গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-১৭

0
3965

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-১৭|

সাদিব এক ঘন্টা পর ফিরে এসে প্রথমে সাবিহার ঘরে উকি দিলো।তিনজন মিলে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
আজ অনেক দিন পর সাবিহাকে এভাবে হাসতে দেখছে।সব রীতির ম্যাজিক সেটা বুঝতে বাকি নেই সাদিবের।সাদিবের চোখ গেলো রীতির দিকে।হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা ওর।সাদিব মুচকি হেসে হাতের প্যাকেটটা ডাইনিংয়েএ উপর রেখেছে।তারপর ভাবতে লাগলো কিভাবে কি করবে।
সাদিব কিছুক্ষণ ভেবে মাথা চুলকে বললো,
—-“এ আমার কর্ম নয়।”

সাদিব আবারো সাবিহার রুমের কাছে গিয়ে উকি দিলো।তারপর ফিসফিস করে দিয়াকে ডাকছে।কিন্তু ওর ফিসফিসানি শব্দ দিয়ার কানে পৌছায় নি।অনেকক্ষন ফিসফিস করার পর হটাৎ রীতির চোখ পড়লো সাদিবের দিকে।
রীতি কিছু বলতে নিলে সাদিব ইশারায় চুপ বললো।
রীতি চুপ করে গেলো।তাদের রীতিকে ইশারায় দিয়াকে দেখালো।রীতি দিয়াকে একটা খুচা মেরে ইশারায় সাদিবের দিকে তাকাতে বললো।
দিয়া সাদিবের দিকে তাকাতেই সাদিব হাতের ইশারা করে ডেকে নিলো দিয়াকে।দিয়া রীতির দিকে একবার তাকিয়ে সাবিহাকে বললো,
—-“আমি একটু পানি খেয়ে আসছি।”

দিয়া উঠে বাইরে বেরিয়ে এলো।রীতির হাসিখুশী মুখটা হটাৎ কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।দিয়ার যাওয়ার দিকে একমনে চেয়ে আছে।দিয়াকে সাদিব কেনো ডেকে নিয়ে গেলো?কোথায় নিলো?কি বলতে নিয়ে গেলো।রীতির মন খচখচ করছে।ওর মনোযোগ নেই এখানে।ওর মন পড়ে আছে ওদের দিকে।বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে।

দিয়া রুম থেকে বের হতেই সাদিবকে বললো,
—-“সব এরেঞ্জ হয়ে গেছে? কেক রেডি?”

সাদিব অসহায় ফেস করে বললো,
—-“সব এরেঞ্জ হয়েছে বাট আমি রেডি করতে পারছিনা।তাই তো তোমাকে ডাকলাম।দেখো তো কিভাবে কি করতে হবে?একটু দেখে নেও প্লিজ।”

—-“ওকে ওকে আমি দেখছি।নো টেনশন ডু ফুর্তি।”
দিয়া কেকের প্যাকেট খোলে হা হয়ে রইলো।
—-“ওয়াও! কি সুন্দর কেক?”

সাদিব চেয়ার টেনে বসে বললো,
—-“অবশ্যই আমার বোনের ১৮তম বার্থডে বলে কথা।একটু স্পেশাল হওয়া চাই।”

দিয়া মুচকি হেসে কাজে মন দিলো।

.

সাবিহা দেখছে কখন থেকে রীতি মুখ কালো করে রেখেছে।
—-“রীতি আপু কি হয়েছে?মুখ কালো করে রেখেছো কেনো?”

রীতি জোরপূর্বক হেসে বললো,
—-“কই নাতো।”

আর তখনই দিয়া পা টিপে টিপে ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকলো।রীতি পেছনে ঘুরে দেখে দিয়ার হাতে কেক।দিয়া রীতিকে ইশারা করলো।রীতি হাসিমুখে উঠে দাড়ালো।
তারপর দুজন মিলে সাবিহার পেছনে থেকে চিতকার করে বললো,
—–“হ্যাপি বার্থডে সাবিহা।”

আকস্মিক চিতকারে সাবিহা ভড়কে যায়।তারপর একপ্রকার লাফিয়ে উঠে ভয়ে।পেছনে ঘুরে কেক দেখে চোখ বড়বড় করে রাখে।
সাদিব দরজায় হেলান দিয়ে ওদের দেখছে।
সাবিহা ভেবেছে এবছর কেউ ওকে উইশ করবেনা।হয়তো কারো মনেই নেই জন্মদিনের কথা।এতো সুন্দর একটা কেক দেখে সাবিহার চোখে পানি চলে আসে।
সাবিহা কৃতজ্ঞতার সুরে বললো,
—-“থ্যাঙ্কিউ।তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।”

দিয়া সাবিহার গাল টেনে বললো,
—-“আমরা জাস্ট দাওয়াতে এসেছি।এরেঞ্জ করেছে তোমার ভাইয়া।”

দিয়া দরজার দিকে ইশারা করলো।সাবিহা দেখলো সেখানে ওর ভাই দাড়িয়ে আছে।
সাবিহা বিছানা থেকে নেমে ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ধীরে ধীরে ভাইয়ের দিকে তাকালো।তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,
—-“ভাইয়া আমাকে মাফ করে দিও।আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি।তোমাদের মিথ্যা বলেছি,ঠকিয়েছি।আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি।আমি ভুল বুঝতে পেরেছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও।কথা দিচ্ছি এই ভুল আমি আর রিপিট করবোনা।আমি আগের মতো হয়ে যাবো।খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করবো।একদম ভালো মেয়ে হয়ে যাবো।আমাকে শুধু মাফ করে দেও।”

সাদিব এতোক্ষণ বোনের কথা শুনছিলো।কথা শেষ হতেই চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
—-“দূর পাগলী তোর উপর কি রাগ করে থাকতে পারি?তুই বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক।তুই শুধু আগের মতো হয়ে যা।আমার আর কিছু চাইনা।”

—-“আমি সবাইকে কষ্ট দিয়েছি।রীতি আপু আমাকে কতবার বুঝিয়েছে।আমি বুঝিনি।উল্টো আপুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।”

সাদিবের মনে পড়লো ও নিজেও রীতির সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে,ভুল বুঝেছে।সাদিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“শুধু তুই?আমিও তো।আমাকে রীতি এসব বলার পর বিশ্বাস করিনি।ওকে ভুল বুঝেছি।খারাপ আচরণ করেছি।”
রীতি সাদিবের কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো।
সাদিব রীতিকে আবারো বললো,
—-“রীতি আ’ম সরি এগেইন।আর তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।তুমি অনেক হেল্প করেছো।আজ সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে শুধু তোমার জন্য।”

দিয়া নখ কাটতে কাটতে বললো,
—-“আর আমি কি চান্দের দেশ থেকে টপকে পড়লাম?”

দিয়ার কথা শুনে সাদিব হেসে ফেললো।
—-“সরি সরি।তোমার প্রতিও আমি অনেক কৃতজ্ঞ।সেদিন তুমি সত্যটা প্রুফ করেছিলে বলেই আজ আমরা এখানে।এতো হ্যাপি।তোমার কথা কি করে ভুলে গেলাম।থ্যাংকস এগেইন।”

দিয়া হেসে ফেলে বললো,
—-“আরে আমি তো মজা করছিলাম।আপনি তো সিরিয়াসলি বলছেন।”

রীতির ওদের ধন্যবাদের পালা ভালো লাগছে না।তাই বললো,
—-“সাবিহা কেক কাটবেনা?কত সুন্দর একটা কেক এনেছে তোমার জন্য।”

সাবিহা বাচ্চাদের মতো করে বললো,
—-“হ্যা অবশ্যই কাটবো।কেনো নয়?এতো সুন্দর একটা কেক।নিশ্চয়ই খুব ইয়াম্মি হবে।আমার পেটের ইদুররা চিতকার করে বলছে খেতে।”
সাবিহা তাড়াতাড়ি চাকু নিয়ে কেক কাটতে লাগলো এবড়োখেবড়ো করে।ওর কাহিনী দেখে সবাই হাসছে।

.

রীতি পড়াশোনায় খুব ব্যস্ত।দুইটা পরীক্ষা শেষ।আজকাল পড়াশোনা ছাড়া আর কিছু করা হয়না।কোথাও যাওয়া হয়না।পরীক্ষার হল টু বাড়ি।বাড়ি টু পরীক্ষার হল।ছাদে যাওয়া হয়না।পরীক্ষার কেন্দ্রও দূরে পড়েছে।রোজ বাবা দিয়ে আসে আর মা নিয়ে আসে।এভাবেই চলছে।
আজ রীতির ছোট মামা এসেছে।চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রীতির পাশে এসে বসে রীতির জন্য আনা চায়ের কাপ টেবিলে রেখে রীতির মাথায় টুকা মেরে বললো,
—-“কিরে ভাগ্নী কেমন ফিল করছিস?”

রীতি কলম রেখে অসহায় ফেস করে বললো,
—-“আর বলোনা মামা।পুরো তেতো।নিমের মতো তেতো ফিল করছি।পড়তে পড়তে জান শেষ।”

—-“তাহলে এক কাজ করি তোর জন্য ছেলে দেখি।বিয়ে করে ঘরসংসার কর।পড়াশোনার প্যারা নিতে হবেনা।”

রীতি চায়ে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলো।মামার কথা শুনে চোখ বড়বড় করে নিলো।কিছু বলতে যাবে তখনই রীতির বাবা এসে হাসতে হাসতে বললো,
—-“কি শালা মশাই।আমার মেয়েকে কি বুদ্ধি দেও হুহ।সব বুদ্ধি দেও কিন্তু এসব প্রেম-বিয়ের বুদ্ধি দিওনা।ওসব বেশ দেরী আছে।পড়াশোনা শেষ করবে বিসিএস করে ভালো জব করবে তারপর প্রেম বিয়ে যা খুশি করুক।আমার কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু আপাতত আমার স্বপ্ন পূরণ করা ওর জীবনের একমাত্র টার্গেট।”

রীতির মামা দুপাটি দাত বের করে হেসে বললো,
—-“আরে দুলাভাই আমি তো মজা করছিলাম।”

রীতির বাবা উপদেশ দিয়ে বললো,
—-“সেন্সেটিভ বিষয়ে মজা করাও উচিত না।”
তারপর তিনি চলে গেলেন।রীতি মনে মনে হতাশ হলো বাবার কথা শুনে।এইজীবনে আর প্রেম করা হবে না।কেউ আসবেনা ওর জীবনে।

রীতির মামা রীতির বাবা যেতেই হাফ ছেড়ে বাচলেন।
—-“উফফ,এ যাত্রায় বেচে গেছি।”
তারপর রীতির দিকে তাকালেন।রীতির মুখটা কেমন লাগছে।রীতির মামার সাথে চোখাচোখি হতেই রীতি নিজেকে স্বাভাবিক করে আবার কলম হাতে নিয়ে লেখা শুরু করলো।রীতির মামা রীতির মধ্যে কিছু একটা দেখছে।তারপর তিনিও চিন্তিত ভংগীতে উঠে গেলেন।

.

রীতির ৫ম পরীক্ষা শেষ।পড়াশোনা করতে করতে হাপিয়ে গেছে।যদিও সারাবছর প্রচুর পড়াশোনা করেছে তবুও পরীক্ষার এক মিনিট আগে পর্যন্ত ওর পড়া চাই।মাথাটা কেমন ধরেছে।রীতির মনে হচ্ছে খোলা হাওয়া চাই।
রীতি ছাদে গিয়ে রেলিঙ ধরে দাড়ালো।ছাদে কেউ নেই।সব সময় তো কারো আসা-যাওয়া লেগেই থাকে।তবে রীতির একাই ভালো লাগছে।একা একা গোধূলি বেলা উপভোগ করছে।রাঙা আলো গায়ে মাখছে।খোলা চুলগুলো উড়ছে।
হাতের ফোনটা বেজে উঠলো।রাইসা ফোন করেছে।ফোন রিসিভ করতেই রাইসার ক্লান্ত সুর ভেসে এলো।
—-“বান্ধবী পড়তে পড়তে মরে যাচ্ছি।পড়ালেখা ছেড়ে দেবো।ছেলে দেখ বিয়ে করবো।এই পড়ালেখার চেয়ে রান্নাবান্না,বাসনকোসন মাজাও ভালো।”

রীতি রাইসার কথা শুনে না হেসে পারলোনা।ওর মামাও বিয়ে নামক সমাধান দিলো।আর রাইসাও বিয়ে করতে চাইছে।
—-“দোস্ত একটা প্রেম কর।তারপর বিয়ে করে নে।”

রাইসা রীতির কথা শুনে কন্ঠে জোশ এনে বললো,
—-“হুম,একটা প্রেম করবো।ভয়ংকর প্রেম।”

—-“হুম তারপর ভয়ংকর ভাবে একটা ছ্যাকা খাবি।”

রাইসা আপসোসের ভংগীতে বললো,
—-“দিলি তো কুফা লাগিয়ে।আর প্রেম হবেনা।”

রীতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্নিগ্ধ হেসে শীতল কণ্ঠে বললো,
—-“প্রেম করো কোনো সমস্যা নেই।তবে ভয়ংকর প্রেম করোনা।ভয়ংকর প্রেমের সবকিছুই ভয়ংকর।পরিনতিও ভয়ংকর।সেই পরিনতি শুধু তোমাকে না পুরো মহল্লা জালিয়ে দেবে।”

রাইসা হতাশ হয়ে বললো,
—-“বুঝেছি মেরি মা।তোকে দ্বারা কিচ্ছু হবেনা।আর আমাকেও দিলি ভয় পাইয়ে।এখন আর তোর সাথে কথা বলার মুড নেই।যা ভাগ।”

রাইসা ফোন কেটে দিলো।রীতি ফিক করে হেসে দিলো।তারপর কান থেকে ফোন সরিয়ে পেছনে ঘুরে ওর মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।
সাদিব দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টি রীতির দিকে।অপলক চেয়ে আছে।সে অদ্ভুত দৃষ্টি,মাদকতা পূর্ণ দৃষ্টি।রীতি মাথা নিচু করে নিলো।সাদিবের হেলদোল নেই।রীতি মাথা তুলে সাদিবের দিকে চেয়ে স্নিগ্ধ হেসে তাড়াতাড়ি পা চালালো।সাদিব ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে রীতি এখনো দাড়িয়ে।গোধূলির রক্তমাখা আকাশের পাশ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে।
রীতি চলে গেছে।সাদিব রেলিঙ ধরে দাড়ায়।আর ভাবতে থাকে কিছুক্ষণ আগের দেখা রীতিকে তারপর আকাশের দিকে চেয়ে বিরবির করে বলে,
“গোধূলি পেরিয়ে তোমার দেখা মিলে,আমার অপেক্ষার অবসান ঘটায় গোধূলি।অতৃপ্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটে।গোধূলি তুই আমার প্রিয়তমার কাছে তুচ্ছ।আমার প্রিয়তমা তোর সৌন্দর্য হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।আমার প্রিয়তমার সৌন্দর্যে গোধূলি বেলা আমায় মুগ্ধ করছে।উফফফ।অপার মুগ্ধতা।”

তারপর সাদিবের রীতির কথাগুলো মনে পড়লো।তারপর ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত হাসি ফুটিয়ে অস্ফুটস্বরে বললো,
—-“ভয়ংকর প্রেম??উমম আমিও একটা ভয়ংকর প্রেম করতে চাই।”

রীতি সিড়ি দিয়ে নামছে আর উপরের দিকে তাকাচ্ছে।তারপর বিরবির করে বললো,
—-“উনি কি ভাবলেন কে জানে?সব রাইসার দোষ।ওর জন্য প্রেম ভালোবাসা নিয়ে পাকা পাকা কথা বলতে হলো।”

.

রীতি পরীক্ষার হলের বাইরে গেটের কাছে অপেক্ষা করছে।প্রতিদিন বাবা দিয়ে যায় আর মা নিয়ে যায়।প্রতিদিনের মতো বাবা দিয়ে গেছে কিন্তু মায়ের এখনো আসার খবর নেই।রীতি কতবার বলেছে একা একা চলে যাবে কিন্তু কে শুনে কার কথা।
রীতি বিরক্ত বোধ করছে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে।
রীতি ফোন অফ করে জমা দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলো।তাই ফোন অফ।বন্ধ ফোনটা অন করে মাকে ফোন করার জন্য।
রীতি মায়ের নাম্বারে ডায়েল করতেই ওর মা কান্নারত অবস্থায় ফোন রিসিভ করে বললো,
—-“রীতি,তোর বাবা হার্ট এট্যাক করেছে।আমরা হসপিটালে আছি।তুই চলে আয়।”

রীতির পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো।শরীরে বোধ পাচ্ছেনা।কেমন অসার হয়ে আসছে।সকালে যে মানুষটা হাসিমুখে বেস্ট উইশ করে ওকে রেখে গেলো সে হার্ট এট্যাক করেছে।হসপিটালে ভর্তি।রীতির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।কিছুটা শব্দ করে কেদে উঠছে।
তারপর দৌড়াতে শুরু করলো।আশেপাশের মানুষগুলো একরাশ বিস্ময় নিয়ে রীতির দিকে চেয়ে আছে কিন্তু রীতির সেদিকে হুশ নেই।ওর কানে একটা কথাই বাজছে ওর বাবা হার্ট এট্যাক করেছে।ওকে এখন যেতে হবে।পুরো দুনিয়া তুচ্ছ মনে হচ্ছে।নিজেকে অসহায় একা লাগছে।সিএনজি এতো স্পিডে চলছে তবুও মনে হচ্ছে পথ শেষ হচ্ছে না।রীতির এখন আরো বেশি কান্না পাচ্ছে।

.

রীতি চোখের পানি মুছছে আর কডিটোর দিয়ে দৌড়াচ্ছে।কেবিনের বাইরে রীতির মা,ভাই বসে আছে।আরো দুয়েকজন প্রতিবেশী।সাদিব আর বিল্ডিংয়ের আরেকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।রীতি মায়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে বললো,
—-“মা বাবা কেমন আছে?কিভাবে হলো এসব?”

রীতির মা কাদতে কাদতে বললো,
—-“জানিনা।বাড়িতে চলে এসেছিলো স্কুল থেকে।বললো শরীর ভালো লাগছে না।তারপর ভালো ছিলো।হটাৎ করে বললো শ্বাস নিতে পারছেনা।বুকে চাপ দিচ্ছে।তারপর কি হয়ে গেলো আমি নিজেও জানিনা।তারপর আমার চিতকার শুনে ওরা(সাদিবসহ কয়েকজন প্রতিবেশী)আসে।তারপর হসপিটালে নিয়ে আসি।”

রীতি কাদতে কাদতে উঠে দাড়ালো।আর তখনই ওর মামারা চলে এসেছে।রীতি কাদতে কাদতে ছোট মামার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
সাদিব এক দৃষ্টিতে সেদিকে চেয়ে আছে।কিছুই বুঝতে পারছেনা।লোকটা কে হতে পারে।
রীতির মামা বললো,
—-“পাগলী মেয়ে কাদছিস কেনো?সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই এভাবে কাদলে তোর মাকে কে সামলাবে?”

রীতির মামা রীতিকে ছেড়ে রীতির মায়ের কাছে এসে বললো,
—-“আপা এভাবে কাদছিস কেনো?দুলাভাই ঠিক হয়ে যাবে।কাদিস না।”

সাদিব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।এটা তাহলে রীতির মামা।
রীতির অন্য মামারা ডাক্তারের কাছে গিয়ে কথা বলায় ব্যস্ত।রীতির বাবার কন্ডিশন জানতে চাইছে।

চলবে….