গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-৩৪

0
443

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্ত।নিজের রুমের ব্যালকনিতে চুপটি করে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে রক্তিম আকাশের দিকে চেয়ে আছে ফারিহা।সূর্য প্রায় পশ্চিমে ঢলে পরেছে।চারিদিকে শুনশান নিরবতা বয়ছে।মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া এসে ফারিহার গায়ে লাগছে।সে চুপটি করে প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ পরিবেশ উপোভোগ করছে।

হঠাৎ কাধে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো ফারিহা।তবে মুহূর্তেই বুঝে গেলো সে যে এটা আর কেউ না বরং ইহান।তাকে চিনতে যে একটুও কষ্ট হয়না ফারিহার।পিছনে ফিরতে যাবে তার আগেই ইহান তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে মুখ গুজে বলে উঠলো,

—-আমার প্রিয়তমা যে খুব অভিমান করেছে আমার উপর।এইজন্য সকাল থেকে একটাবারও আমার সাথে কথা বলেনি।কিন্তু সে কি জানে যে আমি তার সাথে কথা একটু বলার জন্য ঠিক কতটা ছটফট করেছি?তার ওই কাজল কালো অভিমানী চোখদুটো দেখার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছি?তার ওই,,,,

—-থাক থাক!এখন আর কবি হয়ে ওইসব রোমান্টিক ছন্দ বলে পাম দিতে হবে না।ছেলেদের ঢং আমার জানা আছে।প্রথমে কষ্ট দিবে তারপর মেয়েদের কাছে এসে ওমন ঢং করে সরি বলে মাফ চাইবে।

মাঝপথে ইহানকে থামিয়ে দিয়েই কথাটা বলে উঠলো ফারিহা।তার এমন কথায় ইহান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।কিছুক্ষন ফারিহার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে স্থম্ভিত হয়ে দাড়িয়ো রইলো সে।অতঃপর মুখটা বাকা করে বলে উঠলো,

—-কি সুন্দর একটা রোমান্টিক পরিবেশে এমন একটা ফাউল মার্কা কথা না বললে হতো না?মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো।

ইহানের এমন কথায় ফারিহার জানো রাগে গা জ্বলে উঠলো।তড়িৎ গতিতে ইহানের দিকে ফিরে রাগী স্বরে বলে উঠলো সে,

—-মজা নেন তাইনা?আমার জায়গায় থাকলে বুঝতেন কষ্ট কি জিনিস?তখন রোমান্টিক মুহূর্তও বিষাক্ত লাগতো।

ফারিহার এমন কথা শুনে ইহান মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।কিছু একটা ভেবে সে ফারিহার কোমোড়ে হাত রেখে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগী চোখে বলো উঠলো,

—-তুমিও তো আমাকে বলেছিলে যে আমার থেকে তোমার মুক্তি চায়।অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী থাকবে তখন?

ইহানের এমন কথা শুনে ফারিহা ছলছল চোখে বলে উঠলো,

—-আমি তো ওইটা রেগে বলেছিলাম।মন থেকে কি বলেছি নাকি?আপনি বুঝেন না কেনো বলুন তো?আমার যে খুব কষ্ট হয় আপনাকে ছাড়া থাকতে।

কথাটা বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো সে।ফারিহার এমন কাজে ইহান কিছুটা ভরকে গেলো।সে ভাবেনি ফারিহা এভাবে কেদে দিবে।সে ফারিহাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

—-এই বউ কান্না করো না প্লিজ!তোমার চোখের পানি যে আমি সয্য করতে পারিনা।আমি তোমার সাথে অনেক আগেই দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ইথান ভাইয়া করতে দেয়নি তার প্লানের জন্য।আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া খুব কষ্ট পেয়েছো।এর জন্য তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে দেও কিন্তু এভাবে কান্না করো না প্লিজ।

ইহানের কথা ফারিহার কান পর্যন্ত যায়নি হয়তো তাইতো সে এখনো একই ভাবে কেঁদেই চলেছে।ইহানের শার্ট ভিজে গিছে অলরেডি ফারিহার চোখের জলে।ইহান এবার আর কোনো উপাই না পেয়ে বলে উঠলো,

—-তুমি যদি আর একটু কান্না করো তাহলে এবার আমি সত্যি না ফেরার দেশে চলে যাবো।আর কখনো ফিরে আসবো না তোমার কাছে।

ইহানের এমন কথায় ফারিহা চমকে উঠলো।সে দ্রুত নিজের চোখের জল মুছে বাচ্চাদের মতন ভিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

—-এমন বলবেন না প্লিজ।আমি আর কান্না করবো না কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ।আপনাকে ছাড়া থাকতে যে আমার খুব কষ্ট হয়।

ফারিহার এমন বাচ্চাদের মতন কথা শুনে ইহানের একটু হাসি পেলো কিন্তু তবুও সে না হেসে গম্ভীর হয়ে বলে উঠলো,

—-ঠিক আছে।এখন ভালো মেয়ের মতন ভাত খাবে তুমি।দুপুরে কিছু খাওনি।আমি খাবার নিয়ে আসছি দারাও।

কথাটা বলেই ইহান সেখান থেকে চলে গেলো আর ফারিহা বাচ্চাদের মতন হেঁচকি তুলে কাঁদতে রইলো।কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দ বের করলো না ভয়ে।কিছুক্ষণ পর ইহান এক প্লের খাবার নিয়ে ব্যালকনিতে আসলো।দোলনার উপর ফারিহাকে বসিয়ে দিয়ে নিচে বসে পরলো সে।তারপর প্লেটে ভাত মাখিয়ে ফারিহার মুখের সামনে ধরলো।ফারিহা ইহানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ধপ করে ইহানের কোলেড় উপর গিয়ে বসে পরলো।

হঠাৎ ফারিহার এমন কাজে চমকে উঠলো ইহান।সে ভাবেনি ফারিহা এমন কিছু করবে।ফারিহা মনে মনে ভাবলো,’এতোদিন আমাকে বহুত জালিয়েছো চান্দু।এখন তোমাকে একটু মজা দেখায়।’ফারিহা এবার ইহানের গলা জড়িয়ে ধরে মুখটা বাচ্চাদের মতন করে বলে উঠলো,

—-আমাকে কোলে রেখে খায়িয়ে দেন না প্লিজ।

ফারিহার এমন ব্যাবহারে ইহান জানো অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।যে মেয়ে লজ্জায় চোখ তুলে তাকায় না ঠিক মতন সেই মেয়ে কিনা এমন করছে।ভাবতেই বারবার চমকাচ্ছে ইহান।ইহান আর কিছু না ভেবে ওভাবেই ফারিহাকে খায়িয়ে দিতে লাগলো আর ফারিহাও চুপটি করে খেতে লাগলো।খাওয়া শেষ হলে ইহান সয়তানি করে বলে উঠলো,

—-ফারিপাখি তুমি খুব মোটা হয়ে গেছো।এইটুকু সময় কোলে রেখেই আমার পা দুটো ব্যাথা করছে।

ইহানের এমন কথায় ফারিহা ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ওর চুলগুলো আচ্ছা মতন টেনে দিলো।দু একটা চুল উঠেও এলো জোড়ে টানার জন্য।ফারিহার এমন কাজে ইহান হাসলো খুব।আর ফারিহা রাগী ভাবে উল্টো দিকে ঘুরে রইলো।ঠিক তখনই ইহান ফারিহার শাড়ির তল দিয়ে তার উন্মুক্ত পেটে হাত রাখলো।মুহূর্তেই ফারিহা চমকে উঠলো।তার শরীরে এক অজানা ভালোলাগার শিহরণ বয়ে গেলো।সুর্যের লাল আভা এসে তার মুখে পরছে যার দরুন লজ্জা রাঙা মুখটা আরো লাল হয়ে উঠছে।ইহান ফারিহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নেশাভরা কণ্ঠে বলে উঠলো,

—-অবশেষে এই গোধূলী লগ্নে আমি আমার প্রিয়তমার সব অভিমান ভাঙিয়ে তাকে পেয়েই গেলাম।এই গোধূলীর লাল আভায় আমার প্রিয়র লজ্জা রাঙা মুখটা যে একদম ফুটে উঠেছে।মনে হচ্ছে এই গোধূলীতেই তুমি প্রিয় মিশে আছো।আমাকে যে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে তোমার এই রূপ।

ইহানের এমন লাগাম ছাড়া একেরপর এক কথা শুনে ফারিহা বেচারি লজ্জায় কুকড়ে মরছে।না পারছে কিছু বলতে না পারছে কিছু সয়তে।

সকাল ৮টা।সবাই ঘুম থেকে উঠে পরেছে।নিজেদের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একটা গাড়িতে তারা অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছে।এখন নিজেরা তৈরী হচ্ছে চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।নাদিয়া ড্রইং রুমে বসে কান্না করছে আর সবাইকে যেতে মানা করছে কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না।

অবশেষে সবাই রেডি হয়ে নিচে নামলো।ফারিহা আর ইহানকে একসাথে নিচে নামতে দেখেই সে দেড়ে ইহানের কাছে গিয়ে বলে উঠলো,

—-ইহান আমাকে মাফ করে দে।আমি আমার কাজের জন্য ক্ষমা চায়ছি।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।তোরা এভাবে আমাকে একা রেখে চলে যাসনা।আমি এই বুড়ো বয়সে কি করে একা থাকবো বল?

#চলবে?