চিরকুট পর্ব-০২

0
110

#চিরকুট ( দ্বিতীয় পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৩>
” তুই আর মেয়ে পেলি না বাবু! শেষে গিয়ে এমন একটাকে জোটালি যার কোন রক্তের ঠিক নেই! কি বংশ, বাপ মা কেমন, কি জাত কিছুই না জেনে প্রেম করতে শুরু করে দিলি! তারপর আবার বড় মুখ করে আমাদের কাছে বিয়ের কথা বলতে এসেছিস!”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল অরুণা, গৌরবের মা। বুকে একটা অদ্ভুত জ্বালা এখন, গলাটা কান্নায় বুঁজে আসছে। কত আশা ছিল একমাত্র ছেলের বউ নিয়ে! কিন্তু গৌরব সবেতে জল ঢেলে দিল। আর এইসব খবর কি আর চাপা থাকে আত্মীয় স্বজন এর মধ্যে! বৌমা অনাথ, কোন বংশ পরিচয় নেই, রক্তের ঠিক নেই, এইসব কথা তো পাঁচ কান হয়েই যায়। তখন কি মুখ দেখাবে লোকেদের! কথাগুলো এক মনে ভাবছিলেন উনি, তখনই গৌরব বলে উঠলো ভীষণ স্থির ভাবে,
——-” ভালোবাসি আমি সৃজাকে; কারণ ও খুব ভালো একটা মেয়ে। এর থেকে বেশি আর কোন কিছু ম্যাটার করে না আমার কাছে! আর যদি কখনো বিয়ে করি, তাহলে সৃজাকেই করবো। নইলে সারা জীবন একা কাটিয়ে দেব; এই ডিসিশন টা আমি নিয়ে ফেলেছি। এবার তোমরা ভেবে দ্যাখো, কি করবে! সৃজা কে একসেপ্ট করবে, না করবে না?”
কথাগুলো গৌরব মা বাবা দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো। কিন্তু এই মুহূর্তে সমীরণ বাবু, মানে গৌরবের বাবা বেশ কঠিন হয়েই বললো,
——-” আমাদের ভাবার মতন কোন জায়গা তো আর রাখোনি তুমি! নিজেই সমস্ত ডিসিশন টা নিয়ে নিলে। আমাদের কথা তো একবারের জন্যও ভাবলে না! যাইহোক, মা বাবা হিসেবে যত টুকু কর্তব্য করার আমরা করবো। তবে ওই মেয়ে আমাদের কাছে একটা লজ্জা হয়েই থাকবে, সারা জীবন। আর এরকম কারোর সাথে কোন অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিয়ে আমি লোকের হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দেব না! তুমি রেজিস্ট্রি করতে চাইলে করতে পারো, স্বাক্ষী হিসেবে সাইন করতে চলে যাবো। কিন্তু তার বেশি কিছু আর আমাদের থেকে এক্সপেক্ট কোরো না। আর এই বাড়িতেও ওই মেয়েকে এলাও করবো না আমি। নিজে যখন বিয়ের মতন এত বড় একটা ডিসিশন নিয়েই নিয়েছ, তাহলে নিজেদের আলাদা থাকার ব্যাবস্থাও করে নাও একটা। ”
কথাগুলো ভীষণ রুক্ষভাবে বলে সমীরণ বাবু ঘরটা খালি করে চলে গেলেন সেই মুহূর্তে। কিন্তু অনন্যা যেন শোকে পাথর হয়ে এক জায়গায় বসে রইলো বেশ কিছুক্ষণ। সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না ছেলে শেষে এমন একটা মেয়েকে পছন্দ করলো যার জাত বংশ বলতে কিছুই নেই! রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া একটা মেয়ে মুখার্জি বাড়ির বউ হবে!

তবে এরকম কথা শুনে গৌরবের জেদটা যেন বেড়ে গেছিল ভীষণ ভাবে। মা বাবা আপত্তি করবে জানতো, তবে এতটা রুক্ষ ভাবে কথা শোনাবে, এমন কি বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা বলবে; এটা ভাবেনি! কিন্তু ঠিকই আছে। গৌরব নিজে এইসব শুনলেও সৃজাকে কখনো এই পরিবেশের মধ্যে থাকতে দেওয়া উচিত না। কি দোষ মেয়েটার! ওর মা বাবা একটা অবোধ শিশু কে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেছে বলে তার দাম মেয়েটাকে কেন দিতে হবে সারা জীবন! আর সৃজা কে যদি বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে আসে, তাহলে নিত্য দিনের অশান্তি সহ্য করতে হবে মেয়েটাকে। দিন রাত ওর মা বাবার কাছে কথা শুনতে হবে জাত বংশ রক্ত নিয়ে। তাতে ওদের সম্পর্কটা ক্ষত বিক্ষত হবে রোজ। তার থেকে এটাই ভালো। আর বাবা যখন নিজের মুখে এত বড় কথাটা বলতে পারলো; তখন গৌরবের আর বাঁধা কিসের! সেই জন্য গৌরবও আজ ভীষণ কঠিন হয়ে একটা ডিসিশন নিয়েছিল। মা বাবার থেকে আলাদা হয়ে শুধুমাত্র সৃজাকে নিয়ে থাকার ডিসিশন। সেই মতন পরের দিন থেকে নতুন ফ্ল্যাট খোঁজাও শুরু করে দিয়েছিল কলকাতায়। যদিও সৃজাকে প্রথমে এই নিয়ে কিছু বলেনি গৌরব। একেবারে ফ্ল্যাটের ডাউন পেমেন্ট করে ফ্ল্যাট বুক করে সৃজাকে নিয়ে গেছিল দেখাতে। একটা সারপ্রাইজও বলা যায়! আসলে পরের মাসেই ওদের রেজিস্ট্রির ডেটটা ফাইনাল হয়েছে। তার আগে ফ্ল্যাটটাকে দুজনের থাকার মতন সাজিয়ে তুলতে হবে। সৃজা নিশ্চয়ই এইসব ভালো বুঝবে। কি কি ফার্নিচার দরকার, কি কি জিনিসপত্র! এইসব নানান এলোমেলো ভাবনার ভিড়ে সৃজাকে নিয়ে এসেছিল সর্দান এভিনিউর কাছে এই টু বি এইচ কে ফ্ল্যাটটায়। সৃজা তো প্রথমে শুনে অবাক হয়ে গেছিল গৌরবের ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে! ও তো বেশ চিন্তা নিয়েই বলেছিল,
——” নতুন ফ্ল্যাট! এতগুলো টাকা আবার খরচ করতে গেলে কেন!”
কথাটায় গৌরব আলতো হেসে বলেছিল,
——-” মা বাবার কল্যাণে তো আর অনুষ্ঠান করে বিয়ে হলো না! অনেক টাকা বেঁচে গেছে আমার। সেটা দিয়েই ফ্ল্যাটে ইনভেস্ট করেছি। এই নিয়ে ভেবো না। ”
কথাটায় সৃজা ঠিক আর কোন কিছু বলতে পারলো না। মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল হঠাৎ। ও জানে, গৌরবের মা বাবার ওকে একদম পছন্দ না। এমন কি ওরা তো একবার দেখা অব্দি করেনি সৃজার সাথে! এইসব জেনে সৃজা তো প্রথমে সম্পর্কটা ভেঙেই দিতে চেয়েছিল গৌরবের সাথে। তবে ছেলেটা রাত দিন ওকে বুঝিয়েছে। এমনকি বাড়ি এসে ওর মায়ের সাথেও কথা বলেছে। নিজে মা কে বিয়ের ব্যাপারে বলেছে। তারপর সৃজা আর নিজেকে কঠিন রাখতে পারেনি। আর মা ও বললো, গৌরবের থেকে দূরে থাকা মানে ছেলেটাকে অকারণে শাস্তি দেওয়া। এত ভালোবাসার পর গৌরব এই কষ্ট গুলো ডিসার্ভ করে না! তাই সৃজাও আর দূরে থাকেনি। বরং বেশি করে গৌরবকে আঁকড়ে ধরেছিল।
এইসব এলোমেলো ভাবনার ভিড়েই সেদিন ও ফ্ল্যাটটা ঘুরে দেখছিল। তারপর দুটো বেড রুম দেখে ড্রইং রুমে এসে আনমনেই বলে উঠলো,
——” ওই ডান দিকের বেড রুম টা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ওটা পূর্বদিকে। ভালো মতন আলো হাওয়া ঢুকবে। ওটা বরং বাবা মায়ের ঘর হোক। ওদের ভালো লাগবে ভীষণ! ”
এই কথায় গৌরব যেন কেমন থমকে গেছিল! এতদিনে ওর মা বাবা সৃজাকে কম হার্ট করেনি। এমন কি মেয়েটার সাথে একবার দেখা পর্যন্ত করলো না; এত জেদ দুজনের। তবে এসবের পরও ও সৃজাকে এই কথাটা বলতে পারেনি যে বাবা নিজেই বলেছে ওদের আলাদা থাকতে। সৃজাকে ওই বাড়িতে থাকার জায়গা দেবে না বাবা! এত বড় অপমানটা আসলে গৌরব করতে পারেনি সৃজা কে ওর বাবার তরফ থেকে। তাই কথাগুলো লুকিয়ে গেছিল এতদিন ধরে। কিন্তু মেয়েটা এত ভালো! যেই মানুষ দুটো আজ অব্দি ওর সাথে একটা শব্দ ব্যায় পর্যন্ত করলো না, এমনকি মুখোদর্ষণ টুকুও না; তারপরও সৃজা এই ফ্ল্যাটে তাদের থাকার কথা নিয়ে ভাবছে! কথাগুলো কেমন নিস্পলক দৃষ্টিতে সৃজার দিকে তাকিয়ে মনে হলো ওর। কিন্তু এবার গৌরব নিজেকে কিছুটা কঠিন করেই বললো,
——-” মা বাবার ঘর রেখে কোন লাভ নেই। আমরা এই ফ্ল্যাটে একা থাকবো। শুধু তুমি আর আমি। আর ওরা যেইভাবে এই বিয়েটাকে প্রায় বয়কট করেছে, তাতে আমরা আলাদা থাকলেই বরং ওরা খুশি হবে। ”
কথাগুলো মনের একটা চাপা কষ্ট থেকে বললো গৌরব। কিন্তু সৃজা এইসব শুনে স্থির হয়ে গেল হঠাৎ। এইভাবে মা বাবা কে না জানিয়ে আলাদা থাকার ডিসিশন নিয়ে নিল ছেলেটা! এতে তো সম্পর্ক আরো খারাপ হবে। গৌরবের মা বাবা সারা জীবন ভাববে এই সমস্ত কিছুর জন্য সৃজা দ্বায়ী। ও ই হয়তো গৌরবকে শিখিয়ে পরিয়ে আলাদা থাকার জন্য উস্কেছে! জন্ম থেকে যেই মা বাবা বড় করলো ছেলেটাকে, তাদের থেকেই আজ আলাদা করে দিচ্ছে সৃজা গৌরবকে। কিন্তু সৃজা তো এমনটা চায়নি। ও একটা ভাঙা পরিবার নিয়ে নতুন জীবনটা শুরু করতে চায়নি বিয়ের পর! কথাগুলো ভেবেই ও বললো কিছুটা স্তব্ধ হয়ে,
——–” আমি কিন্তু একার সংসার পাততে চাই না এই ফ্ল্যাটে! আমি তোমার মা বাবাকে নিয়েই এই নতুন ফ্ল্যাটে শিফ্ট করতে চাই। ”
কথাটা শুনে গৌরব ভীষণ হতাশ গলায়ই বললো,
———” এটা সম্ভব না। ওরা কখনোই আসবে না এই ফ্ল্যাটে। ”
এই কথায় সৃজা এবার বেশ জোর দেখিয়ে বললো,
——– ” তুমি বলেই দ্যাখো না একবার। তুমি নিজের ছেলে। আমি জানি, তোমার কথা ওরা শেষ অব্দি ফেলতে পারবে না। আর সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা তো এক পক্ষকে শুরু করতেই হবে! নইলে তো কোনদিনই দূরত্ব গুলো ভাঙবে না। ”
কথাটা কিরকম থমকে থাকা গলায় বললো সৃজা। কিন্তু গৌরব আর এরপর না বলতে পারলো না ওকে! সৃজা আসলে মা বাবা সমেত সুন্দর সাজানো একটা সংসার চায়। এই যুগে যখন ছেলে মেয়েরা নিজেদের আলাদা স্পেস খোঁজে; তখন সৃজা সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখে! মেয়েটা আসলে একটা রূপকথার দেশে বাস করে মনে হয়! যেখানে কোন খারাপের জায়গা নেই। আর গৌরব ওকে মুখের ওপর না বলে এই রূপকথার পৃথিবীটা থেকে বাস্তবে নামিয়ে আনতে পারবে না এক ধাক্কায়। তাই মা বাবার সাথে এই ফ্ল্যাটে থাকার ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হলো আজ।
<৪>
সেদিন রাতে ডিনার টেবিলে এরপর গৌরব নিজে থেকেই বলেছিল,
——-” আমি একটা ফ্ল্যাট কিনেছি, সর্দন এভিনিউতে। আমি আর সৃজা রেজিস্ট্রির পর ওখানেই থাকবো। ”
কথাটায় গৌরবের মা যেন কেমন থমকে গিয়ে বললো,
——-” সত্যি! একটা মেয়ের জন্য আমার এতদিনের সংসারটা এইভাবে ভেঙে তছনছ হয়ে গেল চোখের সামনে! এবার খুশি তো সেই মেয়ে? তোকে নিয়ে আলাদা থাকতে পারবে। ”
কথাগুলো খুব তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন উনি। কিন্তু গৌরবের এবার মন থেকে লাগলো হঠাৎ। ও তাই ভীষণ স্তব্ধ স্বরে বললো,
——–” আলাদা থাকার কথা সৃজা বলেনি মা। সেটা বাবা বলেছে আমাকে; তোমার সামনেই। আর সেই মেয়ে তো নতুন ফ্ল্যাটে প্রথম ঢুকে তোমাদের থাকার জন্য ঘর সিলেক্ট করতে ব্যাস্ত ছিল! বার বার আমাকে একটা কথাই বলেছে, তোমাদের কাছে এসে এটা বলতে যে নতুন ফ্ল্যাটে একসাথে সবাই মিলে শিফ্ট করবো। সৃজা একার সংসার চায় না মা। ও তোমাদের নিয়ে নতুন ভাবে জীবনটা শুরু করতে চায়। শুধু শুধু মেয়েটাকে খারাপ ভেবো না এইভাবে, প্লিজ। আর জানি, তোমরা দুজন রাজি হবে না; তাও বলছি, ফ্ল্যাটে তোমাদের ঘরটা আমি আর সৃজা একসাথে মিলে সাজাবো, আর অপেক্ষা করবো, যদি কখনো তোমরা এই রাগ অভিমান ভুলে আমাদের কাছে এসে থাকো! ”
শেষ কথাগুলো গৌরব ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো। কিন্তু সমীরণবাবু সব কিছু শুনেও কোন উত্তর করলো না ঠিক! শব্দহীন হয়ে খেয়ে গেল চুপচাপ। কিন্তু গৌরবের আজ মনে এত কষ্ট হচ্ছিল, যে খাবারগুলো গলা দিয়ে নামছিল না কোনভাবে। তাই আধপেটা খেয়ে উঠে গেল টেবিল ছেড়ে।
কিন্তু এই পুরো সময়টা জুড়ে গৌরবের মা অনন্যার অন্য একটা কথা মনে বাজছিল শুধু। আজ শোবার ঘরে গিয়ে কথাটা বলেই ফেললো সমীরণ কে। বেশ অন্ধকার মুখ করেই ও বললো,
——-” সৃজা মেয়েটা ভীষণ চালাক! কিভাবে বাবুর কাছে আমাদের খারাপ সাজিয়ে নিজে মহান থাকা যায়, এই জ্ঞানটা ওর ভীষণ ভাবে আছে। ওই যে ফ্ল্যাটে আমাদের জন্য আলাদা করে ঘর রেখে দেওয়া, এইসব হচ্ছে দেখনদারি। আসলে ও জানে আমরা ওই ফ্ল্যাটে যেতে কখনো রাজি হবো না! কিন্তু বাবুর কাছে এসব বলে কি দারুণভাবে ভালো সেজে গেল মেয়েটা।”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বললো অনন্যা। কিন্তু সমীরণ উদাস ভাবেই বললো,
——–” এখন এসব ভেবে কোন লাভ নেই! ছেলে আমাদের হাত ছাড়া হয়েই গেছে। আর কিছু করার নেই। ”
এই কথায় অনন্যা বেশ রেগে গিয়ে বললো,
——-” কিছু করার নেই কেন বলছো? একটু বুদ্ধি খাটালেই অনেক কিছু করতে পারবো। চলো, আমরা গিয়ে কদিন ওদের সাথে ওদের ওই ফ্ল্যাটে থেকে আসি। দেখি; কতদিন নতুন বউ শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর সেবা করে! কতদিন ওই ভালোমানুষের মুখোশটা পরে থাকতে পারে গৌরবের সামনে! দুদিন বাদেই আমাদেরকে সহ্য করতে না পেরে বিরক্ত হয়ে নিজের আসল রূপটা দেখিয়ে দেবে। তখন গৌরব বুঝবে এরকম কুলজাত হিন মেয়ে বিয়ে করে ঠিক কি ভুলটাই করেছে জীবনে!”

কথাগুলো ভীষণ বিশ্বাস নিয়ে বললো অনন্যা। তবে এইসব শুনে সমীরণ একেবারে না করতে পারলো না মুখের ওপর। সত্যি, ছেলেটাকে একটু বোঝানো দরকার যে মা বাবার কথা না শুনে এরকম রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা একটা মেয়েকে বিয়ে করে কত বড় ভুল করছে ও! আর সেটা বাড়ি বসে আলাদা থেকে বোঝানো সম্ভব না। বরং একসাথে থেকেই বোঝাতে হবে।

সেদিন এইসব আলোচনার পর তাই সমীরণ পরেরদিন সকালবেলা নিজে গৌরবকে এসে বলেছিল,
——–” আমি আর তোর মা ঠিক করেছি আমরা তোর নতুন ফ্ল্যাটে যাবো। থাকবো কিছুদিন। আসলে তুই আমাদের ছেলে; তোর কোন কথায় আমরা না বলতে পারি না কিছুতেই! ”

কথাটা শুনে গৌরব যেন অবাক হয়ে গেছিল কয়েক সেকেন্ড! বাবা মা সত্যি রাজি হলো শেষে! বিশ্বাস হচ্ছিল না ঠিক। যাইহোক, সেদিন এরপর আনন্দে ও বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিল হঠাৎ। সেই মুহূর্তে হাসি মুখে দৃশ্যটা দেখেছিল অনন্যা দূর থেকে দাঁড়িয়ে। যাক, ওর বুদ্ধিটা কাজে দিল তাহলে। ছেলের সাথে ওদের দূরত্বটা কমছে তার মানে। এবার নতুন ফ্ল্যাটে গিয়ে ওই মেয়েটার আসল রূপটা একটু একটু করে প্রকাশ করবে ছেলের সামনে। দুদিন শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর সেবা করতে হলেই ভালোমানুষির মুখোশ টা খুলে যাবে ওই সৃজার আপনাআপনি রাগে।
চলবেম