চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-০৬

0
252

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ৬
লিখাঃসামিয়া খান

পাঁচটা ডিম একসাথে ফাঁটিয়ে অমলেট বানাচ্ছে মায়া।সাথে পেঁয়াজ,কাঁচামরিচ এবং
টমেটোও আছে।আর ওদিকে আরামসে দিহান ড্রয়িংরুমে বসে বসে টিভি দেখছে।এখন বাজে রাত বাড়োটা।দিহানকে মায়া চলে যেতে বললেও যায়নি।উল্টো আরো ধমক দেয়।এবং জোড় করে মায়াকে কিচেনে পাঠিয়েছে অমলেট বানানোর জন্য।মায়া ওতোটা ভালো রাঁধুনি না।আর ডিম সাধারণভাবে ভেজে সবসময় খেয়েছে।কিন্তু দিহানের ফরমায়েশ দেখে মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। ডিম নর্মাল পেঁয়াজ,কাঁচামরিচ দিয়ে ভেজে নিবে তা না তার মধ্যে টমেটো তারপর কিছু মশলা দিতে হবে।আর একটা না মোট পাঁচটা ডিম।ফ্রাইং প্যানে ডিম ঢালতে ঢালতে মায়া মনে মনে বকা দিলো দিহানকে।

“গন্ডার কোধাকার!”

সোফার মধ্যে পা তুলে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে দিহান।পায়ে জুতা আছে।এটা দেখে মায়ার বেশ রাগ হলো।কিন্তু তারপরও মুখ ফুঁটে কিছু বললো না। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিহানকে চলে যেতে বলবে।

“এই যে নেন আপনার অমলেট।”

মাথা তুলে তাঁকিয়ে দেখে মায়া হাতে প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মায়ার দিকে একবারপ তাঁকিয়ে দিহান আবার টিভির দিকে তাঁকালো।

“আমার হাত কাজ করছেনা মায়া।একটু খাইয়ে দিবে?”

“ঢং করেন আপনি?”

“ঢং কেনো করবো মায়া বিড়াল।”

“এই আমাকে বিড়াল কেনো বলেন?”

“এ পৃথিবীতে বিড়াল নামের একটা প্রাণী আছে।যাদের স্বভাব শুধু খামচানো আর কামড়ানো।তোমার মধ্যে খুব সুন্দরভাবে এগুণ আছে।তো হলে না তুমি বিড়াল!”

“এত কথা চুপচাপ খাবেন আপনি?”

“না খাবো না।আগে খাইয়ে দেও।”

বাধ্য হয়ে মায়া দিহানের পাশে বসে তাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।দিহান মায়ার দিকে না তাঁকিয়েই খাবার মুখে তুলছে।পুরো বিষয়টা মায়াকে বেশ অস্থিতে ফেলছে।খাওয়া শেষ হলে মায়া প্লেট নিয়ে কিচেনে রেখে আসে।দিহান আগের ন্যায় টিভি দেখে চলেছে।

“এখন তো আপনি যাবেন?”

“কেনো?আমি থাকলে সমস্যা কি?পুরো বাসায় তো একা।যদি জ্বীন আসে তো প্রটেক্ট করার মতো তো কেও থাকতে হবে।”

“আপনি বড্ড বেশী কথা বলেন স্যার।প্লিজ আমার সমস্যা হবে চলে যান।”

“আগে জান বলো তাহলে যাবো।”

“বললামই তো যান।”

“নাহ তুমি বলেছো যান আর আমি বলতে বলছি জান।পার্থক্য আছে। একটা বর্গীয়-জ আর একটা অন্তস্থ্য-য।”

“আপনি কি আমার স্বামী যে জান বলবো।ঢং বাদ দিয়ে নিজের বাসায় যান।”

“নাহ আজকে বাসায় যাবোনা।বাই দ্যা ওয়ে আজকে তোমার রুমে থাকবো।তোমার রুম কোনটা মায়া বিলাই।”

“মায়া বিলাই এর রুম পাশেরটা নায়ক সাহেব।”

দুর্বাকে দেখে বেশ চমকে গেলো মায়া।সে এটার ভয় বেশী করে পাচ্ছিলো।অবশেষে যা হওয়ার তা হয়ে গেলো।

“দুর্বা তুমি তো রাতে উঠো না তা আজকে উঠলে কেন?”

“এতো জোড়ে জোড়ে কথা বললে ঘুম ভাঙা স্বাভাবিক। তা নায়কসাহেবের সাথে মায়ার পরিচয় বিষয়টা তো ইন্টারেস্টিং।”

“অবশ্যই মিস.দুর্বা ঘাস।”

“নায়কসাহেব আমি ঘাস না।”

দুর্বা একটু এগিয়ে এসে দিহানের সাথে কমর্দন করলো।

“জানেন মিস.দুর্বা প্রাচীনকালে এক অপরে হ্যান্ডশেক করতো এটা বুঝাতে যে তারা নিরস্ত্র।আপনিও কি তা করলেন?”

“মটেও না নায়কসাহেব।”

“বসেন দুর্বা।এই মায়া বিলাই যাও তো আমাদের জন্য কিছু খাওয়ার জন্য নিয়ে আসো।”

দিহানের কথায় বেশ চটে গেলো মায়া।রাগী স্বরে বলল,

“প্রথমত বিলাই না বিড়াল হবে।আর আপনি কতো খান?”

“আমি কতো খান না?আমি দিহান আহসান।আর বিড়াল বললে বিড়াল জাতীর অপমান হতে পারে তাই বিলাই বলা!”

মায়ার এখন কাঁদতে মন চাচ্ছে।এই দিহানটা এমন কেনো?অথচ এটা নাকী মায়ার ক্রাশ ছিলো।রাগে দুঃখে,শোকে মায়া নিজের রুমে গিয়ে দরজা আঁটকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
,
,
,
“আমি কী আপনাকে সাহায্য করতে পারি মি.সবুজ?”

দিহার কথায় কোনো জবাব দিলো না সবুজ।চুপচাপ হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে ওখানে থেকে সরে আসলো।

“কোন বইটা লাগবে আপনার?”

“বুক সেল্ফের কর্ণারের বইটা।”

বইটা নামিয়ে দিহা সবুজের হাতে দিলো।সবুজ সেখানেই বসে বসে বই পড়া শুরু করলো।দিহার কাছে এ মানুষটাকে বেশ অদ্ভুত লাগে।প্রায় সাত দিন ধরে তার ট্রিটমেন্ট করছে সে।কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা কিছুও তাকে দিয়ে করাতে পারলো না।এভাবে তো কোনো রোগীকে ঠিক করা যায় না।

“দেখেন মি.সবুজ।আমার আরো অনেক পেশেন্ট আছে।তাদের রেখে আমি আপনাকে রোজ দুই ঘন্টা সময় দেই।কিন্তু এই দুই ঘন্টা সময়ে আপনি কিছুই করেন না।একটা ওয়ার্কআউটও করেন না যে আপনি ঠিক হবেন।এভাবে তো আর চলে না।”

দিহার এতগুলো কথায় কোনো এফেক্ট পড়লো না সবুজের উপর।চুপচাপ বই পড়ায় মনোযোগ দিলো।এতে আরো বেশী অধৈর্য হয়ে পড়লো দিহা।

“আমি আপনাকে কিছু বলেছি মি.সবুজ।”

“ডক্টর আমি আপনাকে যথেষ্ট পে করি এই দুই ঘন্টার জন্য।আর বড় বড় ডক্টর গুলো মেডিসিন দিয়ে কিছু করতে পারবেনা।সেখানে আপনি তো মাত্র একটা ফিজিওথেরাপিস্ট।

” মি.সবুজ আপনি আমার পেশাকে ছোট করলেন।ফিজিওথেরাপি মানে কী জানেন?ফিজিওথেরাপি এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, যা কোনো অসুস্থ মানুষকে তার স্বাভাবিক শক্তি বা সামর্থ্য ফিরে পেতে সাহায্য করে। কোনো ওষুধ ছাড়াই শুধু থেরাপির মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হয়।তো যা আপনার দামি ঔষধগুলো করতে পারিনি তা আমি করে দেখাতে পারি।বাংলাদেশের ফিজিওথেরাপিস্টদের মধ্যে যথেষ্ট ভালো পজিশনে আছি আমি।আর এইযে টাকার গরম দেখালেন না ইউ ডোন্ট হ্যাভ এনি আইডিয়া এবাউট মাই ব্যাকগ্রাউন্ড।মানুষকে সস্মান দিতে শিখুন।এত অহমিকা ভালো না”।

“আমার অহমিকা আছে আর আপনার?নিজের পজিশন আর পেশা নিয়ে ভালো গর্ব দেখালেন তো।”

“আপনাকে আগে একটা সাইক্রাইটিস্ট দেখানো উচিত।কারণ আপনার মাথায় সমস্যা আছে।”

কথাটা বলে নিজের ব্যাগ নিয়ে এক মূহুর্ত দাড়ালো না দিহা।রুম থেকে বের হয়ে আসলো।সেদিকে একবার নজর দিয়ে আবার বইয়ের পাতায় চোখ বুলালো সবুজ।
,
,
,
“মায়া বিলাইইইই!আমার কফি নিয়ে আসো।”

সকাল সকাল দিহানের এই চিৎকারটা ঠিক হজম করতে পারলো না মায়া। কালকে রাতে দিহান যায়নি।মায়া এটাও ভেবে পাচ্ছেনা যে একজন স্টার অচেনা একটা মেয়ের বাড়ীতে এসে থাকছে। এটা যদি মিডিয়াতে লিক হয়ে যায় তো কতোটুকু কেলেংকারী হয়ে যাবে।ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে মায়ার।কিন্তু আর ভাবতে পারলো না মায়া ওদিকে দিহান অনবরত তাকে ডেকে চলেছে।

দিহানের জন্য কফি নিয়ে গিয়ে দেখে মায়ার বিছানায় বসে বসে দিহান ফোন টিপছে।তার পড়নে রাতের যে পোশাক ছিলো ওটার জায়গায় অন্য একটা পোশাক।কৌতুহল হয়ে মায়া জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি এই ড্রেস কেনো পড়েছেন?”

“তো ড্রেস ছাড়া থাকবো নাকী?”

“আপনি এত খারাপ কেনো?সব কথার ডাবল মিনিং বের না করলে চলেনা?”

“নাহ তো।আচ্ছা বলো না বিলাই আমার সাথে রাত কাঁটিয়ে কেমন লাগলো?”

“ছিঃ।আপনি একটা জঘন্য লোক।আমি আপনার সাথে মটেও রাত কাঁটায়নি।আপনি বিছানায় ছিলেন তাও জোড় করে এবং আমি নিচে।”

“কিন্তু সেটা তো আর দুর্বা বুঝবেনা।দরজা তো লাগানো ছিলো না।”

“কে বলল তোমাকে?দরজা আমি লাগিয়ে দিয়েছিলাম তুমি ঘুমানোর পর।”

“আপনার থেকে এটাই আশা করা যায়।”

“কিন্তু আমি যে তোমার কাছ থেকে অন্য কিছুর আশা করছি।”

“মানে!কী?”

দিহান নিজের পাশ থেকে একটা বড়সড় এনভেলাপ বের করলো।এনভেলাপ মায়ার হাতে দিয়ে বলল,

“এখানে কন্ট্রাক পেপার রয়েছে।যেটার মেনশন আমি সেদিন রাতে করেছিলাম।”

“স্যার আমি বিকাও না।”

“মায়া এদিকে আসো।”

দিহান মায়ার হাত ধরে নিজের পাশে বসালো।তারপর বলতে শুরু করলো,

“মায়া আমি তোমাকে কিনে নিচ্ছিনা।শুধু লিগ্যালি তোমার উপর একটা অধিকার চাচ্ছি।তুমি ভাবতো পারো আমি অনেক খারাপ কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ওরকম না।সেদিন স্লাটগুলোকে এনেছিলাম অন্য একটা উদ্দেশ্য।তাদের ব্যাপারে অনেককিছু জানতে।আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা।আর রইলো কথা আমি এর আগে তিনটা মেয়ের সাথে এই কন্ট্রাকে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা মনমতো ছিলোনা।অথচ তোমাকে দেখার পর থেকে আমার অন্যরকম লেগেছে।তোমার সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ আমার হবে।আমি তোমার স্টাডি আবার শুরু করাবো।আমি তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে কোনো তথ্য পাইনি।কিন্তু এটা জানি এজীবন তোমার আসল জীবন না।তুমি এটা মনে করতে পারো আমি তোমার সাথে ফিজিক্যাল হবো।না আমি হবো না।শুধু তোমার কপালে নিজের অধর স্পর্শের অনুমতি ছাড়া আর কিছু চাইনা।মায়া প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো।আমার পুরো বাড়ীটা বড্ড ফাঁকা। তুমি এসে পূরণ করতে পারবে।”

“আপনি তাহলে বিয়ে করছেন না কেনো?”

“ওটার উত্তর অন্য একদিন দিবো।আমার এখন যেতে হবে।তুমি আমার কথাগুলো একটু ভেবে দেখো।”

কথাগুলো বলে দিহান দরজার দিকে পা বাড়ালো।কিন্তু কি মনে করে আবার ফিরে এসে নিজের ওষ্ঠাধর দ্বারা মায়ার ললাটে সামান্য স্পর্শ করলো।মূহুর্তেই মায়ার পুরো শরীরের রন্ধে-রন্ধে, শিরায়- শিরায় উষ্ণ রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়ে গেলো।

চলবে,,,