থেকে চাচি শাশুড়ির রুমের সামনে আসতেই মিসেস সায়েরা আর সাবিনার কথা শুনে সাইমা প্রচণ্ড অবাক হয়, সাইমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো এতোটা নিচু মহিলা ভাবতেই পারেনি। সাইমা মনে মনে বললো ছিহ্ ছোট মা তুমি সম্পত্তির জন্য আমাকে বাড়ি থেকে বের করতে চাও। কিন্তু সেটা কখনোই হবে না আমি এতদিন চুপ থেকেছি কিন্তু আর নয়। আমি সিফাতের কোনো ক্ষ’তি হতে দিতে পারি না। তোমাদের কে এইবার উচিত শিক্ষা দিবো বলেই মুচকি হাসলো সাইমা। তারপর চাচি শাশুড়ির রুমে না গিয়ে নিজের রুমে আসলো।

বিকেলে
সিফাত নিজের রুমে বসে কাজ করতেছে। সাইমা সিফাতের কাছে এসে বললো
‘মায়ের ঔষধ শেষ হয়ে গেছে।

সিফাত ল‍্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ আচ্ছা আমি রাতে নিয়ে আসবো। সাইমা সিফাতের কথায় দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে নিচে আসলো।

কিছুক্ষন পর
সাইমা নিচে এসে দেখে ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে শুধু সাবিনা বাদে। সাইমা সোফার কাছে যাবে হঠাৎ কিছুতে বেজে পরে যেতে নিলেই সিফাত সাইমাকে জড়িয়ে ধরলো। সিফাত সাইমাকে ভালো ভাবে দাড় করিয়ে বললো স্টুপিড মেয়ে ভালো ভাবে দেখে চলতে পারো না আমি না ধরলেই তো পরে যেতে।

এদিকে
সাবিনা সাইমাকে আসতে দেখে ও তাড়াতাড়ি করে নিচে এসে সাইমার পায়ে নিজের পা দিয়ে ধাক্কা দিলো কিন্তু সিফাত সাইমার সামনে থাকাই ওকে ধরলো। সাবিনা মনে মনে বললো ও গড ফ্লোরে পরে না গিয়ে সিফাতের বুকের উপরে পরলো এই মেয়ে।

‘আমি দেখিনি।’
মাথা নিচু করে বললো সাইমা। তারপর সিফাত বললো কফি নিয়ে আসো তো মাথাটা কেমন যানো করতেছে। সাইমা সিফাতের কথা শুনে বললো আচ্ছা দাড়ান আপনি, আমি এখনি বানিয়ে নিয়ে আসছি বলে সাইমা রান্না ঘরে গেলো। সাবিনা সাইমাকে যেতে দেখে সাইমার পিছু পিছু রান্নাঘরে এসে…

চলবে….