গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-৩৩

0
426

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_৩৩
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

বর্তমানে সবার সামনে চুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ইহান।আর তার সাননেই রাগে জ্বলছে নাদিয়া বেগম।ইহান বেঁচে আছে তা সে মানতে পারছেনা।রাগে শরীর কাঁপছে তার।

পুরো রুমে পিনপিন নিরবতা বয়ছে।সবাই জানো পাথর হয়ে গিয়েছে ইহান বেচে আছে দেখে।তবে অবাকের মাঝেও সবার মনে এক খুশির ঝলক দেখা দিচ্ছে।ফারিহা ছলছল চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রচুর অভিমান করেছে সে ইহানের উপর তাকে এতো কষ্ট দেয়ার জন্য এই কয়দিন।

আসলে সেইসময় কথা শেষ করেই ইথান গিয়ে ইহানকে ডেকে নিয়ে আসে সবার সামনে।সবাই তো ভুত দেখার মতন চমকে উঠেছিলো প্রথমে।

রুমের নিরবতা ভেঙে ইথানের বাবা বলে উঠলেন,

—-ইহান যদি এখানে থাকে তাহলে আমরা কার দাফন করেছি এক সপ্তাহ আগে?আর ইহান কিভাবে বেঁচে আছে?তুই তো বললি মা ওকে অপারেশন থিয়েটারে মেরে ফেলেছে ডক্টরকে দিয়ে।তাছাড়া এতো বড় একটা সত্যি কেনো লুকালি আমাদের সবার থেকে?জানিস এতে সবাই আমরা কত কষ্ট পেয়েছি।

ইথানের বাবার কথা শুনে দিদুন বলে উঠলেন,

—-একদম তাই।ও যদি বেঁচে থাকে তাহলে কাল রাতে আমার ঘরে ওর ভুত কি করে আসলো?আর ইহান বেঁচে আছেই বা কিভাবে?

দিদুনের কথা শুনে ইথান হেসে বলে উঠলো,

—-ওটা আসলে ইহান ছিলো যে ভুত সেজে তোমাকে ভয় দেখিয়েছিলো।আর তাকে সাহায্য করেছিলো ছোট কাকু আর আমার নিজের আম্মু আর আমার দুই শাশুড়ী আম্মু।আর এই প্লানটা ছিলে আমার যাতে তুমি ভুতের ভয়ে সবাইকে সবটা বলে দেও সহজে।তোমাকে তো আর মেরে ধরে সত্যিটা বলানো যাবেনা তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করলাম বুঝলে দিদুন।

ইথানের এমন কথায় দিদুনের এবার মাথায় রাগ উঠে গেলো।তার সাথে এতো বড় ছলনা করলো ইথান!কালকে রাতে তার তো প্রাণ যায় অবস্থা ছিলো।আরেকটু হলে মরেই যেতো।তবে সবথেকে বড় রাগ হচ্ছে এটা ভেবে যে ইহানকে এতোকিছু করার পরও মারতে পারলো না সে।

তার চিন্তার মাঝেই ইথান এবার তার বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

—-তোমরা ইহানের না বরং অন্য একটা লাশের দাফন করেছো যেটাকে আমি মর্গ থেকে এনেছিলাম।আর তোমাদের এই কথাটা বলিনি কারন তাহলে তোমরা অনেক ইমোশনাল হয়ে পরতে আর দিদুন যা চতুর তাতে সব বুঝে ফেলতো।তারপর ইথান ইহানকে যেভাবে বাঁচিয়েছিলো তার সব ঘটনা সবাইকে খুলে বললো।

ইথানের এমন কাজে ওর বাবাসহ সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।ছেলে তার দেখি অনেক বুদ্ধিমান আর বড় হয়ে গিয়েছে।কত বুদ্ধির সাথে কাজটা করলো সে।মনে মনে হেসে উঠলো সে ছেলের গোয়েন্দাভাব দেখে।হঠাৎ সবার চিন্তার মাঝেই ইথান বলে উঠলো,

—-এখন আসল কথা আসি সবাই।তো মিস নাদিয়া বেগম আপনিই বলুন আপনি আপনার করা জগন্য কাজের জন্য কি শাস্তি পেতে চান?

ইথানের এমন কথায় ঘাবড়ে গেলো নাদিয়া।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার।শাড়ির আচলে ঘাম মুছে কিছুটা আমতা করে বলে উঠলো সে,,

—-আআমার বয়স হহয়েছে।এই বয়সে এএসে আমাকে আআর কি শাস্তি দিবি বল?মাফ ককরে দে আমাকে।

নাদিয়ার কথা শুনে ইথান অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।হঠাৎ ইথানের এমন কাজে সবাই বেশ অবাক হলো।ইথান কোনোদিন এমন ভাবে হাসে না।ইথানের এমন হাসিতে কেনো জানি নাদিয়া বেগমের ভয় হচ্ছে।সে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,

—-ওইভাবে হাসছিস কেনো?ইহান ওতো লাবিবাকে মারতে চেয়ে তোকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলো তবুও তো ওকে মাফ করে দিয়েছিস।তাহলে আমাকে কেনো করবিনা?

দিদুনের এমন কথা শুনে ইথান হাসি থামিয়ে রাগি ভাবে বলে উঠলো,

—-তোমার কি একটুও লজ্জা করছে না দিদুন?নিজের অন্যায়কে অন্য একজনের সাথে তুলনা করছো তুমি।ইহান তো তোমার থেকে বয়স আর বুদ্ধি দুটোতেই ছোট।ওর বুঝার ক্ষমতায় বা কতো?ওর ভুলটা তাও মানা যায় কিন্তু তুমি?তুমি তো এতোদিন সংসার করে এসেছো।সব দিক দিয়ে তোমার জ্ঞান আছে।সেই তুমি কিনা এই বয়সে এসে এমন কাজ করলে?ওর সাথে তোনার তুলনা হয়না দিদুন।আর বাকি রইলো শাস্তির কথা তো ইহান তার কাজের জন্য যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছে।সবাই ওকে ঘৃণা করতো যেটা ওকে নিজেকে অনুতপ্ত হতে শিখিয়েছে।এমনকি ফারিহার থেকেই ও সবথেকে বড় শাস্তি পেয়েছে।প্রিয় মানুষের অবহেলা সয্য করার ক্ষমতা কারোর নেই কিন্তু ও সেটা সয্য করেছে।আর সবথেকে বড় আঘাত তো তখন পেয়েছে যখন ও জানতে পারলো লাবিবা ওর নিজের বোন।এতো কষ্ট আর আঘাতের পরই কিন্তু ইহান ক্ষমা পেয়েছে।তো তোমার ক্ষেত্রেও তাই হোক।আর সবথেকে বড় কথা হলো ইহান নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত ছিলো কিন্তু তোমার মধ্যে তো আমি তার ছিটেফোঁটাও দেখতে পারছিনা।

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলেই থেমে গেলো ইথান।সবাই নিরব শ্রোতা হয়ে ইথানের কথা শুনছে শুধু।
ফারিহা জানো এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।ইহানকে এতোদিন পর দেখতে পেয়ে সে তো নিজের চোখের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যাস্ত।এদিকে দিদুন ভয় পাচ্ছে না জানি ইথান তাকে কি শাস্তি দেয়।সবার চিন্তার মাঝেই ইথান বলে উঠলো,

—-তোমার বয়স হয়েছে তাই বাকিদের মতন তোমাকে আমি পুলিশে দিয়ে বা মেরে ধরে শাস্তি দিতে পারবো না।এতে নিজের কাছেই আরো ছোট হবো আমি।কিন্তু তোমার জন্য এক নিদারুন মানুষিক যন্ত্রণার ব্যাবস্থা করেছি আমি।আচ্ছা দিদুন তুমি তো আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?আমাকে ছাড়া থাকতে তো তোমার খুব কষ্ট হয় শুনেছি।তো সেই আমি যদি তোমাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে কেমন হবে বলোতো?

ইথানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলো।সবাই খুব ভালো করেই জানে যে নাদিয়া একমুহূর্ত ইথানকে না দেখলে পাগল হয়ে যায়।ছোট থেকেই সে ইথানকে সবথেকে বেশি স্নেহ করে।তাছাড়া ইথানও তো ওর দিদুনকে খুব ভালোবাসে।ও কি করে তাকে ছাড়া থাকবে?

ইথানের কথা শুনে নাদিয়ার এবার মাথার টনক নরলো।সে দ্রত গতিতে এসে ইথানের হাতটা আকড়ে ধরে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,

—-এমন করিস না দাদুভাই।তুই জানিস তুই আমার সাথে কথা না বললে,আমাকে দূরে রাখলে আমি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাবো।

নাদিয়ার এমন কথা ইথানের উপর কোনো প্রভাব ফেললো না।সে নিজেকে এই এক সপ্তাহে অনেক শক্ত করে নিয়েছে যাতে দিদুনকে শাস্তি দিতে পারে আর ওনার ভুলটা ধরিয়ে দিতে পারে।ইথান তার হাতটা ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নিলো দিদুনের থেকে যা দেখে দিদুন ওর দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো।ইথান এবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে উঠলো,

—-কালকে সকালেই আমরা আমাদের চট্টগ্রামের বাড়িটাতে চলে যাবো।কেউ আমার সাথে এই বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনো কথা বলতে আসবে না।আমার এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগে না।

ইথানের এমন কথায় সবাই একটু না বরং অনেকটাই অবাক হলো কিন্তু তারা সবাই রাজিও হয়ো গেলো।তাদের মনে হলো যে নাদিয়া বেগম একা থাকলে হয়তো নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে সবার ভালোবাসার অভাবে।তাই কেউ আর না করলো না।

—-কালকে লাবিবাকে রিলিজ করিয়ে আমি ডিরেক্টলি ওখান থেকে ওকে নিয়ে চট্টগ্রামের বাড়িতে চলে যাবো।

কথাটা বলেই ইথান সেখান থেকে গটগট করে চলে গেলো।একে একে সবাই রুম ত্যাগ করলো,

#চলবে?

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।হ্যাপি রিডিং🥰)