চাদর জড়ানো চিরকুট পর্ব-০২

0
445

#চাদর_জড়ানো_চিরকুট।
#পর্বঃ- ০২

চিৎকার দিতে গিয়ে লতা তার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ করতে পারলো না। নিজের স্বামীর লাশ তার চোখের সামনে পরে আছে অথচ এই স্বামীকে সে পাবার জন্য কত প্রার্থনা করেছে। লতা এখন কী করবে বুঝতে পারছে না। ট্রেন সম্পুর্ণ ফাঁকা হয়ে গেছে। লতা কোনরকমে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে আসে, তারপর সামনেই একজন রেল কর্মকর্তাকে দেখে তাকে বললো,

– একটু ভিতরে আসবেন? ওখানে ফিরোজের লাশ পরে আছে। প্লিজ আমার সঙ্গে চলুন।

– ফিরোজ কে? আর ট্রেনের মধ্যে লাশ আসবে কীভাবে।

– আপনি আমার সঙ্গে চলুন তাহলে দেখতে পারবেন।

লোকটা ভিতরে গেল তারপর সেও লতার স্বামী ফিরোজের লাশ দেখে হতবাক হয়ে গেল। দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে দৌড়ে গেল।
লতা সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গেল।

★★

স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছে রামিশা। ট্রেন চলে এসেছে, সাজু ভাই এখনই বেরিয়ে আসবে। কালো রঙের মাস্ক দিয়ে মুখ আবৃত থাকলেও তার চেহারায় আনন্দের অনুভূতি। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে সে অপেক্ষা করছে ট্রেনের জন্য। এক এক করে যাত্রীরা সবাই বেরিয়ে আসছে, সবার টিকিট চেক করা হচ্ছে।
রামিশা সেই টিকিট চেক করার সামনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। সাজু ভাই আজকে কি রঙের শার্ট গায়ে আছে সেটা রামিশা জানে। কারণ ট্রেনে উঠে সাজু ভাই তাকে ছবি পাঠিয়েছে, কল (ভিডিও) দিয়ে কথা হয়েছে দুবার।

অনেকেই বের হচ্ছে কিন্তু সাজু ভাই এখনো বের হচ্ছে না দেখে অস্থির হয়ে গেল রামিশা। মোবাইল বের করে কল দেবে দেবে অবস্থা, কিন্তু তারপর আবার একটু অপেক্ষা করছে।

★★

যাত্রী বসার সিটে বসে বসে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মোবাইল টিপছে মিজান। ফিরোজ কল রিসিভ করে না বলে যথেষ্ট রাগ হচ্ছে তার। মিজানের সঙ্গে আরও তিনজন অপেক্ষা করছে কিন্তু তারা তেমন রাগ করছে না।

এরা কেউ এখনো জানে না ফিরোজ মারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। প্ল্যান ছিল ফিরোজ তার স্ত্রীকে নিয়ে বের হবে তারপর একটা সিএনজি নিয়ে তারা রওনা দেবে। সেই সিএনজি চালক থাকবে এদের মধ্যে একজন।

বাকি তিনজন অন্য একটা সিএনজি নিয়ে পিছনে পিছনে রওনা দেবে। তারপর পাহাড়ি এলাকার মধ্যে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে লতাকে।

কিন্তু এই ফিরোজ কল রিসিভ করে না কেন সেই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছে নেই। মিজান আরেকটা নাম্বার বের করে কল দিল, নাম্বারটা ঢাকার।

– আসসালামু আলাইকুম ভাই।

– কি খবর মিজান?

– ভাই ফিরোজ তো কল রিসিভ করে না, শালায় আবার বেঈমানী করবে নাকি? বউ নিয়ে নিজে আবার পালিয়ে যাবে নাকি?

– পালিয়ে যাবে কোই? তোমরা অপেক্ষা করো সে চলে আসবে। আর না এলে সমস্যা নেই তাকে কী করা দরকার আমি ভালো করে জানি।

– ঠিক আছে ভাই। তবুও আপনাকে জানিয়ে রাখলাম যেন আপনার মাথায় থাকে।

– ভালো করছো।

মিজান আবার চারিদিকে হাঁটতে লাগলো। ঠিক সেই মুহূর্তে তার চোখ পড়লো রামিশার দিকে। মিজানের মনে হচ্ছে সে মেয়েটাকে কোথায় যেন দেখেছে। কিন্তু সঠিক মনে করতে পারছে না।

তাদের চারজনের মাত্র কিছুটা দুরে দাঁড়িয়ে আছে রাফসান মাহমুদ। রাফসানের পরবর্তী টার্গেট এই মিজান রাঙা, এরা সবাই ফিরোজের জন্য এখন দাঁড়িয়ে আছে সেটা মাহমুদ জানে। মাহমুদ একটু হাসতে লাগলো, তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো পরিস্থিতি কোনদিকে যায়। তবে টেনশন হচ্ছে লতাকে নিয়ে, নিরীহ এই মেয়েটা অনেক বিপদের মধ্যে আছে।

একটু আগে ঢাকায় কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ফিরোজের জীবনী সমাপ্ত। এখন মিজানকে মেরে সে চট্টগ্রাম ত্যাগ করতে পারবে। তারপর ঢাকায় যে দুজন আছে তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে তাকে।

★★

সাজু ভাই ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে তার পূর্ব পরিচিত এক লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গিয়ে দেরি হচ্ছিল প্লাটফর্ম থেকে বের হতে। কথা শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে সামনে আসতেই সে দেখতে পায় রেলের সেই কর্মকর্তা দৌড়ে আসছে। সাজুর সামনেই আরেকজন উর্ধ্বতন কর্মকতা ছিল। তার সামনে এসে ওই জুনিয়র বললো,

– স্যার ট্রেনে মধ্যে স্নিগ্ধা বগিতে একটা লোকের লাশ পরে আছে। আপনি তাড়াতাড়ি চলুন।

– কি বলছো যে? তুমি কি নিশ্চিত লোকটা মারা গেছে! এমন তো হতে পারে সে ঘুমিয়ে গেছে তাই বের হচ্ছে না।

– না স্যার, সে যেভাবে পরে আছে সেভাবে কোনো জীবিত মানুষ থাকতে পারবে না। যত গভীর ঘুম হোক ব্যথায় ঘুম ভেঙ্গে যাবে।

– ঠিক আছে তুমি পুলিশের কাছে খবর দিতে বলো আে মাস্টারকে বলো এদিকে আসতে।

সকল যাত্রীরা যে যার মতো ছুটছে কিন্তু কৌতূহল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাজু ভাই। যে মানুষ গোসল করতে গেলে পুকুরে অর্ধেক পানিতে নেমে ভাবতে ভাবতে গোসল করা ভুলে যায়। সেই মানুষের সামনে যদি কোনো অস্বাভাবিক লাশের ঘটনা আসে তাহলে তো অবাক হবেই।

কিন্তু সাজুর মনে হচ্ছে এটা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কারণ ট্রেনের মধ্যে এরকম খুন করা তো সহজ ব্যাপার নয়। তাছাড়া মানুষ কখন কীভাবে মারা যায় কেউ কী বলতে পারে? স্বাভাবিক মৃত্যু যদি হয় তাহলেও কিছু করার নেই তবুও দেখার জন্য কৌতূহল নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকতার পিছনে পিছনে চলে গেল।

লতা এখনো অজ্ঞান। মাঝখানে হাঁটাচলা করার যে যায়গা সেখানে মূর্ছিত লতার দেহ পরে আছে। সাজু প্রথমে ভেবেছিল দুটোই মারা গেছে। কিন্তু লতাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে অজ্ঞান হয়েছে।

সাজু ভাই তার মোবাইল বের করে দ্রুত কিছু ছবি তুলে নিল। উর্ধ্বতন কর্মকতা বললো,

– কি ব্যাপার ছবি তুলছেন কেন? একটা মানুষ মরে পরে আছে আর আপনি ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত? আসলে আজকাল এটাই তো হচ্ছে সমাজে, কেউ বিপদে পড়লে সেটা ছবি তুলে কে কার আগে পোস্ট করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলে। অথচ কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে না।

সাজু সবসময় গম্ভীর থাকে। সে স্বাভাবিক ভাবে আরো কিছু ছবি তুলতে তুলতে বললো,

– আমি ছোটখাটো গোয়েন্দা, বেশ কিছু মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করার সাফল্য আছে। তাই চোখের সামনে অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখে ছবি তুলে নিলাম। কারণ একটু পরে আপনারা টানাহেঁচড়ার করবেন তখন আর এই পজিশন থাকবে না।

– ওহ্ আচ্ছা আপনি গোয়েন্দা? তা আমরা সবাই এখনো খবর পেলাম না আর আপনি কোত্থেকে চলে এসেছেন?

– আমার ঘাড়ে ব্যাগ দেখতে পাচ্ছেন?

– হ্যাঁ।

– কি মনে হচ্ছে?

– মনে হচ্ছে কোথাও যাচ্ছেন, যাত্রা করছেন।

– সবই তো বুঝতে পারছেন তাহলে প্রশ্ন করেন কেন? আমি এই ট্রেনে করেই ঢাকা থেকে এসেছি। আর আপনার জুনিয়র যখন আপনার সঙ্গে কথা বলছিল তখন শুনতে পেয়ে আসলাম।

– ঠিক আছে, কিন্তু একটু বলেন তো এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি অস্বাভাবিক কিছু?

– অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

– কেন মনে হচ্ছে?

– ঘাড়ের কাছে লক্ষ্য করুন, নীল হয়ে গেছে আর সামান্য ফুলে গেছে। আর লোকটা যেভাবে এখানে বসেছিল তাতে মনে হচ্ছে যে খুন করেছে সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এর ঘাড়ে কিছু একটা করেছে।

– আরে তাই তো।

– হুম, ক্ষতটা বাম দিকে, ভিড়ের মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ খুব সুকৌশলে কাজটা করেছে। বাকিটা পোস্টমর্টেম করে জানা যাবে।

ট্রেনের বাহিরে ততক্ষণে যাত্রীর ভিড় জমে একদম একাকার অবস্থা। স্টেশনের সকল যাত্রী এসে উপস্থিত হয়েছে। উৎসুক জনতা ট্রেনের মধ্যে আসা চেষ্টা করছে প্রাণপণে। সাজু ভাই লতার দিকে তাকিয়ে বললো,

– কিন্তু এই মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেছে কেন? এর সঙ্গে কি কোনো কানেকশন আছে?

– স্টেশন মাস্টার বললো, এতো যাত্রীর ভিড়ে এরকম ঘটনা কীভাবে হলো?

– সাজু বললো, আপনি একটু চেক করে দেখবেন যে এই মেয়েটা এখানকার যাত্রী কিনা।

চেক করে টিকিট পাওয়া গেল। একই টিকেটে দুটো সিট নাম্বার আছে কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে দুটো সিটই পাশের বগিতে। মাস্টার প্রথমে বললো এরা দুজন মনে হয় একসঙ্গে ছিল তাই তো দুটো সিট।

সাজু ভাই বললেন,
– সেটা সম্ভব না কারণ ভদ্রলোক তো এখানে বসে মারা গেছে। তার সিট ওখানে হলে তিনি এখানে কেন?

– সব প্রশ্নের উত্তর মেয়েটা দেবে আগে একে জ্ঞান ফেরাতে হবে।

জুনিয়র ছেলেটাও যখন বললো যে মেয়েটা তাকে প্রথম জানিয়েছে তখন সবাই মোটামুটি নিশ্চিত যে এই মেয়ে অনেক কিছু জানে। সবাই মিলে লতা কে ধরাধরি করে নিচে নিয়ে গেল। তারপর লতার স্বামী ফিরোজের লাশটাও নামানো হলো।

সাজু ভাই সেই ফাঁকে চট করে পাশের বগিতে উঁকি দিতে চলে গেল। টিকিটের সিট নাম্বার আগেই সে দেখে নিয়েছে। সিটের কাছে গিয়ে সিটের উপর একটা গোলাপি রঙের চাদর দেখতে পেল। চাদর হাতে নিতেই রাফসান মাহমুদের চিরকুটটা তার হাতে পড়লো। চাদর জড়ানো চিরকুট।
সাজু চিরকুটটা পড়ে সেখানে একটা সিটে বসে পড়লো। সাজু মোটামুটি অনেক কিছু জানতে পারলো।

* মেয়েটার নাম নেই, ম্যাডাম লেখা।

* মেয়েটা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আছে।

* খুনির নাম রাফসান মাহমুদ।

* মৃত মানুষটা ওই মেয়ের স্বামী।

* মেয়েটার সামনে আরো বিপদ আছে।

* খুনের পিছনে প্রতিশোধ জনিত কারণ আছে।

* খুনি নিশ্চয়ই আরেকটা খুন করবে।

* সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খুনি এই মেয়েটার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে নিমতলা বিশ্বরোড।

★★★

মিজান তার মোবাইল বের করে দ্রুত কল দিয়ে কল রিসিভ হতেই বললো,
– ভাই ফিরোজ তো মারা গেছে।

– কি বলো তুমি? কীভাবে মারা গেছে?

– জানি না, সবাই ওর লাশ নিয়ে এখন হৈচৈ করে স্টেশনে। আর ওর স্ত্রী তো অজ্ঞান ছিল তাকে পানি দিয়ে জ্ঞান বহু কষ্টে জ্ঞান ফেরানো হয়েছে।

– ঠিক আছে এক কাজ করো, তোমরা চারজন বেঁচে থাকতে লতা যেন জীবিত ঢাকায় ফিরতে না পারে। যেভাবেই হোক তাকে মারতে হবে। ফিরোজ মারা গেছে এটা কোনো ব্যাপার না কারণ ওকে তো আমিই সরিয়ে দিতাম।

– ভাই লতাকে খুন করা এখন কঠিন হয়ে যাবে। চারিদিকে লোকজন জড় হয়ে গেছে, পুলিশ এসে ভর্তি হয়েছে সব।

– এখানেই তো সুবিধা, সবার অগোচরে মারার প্রশিক্ষণ তোমাদের নেই নাকি?

– আছে কিন্তু রিস্কি।

– লতা ঢাকায় ফিরলে সেটাও আমার জন্য রিস্ক।

– ঠিক আছে আমরা ব্যবস্থা করতেছি।

– ওকে খুন করে তারপর আমাকে কল দিবা, তার আগে কল দিবা না।

ওপাশ থেকে কলটা কেটে গেল। মিজান তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে স্টেশনের ভেতর রওনা দিল।

★★

খুনের খবর সবখানে ছড়িয়ে গেছে, রামিশা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছে সাজু ভাই এখনো বের না হবার কারণ। রামিশা নিজেও প্লাটফর্মের মধ্যে ঘটনাস্থলে যেতে লাগলো। সাজু ভাইকে বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে কিন্তু রিসিভ হয়নি।

লতার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু সে কিছু বলতো পারে না, চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে। সাজু তার হাতের সেই চিঠি কাউকে দেখালো না৷ সাজু চায় এটা নিয়ে লতার সঙ্গে গোপনে কথা বলতে। খুনিকে লতা নিশ্চয়ই দেখেছে, তাই যেভাবেই হোক তাকে বের করতে হবে।

ভাবনার মধ্যে কেউ একজন আছে এসে সাজুর ডান হাতটা ধরলো। সাজু তাকিয়ে দেখে তার পাশে রামিশা দাঁড়িয়ে আছে। সাজু মাথা নিচু করে বললো,

– স্যরি আমার মনেই ছিল না রামু। তুমি কি খুব বেশি রাগ করেছো?

– না, এটা আপনার দায়িত্ব তাই এই কাজে অন্তত আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে টেনশন হচ্ছিল খুব।

– মেলা মেলা ধন্যবাদ।

– কেন?

– আমাকে বোঝার জন্য, রাগ না করার জন্য।

– কি হয়েছে এখানে? কীভাবে খুন হয়েছে?

– পরে বলি? এখন তো একটু ঝামেলা চলছে।

– ঠিক আছে।

ফিরোজের লাশ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। লতাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে থানায়। তাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে। তাছাড়া লতা শুধু বলেছে যে এই লোকটা তার স্বামী। কিন্তু চিঠির কথা সম্পুর্ণ ভুলে গেল লতা।
পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছে লতা, সাজু, রামু সবাই একসঙ্গে। সাজু আস্তে করে লতার কানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– আপনাকে এই চিঠি কে দিয়েছে?

দাঁড়িয়ে গেল লতা। সাজুর দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপর কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাজু আস্তে কথা বলতে ইশারায় করে।

– সাজু তার হাতে চাদরটা দেখিয়ে দেয়। লতাকে সে বলে, আমি গোয়েন্দা সাজু ভাই। আপনার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে, থানায় গিয়ে জিজ্ঞেস করতে চাই।

– ঠিক আছে।

প্লাটফর্ম থেকে বের হয়ে সাজু আর রামিশা দুজন আলাদা হয়ে গেল। লতাকে পুলিশ নিয়ে যাবে। সাজুকে যেতে হবে সিএনজি নিয়ে। হঠাৎ করে রামিশা কাকে যেন বলে উঠলো,

– আরে আপনি এখানে? আপনার নাম রবিউল ইসলাম তাই না?

রবিউল ইসলাম (রাব্বি) এবার আমতাআমতা করতে লাগলো। লতার কাছে সকাল থেকে সে রাফসান মাহমুদ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু এই রামিশা তাকে এতদিন পরে চিনে ফেলবে সেটা তার ধারণা ছিল না। তাছাড়া রামিশা এখানে আছে সেটাও সে জানতো না। মিজানকে চোখে চোখে রাখতে গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেনি মাহমুদ বা যার আসল নাম রবিউল ইসলাম।

* রবিউল ইসলামের পরিচয় যারা জানেন না তাদের কে পড়তে হবে সাজু ভাই সিরিজের গল্প ” এক কাপ ঠান্ডা কফি ” সেখানে এই ভাড়াটে খুনির মোটামুটি ভালো বর্ননা আছে। *

– সাজু ভাই বললেন, তোমার পরিচিত নাকি?

– পরিচিত মানে? আপনারও তো পরিচিত, সে আমাকে কুমিল্লা থেকে বাঁচিয়ে ঢাকা নিয়ে গেল। তারপর সেই সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে ঢাকা থেকে বাগেরহাট নিয়ে গেল। আর সেখানে আপনার চোখের সামনে মাইশার বাবা আর দারোগাকে হত্যা করলো। মনে নেই?

– হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে।

– এটা তো সেই লোকটা।

রাফসান ততক্ষণে সটকে পড়েছে। মানুষের এই ভিড়ের মধ্যে তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
সাজু ভাই মনে মনে বললো, রবিউল ইসলাম আবার এখানে কি করে? রাফসান মাহমুদ নামের সেই খুনিই কি রবিউল ইসলাম? এমনিতেই তো রবিউলের নাম পরিবর্তন করার অভ্যাস আছে।

রবিউলকে আর খুঁজে বের করা হলো না। কারণ পুলিশর গাড়ির ভিতরেই একপাশ থেকে বাইকে বসে লতাকে গুলি করেছে মিজান। বাইক দ্রুত বেরিয়ে গেছে, পুলিশ তাদের পিছু নেবে নাকি লতাকে নিয়ে ব্যস্ত হবে সেই ভাবনায় পড়ে গেল। তবে পাঁচ ছয়জন মিলে কাছেই ভাড়ায় চালিত বাইকে উঠে গেল। তারপর দ্রুত মিজানদের বাইক ফলো করতে বললো।

সাজু দৌড়ে পুলিশের গাড়ির কাছে গেল। রামুর দিকে তাকিয়ে বললো,
– খুনির কথাই তো সত্যি, মেয়েটার জন্য স্টেশন বেশ বিপজ্জনক ছিল। সর্বনাশ।

চলবে…

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।