গোপন কথা পর্ব-০৫

0
370

#গোপন_কথা
#৫ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



একদিন নোরার কাছে এসে তিশা বললো,’ভাবী, এবার বুঝি তোমার কপাল সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেল! তোমার জন্য আমার খারাপ লাগে!কষ্ট পাই আমি!’
তিশা ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।
নোরা অবাক হয়ে তাকায় ওর দিকে। তারপর বলে,’কপাল খারাপ হবে কেন? কপাল তো সবে জোড়তে শুরু করেছে। সেদিন না বিয়ে হলো আমার। এখনও শরীরে হলুদের গন্ধ লেগে আছে। সামনে কতোদিন বাকী।কতো আনন্দ বাকী!’
তিশা বললো,’ভাবী, কীভাবে যে কথাটা বলি তোমার কাছে! আমারই খারাপ লাগছে।’
নোরা ওকে তাড়া দিয়ে বললো,’আরে সমস্যা নাই কোন। আমার যথেষ্ঠ সাহস আছে।কথা হজম করার শক্তি আছে।বলে ফেল।’
তিশা কিছুটা হাসি হাসি ভাব করলো ঠোঁটে। তারপর বললো,’সে তো দেখেছিই সেদিন তোমার যে কতো সাহস আর কতো ধৈর্য্য!অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল কে তবে?’
নোরা বললো,’আজও তবে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলতে এসেছিস তাই না?আজ আবার নতুন করে কী বলে ধোঁকা দিবি?’
তিশা মলিণ বদনে বললো,’না ভাবী। আজ যা বলবো তা সত্য।আল্লার কসম।’
‘তো বলে ফেল। আমার আর তর সইছে না বাপু!’
তিশা এবার বললো।বললো,’ভাবী, ভাইয়ার সাথে দীপা আপুর মনে হয় অন্য কোন সম্পর্ক আছে!’
নোরা হাসলো। হেসে বললো,’হ্যা আছেই তো। সেদিন না বললি তুই।দীপা আপু তোর ভাইয়ার প্রথম পক্ষের স্ত্রী।প্রমাণও তো আছে।একটা তিন বছর বয়সী ছেলে।’
তিশার খারাপ লাগছে। সে বললো,’না ভাবী না।এটা মোটেও মজা না কিন্তু!’
‘তবে কী এটা?কী এটা হুম?’
‘আমি অন্য কিছু দেখেছি।’
‘কী দেখেছিস? ওরা ভাই বোনের সম্পর্কের আড়ালে বর- বধূ খেলছে।তাই তো?’
‘ভাবী তুমি এমন করে কথা বলছো কেন? তুমি কী আমার প্রতি বিরক্ত?রাগ করেছো আমার সাথে?’
‘রাগের কী হলো?তুই কী আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছিস নাকি আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিস যে তোর সাথে রাগ করবো!’
‘ভাবী, তুমি তাহলে ওদের বিষয়ে সব জানো?’
‘দিনের আলোয় কেউ যদি ওসব করে বেড়ায় তবে না জানবার তো কথা না।আমি তো আর অন্ধ না।চোখেও ছানি টানি পড়েনি।আমি সব জানি।সব দেখি।’
‘তবে যে চুপ করে আছো?’
‘এটাই নিয়ম। মেয়েদের চুপ করে থাকতে হয়। তুইও তো মেয়ে। বিয়ে হলেই বুঝতে পারবি!’
‘কী বলছো এসব তুমি? তোমার জায়গায় যদি আমি থাকতাম তবে দেখতে আমি কী করতাম!’
নোরা হাসলো। হেসে বললো,’কী করতি?’
‘ওমন অসভ্য বরকে মেরে হাজত খাটতাম।’
‘তো অসভ্য ভাইটিকে মারছিস না কেন এখনো?’
নোরার হাতটা ধরে কেঁদে ফেললো তিশা। কেঁদে কেটে সে বললো,’বিশ্বাস করো ভাবী আমি ভাবতেও পারছি আমার ভাই অতটা নোংরা!সত্যিই আমার ইচ্ছে করছে ওকে খুন করতে!’
‘অত সহজ না রে তিশা। সবকিছু অত সহজ না।যদি সহজ হতো তবে সবাই খুনি হতো!পাপ আর থাকতো না পৃথিবীতে।আর মুখ দিয়ে সবাই বলতে পারে আমি হলে খুন করে ফেলতাম।এটা করতাম ওটা করতাম। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবতা বড় কঠিন!’
তিশা বললো,’আমি মাকে আজ বলবো।প্রয়োজনে মাকে নিয়ে দেখাবো ওরা কী করে!’
নোরা ওর হাতটা খপ করে ধরে ফেললো। তারপর বললো,’একদম না। একদম এটা করবি না।সময় হলে আমিই বলবো।প্লিজ তুই শুধু দেখে যা। আমার একটা প্লান আছে।সময় হলে তুই বুঝতে পারবি। এখন মুখ বন্ধ করে রাখ লক্ষ্মী বোন!’
তিশা মাথা নেড়ে সায় দিলো।সে চুপ থাকবে আর আড়াল থেকে দেখে যাবে। শুধুই দেখে যাবে।

ওরা পাপ করে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা পাপ।ঘরে সুন্দরী এবং নতুন স্ত্রী রেখে পর নারীর সঙ্গে মেতে উঠে ফাহাদ।এই পাপের শুরু দু চারদিন আগে থেকে শুরু হয়নি।এর শুরু বহু বছর আগে।তখন দীপার বিয়ে হয়নি। কেবল ক্লাস নাইনে পড়ে। ফাহাদও ওর সাথেই পড়তো।একই ক্লাসে একই স্কুলে। ফাহাদের একটা প্রেম ছিল। দীপার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সাথে। কিন্তু দীপার কেন জানি তা সহ্য হতো না। ফাহাদ যখন ওই মেয়েটির সাথে কথা বলতো, হেঁটে হেঁটে স্কুলের মাঠ পাড়ি দিতো, কখনো বাদাম কিংবা আইসক্রিম কিনে একসাথে খেতো ওর সহ্য হতো না।তার কান্না পেতো। নিজেকে অসহায় মনে হতো। ধীরে ধীরে এই অসহায়ত্ব আরো বাড়ে।তার খেতে ভালো লাগে না, কারোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না,পড়তেও ইচ্ছে হতো না। এভাবেই সে একদিন আবিষ্কার করে ফাহাদকে তার চায়।যে করেই হোক ওই মেয়েটির কাছ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপর কোন এক নির্জন দুপুরে বাসায় যখন কেউ ছিল না তখন দীপা জাপটে ধরেছিল ফাহাদকে। বুকের ভেতর তার মাথা গুঁজে কেঁদেছিলো। কেঁদে কেঁদে ফাহাদের গোলাপ রঙা পাতলা শার্টখানি ভিজিয়ে ফেলেছিল একেবারে।
ফাহাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো কী হলো?
দীপা বলেছিল,তুই আর কারোর হতে পারবি না।কারোর না।
এরপর ওরা মেতে উঠেছিল প্রথম পাপে। ফাহাদ অতটা পাকা ছিল না।বুঝতো না অত কিছু।দীপা ওর চেয়ে এক বছরের বড় ছিল।সে সব বুঝতো।অথবা তার উপর ভর করেছিল সেদিন ইবলিশ। তারপর ওরা পাপ করলো। দীর্ঘদিন।এই পাপের সমাপ্তি ঘটলো যখন মাধ্যমিক পাশ করতেই হুট করে দীপার বিয়ে হয়ে গেল।দীপা কেঁদেছিলো।ফাহাদও। কিন্তু ওরা অন্য সব ছেলে মেয়েদের মতো ছিল না। বিয়ে নিয়ে অত হৈচৈ করেনি। হয়তোবা বিয়ের আগেই তাদের দেনা পাওনা পরিশোধ হয়ে গিয়েছিল বলেই ! ফিরোজা বেগম সহজ সরল ছিলেন আজীবন। এখনও তিনি যেমন ওদের কান্ড কারখানা বুঝতে পারছেন না। তখনও বুঝতে পারেননি।
দীপার বিয়ের পর সে পাল্টে গিয়েছিল। ফাহাদ গোপনে ফোন করলে ব্লক করে দিতো।কথা বলতো না। এরপর ওর ছেলে হলো। তখন ফাহাদ একেবারেই ওকে ভুলে বসলো। কিন্তু ও যখন ভুলে বসলো তখন ফের ইবলিশ ভর করলো দীপার কাঁধে।ওর হাসব্যান্ড তখন চলে গেছে ইতালি। এরপর থেকে আবার শুরু। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হলেই ফাহাদকে সে ফোন করে ডাকতো।ঢাকায় তার কাছে।
কিন্তু বিয়ের পর ফাহাদের এই পথ থেকে ফিরে আসা কর্তব্য ছিল। ফিরে আসবে বলেও মনস্থির করেছিল। কিন্তু পারেনি। তৃতীয়বারের মতো এসে ইবলিশ এসে ভর করে বসলো দীপার কাঁধে।পাপে জড়াবে না জড়াবে না করেও লোভ সামলাতে পারলো না ফাহাদ!

রাতে ঘুম আসে না নোরার চোখে।সে গোপনে কাঁদে। নিজেকে বড় দূর্ভাগা মনে হয় তার।আর ভাবে অতীতের দিনগুলো।কত স্বপ্ন ছিল তার।মা সব সময় বলতো,তোর কপালে ভালো বর আছে রে।যে মেয়েরা ঠোঁট কাঁটা তাদের ভাগ্যে লক্ষ্মী ছেলে জুটে। কিন্তু তার ভাগ্যে জুটলো না কেন?মার কথা মিথ্যে হয়ে গেল কেন?
সে রাতেই সে লক্ষ্য স্থীর করে। বিশ্বাসঘাতকদের জন্য কোন দয়া নেই।সে যা নিয়ত করেছে তাই করবে। নিজের সংসার ভেঙ্গে যাবে আর সে কেন অন্যের সংসার নিয়ে ভাববে!

সে রাতে আরো একজন ঘুমোতে পারছে না। বিছানায় ছটফট করছে শুধু।ঘুম আসে না।সে আর কেউ নয়।তিশা।সে ভাবে পৃথিবীর সব পুরুষেরাই কী এমন? নোংরা! কীভাবে নিজের ঘরে স্ত্রী রেখে পর নারীর সাথে মেতে উঠে নোংরামিতে!
তারপর ভাবে দীপার কথা। ঘেন্না করে দীপাকে তার!বিদেশ বিভূঁইয়ে স্বামীটি তার কতো কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে তাকে দিচ্ছে। দূরে থেকেও তার কথা হয়তোবা কতো কতো বার মনে করছে।আর সে কি না!
ছিঃ!তিন বছরের ছেলেটি যদি বড় হয়ে কোনদিন জানে তার মা এমন নোংরা, তখন?
সে কী কোনদিন তাকে মা বলে ডাকতে পারবে? ঘেন্না করবে না ডাকতে?
তিশাও ভাবে এদের একটা শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কঠিন থেকে কঠিনতর শিক্ষা!

#চলবে