গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-৩৫ এবং শেষ পর্ব

0
963

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_৩৫(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

নাদিয়া বেগমের কথা শুনে ইহানের মনটা চাইলো তাকে ক্ষমা করে দিতে।ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইথান তাচ্ছিল্যের সুরে এসে বলে উঠলো,

—-ক্ষমা তো চাইছো কিন্তু সেটা মন থেকে নয়,শুধু আমরা তোমাকে একা রেখে চলে যাচ্ছি সেই ভয়ে বলছো।তোমার চোখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে দিদুন।

ইথানের এমন কথায় নাদিয়া থমকে গেলো।ইথান যে সবটা ধরে ফেলছে।নাদিয়া চুপ করে আগের ন্যায় দাড়িয়ে রইলো।তার এমন চুপ থাকা দেখে ইথান আর কিছু না বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।যাওয়ার আগে বলে গেলো সে,

—-আমি হস্পিটালে যাচ্ছি লাবিবাকে আনতে।ওখান থেকে ডিরেক্টলি চট্টগ্রাম চলে যাবো।

কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে গেলো ইথান।ইথানের চলে যাওয়া দেখে চোখদুটো জলে ভিজে গেলো নাদিয়ার।একে একে সবাই বাড়ির বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে পরলো আর গাড়ি ছেড়ে দিলো।ইহান আর ফারিহা আলাদা একটা গাড়িতে উঠেছে।ইহান ভেবেছিলো হয়তো ইথান দিদুনকে একটু ভয় দেখানোর জন্য এমন বলেছিলো কিন্তু এখন তো দেখছে সবটা সত্যি।অবশেষে সবাই চট্টগ্রামের বাড়িটার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

সবাই চলে যেতেই পুরো বাড়িটা একদম থমথমে হয়ে গেলো।যেখানে সবার হৈচৈ মেতে থাকতো আজ সেই বাড়িটাতে পিনপিনে নিরবতা বয়ছে।শুধু কয়জন সার্ভেন্ট আছে নাদিয়ার দেখাশোনার জন্য।নাদিয়া পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখছে আর কাঁদছে।সবার কথা প্রচুর মনে পরছে তার।একটা সময় যখন সে হাঁটতে হাঁটতে ইথানের রুমের সামনে এলো তখন শব্দ করে কেঁদে উঠলো।

ইথানের রুমে এসে বেডের পাশে থাকা ছবিটা দেখেই তার কান্নার গতি আরো বেরে গেলো।ছবিটাতে ইহান ইথানের গলা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে আর ইথান হাসছে।তাদের ছোটবেলার ছবি এটা।কান্নাভেজা কন্ঠেই বলে উঠলো নাদিয়া,

—-ইহান আমার সৎ নাতি হওয়ায় ওকে ছোট থেকেই পছন্দ হতো না আমার।ইহানকে সয্য করতে পারতাম না।আমি ইথানের ভালো চেয়েছিলাম।ওকে খুশি দেখতে চেয়েছিলাম।এইজন্য ইহানকে ইথানের পথের কাটা ভেবে ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আমি তো জেদ আর রাগের বসে এটাই দেখতে পায়নি যে ইহানকে আমি পথের কাটা ভাবলেও সেই আমার ইথানের খুশির কারন ছিলো।আমার ইথান দাদুভাইয়ের কলিজার টুকরো ছিলো।আমি সত্যি খুব খারাপ।আপন-সৎ তফাত করতে গিয়ে একটা ছোট্ট বাচ্চার সাথে বাজে ব্যাবহার করেছি।আমার সত্যি কোনো ক্ষমা হয়না।ইথান ঠিকই করছে আমাকে একা রেখে চলে গিয়ে।আমার সাথে এমনই হওয়া উচিত ছিলো।

নাদিয়া বেগম আজ অঝোর ধারায় চোখের জল ফেলে চলেছে।সে তার অন্যায়টা ঠিকই বুঝতে পেরেছে ঠিকই।কিন্তু আফসোস!সময় থাকতে সে তার ভুলটা বুঝতে পারেনি।

সময় কখনোই কারোর জন্য থেমে থাকে না।সে তো তার আপন গতিতে চলতেই থাকে।অতীতকে ফেলে রেখে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলে।আজ প্রায় ১৫দিন হয়ে গেলো ইথানরা চট্টগ্রামে এসেছে।লাবিবার প্রচুর খেয়াল রেখেছে ইথান এবং ইহান এই কয়েকদিন।এখন সে একটু না বরং অনেকটায় সুস্থ। লাবিবাকে সেইদিন হস্পিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে এখানে নিয়ে আসে ইথান।এই বাড়িতে আসার জন্য প্রথমে লাবিবা অবাক হলেও আস্তে আস্তে তাকে সব ঘটনা খুলে বলে ইথান।সবটা শুনে লাবিবা অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যায়।মনে মনে দিদুনের উের রাগ হলেও তাকে একা রেখে চলে এসেছে ভেবে প্রচণ্ড খারাপ লাগছে লাবিবার।তবে ভাইকে কাছে পেয়ে তার থেকেও দিগুন খুশি সে ফারিহা,ইহানসহ সবারই কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাও তারা কিছু বলছে না।তাদের ধারনা নাদিয়া একাকিত্ব অনুভব করলে তখন আপনাআপনি নিজের দোষটা বুঝতে পারতে।আর সেটাই সত্যি হলো।

আজ সোমবার।ইথানদের চট্টগ্রামে আসার ১৬দিন হলো আজ।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে।ঘড়ির কাটায় ৪টা বেজে ১৩মিনিট।ফারিহা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।আসলে ইহান সেই কাক ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে আর এখন পর্যন্ত বাড়ি ফেরেনি তাই তার চিন্তা হচ্ছে।ফোনটাও বন্ধ আসছে তার।

হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে উঠতেই দৌড়ে নিচে নেমে এলো সে।ফারিহা আসার আগেই দরজাটা অর্থী গিয়ে খুলে দিয়েছে।ফারিহা দরজার দিকে তাকাতেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ইহানকে আসতে দেখে।সে ভাবলো রুমে গিয়ে ইহানকে কয়টা ধমক দিবে এতো লেট করে আসার জন্য।কিন্তু তার আগেই ইহানের পিছনে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে চমকে উঠলো ফারিহা।অবাক চোখে সে ইহানের দিকে তাকালো।অর্থীরও একি অবস্থা।সেও হা হয়ে চেয়ে আছে ইহানের দিকে।ইহান ওদের দুজনকে এভাবে হা হয়ে থাকতে দেখে মুখটা বাকা করে কিউট স্মাইল দিয়ে বলে উঠলো,

—-এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো তোমরা?নিজেকে মনে হচ্ছে নতুন বর আর তোমরা আমাকে দেখতে এসেছো।ইশশশশ!আমার শরম করে বা বুঝি।

ইহানের এমন কথায় ফারিহার কাশি উঠে গেলো যা দেখে ইহান দ্রুত ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস নিয়ে ফারিহার কাছে চলে গেলো।ফারিহার কাছে পানিটা দিতেই ফারিহা ঢকঢক করে পানিটুকু খেয়ে নিয়ে রাগি কণ্ঠে বলে উঠলে,

—-আপনার সাহস তো কম না যে ঘরে আস্তো একটা বউ থাকতে নতুন বর হওয়ার কথা বলছেন!শখ দেখলে গা-পিত্তি জ্বলে যায়।

ফারিহার এমন কথায় ইহানের অনেক হাসি পেলো।ঠোঁট চেপে হাসতো লাগলো সে।এতোক্ষণে ড্রইং রুমে বাড়ির বাকি সদস্যরাও চলে এসেছে ফারিহার কাশির শব্দ শুনে।সবারই একি অবস্থা ইহানের সাথে আসা ব্যাক্তিটিকে দেখে।চোখ জানো ছানাবড়া হয়ে গিছে।

আসলে ইহানের সাথে আসা ব্যাক্তিটি হলো আর কেউ না বরং নাদিয়া বেগম।কেউ ভাবতে পারেনি নাদিয়া এতো তাতারি ইহানের সাথে এখানে আসবে।সে তো ইহানকে সয্যই করতে পারতো না।

লাবিবা ইথানের ফোনে গেমস খেলছিলো আর ইথান রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো ঠিক তখনই নিচ থেকে সবার চেচামেচির আওয়াজে তারা দুজন দুজনের দিকে বলদের মতন তাকালো বিষয়টা বোঝার জন্য।লাবিবা কিছু না বুঝতে পেরে ইথানের দিকে তাকিয়ে আবুলের মতন একটা হাসি দিলো।ইথান চোখদুটো সরু করে লাবিবার দিকে তাকিয়ে আছে।ঠিক তখনই নিচ থেকে তাদের ডাক পরলো।লাবিবা আর ইথান দুজনে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসলো।

দিদুনকে এখানে দেখে তারা চমকে উঠলো।ইথানকে এতোদিন পর দেখে নাদিয়ার চোখে জল চলে এলো।সবাই চুপ করে আছে এই মুহূর্তে ঠিক তখনই নাদিয়া সবার উদ্দেশ্যে করুনার সুরে বলে উঠলো,

—-তোরা সবাই ফিরে চল আমার সাথে।ওই বাড়িতে তোদের ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয়।আমাকে তো তোরা শাস্তি দিতে চেয়েছিলিস।বিশ্বাস কর তোরা যা শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে নিবো কিন্তু ফিরে চল আমার সাথে।আমাকে ক্ষমা করে দে তোরা।

সেদিন নাদিয়ার কথায় অনুতপ্তবোধ না থাকলেও আজ তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।চোখে তার ক্ষমার আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে।আজ সত্যি সে অনুতপ্ত তার কাজের জন্য।

সবার চিন্তার মাঝেই ইহান বলে উঠলো,

—-দেখো ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়।তাছাড়া একয়েকদিন অনেক শাস্তি পেয়েছে দিদুন।এবার তাকে ক্ষমা করে দেও সবাই প্লিজ।দিদুনকে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগছিলো না তাই সকালেই ঢাকায় চলে যায় দিদুনকে এখানে নিয়ে আসতে।আমি ভেবেছিলাম দিদুন হয়তো রেগে থাকবে আমার উপর।আমাকে বকা দিবে।কিন্তু না,দিদুন তো আমাকে স্নেহের সাথে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো।কান্না করেছিলো আমাকে জড়িয়ে ধরে।এমনকি আমার কাছে ক্ষমা অব্দি চেয়েছিলো।সার্ভেন্টের কাছ থেকে শুনেছি দিদুন নাকি খাওয়া-দাওয়াও ঠিক করে করেনি এইকয়েকদিন।এভাবে চলতে থাকলে এবার দিদুনের শরীর খারাপ করবে।তাই এবার তোমরা আর রেগে থেকোনা প্লিজ।দিদুন তো নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত।সত্যি বলতে দিদুন ছাড়া ইথান ভাইয়াও ভালো নেই আমি জানি।এমনকি তোমরা কেউই খুশি নেই।আমার এইগুলো আর ভালো লাগছে না।

এতোক্ষণ চুপ করে ইহানের কথা শুনছিলো সবাই।সবাই চুপ করে দাড়িয়ে আছে।কি বলবে তারা ঠিক বুঝতে পারছে না।ঠিক তখনই ইথান গিয়ে ওর দিদুনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।ইথানের দিদুন কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

—-কাঁদিস না দাদুভাই।আমি জানি তুই এইকয়েকদিন আমাকে দেখার জন্য রোজ ঢাকায় যেতি কিন্তু আমার সামনে যেতিস না।আমিও জোর করে তোকে আটকাতে চায়নি কারন আমার এইটুকু শাস্তির দরকার ছিলো।আমি সবার সাথে অন্যায় করেছি।জানিনা আমি কখনো তার জন্য ক্ষমা পাবো কিনা।

নাদিয়ার এমন কথায় ইহান গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

—-বাহ!এখন সব আদর ইথান ভাইয়া পাবে।তাকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো নাকি?

ইহানের কথা শুনে নাদিয়া ওকে ফের জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

—-এবার আর আগেরবারের মতন জঘন্য ভুল করবো না।সবাইকে সমান ভালোবাসবো।(অবশেষে বুড়ি দিদুন পথে এলো😜)

দিদুন ইথানকে ছেড়ে দিয়ে তার সাথে আসা একজন সার্ভেন্টকে ডাক দিলো।সাথে সাথে সার্ভেন্ট কিছু কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলো।নাদিয়া বেগম পেপারগুলো হাতে নিয়ে ইহান আর ইথনের হাতে দিয়ে বলে উঠলো,

—-নিজের করা জঘন্য কাজগুলো তো আর ফেরত নিতে পারবোনা তবে তা সুদ্রানোর যথেষ্ট চেষ্টা করবো।এই পেপারগুলো তোরা চলে আসার কিছুদিন পরই আমি নতুন করে করিয়েছি যেখানে সব সম্পত্তিগুলো আমি সমানভাবে তোর আর ইথানের নামে করিয়েছি।কাউকে বেশি বা কম দেয়নি।আমি আর আপন-সৎের ভেদাভেদ করে কোনো পাপ করতে চায় না।

এবার সে ফারিহার কাছে গিয়ে হাত জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

—-আমাই তুই ক্ষমা করে দিস দিদিভাই।আমি তোর স্বামিকে মারতে চেয়েছিলাম।তোর সবথেকে কাছের জিনিসটাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলাম।আমাকে মাফ করে দে তুই।

ফারিহা এবার আর রাগ করে থাকতে পারলো না দিদুনের উপর।প্রথমে তো প্রচুর পরিমান ঘৃণা হতো কিন্তু এখন চোখের সামনে একজন বৃদ্ধ মানুষকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার মনটাও গলে গেলো।সবাই এবার দিদুনকে ক্ষমা করে দিলো।বুড়ো মানুষকে আর কতই বা শাস্তি দেয়া যাই।

সময় আবারো তার আপন গতিতে চলতে লাগলো।আরো দুইদিন তারা চট্টগ্রামে থেকে ঢাকার বাড়িতে ফিরে এলো।কিছুদিন যাওয়ার পর লাবিবাও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলো।শুধু অতিরিক্ত ধকল নিতে মানা করা হয়েছে।অনেক হাসি ঠাট্টার মাঝে সবার দিনগুলো যেতে লাগলো।

চট্টোগ্রাম থেকে এসেছে তারা আজ দুই মাস হতে চললো।তবে আজকের দিনটা তাদের জন্য বাকি সাধারন দিনগুলোর মতন ছিলোনা।আজকে এহসান ম্যানশনে বিয়ের আয়োজন চলছে।ইথান আর লাবিবার বিয়ে আজকে।সবাই প্রচন্ড খুশি।লাবিবাকে বেশি ধকল নিতে মানা করা হয়েছে তাই বিয়ের অনুষ্ঠানও বেশি বড় করে করেন নি তারা।কারন যত বড় অনুষ্ঠান তত বেশি ধকল যাবে।

অবশেষে হাজারো সমস্যা পেরিয়ে আজকে ইথান আর লাবিবার বিয়েটা সুশীল ভাবে হয়ে গেলো।বর্তমানে বাসরঘরে বসে আছে লাবিবা।মনের মাঝে কেমন জানি চলছে তার।বুকটা ধুপধুপ করছে।বাহিরে চেচামেচির আওয়াজ আসছে।ইথানকে ফারিহা,অর্থীসহ বাড়ির ছোট প্রত্যেক সদস্য আটকিয়েছে টাকার জন্য।এই নিয়েই হয়তো ঝামেলা করছে ইথান।

আরো আধা ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে রাত ১০টার সময় রুমে ঢুকলো ইথান।দরজা খোলার আওয়াজে লাবিবার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠে।আস্তে আস্তে ইথান যত এগুচ্ছে লাবিবার বুকের ভেতর তত ধুকপুকানি বারছে।হঠাৎ ইথান লাবিবাকে পাশ কাটিয়ে বিছানার ওপাশে গিয়ে কাভার্ড থেকে নিজের ট্রাউজার আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

ইথানের এমন কাজে লাবিবা থ মেরে বসে রইলো।মনে মনে প্রচুর রাগ হলো তার ইথানের এমন ভাব মারা কাজে।প্রায় ১৫ মিনিট পর বেড়িয়ে এলো সে।দেখে মনে হচ্ছে ইথান শাওয়ার নিয়েছে।কালো টিশার্ট টা ইথানের ফর্সা গায়ে ফুটে উঠেছে একদম।ভেজা চুল দিয়ে কপাল বেয়ে টুপটাপ পানি পরছে।লাবিবাকে একপ্রকার তাক লাগিয়ে দিয়েছে ইথানের এমন লুক।ইথান লাবিবার কাছে এসে ওর চোখের সামনে তুড়ি মেরে ডেভিল হেসে বলে উঠলো,

—-ওমন ভাবে কি দেখছো লাবুপাখি?আমার বুঝি লজ্জা করে না।

—-ঢং দেখলে বাচিনা।ছেলের নাকি আবার লজ্জাও আছে।

—-ওমন ভাবে বলছো কেনো?তোমারই তো বর।সারাজীবন দেখতে পাবে।এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

ইথানের মুখে তোমার বর কথাটা শুনে লাবিবার মনে এক অজানা ভালো লাগা বয়ে গেলো।সত্যি তো।এই মানুষটা তো একন শুধুই তার।আনমনেই হেসে উঠলো লাবিবা।তারপর ওয়াশরুমে একটা থ্রি-পিস নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বেরুতেই ইথান তাকে কোলে তুলে নিলো।জানো সে বসেই ছিলো দরজার কাছে যে যখনই লাবিবা বেরুবে তখনই ইথান তাকে কোলে তুলে নিবে।আচমকা এমন হওয়ায় লাবিবা ভয়ে ইথানের শার্টের কলার খামচে ধরলো যা দেখে ইথান মুচকি একটা হাসি দিলো।

লাবিবাকে বিছানার উপর শুয়িয়ে দিয়ে ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে নেশালো কণ্ঠে বলে উঠলো,

—-অনেক জ্বালিয়েছো আমাকে তুমি প্রিয়তমা।অনেক অপেক্ষা করিয়েছো তুমি আমাকে।আজকে তার সব সোধ সুদে-আসলে তুলে নিবো আমি।তোমাকে একবারে নিজের করে নিবো।

কথাগুলো বলেই লাবিবার গলায় মুখ ডুবালো ইথান।অবশেষে আজকে রাতে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।

পরেরদিন সকাল গড়িয়ে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে এলো।সারাদিনের বউভাতের নানা ঝামেলা শেষ করে লাবিবা রুমের ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো।বাড়িতে এখন তেমন মেহমান নেই।তাই পরিবেশটাও বেশ শান্ত।

বিকেলের আকাশটা রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে।আকাশে ঝাকে ঝাকে পাখি উড়ে চলেছে তাদের নিজের গন্তব্যে।মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া এসে লাবিবার খোলা চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।এই গোধূলী লগ্ন তার সবথেকে বেশি পছন্দের।সারাদিনের ক্লান্তি এখানে এসে এক নিমেষেই উড়ে গেলো।

হঠাৎ পেছন থেকে ইথান এসে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরলো।হুট করে ইথানের এমন কাজে চমকে উঠলো লাবিবা।ইথানের স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলো সে।ইথান তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

—-আমাকে ছেড়ে একা একা গোধূলীবিলাস করা হচ্ছে বুঝি?দিজ ইজ নট ফেয়ার লাবুপাখি!

ইথানের এমন কথায় হাসলো লাবিবা।তারপর সেও ইথানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

—-আপনাকে ছাড়া এই গোধূলীবিলাস কখনোই সম্পূর্ণ হতো না।তাই আর রাগ করতো হবে না বুঝলেন?

লাবিবার কথা শুনে হালকা হাসলো ইথান।অতঃপর আনমনেই বলে উঠলো,

“তুমি ছাড়া যে সবকিছুই অসম্পূর্ণ প্রিয়।তোমাকে ছাড়া এই আমিটা যে জীবন্ত এক লাশ।অবশেষে এই বিকেলের গোধূলীতে_তুমি_প্রিয় আমার হয়েই গেলে।”

~~🍁সমাপ্ত🍁~~