চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-০৫

0
490

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_০৫

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

তুর আরশের কাঁধে হাত রাখলো।আরশ মলিন হাসি দিয়ে বললো,

“আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে আন্টি।”

মিতা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“সরি বাবা আসলে আমি জানতাম না।”

আরশ হাসি দিয়ে দিলো,

“ইটস’ ওকে আন্টি।”

মৌ ভাব নিয়ে বললো,

“আম্মু তুমি একটু আগে বললে এই লোক নাকি অনেক ভালো।এখন দেখলে তো কতটা ভালো!যে তার বউ-ই চলে গেছে!”

আরশ মৌয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

“আপনি আমার চেয়ে অনেকটা ছোট হবেন।দুনিয়ার সবকিছু সম্পর্কে এখনো আপনার ধারণা হয়নি সো কোনো কথা শুনে নিজের মতামত পোষণ না করাই উত্তম।”

আরশ কথাগুলো বলে চলে গেলো।তুর-ও আরশের সাথে চলে গেলো।

মিতা বেগম মৌয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

“মৌ তুই এখন অনেকটাই বড় হয়েছিস।বুঝে শুনে কথা বলতে শিখ।”

মিতা বেগম কথাগুলো বলে চলে গেলেন।মৌ হা হয়ে বসে আছে।

“আমি তো মজা করে বলেছি।উনি যে সিরিয়াস হয়ে যাবে আমি কিভাবে বুঝবো।ধূর ভালো লাগে না।”

মৌ মুখ গোমড়া করে জুস খাওয়ায় মন দিলো।হঠাৎ কেউ এসে মৌয়ের চোখ চেপে ধরলো।মৌ বুঝতে পেরেছে এটা দিথি।মৌয়ের মুখে হাসি ফুটলো।দিথির হাত ধরে টেনে তার সামনে এনে দাঁড়া করালো।

“তুই কোথায় ছিলি?কতক্ষণ ধরে তোর জন্য ওয়েট করছি।”

“আরে রাস্তায় গাড়িতে একটু প্রবলেম হইছিলো।তারপরে গাড়ি ঠিক করে আসলাম।”

“আঙ্কেল আন্টি কোথায়?”

“সবার সাথে আছে।”

/🌻/

আরশ গাড়ি চালাচ্ছে।তবে তার মাথায় মৌয়ের কথাগুলো ঘুরছে।আসলে কি তারই দোষ ছিলো?নাকি রাইতার দোষ করেছে!

“আরশ আর ইউ আপসেট?”

রিয়ার কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আরশের।আরশ নিজেকে সামলে বললো,

“নাহ্ আমি ঠিক আছি।”

“তোমাকে তো আপসেট মনে হচ্ছে।”

আমেনা বেগম পাশে থেকে বললো,

“আমার নাতিন আপসেপ না কি জানি কইলা যাই থাকুক না কেরে তোমার কি হেতে?তুমি তোমার কাম করো নাহ্!ওই যন্ত্রটা টিপতে ছিলা ওইডা টিপো।”

রিয়া ভ্রু কুচকে বললো,

“যন্ত্র মানে?”

“আপু নানু মোবাইলকে যন্ত্র বলে।”

রিয়া মুখ ঘুরিয়ে বললো,

“ওমন বুড়া মানুষকে না আনলেই পারতে।”

রিয়ার কথায় আরশের মাথা গরম হয়ে গেলো।নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,

“দিদুন আমাদের বাড়ি লোক।সো আমরা কাকে আনবো আর না আনবো সেটা একান্ত আমাদের বিষয়।এখানে আপনার নাক গলানোর কোনো দরকার নেই মিস.রিয়া।”

রাত পাশে থেকে বললো,

“আরশ ভাইয়া ঠিকই বলেছে আপু।তুমি কেনো আরেকজনের ফ্যামিলিতে মাথা ঘামাচ্ছো।তার চেয়ে বড় কথা যেই গাড়িতে করে যাচ্ছো সেটাও তোমার না।সব বিষয়ে কথা না বলে নিজের কাজ করো।”

রিয়া রাগে গজগজ করছে।তবুও কিছু না বলে চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।

“🥀”

সাত-আটটা গাড়ি হোটেলে প্রবেশ করলো।মৌ গাড়ি থেকে নেমে একপাশে দাঁড়িয়ে দিথির সাথে কথা বলছে।সে দেখলো আরশ গাড়ি থেকে লাগেজ নামিয়ে হোটেলের ভিতরে চলে গেলো।

“আজকে না একটু বেশি উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি।”

দিথি মৌয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“কি হয়েছে?”

“আরে আরশ সাহেবকে চিনিস তুই?”

“হ্যাঁ রেস্তোরাঁয় দেখেছিলাম।আমিন আঙ্কেল পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।আর উনার সাথে তো সেদিন শপিংমলে তোর ঝামেলা হলো।”

“হ্যাঁ উনার আসলে ডিভোর্স হয়ে গেছে।আর আমি বলে ফেলেছি উনি ভালো না তাই বউ চলে গেছে।”

মৌয়ের কথায় দিথি হেসে দিলো।

“তুই আসলেই ঠিক হবি না মৌ।সরি বলে দিস তাহলেই হলো।”

মৌ হাসি দিয়ে বললো,

“ইয়েস গুড আইডিয়া।”

!🦋!

আরশ ফ্রেশ হয়ে এসে তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।তার রুমের বেলকনি দিয়ে হোটেলের সামনেটা ভালোভাবে দেখা যায়।আরশ দেখলো হোটেলের সামনে এসে একটা কালো গাড়ি থামলো।গাড়িটা দেখে আরশ চমকে উঠলো।গাড়ি থেকে রাজ আর রাইতা বের হলো।যা দেখে আরশ হতবাক।আরশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বেলকনির পর্দা টেনে রুমের ভিতরে চলে আসলো।

“আমি যার থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছি সেই আমার কাছে চলে আসছে।”

আরশ কথাটা বলে জোরে দেয়ালে ঘুষি মারলো।হাত দিয়ে অনেক রক্ত বের হচ্ছে।আরশ হাতটা মুথো করে বিছানায় বসে আছে।টপটপ করে রক্ত নিচে পড়ছে।তুর রুমে এসে দেখে আরশের হাতের এই অবস্থা।তুর তাড়াতাড়ি গিয়ে আরশের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

“আমি জানি তুই এটা কেনো করেছিস।তুই রাজ আর রাইতাকে দেখেছিস তাই-না?”

আরশ অবাক হয়ে বললো,

“তুই কি করে জানলি?”

“আমি যখন রুমে আসছিলাম তখন দেখলাম।”

আরশ আর কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

“তুর আমি একটু রেস্ট নিতে চাই।”

তুর মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আরশ চোখ বন্ধ করতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো।অনেক সময় ধরে ড্রাইভ করার কারণে সে ক্লান্ত বোধ করছে।

—💚—

রাজ এসে রাইতার পাশে বসে বললো,

“আরশ এই হোটেলে আছে।”

রাইতা অবাক হয়ে বললো,

“মানে?”

হ্যাঁ ওরা সবাই মিলে পিকনিকে আসছে।”

রাইতা ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললো,

“সো হোয়াট?ওর আর আমার পথ এখন আলাদা।সুতরাং ওর কথা বাদ দেও।”

/🌿\

সন্ধ্যাবেলায় আরশ তার রুমের পাশের একটা খালি জায়গায় বসে কফি খাচ্ছে।জায়গাটা অনেক খোলামেলা।কিছুটা ছাদের টাইপ।চারিপাশে ফুলগাছ আর মাঝখানে কয়েকটা বসার চেয়ার-টেবিল।

অন্যদিকে,

মৌ তার রুম থেকে বের হয়েছে আরশকে খোঁজার উদ্দেশ্যে।তবে তার মাথাটা অনেক ঘুরছে আর সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করছে।

“মেইবি জ্বর আসবে।অনেক দূর্বল লাগছে।না একবার যখন রুম থেকে বের হয়েছি তখন উনাকে সরি বলেই যাই।”

মৌ আরশের রুমের সামনে গিয়ে দেখলো তুর দরজা লক করছে।

“তুর ভাইয়া আরশ সাহেব কি ভিতরে আছে?”

“নাহ্ আরশ তো ওই পাশের খোলা জায়গাটায় বসে আছে।বাই দ্যা ওয়ে তোমার কি কিছু হয়েছে?তোমার চোখ মুখ কেমন জানি লাগছে।”

“নাহ্ ভাইয়া আমি ঠিক আছি।আসলে আরশ সাহেবের সাথে আমার একটু দরকার আছে।”

“ওহ্ আচ্ছা যাও তাহলে।”

তুর হাসি দিয়ে মৌয়ের সামনে থেকে চলে গেলো।মৌ চশমাটা ঠিক করে আরশ যেখানে আছে সেখানে গেলো।

মৌ গিয়ে দেখলো আরশ অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।

মৌ ধীর গলায় বললো,

“মি.আরশ…….”

মৌয়ের কন্ঠ কানে বাজতেই আরশ পিছনে ঘুরে তাকালো।আরশ তাকিয়ে দেখলো মৌ দাঁড়িয়ে আছে।তবে মৌকে দেখে মনে হচ্ছে সে রীতিমতো কাঁপছে।

“আপনি এখানে?”

“আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।”

“আপনি আমাকে কি বলবেন?আর আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে অসুস্থ।”

“আমি ঠিক আছি।হয়তো একটু জ্বর এসেছে।আর যেটা বলতে চাই সেটা হলো আই এম…….”

এইটুকু বলেই মৌ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে যাবে তার আগে আরশ ধরে ফেললো।মৌয়ের মুখ আরশের বুকে এসে ঠেকলো।

“শিশপ্রিয়া…..”

আরশ মৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মৌয়ের জ্ঞান নেই।আরশ কি করবে বুঝতে না পেরে মৌকে কোলে তুলে নিলো।আরশ মৌকে কোলে করে তার রুমের দিকে নিয়ে গেলো।গিয়ে দেখলো দরজা লক করা।আরশ মৌয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার প্যান্টের পকেটে একটা চাবি ঝুলছে।আরশ মৌকে তার কোলে থেকে নামিয়ে ধরে দাঁড়ালো।তারপরে মৌয়ের পকেট থেকে চাবিটা বের করে দরজার লক খুললো।

রাইতা করিডোর দিয়ে হাঁটছিলো।হঠাৎ সে দেখলো আরশ একটা মেয়েকে একটা রুমের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে।
“এতো অধঃপতন হয়েছে আরশের!নাহ্ এই সিন তো সবাইকে দেখাতে হবে।তাহলে সবাই ভেবে নিবে আরশের কারণেই আমাদের ডিভোর্স হয়েছে।”

রাইতা বাঁকা হাসি দিয়ে সবাইকে ডাকতে গেলো।

আরশ মৌকে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলো।আরশ মৌয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।

“এতো জ্বর এলো কিভাবে!”

আর বিছানা থেকে উঠতে যাবে মৌ আরশের হাত ধরে টান দিয়ে তার অনেকটা কাছে নিয়ে গেলো।তবে মৌয়ের চোখ বন্ধ।

“তুই আমার গায়ের উপর গাড়ি তুলে দিচ্ছিলি?বজ্জাত বেটা।তোকে মেরে কুচি কুচি করে খেলবো।”

মৌ আধো আধো ভাবে কথাগুলো বললো।আরশ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“জ্বরের ঘোরে উল্টাপাল্টা বকছে।”

“দেখুন একটা মেয়েকে রুমে এনে কিভাবে নষ্টামি করছে।”

রাইতার কণ্ঠ শুনে আরশ পিছনে ঘুরে তাকালো।সে দেখলো তার বাবা-মা,মৌয়ের বাবা-মা,আর যারা এসেছে সবাইকে নিয়ে রাইতা দাঁড়িয়ে আছে।আরশ মৌয়ের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।

আরশ অবাক হয়ে বললো,
“কি বলছো এইসব তুমি রাইতা?”

“আমি যা দেখেছি তাই বলেছি।”

“জাস্ট সার্টআপ।উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।তাই আমি রুমে নিয়ে এসেছি।আর আমি উনার সাথে কিছু করিনি।”

রাইতা চিৎকার করে বললো,
“তাহলে তোমার শার্টে ওই মেয়েটার লিপস্টিক লেগে আছে কেনো!”

আরশ তার শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যি মৌয়ের লিপস্টিক লেগে আছে।আরশের মনে হলো মৌ যখন জ্ঞান হারায় তখন আরশের বুকে তার মুখ ঠেকেছিলো।

একেকজন একেক কথা বলছে।সবার মুখে বিভিন্ন ধরনের বাজে কথা।মৌয়ের মা শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছে।আর রাইতা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।মানুষের এইসকল কথা আরশ আর শুনতে পারছে নাহ্।আরশ চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বললো,

“স্টপ।”

আরশের কথায় রুমে উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে গেলো।

“আপনাদের যখন মনেই হচ্ছে আমি শিশপ্রিয়ার সাথে নষ্টামি করেছি….ওকে ফাইন।আমি উনাকে এই মুহূর্তে বিয়ে করবো।”

আরশের কথায় সবাই চমকে গেলো।আমিন সাহেব বললো,

“কি বলছিস তুই?”

“আমি যা বলছি তাই ঠিক।আগে উনাকে একটা ডক্টর দেখাও দ্যান কাজী ডাকো।”

আরশ কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।রাইতা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]