গোপন কথা পর্ব-০৭

0
470

#গোপন_কথা
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক


‘ওর সাথে এমন ভাবে মিশবি যেন ও ভাবে তুই তার আপনের আপন!তুই প্রথমেই তাকে বলবি তোর ভাইয়ার সাথে ও কী করেছে না করেছে সব তুই দেখেছিস। তারপর তুই বলবি,তুই তাকে হেল্প করতে চাস। বিনিময়ে সে যেন তোকে ওই বাসার তুষারের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দেয়।আই মিন,তুই ওর সাথে এমন ভাবে কথা বলবি যেন ও ভাবে তুইও ওর মতোই। চরিত্রহীন।’
কথাগুলো বললো নোরা।
তিশা যেন অবাকের শেষ সীমানায় গিয়ে পৌঁছালো।সে বললো,’এসব কী বলছো না বলছো তুমি? ওই তুষার বেটারে দেখলেই তো আমার জীবন যায় যায়!চ্যাচড়া একটা!আর আমি কি না ওর সাথে দেখা করার কথা বলবো দীপার কাছে! অসম্ভব!পারলে সেই দেখা করুক গিয়ে তুষারের সাথে।এতে তার লাভ হবে। প্রেমিকের সংখ্যা একটা বাড়বে!’
নোরা বললো,’ধুর।ভাল্লাগে না।অত মাথামোটা কেন তুই? তুই কী সত্যি সত্যি ওর সাথে দেখা করবি নাকি!তুই জাস্ট ওর কাছে এটা বলবি।যেন ও তোকে তার সম পর্যায়ের ভাবে।মনে রাখিস,ও তোকে যতক্ষণ পর্যন্ত তার মতো না ভাববে ততক্ষণ কিন্তু সে তোর কাছে কিছুই শেয়ার করবে না। এই জন্য তোকে এই অভিনয়টা করতে হবে।’
তিশা এবার বুঝতে পারলো।সে হেসে বললো,’এখন বুঝতে পেরেছি।’
‘তারপর তুই ওকে বলবি আগামীকাল তুই তাকে সুযোগ করে দিবি। বিনিময়ে এর পরদিন সে তোকে সুযোগ করে দিবে।’
তিশা বললো,’ও মা,আমি আবার সুযোগ করে দিবো কী করে? বাড়িতে অন্য মানুষ আছে না?মা, তুমি?’
নোরা বললো,’এটা তুই বলবি।আমি মাকে নিয়ে মার্কেটে চলে যাবো। কাপড় কিনতে।’
তিশা বললো,’তারপর?এতে তোমার কী লাভ?’
নোরা বললো,’লাভ আছে।আমি দীপার ছেলেকেও নিয়ে যাবো সাথে।ওরা দুজন থাকবে শুধু।আর তুই থাকবি পাহারায়। কিন্তু পাহারায়‌ থেকেই তুই সি আইডির ভূমিকাটা পালন করবি!’
তিশা চমকে উঠলো।বললো,’কীভাবে?’
নোরা বললো,’আমরা বাসায় কেউ থাকবো না।এই সুযোগে ওরা নোংরামোতে মেতে উঠবে।তুই আগে ভাগেই ক্যামেরা তাক করে রেখে আসবি। টেবিলের উপর যে বইগুলো আছে। এই বইগুলোর মাঝে রাখবি। ছোট্ট ক্যামেরা।লাইটারের মতো দেখতে।’
তিশা অবাক হয়ে বললো,’তোমার ক্যামেরা আছে আর এই পর্যন্ত তুমি বললেও না পর্যন্ত? বাই দ্যা ওয়ে। তুমি ভিডিও করতে চাও তাই তো?’
‘হ্যা চাই।এটাই আমার প্লান।’
কিন্তু এতে তোমার লাভ কী হবে?এই ভিডিও দিয়ে কী করবে তুমি?’
‘এই ভিডিও দিয়েই ওদের পাপের খেলাটার সমাপ্তি ঘোষণা করবো। ইনশাআল্লাহ!’
তিশা জানে না এই কাজ করে সে ধরা পড়ে যাবে কি না!হতেও তো পারে ওরা ক্যামেরা দেখে ফেললো। তাছাড়া ওরা যে তার এই ফাঁদে পা রাখবে এরও তো কোন নিশ্চয়তা নাই!
তবুও সে চেষ্টা করবে।সে নোরাকে বললো,’ভাবী,ক্যামেরাটা দেখি একটু দেও তো!’
নোরা খানিক রাগ দেখিয়ে বললো,’আমায় আর ভাবী ডাকিস না। খারাপ লাগে। তাছাড়া আমি নিজেকে তোর ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবেও আর মানি না।তুই আমায় বুবু বলে ডাকবি।’
তিশা বললো,’ডাকবো।ক্যামেরাটা দেও দেখি বুবু।’
নোরা বললো,’ক্যামেরা তো নাই এখন।’
তিশা বললো,’নাই মানে?’
নোরা বললো,’ক্যামেরা আজ বিকেলে একজন এসে দিয়ে যাবে।বিকেল বেলা আমি যখন তোকে বলবো তখন তুই গেট খুলে গিয়ে ওর হাত থেকে নিয়ে আসবি।ও এসেই আমায় ফোন দিবে।’
তিশা বললো,’আচ্ছা।’

বিকেল বেলা ক্যামেরা দিয়ে গেল একজন এসে।তিশা তাকে চেনে না। চেনার প্রয়োজনও নাই। তবে এটা যথেষ্ট পরিমাণ ছোট।ওরা টের পাবে বলে মনে হচ্ছে না।’
এবার তিশা তার দায়িত্বে নেমে পড়বে।এটা তার আপন ভাই এবং খালাতো বোনের বিরুদ্ধে একটি মিশন। দুজনই তার রক্তের। যার জন্য সে এটা করছে সে তার রক্তের না।অন্য কোন মেয়ে হলে এটা কখনোই করতো না। বরং ভাইয়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান করতো।বলতো,তার ভাই নির্দোষ।খালাতো বোন নির্দোষ। কিন্তু তিশা এই ধাঁতের মেয়ে না।সে জানে পাপ যে করে সে যদি নিজের ঔরস জাত পিতা কিংবা জন্মদাত্রী মাতাও হয় তবুও তাকে ছাড় দেয়া যাবে না!
তিশার মোটেও খারাপ লাগছে না। বরং তার এতে আনন্দ হচ্ছে। শরীরের রক্ত শিরশির করছে। সে মনে মনে ভাবছে,যেন সে আজ মহৎ একটা যুদ্ধে নামছে। এই যুদ্ধে সে জয়ী হবে। শুধু সে একা না।এই জয় পৃথিবীতে আর যতো মানুষ সত্যের পক্ষে আছে তাদের সকলের জয়। এই জয় একজন অবলা নারীর জয়। এই জয় বিদেশবিভুঁইয়ে পড়ে থেকে দেশে থাকা নিজের স্ত্রীকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করা এক আভাগা স্বামীর জয়!এই জয় মজলুমের।আর পরাজয় সমস্ত জালিমের।
তিশা বুকে প্রবল সাহস নিয়ে এগিয়ে গেল দীপার কাছে।দীপা তখন ট্যাব দিয়ে কী একটা গেইম খেলছে। খুব আনন্দিত সে। ঠোঁটে ঝুলে আছে মিষ্টি হাসি।
ওর পায়ের শব্দ পেয়ে দীপা চোখ তুলে তাকালো। তারপর বললো,’ওরেব্বাবা,তিশা যে আমার কাছে এলো!আমি তো ভেবেছিলাম তুই বুঝি আমায় চিনিসই না।আসার পর থেকে তো তোকে কাছেই পাই না একদম।’
তিশা মনে মনে বললো,আমায় কাছে পাবে কী করে?সব সময় তো আমার ভাইটিকেই কোমড়ের সাথে বেঁধে রাখো!
কিন্তু মুখ দিয়ে বললো সে অন্য কথা। হাসি হাসি মুখ করে সে বললো,’আপু, তুমি তো জানোই আমি এ বছর এইচএসসি ক্যান্ডিডেট। খুব প্রেশারে থাকি। পড়াশোনা করতে হয়।’
দীপা বললো,’আচ্ছা ‌। খুব ভালো। পড়াশোনা কর। এইচএসসি পাশ কর।তোর দুলাভাইকে বলে রেখেছি তোর জন্য যেন একটা ভালো ছেলে দেখে। ইতালিতে ওর বন্ধু বান্ধব কিংবা ছোট ভাই থাকলে দেখবে।পরে তুইও ওখানে চলে গেলি।’
তিশা ঠোঁট টিপে হাসলো।আর মনে মনে বললো, তুমি গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে ফেলো। আরেকটা না আরো দশটা করে ফেলো। নোংরা মহিলা কোথাকার!
তিশা এরপর আমতা আমতা করছে। কিছু একটা বলতে চেয়েও থেমে যাচ্ছে।
দীপা বললো,’কিছু বলতে চাচ্ছিস কিন্তু বলতে পারছিস না তাই তো?বলে ফেল।প্রেম টেম হয়ে গেছে নাকি? খালাকে রাজি করাতে হবে?’
তিশা লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে বললো,’এক্ষুনি না আপু। আমার তো পড়াশোনাই বাকী!’
‘তাহলে?তাহলে কী চাস তুই?’
তিশা ফট করে তখন বলে ফেললো,’আপু, ভাইয়ার সাথে তোমার —
কথাটা শেষ করলো না তিশা।ভয় এবং লজ্জা এসে তাকে গ্রাস করে ফেললো।
দীপা বললো,’কী?তোর ভাইয়া আমি কি!’
তিশা একদমে এবার বলে ফেললো।
বললো,’তোমরা যা করো এর সব আমি দেখেছি।রোজই দেখি!’
কথাগুলো বলে সে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
দীপা শোনে খানিক সময় চুপ করে নিজেকে স্থির করে নিলো।সে কী উত্তর দিবে তা ভাবছে। ভেবে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছে যে তিশা ভয়ংকর টাইপের মেয়ে। ওকে সাত পাঁচ দিয়ে বুঝানো যাবে না। এছাড়াও আরেকটা বিষয় সে যা বুঝলো তা হলো,তিশা তার কাছে একটা হেল্প চাইতে পারে। এবং এই হেল্পটা সে চাইবে ওদের দুজনের সম্পর্কের অযুহাতটা দেখিয়েই!
তাই সে বলেই ফেললো,’সম বয়সী দুজন মানুষ মত থাকলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।এটা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করলেই বুঝতে পারবি।এর আগে বুঝবি না।’
তিশা কথা বললো না।সে মাথা নিচু করেই বসে রইল।
দীপাই এবার আগ বাড়িয়ে কথা বলছে।বলছে,’এসব আবার কারোর কাছে বলে বেড়াসনি তো?খালা কী জানে কিছু?’
তিশা আস্তে করে বললো,’আমি কী বোকা নাকি যে জনে জনে এসব বলে বেড়াবো!কেউ জানে না। এমনকি ভাবীও না!’
‘ভালো।কারোর কাছে কিছু বলিস না।ওরা মূর্খ সুর্খ। এইসবের কিছুই বুঝবে না। কুসংস্কারে এদের আজো পর্যন্ত আচ্ছন্ন করে আছে।আমি বুঝতে পারি না এই দেশ যে কবে এসব কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবে!’
তিশা হাসলো। হেসে বললো,’আপু, সবাই যেদিন তোমার মতো উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে সেদিন হবে।’
কথাটা কিন্তু সে ইনসাল্ট করে বলেছে দীপাকে। কিন্তু দীপা ভেবেছে প্রশংসা।গর্বে ফুলে ফেঁপে উঠে সে একেবারে জাপটে ধরলো তিশাকে। তারপর বললো,’এই না আমার ছোট বোন।লক্ষ্মী বোন!কিউটি বোন’
তারপর তিশার গালে চুমু খেলো দীপা। তিশার বমি এসে যাওয়ার উপক্রম হলো যেন। তবুও কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর আসল কথাটা বললো।বললো,’আপু,তোমায় আমি একটা হেল্প করবো আর এর বিনিময়ে তুমি আমায় একটা হেল্প করবে। তুমি যদি এতে এগ্রি করো তবেই আমি সবকিছু খুলে বলবো!’
দীপা হেসে বললো—-

#চলবে