চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-০৫

0
259

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ৫
লিখাঃসামিয়া খান

দিহানকে আকড়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কেঁদে চলেছে সুবাহ।অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সকল ব্যক্তিবর্গ বেশ উৎসাহের সাথে তাদের ভাই-বোন এর মিলনরত দৃশ্য অবলোকন করে চলেছে।কোনোভাবে সুবাহকে শান্ত করতে পারছেনা কেও।তাদের বাবা ভিন্ন হলেও একই মায়ের গর্ভজাত সন্তান তারা।এজন্য হয়তো এত টান একে অপরের উপর।

সুবাহার এরকম আজগুবি কান্নায় বেশ বিরক্ত লাগছে দিহার।এত কান্নার কি আছে বুঝেনা।বেশ বিরক্তের সাথে সে সুবাহকে বলল,

“সুবাহ আপু তুমি কি এখন কান্না করা অফ করবে?আর এত কান্নার কি আছে?”

দিহার কথায় সুবাহ কোনো জবাব দিলো না।আগের মতো কান্না করে চলেছে।ধীরে ধীরে কান্নার বেগ কমে আসলে দিহান সুবাহার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলো,

“কান্না করা শেষ সুবাহ?”

“ভাই তুমি আমার ফোন রিসিভ করোনা কেন?আমার বিয়েতেও আসলেনা।তুমি জানো বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে তোমার সাথে যোগাযোগ করার কতো চেষ্টা করেছি।কিন্তু প্রত্যেকবার ফলাফল শূন্য ছিলো।

“আমি জানি বোন। আমি নিরুপায় ছিলাম।কিন্তু আজকে তো এসেছি।আর এত যে কান্না করলে একবারোও তো তোমার মেকআপ নষ্ট হলোনা!”

“ভাই!আমি কান্না করছি আর তুমি মেকআপ নিয়ে পড়ে রয়েছো।ইট ওয়াজ এ ব্যাড জোক।”

“ওকে।আই এডমিট ইট।”

“সুবাহ আপু কান্না শেষ তোমার?এত কান্না তো কালকে কাঁদলে না।”

“তুই একটু বেশী বুঝিস দিহা।”

“সেটা আর বলতে।বাই দ্যা ওয়ে আরিয়ান ভাই কই?”

“জানিনা তো।আশেপাশে কোথাও আছে হয়তো।”
,
,
,
গত তিনদিন ধরে মায়ার ফোনে অনবরত কল করে চলেছে আরিয়ান।অথচ ফোন উঠানোর নামগন্ধ নেই।আর এদিকে সব ফাংশন শেষ না হলে আরিয়ান মায়ার কাছে যেতে পারছেনা।মায়া কেনো বুঝতে পারছেনা সে যা করেছে তা সব তাদের ভবিষ্যতের জন্য।একবার হসপিটাল সে পর্যায়ে যেতে পারলে সুবাহকে সে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।শুধু ইলেকশন পর্যন্ত ওয়েট করছে আরিয়ান। কিন্তু মায়া তা বুঝতে চাচ্ছেনা।হতাশ হয়ে ফোনটা পকেটে রেখে পাশে থাকা চেয়ারে বসে পরলো আরিয়ান।মেয়েটার জন্য বড্ড টেনশন হচ্ছে তার।এমনিতেও ওর অনেক শত্রু।যদি এরমধ্যে আরিয়ানের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয় তো মায়াকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা।রাগে,দুঃখে হতাশায় নিজের চুল টেনে ধরলো সে।

“হোয়াই আর ইউ সো ফ্রাস্টেটেড ম্যান?”

মাথা তুলে আরিয়ান দেখতে পেলো দিহান দাড়িয়ে আছে।দিহানকে দেখে বেশ অবাক হলো আরিয়ান।সে যে আসবে রিশা তাকে একবারও বলেনি।চেয়ার থেকে উঠে দিহানের সাথে কমর্দন করলো সে।

“দিহান আহসান!আপনি যে আসবেন তা রিশা আমাকে একবারো বলেনি।তা নয় আমি নিজে আপনাকে রিসিভ করতাম।”

“আরিয়ান আমার সাথে ফর্মালিটি করোনা।কারণ আমি এখানে রিশার ফ্রেন্ড নয় সুবাহার ভাই হিসেবে এসেছি।”

“সুবাহ আপনার বোন হয়?জানতাম না তো।”

“হুম আমার মা আর সুবাহার না একজন কিন্তু বাবা ভিন্ন।”

“হোয়াট!কিন্তু এটা তো আমরা কেও জানতাম না।”

“আই থিংক শুধু তুমি জানোনা।আচ্ছা বাদ দেও আমি তোমার সাথে যে বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম।”

“কোন বিষয়ে?”

“আমার বোনকে ভালোবাসো?”

দিহানের করা আচমকা এ প্রশ্নে বেশ অবাক হলো আরিয়ান।হুট করে দিহান যে তাকে এ প্রশ্ন করে বসবে সে বিষয়ে ধারণা ছিলো না তার।বেশ অস্বস্থির সাথে সে উত্তর দিলো,

“হঠাৎ এ প্রশ্ন?আর এটা কি আমাদের মধ্যে পার্সোনাল বিষয় নয়?”

“একজন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বেশ কিছু পার্সোনাল জিনিস থাকে যা সবার সাথে শেয়ার করা যায়না।কিন্তু তাদের মধ্যে আদৌ ভালোবাসা আছে কীনা তা খুব সহজে প্রকাশ করা যায়। চকচকে ঝলমলে ছবি তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করার ভিত্তিতে বা কতো বড় গিফট দিলো, কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে গেলো এর ভিত্তিতে ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়না।তুমি যদি আমার বোনকে ভালোবাসতে তাহলে এ প্রশ্ন করতে না।সুবাহার নাম শুনলে তোমার মুখে আলাদা ধরণের একটা ঔজ্জ্বল্যতার সৃষ্টি হতো।জানি তোমাদের এরেঞ্জেড ম্যারেজ।তো বলতেই পারো ভালোবাসা তৈরী হওয়ার সময়টুকু পাওনি এখনো।কিন্তু জানো বিয়ে এমন একটা পবিত্র বন্ধন যে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে একে অপরের প্রতি এক আলাদা মায়ার সৃষ্টি হয়।শুধুমাত্র তোমার মনে যদি অন্য কারো বসবাস না থাকে।আমি কি বুঝাতে চেয়েছি আশা করি বুঝতে পেরেছো?”

দিহানের কথা শুনে আরিয়ানের মুখ শক্ত হয়ে গেলো।সে বেশ বুঝতে পারছে দিহান কি মিন করে বলেছে।কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে দিহা উপস্থিত হলো।

“হ্যালো আরিয়ান ভাইয়া কেমন আছেন?”

“ভালো আছি দিহা।”

“যদি কিছু মনে না করেন তো দিহান ভাইকে আমি নিয়ে যেতে পারি?”

“অবশ্যই।”

“ভাই একটু আসো তো।”

“হুম।”

দিহান এগিয়ে এসে আরিয়ানের সামনে দাড়ালো।আরিয়ানের দু কাঁধে নিজের হাত রেখে বলল,

“আমার বোনগুলো আমার জান।কখনো সৎ বোন হিসেবে দেখিনি।ওদের জন্য আমি বাড়ী ছেড়ে দিয়েছি।নিজের মা কে ছেড়ে দিয়েছি।তো বুঝতেই পারছো ওদের কতোটা ভালোবাসি।সুবাহার বড় ভাই আমি।সে হিসেবে তোমারও বড় ভাই।আশা করি বড় ভাইয়ের উপদেশ মেনে চলবে।ভালো থেকো আর সুবাহকে ভালো রেখো।দিহা চল।”

দিহাকে নিয়ে দিহান হাঁটা শুরু করলো।পিছনে আরিয়ান শক্ত মুখে দাড়িয়ে রয়েছে।সে এটা ভেবে পাচ্ছেনা মায়ার কথা দিহান কীভাবে জানলো।পরে না ঝামেলা করে বসে দিহান।

“মেয়েটার পরিচয় তুই আমাকে বলবি না দিহা?”

“জেনে কি করবে?”

“জানা দরকার।একবার শাসিয়ে আসবো শুধু।যদি আরিয়ান এখন পরকীয়া করে।”

“ভাই মেয়েটা ভালো।এরকম না।”

“তুই চিনিস মেয়েটাকে?পার্সোনালি।”

“পার্সোনালি না জানলেও এটা জানি মেয়েটা ভালো।”

“ঠিক আছে।তোর কথা মানলাম।মা আসেনি কেন?”

“তুমি আসবেনা তাই আসেনি।”

“কিন্তু আমি তো এসেছি।”

“সেটা তো আর মা জানতো না।”

“হুম।এখন আমি চলে যাবো সুবাহার সাথে হয়তো দেখা হবেনা।”

দিহার চুলে হাত বুলালো দিহান।দুই বোন তার জীবন।

“ভালো থাকিস।”

“আমি তো ভালো থাকবো ভাই কিন্তু তার আগে বল তোর হাতে কামড়ের দাগ কীসের?”

দিহার প্রশ্নে একটা মুচকি হাসি দিলো দিহান।

“আসলে হয়েছে কি আমি একটা বিলাইকে বশ করার ট্রাই করছি।বিলাইটা খুব দুষ্ট।তাই রেগে গিয়ে কামড় দিয়ে দিয়েছে।”

“ভাই আমি ছোট না।কোনটা মানুষের কামড় আর কোনটা বিড়ালের তা বুঝি।”

“এত বুঝতে হবেনা পিচ্চি।খেয়াল রাখিস নিজের।আসি।”
,
,
,

রাত এগারটা বাজে।দুর্বা অনেক আগেই নিজের রুমে চলে গিয়েছে ঘুমাতে।দুর্বার সবকিছু টাইম মোতাবেক হয়।এমনকি ঘুমও।প্রতিদিন রাত ১০ঃ৩০ এ ঘুমিয়ে পড়ে এবং সকাল পাঁচ টায় ঘুম থেকে উঠে।সব রুমের লাইট অফ করে যখন মায়া নিজের রুমে দিকে যাবে সেসময় কলিং বেল বেজে উঠলো।এটা নিয়ে মায়া ওতোটা চিন্তা করলো না।কারণ মাঝেমধ্যে দারোয়ান বা পাশের ফ্ল্যাটের লোক আসে গেটের চাবি নিতে।এখন তাদের মধ্যে হয়তো কেও এসেছে এটা ভেবে মায়া হাতে চাবি নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে চললো।

দরজার ওপাশের ব্যাক্তিকে দেখে আশ্চর্য হওয়ার শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলো মায়া।দিহান দাড়িয়ে আছে।মুখে সবসময়কার সেই হাসি।বেশ রেগেই মায়া বলল,

“আপনি এখানে কেনো এসেছেন?কি করতে।তাও আবার এত রাতে।”

দিহান কোনো জবাব না দিয়ে মায়াকে পাশের দেয়ালে চেপে ধরলো।কিন্তু কোনো স্পর্শ করলো না।তারপর মুখটা নামিয়ে অত্যন্ত ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,

“লাভ বাইট ফেরত দিতে এসেছি।”

চলবে,,